ভাঙনের পরে - অধ্যায় ১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-64501-post-5719747.html#pid5719747

🕰️ Posted on September 2, 2024 by ✍️ Henry (Profile)

🏷️ Tags:
📖 658 words / 3 min read

Parent
চমকে উঠল অংশু। পেছন ঘুরে দেখলে বাইক আরোহী ঐ বেঁটে লোকটা। বললে---দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? সামনেই কলেজ। আমিও যাচ্ছি ওদিকে, নামিয়ে দেব। অংশু একটু ইতস্তত বোধ করছিল। জানা নেই শোনা নেই, একটা অপরিচিত লোকের এমন নির্জন গ্রাম্য রাস্তায় বাইকে ওঠাটা ঝুঁকি হবে না তো। পরক্ষণেই ভাবলো সে একটা ষোল-সতেরো বছরের ছেলে, ভয় কিসের তার। বাইকে উঠে বসল অংশু। লোকটা বলল---কার ঘরের ছেলে তুমি? ----নিকুঞ্জ বাগচী আমার দাদু। ---ও বাগচী বাড়ি? তাই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে? ---হ্যা। লোকটা যেন হঠাৎ অংশুর প্রতি সম্মান বাড়িয়ে দিল। বললে---বাগচী বাড়িতে তো এখন কেউ থাকে না। তোমরা শহর থেকে এসেছ নাকি? ----থাকে তো, আমার দিদা। লোকটা বিস্মিত হল। তারপর হেসে বলল---এ' রাস্তা দিয়ে যাতায়াত লোকে আজকাল কমই করে। আমিও তেমন একটা যাই না। গোবিন্দপুর যেতে এ রাস্তা অনেক সময় নেয়। এছাড়া রাস্তার অবস্থাও ভালো নয় দেখছ! হ্যা ঠিকই। অংশু লক্ষ্য করল পিচ রাস্তা হলেও রাস্তা যত এগোচ্ছে তত তার ভাঙন। মোটরবাইকের আলোয় দেখা যায় উঠে যাওয়া পিচের মাঝে ঘাস জমে গেছে কোথাও কোথাও। লোকটা বললে---নিকুঞ্জ বাগচীর কেউ হও যেন বললে? ---নাতি। স্বল্প কথায় উত্তর দিল অংশু। লোকটা বলল---নিকুঞ্জ বাবুর তো দুই মেয়ে ছিলেন। ওরা তো চন্দননগরে থাকতো। তুমি কোন মেয়ের ছেলে। ---বড় মেয়ে... ---আচ্ছা আচ্ছা। ভারী ভালো মানুষ ছিলেন নিকুঞ্জ বাগচী। আমরা অবশ্য খুব ছোট বেলায় তার কাছে এসেছি। তিনি গ্রামে এলে আমাদের মা ঠাকুমারা শরীর খারাপ হলে তার কাছে নিয়ে যেতেন ওষুধ দিতে। কোনোদিন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে পয়সা নেননি। অংশু বললে---আরো কতদূর? ---এই তো সামান্য। বলেই লোকটি আবার কথা শুরু করল। বললে---তোমার দাদু এত বড় বাড়ি, বাস্তু রেখে গেছেন। আজ আর কেউ দেখাশোনার নেই। আমরাও বহুদিন এ রাস্তায় আসি না বলে কেউ আসছে কিংবা থাকছে কিনা জানি না। ভালো লাগলো তোমরা এসেছ শুনে। কলেজটার সামনে নামিয়ে দিল লোকটা। চলে যাবার সময় লোকটাকে আবার ধন্যবাদ দিল অংশু। লোকটা অংশুর দু' হাত চেপে ধরল। বললে---তুমি আমার ছেলের বয়সী হলেও, তুমি বাগচী বাড়ির ছেলে। ধন্যবাদ দেবার দরকার নেই। দোতলা কলেজ। দুই তলা মিলিয়ে গোটা পনেরো রুম হবে। আপার প্রাইমারী কলেজগুলি যে হাইকলেজের মত বড় হয় না তা জানে অংশু। বালিগঞ্জে মায়ের কলেজটা দেখেছে অংশু। সেও খুব বড় নয়। অংশু দেখল এলাকায় আশেপাশে একটি মুদির দোকান ছাড়া কিছু নেই। অংশুকে এমন অন্ধকারে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দোকানি লোকটি বেরিয়ে এলো। এ লোকের গলাতেও তুলসী মালা। নিশ্চই এখানে কোথাও বৈষ্ণবদের গ্রাম আছে। লোকটি কর্কশ গলায় বললের---কি হে ছোকরা? অন্ধকারে কি করছ? অংশু হেসে বললে---এই কলেজটা দেখছি। আসলে আমার মায়ের এখানে ট্রান্সফার হয়েছে, তাই দেখতে এলাম। কলেজটা কেমন? লোকটা বললে---আচ্ছা আচ্ছা। এই কলেজে? ছাত্র-ছাত্রী তো মাত্র একশ জনেরও কম হবে, দু'জন সার। চলবে কি করে? এখানেও সরকার নতুন মাস্টার পাঠাচ্ছে নাকি? বেশ বেশ। অংশু অবাক হল। সে যদিও মা-বাবার আলোচনায় শুনেছে আপার প্রাইমারী কলেজগুলির অবস্থা এখন ভীষন খারাপ। তবুও মায়ের বালিগঞ্জের কলেজে তো পাঁচ শ'এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী আছে। লোকটা বলল---একজন আছে বয়স্ক মাস্টারমশাই। অনেক দূর থেকে আসেন। তিনিই হেড স্যার, আরেকজন আছে সেও খানাকুলের লোক। একসময় কলেজটা ভালো চলত বৈকি। এখন গেরামের লোক বাচ্চাকাচ্চাকে নস্করপুরের হাইকলেজে পাঠায়। এ' ইকলেজ চলছে পঞ্চাশটা বাচ্চা লিয়ে আরকি। মনে মনে অংশু ভাবলো ভালোই হল, মায়ের কাজের চাপ এখানে কম। এখন দিদাকে সময় দেওয়াটা খুব জরুরী। এই কলেজে থাকলে মা দিদার কাছে সারাক্ষণ থাকতে পারবে। অংশু বলল---কলেজ কতক্ষন হয়? লোকটা তাচ্ছিল্য করে বলল---কি আর হয়? এগারোটায় শুরু হয়ে তিনটায় ছুটি হয়ে যায় আর কি। লোকটা বোধ হয় দোকানটা বন্ধ করতে চলেছে। অংশু জার থেকে দশটা চুইংগাম নিয়ে দশটাকা দিল লোকটাকে। লোকটা বললে---এখানে এসেছ কার বাড়িতে ছোকরা? বাগচী বাড়ি তথা অংশুর দাদু নিকুঞ্জবিহারী বাগচীর যে এখানে বেশ সম্মান আছে আগেই বুঝেছে অংশু, তাই সে বুক চিতিয়ে বললে--আমি নিকুঞ্জ বাগচীর নাতি। লোকটা হাঁ করে তাকিয়ে রইল অংশুর দিকে। বললে---কই ডালিয়া তো কিছু বলল না? সে তো একটু আগেই এসেছিল তেল মশলা কিনতে। তুমি তাহলে নিকুঞ্জ ডাক্তারের নাতি? ---হ্যা। বুড়ো লোকটা তখন থেকে যেভাবে কর্কশ কন্ঠে কথা বলছিল এখন যেন মোমের মত গলে গেল। বলল---বাগচী বাড়িতে আগে বিশাল দুগ্গা পূজা হত। দু' গেরামের লোক খাওয়াতো। সেসব দিন চলে গেছে। তার মানে তোমার মা মানে নিকুঞ্জ ডাক্তারের মেয়ে এই ইকলেজের দিদিমণি হয়ে আসছে? ---হ্যা। ---সে ছোটবেলায় দেখেছি তাকে। বাঃ বাঃ। যাও বাবা অন্ধকার হয়ে গেছে। এ' রাস্তায় তো লোক চলাচল হয় না। সাপ খোপের আড্ডা আছে। ***
Parent