ভাগ্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ৭
জীবনসঙ্গী:খন্ড ৭
(((???)))
ফোনটা বেজে চলেছে কিন্তু কেউ ধরছে না কেন! বুঝেতে পারছে না অবন্তী। এনিয়ে নয়টা কল করেছে অবন্তী,তারপরেও হাসান এখনো ফোন ধরছে না। মনে মনে অবন্তী ভাবছে আজ কি হলো হাসানের এমনতো কখনো হয়নি! এখন প্রায় সন্ধ্যা ঠিক আগের সময়টা, যখন আকাশের নীল চাদরটা থেকে সূর্য ধিরে ধিরে বিদায় নিচ্ছে। ঠিক তখন অবন্তী চিন্তিত মূখে, একটা পাঁচ তলা ফ্লাটের গেইটের সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে হাসানের আসার।প্রতিদিন এই সময়টার আগেই হাসান এসে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। এটা প্রয়োজন নয়, তবে হয়ে গেছে নিয়ম।তবে অবন্তীর আজ হয়েছে দেরি, আসলে অবন্তী এখানে ছাত্রী পরাতে আসে রোজ।আর তার ছাত্রীর খুব জলদিই পরীক্ষা তাই আজ একটু বেশিই সময় নিয়েছে পড়াতে। এইসব ভাবতে ভাবতে অবন্তী আবারও একটা ফোন করলো, আর ঠিক তখনি তাকে চমকে দিয়ে একটা বাইক থামলো তার গা ঘেষে। আতকে উঠলো অবন্তী আর সেই সাথে ফোনটা পড়ে গেল হাত থেকে রাস্তায়। ঘটনার আকর্ষিকতায় ভয় পেয়ে গেল অবন্তী, কাজল দেয়া টানা টানা চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিল সে। ইতিমধ্যে বাইকের আরহী বাইক থেকে নেমে অবন্তীর ফোনটা হাতে তুলতে তুলতে দেখলো, আজ এই পহেলা ফাল্গুনের গোধূলির একেবারে শেষ মুহূর্ত বাসন্তী শাড়ি, লাল কাঁচের চুড়ি, কপালে ছোট্ট একটা লালটিপ আর খোপায় শখের ফুল গুঁজে ভয়ার্ত মুখো ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক রুপসী।
নিজেকে সামলে নিয়ে যখন অবন্তী চোখ মেলে দেখলো, চোখেমুখে এক অদ্ভুত মায়া নিয়ে বাইকের আরহী ছেলেটি এক হাটু গেরে সৈনিকের মতো বসে আছে। শুধু ছেলেটির হাতে অস্ত্রের বদলে অবন্তীর ফোন আর দেহে সৈনিকের পোশাকের বদলে আধুনিক স্টাইলে কালো রঙের স্লীভলেস টি-শার্ট ও জর্গাস প্যান্টের সাথে সাদা স্নিকার । ছেলেটাকে চিনেছে অবন্তী, হাসানের ফোনে দুই ভাইয়ের ছবি দেখেছে অনেকবার। ছেলেটার পাগলামীর গল্পও শুনেছে অনেক, তবে আজ প্রথম নিজের চোখে দেখাছে সে। অবন্তী আহানের হাত থেকে ফোনটা তুলে নিলো। তবে তৎক্ষণাৎ কিছু বলতে পারলো না। কারণ ্তার ভয়টা এখনো সম্পূর্ণ কাটেনি,অনাকাঙ্খিত বিপদ ধাক্কায় তার সারা শরীরটা এখনো মৃদু কাঁপছে। ফোনটা হাতে নিয়ে অবন্তী বুঝলো ফোনের ডিসপ্লে টা গেছে। অবন্তী যখন মোবাইল দেখছে আহান তখনও বসে থেকেই বললো
― আমি যে অপরাধ করেছি তা শুধরে নিতে চাই, তাই আমি চাইবো আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার আগে আপনার ক্ষতি সাধন করে দিতে।
আহান কি বলতে চাইছে তা বুঝতে পেরে,অবন্তী বললো,
― তার দরকার হবে না,আপনি উঠে দাড়ান
আহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো
― দরকার টা আমারি, আপনার সাথে দেখা করবো বলে ভাইয়ের এক কথাতেই তার বাইক নিয়ে এইখানে হাজির,কিন্তু আমার পোড়া কপাল পরিচয়ের আগেই গলদ,এখন আপনি যে আমার অপরাধ ক্ষমা করেছেন এটার প্রমাণ না পেলে ঠিক মনটা শান্তি পাবে না।
অবন্তী কিছুটা সংকোচ বোধ করছে।আহানের সম্পর্কে তার ভাইয়ের কাছে থেকে অনেক কিছুই জেনেছে সে,তবুও অন্য জনে মুখে শোনা ও সামনাসামনি দেখা হওয়ার মাঝে যে অনেক পার্থক্য। ছেলেটা চেনা হয়েও যে বড় অচেনা।কিন্তু কেন যানি ছেলেটার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে না শব্দটি মুখ থেকে বেরুতে চাইছে না। সে যে সিদ্ধান্তের দোলাচলে ভুগছে তা যেন বুঝতে পেরে আহান বললো,
― একটু এগোলেই একটা মোবাইল রিপেয়ার শপ আছে ,বাইকে করে যেতে হবে না হেটেই যাওয়া যাবে প্লিজ
অবন্তী কি করবে ভেবে ওঠার আগে আহান অবন্তীর সিদ্ধান্তের নেয়ার অপেক্ষা না করেই বাইটাকে ঠেলে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো,এরপর আর দাঁড়িয়ে থাকা চলে না, অগত্যা অবন্তী এগিয়ে গেলো তার পিছু পিছু।
অবন্তী বাইরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল আহানকে রিপেয়ার শপ থেকে বেরুতে দেখে একটু এগিয়ে গেলো,আহান সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো
― আপনার ফোনটার আমার প্রতি একটু দয়া হয়েছে,
― মানে!
― সে কিছুতেই ঠিক হতে চাইছে না,একটু সময় নেবে মনে হয়,এতে আমারি সুবিধা হলো
― এতে আপনার কী সুবিধা হবে বুঝতে পাড়লাম না?
― আপনার সাথে পরিচিত হওয়ার সুবিধা,সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে চলুন সেখানে যাওয়া যাক,আহার গ্রহণের সাথে পরিচয়টা পাকাপোক্ত করে নেওয়া যাবে।
― মাফ করবেন, আমার খিদে নেই।
― উফ্ বাঁচালেন, তারাহুরার মধ্যে ওয়ালেট টা বাসায় ফেলে এসেছি,পকেটে যা আছে তাতে দুজনের জন্যে কফি হয়ে যাবে বলেই মনে হয়।
অবন্তী আহানের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবে একি সত্যিই হাসানের ভাই কি না,হাসানের সাথে তার পরিচয় টা মনে আছে এখনো।তবে হাসানের মাঝে যে জড়তা ছিল আহানের মাঝে তা নেই। আহানের আচরণে ও কথাবার্তায় চাটুরতার ছাপ স্পষ্ট। অবন্তী প্রতিটি কথার জবাব যেন তার আগে থেকেই সাজানো, যেখানে ভুলের কোন অবকাশ নেই। অগত্যা আগের ঘটনার হলো পুনরাবৃত্তি, তার এসে হাজির হলো এক কফি হাউজের সামনে। একটি বড় ভবনের প্রথম তলায় মার্কেট প্লেস আর দ্বিতীয় তলা ঘিরে কফি হাউজ। সিঁড়ির দিয়ে ওঠার সময় বাইরে থেকেই গমগম শব্দে মুখরিত ভাব টের পাচ্ছিল তারা। অবন্তী ভাবলো এই সময় ভিড়টা কিছুটা কি বেশি থাকে! যাই হোক,কফি হাউজে যখন তার ঢুকলো,তখন সন্ধ্যা হয়েগেছে । কফি হাউজের সবকিছুই ঝকঝকে তকতকে।ফ্লোরে মাঝারি আকারের সব টেবিল। টেবিল ঘিরে চারটি বসার চেয়ার। বেশিরভাগ টেবিলেই দু’জন বসে আছে। তাও আবার প্রেমিক-প্রেমিকা বা কাপেল টাইপের। তাই ওদের মাঝখানে গিয়ে বসার কোন মানে হয় না। অগত্যা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হলো কোন জুটির আসর ভাঙ্গার। ভাগ্য মনে হয় আজ আহানের সহায় হয়েছে ,তাই বেশিখন অপেক্ষা করতে হলো না। তারা দেখলো একটু দূরে জানালার পাশে দু’জন একটি টেবিল ছেড়ে উঠছে। অমনি দ্রুততার সাথে আহান গিয়ে বসে পড়লাম একটি চেয়ারে,
জানালার দিয়ে হাওয়া ঢুকে, অবন্তীর মুখে এক পাশের কিছু চুলকে বার বার নিয়ে আসছে তার মুখের ওপরে। আর অবন্তী ডান হাতের আঙুলে তাদের শাসন করতে করতে অন্য হাতে গরম কফির মগটি নিয়ে অবন্তী একবার চোখ বোলালো চারপাশটায়। কত মানুষ ছুটে আসে কফি হাউজে, শুধুই কি এক পেয়ালা গরম কফি পানের আশায়? নাকি কফি হাউজে আসার পেছনে রয়েছে ভিন্ন কোনো অনুভূতি? উত্তরটা তারাই ভালো বলতে পারবে যারা এখানে আসে। অবন্তীর ভাবনার জালে ছেদ হলো আহানের কথায়,কি ভাবছেন এতো! অবন্তী আহানের দিকে না তাকিয়েই বললো,"তেমন কিছু নয়,ভাবছিলাম এতো মানুষ এখানে আসে শুধু কি এক পেয়ালা কফির তাড়নায়।"
― কিছু মানুষ হয় তো এই কারণেই আসে,তবে বাকিদের বেশির ভাগ আসে প্রেমের করতে আর কিছু আছে আমাদের মতো যাদের হয়তো এখানেই হয় প্রথম পরিচয়।
অবন্তী আহানের দিকে ফিরে একটু হাসে বললো, "আপনি বড় বেশি গুছিয়ে কথা বলেন,শুনে মনে হয় কথা গুলো যেন আগে থেকে সাজানো।" আহান হাত থেকে কফির মগটা টেবিলে রেখে, টেবিলে তার বাঁ হাতটা আড়াআড়ি ভাবে রেখে একটু সামনে ঝুকে মুখে হাসি এনে বললো,"আমি গুছিয়ে কথা বলিনা,যা মনে আসে তাই বলে ফেলি, আর সবাই ভাবে গুছিয়ে বলছি।" অবন্তী কিছু না বলে আবারও চার পাশে চোখ বোলাতে লাগলো,
― আপনার যে আমার চেহারা পছন্দ হয়নি তা বুঝতে পারছি,তবে দেবর ভাবির সম্পর্কের মধ্যে আপনার আপনি আপনি বলাটা হৃদয়ে খোঁচা মারছে বার বার।
আহানের এমন কথায় অবন্তীর একটু যেন কেঁপে উঠলো,তার ফর্সা দুই গালে দেখা দিল রক্তিম আভা। হাসানের সাথে প্রেম সে করছে তবে বিয়ের কথাটা হাসান নিজে থেকেও এখনও বলেনি। আর আহানের চেহারা পছন্দ হয়নি এই কথাটাও ঠিক নয়।তবে আহানের চোখের উজ্জ্বলতার দিকে অবন্তী তাকাতে ইচ্ছে করছে না,তার মনে হচ্ছে ছেলেটার চোখে কিছু একটা আছে,যেদিকে তাকালে অবন্তীর সব মনের ভাবগুলো একে একে সব পড়ে নেবে সে। সেই সাথে এই মূহুর্তে অবন্তীর হঠাৎ এতো লজ্জা লাগছে কেন বুঝতে পারলো না।সে আহানের কথার উত্তরটা দিতে চেয়েও দিতে পাড়লো না।
― দেখুন দেখ যখন হয়েছে তবে পরিচয় পর্বটা সারতেই হবে। আর পরিচিতির কথায় প্রথমেই মাথায় আসে নাম। তা আমার নামটা আপনি জানেন তো?
অবন্তী এবার মাথা তুলে তাকালো আহানের দিকে,মনে মনে ভাবলো লজ্জা টা কাটিয়ে উঠতে হবে।তার সামনে বসা ছেলেটা তার থেকে বয়সে ছোট, নিজের থেকে কম বয়সি একটা ছেলের কাজে এভাবে দমে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না মোটেও। একটু মৃদু হাসি দিয়ে অবন্তী নিজেকে আবারও স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললো, "হ্যাঁ জানি আপনার বড় ভাই বলেছে।"
― এতোদিন ভুল নাম যেনেছেন।
একটু অবাক হলো অবন্তী
― ভুল যেনেছি?
― হ্যাঁ ভুল যেনেছেন।
― তো সঠিক নামটা কি বলুন।
আহান কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বললো," আপনার মুখে আমার নামটা ঠিক "আপনি" নয় "আহান"। আহানের কথায় সে হেসে বলল, "সহজ নয়, সময় লাগবে"
― মানব জীবনে সময়টাই ইমরা পাই খুবই অল্প,তবুও সময় দেওয়া হলো,তবে দেখবেন যেন দেরি না হয়ে যায়, আর অপরাধ না নিলে একটা কথা বলতে চাই!
আহানের কথা শেষ হতেই,আহান একটু নড়েচড়ে বসে কফির মগে একটা চুমুট দিল। কেন যানি অবন্তীর কাছে মনে হলো এটা সামনে আসা কোন আঘাতের প্রস্তুতি,যে আঘাতে ছেলেটা এখনি আবার ভেঙে দেবে অবন্তীর স্বাভাবিক হওয়ার প্রচেষ্টা কে। হাসানের প্রতি অবন্তীর রাগটা বারতে লাগলো ধিরে ধিরে। কোন অগ্রিম বার্তা ছাড়া এই পাগল ছেলেটার মুখে সামনে কেন ফেললো তাকে ... অবন্তীর ভাবনাটা শেষ হবার আগে আহান বলতে লাগলো
“ওগো রূপসী তব রূপ হেরি যত,মম চোখের ক্ষুধা বাড়ে তত ।
দুষ্টু হাওয়ায় কেশ রাশি উড়ে এসে ঢেকে দিচ্ছে তব মুখখানি,
তুমি সরিয়ে দিচ্ছো বার বার তোমার আলতু হাতের ছোঁয়ায়,
কী দারুণ লাগছে দেখতে তব রূপের ঝলকানি!
ফিরাতে পারি না আঁখি,অপলক চেয়ে থাকি ।,,
অবন্তী কি বলবে ভেবে উঠতে না পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে টেবিলে আঁকিবুকি কাটতে লাগলো।
****
(বর্তমানে))
সমুদ্রের পারে বালির ওপরে পা ছড়িয়ে বসেও সমুদ্রের সৌন্দর্যের আস্বাদ নেয়া থেকে বঞ্চিত হবার মতো দুর্ভাগ্য এ জগতে নেই। রাত্রি শেষ হয়ে এসেছে এবং পাতলা অন্ধকারের একটা পর্দা সমস্ত প্রকৃতি জুড়ে যেন থিরথির করে কাঁপছে। তার মধ্যে অস্পষ্ট ঝাপসা সমুদ্র দেখা যায় যতদুর সামনের দিকে দৃষ্টি চলে ততদূর পর্যন্ত। একটানা গর্জন করে চলেছে এবং ঢেউ পড়ছে আর আকুল উচ্ছ্বাসে তীরভূমির উপরে এসে ভেঙে গুড়িয়ে ফেনায় লুটিয়ে পড়ছে পারাবারহীন সমুদ্রের জলরাশি।
অনেকেই সূর্যোদয় দেখবার জন্য বের হয়েছে। তাদের ঝাপসা ঝাপসা মূর্তিগুলো দেখা যায় এদিক-ওদিক।
আর এই সমুদ্রের ভয়াল সৌন্দর্যে নিজের শরীর ও মন লবণাক্ত করে একমাত্র আহান এরকম সঙ্গীবিহীন ভাবে বালির ওপর বসে শুনছে কিভাবে একটানা সমুদ্রের গর্জন বাতাসে মমরিত হচ্ছে। একটা ক্রুদ্ধ দৈত্য বন্দী হয়ে যেন অবিশ্রাম মাথা কুটে চলেছে।আহানের ভাবনার মাঝে হঠাৎ এক নারীকন্ঠ,
―একা একা বসে যে?
আহান মাথা ঘুরিয়ে দেখলো তার ঠিক পেছনে তার চেনা তিন নারী মূর্তি দাঁড়িয়ে। তাদের দেখেই আহান মনে করতে চাইলো,কতটা সময় পার করেছে সে এবং কখন এসেছিল এখানে! কিছুক্ষণ ভেবে যখন মনে করতে পারছে না তখন মুখ ঘুরিয়ে আবারও সামনের দিকে তাকালো। আহান যেখানে বসেছে সেখানে বালি ভেজা ,তাই তার তিনজন একটু ওপরের দিকে বসলো। পূর্ব গগনে সূর্য তখন দেখা দিয়েছে। ঠিক যেখানে আকাশ ও জলে মেশামেশি সেই আকাশ ও জলের মিলন-রেখাটি ছুঁয়ে যেন কোকনদটির মত। আহান চুপচাপ দেখে রাত্রি কিছু একটা বলতে চাই ছিল,অবন্তী তা বুঝতে পেরে রাত্রির হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিলো।
সমুদ্র-সৈকতে ভোরের আলো আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে ধিরে ধিরে। আহান চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভেবে তার পেছনে বসে থাকা তিনজনের উদেশ্যে বললো," আমার জন্যে শুধু শুধু তোমাদের ঘুম নষ্ট হলো, এর জন্যে আমি সত্যিই লজ্জিত এবং দুঃখিত ,অ্যায়ম রেইলি সরি" অবন্তী ও তৃষ্ণা কিছুই বললো না। তবে এবার রাত্রি আর চুপ থাকলো না।
― তোমার জন্যে এই সকাল সকাল এরা দুজনেই আমাকে টেনে তুলেছে।
আহান রাত্রির দিকে তাকিয়ে দেখলো,রাত্রি অবন্তীর বাঁ পাশের কাঁধে মাথা রেখে আছে,আর তার চোখ গুলো বার বার বন্ধ হয়ে আসছে। চুলগুলো হয়ে আছে এলোমেলো, গতকাল রাতের পোশাক পাল্টায়নি ।আহান মুখ ঘুরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো,ইতিমধ্যে সূর্য অনেকটা উঠে গিয়েছে জলশয্যা ছেড়ে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে হচ্ছে একটা নতুন দিনের সূচনা। এমন সময় রাত্রি আবারও বললো,“অনেক হয়েছে এবার সূর্যোদয় কে বিদায় জানিয়ে ওঠো।” রাত্রির কথা শুনে আহানের রবীন্দ্রনাথের কয়েকটা লাইন মনে এলো-
আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।
আহান উঠে দাঁড়ালো,তারপর পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি নিয়ে অবন্তীর দিকে ডান হাত বারিয়ে দিয়ে বললো,"হোটেলে ফেরা যাক" অবন্তী আহানের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো আহানের হাতের দিকে....
Continue........