ভাগ্যের খেলা【নতুন সূচনা- খন্ড ৭】 - অধ্যায় ৯
নতুন সূচনা:খন্ড২
আহানের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই,অবন্তী দূরে সরে যায়।এদিকে বেডের কোণে মাথা ঠুকে আহানের কপালটা একটু কেঁটে গেছে। সে সেখানে এক হাতে ধরে রেখেছে। আহান নিজেকে সামলে নিয়ে অবন্তীর দিকে ঘুরে দেখলো অবন্তী ইতিমধ্যে বেডসাইডের টেবিলে থাকা লাইটটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাই রুমটা এখনো আলোকিত। আর সেই আলোয় আহান দেখলো অবন্তী বিছানার এক কোণে জড়সড় হয়ে বসে আছে। আহান দেখে আবাক হলো অবন্তী তার দুহাতে একটা বালিশ নিয়ে আহান দিকে ছোড়ার ভঙ্গিতে ধরে রেখেছে। অবন্তী চোখে মুখে আতঙ্ক।
― আপনার কি মনে হয় এটা দিয়ে আঘাত করা সম্ভব!
আহানের কথা শুনে অবন্তী বি,র,ক্তি,তে মুখ কুঁচকে ফেললো।তারপর চোখ বুঝে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ,বালিশটা আহানের মুখে ছুড়ে দিয়ে বললো,
– ইডিয়েট।
– অ্যায়াম স্যরি,আমি ইচ্ছে করে কিছু.....
আহানের কথা শেষ হবার আগেই অবন্তী অন্য একটা বালিশ হাতে নিয়ে একটু দূরে থাকা একটা সোফায় গিয়ে বসে পরলো। ইচ্ছে করে হোক বা না হোক,এই ঘটনার পরে আর এক খাটে ঘুমানো সম্ভব না।
আহান অবন্তীর দিকে তাকিয়ে ভাবলো,সেকি বেশি কিছু করে ফেলেছে!ভাবতে ভাবতে আহান বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। আর উঠে দাঁড়াতেই তার মাথাটা কেমন যেন একটু ঘুরে গেল। আহান টালসামলাতে না পেরে বিছানায় বসে পরলো,আর সাথে সাথে পেছন থেকে অবন্তীর চেঁচিয়ে উঠলো, ”আহান!!” কি মনে হয়! অবন্তী এতো নিষ্ঠুর হবে যে আহানের কপাল থেকে রক্ত পড়বে আর সে শুয়ে থাকবে আর কিছু করবেনা?
– কতখানি কেঁটেছে দেখি!
অবন্তী সোফা থেকে উঠে এগিয়ে আসে আহানের সামনে। তারপর আহানের হাত কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে দেখে কিছুটা কেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। এটা দেখেই অবন্তী তীব্র উন্মাদের মত ফাস্ট্রেড খুঁজতে শুরু করে রুমে। অবন্তী কান্ডে আহান হতবাক হয়ে বলে বলে,“তেমন কিছু তো হয়নি....” আহানের কথা থামিয়ে দেয় অবন্তীর চোখের তীব্র দৃষ্টি।
ফাস্ট্রেড খুঁজে বের করে আহানের কপালের রক্ত মুছে
মেডিসিন দিয়ে দিল । কাজ শেষ হওয়া মাত্রই অবন্তী লক্ষ্য করল আহান তার শাড়ির ফাক দিয়ে বেরিয়ে থাকা কোমড়ের খোলা অংশটার দিকে তাকিয়ে আছে। অবন্তী একহাতে শাড়ি টেনে তা ঢেকে দিয়ে অন্য হাতে আহানের থুতনি ঠেলে উপরে তুলে বললো,“তোমার ভাগ ভালো তুমি অসুস্থ” এমন হাতে নাতে ধরা পরে আহান একটু লজ্জা পেল বটে তবে "দুঃখিত"বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। ভাবতে লাগলো চোখগুলো এমন বিশ্বাসঘাতকতা কেন করছে।
এদিকে অবন্তী এক হাতে একটা ট্যাবলেট ও অন্য হাতে পানির গ্লাস নিয়ে বললো,“দেখি, হা করো!" এ মূহুর্তে যে কেউ দেখলে ভাববে অবন্তী কোন বাচ্চাকে ট্রিটমেন্ট দিতেছে। এক হাতে আহানকে ঔষধ খাইয়ে ,পানির গ্লাসটা মুখের কাছে এনে পানি খাইয়ে দিলো অবন্তী। তারপর আবার বালিশে শুইয়ে দিলো। অবন্তীর এমন স্নেহ আহান কিছুটা বিব্রত বোধ করছে,কিন্তু সংকোচে কিছু বলতে পারছে না,কারণ আজ অনেকদিন পরে কোন মেয়েকে দেখে আহানের নার্ভ দূর্বল হয়ে পরছে। যেন কোন এক মাদকতা পেয়ে বসেছে তাকে,নিজেকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে রিতিমত। বার বার চোখ চলে যাচ্ছে অবন্তী দিকে,না চাইতেও মাঝেমধ্যেই চোখ দুটি বুলিয়ে নিচ্ছে অবন্তী শরীরের আনাচে কানাচ, হাতে নখ হয়ে চোখের দৃষ্টি তার কোমল আঙুল দিয়ে উঠে যাচ্ছে তার ফর্সা ত্বকের ওপরের দিকে। তারপর শাড়ি আঁচল বেয়ে আবারও নেমে যাচ্ছে গলার কাছে থেকে পর্বত টিলার মত উঁচু বুক পেরিয়ে সরু কোমড়টার কাছে,আর সেখানেই চোখ আটকে যাচ্ছে বারবার। চোখগুলো কোন বাধা মানছে না। অবন্তী দেহের নাড়াচাড়ার সাথে মাঝেমধ্যেই উকি মারছে তার কোমড়টা,আর সেই সাথেই আহানের পৌরষস্বত্তাকে প্রবলভাবে উন্মাদিত করে তুলছে।আহান দুই চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।
দুচোখ বুজে একটা লম্বা নিশ্বাস নিতেই চমকে উঠলো সে,তার নাকে ভেসে এল এক অদ্ভুত সম্মোহনী ঘ্রাণ। আহান চোখখুলেই দেখলো ,অবন্তী তার দিকে ঝুঁকে কপালে ও গালে হাত দিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে। এমন এক বিপদজনক পরিস্থিতিতে আহানে মুখ থেকে ফস করে একটা কথা বেরিয়ে এলো,
― একটু একা থাকতে দেবেন!
হঠাৎ আহানের এমন কথায় অবন্তী হতবাক হয়ে আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান ভুল বুঝতে পেরে ব্যস্ত হয়ে বললো,“ আমি এভাবে বলতে চাইনি,আসলে মাথার চিন্তাভাবনা গুলো কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে” আহানের কথায় অবন্তী ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে তারপর সোফার দিকে এগিয়ে গেলো। এদিকে আহান বিছানায় শুয়ে ওপড়ের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে দুহাতে তার মাথার চুল মুঠো করে ধরে নিজের পৌরষবোধের ক্ষুধাটাকে শান্ত করার প্রচেষ্টায় লেগে পরলো। আর ভাবতে লাগলো এতো দিন পরে হঠাৎ এমনটা কেন হচ্ছে! এদিকে আহান যখন তার উত্তেজিত ভাবনা গুলো শিথিল করতে ব্যস্ত, অপর দিকে অবন্তী সোফায় আধশোয়া অবস্থায় আহানের কান্ড দেখে কি হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করতে ব্যস্ত।
**********
– ছেলেদের ফ্রেশ হতে এত সময় লাগে? আহান!বেরিয়ে এসো,আহান!!
আহান বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে,তৃষ্ণা তার সামনে দাঁড়িয়ে। আহান একটু আবাক হয় তৃষ্ণার সাজ কে দেখে,অতি সাধারণ বাঙ্গালী মেয়েদের মতো শাড়ি পড়েছে তৃষ্ণা। কিন্তু আহানের যতদূর মনে পরে তৃষ্ণা ক্লাস মেইনটেইন করে চলে। আজ হঠাৎ এমন সাধারণ সাজে কেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।কোন জাকজমক নেই তার শাড়িতে বা চেহারায়, সাধারণ ড্রেপিং করে একটা সবুজ শাড়ি,মাথার চুলগুলো খোপা করা এমনকি চেহারায় প্রসাধনীর ছোয়া নেই বললেই চলে,তবুও বেশ দেখতে লাগছিল তাকে। তাকে দেখলে সবাই বলবে 'এ যে অবন্তীর অনুকরণ বলে মনে হচ্ছে'। মনে মনে মুগ্ধ হলেও আহান মুখে কিছুই বললো না,গতকাল যা হয়েছে তাতে আহান বুঝে গেছে তৃষ্ণার থেকে তাকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
– আহান দয়া করে এভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না প্লিজ!
অবন্তীর কথায় আহানের মনে পরলো সে সে অভ্যেস মত শুধু কোমড়ে একটা তোয়ালে পেছিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।আহান ব্যস্ত হয়ে পড়লো তৈরি হতে।
– অবন্তী এখানে অচেনা কেউ তো নেই,সমস্যা কি?
তৃষ্ণার কথায় অবন্তীর মুখে একটু বিরক্তি ফুটে উঠলো। সে বিরক্ত মুখে বললো,“আহান তোমার কাজ শেষ নিশ্চয়ই! এখন কি আমরা ঢাকা ফিরতে পারি?” অবন্তী কথায় তৃষ্ণা চটপট জবাব দিল,“আহানের কাজ শেষ হয়নি আর তাছাড়া কক্সবাজার এসে ঘোরাঘুরি না করেই ফিরে যাওয়ার কোন মানেই হয় না” আহান তৈরি হতে হতে বললো,“কোথায় যেতে চাইছো?” তৃষ্ণা আহানের দিক থেকে পেছন ফিরে ফোনেটা সেলফি তোলার মত উচুঁ একটা ছবি তুলে বললো,"হিমছড়ি" ফোনটা নামিয়ে আনার সময় তৃষ্ণার চোখাচোখি হলো অবন্তী সাথে।আহান ততখনে তৈরি হয়ে সামনের দিকে ফিরে দেখে তৃষ্ণা ও অবন্তী একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে,ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে আহান বললো,“কি হয়েছে?”
**********
আমার প্রার্থনা এই:
এই দুঃখের কাছে নত যেন না হই;
নিজেকে ধরে রাখি জীবনের মাঝে।
আমার প্রার্থনা এই :
আবার যেন যাই জলের কিনারায়,
স্বর্গের সিঁড়িটা যেন চিনতে পারি।
আমার প্রার্থনা এই :
পৃথিবীর সব ক্রোধ এক ঝড়ের রাতে ফেলে দিই
সমুদ্রের জলের গভীরে।
কানে হেডফোন গুজে এই গান শুনতে শুনতে গাড়ির জানলা দিয়ে রোডের একপাশে রুক্ষ সমুদ্র সৈকত এবং অন্যদিকে ছোট ছোট বড় পাহাড়ের চোখ ধাধানো দৃশ্য উপভোগ করছিল আহান। হঠাৎ পেছন থেকে তার কাঁধে ধাক্কা খেয়ে আহান হেডফোন খুলে দেখলো। তৃষ্ণা বিরক্ত মুখে তাকিয়ে আছে।
– বুঝলাম না এমন চুপচাপ বসে কেন?
– তৃষ্ণা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে এসে হৈ চৈ করলে ভালো লাগবে! তার চেয়ে ভালো ভ্রমণের সময়টা উপভোগ করো। এই বিশাল বিস্তৃত সৈকত ও দূরে ঐ জেলেদের সাগরে মাছ ধরা, এই দৃশ্যটি আর কোথায় পাবে বলো।
আহানের কথায় তার পাশে বসা গাড়ির ড্রাইভারটাও সহমত প্রকাশ করলো,“ একদম ঠিক বলেছেন ভাইজান, তবে ভাইজান আপনাকে দেখে কিন্তু প্রকৃতি প্রেমি বলে মনে হয় না” আহান আবার বাইরের দিকে তাকালো।
– এই পাথুরে সৈকত ও গাছের ডালপালা তোমার লাগলেও আমার লাগছেনা।আর আমি হৈ চৈ করতে বলছি না,শুধু বলছি চুপ করে বসে থেকো না। তোমার ও অবন্তীর এই রকম মুখ দেখে বিরক্ত লাগছে। এখন তো মনে হচ্ছে কক্সবাজার আসাটাই মাটি হলো।
― তো কি করতে বলো?
তৃষ্ণা কিছু বলার আগেই তার পাশে থেকে অবন্তী বললো,“আহান তোমার পাহাড় ভাল লাগে নাকি সাগর?” আহান জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে অবন্তীর দিকে তাকালো। অবন্তী গাড়ির কাঁচের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।“আমি পাহাড়ের সাথে পানি দেখতে পছন্দ করি,যেমন "মাল্টনোমাহ ফল"। আহানের কথা শুনে অবন্তী মুখ ঘুরিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,“জলপ্রপাত“
– হুম!
– সুন্দর কিন্তু ভয়ংকর।
– তা ঠিক,তবে আমি সৌন্দর্যটাই বেশী উপভোগ করি ভয়ংকর দিকটা বাদ দিয়ে।
– আমার তা মনে হয় না! আমার মনে হয় তুমি ভয়ংকর দিকটা উপভোগ করো সৌন্দর্য টা বাদ দিয়ে।
আহান ভাবতে লাগলো অবন্তী কথা কতটুকু সত্যি।
এদিকে অবন্তী মুখটা জানালার দিকে ফিরিয়ে নিল। দেখতে লাগলো রাস্তায়র দিকে। আহান কথা বলতে লাগলো গাড়ির ড্রাইভারের সাথে।তাদের কথায় মাঝে মধ্যেই তৃষ্ণা ও অবন্তী সারা দিলো।
তারেদ আলোচনার সাথে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে, একপাশে সমুদ্রের বালুকা বেলা আর অন্য পাশে চোখকাড়া সবুজ পাহাড়ের সাড়িগুলো কে পেছনে ঠেলে পিচ ঢালা মে…......
**********
কো-ইনসিডেন্স!!! না কো-ইনসিডেন্স নয় দেখা হয়ার কারণ আছে। তবে আহান এখনো তা যানে না।
একটা রেটুরেন্টে তারা সকালের নাস্তা খেয়ে হিমছড়ি দেখার জন্য বের হয়ে তারা গিয়ে পড়লো রাত্রির সামনে। আহানকে দেখেই রাত্রি বললো,“আশা করি ভ্রমণে কোন সমস্যা হয়নি!তোমাকে দেখে ক্লান্ত মনে হচ্ছে।” আহানের আগে অবন্তী এগিয়ে গিয়ে জবাব দিলো,“আহানের শরীর টা একটু খারাপ। কিন্তু তুই এখানে কেন?” অবন্তী কাছে যেতেই রাত্রি তার সাথে hug করে এবং তারপরে এগিয়ে এসে তৃষ্ণা ও আহানের কাছে। তৃষ্ণার সাথে hug করলেও আহান সরে দাঁড়ালো। রাত্রি অবশ্য জোর করলো না,সে তৃষ্ণা ও অবন্তীর সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেল।
– এখন পাহাড়ে ওঠার পালা,লোকে বলে সেখান থেকে সমুদ্রের সৌন্দর্য কয়েকগুন বেশি বেড়ে যায়।
– আমি ও আহান উঠবে না।
পাহাড়ের ওঠার সময় অবন্তী হঠাৎ বেকে বসলো। তৃষ্ণা ও রাত্রি অনেক বুঝিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।শেষে তৃষ্ণা এলো আহানের কাছে ।
– আহান এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– আমি কি করবো?
– এর মানে কি !এতদূর এসে পাহাড়ে না উঠেই চলে যাবো?
তৃষ্ণার কথা শুনে অবন্তী বললো,“তৃষ্ণা তুমি আর রাত্রি যাও ঘুরে এসো,একটা অসুস্থ মানুষকে শুধু শুধু জোর করছো কেন?” কথাটা মন্দ বলেলি অবশ্য তবে আহান এখন অনেকটাই ভালো। আহান একটু ভাবে দেখলো অবন্তী কোনভাবেই তাকে উঠতে দেবে না। কিন্তু আহানের তো না উঠলে চলছে না।আসলে আইরিনের সাথে থেকে থেকে আহানের মনটা হয়ে উঠেছে অ্যাডভেঞ্চারস। তাই বলে এই নয় যে আহান নিজে ঘোরাঘুরি করতো না।সে ঘুরাঘুরি যথেষ্ট করতো।তবে আইরিনের সাথে পাহাড়, জলপ্রপাত, জঙ্গল সহ এই প্রকৃতি মায়ের বুকে যেসব ভয়ংকর অ্যাডভেঞ্চার আহান করছে তার কাছে এই পাহাড়ের সিঁড়ির বাধা তুচ্ছ। তবে বউরের বাধা বিশালাকার হয়ে দাঁড়ালো। এদিকে তৃষ্ণা ও রাত্রি ছাড়ার পাত্র নয় ,এই মূহুর্তে তর্কবিতর্কের অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে তাকে আর বাড়তে না দিয়ে আহান এক সাহসী কান্ড করে বসলো। আহান সোজা গিয়ে তিন জন্যের মধ্যে থেকে অবন্তীকে কোলে তুলে সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে লাগলো! বাকি দুজনে নিচে কি করছে সেটা দেখা না গেলেও সিঁড়িতে আহানের কোলে অবন্তী কি হয়েছে বুঝতে পেরে রিতিমত চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।
– আহান এটা কেমন অসভ্যতা! আমাকে নামায় বলছি! এখনি!!
– নামাবো তার আগে ওপরে উঠে....
আহানের কথা শেষ হলো না আবারও একিভাবে অবন্তী রেগে বলেতে লাগলো,“আমার ওপড়ে কোন ইচ্ছে নেই,এখুনি নামিয়ে দাও বলছি!”অবন্তীর এই অবস্থা দেখে ওপরের দিকের দুটি ছেলে দাঁড়িয়ে পড়লো। তবে তারা কিছু বলার আগেই আহান বললো,“ ভাই না থেমে উপড়ে উঠুন,আর আপনি একটু চুপ করবেন প্লিজ,না হয় শেষে আপনার জন্যে গণধোলাই খেতে হবে।”
কিছুক্ষণ পরে অবন্তী চেঁচামেচি থামিয়ে দিল এবং কোন কারণে তার ফর্সা মুখ হয়েগেল লাল,দেখে মনে হয় যেন টোকা দিলেই রক্ত বের হবে। বেশ অনেক ক্ষণ সব চুপচাপ শুধু সো" সো" করে বাতাস বইছে,মাঝেমধ্যে কিছু অজানা পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। আহান হয়তো খেয়াল করেনি অবন্তী এক হাতে আহানের গলা জরিয়ে ধরে ডান হাতে আহানের ডান পাশের গলায় আঙুল বুলাচ্ছে। ঠিক যেই জায়গাটায় মাঝরাতে কামোড় বসিয়ে ছিল সেখানে। এখন দাগটা অস্পষ্ট,তবে ভালো করে দেখলে বোঝা যায়। আবন্তীর হাতটা গলার কাছে থেকে ধিরে ধিরে নেমে এসে অবস্থান নেয় আহানে বুকের বাঁ পাশেটায়। অবন্তী তার হাতে অনুভব করে আহানের হার্টবিট বাড়ছে। সে মুখ তুলে তাকায় আহানের দিকে এবং ক্ষীণ স্বরে বলে,“আহান এখন দয়াকরে নামিয়ে দাও” তবে অবন্তীর কথা আহানের কানে যায়নি। আহান দৃষ্টি স্থির ভাবে সামনে সিঁড়ির দিকে। সে হাপাচ্ছে কিন্তু থামছে না। অবন্তী তার হাতে অনুভব করছে আহানের শরীরের উত্তাপ। তার মনে হচ্ছে যেন আহানের শড়িলটার উত্তাপ ধিরে ধিরে কিছুটা বারছে। অবন্তী এবার অজানা ভয়ে কাতরে উঠে উচুঁ স্বরে বললো,“আহান নামাও আমাকে প্লিজ!” এবার মনে হয় আহান শুনতে পেলো এবং আর কিছুটা উঠে হঠাৎ অবন্তীকে নামিয়ে দিয়ে সিঁড়ির রেলিংয়ে পাশে বসে হাপাতে লাগলো। অবন্তী নিচু হয়ে আহানের সামনে বসে বললো
– আহান তুমি ঠিক আছো!
– (হাপাতে হাপাতে) পানি খাবো ত-তার পরে আবা...
– আর উঠতে হবে না, উঠেই তো পরেছো।
তৃষ্ণা একটু রাগি গলায় বললো কথাটা।তারপরে পানির বোতলটা অবন্তী কে দিয়ে উঠেগেল। এদিকে রাত্রি একটু ওপরে একটা সিঁড়িতে বসে বললো,“ নামার সময় আমাকে নিয়ে নামা যায়,আমি কিন্তু অবন্তীর মতো ঋনী হয়ে থাকবো না ,লাভ আসল সবটাই পরিশোধ করে দেবো” অবন্তী বা আহান রাত্রি কথা শুনেছে বলে মনে হয় না আর শুনলেও হয়তো বোঝেনি। আহান পানি পান করছে আর বোতল ধরে রেখেছে অবন্তী। যদিও হাওয়া বইছে তবুও অবন্তী তার শাড়ীর আঁচলটা দিয়ে হাওয়ার কার্যকরীতা আরো বারিরে দিতে প্রচেষ্টার কমতি করছে না।
পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে যেটুকু বাকি ছিল সে টুকু অবন্তী আহানের হাতে ধরে ওঠে কিন্তু কেন! ওয়েল এখন কোলে করে উঠতে সমস্যা হয়নি এখন হাতে ধরলে সমস্যা কি? যাই হোক এটা মনে হয় অবন্তীর নিয়েদ বুঝতে সময় লাগবে।
উপরে উঠে অবন্তী হাত ছেড়ে এক পা সামনে আগায়
আয়ানও এক পা সামনে আগায়।এভাবে কিছুটা পাশাপাশি এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াতেই, অবন্তী চোখ যেন সামনের অসাধারণ দৃশ্যটিতে আটকে যায়।
প্রায় ২ শতাধিক সিড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠে চোখ মুগ্ধকর এ দৃশ্যটি দেখে আহানের মুখে হাসি ফুঁটে ওঠে। এই দৃশ্য যে বড় দুলর্ভ, তা দেখে মুগ্ধ হওয়া স্বাভাবিক। এতো গুলো সিঁড়ি ভেঙে ওঠার কষ্টটা মুহুর্তেই ভুলে যায় সে।এই দৃশ্য পাহাড় চুড়া বা সমুদ্র সৈকত নয়, আহান তাকিয়ে আছে অবন্তীর মুগ্ধ হাস্যজ্জল চোখের দিকে ,এক পলকে দেখে যেন তার সেই প্রকৃতি প্রেমি প্রেয়সীর চোখ দুটির কথা মনে পরে যায়। আহান চোখ ঘুরিয়ে সামনে নীল দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া সে বিশাল বড় সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবে। মানুষের এই ক্ষুদ্র জীবনে কত ঘটনায় না ঘটে,যা নিয়ে কোন কাব্য রচিত হয়না,হয়না কোন গল্পের সূত্রপাত বা সে সব কখনো ওঠে না কোন খবরের পাতার শিরোনামে। কিন্তু তবুও নিরবে মনের গহীনে মহা প্রলয় ঘটে যায়,যেটা কেউ দেখতে পায় না....
*******
– তো এখন আহান!
রাত্রি ও তৃষ্ণা একসাথে দাঁড়িয়ে দেখছিল আহান ও অবন্তীকে। অবন্তী ও আহান দাঁড়িয়ে আছে ,তাদের মাঝে প্রায় দুই হাতের দূরত্ব,যদিও এখানে দেখার মত তেমন কিছুই নেই তবুও তারা সেদিকে তাকিয়ে। রাত্রির কথায় তৃষ্ণার দৃষ্টি তাদের থেকে সরে যায়নি, সে সেদিকে তাকিয়েই জবাব দেয়,
– মানে!
– মানে বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি তুমি আহানের আসে পাশে একটু বেশি ঘুরছো,তাই ....
– রাত্রি তুমি যা বলতে চাইছো বুঝতে পারছি,তবে আহান আমার বন্ধুর মতো...
– ও তাই! তাহলে তো মনে হচ্ছে আমার চোখের সমস্যা স্যরি। আসলে পেশার দোষ, সবাইকে দেখি সন্দেহর চোখে। তবে তৃষ্ণা! পাথরের উপরে হাঁটলে পায়ের দিকে খেয়াল রাখতে হয়,বলা তো যায় না কখন কি হয়ে যায়।
এটুকু বলেই রাত্রি আহানের দিকে এগিয়ে যায় এবং অবন্তী ও আহানের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,“ সুন্দর জিনিস বেশি দেখতে নেই নেশা লেগে যাবে।” রাত্রির কথায় অবন্তী ঘুরে দাঁড়ায় এবং আহানের উদেশ্যে বলে
– এটা তোমার প্রথম নয় তাই না?
– না আমি আরো দুই একবার এসেছি এখানে।
– তবে আহানের এবারের যাত্রাটা মনে হয় স্পেশাল!
আহান রাত্রির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে রাত্রি কি বলতে চাইছে। রাত্রি ফোন হাতে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি আপলোড করছে।সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় ছবিটি তোলা হয়েছে তৃষ্ণাকে সাথে নিয়ে। ছবিতে রাত্রির মুখে হাসি থাকলেও তৃষ্ণার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।তৃষ্ণা যে ছবি তুলতে চায়নি তা বোঝা যাচ্ছে।
আহান রাত্রি ও অবন্তীকে ওখানে রেখেই তৃষ্ণার কাছে এগিয়ে গেল। তৃষ্ণার কাছে এসে একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আহান বললো,“কোন সমস্যা?” তৃষ্ণা রাত্রির দিকে তাকিয়ে ছিল এখন আহানের কথা মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বললো,“ সমস্যাটা যে কি বলতে পারি তবে শর্ত আছে!”
– তাহলে থাক, বলতে হবে না।
– আচ্ছা আহান!গতকালকের ব্যাপারটা নিয়ে তুমি কি এখনো আমার ওপর রেগে আছো?
– না,ওটা একটা ভুলছিল।
– তাহলে এতো দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
– আবারও যেন সেই ভুলটা না হয় তাই।
– ....... ভেবেছিলাম বিদেশের আবহাওয়া তোমার ভেতর কিছু পরিবর্তন আনবে কিন্তু....
তৃষ্ণা থেমে গেল অবন্তী আসছে দেখে।
– আহান আমরা কি একটু একা কথা বলতে পারি?
– যাও আহান, তবে আমাদের সময় মতো নিচে নামতে হবে,তারপর রাত্রি তোমাকে নিয়ে যাবে।
– রাত্রি! রাত্রি কেন?
– পরে বলছি ......
******
অবন্তী আহানের হাত ধরে টেনে নিয়ে তৃষ্ণার থেকে কিছুটা দূরে এনে দাঁড়ালো। তারপর সামনে দাঁড়িয়ে আহানের কপালে ও গালে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো তার শড়ীলের উত্তাপ। এরপর বেশ কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।আহানের একবার মনে হলো কিছু বলে নিরবতাটা ভেঙ্গে দিতে।কিন্তু তার সাহসী মনে ঠিক সেই সময়ে আবারও তার আবেগের শেকলে বাধা পড়ে গেল। অবন্তীরাও একি অবস্থা। তার মনে অনেক কথা জমে তা এখন বিশাল পর্বতে পরিনত হয়েছে। কিন্তু মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না। সে জানে আহান কথা বলবে না,তার পরেও অবন্তী মনে একটু ক্ষীণ আশা নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে অন্য পাহাড়গুলোর সৌন্দর্য দেখতে লাগলো। কিন্ত আরো কিছুক্ষণ পরেও যখন আহান কোন কথা বললো না,অবন্তী মনে মনেই রেগে উঠলো।তবে সেই রাগটা বাইরে প্রকাশ না করে সে বললো,“ তোমাকে বড্ড বেশিই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে,কারণটা জানতে পারি?” আহান তার দিকে তাকালো না, সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো, “তেমন কোন কারণ নেই,শুধু মনে হলো এবার স্বাভাবিক হবার প্রয়োজন” আহানের কথা শুনে এবার অবন্তী নিজের রাগটা লুকিয়ে রাখতে পারলো না,একটু রাগি গলায় বললো,“তুমি এতো রহস্য করে কথা বলো কেন বলবে?” আহান কিছুটা চমকে গেল।সে অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখলো,কিন্তু রাগের কারণ ধরতে পারলো না।
– আহান তোমার রাগ হয় না? জানতে ইচ্ছে হয়না আইরিন এমনটা কেন করলো?
– রাগ হচ্ছে বললে মিথ্যে বলা হবে।তবে খুব ইচ্ছে হচ্ছে জানার এতদিনের ভালোবাসাটা যদি অভিনয় হয় তবে এর কারণ কি,কিন্তু এই মূহুর্তে উপায় নেই,এখন...
কথাটা বেড়িয়েই গিয়েছিল মুখ থেকে,শেষ মুহূর্তে আটকে দিলো,কিন্তু এটুকু শোনা মাত্র অবন্তীর চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো।
– আহান,কথা শেষ করো প্লিজ?
– তেমন কিছু নয়।
অবন্তী আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু কথাটা কানে ক্ষনে ক্ষনে বাজতে লাগলো,"রাগ হচ্ছে না" কিন্তু কেন!
– তুমি আইরিনকে এখনো ভালোবাসো?
আহান তাকালো কিন্তু কোন জবাব এলো না। অবন্তী রাগ বাড়ছিল, কিন্তু আহানের চোখের শান্ত দৃষ্টি দেখে ধমকানোর ইচ্ছে টা যেন মারা পড়লো। হঠাৎ ই তার মনে পড়লো ফুলশয্যার রাতের কথা।অবন্তী অনেক কথাই বলেছিল আহান শুনেগেছে শুধু। অবন্তী তার মনের ভাবটা তুলে ধরেছিল,,কিন্তু আহান কিছুই বলে।অবন্তী আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে দেখছিল।ভাবছিল কিভাবে একটা মানুষ এতটা ভালো হয়! প্রতিটা মানুষই এই
রাতটাকে নিয়ে কত সপ্ন সাজায় যেইভাবে অবন্তী আর হাসান সাজিয়ে ছিল, কিন্তুু আহান তো নিজের কথা ভাবেনি, ভেবেছে অবন্তীর খুশির কথা তার বাবা মায়ের খুশির কথা। অন্য কেউ হলে কি নিজের এত দিনের ইচ্ছাটা নিজের মধ্যেই রেখে দিতে পারতো!সত্যিই দুনিয়াতে এখনও ভালো মানুষ আছে এর জন্যই বোধ হয় দুনিয়াটা এখনও টিকে আছে।না হয় এই কয়েকদিন ধরে সেই আহানের সাথে তো খারাপ আচরণ করেছে,শুধু নিজের কথা ভেবে ছেলেটা ভবিষ্যতে কে দাড় করিছে এক অনিশ্চয়তা মাঝে ।কিন্তু আহান তো তার ওপরে রাগ করেনি?কখনো জানতে চায়নি তার অপরাধ কি! ছেলেটার কি কোন অপরাধ ছিল! না ছিল না ,কিন্তু শাস্তি পেয়েছে,এবং এই শাস্তি কি কখনো শেষ হবে কি না অবন্তী তা যানে না,
- আহান আমি জানি আমি তোমার সাথে যা করছি তা ঠিক নয়,কিন্তু তোমার ভাইকে এতো বেশি ভালোবাসি যে অন্যায় টাকে অন্যায় মনে হচ্ছে না। কিন্তু আইরিনের অন্যায় টাও মেনে নিতে পারছি না।
আহান শব্দ করে হাসলো, তারপর আগের মতোই স্বাভাবিক স্বরে বললো,“ আপনি বুঝি ভালোবাসা ওজন করে বলতে পারেন কারটা বেশি আর কারটা কম? কথাটা আহান সহজ ভাবে বললেও অবন্তীর বুক চিড়ে হৃদয়ে তীরের মতো গেথেগেল।সত্যিই তো ভালোবাসাটা কি ওজন করা যাও! যদি যেত হয়তো বোঝা যেতে ভাইয়ের জন্যে ভালোবাসা ভাইয়ের বেশি নাকি বউয়ের?
– আহান নামতে হবে এখনি
– সময় হয়েছে....
আহান কথা শেষ করতে পাড়লো না রাত্রি আহানের হাতে ধরে টানতে লাগলো।আহান বাধা দিল না কারণ রাত্রি সাথে তৃষ্ণা এসেছিল এবং ইসারায় তাদের কথা হয়েগেছে।তবে আহান যদি একটি বার পেছনে ফিরে দেখতো। তবে বুঝতো অবন্তী হাত বারিয়ে ছিল তাকে ধরতে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে নাগাল পেল. না.....
***********
পাহাড়ের অবন্তী ও তৃষ্ণাকে রেখে আহান ও রাত্রি,লোহার সিড়িটা দিয়ে পাহাড়ের থেকে নিচে নামছে।কিছুক্ষণ পরে আহান রাত্রিকে বললো,“আমরা কোথায় যাচ্ছি বলবে?” রাত্রি পেছনে তাকালো না,সামনের দিকে তাকিয়েই বললো,“ তুমি তোমার ভাইয়ের একসিডেন্টের বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে কথা না বলে তৃষ্ণার সাথে বললে কেন?”
– এ কথা।তুমি কিভাবে জানলে?
– সেটা তোমার না জানলেও চলবে আহান,তবে একটা কথা বলি তুমি বিপদজনক রাস্তাটা বেথে নিয়েছো। এবারের মতো আমি সাহায্য করছি কিন্তু পরের বার থেকে আমার সাহায্য আশা কোরোনা।
– তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাওনি, কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– ‘ইনানী সি বিচ’ বেশ সুন্দর জায়গা। এখান থেকে আধ ঘন্টার মতো লাগবে। তবে তার আগে নেমে কিছু খেতে হবে।
নিচে নেমে রাত্রি রেটুরেন্টে খাবার পড়ে তারা এগিয়ে গেল তৃষ্ণার গাড়ির দিকে। কালো অডি এ৮ গাড়িটার পাশে কালো সুটপ্যান্ট পড়ে ড্রাইভার দাঁড়িয়ে ছিল। রাত্রি আসতেই ড্রাইভার রাত্রিকে চাবি দিয়ে সরে দাঁড়ালো। গাড়িতে উঠে রাত্রি ড্রাইভ করলো,আহান চুপচাপ বসে বাইরে দেখতে লাগলো।আহানের রাত্রির সাথে একা থাকাটা আইডিয়াটা মোটেও পছন্দ হয়নি,কিন্তু কিছুই করার নেই। রাস্তায় রাত্রি কোন কথা বললো না দেখ আহান একটু আবার হলো,এই কয়েকদিনের রাত্রির আচরণের এমন গম্ভীর ভাব তো ছিল না।
এরপর তারা পৌছলাম “ইনানী বিচে” । জায়গাটা সত্যিই চমৎকার অসংখ্য বড় বড় পাথরে ভরা সি বিচ টা। রোদের কারণে অনেকেই সানগ্লাস পরে ঘুরছে। রাত্রির কালো সানগ্লাস টাও এতখনে মাথা থেকে তার নাকে নেমে এসেছে। আহান মনে মনে ভাবলো মেয়েটার নামের মতোই ওর কাজ ও চলাফেরা,এমনকি পছন্দও বটে। কালো শাড়ির সাথে কালো রঙের ফুল হাতা ব্লাউজ ও চোখে কালো সানগ্লাস এরসাথে রাত্রি নামটা যেন মিলে যাচ্ছে।
দূর থেকেই দেখা যায়। চারপাশে বিভিন্ন দোকান, খাবার সব আছে।
– আগে এখানে ঘুরবে নাকি বিচে যাবে?
– সেটা নির্ভর করে আমার এখানে কাজে এসেছি নাকি ঘুরতে!
– বুঝেছি তো চলো বিচেই আগে ঘুরি।
রাত্রি এগিয়ে গেলো তার পেছনে আহান, বিচ অসাধারণ সুন্দর, সমুদ্রের গোটা পার জুরে বড় বড় ধুসর রং এর পাথর যার মধ্যে সাদা সাদা ফোটা আছে। এখানে পা ভেজানো যায় না পাথরের উপর দিয়েই হাটতে হয়। আহান দেখলো দূরে একটা পাথরের ওপরে বসে কয়েক জন্য লোক গল্প করছে,তাদের মাঝে দুই জন পুরুষ ও একজন শাড়ি পরিহিত মেয়ে। মেয়েটাকে দেখে আহান চিনতে পারলো,এই মেয়েটা ট্রেনে ছিল, কিন্তু এর সাথে আর যে দুজন লোক ছিল তাদের দেখা গেল না।
কাছাকাছি গিয়েই রাত্রি একটা লোককে বললো,“ এর সাথে পরিচিতি হয় আহান তোমার ভাইয়ের সহকর্মী,তোমার ভাই আর ইনি এক সাথে কাজ করতো।” আহান তারা পরিচিত হলো এবং আলাদা ভাবে কথা বার্তা হলো ।এদিকে আহান যখন তার ভাইয়ের সহকার্মীর সাথে কথা বলছে।ঠিক একি সময় কিছুটা দূরে রাত্রি অন্য লোকটার সঙ্গে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে আহান লক্ষ্য করলো রাত্রি লোকটাকে তার ব্যাগ থেকে একটা খাম দিল আর তার বিনিময়ে লোকটা রাত্রির হাতে একটা কিছু দিল কিন্তু জিনিটা ছোট বলে ঠিক মতো বোঝাগেল না।
– আহান তোমার ভাইয়ের সাথে ফারুকের সম্পর্কটা ভালোই ছিল,কিন্তু হঠাৎ কোন কারণে তাদের মধ্য সমস্যা শুরু হলো।
– এমটা কবে থেকে শুরু হয়েছে যেতা বলুন বা তার কারণেই বাকি?
– না বলতে পারার কি আছে,হাসান সবার সাথেই মিলে মিশে থাকতো,কখনো মনে হয়নি হাসান আমাদের থেকে অনেক ওপরের পদের একজন কর্মকর্তা। আমি তো তোমার ভাইয়ের বিয়ে তেও গিয়েছিলাম।সে এক বিশাল ব্যাপার দুই জোরার বিয়ে এক অনুষ্ঠানে .....
আহান বুঝতে পারলো লোকটা বেশি কথা বলে। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে কথা বলেও বেশি কিছু জানা যায়নি।লোকটা একটা কিছু বললেই তার সাথে আরো কিছু লাগিয়ে আসল কথার আকারটাকে বিশাল বড় করে ফেলছে।
– আমি অনুষ্ঠানের কথা জানতে চাইনি,আপনি সমস্যা টার কথা বলুন, ওদের মধ্যে ঝামেলা টা কবে থেকে শুরু হলো?
– ওই তো বিয়ের একমাস পর থেকেই সমস্যা শুরু।প্রথম প্রথম বিষয়টার দিকে কেউ এত একটা নজর দেয়নি।বুঝতেই তো পারছো ,তারা ছোট বেলার বন্ধু।,এমন বন্ধুত্ব খুব একটা দেখা যায় না,আসলে আমার নিজেরও.......
আহান খুব সহজে বিরক্ত হয়না, কিন্তু এই লোকটার সাথে আরো কিছুক্ষণ কাটালে শুধু যে বিরক্ত হবে তাই নয় মনে হচ্ছে সে রেগেও যেতে পারে।তাই সে কথাটা এখানেই থামিয়ে দিতে বললো,“আমার যা জানার তা জানা হয়ে গেছে ,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ” এটুকু বলেই আহান বিদায় নিয়ে রাত্রির কাছে এসে দেখলো তার মুখে হাসি।এবার আহান বুঝলো রাত্রি পুরো ব্যাপারটা জানতো।
– তুমি সবটা জানতে?
রাত্রি কোন উত্তর না দিয়ে পেছন ফিরে হাটতে লাগলো,আহান ও তার পিছু পিছু এগিয়ে গিয়ে বললো,“ এসব তুমি নিজেও বলতে পারতে,এত নাটক কেন করলে?” রাত্রি নিচু হয়ে ছোট ছোট বেশ কয়েকটা পাথর কুরিয়ে হাতে নিতে নিতে বললো,“এমন ভাবে বলছো যেন আমি বললেই তুমি সবটা বিশ্বাস করতে।” আহান চুপ করে গেল।কথাটা ভুল বলেনি রাত্রি।
– চলো বসি
রাত্রি একটা পাথরের ওপর বসলো। তারপর ওখানে আহান বসতেই সে ছবি তুললো। এরপরে বললো,“ তোমাকে ঐদিন ক্যাফেতে অনেক কিছুই বলবো ভাবছিলাম, কিন্তু তুমি রাগ করে বেরিয়ে গেলে তাই কিছুই বলা হলো না। আর আজ তুমি জানতে চাইলেও আমার বলার ইচ্ছে নেই।(কিছুক্ষণ চুপ থেকে)... একটা কথা জানো আহান! তোমার সামনের এগিয়ে যাওয়ার পথটা সহজ, কিন্তু তুমি নিজের দোষে সেটাকে জটিল করে তোলো”
পাথরের ওপর কিছুক্ষণ তারা বসে রইলো। এরপর সি বিচ থেকে উঠে গাড়ি নিয়ে ফিরে আসতে রওনা দিল......
*********
হিমছড়িতে ফিরে রাত্রি আর তাদের সাথে থাকলো না।বললো সে ফিরে যাবে। তবে তৃষ্ণার ফেরার ইইচ্ছে ছিল না এমনকি অবন্তীরফেরার ইচ্ছে নেই ।অবন্তী ঘুরতে চাইছে দেখে আহান মানা করলো না।সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে তারা টেকনাফ হয়ে সোজা নাফ নদীর জেটির দিকে যাবে। যেখান থেকে সেন্ট মার্টিনের জাহাজ ঠিক করা আছে আগে থেকেই, পুরোটাই তৃষ্ণার আগে থেকে ভেবে রেখেছে। তাই গাড়ি ছুটলো আবারও। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তার যখন রেজুখাল নদীর চেকপোস্ট পার হলো,তখন যেন সৌন্দর্য আরও বাড়তে শুরু করল। গাড়ি থামিয়ে ইনানীতে আর একবার ঘুরে, তার আবারও গাড়ি ছোটালো মেরিন ড্রাইভ ধরে সামনের পাহাড় ও আকাশের মিতালি দেখতে দেখতে।
অবন্তী গাড়ির জানালা খুলে বাইরে দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে মনে ভাবছে এই সবুজে হারিয়ে গেলে কেমন হয় বা মেরিন ড্রাইভ থেকে সমুদ্রে আছড়ে পড়লে মন্দ হবে না। এদিকে সমুদ্রের পানির রং নীল, অনেকটা সেন্ট মার্টিনের মতো। তৃষ্ণা বলছিল গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরে বেরাতে তবে তাদের ঘোরাঘুরি হলো না, কারণ আহানের শরীর ধিরে ধিরে খারাপ হতে লাগলো। আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে পাহাড়ের বুক পাড়ি দিয়ে যখন তারা প্রায় পৌঁছে গেল জেটিতে। ঠিক তখনি হঠাৎ আহানের জ্বর টা এতো বারতে লাগলো যে অবন্তী আর সেন্ট মার্টিন যেতে চাইলো না। তাই ফিরতে হলো তাদের। ফেরার পথে হাতের বায়ে সমুদ্রের বুকে সূর্য অস্ত যাচ্ছে, ডানে পাহাড়। সন্ধ্যা হতে হতেই পাহাড়ি জনপদে অল্প করে আলো জ্বলতে শুরু করেছে মাত্র। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন তারা। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ তারা পৌঁছে গেল কক্সবাজার। আহানের অবস্থা তখন দেখার মত ছিলো না। তার জ্বরটা হঠাৎ এতো বাড়লো যে তাকে রুমে নিতে ড্রাইভারের সাহায্যে দরকার হলো।
Continue........