ভাগ‍্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-60210-post-5512541.html#pid5512541

🕰️ Posted on February 18, 2024 by ✍️ FreeGuy@5757 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3928 words / 18 min read

Parent
নতুন সূচনা: খন্ড ১ অবন্তী চুপচাপ বালিতে বসে আহানকে দেখছে।আহান যা করছে তাতে অবন্তী মোঠেও খুশি নয়।এমনিতেই সারারাত এই ঠান্ডায় এখানে বসে ছিল।এখন তাদের হোটেল ফেরার কথা,কিন্ত তৃষ্ণার জন‍্যে ফেরা গেল না।তারা প্রায় দু ঘন্টা হলো এখানে বিচে বসে আছে। এই মূহুর্তে তৃষ্ণা ও রাত্রি একটা সাথে একটি অচেনা মেয়ের সাথে বহু প্রচলিত স্বামী স্ত্রীর বিষয়ে তর্ক করতে ব‍্যস্ত। আর আহান দূরে সমুদ্রের ঢেউয়ের কাছে কয়েটা ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েদের সাথে খেলা করতে ব‍্যস্ত। "হুমম বুঝলাম,কিন্তু সারাদিন তো তুমি একা থাকো, তোমার কখনো একাকিত্ব অনুভব হয় না? মনে হয় না তোমার স্বামী তোমার প্রতি অন‍্যায় করছে?” রাত্রি প্রশ্নে মেয়েটা বললো “আমি কি বলেছি যে আমায় একাকিত্ব ঘিরে ধরে! আমি তো এমনিতে অনেক ভালো আছি। যার মনে তার স্বামীর ভালোবাসা থাকে তাকে কখনো একাকিত্ব ঘিরে ধরে না।” একথা শুনে রাত্রি একটু দমে গেলো। অবন্তী বুঝতে পাড়লো না রাত্রি এই মেয়েটার পেছনে লেগেছে কেন! তবে এই মূহুর্তে এটা নিয়ে সে এতো ভাবছে না। সে ভাবছে আহান কে নিয়ে,ছেলটা গতকাল দুপুর থেকে না খেয়ে আছে। কিন্তু একটু আগে অবন্তী যখন বললো কিছু খেয়েনিতে আহান শুনলো না,উল্টো বলল তার নাকি খিদে নেই। এ কথায় অবন্তীর রাগ যেমন হচ্ছেছিল তেমনি তার সাথে হচ্ছেছিল দুঃখ, ছেলেটা ওপরে এমনিতেও রেগে থাকা যায় না বেশীক্ষণ। আগে সে আহানের ওপরে রাগে আহান এমন সব কান্ড করতো, যা দেখে না হেসে থাকা যেত না। কিন্তু এখন আহান আগের মত নেই। বিদেশ থেকে ফেরার পরথেকেই লক্ষ্য করছিল এই বিষয়টি। সে যতই খারাপ আচরণ করছে আহান ততো নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। অবন্তীর ভাবনার মাঝে রাত্রি বললো, "তো আমরা কার সাথে যোগাযোগ করবো সাইকোলজিস্ট না সাইকিয়াট্রিস্ট?" রাত্রির প্রশ্নে অবন্তী কোন জবাব দিলো না।সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে,এবং অবাক হচ্ছে। অবন্তী ভেবেছিল এমন একটা মানসিক ধাক্কার পরে আহান মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।কিন্তু হয়েছে তার উল্টো,আহানকে হাসি খুশি লাগছে। কিন্তু আহান হাসিটা কেন জানি অবন্তী স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না,এই হাসির সাথে অবন্তী পরিচিত নয়। অবন্তীকে চুপ থাকতে দেখে রাত্রির পাশে থেকে তৃষ্ণা বলে উঠলো,"দুজনেরই সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। আহানের হাবভাব আমার ঠিক ভালো লাগছে না মোটেও" অবন্তী এ কথারও কোন উত্তর দিল না। যেন সে তাদের কথা শুনতেই পাচ্ছে না। সে বালিতে হাঁটু মুরে কিছুটা সামনে ঝুঁঁকে হাঁটুর ওপরে হাত ও মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। তার দৃষ্টি সামনের দিকে।রাত্রি অবন্তী দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেখলো,আহানকে ঘিরে কতগুলো ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়ে। সে তাদের নিয়ে খেলা করছে সমুদ্রের শান্ত ঢেউয়ের মাঝে। তবে এখন আহানের উর্ধাঙ্গ উন্মুক্ত,তার টি-শার্ট টি খুলে গলার পেছন দিয়ে নিয়ে দুই কাঁধে রেখে দিয়েছে। মাঝে মধ্যেই জল থেকে উঠে এক হাতে তার অবাধ্য চুলগুলোকে চোখের সামনে থেকে মাথার পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এটা করার সময় সমুদ্রের লবণাক্ত জল আহানের কুনুই ও গালের দুই পাশ দিয়ে নেমে সারা শরীর বেয়ে গড়িয়ে পরছে। এই দৃশ্য দেখে রাত্রি নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না ,সে উঠে দাঁড়িয়ে আহানের দিকে যেতে লাগলো। আহান এতক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে জলে খেলা করছিলো, হঠাৎ তার চোখ পড়লো বিচের ওপরের দিকে। সে দেখলো রাত্রি এগিয়ে আসছে তার দিকে, আহান আন্দাজে বুঝে নিল রাত্রি কেন আসছে,তবুও সে ভাবলো সবার সামনে রাত্রি বেশি কিছু করার সাহস পাবে না। কিন্তু আহানকে আবাক করে রাত্রি আহানের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরলো। আহান এমনটার জন‍্যে তৈরি ছিল না একদম তবুও তার শরীর অভ‍্যাস মত সারা দিল, সে নিজেকে প্রায় সামলে নিলো। তবে সেটা সম্ভব হলো না যখন বাকি সব বাচ্চারা মিলে ঝাপিয়ে পড়লো আহানের ওপরে, এতখন ধরে তার চেষ্টা করছিল তাদের সামনে বিশাল এই প্রতিদ্বন্দ্বী কে হারানোর,এখন তাদের দলে আর একজন পেয়ে তারা সবাই উল্লসিত হয়ে চেঁচামেচি করতে করতে আহানকে জলে ফেলে তার ওপরে উঠে বসতে লাগলো। কিন্তু আহান অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো,কারণ ধস্তাধস্তি মধ‍্যে আহানের ডান হাতটা চলে গেছে রাত্রির বুকের ওপরে। আহান উপায় না দেখে দুহাতে রাত্রির কোমড়টা ধরে তাকে কিছুটা ঘুরিয়ে দিয়ে তাকে কোলে নিয়ে সবাইকে ঠেলে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু তাতে হলো আর এক সমস্যা, সুযোগ পেয়ে রাত্রিও আহানের গলায় দুহাতে জরিয়ে ধরেছে এবং দুই পা দিয়ে কোমড়ে। সেই অবস্থা রাত্রি আহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,“কি মনে হয় পালাতে পারবে এখন?” রাত্রির ভাবটা এমন যেন সে আহানকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। তবে আহান জানে রাত্রি নামক এই সমস্যা ্থেকে কিভাবে ছাড়া পেতে তাকে কি করতে হবে। আহান বাচ্চাদের পেছনে ফেলে সমুদ্রের টেউদিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,“মনে হয় গতকাল রাতের নেশা এখনো কাটেনি,কোন সমস্যা নেই এখনি কেটে যাবে।” রাত্রি আহানের কথা না বুঝতে না পেরে মুখ ঘুরিয়ে আহান কি করতে চাইছে বুঝতে পেরে রাত্রি চেঁচামেচি শুরু করে দিলো,“আহান কি করছো! প্লিজ আহান.. না.না...” আহান আরোও কিছুটা এগুতেই তার কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। ― আহান! রাত্রিকে ছাড়ো। পেছনে থেকে অবন্তীর গলার আওয়াজ শুনে আহান রাত্রিকে ছেড়ে দিলো। রাত্রি আগেই আতঙ্কে আহানে গলা ছেড়ে দিয়েছিল,এখন আহান তাকে ছেড়েদিতেই সে ঝুপ করে হাঁটু অবধি জলে পরে বললো, “ইসস্.. এভাবে ছাড়লে কেন?” তবে রাত্রি প্রশ্নের জবাব আহানকে দিতে হলো না,তার আগেই অবন্তী আহানের হাতে ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলেতে শুরু করলো। কলাতলী বীচ ধরে হেঁটে হেঁটে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ্য করছিল আহান,অবন্তী আহানের থেকে একটু সামনে হাঁটছে। আহান একটু দাড়িয়ে পেছন থেকে দেখতে লাগলো, সমুদ্র সৈকতে নীল শাড়ি গায়ে জড়িয়ে, নগ্ন পায়ে কোমল বালির ওপরে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক রুপসী। শীতল বাতাসে শাড়ির আঁচল বাধাহীন হয়ে উড়ছে তার। অবন্তীর চুলগুলো সামনে দিকে ডান পাশে নিয়ে রেখেছে। সেগুলোর মনে হয় মঝেমধ্যেই তার মুখের সামনে চলে যাচ্ছে।এক সময় খোলা চুলগুলোকে পেছনে ঠেলে দাড়িয়ে পরলো অবন্তী। হঠাৎ অবন্তীর দাঁড়িয়ে পড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে, আহান অবন্তীর দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো,দূরে সমুদ্রের ভেজা বালির ওপরে এক কাপেল একটা ছোট শিশুকে হাঁটতে শেখাছে। ছোট্ট শিশুটি তার বাবার কাছে থেকে মায়ের আছে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা টি মাঝপথে যেতেই নিজেকে সামলাতে না পেরে ভেজা বালিতে পরে যাচ্ছিল,এটা দেখে শিশুটির মা এগিয়ে এসে তাকে দুহাতে কোলে তুলে বুকে জরিয়ে নিল। আহান চোখ ঘুরিয়ে দেখলো অবন্তী বালির ওপরে বসে পরেছে। আহানও চুপচাপ অবন্তীর পাশে একটু দূরত্ব রেখে বসলো। বেশ কিছুক্ষণ দুইজন চুপচাপ বসে,তাদের মাঝে প্রায় এক হাত দূরত্ব। কেউ কোন কথা বলছে না,তবে আহান বুঝতে পারছে অবন্তী তাকে এখানে কিছু বলার জন‍্যেই এনেছে। কিন্তু এখন কিভাবে বলবে তা হয়তো ভেবে পাচ্ছে না। তাই আহান আর না ভেবে অবন্তীর মনের আকাশের আবহাওয়া ঠিক করতে বলতে লাগলো,“আমার যখন খুব মন খারাপ হতো বা ভালো না লাগে তখনো আমি সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে একা বসে থাকতাম, মাঝেমধ্যে সৈকতের কোমল বালিতে পা রেখে হাঁটাহাঁটি কিংবা পানিতে পা ভেজাই বসে থাকা। এতেই মন ভাল হয়ে যাতে। সূর্যোদয় সব সময় দেখা হয়ে ওঠতো না তবে কোন কোন ভোরে সূর্যোদয়ের মায়াবী আলোয় সমুদ্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের শব্দ শুনতাম বা হারিয়ে যেতাম কল্পনায়। এই সমুদ্রের পাড়ে এসে সারা পৃথিবীকে খুব পবিত্র লাগে, সমুদ্রের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালে তার বিশালতার কাছে নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়। কী তুচ্ছ এই মানুষ জীবন” আহান একটু থেমে আবার বলল, “আপনি হয়তো আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারছেন না,তবে এটা নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমি জানি আপনি কি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন,আমি আপনার কাছে থেকে কখনো স্বামীর অধিকার আদায়ের চেষ্টা করবো না, কিন্তু আমাদের এই সম্পর্কের আগে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল,সেই সম্পর্কের অধিকারে বলছি(আহান তার হাতটা বারিয়ে দিল অবন্তীর দিকে) লেট মি হেল্প ইউ!” কথাটা শুনে অবন্তী অনেকে চেষ্টা করেও চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না,তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নেমে গেলে। অবন্তী অনেক কথাই ভেবে রেখেছিল কিন্তু কিছুই বলা হলো না,অবন্তী আহানের দিকে ঘুরে আহানকে জরিয়ে ধরে তার কম্পিত ঠোঁটে ক্ষীণ স্বরে শুধু বললো," অ্যায়াম সরি আহান,, অ্যায়াম স....” আহান অনুভব করলো অবন্তীর গাল বেয়ে অশ্রু ধারা পড়ছে তার কাঁধে।অবন্তী আহানের গলার কাছে মাথা গুজে কাঁদছে,আনানের একবার মনে হলো অবন্তী কে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে,কিন্তু এক অজানা শংসয়ে নিজের হাত দুটি বালিতে নামিয়ে রেখে সে চোখ বন্ধ করে নিল,আর তার চোখের কোণ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো বালির ওপড়ে... ********* (((???))) ― ভাই! মা-বাবা আসে নি? ― সম্ভব হয়নিরে ওদের লোকজন বাড়ির আসেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। হাসানের কথা শুনে আহান একটু চুপথেকে বললো ― ভাই বাবা মার খেয়াল রাখিস, আমার জন্যে তোদের এই সমস্যা পরতে হলো পারলে.... আহানের কথা শেষ হবার আগেই হাসান তাকে জরিয়ে ধরে বললো,“আহান তুই না বললেও আমি জানি তুই এমন কাজ তোর পক্ষে করা সম্ভব না।তুই কোন চিন্তা করিস না,আমাদের কিছুই হবে না” ভাইয়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আহান এগিয়ে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো, আমাদের এ ক্ষুদ্র জীবনে আমরা কতজনের সাথেই স্নেহ ভালবাসা, মায়া মমতার অটুট বাঁধনে আবদ্ধ হই ও থাকি। কারো সাথে জন্ম থেকেই, যেমন বাবা মা, ভাই বোন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে, আবার কারো সাথে মায়া ভালবাসার ডোরে আবদ্ধ হই জীবন-পথে চলতে গিয়ে। আজ এই ভালোবাসার মানুষগুলোকে পেছনে ফেলে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পালা শুরু তার। তবে দুঃখ একটা যাবার সময় একবার মাকে ও বাবাকে জরিয়ে ধরে পারলো না।আহান একবার পেছন ফিরে দেখলো হাসান অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাইয়ের কান্না দেখে তার গলা শুকিয়ে, বুকটা ভারী হয়ে আসছিল।আহান ভাবছিল, স্নেহ-আদর-ভালবাসাকামী মানুষের মনকে বিচ্ছেদ কিভাবে ভেঙেচুরে তোলপাড় করে দেয়! ঢাকা থেকে শুরু হলো আহানের নতুন জীবনের যাত্রা,প্রবাসী জীবন, ১৭ এপ্রিল রাত এগারোটার ফ্লাইটে রওয়ানা হয়ে ১৮ এপ্রিল সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে ওয়াশিংটনের ডোলস এয়ারপোর্টে যখন আহান পৌঁছলো তখন দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি তার সারা শরীর জুড়ে। মনে হতে পারে মাত্রই  তো সাড়ে নয় ঘন্টার পথ। কিন্ত সূর্যের আবর্তন এবং পৃথিবীর ঘুর্ণনে এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ২২ টি ঘন্টা।মাঝে অবশ্য দুবাইতে দুই ঘন্টার যাত্রাবিরতি ছিল। এমিরেটসের যাত্রীসেবার মান বেশ ভালোই বলা যায়।তবুও দীর্ঘ এই যাত্রা যেন শেষ হতে চায় না। এরই মধ্যে সিটের সামনের টিভি স্ক্রীনে গোটা কয়েক মুভি দেখে ফেলেছে আহান। কিন্ত তাও কতক্ষণ আর ভালো লাগে। আহান সর্বক্ষেত্রে চঞ্চল ছেলে,এক জায়গায় এতো লম্বা সময় বসে থাকা সম্ভব না তার পক্ষে। একসময় আহানের অস্বস্তিরতা দেখে এক সুন্দরী এয়ার হোস্টেস এগিয়ে এসে বললো “স‍্যার ডু ইউ নিড এনি হেল্প?” আহান কিছু না বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো,আর মনে মনে ভাবলো এই জীবনে এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালাদের নিয়ে অনেক গল্প শুনেছে ও পড়েছে। লোকমুখে ও গল্প-উপন্যাসের পাতায় পাতায়। তাদের নিয়ে সে কী অপরূপ রূপের বর্ণনা। উপমার পর উপমার খোপ বসিয়ে বিমানবালাদের আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। আজ প্রথম বারের মতো আহান বাস্তবে তাদের প্রত্যক্ষ করলো। অবয়বে তারা সুন্দর, সন্দেহ নেই। আহান মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,“ ইয়েস ইউ ক‍্যান” মেয়েটি আহানের হাসির প্রতিউত্তর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আহানের চোখে চোখ রেখে বলল,“হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার?” আহানের মনে হলো মেয়েটা চোখের দৃষ্টিতে যেন যত্নের আভাস। মুখে একটা হাসি লেগে আছে সবসময়।আহান বলল,“স‍্যাম ওয়ান জাস্ট স্টল মাই হার্ট উইথ স্মাইল.” আহানের কথা শুনে মেয়ে তার হাসি চেপে কোন রকমে বললো,“অ্যায়াম সরি স‍্যার,আই ডোন্ট থিংক ইউ নিড এনি হেল্প” মেয়েটা চলে যাচ্ছে দেখে আহান ব‍্যস্ত হয়ে একটু উচুঁ স্বরে বলল,“ইটস এ ক্রাইম ইউ নো” মেয়েটা চলে গেলে হাসি মুখে,তবে এটা কৃত্রিম হাসি নয়। এমনিতে এয়ার হোস্টেস নিজের মনে শত দুঃখকষ্ট থাকলেও সেগুলো কে গোপন করে রাখে। যাত্রীদের সামনে সুখী মুখ নিয়ে তাদের দাঁড়াতে হয়,মুখে লেগে থাকে সেই একচিলতে কৃত্রিম হাসির সাথে এই হাসির কোন তুলনা হয় না। অন‍্য সবাই এদের শারীরিক সৌন্দর্যের মুগ্ধ হয় তবে আহানর কাছে এই সকল এয়ারহোস্টেজ দের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে তাদের আন্তরিক অভিব্যক্তিই বেশি আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। মেয়েটি যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি আবার আসলো,তবে এবার একটি ট্রলি ঠেলে আসছে দেখে আহান নড়েচড়ে বসলো। নিরাভরণ ট্রলিতে কেতলি আর কাপ নিয়ে কাছে এসে হোস্টেস মেয়েটি যখন বলল, “টি অর কফি?” আহান লক্ষ্য করলো মেয়েটি তার দিকে তাকাছে না,এই আচরণ এয়ার হেস্টেজের জন‍্যে অস্বাভাবিক।আহান ভালো করে দেখে বুঝলো মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে তার দিকে তাকাতে। যাই হোক আহান মেয়েটাকে কফির কথা বলতেই সে কফি দিলো আর আহান গরম গরম কফি উপভোগ্য করতে লাগলো। ইতি মধ্যেই আহানের পাশে বসা মহিলাটির সাথে পরিচয় হয়েছে আহানের,তার কথা অনুযায়ী তিনি স্বামীর সাথে বেরাতে এসেছিলেন এখন বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।আহান ও মহিলাটি যখন কথা বলছিল তখন হোস্টেজ মেয়েটি ট্রলি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে,তবে মেয়েটির মুখের হাসি কোন কারণে উধাও হয়েছে।আহান দেখলো মেয়েটির পেছনে একজন যাত্রী এগিয়ে যাচ্ছে। তারা দরজা কাছে যেতেই আহানকে আবাক করে লোকটা মেয়েটির ওপরে একমতে ঝাপিয়ে পড়লো। ব‍্যাপারটা কয়েকজন দেখলেও কেউ এগিয়ে গেল না,আবার কয়েক জনের কথা শুনে মনে হয়ে যেন এটা স্বাভাবিক ব‍্যাপার। তবে ব‍্যাপারটা আহানের স্বাভাবিক মনে হলো না লোকটা মেয়েটার হাত চেপেধরে অন‍্য এক হোস্টেজের সাথে তর্ক করতে শুরু করেছে। এসব দেখে আহান বেশিক্ষণ বসে থাকতে পাড়লো না,সে উঠে এগিয়ে গিয়ে লোকটার পেছনে দাঁড়াতেই দেখলো মেয়েটা করুণ দৃষ্টিতে একবার তার সহকর্মী ও একবার আহানের দিকে তাকাছে। আহান বেশি না ভেবে পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিল।তারপর লোকটার কাঁধে হাত দিতেই লোকটা ঘুরে দাঁড়ালো,আর সাথে সাথেই আহানের বাঁ হাতের ঘুষিটা লাগলো লোকটার পেটে। ― ইউ সন অফ বিচ! ঘুষিটা ঠিক ভাবে লাগলেও লোকটা মোটেও দমে গেলো না,আর ওদিকে আর এক কান্ড, যে মেয়েটি তর্ক করছিল সে ভেতরে চলেগেল, অতি সম্ভব মনে হয় সিকিউরিটি আনার জন‍্যে। অবাক ব‍্যপার এতক্ষণ কি মেয়েটার সিকিউরিটির কথা মনে ছিল না!তবে এখন এ নিয়ে ভাবতে বসলে আহানের কপালে বিপত্তি, কারণ ততক্ষণে লোটটা ধাতস্থ হয়ে আহানকে আক্রান্ত করতে উদ‍্যত হলো। কিন্তু ব‍্যাপারটা কঠিন ছিল না আহানের কাছে ,সে এক সেকেন্ডও দেরি না করে লোকটা ঘাড়ে সজোরে আঘাত করে তাকে অজ্ঞান করে দিলো। এরপর আহান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো,ঘটনার আকর্ষিকতায় মেয়েটা একদম হতভম্ব হয়ে গেছে। আহান এগিয়ে গিয়ে মেয়েটা মাথার দুপাশের দেওয়ালে হাত ঠেকিয়ে বললো,“ইটস ওয়াজ নট হিজ ফল্ট,ইউ লুক বিউটিফুল এন্ড হট ইন দিস্ ড্রেস”..... ******* বিমানবন্দরে নেমে আহানের মনে পড়লো তার ভাইয়ের কথা। তার ভাই বলেছিল"ভয় পাওয়ার কিছু নেই ,সবকিছু ফারুক নিজের লোক দিয়ে করিয়েছে" তাই আহান মনকে বোঝানোর চেষ্টা করলো ভয় পাওয়ার কি আছে! কিন্ত আমেরিকার ইমিগ্রেশন বলে কথা। তাও আবার প্রথম বিদেশ যাত্রা তাই আহানের বুক ধুকধুক করতেই থাকে । যাই হোক মনের ভাবটা মনে নিয়ে আহান বেশ সাহসী ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলো। সিরিয়াল আসতেই ইমিগ্রেশনের মুখোমুখি হয়ে বুঝলো সে যতটা ভেবেছিল লোকটা ততটাও খারাপ লোক ছিলেন না। যাই হোক এবার শুরু হলো প্রশ্নউত্তর পর্ব। আমেরিকায় কেন আসা, কতদিন থাকবে, এসব গতানুগতিক প্রশ্ন করে, ফিঙ্গার প্রিন্টে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে, পাসপোর্টটি স্ক্যান করে কয়েকবার আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত উল্টেপাল্টে দেখে ছয় মাস অবস্থান করার সিল বসিয়ে দিলো। আর হাসি মুখে বললেন, ওয়েলকাম টু আমেরিকা। কথাটা শুনে যেন আহানের ধড়ে প্রাণ এল,সে প্রত্যুত্তরে একটা হাসি দিসে বেরিয়ে এল। তবে সমস্যা যেন তার জন‍্যেই অপেক্ষা করছিল। সব সেরে এয়ারপোর্ট থেকে বেরুনোর সময় হঠাৎ এক লোকের সাথে ধাক্কা।এমন আচমকা ব‍্যাপারটা ঘটলো যে আহান পরে যেতে চাইছিল।তবে পরে যাওয়া থেকে সামলাতে অভ‍্যাস মতো আহানের রিফ্লেক্স অ্যাকশন কাজ করা শুরু করলো।ধাক্কা খাওয়ার সাথে সাথেই আহান তার এক পা একটু পেছনে নিয়ে নিজেকে কিছুটা সামলে নিল।আর তার সাথে হাতের ব‍্যাগ ছেড়ে লোকটাকে ধরে পরে যাওয়া থেকে রক্ষা করে বলল ― আর ইউ অল রাইট! আহানের প্রশ্নে লোকটা আহানের দিকে তাকালো,আহান লক্ষ্য করলো লোকটার চোখে মুখে আতঙ্ক। আহান লোকটাকে আরও কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু তার আগেই লোকটা নিচু হয়ে আহানের ব‍্যাগটা তুলে আহানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,"অ্যায়াম সরি" এটুকু বলেই লোকটা একবার পেছনে দেখে আবার সামনের দিকে ছুটতে লাগলো। এমন ঘটনায় আহান হতবাক। আহান অবাক হয়ে লোকটার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ছিল,আর তখনি পেছন থেকে আহানের কাঁধে একটা হাত পড়লো আর তার সাথে চেনা একটা গলার স্বর"এটা কি ছিল?" আহান পাশে ফিরে দেখলো রাজু দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে।দীর্ঘ যাত্রার পরে চেনা মুখ দেখে আহান হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন,দুহাতে বন্ধুকে জরিয়ে ধরলো সে। দুই বন্ধু মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পরে তারা এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। গাড়ি সামনে আসতেই আহান একবার গাড়ির দিকে তো একবার বন্ধুর মুখের দিকে তাকাতে লাগলো,অবশ্য এরকম করার যথাযথ কারণও আছে,তারা যে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেটা Aventador SVJ। ― শুধু বল এটা তোর! ― দেখ ভাই!এটা আমার বলতে পাড়লে, আমার থেকে খুশি আর কেউ হতো না। ― তো এটা? ― হ‍্যাঁ এটাই আমাদের রাইড,উঠে পর। আহান আর কিছু না বলে SVJ গাড়িটির দরজায় একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে গড়িতে উঠে বসলো।আর এদিকে রাজু আহানের ব‍্যাগটা আহানের কাছে দিতে গিয়ে দেখলো ব‍্যাগটা কিছুটা খোলা। ― আহান তোর ব‍্যাগটা খোলা কেন? ― মানে!? রাজু ব‍্যাগটা তুলতেই আহান দেখলো ব‍্যাগটা কিছুটা খোলা। আর ব‍্যাগ টা খোলা দেখেই আহানের কিছুক্ষণ আগের লোকটার কথা মনে পড়লো। ব‍্যাগে অবশ্য তেমন কিছুই নেই, কয়েটা কাপড় ছাড়া। তবুও আহান কৌতূহল বশত ব‍্যাগটা সম্পূর্ণ খুলে দেখলোতে লাগলো সবকিছু ঠিক আছে কি না। আহান ব‍্যাগটা খুলতেই যেটা প্রথম নজরে পরলো, সেটা চারকোনা কালো রঙের একটা বক্স,অনেকটা রুবিক কিউবের মতো দেখতে। তবে এটার সবদিক দিয়ে এক রঙের, সম্পূর্ণ কালো...... ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ ********** আহান বেডের একপাশে বসে আছে।তার সামনে ল‍্যাপটপ।আর অন‍্য পাশে মাঝে অবন্তী বাঁ পাশে রাত্রি ও ডানে তৃষ্ণা বসে।তাদের দৃষ্টি আহানের দিকে। আহান আর নিতে পারলো না, সে অস্বস্তি নিয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“এটুকু এই বক্সের কাহিনী আর কিছু নেই” আহান সরে পরছে দেখে অবন্তী চেঁচিয়ে উঠলো,“আহান কোথায় যাচ্ছো,এখানে বসো বলছি” এতক্ষণ ল‍্যাপটপে ভিডিও কলে এক মিডিল এজ মহিলা সব শুনছিল।এখন অবন্তীর কথা শুনে সে শাড়ির আঁচলে কিছু একটা মুছতে মুছতে বলল,“ অবন্তী ওকে যেতে দাও,তাছাড়া আমি এভাবে কথা বলতে পারি না।” মহিলার কথা শুনেই আহান তার জ‍্যাকেট টা হাতে নিয়ে বলল,“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি একটু পরেই ফিরে আসবো” এটুকু বলেই আহান বেরিয়ে গেল আর তার পিছু পিছু তৃষ্ণা।। ওদেরকে যেতে দেখে অবন্তী কিছু একটা বলতে চাই ছিল। কিন্তু তাকে রাত্রি থামিয়ে দিয়ে বললো,“অবন্তী আমাকেও হোটেলে যেতে হবে,তারপর আবার থানা...” ভুল বুঝতে পেরে কথাটা মাঝ পথেই থামিয়ে দিল রাত্রি। এবং অবন্তীকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে এক রকম ছুটে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। অবন্তী দরজা দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এরা দুজন কি শুধু আহানের জন্যে এতখন এখানে বসে ছিল! ― অবন্তী এদিকে এসো। কথা শুনে অবন্তীর মনে পড়লো এখনো ল‍্যাপটপে ভিডিও কল চলছে। অবন্তী বিছানায় বসতে বসতে বললো,“ সরি ” ― কোন ব‍্যপার না। ― তো কি বুঝলেন? ― অবন্তী সত্যি বলতে এখানে বোঝার মতো কিছুই নেই। – মানে ঠিক বুঝলাম না! ― মানেটা সহজ, আহানকে শুধু বলেছিলাম বক্সটা কিভাবে পেল,সে পুরো ভ্রমণ কাহিনী শুনিয়ে সময় কাটিয়ে দিয়েছে। ― আপনি আটকালেন না কেন? ― আটকাবো কেন? আমার কাজ হচ্ছে শোনা,জোর জবরদস্তি করা নয়, আর আমি যতটুকু বুঝতে পারছি এই ছেলেকে জোর করলে নিজেকে আরও গুটিয়ে নেবে। সেটা কি ভালো হবে! অবন্তী চুপ হয়ে গেল, কিছুক্ষণ চুপথেকে একসময় ল‍্যাপটপের পাশে থেকে ব‍ক্সটা হাতে তুলে নিয়ে বলল, – এটার সম্পর্কে কিছু জানা গেছে? – এটার সম্পর্কে এখনও কিছুই জানা যায়নি, আমি কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করেছি....তবে তারা বলেছে এটা সরাসরি হাতে নিয়ে দেখতে চায়,এটাকি সম্ভব? – না এটা করা যাবে না ,আহান সব সময় এটা সাথে রাখতো,তবে যবে থেকে একা আমার হাতে দেখেছে,তখন থেকে এটা আমার কাছেই রেখে যায়। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি এটা আহানের জন‍্যে খুবি ইম্পর্টেন্ট একটা জিনিস। – হুমম, তাহলে তুমি এক কাজ করো,যখন ঢাকা ফিরবে তখন আহান ও তোমার সাথে বক্সটা নিয়ে এসো ওকে। অবন্তীর হ‍্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে তারপর বিদায় জানালো মহিলাটিকে।লাইন কেটে অবন্তী বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে বক্সটা তার মুখের কাছে এনে ধরলো।তারপর বক্সটার আইরিন লেখার ওপরে আঙ্গুল বুলিয়ে নিজের মনেই বললো,“এমনটা কেন করলে?” ******* রুম থেকে বেরিয়েই তৃষ্ণা আহান কে খুঁজতে লাগলো, সে সোজা লিফটের কাছে এসে দেখলো কয়েকজন লিফটে ঢুকছে কাছে গিয়ে দেখলো লিফটে আহান নেই। তৃষ্ণা ভাবতে লাগলো এটা কিভাবে সম্ভব!সে তো আহানের প্রায় সাথেই বেরিয়েছে,এত জলদি আহান কোথায় গেল?তৃষ্ণা দুই দিকে দেখে নিয়ে শেষে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে নিল। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। তাকে বেশি নামতে হলো না কিছু দূর নেমেই তৃষ্ণা দেখলো, আহান সিড়ির হাটলে ধরে কেমন এলোপাতাড়ি ভাবে পা ফেলছে। ― আহান কি করছো! তৃষ্ণা তারাতারি আহানের কাছে গিয়ে আহানকে ধরলো, তার পর তাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দিয়ে ওপরের দিকে যেতে যাবে এমন সময়, আহান পেছন থেকে তৃষ্ণা হাত ধরে বলল,“প্লিজ না” তৃষ্ণা আহানের দিকে তাকিয়ে একটু ভেবে নিয়ে আহানের পাশে বসে পরলো। কিছুক্ষণ পরে আহান কিছুটা ঠিক হয়ে,তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললো,“ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ভাইয়াকে মারা হয়েছে। আমি এই রহস্যের সমাধান চাই তৃষ্ণা, আমার সাহায্য চাই”আহানের কথা শুনে তৃষ্ণা আতকে উঠলো। সে কিছুক্ষণ আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে এক সময় দুহাতে আহানের মুখটা তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে,আহানের চোখে চোখ রেখে দেখতে লাগলো। আহানের হাত ও ঠোঁট গুলো এখনো কাঁপছে।তৃষ্ণা হঠাৎ আহানের কাঁপতে থাকা ঠোটে তার ঠোঁট লাগিয়ে আহানকে চুম্বন করতে লাগলো। আচ্ছা,আপনি কি হৃদয় পোড়ার গন্ধ পান? হয়তো পান! তবে আহান ও তৃষ্ণা মনে হয় পায় না। পেলে তারা বুঝতে পারতো ,তাদের থেকে একটু দূরে একটা মানবীর ছায়া নিঃশব্দে সরে যেতে যেতে মনে মনে বলছে,"আহান তুমি ভালোবাসতে জানো না কিন্তু সবাইকে তুমি তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য কর। এর শস্তি তুমি পাবে”....... ********* (((???))) ― প্রেমে যদি পড়তেই হয়, তবে গরু-ভেড়া-ছাগলের প্রেমে পড়ুন। একমাত্র ঢিশ খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো রিস্ক নাই, ছ্যাঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা জিরো।এরা কখনো আপনাকে হতাশ করবে না। ওদিকে মানুষ প্রেম নিয়ে শুধু লুকোচুরি খেলে। প্রেম থার্মোমিটার থাকলে মেপে মেপে মানুষের বিয়ে দেওয়া যেত। লাইলি বলে মজনুকে ভালবাসে, কিন্তু মন থাকে ফরহাদের দিকে। আহানের কথায় আবন্তী বলল,“আমাকে দেখে কি মনে হয়?” আহান অবন্তী কথায় একটু দূরে সরে গিয়ে ভালো মতো অবন্তীকে দেখে বলল,“আপনি কথা বলার জন‍্যে বিপদজনক টপিক।” – মানে? ― সহজ কথায় বলতে গেলে,এতক্ষণ এদের সবাইকে নিয়ে যা বলেছি সে অনুযায়ী ভালো বললে এদের মাইর খেতে হবে আর খারাপ বললে ভাইয়ের।তাই ভাবতেছি পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগে আমি কেটে পড়ি। আহান আড্ডা ছেরে উটে পরবে এমন সময় একটি মেয়ে বলে উঠলো,“আচ্ছা আমাকে দেখে আমার সম্পর্কে কি মনে হয় তোমার?” আহান সাথে সাথে ঠাস করে মেয়েটির মুখের ওপরে বলে দিল,“বেশি সুবিধার না” এটুকু বলেই আহান বেরিয়ে এলো।বেশ কিছু টা এগিয়ে আসতেই পেছন থেকে একটা মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে আসলো আহানের কানে ― আহান দাঁঁড়াও আহান দাঁড়ালো না,এগিয়ে যেতে লাগলো। এক সময় মেয়েটা ছুটে এসে আহানের সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ালো। ― আহান তোমার সমস্যা টা কি বলবে? আহান মেয়েটার হাতের নিচ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে বললো,“কোন সমস্যা নেই,আবহাওয়া খুব গরম, সামনে আইসক্রিম পাওয়া যায়, খাবেন?” মেয়েটা আহানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো ,“ হ‍্যাঁ খাবো চলো” আহান হতাশ হয়ে বললো,“সৌজন্যের খাতিরেও তো মিষ্টি করে বলতে পারতেন আজ নয় অন্য কোনদিন খাবো!” ― আমার মুখে এতো রস নেই আহান। ― ওকে চলুন, রাস্তা তো আপনার চেনাই। আইসক্রিম পার্লার খোলা পাওয়া গেলো না তার বদলে আহান ঢুকলো একটা ছোট্ট খাটো রেটুরেন্টে। প্রচুর লোকজন চারিদিকে।তার মধ্যেই এক কোনায় একটা টেবিল দখল করে বসে হাঁক ছাড়লো আহান, "কই দেখি, দুই প্লেট বিরিয়ানী, চারটে ছানার জিলিপি আর দুইটা 7up এদিকে ..!!!" – এখন বিরিয়ানী খেতে হবে? ― অর্ডার দিয়ে দিয়েছি যখন, খেতে হবে। এখন কি বলবেন বলুন। – এই পরিবেশে? ― সমস্যা কি আছে? কতো লোকে কথা বলছে তাদের তো সমস্যা হচ্ছে না! – তোমাকে এই পরিবেশে মানায় না আহান। – আমার কোন নিদিষ্ট পরিবেশ নেই,খাবার আসছে। যা বলার খেতে খেতে বলুন। খাবার এলো, আহান খুব মন দিয়ে খাবার খেতে লাগলো কিন্তু মেয়েটির খাওয়া হলো না। সে শুধু কিছুক্ষণ পরে পরে বোতল থেকে ড্রিংক করতে করতে আহানের খাওয়া দেখলো। খাওয়ার পর্ব শেষ করে তারা নামলো রাস্তায়। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় মেয়েটা বললো,“ আহান দুই দিন পরে আমার জন্মদিন তুমি আসবে?” ― চেষ্টা করবো.তবে এখনি কিছু বলবো না। মেয়ে হটাৎ আহানের একটা হাত চেপে ধরে বললো – আহান প্লিজ তোমাকে আসতে হবে ,তোমাকে কিছু বলার আছে ,আর আমি এই দিনটার জন‍্যেই অপেক্ষা করছিলাম। আহান কিছু বলার আগেই একটা রিশকা থামলো তাদের পাশে।রিশকা থেকে অবন্তী বললো,“ রাত্রি তুই এখনও বাড়িতে জাসনি!” রাত্রি আহানের হাত ছেড়ে দিয়ে রিশকা দিকে যেতে যেতে বললো,“মনে রেখো আহান তোমাকে আসতে হবে,ইউ হ্যাভ টু..... ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ ********* মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় অবন্তী। ঘুম ভাঙ্গতেই অবন্তী কানে আসে আহান কাতর স্বরে গুঙিয়ে চলেছে,কিছু একটা বলছে যেন, কিন্তু বাক্য টি অস্পষ্ট। বিশেষ কিছুই বোজা যাছে না। আজ অবন্তী আহানকে খাটে শুতে দিয়েছে,তবে তাদের দুজনের মাঝে কোমল বালিশের পাঁচিল। - আহান! আহান!!.. অবন্তীর ডাকের পরেও পাশের মানুষটার থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলো না। ।অবন্তী তার হাতটা আহানের দিকে বারিয়ে দিয়ে আহানের শরীর স্পর্শ করতেই যেন ছেকা লাগলো তার। আহানের শরীর এত গরম কেন!জ্বর এসেছে নাকি। অবন্তী আহানকে মানা করেছিল এই ঠান্ডায় সকাল সকাল জলে না নামতে, কিন্তু তার কথা কে শোনে! অবন্তী জলদি উঠে বসে আহানের হাত ধরে দেখলো। অনেক গরম। কপাল ও গালের দু'পাশ চেক করলো।তার মনে হলো আহান মাঝেমাঝে কেঁপে উঠছে। আর কিছু একটা বলে চলেছে ঘুমের ঘোরে। কি বলছে তা নিয়ে অবন্তীর কিছুটা কৌতূহল হচ্ছিল। সে মাঝের বালিশ গুলো সরিয়ে একটু এগিয়ে গেল আহানের দিকে। আর খুব জলদি বুঝতে পারল এটা করা তার ভুল হয়েছে। মানুষ হয়তো খুবই সচেতন প্রাণী এই পৃথিবীতে তবুও কিছু কিছু পুরানো অভ্যাস অন্ধকারে ফস্ করে জ্বলে উঠে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে,অবন্তীর মনে হয় তা জানা ছিল না! অবন্তী আহানের মুখে কাছে তার মাথাটা এনে শুনতে চাইলো আহান কি বলছে এবং আহানের গরম নিশ্বাসের সাথে যে শব্দটি সে শুনতেও পেল তা “আইরিন” আর তারপরেই ঘটলো দূর্ঘটনা। আচমকাই আহান দুহাতে অবন্তীকে জরিয়ে ধরে বিছানায় ফেলে তার বিশাল দেহটা উঠিয়ে দিল আবন্তীর ওপরে,অবন্তী তার ভুল বুঝতে পেরে দুহাতে আহানকে ঠেলে উঠতে চাইলো। কিন্তুআহানের শক্তি সামনে সে অসহায়। আহান ইতি মধ্যেই তার মুখ গুজে দিয়েছে অবন্তীর ঘাড়ে।আহানের গরম শরীরের স্পর্শ অবন্তী কাতরে উঠলো,"আহান না আহান!!” তবে তার গলা স্বর আহানের ঘোর ভাঙাতে পারলো না।অবন্তী অনুভব করল আহানের ডান হাতটা তা শাড়ির আঁচল ঠেলে সরিয়ে উঠে যাচ্ছে বুকে বিপদজনক জায়গায়।অবন্তী আর নিতে না পেরে আহানের গলার কাছের নরম মাংসে সজোরে একটা কামোড় বসিয়ে দিল। আর সাথে সাথেই ঘোর কেটে গেল আহানের।আহান চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করলো অবন্তী ওপরে,সে অনুভব করলো তার ডান হাতটা অবন্তী বুকের ওপরে। আহান বিদ্যুৎ বেগে নিজেকে সরিয়ে নিতে গিয়ে খাটের এক পাশে মাথা ঠুকে গেল তার....... Continue.....
Parent