ভাঙনের পরে - অধ্যায় ১১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-64501-post-5851314.html#pid5851314

🕰️ Posted on January 10, 2025 by ✍️ Henry (Profile)

🏷️ Tags:
📖 695 words / 3 min read

Parent
পর্ব: ২৯ ---অংশু, পৌঁছে ফোন করিস। ট্রেনে কিছু আনহেলদি কিনে খাস না।  জয়ন্ত ছেলেকে কথাটা বললে। ঠিক যেমন ওকে ওর মা বলত। এখন জয়ন্তই যেন মায়ের দায়িত্বও সামলাচ্ছে। অবশ্য সে পুরুষ মানুষ, সুচির যেটা স্বাভাবিক চরিত্র, সেটা জয়ন্তের ক্ষেত্রে সময়ের প্রেক্ষিতে গড়ে উঠছে।  প্রেসার মেশিনটা দেবার সময় জয়ন্ত ভেবেছিল কন্ডোমের বাক্সগুলোও পাঠিয়ে দেবে অংশুর হাতে। সুচিকে অপমানিত করবার এ' এক অনবদ্য সুযোগ ছিল। তাছাড়া সুচি নিশ্চিত এ বয়সে গর্ভবতী হতে চাইবে না, তাই এমন মদ্যপ প্রেমিককে আটকাতে কন্ডোম তার জরুরী। কিন্তু পরক্ষণে জয়ন্ত ভাবলে সে দায়িত্ব জয়ন্তের নাকি। সুচির জীবনের দায় দায়িত্ব এখন তার নয়। স্ত্রী ও সদ্য হয়ে ওঠা প্রাক্তন স্ত্রীয়ের ফারাকটা সে হিসেব করে নিয়েছে।  অংশুর হাতে কন্ডোমের বাক্স দিলে পরে অংশু যদি সন্দেহ করে খুলে দেখে! তবে আরেক কেলেঙ্কারি হবে। তারচেয়ে না হয় থাক। সুচি বুদ্ধিমতী, যতই ভবঘুরে প্রেমিকের পাল্লায় তার মাথা নষ্ট হয়ে যাক, তার বুদ্ধিশুদ্ধি নির্ঘাত এখনো যায়নি। সে নিশ্চই ব্যবস্থা করেছে গফুর নামক উন্মাদটার সাথে অবাঞ্ছিত গর্ভবস্থা আটকাতে। তাছাড়া সুচি এখন তেতাল্লিশ, যতই তার পিরিয়ডস স্বাভাবিক হোক, গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমই। এছাড়া সুচি পিলও নিতে পারে। এ বয়সে গর্ভবতী হওয়াও খুব রিস্ক। হঠাৎ করে জয়ন্ত ভাবলে, এতক্ষণ ধরে সে কি ভাবছে! তার প্রাক্তন স্ত্রীর বর্তমান সঙ্গীর দ্বারা প্রেগনেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা! জয়ন্তের হাসপাতালে অনেক মহিলারাই আসেন যারা চল্লিশের পর গর্ভবতী হয়েছেন। অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেক্ষেত্রে মূলত হতদরিদ্র বস্তির মহিলারাই বেশি। কিছু ভদ্রমহিলা অবশ্য অনেক চেষ্টার পর বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন এমন আছেন। অবশ্য আজকের দিনে আইভিএফ আছে। স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের জন্য এটা একটা যুগান্তকারী সলিউশন।   যাইহোক সুচিকে যে এখনো জয়ন্ত ভালোবাসে, সুচিত্রা জয়ন্তের সঙ্গে বাইশ বছর ঘর করেছে, তার আগে তাদের প্রেম, তাদের পারিবারিক সম্পর্ক, তাদের দুটি সন্তান। এসবের পরে কি সে শঙ্কিত হবে না? বিশেষ করে কোনো অবাঞ্ছিত যৌন রোগের স্বীকার যদি সুচি হয়ে থাকে ঐ নোংরা ভবঘুরে ফেরেব্বাজের জন্য! জয়ন্তের শঙ্কা হয়। বহু ফুটপাতের মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয় গনোরিয়া, সিফিলিসের মত মারাত্মক যৌন রোগ নিয়ে। এইডসও যে কলকাতার ফুটপাতের লোকেদের মধ্যে দেখা যায় না তা নয়, বরং এইডস যৌনপল্লীর বহুগামী লোকেদের মধ্যে কিংবা যৌনকর্মীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। গফুর রাস্তায় মদ খেয়ে পড়ে থাকে, ঘুরে বেড়ায়, যৌনপল্লীতে যেত বলেই হাসিনাকে বিয়ে করেছিল, নানা অবাঞ্ছিত রোগ থাকবে না, নিশ্চিত করে কে বলতে পারে!  বেশ কয়েক বছর আগের কথা মনে পড়ল জয়ন্তের। অল্পবয়সী তরুণী গর্ভবতী হয়ে সন্তানের জন্ম দিতে ওদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তরুণী সম্ভ্রান্ত পরিবারের। স্বামী পুলিশে ছিল। তরুণীর সদ্যজাত সন্তানের মধ্যে এইচআইভি পাওয়া যায়। ফলত তরুণীর দেহেও মেলে। এ বিষয়ে তরুণীর শ্বশুরবাড়ীর পরিবার ঐ তরুণীকেই লাঞ্ছিত করেছিল। একাধিক কেস কাছারির মধ্যে আচমকা তরুণীর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তরুণীর বাপের বাড়ীর পরিবারের প্রবল দাবীতে কোর্টের তত্বাবধানে তরুণীর স্বামীর ব্লাড রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায় স্বামীর দেহেও এইচআইভি। এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরুণী নয়, দায়ী স্বামীটিই ছিল। নিয়মিত যৌনপল্লীতে যাতায়াত ছিল ঐ পুলিশকর্মীর। এমন কত কিছুই ডাক্তারি জীবনে দেখেছে জয়ন্ত।  সে সব লিখলে পরে একটা সাহিত্য হতে পারে বৈকি। অংশু মায়ের কাছে যাচ্ছে। একটা চাপা আনন্দ যেমন আছে, তেমন বড্ড রাগ রয়েছে ভেতরে। মাকে মারধর করে গফুর। এ সে বরদাস্ত করবে না। যদি তেমন দেখে সে কি করবে ঠিক করতে পারছে না যদিও। লোকটাকে তাড়িয়ে দেবে দিদার বাড়ি থেকে। গফুরের প্রতি যেটুকু সিমপ্যাথি তার মায়ের ডায়েরি পড়ে তৈরি হয়েছিল সেটাও তার নষ্ট হচ্ছে। মায়ের ডায়েরিটা সঙ্গে করে এনেছে ও'। মায়ের হাতে দিয়ে দেবে। মা যদি সন্দেহ করে যে সে ডায়েরি পড়েছে কিনা, সে সরাসরি জানিয়ে দেবে অপরের চিঠিপত্র, ডায়েরি এসব পড়ার তার অভ্যাস নেই।  ট্রেনটা বড্ড ধীর গতিতে চলছে। এ লাইনে ট্রেনে বড্ড ভিড় হয়। কত বিচিত্র লোক প্রতিদিন যাতায়াত করে। একা দিদার বাড়ি আসা তার এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। গোবিন্দপুরে দিদার বাড়িটা এমনিতেই ওর বড্ড পছন্দ। গাছ-গাছালি, দীঘি, ঝোপঝাড়, সেকেলে মোটা থামওলা বাড়ি আর তারচেয়ে বেশি নীরব-নির্জনতা ওর বড্ড ভালো লাগে। দিদার জন্য সুগার ফ্রি মিষ্টি নিয়েছে সে, ডালিয়া মাসির জন্য শাড়ি, বিট্টু-লাট্টুর জন্য দুটো খেলনা বন্দুক। মায়ের আলমারি ভর্তি শাড়ি, যেমনকে তেমন রয়ে গেছে। সবমিলিয়ে সাত-আটকের বেশি শাড়ি নিয়ে আসেনি মা গোবিন্দপুরে। বাবা কাল কেমন এক অভিমান ভরা রাগান্বিত স্বরে বললে "অংশু তোর মায়ের শাড়িগুলো পড়ে থেকে এ বাড়িতে নষ্ট হবে কেন? যার জিনিস তাকে দিয়ে দিস।''  অংশু আলমারি খুলে চমকে গেছিল। মায়ের অন্তত চল্লিশটি শাড়ি সুসজ্জিত আলমারিতে। অত শাড়ি, অথচ মাকে পরতেই দেখে না। অত জিনিস অংশুর পক্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সে মায়ের আটটি শাড়ি বাছাই করে নিয়েছে। যার থেকে একটা আলাদা করে রেখেছে ডালিয়া মাসিকে দেবার জন্য। ***
Parent