ভাগ‍্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ১৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-60210-post-5543009.html#pid5543009

🕰️ Posted on March 20, 2024 by ✍️ FreeGuy@5757 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2924 words / 13 min read

Parent
নতুন সূচনা:খন্ড ৬ - ছিঃ আহান তোমার সাহস কি করে হলো আমার সম্পর্কে এমন অভিযোগ তোলার!! আহান অবন্তী ছেড়ে দিতেই,আহানের গালে "ঠাস" করে একটা চড় বসিয়ে কথাগুলো বললো অবন্তী। রাগে তার ফর্সা মুখ রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। অবন্তী আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আহান তার আগেই একটা ছবি তার সামনে তুলে ধরে।অবন্তী ছবিটার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ ছবিটি পেছন থেকে তোলা হয়েছে,আর এমন ভাবে তোলা হয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে সে ফারুকে কিস করছে। – এর পরেও বলবেন সব মিথ্যা! অবন্তী আহানের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে আহান হাত থেকে বাকি ছবি গুলো নিয়ে একটার পরে একটা দেখতে থাকে। ছবি গুলো দেখে অবন্তী মনে পরে ফারুক আর তার দেখা করার কথা।তবে আহান যা ভাবছে তেমন কিছুই তাদের মধ্যে হয়নি।এবং এই রকম ছবি তার কাছে আগেও একবার এসেছে। অবন্তী ছবি গুলো দেখে নিয়ে,তারপরে মুখ ঘুরিয়ে দেখলো আহানের দিকে।কিন্তু আহান সেখানে নেই।সে যখন ছবি দেখতে ব‍্যস্ত আহান তখন উঠে গেছে দোতলায়। অবন্তী সিঁড়িটার দিকে এগিয়ে গেলো। ধিরে ধিরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকলো সে।তার পা কেটে গিয়ে তার চলাফেরার চঞ্চলতা কমেছে অনেকটা।পা ঠিক মতো ফেলতে সমস্যা হচ্ছে।কিন্তু তারপরে অবন্তী যত জলদি সম্ভব সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলো।সে যখন তাদের রুমে ঢুকলো তখন আহান তার ব‍্যাগ গুছিয়ে নিয়ে ঘরে এক কোনায় পরে থাকা গিটারটা হাতে তুলে নিচ্ছে। – আহান এইসব কি করছো তুমি!! আহান কোন কথা না বলে এগিয়ে এলো দরজার দিকে।আহানের উদেশ্য বুঝেছে অবন্তী দ্রুততার সাথে রুমের দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পরলো দরজার আগলে।এত সহজে হেরে যাওয়ার মেয়ে সে নয়।কেউ তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চলে যাবে! যেটা সে হতে দেবে না।তাছাড়াও আহান বেরিয়ে গেলে মা,বাবাকে কি বলবে।এদিকে আহান অবন্তীর দিকে না তাকিয়েই বললো,“সরে দাড়ান!" অবন্তীও কম কিসে!সে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,“না, তোমাকে আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।তুমি এই ছবি কোথায় পেলে?” –আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন তাই না,সব কিছু আমার থেকে আড়ালে রাখতে। সামনে থেকে সরে দাড়ান।(আহানের কণ্ঠ কঠিন) - তুমি ভুল বুঝছো আহান..... অবন্তীর কথা শেষ হয় না তার আগেই আহান হাতের ব‍্যাগ ও গিটার ফেলে দিয়ে এগিয়ে আসে অবন্তীর কাছে।তার দুহাত রাখে অবন্তীর দেহের দুপাশে। – তাহলে আমার ভুলটা ভাঙিয়ে দিন, প্রমাণ করুন ছবি গুলো মিথ্যে!বলুন কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে? – আমার নিজেকে করার কোন দরকার নেই আহান।অতিরিক্ত রাগের তোমার মাথা ঠিক নেই। তা নাহলে তুমি ভালো করেই জানো তোমার ভাইকে আমি কতটা ভালোবাসি।হাসান ছাড়া অন‍্য কারো সাথে তুমি আমাকে ভাবলে কিভাবে!দেখি এদিকে এ...আঃ... অবন্তী আহানকে ঠেলে সরাতে চাছিল দু হাতে। কিন্তু আহান অবন্তীর দুহাত ধরে তার মাথার দুপাশের দরজার কাঠের সাথে চেপে ধরলো। – উফৃ… আহান কি করছে এসব! আহান অবন্তীর আরা কাছে গিয়ে বললো,“আর ডির্ভোস পেপারটা!আপনি কি সত্যিই কি চলে যেতে চান বাবা মাকে ছেড়ে..আমাকে ছেড়ে? আহান মুখটা এখন অবন্তীর মুখের এতো কাছে যে,দুজনের শ্বাসপ্রশ্বাস লাগছে একে অপরের ঠোঁটের ওপরে। হঠাৎ আহান এতটা কাছে চলে আসায় স্তম্ভিত হয়ে যায় অবন্তী। তার মুখদিয়ে আর কোন কথা বেরোয় না। অবন্তী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আহানের চোখের দিকে, আহানের চোখের উজ্জ্বল দৃষ্টি দেখে চমকায় অবন্তী। এই দৃষ্টি তার খুব চেনা। অবন্তী সরে পরতে চায় আহানের কাছে থেকে।কিন্ত তার দেহে কোন রকম প্রতিবাদ করার আগেই আহানের ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে অবন্তীর কোমল ঠোঁট দুটিকে!আসলে নিজের অজান্তেই ধিরে ধিরে অবন্তীর জন‍্যে দায়িত্ববোধটা পরিবর্তন হয়ে যে ভালো লাগা ও প্রয়োজনবোধে হয়ে দাড়িয়েছে। সেই পরিবর্তনটা আহান আজ উপলব্ধি করলো ছবিগুলো দেখে।তাই এই মুহুর্তে আহানের মনে রাগের থেকে ঈর্ষা হচ্ছে বেশি। কিন্তু কেন! হচ্ছে তা আহান বুঝে উঠতে পারছে না। কারণ সে তো এখনো আইরিনকে ভুলতে পারেনি।তাহলে রাগের চেয়ে বেশি সে ঈর্ষান্বিত কেন হচ্ছে অবন্তীকে নিয়ে!বারবার মনের ভেতর থেকে কেউ যেন বলছে অবন্তী শুধু তার,আর কারো নয়।কিন্তু সে তো জানে তাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়। তার পরেও অবন্তী কে সে অন্য কারো সাথে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না কেন!কিন্তু এইসব প্রশ্নের উত্তর মেলানোর আগে অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ায় যা হওয়ার তাই হলো।সে অবন্তীকে ছেড়ে প্রায় হাতখানেক পেছনে সরে গেলো।চোখের সামনের সবটা নিমিষেই ঘোলাটে দেখতে লাগলো।অনুভূতি টা তার কাছে নতুন নয়। আহান নিজে শারীরিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারছে না।এদিকে দরজায় হেলান দিয়ে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তী ।তার চোখের সামনে আহান বসে পরে মেঝেতে।আহানের হাত দুটো কাঁপছে বিষনভাবে।এই পরিস্থিতিতে অবন্তীর কি করনীয় তা সে জানে তবে আহান আচমকা চুম্বন অবন্তী হতভম্ব হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। যেন কেউ তাকে দরজার সাথে কেউ আটকে দিয়েছে,তার শরীর ওপরে কোন নিয়ন্ত্রণ তার নেই।শুধুমাত্র সে অনূভব করছে, তার বুকের বাম পাশে উপস্থিত কিছু একটা খুব তীব্র গতিতে শব্দ করছে। এতোটাই তীব্র যেনো এখনি বুক ফেটে বেড়িয়ে আসবে তা।...... ********* (((???))) বিশাল বড় সমুদ্রসৈকতে ছোট ছোট ঢেউ উঠছে। সূর্য এখন মাথার ওপরে।জায়গাটি নির্জন। আর সেই নির্জনতার মাঝে দুটো ঘোড়া ছুটছে বালি ও সমুদ্রের জল ছুঁয়ে। ঘোড়া দুটোর একটার ওপরে কালো রঙের ড্রেস পরে বসে আইরিন।তার এক হাতে ধরে রেখেছে ঘোড়ার লাগাম ও অন্য হাতে চাবুক। চোখে-মুখে তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ছাপ। উদেশ্য সামনের তীব্র বেগে ছুটতে থাকা সাদা ঘোড়াটিকে ধরা।সাদা ঘোড়াটা ছোটাছে আহান। বেশ কিছুক্ষণ ঘোড়া ছোটার পরে একসময় কালো ঘোড়াটি সাদা রঙের ঘোড়ার আগে চলে গেলো।আর তার সাথে সাথেই সাদা ঘোড়ার লাগাম টেনে ঘোড়াটি থামিয়ে দিলো আহান।একটু দূরে গিয়ে থামলো আইরিনের ঘোড়াটিও।আহান ঘোড়া নিয়ে আইরিনের কাছাকাছি এসে বললো,“রাগ কমেছে?”আহানের প্রশ্নে আইরিনের একবার আহানের দিকে দেখে কোন জবাব না দিয়ে আবারও ঘোড়া ছোটালো।“ফাঁক মাই লাইভ..ধ‍্যাৎ” বিরক্ত মুখে এটুকু বলেই আহান ঘোড়া ছোটালো আইরিনের পেছনে। জেনির সাথে ওই রাতের ঘটনার প্রায় চার মাস পরে আহানকে যে এমন সমস্যায় পরতে হবে কে জানতো। আহান ও রাজু তাদের গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে এসেছিল বেরাতে। এখানে এসেই ম‍্যাক্সের ফোনে জানলো জেনি প্রেগনেন্ট। কথাটা শোনার প‍র থেকেই আহানের সাথে আইরিনের কথা বলা বন্ধ আজ দুদিন।আজকে ম‍্যাক্স, এলিনা ও জেনির আসার কথা। আজ সকালে ফোনে ম‍্যাক্স বলেছে সুসংবাদ দেবে।কি সে সুসংবাদ কে জানে।মারাত্মক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে আজকের দিনটি কাটছে আহানের। আইরিন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ঘোড়া ছোটাছে গেস্ট হাউসের দিকে,তার পেছনে আহান। জঙ্গলের ভেতরে রাস্তাটা একটা বাক নিয়ে এগিয়ে গেছে সামনে।আহান রাস্তা ছেড়ে ঘোড়া ছোটালো জঙ্গলের বড় বড় গাছের সারির ভেতর দিয়ে।আড় চোখে আইরিনের দিকে নজর রেখে গাছে সারির ফাঁক দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে আহান চলে এলো রাস্তায় আইরিনের সামনে। আহানকে হঠাৎ সামনে দেখে আইরিন জোরে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরলো।তার সাথে সাথেই ঘোড়াটা সামনের পা তুলে দিয়ে একাট্টা হয়ে“চিহিহি" আওয়াজ করে থেমে গেল আহানের ঘোড়াটির গা ঘেঁষে।তাদের মধ্যে প্রায় ধাক্কা লাগার মতো অবস্থা হতো,যদি আইরিন সঠিক সময় ঘোড়ার লাগাম না টানতো। “আর একটু হলেই... ভাগ্যিস ওর গায়ে লাগেনি।” মনে মনে বলে উঠলো আইরিন।আতঙ্কে চোখ-মুখ রীতিমতো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আহান ঘোড়াটি একটু পিছিয়ে আইরিনের হাত থেকে লাগামটা জোর করে তার হাতে নিয়ে নিলো।আইরিন ততক্ষণে চোখ বড় বড় করে আহানকে দেখতে দেখতে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আহান ঘোড়া দুটো নিয়ে হাঁটার গতিতে এগিয়ে চলেছে জঙ্গলের ভেতর মাটির রাস্তা ধরে। আর আইরিনের তার বুকের ওপরে দুই হাত গুজে,আহানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। – সিরিয়াসলি আইরিন!বাচ্চাটা তো আমার নাও হতে পারে! – ......(চুপ) – ওকে লেটস সীট সামহোয়ার। আহান ঘোড়া থামিয়ে নেমে পরলো।তারপর আইরিনকে নামানোর জন‍্যে যেতেই দেখল আইরিন নিজেই নেমে পরেছে এবং গাছের সারির ভেতর দিয়ে জঙ্গলে ঢুকছে। – আইরিন! কোথায় যাচ্ছো! আইরিন কোন কথা না বলে জঙ্গলে ঢুকে পরলো। আহান ঘোড়া দুটো গাছে বেধেঁ ্তাকে অনুসরণ করে ছুটে গেলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই আহান আইরিনের সামনে উপস্থিত হলো। আইরিন আহানকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইতেই,আহান আইরিনকে তার বাঁ পাশের একটা বড় গাছের সাথে ঠেসে ধরলো তাকে।আহানের এই কান্ডে আইরিন রাগী চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,“আহান নাথিং ক‍্যান চেঞ্জ মাই ডিসিশান” আইরিনের কথায় আহান আইরিনের বাঁ হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে তার ডান হাতে আঙুল গুলো ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে বললো,“অসম্ভব" কখনো না, এই যে হাতটা ধরলাম মৃত্যু অবদি শক্ত করে ধরে রাখবো।সো ইউ হ্যাভ তো চেঞ্জ ইওর মাইন্ড। – ওই মেয়েটির তো কোনো দোষ নেই। সে কেন দূর্ভাগ্যের শিকার হবে?বাচ্চাটা যদি তোমার হয় তো... আইরিনের কথা শেষ হবার আগেই তাকে বুকে টেনে ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খেলো আহান।তারপরে বললো ,“দেখো এতো কিছু আগেই কিভাবে বলছো,প্লিজ আগে ওদের কথাটা শুনি তারপরে দেখি কি করা যায়।..... ~~~~~~~~~ ***** সকাল বেলা থেকেই অবন্তী ভীষন ব্যস্ত।নাস্তা তৈরি করছে অনেক কিছু।সুজির হালুয়া,পরোটা,ডিমপোচ, আলু ভাজি,নিরামিশ,সেমাই, মুরগীর ঝোল এইসব।এক হাতেই তার সব করতে হবে।এদিকে অনেক আয়োজন।তার শ্বশুর ফোন করেছিল সকালে। তারা নাকি বাড়ি ফিরছে,এখন যাত্রা পথে।হয়তো ঘন্টা খানেক মধ্যেই এসে পরবে বাড়িতে।তারা সপ্তাহে খানেক থাকবে ভেবে অবন্তী ভেবেছিল এদিকটা সামাল দিতে সুবিধা হবে।এখন শুধুমাত্র শ্বশুর শ্বাশুড়ী নয় সাথে আসছে আহানের মামার বাড়ির কয়েকজন। তার জন‍্যেই এতো আয়োজন।তারা অবশ্য ফোনে বলেছে রান্না করতে হবে না,হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে নেবে।কিন্তু অতিথিরা বাড়িতে এসেই হোটেলের খাবার খাবে! নিজের কাছেই কেমন কেমন লাগছিল অবন্তীর। খাবারের কথায় অবন্তী হঠাৎ মনে হলো।আহানকি গতকাল সারাদিন কিছু খেয়েছিল! ভাবতেই ভ্রু কুঁচকে গেল অবন্তী। গতকালের ঐ ঘটনার পরথেকে আহানের সাথে রাগে কোন কথা বলেনি সে।এখন কি না তার কথাই ভাবছে। এমন সময় অবন্তী দেখলো আহান মর্নিং ওয়াক সেরে ফিরে এসেছে। বাড়িতে ঢুকেই আহান কিচেনের সামনে দিয়ে চলেগেল দোতলার সিঁড়ির দিকে।আর এদিকে আহানকে দেখে অবন্তী চা বসিয়ে দিল। প্রতিদিন সকালে চা পান ক‍রা আহান নতুন অভ‍্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে আনমনা হয়ে ভাবছিল অবন্তী।হঠাৎ সে অনূভব করলো তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।আর তার সাথে সাথেই গা'টা কেমন শিরশির করে উঠলো তার। – এতো আয়োজন কেন? – আঃ.. হঠাৎ পাশে থেকে আহানের গলার আওয়াজ শুনে চমকে গিয়ে গরম কিছুতে হাত দিয়ে বসে সে।“ আরে একি করলেন দেখি দেখ” অবন্তী আহানের কাছে থেকে কিছুটা সরে দাঁড়িয়ে হাতটা পেছনে নিয়ে বললো,“কিছুই হয়নি,তুমি এভাবে..."কথা শেষ হলো না তার আহান এগিয়ে এসে ডান হাত তুলে দেখলো তিনটি আঙ্গুল ঝোল লেগে রয়েছে।,“বললাম তো কিছু হয়নি” অবন্তী হাতটা এই ঝটকায় ছাড়িয়ে নিতে চাইলো,কিন্তু পারলো না।“তা তো দেখতেই পারছি।” আহান তাকে টেনে নিয়ে গেলে ফ্রিজের কাছে। তারপর ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে অবন্তীর আঙুলে বোলাতে বোলাতে বললো,“গতকালের জন্যে আমি সত্যিই লজ্জিত,কালকে আমার কি হয়েছিল আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না।”আহান একটু থেমে আবার বলতে লাগলো,“আপনি ডির্ভোস চাইলে আমার কোন সমস্যা নেই।” – আহান এসব কথা এখন থাক। আমাকে রান্না শেষ করতে হবে।মা,বাবা যেকোন সময়ে এসে পরতে পারে। – বাবা মা ফিরছে! – হ‍্যা,গাড়িতে আছে কিছুক্ষণ পরেই হয়তো এসে পরবে। এটুকু বলেই অবন্তী তার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সরে গেল আহানের কাছে থেকে।হাত থেকে বরফ সরতেই বুঝলো জায়গাটা প্রচুর জ্বলছে। কিন্তু এইসব ব্যাথা তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না করে,অবন্তী তার হাত পরিষ্কার করে আবারও রান্নার কাজে লেগে পরলো। একবার আড় চোখে দেখলো আহান বেরিয়ে যাচ্ছে। অবন্তী মেজাজটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে।গতকাল এতকিছু করে এখন বলছে কি না।ডির্ভোস দিতে তার কোন সমস্যা নেই।এদিকে অবন্তী ভেবে ভেবে অস্থির হচ্ছে বাবা মায়ের কাছে তাদের এই হাত পায়ের ব‍্যান্ডেজের জবাব কি দেবে! এছাড়া রাত্রির সাথে তার বোঝাপড়াটা এখনো বাকি।যত জলদি সম্ভব ওর সাথে দেখা করা দ‍রকার।তাকে জানতে হবে এই ছবিগুলো কোথায় পেলো সে। এই ছবিগুলো অবন্তী প্রথম দেখছে না। এরকম ছবি তার কাছে এর আগেও এসেছে ।আগের বারের ছবিগুলো নিয়ে হাসানের সাথে কথা বলে বের করার চেষ্টা করেছে ছবিগুলো কে তুলেছে। কিন্তু কিছু সমাধান করতে পারেনি তারা। অতি সাধারণ কয়েকটি ছবিকে কি মারাত্মক কৌশলে তুলেছে ফটোগ্রাফার।ভাবতেও গা ঘিন ঘিন করছে তার। রাত্রিকে অনেক প্রশ্ন করার আছে তার। – অবন্তী রাত্রি কোথায়? প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকালো অবন্তী। তৃষ্ণা ঢুকেছে রান্নাঘরে তার পেছনে আসছে আহান। আহান ঢুকেই বললো,“তৃষ্ণা কি হয়েছে!এমন করছো কেন?” তবে তৃষ্ণা আহানের দিকে না তাকিয়ে আবার বললো“রাত্রি কোথায় অবন্তী?” কথাগুলো খুব জোরদার ভাবেই বলছে তৃষ্ণা।এদিকে আহান অবন্তী কাছে এসে অবন্তী হাতটা তার হাতে তুলে ছ‍্যাঁকা খাওয়া আঙুলে ক্রিম লাগাতে লাগাতে বললো,“ কি হয়েছে বলবে তো এমন করছো কেন!রাত্রি তোমার কি করলো?” এই দৃশ্য দেখে তৃষার রাগটা যেন আরো বেরে গেলো,তার সাথে ভ্রু কুঁচকে গেল তার।এবার কিছুটা চিৎকার করেই বললো,“কথা কানে যাচ্ছে না অবন্তী, রাত্রি কোথায়?” তৃষ্ণার রাগের কারণ ধ‍রতে না পেরে অবন্তী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল।এবার নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,“তোমার কি মনে হয় আমি রাত্রিকে কোলে নিয়ে ঘুরি! ওর বাড়িতে খোঁজ নায়,এখানে চেঁচামেচি কেন করছো? এমটা তো নয় যে তুমি ওর বাড়ি চেনো না তৃষ্ণা।” আহান লক্ষ্য করলো দুই রমণী একে ওপরকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতে শুরু করেছে। অবস্থা বুঝে আহান জলদি অবন্তীর কাছে থেকে সরে এসে তৃষ্ণা কে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তৃষ্ণা তখনো রাগে সাপের মতো ফোস ফোস করছে।বাইরে এসে আহান তৃষ্ণার গালে হাত দিয়ে তার দিকে তৃষ্ণার মুখ ফিরিয়ে বললো,“কি হয়েছে বলবে তো....” আহানের কথা শেষ হবার আগেই তৃষ্ণা দ্রুত বেগে পেছন ফিরে বেরিয়ে যেতে লাগলো। পেছন থেকে আহানের ডাকেও কোন সারা পাওয়া গেলো না.... ******* রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছিল অবন্তী।অনেকবার না বলা শর্তেও তার সাথে আহান হেল্প করছিল। মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছে অবন্তী।আর মনে চাই ছিল কঠিন কিছু কথা বলতে কিন্তু পারছে না। আহান একটু আগে শাওয়ার নিয়েছে তাই খুব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে,সিল্কি চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। গায়ে একটা স্লিভলেস টি'শার্ট ও সাদা ডেনিম প‍্যান্টে রাজপুত্রের মতো লাগছে তাকে।একবার দেখেই দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলো অবন্তী। এমন সময় গেটের বাইরে গাড়ির হর্ন শোনা গেল। আহান বাইরে গিয়ে গেইট খুলে দিলো। ভেতরে ঢুকেই আহানের মা একরকম চিৎকার দিয়ে উঠলেন আহানের হাতে ব‍্যান্ডেজ দেখে। – আহান কি হয়েছে তোর! হাতে ব‍্যান্ডেজ কেন? – মা তেমন কিছুই হয়নি...আরে তুমি কাঁদছো কেন! আহান মাকে জোরিয়ে ধরে বোঝাতে লাগলো তার কিছু হয়নি,একটু ব‍্যথা পেয়েছে মাত্র।এদিকে আহানের বাবা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বললো,“কিছু হয়নি মানে! দুইজন এক সাথে ব‍্যথা পেলি কিভাবে? কি করেছিস দুজনে?” একথা শুনে পেছন থেকে আহানের এক মামাতো ভাই বলে উঠলো“যুদ্ধ লেগেছিল মনে হয় ভাবির সাথে!” আহান পেছনে থাকিয়ে দেখলো তার দুই মামাতো বোন ও এক ভাই দাঁড়িয়ে আছে। অবন্তী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। এসব দেখে ভেতরে সরে গেলো। বাড়ির ভেতরে ঢুকে আহান যাই হোক করে একটা আজগুবি ঘটনা বর্ণনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলো।তবে এতে কতটা লাভ হলো সেটা বোঝা গেল না।কিন্তু আমানের মামাতো বোনেদের ঠোঁটে একটা বাঁকা হাসি দেখে পুরোর গা রি রি করে উঠলো অবন্তীর। সে আহানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,“আস্ত একটা হাঁদা কোথাকার”এর মাঝে আহানের মা অবন্তীকে হাত ধরে আড়ালে টেনে নিয়ে গেল। তারপর অবন্তীর দুহাত ধরে বললো,“ সত্যি করে মা কি হয়েছে!দ‍্যাখ ওর মিথ্যে বলবি না একদম।” – মিথ্যা বলবো কেন মা,আমি তোমাকে কখনো মিথ্যে বলেছি বলো! – তাহলে বল কি হয়েছে,তোদের দুজনের এই অবস্থা কি করে হলো? – মা আমি যেমন তোমাকে মিথ্যে বলতে পারবো না তেমনি এমন কিছু কথা থাকবে,যা আমি তোমাকে বলতেও পারবোনা।এটা তোমাকে বুঝতে হবে।তবে তুমি যেন চিন্তা না করো তাই বলছি,এখন সব ঠিক আছে ,তোমর কোন চিন্তা নেই। এখন এসো তো কিছু মুখে দেবে,সকালে নিশ্চয়ই না খেয়ে বেরিয়েছো। অবন্তী মায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইছিল।কিন্তু তাকে আটকে দিয়ে তার হাত দুটো মায়ের হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে বললো,“দেখ অবন্তী আমি বড় ছেলেকে তোর হাতে তুলে দিয়েছিলাম।আমি একদিনও একবারের জন্য বলিনি মা আমার ছেলেটা ভালো। তার এই এই যোগ্যতা। পৃথিবীর অন্য সবার কাছে ছেলের গুণগান করতে পারি,বলতে পারি। কিন্তু ছেলের বউয়ের কাছে বলতে পারবোনা। কেন জানিস? কারণ আমার ছেলে আমাকে তারের ভালোটাই দিয়েছে এত বছর, আর এই ভালোটা দেখাতে ও বাধ্য ছিল, আমি ওর মা। আমি মা হিসেবে ওর এমন অনেক দোষই দেখিনি যা ও দেখাতে চায়নি। জানিস একজন পুরুষের চরিত্র চেনা যায় বিয়ের পরে, আর একজন নারীকে চেনা যায় শাশুড়ি হলে। এখন আমার ছেলে কেমন তার রায় একমাত্র তুই বলতে পারিস। আর তুই কেমন মেয়ে তা আমার আজানা নয় । তাই আবারও বিনাবাক‍্যে ছোট ছেলেটা কেউও তোর হাতে তুলে দিয়েছি। কিন্তু আমি ওর সম্পর্কেও ভালো কিছুই বলবো না তোকে।যে মায়েরা রাতদিন ছেলের বউকে ছেলের গুণগান শোনায় তারা মিথ্যাবাদী, চোর স্বভাবের। এখন ও ভালো না খারাপ তোর বিবেচনা। শুধুমাত্র মা হিসাবে একটা অনুরোধ করি তোর কাছে ওর দিকে একটু খেয়াল রাখিস,একটা মাত্র ছেলে আমার ওর কিছু হলে আমি বাচঁবো কি নিয়ে বলতো” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে শেষের দিকে তিনি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। অবন্তী এই দৃশ্য দেখে মাকে জরিয়ে ধরে বললো,“মা তুমি প্লিজ এভাবে বলো না, আমি কথা দিলাম আহানের কিছু হতে দেবো না আমি,দয়া করে কান্না থামাও....... সকালের ঘটনার পরে অবন্তীর সারাটা দিন গেল মেহমানদের পেছনে। আর রান্নাঘরে। পায়ে ও হাতের আঘাত নিয়েও তার কোন ক্লান্তি নেই।অবশ্য তার শাশুড়িও তার সাথে সাথেই ছিল অনেকটা সময়।উনি চাই ছিলেন অবন্তী একটু বিশ্রাম করুক।কিন্তু উল্টো অবন্তী তাকে সোফায় সবার সাথে বসিয়ে দিয়েছিল। কারণ অবন্তী নিজেও উপভোগ করে সবার মুখে হাসিখুশি ভাব ভঙ্গি গুলো।কাজের ফাঁকে আহানের সামনে দু একবার পরেছে সে,তবে সামনে পরলেও তেমন কথা হয়নি তাদের। এর মধ্যে আহান থানা থেকে হাসানে গাড়িটি নিয়ে এসেছে।এবং প্রায় অনেকখানি সময় ধরে গাড়ির সামনে পেছনে কিছু একটা খুঁজছিল।এখন পানির পাইপ টেনে গাড়ি পরিষ্কার করছে।অবন্তী ছাদে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল।এখন প্রায় সন্ধ্যা হবে হবে করছে।এখন এসব নিয়ে পরার কি দরকার ছিল অবন্তী ভেবে পেলো না।আহান হাতের ব‍্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে।এইটা তাকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলছে।বার বার কেন যেন মনে হচ্ছে নিচে গিয়ে হাতদুটো কাছে টেনে দেখতে। কিন্তু তার নিচে নামার মতো সাহস হয়ে উঠলো না। তবে তার হাতে থাকা একটা কাগজ সে টুকরো টুকরো করে করে ফেললো। তারপর চুপচাপ ছাদের মেঝেতে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে কি করলো ঠিক বোঝা গেল না..... ******* (((???))) ম‍্যাক্সের কথা শুনে আহানের ধরে প্রাণ এলো।জেনির পেটের বাচ্চাটি তার নয়।আহান বেশ চিন্তিত ছিল বিষয়টা নিয়ে। জেনি মেয়েটাকে এমন সমস্যার মধ্যে সেই ফেলেছে।এটা ভেবেই সে হয়রান ছিল।তা ওপরে বাচ্চাটা তার হলে, আইরিনের সাথে তার কিছু দিন ধরে তৈরি নতুন প্রেমের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ যে কোথায় গিয়ে ঠেকতো তা ভাবতেই দুচোখে অন্ধকার দেখছিল আহান। তবে জেনির সাথে তার একবার একা কথা বলা দরকার।তাই গেস্ট হাউস থেকে বাইরে বেরিয়ে আহান জেনিকে খুঁজতে লাগলো। গেস্ট হাউস টি বেশ বড়। কাঠের তৈরি দোতলা বাড়ি।গেস্ট হাউস থেকে কিছুটা দূরে একটা পাহাড়ি ঝর্না আছে,যে টা পাহাড় থেকে নেমে জঙ্গল পেরিয়ে গিয়ে মিশেছে উত্তরে সমুদ্রের।তবে গেস্ট হাউস থেকে সমুদ্র বেশ অনেকটা দূরে। যাই হোক কিছুটা খোজাখুজি করে গেস্ট হাউসের পেছনে এসে আহান দেখলো আইরিন একজন অচেনা লোকের সাথে কথা বলছে।আর তাদের পেছনে দুটো ঘোড়া ছোলা,ভূসি খাচ্ছে মহাসুখে।আইরিন একহাতে তার ঘোড়াটার গলায় হাত বোলাতে বোলাতে কথা বলছে। আহান এগিয়ে গেল সেদিকে। – উই গীভ ইউ লোটস অফ টাইম,ইট ওয়াস নট supposed টু টেক সো লং. – হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড আই নিড মোর টাইম ফর দ‍্যাট. আহান কে দেখে আইরিন কথা থামিয়ে এগিয়ে এলো।,“আহান তুমি এখানে কি করছো!”আহান লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলো,লোকটা সেখানেই দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।তারপর বাঁ হাতের দুই আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট টা গুজে আহানের ঘোড়াটির পিঠে হাত বোলাতে লাগলো। আহান অন‍্য মনস্ক দেখে আইরিন দুহাতে আহান মুখটা তার দিকে ফিরিয়ে বললো,“ কি হয়েছে!কথা বলছো না কেন?” – লোকটা কে আইরিন? – ও গেস্ট হাউসের মালিক।আমি তাকে আগে বলিনি যে আমরা সপ্তাহ খানেক থাকবো এখানে।তাই একটু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। – আমি কথা বলবো... – না তার প্রয়োজন হবে না,আমি দেখছি ব‍্যপারটা। তুমি খুজছিলে কাউকে! – জেনিকে খুঁজছিলাম ওর সাথে একটু কথা ছিল। – ওরা অ্যামেলিয়ার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। আইরিনের কথা শেষ হতেই পেছন থেকে রাজু এসে বললো,“আহান সব তৈরি,চলে আয়।” আহান বুঝতে না পেড়ে বললো,“ সব তৈরি মানে!” – এখনি ভুলে গেলি! কোন সমস্যা নেই গেলেই দেখবি কি তৈরি। তারপর আহানের কাধেঁ হাত দিয়ে তাকে নিয়ে চলতে লাগলো সামনের দিকে।..... ~~~|||| *******
Parent