ভাগ্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ১৭
নতুন সূচনা:খন্ড ৭
রাত্রি আসলে কী চাইছে বোঝা মুসকিল। দুই দিন আগে যা ঘটেছে তাতে রাত্রির ওপরে আহানের বিশ্বাস করা উচিৎ কি! প্রশ্ন টা নিজের মনকে নিজেই করে আহান।উত্তরটাও তার জানা।কারণ এখন রাত্রি ছাড়া সে আর কোন পথ খোলা দেখছে না,এই রহস্যের জট খোলার।তৃষ্ণার সাথে সপ্তাহে খানেক আগে বাড়িতে সেই যে দেখা হলো, তারপর থেকে তৃষ্ণা কে পাওয়াই যাচ্ছে না। আহান বাড়িতে গিয়ে দেখে সে নাকি কোথায় বেরাতে গেছে।আসবে আরও সপ্তাহখানেক পরে।এই কয়েকদিন অবশ্য আহানের সাথে থানার নতুন ওসি মনিরের বেশ ভাব হয়েছে।অবশ্য এই বিষয়টা মোটেও ভালো মনে হচ্ছে না।কারণ আহান নিজের উদ্যোগে ওসি সাহেবের সাথে ভাব করেনি।এটা তৃষ্ণার কাজ।আহানের সন্দেহ হচ্ছে লোকটা মনে মোটেও সুবিধার নয়। আহান বিশেষ কেউ নয়,তাই তাকে অতিরিক্ত খাতির করা মানে লোকটা টাকা খেয়েছে হয়তো।এমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব বিপদজনক।যদিও রাত্রি কম বিপদজনক নয়,তবুও অচেনা বিপদ থেকে চেনা বিপদ ভালো।আগে থেকে বোঝা যাবে কি হতে পারে।যেটা অচেনা বিপদে ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।তাই আহান এখন রাত্রির বাড়ির সামনে কালো টি-শার্ট ও জিন্স পরে কাঁধে গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আজকে অনেক দিন পরে আহান গিটার নিয়ে বেরিয়েছে।ভেবেছিল তৃষ্ণার মন যদি ভালো করা যায় তাই আরকি। আহানের এইসব ভাবনার মাঝে হটাৎ ফোন এলো।ফোনটা রিসিভ করলো আহান
– কেমন আছিস?
– ভালো,শোন কাজের কথা বলি।
– .......
– কিছু বলছিস না কেন?
– কিছু বলার নেই তাই,এখন তুই বলবি আমি শুনবো।
– হুম....দেখ আহান আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি....কিন্তু ওকে মানে আইরিনকে কোথাও পেলাম না।
– হুম!!
– শুধু "হুম" আর কিছু বলবি না?
– কেউ চলে যেতে চাইলে আমি ধরে রাখতে পারবো না।
– ব্যাপারটা কি?
– কোন বিশেষ কারণ নেই, শুধু মনে হচ্ছে এবার ছেরে দেওয়া উচিৎ।
― উহু্ "ডাল মে জরুর কুচ কালা হে" অবন্তী মাড্যামের সাথে কিছু হয়েছে নাকি!
– তুই যা ভাবছিস তেমন কিচ্ছু হয়নি।এবার ফোন রাখ পরে কথা হবে।
– ঠিক আছে বলবি নাতো,আমি অ্যামেলিয়া কে নিয়ে খুব জলদি আসছি।নিজেই এসে দেখে নেব না হয়।
– তোরা আসছিস!!কবে ,,হ্যালো,,,রাজু.. হ্যালো
ফোন কেটে গেল।আহান আবারও ফোন দেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পা বারালো রাত্রির বাড়ির উঠনে।
কলিং বেল দুবার বাজাতেই দরজা খুললো রাত্রির ছোট বোন।
– আরে আহান স্যার যে,কি সৌভাগ্য আমার!! তা এতদিন পরে কি মনে করে আসা?
– স্যার!! ফাজলামি করছো?
– ফাজলামি করবো কেন?আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকতে পারবো না, আমি আপনাকে স্যার বলে ডাকবো ৷
– কেন ভাইয়া ডাকলে সমস্যা কি?
– ভাইয়া ডাকলে কাছের কেউ মনে হয়।আপনি কাছের কেউ না।পাঁচ বছরে একবার খোঁজ নিয়েছেন?
– আ.. তা...
– হয়েছে হয়েছে আর কিছুই বলার দরকার নেই।আমি জানি কেন এসেছেন!নিশ্চয়ই অবন্তী আপু কিছু ফেলে গেছে,তাই যেটা নিতে এসেছেন। তা না হলে বিদেশে থেকে ফিরে একবারও হলেও এখানে আসতেন।জানেন আম্মু এখনও মাঝে মাঝে আপনার কথা বলে।
এই বলে আলেয়া চুপ হয়ে গেল।আর কোন কথা হলো না।আলেয়া মেয়েটা বেশ অভিমানী। ওর রাগ এখন ভাঙ্গানো এখন সম্ভব না।পরে এক সময় চেষ্টা করতে হবে।যাই হোক রাত্রি মা ও মামা কেউ বাসায় ছিল না।আলেয়া বললো অবন্তী নাকি কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে ওদের বাড়ি থেকে।অবন্তী এখানে আসবে এটা আহান বুঝেছিল।তবে এই কয়েকটি দিন তাকে কোন মতে সামলে নিয়েছিল আহান।ভেবেছিল অবন্তী এখন শান্ত।কিন্তু এখন আর তা মনে হচ্ছে না।
আহান সোজা দোতলায় উঠে এলো রাত্রির রুমের সামনে।দরজাটা খোলা ছিল,কিন্তু কিছু না বলে তো আর ঢোকা যায় না। তাই একদুবার দরজা টোকা দিলো আহান ।কিন্তু কোন সারা শব্দ পাওয়া গেল না।আহান বাইরে দাঁড়িয়ে ঢুকবে নাকি ঢুকবে না তাই ভাবছিল।এমন সময় ভেতর থেকে রাত্রি বললো,“দরজা খোলা ভেতরে এসো”
ভেতরে ঢুকে রাত্রিকে দেখে আহান অবাক হলো।রুমে তেমন কিছুই নেই।মাঝে একটা বেডে।বেডের একটা ছোট্ট একটা টেবিল ও অন্য পাশে এট বড় টেবিলে কম্পিউটার রাখা।তার গা ঘেষে এক আলমারি।এছাড়া পুরো রুমটা খালি। রাত্রি রুমের উত্তরদিকের জানালার পাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার ডান পাশের গালটা লাল হয়ে আছে,তার চোখ জল টলমল করছে।কিন্তু কোন এক আশ্চর্য শক্তি দিয়ে রাত্রি তা চোখেই আটকে রেখেছে।রাত্রির হাতে একটা ছবি,ছবিটি রাত্রির বাবার।তিনি মারা যান রাত্রির জন্মের পরপরই।চোখের জলটা খুব সম্ভব বাবার কথা মনে পরে,তার গাল বেয়ে নিচে নেমে আসতে চাইছে।আহানকে দেখে রাত্রি জোর করে মুখে একটা হাসি এনে বললো,“আমি জানতাম তুমি আসবে!”
– এতোটা নিশ্চিত হয়ে...
আহানের কথা শেষ হলো না,তার আগে আহান দেখলো রাত্রি তার ঘরের আলমারি থেকে একটা পিস্তল বের করে হাতে নিয়ে বললো,“তোমার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তবে যদি উত্তর চাও তো আমাদের এখনি বেরিয়ে পরতে হবে....
********
সন্ধ্যায় অবন্তী একটা বই হাতে পড়াতে বসেছে।এখন সন্ধ্যা পার হয়ে রাত আটটা বাজে।অবন্তী এখনো বইয়ের প্রথম পাতায় আটকে আছে।কেন আছে এই প্রশ্নের উত্তর অবন্তী জানে!কিন্তু মানতে পারছে না।
সে আহানের কথা ভাবছে।শুধু আজকেই প্রথম যে এমনটা হচ্ছে ঠিক তেমনটা নয়।সে আগেও ভেবেছে,তবে এই কয়েকটি দিন যেন তার ভাবনাগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আর এই মুহুর্তে আহানের ভাবনায় তার মনটা কেন যেন অস্থির হয়ে উঠছে।আহান সেই দূপুরে বেরিয়েছে এখনো ফেরেনি।
অবন্তী হাতের বইটা বিছানায় তার ডানপাশে নামিয়ে রেখে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো।তাদের খাটের পাশে টেবিলটায় বক্সটা রাখাছিল।অবন্তী সেটা হাতে তুলে নিলো। বক্সটা হাতে নিয়ে অবন্তী কিছুক্ষণ হাঁটলো। তাতেও তার মন বসলো না।এক সময় অবন্তী জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। জানালার একপাশের কাঁচটা খোলা,সেখানে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে মেঘলা আকাশ। এই ঘরটা আহানের।প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন ঘরটা অবন্তীর বেশ পছন্দ হয়েছে।বিশেষ করে এই জানালাটি।কারণ এখান থেকে আকাশ দেখা যায়। অবন্তী আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো।দেখতে দেখতে দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে। খুব বেশি খারাপ সময় কাটছে এমনটা নয়। সারাদিন বাড়ির সব কাজ সেরে সন্ধ্যা থেকে হাতে বই নিয়ে বসা। এটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে কিছু দিন ধরে তার রুটিন মেনে চলা হচ্ছে না। আহান এখন মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে এটা ওটা বানিয়ে দেওয়ার আবদার করে। এই তো গতকাল সন্ধ্যায় অবন্তী প্রতি দিনের মত একটা বই নিয়ে বসছিল পড়তে।হঠাৎ আহান ঘরে ঢুকে বললো,
– কি করছো?
– তেমন কিছু নয়,একটা বই পড়ব ভাবছিলাম কেন বলতো।
– একটু কষ্ট করে বিরিয়ানি রান্না করে দেবে? খুব ক্ষুধা লেগেছে।
– এখন বিরিয়ানি?
– হ্যাঁ, খেতে ইচ্ছে করছে। না পারলে সমস্যা নেই,আমি না হয় হোটেল থেকে অর্ডার করে আনি।
বলতে বলতে আহান বেরিয়ে যাচ্ছিল।অবন্তী বইটা হাত থেকে নামিয়ে বলেছিল,“আহান দাঁড়ায়,হোটেল থেকে আনতে হবে না! আমি রান্না করি দিচ্ছি।"তারপর অবন্তী রান্না করার সময় আহান পুরোটা সময় রান্নাঘরে বসে ছিল।যেন তার আর তর সইছে না।তারপর খাওয়া শেষে আহান খুশি মনে চলে গেছিল।শুধু এই আবদার নয় কিছুদিন যাবত আহানের বেশ কিছু ছেলেমানুষি আবদার অবন্তী পূরণ করেছে।মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে এই ছেলেটা তার স্বামী। আহান অবন্তীর থেকে বয়সে বেশ অনেকটাই ছোট,তার ওপরে আহানের ছেলেমানুষী আচরণ।এইসব ভাবতে ভাবতে আবারও ঘড়ি দেখলো অবন্তী।রাত ৮:29। অবন্তী অস্থিরতাটা যেন আর বেরে গেলো।আহানকে আর একবার ফোন করে দেখবে কি না ভাবছে।তবে খুব বেশি ভাবা হলো না,মনের অস্থিরতাটা কাটানোর জন্য হলেও ফোন করতেই হবে। ফোনটা কিছুক্ষণ বাঝলো।তারপর ফোনের অপরদিকে থেকে রাত্রির গলা শোনা গেলো।“ইসস্...স্বামীর জন্যে খুব চিন্তা হচ্ছে তাইনা?” অবন্তী কোন উত্তর দিতে পারলো না।তার হঠাৎ এমন কেন লাগছে,গলা শুকিয়ে গেছে, নিঃশ্বাস কেমন যেন ঘন হয়ে আসছে।“কি হলো কথা বন্ধ হয়ে গেল নাকি,বলেছিলাম না অবন্তী আহানকে আসতে হবে।”ফোনটা কেটে গেল।অবন্তী আবারও ফোন করলো। কিন্তু ফোন বন্ধ.......
******
রাত্রি আহানের ফোনটা সুইচ অফ করে তার ব্যাগে রাখলো।তারপর গাড়িতে উঠে বসে বললো,“তোমাকে আমি সাহায্য করবো না তা আগেই বলেছি। তবে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর আমি দেব,তাই ভেবেচিন্তে প্রশ্ন করবে।” বলতে বলতে সে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
– তা কয়টা প্রশ্ন করতে পারবো?
– বড় জোর তিনটা এর বেশি নয়।
– কিন্তু আমার যে অনেক প্রশ্ন...
– না আহান আমি আগেই বলেছি।তুমি আমার কাছে সাহায্য না চেয়ে তৃষ্ণার কাছে সাহায্য চেয়েছো।তবে বলে রাখছি তৃষ্ণা মেয়েটা ভয়ঙ্কর।ও বাইরের চেহারা সবটুকু মুখোশে ঢাকা।একদিন আমি ঐ মুখোশ খুলে দেবো।
রাত্রি কথা প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলছে তা বোঝা যাচ্ছে। তবে তার তৃষ্ণার ওপরে এতো রাগ কেন আহান বুঝতে পারলো না।
– ভাইয়ের মৃত্যু সম্পর্কে কতটা জেনেছো?
– বলতে পারো প্রায় সমাধান করে ফেলেছি?
– মানে!
– এটা কি তোমার আরএকটা প্রশ্ন?
– রাত্রি প্লিজ এসব ...
রাত্রি হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষে একপাশে দাঁড় করালো।তারপর আহানের দিকে ফিরে বললো,“ দেখ আহান তোমার ভাইয়ের মৃত্যু টা আসলেই দূর্ঘটনা।ঐদিন গাড়িতে তোমার ভাইয়ের থাকার কথাই ছিল না।” আহান রাত্রির কথায় কিছুটা অবাক হয়ে বললো,“কি বলছো এইসব?”
– আমি ঠিকই বলছি আহান। ঐদিন গাড়িতে ফারুকের থাকার কথা ছিল হাসান নয়।
রাত্রি আহানের দিকে তাকিয়ে আছে স্থির ভাবে।আহানের মাথা কিছুদিন ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর জট খোলার চেষ্টা চলছে।
– অবাক লাগছে!লাগাটাই স্বাভাবিক।তবে এই বিষয়ে সন্দেহ আমার প্রথম থেকেই ছিল। তোমার মনে আছে ওই বাড়িটার কথা।ওখানে হাসানের ল্যাপটপ পেয়েছি আমি। ঐদিন তোমার ভাইয়ের অফিসে থাকার কথাছিল।কোন এক বিদেশি পার্টির সাথে মিটিং ছিল তাই।আর ওদিন রাতে ফারুরের প্ল্যান ছিল তৃষ্ণাকে নিয়ে কোন এক হোটেল ডিনার করার।কিন্তু তার আগেই কোন এক ব্যাপারে ফারুকে সাথে হাসানে কথা কাটাকাটি হয়।শেষের দিকে হাসান রাগ করে ফারুকে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরে।
– এই কারণেই ফারুক ভাইয়ে হটাৎ বদলে যাওয়া!
– সব হিসাব প্রায় মিলিয়ে ফেলেছি,শুধু আর একটা হিসাব মেলানো বাকি।
বলতে বলতে রাত্রি গাড়ি আবারও স্টার্ট দিল রাত্রি।
****
গাড়িটা এটা একটা গ্যারেজের সামনে এসে থামলো।
রাত্রি নেমে যাওয়ার শেষ মূহুর্তে আহান পেছন থেকে রাত্রি হাতটা চেপেধরে বললো।“রাত্রি তুমি কি জানো খুনি কে!”আহানের প্রশ্ন শুনে রাত্রি হাসতে হাসতে বললো,“তোমাকে তো বললাম আহান, এখনো জানি না তবে খুব জলদি জানবো।কিন্তু আহান এই কেসটা আমি টাকার জন্যে করছিনা! তোমার জন্যে করছি। তাই এই কেসটা যখন সমাধান করবো তখন সবার আগে তোমার কাছে আসবো।আমার পাওনাটা বুঝে নিতে।এবার গাড়ি থেকে নামো।”আহান গাড়ি থেকে নেমে দেখলো রাত্রি গাড়ির চাবিটা একটা লোকের হাতে দিয়ে বললো,“দরকার পড়লে ফোন করবো ঠিক আছে।” লোকটা রাত্রির কথায় মাথা নেরে সম্ততি জানালো। আহান রাত্রির কাছে গিয়ে বললো,“আমার কোথায় যাচ্ছি বলবে?।
– এখান থেকে হেটে যাবো,বেশি দূরে নয়।
– আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা কিন্তু এখনো বলোনি।
রাত্রি কিছুটা সামনে এগিয়ে গেছিল।আহানের কথায় পেছন ফিরে বললো।,“থানার পুরোনো ওসির সাথে দেখা করতে।”
– এখানে!
– হ্যাঁ এখানেই, আমি আগেও এসেছি সুতরাং ভুল হবার কথা নয়।
– আগে যখন এসেছো আবার কি দরকার?
– আগে লোকটা যা বলেছে সবই মিথ্যে তাই আবার যাচ্ছি।
– আগে যে মিথ্যে বলেছে সে কি এখন আমাকে দেখে সত্য বলতে শুরু করবে!
আহানের কথা শুনে রাত্রি এবা শব্দ কর খিলখিলিয়ে হেসে ফেললো।আহান তাকিয়ে রইলো রাত্রির দিকে।তারা এখন একটা লাম্পপোটের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে। তবে রাত্রির কাজল মাখানো চোখে ঐ আকাশে চাদেঁর এক ঝলক আলো যেন খেলা করছে।“আহান তোমাকে দেখে সত্য না বললে অন্য উপায় আছে চিন্তা করো না।তুমি যেটা জানতে চাইছো তা আমি জানি আহান।”আহান হাঁঁটতে লাগলো।তবে এবার সে রাত্রির আগে আগে যদিও সে গন্তব্যের ঠিকানা যানে না।,“আহান ওদিকে নয় আমাদের এদিকে যেতে হবে.....
*****
আহান একটি একতলা বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এখন বড়জোর হয়তো নয়টা বাঝে।সঠিক সময় জানানেই আহানের।কারণ তার ফোনটা চুরি হয়েছে কোন ভাবে।যতদূর মনে পরে শেষ বার তারা থেমেছি একটা রেস্টুরেন্টে।হয়তো ওখানেই কেউ মেরে দিয়েছে।যাই হোক এখনো রাত খুব বেশি হয়নি।কিন্তু কোন কারনে এই বাড়িটার আলো সব নেভানো।এতে সমস্যা ছিল না। সমস্যা হলো যখন তারা দেখলো দরজাটা খোলা।তবে ইচ্ছাকৃতভাবে নদরজাল লক ভেঙ্গে কেউ ভেতরে ঢুকেছে।রাত্রি একটু দূরে ফোন কারো সাথে কথা বলছিল। এখন এগিয়ে এসে তার কাঁধের ব্যাগ থেকে পিস্তলটা বেরকরে হাতে নিল রাত্রি।
– এটার কি কোন প্রয়োজন আছে।
– আহান তুমি বাইরে থাকো এখানে কোন সমস্যা আছে।
বলেই রাত্রি ভেতরে ঢুকতে গেল।আহান পেছন থেকে রাত্রির কাঁধে হাত দিয়ে তাকে আটকে দিয়ে বললো,“ তুমি বেশি চিন্তা করছো,তাছাড়া যদি আসলেই কোন দিপদ হয় তাহলে বিপদটা প্রথমেই আমার ওপর দিয়ে যাবে।”বলেই আহান বাড়ির ভেতরে অন্ধকার ঢুকে পরলো।”আহানের কান্ড দেখে রাত্রি চাপা স্বরে বললো“আহান দাঁড়াও!!আহান!!... ” তারা ভেতরে ঢুকতেই ঘরের আলো জ্বলে উঠলো। সে সাথে কেউ বলে উঠলো,“ ডোন্ট স্ক্রিম,”তবে আহানের সেদিকে নজর নেই সে বিস্ফারিত চোখে দেখছে তার সামনে মেঝের দুজন লোক পরে আছে,তাদের মাথার কাছে মেঝেতে রক্তের দাগ।রাত্রি ঘরে ঢুকেই তার হাতে পিস্তল উচিয়ে ধরেছে রুমে একটা কোণার দিকে,তার দৃষ্টি সেদিকে স্থির।রুমটায় সোফার পাশে দুটো লোকের দেহ পরে আছে আর সোফা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে এটা মেয়ে।মেয়েটার পরনে কালো জ্যাকেট,প্যান্ট ও জুতো।মেয়েটার মুখ হেলমেট দিয়ে ঢাকা।
– রাত্রি!! কি সৌভাগ্য আমার, আম ভেবেছিলাম তোমাকে পেতে আমার আরো সময় লাগবে।ভালোই হলো তুমি এসেছো।
এবারের কথাগুলো এলো মেয়েটার ডান বাহুতে আটকানো এটটা ডিভাইস থেকে।কথাগুলো শেষ হতেই রাত্রি বললো,“আহান পালায়!” আহান ঘোর কেটেছে এতখনে,সে সামনে মেয়েটিকে দেখে নিয়ে বললো,“কে তুমি?” আহানের কথা শেষ হতেই রাত্রি কিছু বলতে চাইছিল,কিন্তু তার আগেই আবার সেগ ডিভাইসে্য থেকে নারী কন্ঠে কেউ বললো,“রাত্রি!আমি তোমার সাবধান করেছিলাম,তারপরেও তুমি এতদূর চলে এলে চু" চু" চু" এখন কি হবে তোমার।পিস্তল টা ফেলে দাও রাত্রি এই খেলায় তোমার হার নিশ্চিত।” এই জটিল কথাগুলো নেয়ার মতো অবস্থায় এই মূহুর্তে আহানের নেই।তার চোখ এখন স্থির হয়ে দেখছে মেয়েটিকে।এদিকে দুই নারী একজন জন্যের দিকে মুখোমুখি পিস্তল ধরে দাঁড়িয়ে।যেখনো মুহুর্তে কোন একজন ট্রিগার চাপতে পারে।আহান একটু পিছিয়ে এলো,তবে পালাতে নয় তার মাথায় অন্য প্ল্যান। আহান ও রাত্রি দাড়িয়ে ছিল একদম দরজার মুখে। সামনে মেয়েটির নজর তখনও রাত্রির দিকে। আহান একটু পেছনে সরে হঠাৎ এক হেচকা এক টানে রাত্রিকে নিয়ে দরজার বাইরে বাঁ পাশে সরে গেল।তার পরই গুলির আওয়াজ। দরজার ফ্রেম ঘেঁষে বেরিয়ে গেল গুলিটা। আহান দেখলো তাদের গাড়িটি এসে দাঁড়িয়েছে সামনের রাস্তায়, কয়েক জন লোক বাইরে বেরিলে এলো গাড়ি থেকে।তারের মধ্যে এক জন থানার নতুন ওসি মনির।এমন সময় বাড়ির পেছন থেকে বাইকের আওয়াজ কানে এলো।রাত্রি দেরি না করে ছুটে গেল বাড়ির পেছনে কিন্তু ততখনে মেয়ে চলে গেছে।এদিকে আহানের চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে ধীরে ধীরে।আহান দেয়ালে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।শেষ পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকতে না পেরে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়লো সে।অল্প আওয়াজ কানে এলো তার।রাত্রি বলছে,“শীট!! আহান! আহান!!....
******
Continue .......
আপডেটটা ছোট হয়ে গেল।যদিও বিরতি নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু আসলেই খুবই চাপের মধ্যে আছি।ভাইয়ার হটাৎ শরীর খারাপ হওয়াতে পুরো মার্কেট সামলানোর দায়িত্ব এখন আমার ওপরে।তার ওপরে নিজের কাজও সামলাতে হচ্ছে।লেখালেখির সময় পাচ্ছি না।ঈদের আগে আর কোন আপডেট দিতে পারবো না। ঈদের পর থেকে আবার আসছি ,ভালো থাকবেন সবাই,ধন্যবাদ