ভাগ্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ৪
জীবনসঙ্গী:-খন্ড ৪
অবন্তী দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই দেখলো।আহান খালি গায়ে একটা জিন্স প্যান্ট ও জুতো পরে উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। কালো সুতোর মতো কিছু চুল আহানের চোখ ও নাকের সামনে এসে রয়েছে। অবন্তী এসেছিল বিছানার চাদরটা তুলে নতুন চাদরটা বিছিয়ে দেয়ার জন্যে। আহান বিছানায় ঘুমিয়ে আছে দেখে সে ভাবছে কি করবে। ছেলেটাকে ডেকে তোলা কি ঠিক হবে? বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরে একদিনও বিছানায় ঘুমনোর ভাগ্য হয়নি আহানের। নিজের ঘরেই তার স্থান হয়েছে ঘরের কোনের ছোট্ট সোফাটা। আজ সকালেই অবন্তী লক্ষ্য করেছিল খাবার টেবিল খেতে বসে আহান একটু পরপর তার ঘাড়ে হাত বুলাচ্ছে। বাবা জিগ্যেস করছিল কি হয়েছে। তখন আহান কথা ঘুরিয়ে দিলেও অবন্তীর বুঝতে কষ্ট হয়নি যে, প্রতিদিন সোফায় ঘুমানোর কারণে ঘাড় ব্যথা করছে আহানের। তখন অবন্তীর মনে প্রশ্ন জেগেছিল"ছেলেটা কি বদলাবে না কোনোদিন" এসব ভাবতে ভাবতে অবন্তী এগিয়ে যায় আহানের দিকে।আহানের পায়ের কাছে এসে হাতের থাকা চাদরটা খাটের এক পাশে রেখে দেয়।তারপর আহানের পায়ের পাশে বসে আহানের পা থেকে একটি জুতো খুলে নিয়ে অন্য জুতোটা খুলতেই আহান নড়েচড়ে তার পা দুটি কিছুটা গুটিয়ে নেয় ওপরের দিকে। আবারও অবন্তীর চোখ চলে যায় আহানের দিকে, পাগলের মতো হাত পা ছুরে শুয়ে আছে বিছানায়। আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে অবন্তী ভাবে,কত ফ্রি ছিল তারা একে অপরের সাথে,একদম বন্ধুর মতো। কত কথা কত গল্পে হতো তাদের মধ্যে। হঠাৎ একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দেশ ছাড়তে হয় আহানকে।তখন খুব একটা কথা হতো না তাদের। কিন্তু এই কয়েদিন প্রয়োজন ছাড়া কোন কথাই হচ্ছে না আহানের সাথে।আর কথা বললেও খুব একটা ভালো ব্যবহার সে করছেনা আহানের সাথে। কেন করছে এমন! এখনো বুঝে উঠতে পারেনি সে। কোন দোষ করেনি ছেলেটা,আর সে তো অন্য কারো সাথে এমন কঠিন ব্যবহার করেনি কখনো। বার বার আহানের সাথে এমন বাজে ব্যবহার করার পরেও আহান কোন প্রতিবাদ করছে না,কখনো করবেও না অবন্তী জানে সেটা।। আহানের সাথে পরিচয়ের পরথেকেই অবন্তী দেখে এসেছে ছেলেটার সাথে যে যেমন ব্যবহার করুক না কেন সব হাসিমুখে সহ্য করে নেয়। যে যাই বলুক এক গাল মিষ্টি হাসি অক্ষুণ্ণ থাকতো তার মুখে। কথাটা মনে পরতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে অবন্তী। এই কদিনে অবন্তী একবারও হাসতে দেখেনি আহানকে। এর কারণ কি সেই মেয়েটা?বিদেশে যাওয়ার পরে তাদের মধ্যে খুব একটা কথা না হলেও দুই ভাইয়ের মধ্যে কি কথা হতো তা জানে সে। কিন্তু আহানের কোন গার্লফ্রেন্ড আছে একথা কখনো বলেনি হাসান তাকে।【আহানের ভাইয়ের নামটা বদলাতে হলো, কারণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন না করলে খুশি হবো】আহানের সাথে এনিয়ে কথা বলা দরকার।ছেলেটাকে না জানি কোন বিপদের ফেলেছে সে। কিন্ত কেন যানি আবন্তীর মনে কোন অপরাধবোধ জাগছে না। নিজেকে বড় নিষ্ঠুর ও কঠিন হৃদয়ের মনে হচ্ছে। বিধাতার দেয়া কষ্ট বোঝাটা অন্য কারো ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।আহানের পাশে আর বসে থাকতে ইচ্ছে করে না তার। জুতো দুটি খাটের পাশে রেখে অবন্তী উঠে দাড়ায়,সে দরজার দিকে পা বারাতেই তার শাড়ির আঁচলে টান পরে। থমকে দাঁড়ায় অবন্তী,দুচোখ বন্ধ করে নাক দিয়ে লম্বা নিশ্বাস নেয়।সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিরশিরানি অনূভব হয় তার। এমন কিছুর জন্যে সে মোটেও তৈরি ছিল না। আহানের দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করে অবন্তী
অবন্তী― কী করছো আহান!?
অবন্তীর প্রশ্নের কোন উত্তর আসেনা পেছন থেকে,তাই অবন্তী ঘুরে দাড়ায় পেছনদিকে ।ঘুরে দাড়াতেই দেখে শাড়ির আঁচলটা আটকে আছে আহানের পায়ের....
****************************************
―উঃ....
ঘুম ভাঙতেই কানে একটা অস্পষ্ট কাতরোক্তি শুনলো আহান। চোখ মেলে দেখলো অবন্তীর একটা হাত তার শক্ত মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে রেখেছে সে। নরম তুলতুলে একখানা হাত। বুঝতে পেরে সাথে সাথে হাতটা ছেরে দিলো সে। অবন্তী হাতটা কোলের কাছে নিয়ে অন্য হাতে দিয়ে কব্জিতে বোলাতে লাগলো।অবন্তী একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পরে খাটে হেলান দিয়ে বসে বই পরছিল। অবন্তী লক্ষ্য করলো আহান কেমন জেন করছে।দেখে য়নে ,চ্ছে তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আহান বেড সাইডে রাখা টেবিল টার দিকে হাত বারিয়ে পানির গ্লাসটা নিতে চাইছে,কিন্তু আহানের হাতটা থরথর করে কাঁপছে। অবন্তী বইটা বিছানায় রেখে দিয়ে উঠে খাটের ওপর পাশে গিয়ে পানির গ্লাসটা হাতে তুলে নিল,তারপর আহানকে পানি খায়িয়ে দিয়ে বললো
অবন্তী― এমন করছো কেন আহান!?
উত্তরে আহত দৃষ্টিতে তাকায় আহান অবন্তীর দিকে। আহানের চাহনী দেখে অবন্তী একটু ঘাবড়ে যায়,আহানের চোখে কোন আজানা আতঙ্কের ছাপ।আহানের সাভাবিক হতে একটু সম লাগে। আহান খাটের একপাশে বসে মেঝের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। অবন্তী আবারও জানতে চায়,
অবন্তী― আহান কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ এমন করছো কেন?
কিন্তু আহানের কাছে থেকে কোন উত্তর আসে না।আহান খাট থেকে ধীরে ধীরে উঠে সোজা বাথরুমে ঢুকে পরলো।
আহান বেশ অনেকখানিই বাথরুমে কাটিয়ে,এক সময় বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। অবন্তি বেলকনির দাড়িয়ে সোজা বাথরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে ছিল,আহান বেরিয়ে আসতেই সে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আহান বাথরুমে থেকে তার অভ্যেস মতো কোমড়ে একটা তোয়ালে পেচিয়ে বেরিয়ে এসেছে। অবন্তী বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল।একসময় আহান এসে তার পাশে দাঁড়ালো।বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর আহান বললো।
আহান― কিছুক্ষণ আগে যা হয়েছে তা কি ভুলে যাওয়া যায়?
অবন্তী আহানের দিকে তাকালো,কিন্তু কিছু বললো না
আহান― অনুরোধ করছি।
অবন্তী একথারও কোন জবাব দেয় না,মুখ ঘুরিয়ে নেয় বাইরের দিকে। আহান বুঝতে পারে অবন্তী কাছে থেকে কোন উত্তর সে পাবে না। আহানের সাথে অবন্তীর সম্পর্কে টা এখন আর আগের মতো নেই।এখন প্রয়োজনের বাইরে অবন্তীর সাথে খুব একটা কথাবার্তা হয় না আহানের। আহান এক দুবার চেষ্টা করেছে কথা বলার। কিন্তু প্রতিবারই যেন পাথরের দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছে সে।
অবন্তী― এমন করছিলে কেন?
অবন্তীর প্রশ্নে আহান মুখ ফিরিয়ে তাকায় অবন্তীর দিকে তারপর বলে।
আহান― তেমন কিছুই না,একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাই এমন হয়ে ছিল।
অবন্তী― কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি মিথ্যে বলছো আহান।তবে আমি তোমায় জোর করবো না,শুধু একটা প্রশ্ন(অবন্তী আহানের দিকে ফিরে চোখে চোখ রেখে বলে) ছবির মেয়েটি এখন কোথায়?
অবন্তীর দিকে তাকিয়ে ছিল আহান,প্রশ্নটা শুনেই আহানের দুচোখের পাতা কেঁপে ওঠে। গত কয়েকটি বছর ধরে এই প্রশ্নটা প্রতি নিয়ত তার মনে আঘাত করছে চলেছে।এই প্রশ্নের উত্তর যে আজও তার অজানা,কিভাবে দেয়ে সে এই অবন্তী প্রশ্নের জবাব..
************************************
সকালে জগিং শেষ করে বাড়িতে ঢুকেই সোজা দোতলায় উঠে যায় আহান। রুমে ডুকেই টি–শার্ট টা খুলেতেই তার পেছন থেকে কেউ বলে ওঠে
― ওয়াও!
গলার আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে আহান।পেছনে ঘুরে দেখে, ঘরের কোনার দিকের সোফাটায় কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পরে রাত্রি মেয়েটা বসে আছে পায়ে ওপরে পা তুলে। তার হাতে আহানের সেই বক্সটা। আহান ঘুরে দাড়াতেই রাত্রি তার হাতের বক্সটা আহানের দিকে সজোরে ছুড়ে দিয় বললো।
রাত্রি― সারপ্রাইজ
আহান হকচকিয়ে গেলেও কাচ মিস করেনি সে,ঠিক তার মুখের লাগার আগেই এহাতে বক্সা ধরে ফেলে সে। এটা দেখে রাত্রির মুখ হাসিতে উজ্জল হয়ে ওঠে।
রাত্রি― হোয়াট এ রিফ্লেক্স,অ্যায়ম ইমপ্রেস
আহান― আপনি আমার রুমে..
আহানের কথা সম্পূর্ণ হবার আগেই রুমে ঢোকে অবন্তী,তার হাতে কফির কাপ।আহান কে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবন্তী বলে।
অবন্তী― আহান ও রাত্রি আমার বান্ধবী,মনে নেই তোমার?
আহান কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না,সে একবার অবন্তীর মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রাত্রির দিকে। আহানের অবস্থা দেখে রাত্রি হাসতে হাসতে অবন্তীর হাত ধরে তাকে বেলকনির দিকে নিয়ে যায়।অবন্তী আহানের মনের ভাবটা বুঝতে পারছে,সে রাত্রিকে প্রশ্ন করে-
অবন্তী― এভাবে হাসছিস কেন?
অবন্তী কথার কোন জবাব না দিয়ে রাত্রি বেলকনির দিকে এগিয়ে যায়। আহান সেখানে দাঁড়িয়েই ভাবতে রাত্রি মেয়েটা কথা।এই মেয়েটির জন্যে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাকে,প্রায় বছর খানেক গ্রামের বাড়িতে থেকে শেষমেশ দেশ ছাড়তে হয়। রাত্রিকে সে ভোলেনি,কিন্তু এই রাত্রি কে সে চিনতে পারছে না। মেয়েটার শারীরিক পরিবর্তনের সাথে চেহারায় বদলে গেছে অনেকটা। আহান লক্ষ্য করলো রাত্রি অবন্তীর সাথে কথা বলতে বলতে আড়চোখে মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাছে ঠোঁটের ফাঁকে রহস্যময় হাসি নিয়ে। আহান মনে মনে ভাবে,আবারও কি কোন খেলা খেলছে মেয়েটা।এখন বুঝতে পারছে ওই দিন এমনভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো কেন। আহান বাথরুমের ঢুকে জলদি তৈরি হতে থাকে,এই মেয়েটার আসেপাশে থাকাটা বিপদজনক।
রাত্রির জন্যে অভ্যাসের বেতিক্র হচ্ছে আহানের। অন্য সময় হলে শুধু তোয়ালে পরেই বেরিয়ে আসতো বাথরুমে থেকে। কিন্তু এখন তা করা যাবে না,তাই প্যান্ট ও টি-শার্ট নিয়েই ঢুকেছে। বাথরুম থেকে তৈরি হয়ে দরজা খুলতেই দেখে রাত্রি সামনে দাঁড়িয়ে।আহান কিছু বুঝে ওঠার আগে রাত্রি দুহাতে আহানকে ঠেলে নিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। আহান রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে বলে
আহান― এসব কি হচ্ছে?
রাত্রি ― শশস্, চিৎকার করো না আহান,চেঁচামেচি করলে তুমি নিজেকে নিজেই সমস্যায় ফেলবে।
আহান― রাত্রি প্লিজ আমাকে বেরোতে দাও
রাত্রি ― আহান এতো ভয় পাচ্ছো কেন?আমি শুধু কয়েকটি কথা বলতে চাই তোমাকে
রাত্রি আহানের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই আহান কিছুটা পেছনে সরে বলে
আহান― তোমার যা বলার বাইরে গিয়ে বলবে, এখানে নয় প্লিজ....
রাত্রি আবারও এগিয়ে যায় আহানের দিকে,এগিয়ে যেতে যেতে বলে
রাত্রি― কেন আহান! এখানে কথা বললে কি হবে শুনি, অবন্তী এসে যাবে?
আহান রাত্রির সাথে তাল মিলিয়ে পেছনে যেতে থাকে আর বলতে থাকে
আহান― রাত্রি প্লিজ... কাছে এসো না প্লিজ...
রাত্রি ― আহান এতদিন পরে তোমাকে পেয়েছি আর পেয়ে যে সেই সুযোগ ছেড়ে দেবো সেরকম বোকা নই আমি।
এটুকু বলে রাত্রি আহানকে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁটে মিলিয়ে চুমু দিতে লাগলো। কিন্তু আহান কিছুই করছে না,আহান তাকে বাধা দিচ্ছে না দেখে রাত্রি অবাক হলো এটা সে আশা একদমই। কিন্তু পর মূহুর্তেই অনূভব করলে আহান কাঁপছে।চোখ মেলে আহানকে দেখেই থমকে দাড়ায় রাত্রি,বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে আহানের দিকে। আহান কেমন করছে যেন,চোখের দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আহানের। রাত্রি ছুটে যায় দরজার দিকে। কিছুক্ষণ পরেই রাত্রি ও অবন্তী এক সাথে ঢোকে বাথরুমে।অবন্তী আহান কে দেখেই ঘাবড়ে যায়। আহান কাঁপা কাঁপা হাতে বাথরুমের দেয়াল ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। ্গতকাল সন্ধ্যায় যা হয়েছিল তার থেকেও খারাপ অবস্থা এখন....
*************
রাজু― .....আইরিন চলে যাওয়ার পর টানা দুই মাস হাসপাতালে থাকার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে আহান,তবে এখনো মাঝে মধ্যেই আতঙ্কিত হলে বা ভয় পেলে প্যানিক ডিজঅর্ডার হয় আহানের।
এতোখন ধরে অবন্তী শুনছিল সব। এক পর্যায়ে প্রচন্ড রেগেগিয়ে রাজুকে ফোনেই ধমকাতে শুরু করে।
অবন্তী― এসবের মানে কি? আহানের এই অবস্থার কথা এতোদিন জানাও নি কেন? এমন বোকামী করলে কিভাবে তোমরা?
ওপাশ থেকে কোন জবাব আসছে না দেখে।আরো রেগে যায় অবন্তী।
অবন্তী― কথা বলছো না কেন?
রাজু ― আর কিছুই বলার নেই। আমার যা বলার ছিল বলেছি এবং আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ছিল করেছি তবে যে নিজে সুস্থ হতে চায় না তার জন্যে আর কতটুকুই বা করা যায়। একটা শেষ কথা বলতে চাই যাকে আপনি কখনো ভালোবাসতে পারবেন না,ঠিক তেমনিভাবে তাকে কষ্ট দেয়ার অধিকারও আপনার নেই।
ওপাশ থেকে কলটা কেটে গেলো,কিন্তু অবন্তীর কানের কাছে রাজুর শেষ কথাটা বার বার রিপিট হচ্ছে। বেশ অনেকক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে ।এক সময় অবন্তী নেমে এলো ছাদ থেকে। রান্নাঘরে পা রাখতেই তৃষ্ণা গলা কানে লাগলো তার।
তৃষ্ণা― আন্টি আহানকে বল না আমাকে গিটার বাজানো শেখাতে, তুমি বললে না করতে পারবে না,প্লিজ আন্টি বলো না।
মা ― বিয়ের পর ছেলেরা মায়ের থেকে বৌয়ের কথা বেশি শোনে,তুই অবন্তী কে বল। দেখবি ওকে বললেই রাজি হয়ে যাবে।
তৃষ্ণা― মজা করছো আমার সাথে তাই না।
মা― মজা করবো কোন তোর সাথে।
তৃষ্ণা― মজা নয়তো কি! তোমার বাড়ি ,তোমার সংসার, তুমিই হলে এ বাড়ির মহা রাণী,তোমার আদেশ মানবে না এমন কেউ আছে এবাড়িতে,আমিতো পারবো না বাবা,আমার মাথা আমি আমার ঘাড়েই রাখতে চাই।
তৃষ্ণা কথা শুনে মা হাসতে হাসতে বললো।
মা― হয়েছে আর তৈল মারতে হবে না।সর দেখি দুধটা আহানকে দিতে হবে।
তৃষ্ণা― বিশ্বাস করো একদম তৈল মারছি না। বলনা বলবে কিনা?
মা― আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলে দেখবো।
তৃষ্ণা মাকে জরিয়ে ধরে গালে একটা চুমু খায় ,তারপর মায়ের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে বলে।
তৃষ্ণা― তুমি হলে এ জগতের সবচেয়ে ভালো আন্টি ,দুধটা আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।
তৃষ্ণা এতখন ধরে যা করছিল ,সবকিছুই একটু দূরে দাঁড়িয়ে রাত্রি দেখছিলো। তৃষ্ণা বেরিয়ে যেতেই,তার সাথে সাথে মাও বেরিয়ে গেলো। রাত্রি এগিয়ে এলো অবন্তীর কাছে। রাত্রি অবন্তীর পাশে দাড়িয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বললো।
রাত্রি― এই মেয়েটার থেকে সাবধান।মেয়েটা ভালো অভিনয় পরে। আহানের কাছে যত কম আসে ততোই ভালো। আজ আমি আসি, কয়েক দিনের জন্যে ঢাকার বাইরে যাবো।
অবন্তী― এখুনি চলে যাবি? আর কিছুক্ষণ থাক না।
রাত্রি― না রে এখনি যেতে হবে,ভালো থাকিস জলদি ফিরবো।
এটুকু বলেই রাত্রি বেরিয়ে গেলো। অবন্তী রাত্রির চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।তারপর সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল সে। সিড়ি দিয়ে ওপড়ে উঠতে উঠতে অবন্তী ভাবছে এখন কি করবে সে। বাবা-মা ধিরে ধিরে তাদের বড় ছেলের মৃত্যু ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠছে।এখন যদি তারা জানতে পারে তাদের আরেক ছেলে মানসিক রোগী তখনকি হবে। আর ভাবতে পারে না এখন তার কি করা উচিত।এখন সে নিজেকে সামলাবে নাকি আহানকে? দোতলায় উঠতেই গিটারের আওয়াজ কানে এলো,তার সাথে গান।
"আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে"
"দেখতে আমি পাইনি"
"তোমায় দেখতে আমি পাইনি"
"আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে"
"বাহির পানে চোখ মেলেছি"
"বাহির পানে"
"আমার হৃদয় পানে চাইনি"
গিটারের সুরের সাথে গানেটি মেলানো মুশকিল,গান ও সুর ভিন্ন। নিশ্চয়ই তৃষ্ণা কাজ। আহানের গানের গলা মোটামুটি চালিয়ে নেয়ার মতো হলেও গিটার সে ভালোই বাজাতে পারে। রুমে দরজার কাছে আসতেই অবন্তী দেখে তৃষ্ণা খাটে বসে গিটার কোলে নিয়ে বাজাছে। অবন্তীকে দেখেই আহান করুণ চোখে তাকালো অবন্তীর দিকে।অবন্তী দেখেই বুঝলো,আহান তৃষ্ণার হাত থেকে ছাড়া পেতে চাইছে। বিভিন্ন চিন্তাভাবনা অবন্তীর মাথায় খেলা করছিল,কিন্তু এতো কিছুর পরেও আহানের অবস্থা দেখে একটু হাসি পেল অবন্তীর।
********
এখন দূপুর বাইরে রোদ ঝলমল করছে। বাড়ির গেটের কাছে লাগানো হাস্নাহেনার ঝাড় থেকে ফুলের তীব্র ঘ্রাণ ভেসে আসছে।গেটের বাইরে আহান অপেক্ষা করছিল তৃষ্ণার জন্যে,একটু পরেই তৃষ্ণা বেরিয়ে এলো। তৃষ্ণা কে দেখে আহান বললো
আহান― গাড়ি কোথায়?
তৃষ্ণা ― আমি গাড়ি করে আসিনি,হেঁটে এসেছি।
আহান তৃষ্ণার দিয়ে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে,ওকি মজা করছে নাকি সত্যি বলছে
তৃষ্ণা ― এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কি জানতাম তুমি ফারুকের সাথে দেখা করতে চাইবে,তাও আবার এখুনি।
আহান তৃষ্ণার সাথে আর কথা না বারিয়ে একটা রিশকা ডাক দিলো,তারপর রিশকায় উঠে দুজন্যে চললো আফিসের উদেশ্যে। জলদি পৌছাতে হবে,তৃষ্ণা বলেছে আজকেই কক্সবাজার চলে যাবে ফারুক ।আর কক্সবাজার থেকে কয়েকদিন পরেই বিদেশে চলে যাবে মাসখানেকের জন্যে। আহানের মাথা কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,সেগুলোর উত্তর তার জানতেই হবে।
দেখতে দেখতে অফিসের সামনে এসে গেল তারা। অফিসের ঠিক একটু সামনেই তৃষ্ণা রিশকা থেকে নেমে গেলে সামনেই।আহান জানতে কারণ জিনতে চাইলে কোন উত্তর দেয়নি তৃষ্ণা। আহান অফিসের ভেতরে ঢুকে এগিয়ে গেল রিসেপশন ডেস্কের দিকে।
সেখানে গিয়ে হলো আর এক সমস্যা। রিসেপশন ডেস্কের একটা সেইরকম সুন্দরি আর মডার্ন স্টাইলিশ মেয়ে বসে আছে। সে কোন ভাবেই আহানকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া দেখা করতে দেবেনা।
― অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া স্যারের সাথে দেখা হবে না,দাঁড়িয়ে থেকে কোনও লাভ নেই।
আহান– আমাকে যে দেখা করতেই হবে,আপনি আপনার স্যারকে ফোন করে বলুন আহান নামে এক জন্য দেখা করতে এসেছে, প্লিজ।
― দেখুন আপনি শুধু শুধু যামেলা করছেন...
মেয়েটার কথা শেষ হবার আগেই আহানের পেছনে তৃষ্ণা এসে দাড়ালো।
তৃষ্ণা ― কি হয়েছে?
― ম্যাম,এই লোকটার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই, কতবার বলছি তার পরেই ...
তৃষ্ণা ― থামো. ওর কোন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবে না।আর শোন পরের বার থেকে ওকে স্যার ডাকবে। মনে থাকবে তো?
― সরি ম্যাম বুঝতে পারিনি!
তৃষ্ণা― আহান আমার সাথে এসো।
তৃষ্ণা ও আহান লিফটের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই ,মেয়েটা পেছন থেকে ডাকলো।
― ম্যাম! একটা কথা
তৃষ্ণা― পরে শুনবো এখন নয়।
― ম্যাম,স্যার অফিসে নেই
কথাটা শুনে তৃষ্ণা ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেয়েটার দিকে।তৃষ্ণা তাকানো দেখেই মেয়েটা মাথা নিচু করে ফেললো।
আহান ― এই কথাটা আগে বললে কি খুব সমস্যা হতো?
মেয়েটা কাছে থেকে কোন উত্তর আসে না। তবে তৃষ্ণার মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তৃষ্ণা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে ,আর মেয়েটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তৃষ্ণা কিছু বললেই সে কেঁদে ফেলবে। তা দেখে আহান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে তাকে আফিস থেকে বাইরে বের করে আনলো।
আহান ও তৃষ্ণা পাশাপাশি হাঁটছে। তৃষ্ণা আজ হালকা বেগুনি রঙের ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরেছে। তাকে দেখতে ভারী মিষ্টি লাগছে। কিন্তু তার সাথে লাগছে দারুণ সেক্সী। রাস্তার অনেকেই তাকাচ্ছে তাদের দিকে,বিশেষ করে তৃষ্ণার দিকে।আহান লক্ষ্য করে তৃষ্ণা অনেকখন ধরে তার স্বামীকে ফোন করছে ।কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগোতেই ধুলার রাজ্য যেন গ্রাস করল তাদের। রাস্তায় কোন খোঁড়াখুঁড়ি চোখে পড়ছে না তবুও এত ধুলা কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আহান জানলো গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে খানিক দূর এগিয়ে গিয়ে। বেড়িবাঁধ ধরে বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে যেতে ডানে নদীতে বালুবাহী কয়েকটি নৌকা চোখে পড়ল। ঘাটে ভেড়ানো নৌকাগুলো থেকে কয়েক শ শ্রমিক ঝুড়িতে করে বালু নিয়ে আসছেন। সেই বালু স্তূপ করে রাখা হচ্ছে নদীর পাড়ে। এর পাশে শ্রমিকেরা হাতুড়ি দিয়ে ইট ভাঙছেন। সেই ইটভাঙার ধুলা, রাস্তার ধুলা, বাতাসে উড়ে আসা বালু—সব মিলিয়ে গোটা এলাকা ধুলার রাজ্যে রূপ নিয়েছে।ধুলায় নাক-মুখ চেপে ধরে হাটছে পথচারীরা। অনেক খন হাঁটাহাঁটির পরে তৃষ্ণা তার ড্রাইভাকে ফোন করিছিল। সে তাদের খুঁজে গাড়িতে উঠিয়ে আহানের বাড়ির উদেশ্যে চলতে থাকে।
আহান― ফারুক ভাই কক্সবাজার কয়দিন থাকবে?
তৃষ্ণা ― সেটা বলতে পারবো না,তবে দুই একদিনের বেশি থাকবে না।
আহান কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলে
আহান― আমি আজকেই কক্সবাজার যাবো।
তৃষ্ণা গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আহানের কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে বসলো আহানেল দিকে।
তৃষ্ণা― কি বলতো আহান,তুমি ফারুকের সাথে দেখা করতে চাইছো কেন?
আহান― একটা বিষয়ে সম্পূর্ণ না জেনে তা নিয়ে আলোচনা আমি করিনা,তাই আগে আমাকে জানতে ও বুঝতে দাও ব্যাপারটা।তার পর না হয় তোমাকে বলবো।
তৃষ্ণা আর কথা বারায় না ,আবারও বাইরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে।
****************
বাবা― কক্সবাজার যাবি! আজ রাতেই?
আহানের বাড়িতে লিভিং রুমে সবাই একসাথে আলোচনা করছে। আহান ও তার বাবা-মা সোফায় বসে আছে।আর অবন্তী ও তৃষ্ণা একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।
আহান― হ্যাঁ বাবা আজকেই যেতে হবে,তবে জলদী ফিরে আসবো আমি এখনে বেরাতে যাচ্ছি না,একটা কাজ ছিল তাই যেতে হচ্ছে।
মা ― কেন! কাজে গেলে ঘোরাফেরা করা যায় না বুঝি? আমিতো বলি অবন্তীকে সাথে নিয়ে যা। কয়েক দিন ঘুরে আয়,মেয়েটার মন ভালো হবে আর তোর কাজটাও হবে।
অবন্তী মার কথা শুনে তারাতারি এগিয়ে এসে বললো
অবন্তী― আমি গেলে তোমাদের খেয়াল রাখবে কে,তাছাড়া আহান কাজে যাচ্ছে। আমি সাথে গেলে ওর সমস্যা হবে....
অবন্তী আর কিছু বলতো কিন্তু মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো
মা― আহান গেলে তোকে ওর সাথে যেতে হবে,নয়তো
আমি ছেলেকে একি ছাড়বো না।তুই সিথে থাকলে একটু ভরসা পাবো।
আহান― মা তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমি বাচ্চা ছেলে! একা ছাড়লে হাড়িয়ে যাবো।
বাবা– তুই থামতো আহান, তুই যেতে চাইলে অবন্তীকে সাথে নিয়ে যেতে হবে আর এই রাতে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই কাল সকাল হলে যাত্রা করবি এটাই শেষ কথা।
বাবার কথা শুনে অবন্তী ও আহান চুপসে গেল একদম। এর মধ্যে সবাইকে অবাক করে তৃষ্ণা বলে উঠলো।
তৃষ্ণা― আংকেল আমি সাথে গেলে সমস্যা হবে? ফারুক আফিসের কাজে দেশের বাইরে যাবে, এখন ওরায় চলেগেলে আমি একা হয়ে যাবো।
বাবা– ফারুক তোমাকে রেখে দেশের বাইরে যাচ্ছেস বলো কি! ছেলেটার কি কখনোই মাথায় বুদ্ধি হবে না। বিয়ে হয়েছে মাত্র সিত মাহ হল,এখনি এই অবস্থা।
মা― তৃষ্ণা এদিকে আয় আমার পাশে বোস তো
তৃষ্ণা এগিয়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসতেই মা তৃষ্ণা গালে হাত দিয়ে বলো
মা― আমার দিকে তাকিয়ে বলতো কি হয়েছে তোদের মধ্যে, তুই আমি ফারুখের সাথে কথা বলবো
তৃষ্ণা― কিছুই হয়নি আন্টি তুমি শুধু বলো আমি কি ওদের সাথে যেতে পারি?
বাবা― অবশ্যই যেতেপার,দেখো ওই গাধাটা ফিরলেই আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো ওর সাথে।
তৃষ্ণা― (হাসতে হাসতে) ওকে কিছু বলতে হবে না,আমি আজ উঠি আংকেল।
মা― উঠবি মানে! আজ কোথায় যেতে হবে না তোকে,ওই এত ভড় বাড়িতে একা থাকবি নাকি।
*********
তৃষ্ণার বাড়ি যাওয়া হয়নি ,কাল সকালে তারা তিন জন্য কক্সবাজার যাত্রা করবে আহান তার বাবার কথা অমান্য করতে পারবে না তার ওপরে একা গেলেই তার মা কেঁদে এক কেলেঙ্কারি কান্ড করে বসবে। আহান আগামীকাল কের কথা ভাবতে ভাবতে তার রুমে ঢুকলো।রুমে ঢুকেই দেখলো অবন্তী দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
অবন্তী― কক্সবাজার কেন যাচ্ছি আমরা একটু বুঝিয়ে বলবে?
আহান― দেখুন আমি এটা মোটেও চায়নি
অবন্তী― তুমি না চাইলেও এটা হচ্ছে আহান, এখন আমি যা জানতে চাইছি সেটা বলো।
আহান― .......(চুপ)
অবন্তী― আর কত কিছু লুকাবে তুমি আহান? সবাই কে চিন্তায় ফেলে তুমিকি আনন্দ পায়! তোমার এই স্বভাবের কারণে এক বার পরিবারের সবাইকে কত ভোগান্তিতে পরতে হয়েছিল মনে নেই তোমার?
আহান― ওটা আমার দোষ ছিলনা...
অবন্তী― তুমি আমার সামনে থেকে যাও প্লিজ..
আহান বুঝতে পারছে অবন্তী প্রচন্ড রেগে আছে। রাগের কারণে তার ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে। তাই আর কথা না বলে আহান ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।আহান বেরিয়ে আসতেই অবন্তী দরজা লাগিয়ে দিলো আহানের মুখের ওপড়ে।
আহান― শিট!
রাত বাজে একটা আহান তাদের বাড়ির ছাদে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আকাশের রুপোর থালার মতো দিকে তাকিয়ে ্ভাবছে ।অবন্তীকে কি সে খুব ঝামেলায় ফেলছে।তার জন্যে অবন্তী কষ্ট পাবে ভেব আহানের খারাপ লাগছিল। ছাদে দাড়িয়ে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিলো আহানের কিন্তু কিছুই করার নেই ,অবন্তী কাছে যাওয়া যাবে না।বাবা-মার কাছে তো অবশ্যই না,মা যদি যানে অবন্তী তাকে বের করে দিয়েছে তাহলে মনে কষ্ট পাবে।তাই মায়ের মনে কষ্ট দেয়ার কোন মানে হয় না। এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আহান তার কাঁধে কারো উষ্ণ হাতের স্পর্শ পেলো পাশ ফিরে দেখলো তৃষ্ণা তার খুব কাছে এসে দাড়িছে সে বুঝতেই পারেনি। তৃষ্ণার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো আহান,তৃষ্ণা একটা শুধু একটা পাতলা নাইটি পড়ে আছে্ নাইটিটার গলা দিয়ে তার বুকের সুগভীর খাঁজেটা দেখা যাচ্ছে অনেকটাই। তৃষ্ণা আহানের গা ঘেঁষে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো।
তৃষ্ণা― একটা ছোট অনুরোধ রাখবে আহান?
আহান― রাখার মতো হলে রাখবো
তৃষ্ণা― তাহলে থাক!
আহান―......আচ্ছা রাখবো বলো।
তৃষ্ণা― তোমার গলায় গান শুনি না অনেকদিন,এখন খুব শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আহান তৃষ্ণা দিকে তাকালো,তৃষ্ণা দেয়াল মাথা ও পিঠ ঠেকিয়ে ওপর দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু তার চোখ দুটো বন্ধ তার মুখ বিষন্নতার ছাপ লাগে আছে যেন। আহান চোখ ফিরিয়ে হালকা গলা গাইতে শুরু করলো-
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি
তোমায় দেখতে আমি পাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, বাহির-পানে
আমি হৃদয়-পানে চাইনি
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে,তুমি ছিলে
আমি তোমার কাছে যাইনি
Continue.....