ভাগ‍্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-60210-post-5507301.html#pid5507301

🕰️ Posted on February 12, 2024 by ✍️ FreeGuy@5757 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3677 words / 17 min read

Parent
জীবনসঙ্গী:খন্ড ৬ আয়নায় ভালোমতো নিজেকে দেখে নিয়ে অবন্তী ভাবছে, শাড়িটা কি একটু বেশি ফিনফিনে হয়ে গেল? ব্লাক কালারের ইতালিয়ান শিফন। শাড়িটা তৃষ্ণার,শাড়িটা পড়ে পুরনো দিনের কথা মনে পড়লো।তার নিজেও এমন একটা শাড়ি আছে,তবে এমন শাড়ি সে পরে না। হাসান কয়েক বার বলেছিল কিন্তু সে কখনো রাজি হয়নি। এমন শাড়ি পরে বন্ধুমহলে গেলে, লজ্জার ব‍্যাপার তো বটেই। তার সাথে হতে হবে বান্ধবীদের কটাক্ষ আর মশকরার শিকার। তবে মাস দুই আগে শপিং মলে ঘুরে ঘুরে এইধরনের শাড়ি হাতাহাতি করে একটা লাল শাড়ি তার পছন্দ হয়। ভেবেছিল স্বামীর জন্মদিন পরে সারপ্রাইজ দেবে।এখন মনে হচ্ছে ভুলই হয়েছে। সময় থাকতে সময়টাকে নিজেদের মতো উপভোগ করে নেওয়া দরকার ছিল। সময়টা যেন হঠাৎই হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে গেল। সে যাইহোক, পরিণতি পাবার পর এখন অবশ্য ভুলের হিসাব বের করে কোন লাভ নেই। আবন্তী বাথরুমে থেকে বেরিয়ে আহানের সেই বক্সটা খুঁজতে লাগলো,কিন্তু বক্সাটা কোথাও নেই। নিশ্চয়ই আহান নিয়ে গেছে। আহানের হাতে বক্সটা দিনের বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়।অবন্তীর আহানের ওপরে একটু রাগ হলো,সে ভেবেছিল বক্সটা খোলার চেষ্টা করে সময় পার করবে। ‌‌‌‌আহানের কথা ভাবতেই অবন্তীর রাতের কথা মনে পড়েগেল‌। ছেলেটা কি ছাদে ছিল সারাটা রাত!আবারও ছেলেটার সাথে বাজে ব‍্যবহার করলো সে। প্রতিবার আহানের ওপড়ে রাগ দেখিয়ে শেষে নিজেকেই কষ্ট পেতে হয়। প্রতিদিন অবন্তী ভাবে আজকে কোনভাবেই বাজে আচরণ করবেনা আহানের সাথে,কিন্তু ছেলেটা সামনে আসতেই সবকিছু গুলিয়ে যায় তার। রাগটা যেন হঠাৎই চেপে বসে মাথায়। ভাবতে ভাবতে অবন্তীর চোখ পড়ে খাটের দিকে,বিছানায় আহানের পোশাক গুলো এলোমেলো হয়ে পরে আছে,এগুলো দেখে অবন্তী নিজের মনেই বলে উঠলো "উফ্,ছেলেটা এতো অগোছালো কেন!দুই ভাই যেন দুই প্রকৃতির" অবন্তী বিছানার কাছে এসে সবকিছু গোছানো শুরু করলো। ******* আহান দোতলায় উঠে দেখলো ঘরের মাঝে দশজন লোকের বসার মতো একটা কনফারেন্স টেবিল আছে। টেবিলটায় দুটো চেয়ার ছাড়া বাকি চেয়ার গুলোতে সবাই খুব ফিটফাট হয়ে স্যুট প্যান্ট পরে বসে আছে। সামনের দেয়াল জুরে বেশ বড় একটা মনিটরে ভিডিও চলছে,তবে যেদিকে কেউ দেখছে না, রুমের সবাই নজর এখন আহানের দিকে পরেছে। যেন আহানের এখানে আসার কারণ জানতে তাদের কৌতূহল সিমাহীন। এমন সময় রুমে এক সাথে ছয়জন প্রবেশ করলো।আহানের পেছনের দরজা দিয়ে রাত্রি ও দুই সিকিউরিটি গার্ড আর রুমের সামনের দিকের এক পাশের দরজা দিয়ে ফারুক,তৃষ্ণা ও সোনালী চুলের এক বিদেশী মেয়ে। মেয়েটাকে দেখে আহানের সুবিধার মনে হচ্ছে না মোটেও,তবে সে এটাও ভেবে পাছে না যে কি করে এমন আগুন সুন্দরী একটি মেয়ের হাতে পিস্তল ধরিয়ে দিলে কিভাবে তার সৌন্দর্য দশগুণ বেড়ে যায়। এই তথ্যটা আহান আগে জানা ছিলো না।মেয়েটার উচ্চতা অনুমানিক পাঁচ ফুট ছয় বা সাত হবে,মেয়েটা হাই হিলের সাথে হাই লো ডিজাইনের রেড কালারের ড্রেস পরে আছে। কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো যেন আগুনের শিখা। মেয়েটার উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টিতে যেন নিরীক্ষণ করছে আহানকে,হাই হিল পড়ার কারণেই মনে হয় মেয়েটাকে আরো লম্বা মনে হচ্ছে। মেয়েটার দিক থেখে চোখ সরানো যাচ্ছে না ,খালি মনে হচ্ছে তার দিক থেখে চোক সরলেই হিংস্র বাঘিনীর মত ঝাপিয়ে পরবে এখনি আহানের ঘাড়ে। দুজনের চোখাচোখির মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ালো আহানের পেছন থেকে আসা দুই জন গার্ড। তারা এসেই আহানের দুহাত ধরে টাতে লাগলো পেছন দিকে। তবে তাদের পক্ষে কি আর আহানকে টেনে নেয়া সম্ভব! বলি প্রতিদিন শরীরচর্চা ফলে যে টানটান মাসেল ও শক্তপোক্ত বাহু তৈরি করেছে যেটা তো এমন সময়ের জন্যেই। সুতরাং গার্ডদের আবাক করে দিকে আহান তার বাহুবলে দাঁড়িয়ে রইলো একি জায়গায়। ওদের টানাটানি তৃষ্ণার চোখে লাগতেই সে এগিয়ে আসতে লাগলো আহানের দিকে, তবে তৃষ্ণা কিছু করার আগেই ফারুকের হাতের ইসারায় থেমেগেলো তারা। গার্ড দুজনের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আহান ফারুকের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে তৃষ্ণা তাকে বাধা দিলো,কিন্তু আহান তাকে অগ্রাহ্য করে ফারুকের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছুটা এগিয়ে যেতেই ফারুকের পাশে দাঁড়ানো অগ্নি কন্যা তার সামনে এসে কিছু একটা করার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছিল,কিন্তু ফারুক তাকে আটকে দিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে পরলো। ফারুক রুমে ঢুকতেই অগ্নিকন‍্যা আহানের কাছাকাছি এসে বজ্রকন্ঠে বললো "হ্যান্ডস আপ অন ইওর সাইড,আই নিড টু চেক ইউ"মেয়েটির কথা শুনে আহানের বিস্ময়ের সীমা রইল না।তাকে চেক করতে হবে! বলে কি এই মেয়ে? এমন সময় পেছন থেকে রাত্রি বললো "লেট হিম গো ,নো নিড টু চেক" তবে মেয়েটা মনে হয় কঠিন ধাতুর, তার বজ্রকন্ঠ নরম হলো না,সে ধমকের মতো বললো "নাউ"। আহান কিছু না বলে দুহাত তার দেহে দুপাশে উচুঁ করে ধরতেই মেয়ে কাছে এসে আহানের ফুল বডি চেক করতে লাগলো হাতরে হাতরে। চেকআপ শেষ মনে হয় একটু হতাশ হলো সে,মনে হয় কিছু একটা খোজার চেষ্টা করছিল মেয়েটা, এখন খুজে না পেয়ে সে সরে দাঁড়ালো।মেয়েটা সরতেই আহান রুমের দিকে এগিয়ে গেলো,আর আহান রুমে ঢুকতেই মেয়েটা তার পেছন পেছন এসে রুমের দরজা বন্ধ করে ফারুকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ফারুক রুমের ভেতরে মেঝেতে পা রেখে একটা অফিস ডেস্কের ওপড়ে বসে ছিল,আহানকে দেখেই সে বললো ― আহান! আমি জানি তুই কি জানতে এসেছিস, তবে এই মূহুর্তে তোর কোন প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। ― ফারুক ভাই! এইসবের মানে কি? ― দেখ আহান, এই মূহুর্তে আমি কাকে বিশ্বাস করবো আর কাকে অবিশ্বাস করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। তাই বলছি এখানে কোন রকম সিনক্রিয়েট করিস না। বাড়ি ফিরে যা আহান,হাসানের ব‍্যাপারটা আমি দেখে নেব,এসব ঝামেলায় নিজেকে জরিয়ে কোন লাভ নেই। ― তুমি ভুলে যাচ্ছো হাসান আমার বড় ভাই, আমার প্রশ্নের উত্তর না জেনে আমি এখান থেকে যাচ্ছি না। আহানের কথা শুনে ফারুক আহানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা আহানের দিকে আসতে লাগলো। আহান কিছু বুঝে ওটার আগেই মেয়েটার ঘুষি এসে পড়লো তার মুখে। আর তার সাথে সাথে মেয়েটা আহানের মাথাটা দুহাতে ধরে ঝুকিয়ে তার হাটু দিয়ে আঘাত করলো আহানের চোয়ালের নিচে। আহান মেঝেতে বসে পরতেই ফারুক চেচিয়ে উঠলো "হোয়াট দা ফাক ইউ আর ডুয়িং!" মেয়েটা আহানকে আবারও মারতে যাচ্ছিল ফারুকের কথা শুনে ঘুরে দাঁড়ালো। এমন সময় তৃষ্ণা দরজা খুলে রুমে ঢুকেই চিৎকার করে উঠলো "ওহ মাই গড আহান!!" ********** অবন্তী হোটেল রুমে বেডে শুয়ে আছে,তার হাতে আহানের একটা টি-শার্ট। এই টি-শার্টটা আজ সকাল থেকে আহানের পড়েছিল। বাথরুমে ঢোকার সময় খলে রেখেছে বিছানার এক পাশে মেঝেতে। টি-শার্টটা হাতে নিতেই একটা ঘ্রাণ নাকে লাগলো অবন্তীর। আর এটুকুই যথেষ্ট ছিল তার মনে্য ভাবনা গুলোকে উল্টেপাল্টে দেবার জন‍্যে। নাকের কাছে টি-শার্টটা ধরে সে ভাবতে লাগলো আগে তো কখনো এটা খেয়াল করেনি সে,আজ হঠাৎ এমন কেন মনে হচ্ছে! নিজেকে সামলে রাখতে ব‍্যর্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছিল সে। অবন্তী আবারও টি-শার্ট টা তার নাকে কাছে এনে একটা লম্বা নিশ্বাস নিলো।তার পর নিজের মনে বললো,হ্যা হাসানের শরীরের ঘ্রাণ,কি মনমাতানো সেই ঘ্রান।কিন্তু এই কি ভাবে সম্ভব!টি-শার্ট টা নাকের কাছে চেপে রেখে লম্বা করে শ্বাস টেনে চোখ বুজে নেয় সে,তার দুই চোখ দিয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা। বেশ অনেকখন পরে ভাবনার অতল সাগর জেগে উঠে বসে অবন্তী। চোখের জল মুছে একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নেয় সে। তারপর টি-শার্টটা ব‍্যাগে রেখে দিয়ে পাশে পরে থাকা আহানের বক্সটা হাতে তুলে নেয়। বক্সটসে আবিষ্কার করেছে ব‍্যাগটার ভেতরে। বেশ কিছুক্ষণ বক্সটা নাড়াচাড়া করে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বক্সটা বিছানার পাশে টেবিলে রেখে দেয় সে। আর ঠিক তখনি রুমের কলিং বেল বাজল। দরজা খুলে অবন্তী দেখলো ট্রেনের সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখন মেয়েটার মুখ খুবই হাসিখুশি। কিন্ত হাসির কারণ জানতে ইচ্ছে হলো না তার। মেয়েটা হাসি মুখে বললো,আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম কিন্তু ফিরে এসে তৃষ্ণা আপাকে আর পেলাম না তাই আপনার কাছে চলে এলাম,ভেতরে আসতে পারি?"অবন্তীর দরজা খুলে মেয়েটাকে ভেতরে আসতে দিলো। মেয়েটা রুমে ঢুকেই অবন্তীকে ভালো ভাবে দেখে নিয়ে বললো" ওয়াও, ট্রেনে আপনাকে দেখে মনে হয়নি আপনি এতোটা আধুনিক হবেন" মেয়েটার কথাটা শুনেই অবন্তীর মনে পরলো সে কি পরে আছে,আর বোঝার সাথে সাথে সে অস্থির হয়ে বিছানার পাশে রাখা তার সুটকেস টার দিকে এগিয়ে গেলো। অবন্তীকে সুটকেস থেকে শাড়ি বের করতে দেখে মেয়েটা বললো " আমি কিন্তু খারাপ কিছু মিন করিনি,আমি বলতে চাইছি আপনাকে বে সুন্দর লাগছে এই শাড়িতে" অবন্তী সুটকেস থেকে শাড়ি বের করতে করতে বললো "আমি খারাপ বা ভালো কিছুই মনে করিনি,তবে আমি এইসব পোশাক আমার ঠিক পছন্দ নয়" অবন্তী শাড়ি বেছে নিয়ে পেছনে ঘুরে দেখলো মেয়েটামুখে হাত দিয়ে হাসছে,এটা দেখেই অবন্তী ভ্রু কুচকে বললো"তুমি হাসছো কেন?" অবন্তীর প্রশ্নে মেয়েটা হাসি থামিয়ে বললো"ভাইয়া মনে হচ্ছে একটু বেশিই দুষ্টু, তবে ট্রেনে দেখে একদম বোঝা যায়নি" মেয়েটার কথায় অবন্তী একটু বিরক্ত হয়ে বললো " তো ট্রেনে দেখে কি মনে হয়েছিল?" ― একেবারে সহজ সরল একজন মানুষ এবং একজন কেয়ারিং হাজবেন্ড। ― (ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে) তোমার এমনটা কেন মনে হবার পেছনের কারণটা কি জানতে পারি? ―(ঠোঁটে কোনায় হাসি রেখে নিয়ে বললো) শাড়ি পাল্টে আসুন বলছি। বাথরুমে ঢোকার আগে মেয়েটার মুখে এমন রহস‍্য মিশ্রিত হাসি দেখে অবন্তী বিরক্তি আরো বেরে গেলো।কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে বিশেষ কিছু বললো না সে। ******* বাড়ির বাইরে বাঁ দিকের দেয়াল ঘেঁষে একটা বসার জায়গায় বসে আছে, সেখানেই আহান বসে আছে। আর তার সামনে দাঁড়িয়ে রাত্রি তুলো দিয়ে আহানের ঠোঁটের কোনার রুক্ত মুছেতে মুছতে কথা বলছে! কথা বলছে বললে ভুল হবে রীতিমতো ধমকাছে "আহান তুমি মেয়েটাকে আটকালেনা কেন?" আহান কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো,সেই এতখন যে সব ঘটনা গুলো ঘটেছে তার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। আহানের নিরবতা রাত্রির রাগ আরো বারিয়ে তুলছে ধিরে ধিরে।তবে সে তার রাগটা নিয়ন্ত্রণে রেখে বললো "তুমি কি ভাবছো বুঝতে পারছি,আর আমি তোমাকে আগেই বলেছি ফারুক পাল্টে গেছে,তুমি বিশ্বাস করনি" রাত্রির কথা শেষ হতেই তৃষ্ণা তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো এবং রাত্রিকে একমত ঠেলে সরিয়ে দিয়ে আহানের সামনে মাটি হাঁটু ভাজ করে বসে আহানের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো "আহান অ্যায়াম রিয়েলি সরি আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে আহা..." তৃষ্ণার কথা শেষ হবার আগে আহান তৃষ্ণাকে দুহাতে ধরে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বুকে জরিয়ে নিলো।তারপর মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বললো "প্লিজ তুমি কাঁদছো কেন! এভাবে কান্না করার মতো কিছুই হয়নি তৃষ্ণা, প্লিজ শান্ত হয়।" এসব দেখে নিজের রাগের ওপরে নিয়ন্ত্রণ কিছুটা দূর্বল হলো রাত্রির। সে বিরক্ত মুখে একটু রাগি গলায় বললো " তৃষ্ণা এভাবে কাঁদছো কেন তুমি! আহান যদি ওই গার্ড দুটোর হাতে মার খেতো তবু কোন সমস্যা ছিল না,এমন মেয়ের কাছে মার খেয়েছে যাকে আমি দুচোখে দেখতে পারিনা" এটুকু বলেই রাত্রি জোরে জোরে পা চালিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার দরজার দিকে যেতে লাগলো। রাত্রি চলে যেতেই আহান তৃষ্ণার চোখের জল মুছে তাকে নিয়ে বসার জায়গাটায় বসে বললো" – একটু খুলে বলবে ঘটনাটা কি ফারুক ভাই আমার সাথে এমন আচরণ করলো কেন? আর ওই মেয়েটাই বা কে? ― এটা আমি নিজেও জানিনা আহান,ফারুকের পরিবর্তন টা প্রথম প্রথম এত একটা চোখে পরেনি,তোমার ভাইয়ের একসিডেন্টের পর থেকে যেন হঠাৎই কেমন হয়েগেল ফারুক। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে, তার আসেপাশে কি সব লোক ঘোরাফেরা করে আর ফারুক যেখানেই যায় ঐ মেয়েটা তার সঙ্গে থাকে। ― এর মানে কি!ওই মেয়েটা তোমাদের সাথে থাকে? এমন সময় তৃষ্ণার ফোনে একটা মেসেজ এলো। তৃষ্ণা কিছু না বলে মুখ নামিয়ে মোবাইলে স্কিনের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে।আহান কিছু একটা জিগ্যেস করতে যাচ্ছিল,কিন্তু তৃষ্ণা হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললো " আহান আমাকে যেতে হবে,তুমি হোটেলে চলে যাও" আহান তৃষ্ণা কে আটকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তৃষ্ণা কিছু না শুনে গেটের বাইরে একটা কালো গাড়িতে উঠে পড়তেই গাড়িটি চলতে শুরু করলো ।আহান গেটের বাইরে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গাড়িটার চলে যাওয়া দেখছিল।এমন সময় পেছন থেকে একটা হাত এসে আহানের কাঁধে স্পর্শ করলো। আহান ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো পেছনে রাত্রি দাড়িয়ে আছে তার হাতে দুটো মদের বোতল নিয়ে। আহান তার দিকে ঘুরতেই রাত্রি বোতল দুটো দুহাতে নিয়ে তার বুকের দুপাশে ধরে একসাথে চাপ দিয়ে বললো "দুটোতেই মুখ লাগাতে চাও নাকি একটা! তবে আমি কিন্তু বোতলের কথা বলছি অন‍্য কিছু ভেবনা না কিন্তু" আহান কিছু না বলেই রাত্রির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে হাঁটতে লাগলো উল্টো দিকে। এটা দেখে রাত্রি চেঁচিয়ে বললো "আমার সাথে কথা বলবেনা ঠিক আছে,তবে তুমি কিন্তু ভুল রাস্তায় যাচ্ছো" রাত্রির কথা শুনে আহান ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলো, রাত্রি এগিয়ে আসছে তখর দিকে। রাত্রি আহানের কাছে এসে এক হাতে বোতল দুটো নিয়ে অন‍্য হাতে আহানের হাত ধরে টানতে টানতে বললো "আমার সাথে এসো আমি পৌঁছে দেবো। ********* বাথরুম থেকে শাড়ি পাল্টে অবন্তী ও মেয়েটা বেডে বসে কথা বলছিল। মেয়েটার মুখে ট্রেনের ঘটনা শুনে অবন্তী দুই গাল লজ্জায় লাল করে বসে আছে। ― আমি তখন আপনাদের অপরদিকের সিটে বসে কাঁদছি,তবে কান্নার মাঝেও মাঝে মধ্যেই দেখছিলাম , ঘুমের মধ্যে আপনার একটা হাত বারবার ভাইয়ার ঊরুর কাছে চলে আসছিলো,আর.... মেয়েটার এইসব কথা শুনে অবন্তীর কানের লতি গরম হয়ে উঠছিল।সে জলদি কথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে গেল "তোমাকে বেশ হাসিখুশী দেখে ভালো লাগছে" অবন্তীর কথা শুনে মেয়েটা একটু একটু লজ্জা পেলো মনে হয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো " আপনার স্বামী কখন আসবে?" অবন্তী একটু অবাক হয়ে বলো "কেন বলতো!আহানের সাথে তোমার কোন দরকার?" মেয়েটা আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বলতে লাগলো "আসলে আমি এখানে আমার স্বামীর জন্যে এসেছিলাম, বেশ কিছু দিন যাবত আমার মনে হচ্ছিল আমার স্বামী অন‍্য কোন মেয়ের সাথে রিলেশন করছে,এটা নিয়ে আমার ও আমার স্বামীর মাঝে ঝগড়ায় হয়ে অনেকবার। তারপর কিছুদিন আগে আমার স্বামী হঠাৎ আমাকে কিছু না বলে কক্সবাজার চলে আসে বান্ধবীদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে হাতেনাতে ধরবো এখানে এসে। কিন্তু ট্রেনে ওঠার মুখে ঠিক মনকে মানিয়ে উঠতে পাড়ছিলাম না। সত্যের মুখোমুখি হবার মতো সাহস আমার ছিল না।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি ফিরে যাবো, আর তখনি আমার ব‍্যাগটা চুরি হয়ে গেলো‌। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে কাঁদে শুরু করলাম। আমাকে কাঁদতে দেখে আপনার স্বামী আমাকে ট্রেনে তুলে আপনাদের সাথে নিয়ে এলো।" মেয়েটা একটু থেমে দম নিয়ে আবার শুরু করলো "ঐ যে লোকে বলে না 'যা হয় ভালোর জন‍্যেই হয়' ঠিক আমার সাথেও তাই হলো এখানে এসে বুঝলাম আমার স্বামীও এই হোটেলেই উঠেছে,তাই সাহস করে সত‍্যের মুখোমুখি হবার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সত্যিটা জেনে দেখলাম ভুলটা আমার আর আমার ওপরে রাগ করেই ও এখানে চলে এসেছে আমার স্বামী চলে এখানে।। সত‍্যিটা জানার পর এতো আনন্দ হচ্ছে যে বলে বোঝানো অসম্ভব, এখন ওই চোরটাকে সামনে পেলেও তাকে ধন্যবাদ জানাতাম" এতখন অবন্তী চুপচাপ সব শুনছিল ,এখন মেয়েটার কথা শেষ হতেই অবন্তী বললো " ওয়াও আমি তো ভাবতেও পারিনি তুমি বিবাহিত,তো এখন তোমার স্বামী কোথায়?" মেয়েটা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো" ওনি আমার জন্যে রুমে অপেক্ষা করছে, আমি গেলেই এক সাথে হোটেল ছাড়বো আমরা। তাই ভাবলাম আপনাদের থেকে বিদায় নিয়ে যাই আর আহান ভাইকেও একটা ধন্যবাদ দিয়ে যাই,নিজের অজান্তে হলেও উনি আমার সংসারকে ভেঙ্গে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচালেন করলেন,তবে আফসোস ওনার সাথে দেখা হলো না" ******* বিরক্ততে কপাল ভাঁজ হয়ে আসেছে আহানের। আহান এখন বাড়িটার এক পাশে কয়েকটি গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে। আহান একটা গাড়ির পেছনে দিকটায় পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে, আর তার সামনের একটা গাড়ির সামনের দিকেটায় রাত্রি উঠে বসেছে পা সামনে দিকে ছড়িয়ে। আহানকে পৌঁছে দেয়ার নাম করে এখন সে পায়ের ওপরে পা তুলে বসে ঠোঁটে বোতল লাগিয়ে ড্রিংক করছে। এটা তেমন কোন সমস্যা নয়,সমস্যা হলো রাত্রি কোন কথা না বলে আহানকে দেখছে আর যে দৃষ্টিতে দেখছে আহান তাতে বিব্রতবোধ করছে। তার মাঝে মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে এখানে থেকে চলে যেতে। কিন্তু তার একটা মাতাল মেয়েকে একা ফেলে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। আহানের ভাবনার মাঝে রাত্রি বললো" আহান তোমার কথাটা ঠিক হজম করতে পারছিনা" আহান রাত্রির দিকে ফিরে দেখলো কথাটা বলেই সে আবার বোতলে ঠোঁট লাগিয়েছে, বোতলের প্রায় বেশি অর্ধেকটা শেষ।আহান রাত্রির কাছে গিয়ে রাত্রির হাত থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো" অনেক হয়েছে আর না" রাত্রি আহানের কথায় একটু হাসলো,তারপর গাড়িথেকে নেমে দাঁড়াতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে যেতে পরে যাচ্ছিল, আহান সময় মতো তাকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো। রাত্রি বাঁ হাতে আহানের টি-শার্টটা মুঠো করে ধরে,অন‍্য হাতে গাড়ির ওপরে রাখা অন‍্য বোতলটি নিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো। আহান লক্ষ্য করলো রাত্রি টলছে, আহান যখন থেকে এখানে এসেছে তখন থেকে দেখছে রাত্রি ড্রিংক করছে।কিন্ত এতো ড্রিংক করার পরেও মেয়েটা এখনো নিজের পায়ে হাঁটতে পারছে দেখে একটু অবাক হলো আহান। আহান এগিয়ে গেল রাত্রির পেছনে,রাত্রি এতি মধ্যে তার হাতের বোতলটা খুলে ড্রিংক করতে শুরু করেছে। রাত্রি বেশ কিছু টা এগিয়ে গিয়ে একটা ল‍্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আহানের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। রাত্রির মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়ালো আহান, অবাক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো রাত্রির দিকে। রাত্রির চোখ দিয়ে জল পরলেও সে হাসছে। আহান অনেক ভেবেও রাত্রির চোখের জল ও মুখের হাসির কারণ ধরতে পারলো না। রাত্রি আহানের দিকে তাকিয়ে আবারও বোতলে ঠোঁট লাগালো,আহান এক দৃষ্টিতে লাম্পপোটের আলো দেখতে লাগলো রাত্রিকে,তার খোলা চুলগুলো উড়ছে হাওয়ায় সে সাথে চোখের জলে কালো কিছু একটা মিশে তখর ফর্সা গাল বেয়ে নেমে আসছে। সাধারণত নেশার কারণে মানুষ অদ্ভুত কান্ড করে তবে রাত্রিকে দেখে তেমন মনে হচ্ছে না। আহান একটু এগিয়ে গিয়ে বললো "রাত্রি প্লিজ এবার বোতলটা ফেলো" আহানের কথা শুনে রাত্রি একটু হেসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বোতলটা উচুঁ করে আবারও বোতলের মুখটা আবধ‍্য করলো তার গোলাপি দুই ঠোঁটের বাঁধনে। তবে এবার রাত্রি বোতলটা আর মুখ থেকে নামালো না দেখে আহান রাত্রির সামনে গিয়ে জোর করে বোতলটা তার হাত থেকে নিয়ে একটু দূরে একটা ডাস্টবিনের দিকে ছুরে দিল। ― কি নিখুঁত তোমার নিশানা আহান,(একটু থেমে আহানের কাছে এসে বললো)তবে আহান আমি কিন্তু ড্রাংক নোই আহান এক পলক পা থেকে মাথা অব্দি রাত্রিকে দেখে গম্ভীর মুখে বললো, এখনো নয় তবে জলদি হবে বলে মনে হচ্ছে, তার আগেই তোমাকে হোটেলে পৌঁছে দিতে হবে,নয়তো আমার কপালে আজ দুঃখ আছে" আহানের কথায় রাত্রি কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা,সে আহানের বুকে লুটিয়ে পড়লো। রাত্রির হোটেলে পৌঁছে আহান বুঝলো রাত্রি যে হোটেলে উঠেছে সেটা থেকে আহান ও অবন্তী যে হোটেলে উঠেছে সে টা খুব একটা দূরে নয় তবে আহান এখন সমস্যায় পরেছে রাত্রিকে নিয়ে। রাত্রির চেতনা হারিয়ে অজ্ঞান হয়েছে অনেকখন আগেই। আর তাকে কোলে করে এখন আহানকে সিঁড়ির দিয়ে পাঁচ তলায় উঠতে হবে কারণ হোটেলের লিফটে কোন সমস্যা হয়েছে সকালের আগে তা ঠিক হবে না। তাই আর কি করার সে রাত্রিকে কোলে করে সিঁড়ি দিয়ে ওপড়ে উঠতে লাগলো। হোটেল রুমের দরজা খুলতে গিয়ে রাত্রির হুশ ফিরল ।সে আধবোজা চোখে আহানকে দেখে দূর্বল গলায় বললো" আহান তোমাকে কিছু বলার ছিল" আহান রাত্রির কথায় কান না দিয়ে দরজা খুলে রাত্রিকে নিয়ে রুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দিল। সাদামাটা তরে রুচিসম্মত হোটেল রুম। তবে রুমে ঢুকে আহানের নজর পড়লো সাদি বিছানায় ভাজ করা একটা সবুজ চাদরের ওপরে পরে থাকা একটা কালো ভালুকের পুতুল। তবে স্মৃতির সাগরে ডুব দেবার কোন ইচ্ছে আহানের হলো না। রুমে ঢুকে বিছানায় শুইয়ে দিল রাত্রিকে। আরে সে রাত্রির পায়ের কাছে পেছন ফিরে বসে রাত্রির পায়ের হিল গুলো খুলে দিতে লাগলো,নয়তো সকালে বেখেয়ালে পা ফেলে, পা মচকে যেতে পারে। এমন সময় রাত্রি পেছন থেকে আহানের দুহাতে ফাঁক দিয়ে তার হাত ঢুকিয়ে আহানকে জরিয়ে ধরলো। আহান নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই রাত্রি আহানের হাতটা ধরে বললো "আর একটু থাকলে কি খুব ক্ষতি হবে তোমার?" এই প্রশ্নের উত্তর আহান দেবার প্রয়োজন মনে করলো না ।সে রাত্রির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানার এক কোনায় পরে থাকা সবুজ চাদরটা রাত্রির গায়ে জরিয়ে দিয়ে,ভালুকের পুতুলটা একটু দূরে ছোট্ট টেবিলে রাখতে গেলেই রাত্রি কাতর গলায় বললো"ওটাকে আমার কাছে দাও"। আহান কথা বাড়ালো না আর পুতুলটা রাত্রির হাতে দিয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সিড়ি দিয়ে নামার সময় আহানের মাথা পার্টি বলা রাত্রি কথা মনে পড়লো ("তুমি আমার ওপড়ে এখনো রেগে আছো তাই না")আহান উত্তরে বলেছিল সে রেগে নেই।তবে রাত্রির মনে হয়ে কথাটা বিশ্বাস করেনি। এমনটা মনে করাই স্বাভাবিক। যার কারণে তার পরিবার ছেড়ে তাকে এত দূরে যেতে হয়েছে,তার ওপড়ে রেগে না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। তবে আহান মিথ্যে বলে নি,তার রাত্রির ওপড় থেকে রাগ উঠে গেছে অনেক আগেই। বরং উল্টো মনে মনে রাত্রিকে সে ধন্যবাদ জানিয়েছে অনেক বার। এইসব ভাবতে ভাবতে আহান সিড়ি দিয়ে নেমে একপাশে দাঁড়ালো ফোনটা দেখতে,বেশ অনেকখন ধরে কেউ ফোন করছে মনে হয়। ফোনটা সাইলেন্ট আছেতবে দুই একবার ফোনের কম্পন অনুভব করেছে সে। ফোনটা বের করে আহান দেখলো,অবন্তীর মিস কল দেখাছে পাঁচটা,তার সাথে রাজুর মিস কল সাতটি ও একটা মেসেজ।আহান রাজু মেসেজটা আগে পড়বে সিদ্ধান্ত নিলো ~ গতকাল থেকে ভাবছি তোকে কথাটা বলবো কি না, ভাবতে ভাবতে এক সময় কঠিন সিদ্ধান্তটা নিলাম। তোর এখন যা অবস্থা তাতে মনে হয় এটা জানানোই সবচেয়ে ভালো ।আর কিছু না হোক জীবনটা এগিয়ে নিতে পারবি। দুদিন আগে এয়ারপোর্টর সামনে এক লোকাল রকস্টারের সাথে দেখা, একজনকে বলেছিলাম ছবি তুলে দিতে। সে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিলো। তবে আমার হাতে সময় ছিল কম,তাই ছবিগুলো দেখলাম বাড়িতে এসে রাতে। ছবিগুলো দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আহান,কেউ এতটা সার্থপর কিভাবে হতে পারে?~ লেখাটা পড়ে আহান ছবিগুলো দেখতেই আহানের হাত কেঁপে উঠল,আর ফোনটা পড়লো হোটেলের টাইলস করা সাদা ঝকঝকে মেঝেতে.... ******* মেয়েটা চলে যেতেই অবন্তী আহানকে ফোন করেছিল। কিন্তু আহান ফোন ধরছে না দেখে সে ফোন করলো তৃষ্ণাকে, কিন্তু কি আশ্চর্য তৃষ্ণাও ফোন ধরছে না। তাই অবন্তী ফোন রেখে দিয়ে আহানের বক্সটা নিয়ে মেলাতে বসে ছিল আবারও। কেমন যেন একটা জেদ চেপে বসেছে তার মাথায়।সে রহস্য পছন্দ করে না,তাই রহস্যের সমাধান তার চাই।আর এই মুহূর্তে এই বক্সটা তার কাছে একটা রহস্য, যেটা তাকে বার বার কাছে টানছে। খুব জানতে ইচ্ছে করছে আইরিনের সম্পর্কে! কিন্তু কেন? কারণটা এখনো তার নিজের কাছেই কুয়াশার মতো। কিন্তু এতো চেষ্টার পরেও কোন ভাবেই বক্সটা মেলানো যাচ্ছে না, যখন মনে হচ্ছে সমাধানের কাছাকাছি চলে এসেছে। তখনই তাকে ভুল প্রমাণিত করে বক্সটা আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর প্রতিটি ভুল অবন্তীর মনের জেদটা যেন আরো বারিয়ে দিচ্ছে। একসময় বিরক্ত হয়ে অবন্তী বক্সটা যেখানে ছিলো যেখানেই রেখে দিল। আর বক্সটা রাখতে গিয়ে তার চোখে পড়লো আইরিন লেখাটা। লেখাটা চোখে পড়তেই অবন্তী ভাবলো সে এই বক্সা খুলতে চাইছে কেন!নিজের মনকে প্রশ্ন করে কোন উত্তর পেল না সে,তার ভাবনার সবটাই কেমন উল্টো পাল্টা লাগছে। এমন সময় তার ফোনটা বাজতে লাগলো। অবন্তী এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো,আহানের বন্ধু রাজুর কল। দেখ অবন্তী একটু অবাক হলো, রাজঙ ছেলেটা অবন্তী সাথে আর কখনো কথা বলবে বলে মনে হয়নি অবন্তী। বন্ধুর জন‍্যে আবেক ছেলেটার একটু বেশ।যাই হো অবন্তী কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আতঙ্কিত গলার আওয়াজ ভেসে এলো, ― আহান কোথায়? ― আহান তো পার্টিতে গেছে,রাজু তোমার গলার আওয়াজ এমন শোনাছে কেন? ― আপনি কি আহানে সাথে ওকে দেয়া যাবে? আ,আন ফোন রিসিভ করছে না! প্লিজ আহানকে একটঙ দিন। ― রাজু শান্ত হয়, আহান আমার সাথে নেই,আমি পার্টিতে যাই..... অবন্তীর কথা শেষ হবারর আগেই রাজু ব‍্যস্ত হয়ে বললো ― আহানকে সাথে অন‍্য কেউ আছে ? অবন্তীর মনে সন্দেহ হলো,রাজু এমন ব‍্যস্ত হচ্ছে কেন!সে এবার কঠিন গলায় বললো ― রাজু থামো,নিজেকে শান্ত করে লম্বা শ্বাস নাও এবং আমাকে সব খুলে বলো,তুমি যদি আহানে্য মতো সব লুকিয়ে রাখো তবে আমি কোন রকম সাহায্য করতে অক্ষম...... ********* রাত এখন প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। সঠিক সময় অবন্তীর জানা নেই ,জানতে ইচ্ছাও করছে না।রাজু দুটো ছবি পাঠিয়েছে, ছবিগুলো দেখেই অবন্তী বুঝেছে ঘঠনার ভয়াবহতা কতটা হতে পারে। ছবি দুটো এয়ারপোর্টের সামনে তোলা। প্রথম ছবিতে রাজু কালো রঙের শার্ট ও একটা প‍্যান্ট পরে এক লম্বা টে দেখতে লোখের সাথে দাঁড়িয়ে, তার কাধেঁ গিটার।তবে সমস্যা তাদের নিয়ে নয়,সমস্যা তাদের পেছনে ! এয়ারপোর্টে ঢোকার মুখে কিছুটা সামনে দুই জোরা কাপেল হাত ধরাধরি করে করে দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যেই একজন আইরিন,চিনতে খুব একটা অসুবিধা হবে না ছবিটা স্পষ্ট,তার কোমড় পর্যন্ত লাল চুলের সাথে মিলিয়ে পড়েছে লম্বাটে ধরনের একটি বিদেশি লাল রঙের পোশাক।তার সাথে বাঁ হাতের আঙুলে হিরের আন্টিটা জানান দিচ্ছে আহানের হটাৎ উদাও হওয়ার কারণটা কি। অবন্তী এখন তৃষ্ণার সাথে গাড়িতে করে আহানকে খুঁজছে রাস্তায় রাস্তায়।চিন্তায় তৃষ্ণার পিপাসা পাচ্ছে ঘনঘন। চিন্তায় অবন্তীরও চেহারার রঙ উড়ে গেছে। ভাবনায় অতল সাগর ডুবে সে ভাবছে,এই ছেলেটা এমন ভালোবাসায় কখনো পড়বে সে ভাবেনি কখনোই, আহানের সাথে দেখা পরিচয় হবার কিছুদিনের মধ্যেই অবন্তী বুঝেছিল,আহান এমন ছেলে যে সবাই কে কাছে টানে কিন্তু কাউকে আপন করে নেয়ার ইচ্ছে তার নেই। আহান কখনো প্রেম করবে এটা অবন্তী ভাবেনি। আহানের মেয়েদের  প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের আগ্রহ ছিল না কখনোই তবে মেয়েদের সাথে কথা বলার  উৎসাহ ছিল প্রচুর।বন্ধু মহলে ছাড়িয়ে জুনিয়র ও সিনিয়র লেভেলে অনেক মেয়েরাই আহানের সহজ ব‍্যবহার মুগ্ধ হয়ে ভেবেনিত এটা বুঝি ছেলেটার প্রেমের আহবান। তবে অবন্তী ভালোই বুঝেছিল আহানের এই মিষ্টি মধুর ব‍্যবহারে সবার সাথে মিশে যাওয়া ছেলেটা অভ‍্যাস,এর পেছনে  আর যাই থাকুক প্রেমের আহবান নেই। আর সেই ছেলেটা এখন কোন এক ভিন্ন দেশি ললনার দেয়া ভালোবাসা ব‍্যথায় পথে পথে ঘুরছে..... Continue.......
Parent