ভাঙনের পরে - অধ্যায় ৩৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-64501-post-5753772.html#pid5753772

🕰️ Posted on September 29, 2024 by ✍️ Henry (Profile)

🏷️ Tags:
📖 609 words / 3 min read

Parent
পার্ক সার্কাসের রেললাইন ধরে ঘিনঘিনে বস্তি এলাকায় ত্রিপল, ভাঙা কার্ডবোর্ড দিয়ে সারিবদ্ধ ঘর। একটা নোংরা জলের খালের পাশেই এই সারি। লম্বা টানা এই ঘরগুলোতে দিনমজুর, কাগজকুড়োন, কুলি মজুর, কেউ বা ভাড়াটে মাস্তান, পকেটমার, আবার যৌনকর্মীদের বসবাসও আছে এসব এলাকায়। হি ন্দু-মু সলিম, কেউ বিহারী, কেউ ওপার থেকে উদ্বাস্তু ভিটেমাটিহীন সব লোকেদের বসত এখানে। ত্রিপল-কার্ডবোর্ড দিয়ে যে ঘরটা বানানো, সে ঘরটা এতটাই ছোট, একটা খাট পড়বার পর সামান্য জায়গাটুকুও নেই। ওই টুকু জায়গাতেই রয়েছে একটা স্টোভ, ইতিউতি ছড়ানো এঁটো থালা-বাসন। লম্বালম্বি দড়িটা বাঁধা ঘরের এ কোন থেকে অপর কোনে। তাতে এলোমেলো শতছিন্ন জামা-কাপড়। ময়লা তেলচিটে বিছানায় শুয়ে আছে একজন মহিলা। গায়ের রঙ রোদে পোড়া কালো। তবে রুগ্ন নয়, স্বাস্থ্য খানিক আছে। মাথায় চুল উঠে গিয়ে কয়েকটা ধূলি ধুসরিত লাল চুল এলোমেলো হয়ে আছে। পরনে ছিন্ন ময়লা শাড়ি, হাতে একগাছি কাচের চুড়ি, গলায় একটা রঙ চটে যাওয়া মঙ্গলসূত্র। ক্ষণিকের মধ্যে জয়ন্তের অস্বস্তি বাড়লো, যখন তারই সামনে শায়িত মহিলা তার দুটি সন্তানকে উদলা গায়ে স্তন দিচ্ছে তা দেখে। মহিলার গায়ে ছেঁড়া-ফাটা একটা ব্লাউজ, সেই ব্লাউজ দুই স্তনের ওপর তোলা। দুই দিকে আলগা হয়ে আছে দুটো স্তন। ছাগলের মত কালো কালো বোঁটা মুখে পুরে রেখেছে ময়লা হাফপ্যান্ট পরা দুটি বাচ্চা ছেলে। জয়ন্ত বিস্ময়ে দেখল দুধ খাবার বয়স দুটোরই অনেক আগে চলে গেছে। একটার বয়স বছর চারেক হবে, অন্যটা তো বেশ বড়। সাত-আট বছরের ছেলেটাও বেশ আয়েশ করে অসুস্থ মায়ের বাঁট থেকে দুধ টানছে। জয়ন্ত মহিলার হাতের পালস নিয়ে দেখল। তারপর স্টেথো বসানোর আগে বললে---এত বড় হয়ে গেছে, ওদের এখনো বুকের দুধ দেন কেন? মহিলা ঈষৎ হেসে ঘোলাটে কাতর চোখে বলল---ডাক্তার বাবু, পেটে খাবার জোটে না আমার বাচ্চার। মায়ের মাই খেয়েই যদি বাঁচে.. তাই কাউকে দুধ ছাড়াইনি। ---কিন্তু আপনি তো ক্যানসারের পেশেন্ট। আপনার নিজেরই এখন পুষ্টিগুন দরকার। যাইহোক, এর আগে ডাক্তার দেখিয়েছেন? সুচির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো মহিলা। বলল---হ্যা, সেবার দিদি বলেছিল ডাক্তার দেখাবে। জয়ন্ত একবার ঘুরে তাকালো নিজের স্ত্রীয়ের দিকে। সুচি যে এখানে এই আগেও এসেছে সেটা সুচি জয়ন্তকে জানায়নি, তাই সে বলল---আগে গফুর দা, ও' অসুস্থ বলায় এসেছিলাম। জয়ন্ত রোগিনীকে বললে---আপনি যে ক্যানসার পেশেন্ট জানলেন কি করে? ---একবার ডাক্তার দেখিয়েছিলাম ডাক্তারবাবু। সে ডাক্তারবাবু বলেছিল আমার এখুনি চিকিচ্ছা করা দরকার। কিন্তু কি করব খেতে-পরতে পাই না, ডাক্তার দেখাবো কি করে। জয়ন্ত প্রেসার চেক করল। বলল---সেটা কবে? ---সে তিন বছর হবে। জয়ন্ত এবার চশমার ওপর দিয়ে সুচির দিকে তাকিয়ে বলল---তিন বছর হল ক্যানসার পেশেন্ট কোনো ডাক্তার দেখায়নি। আর এদিকে স্বামী বউয়ের অসুস্থতার নামে টাকা চেয়ে মদ খাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিয়ে উঠল গফুরের বউ, বললে---না, ডাক্তার বাবু। আমার রেশমির আব্বা মদ খেতে পারে, কিন্তু আমার চিকিচ্ছার জন্য যে টাকা লিয়েছে লোকের কাছ থেকে, সে টাকায় সে মদ খায়নি। জয়ন্ত হাসলো। এসব মহিলারা মরতে বসলেই স্বামীর প্রতি অপবাদ সহ্য করতে পারবে না। জয়ন্ত সুচিকে আড়ালে ডেকে বলল---সাংঘাতিক কেস। ঝামেলায় ফেললে এখন। ততক্ষনে ঝুপড়ি ঘরের বাইরে ভিড় জমেছে। উঁকি ঝুঁকি মেরে লোকেরা দেখার চেষ্টা করছে। তাদেরই সাহায্যে মহিলাকে তোলা হল জয়ন্তের গাড়িতে। জয়ন্ত বললে---সুচি, ওর স্বামী কোথায়? সুচি মহিলাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসাতে বসাতে বলল---বলছি, পরে। ---পরে বললে হবে না। ও'কে হাস্পাতালে ভর্তি করতে ও'র স্বামীকে লাগবে যে। বউ মরতে বসছে, আর স্বামী মদ খেয়ে বেড়াবে, এমন লোককে পুলিশে দেওয়া উচিত। ---আপাতত আমরা ওকে আমাদের দায়িত্বে ভর্তি করে দিই... জয়ন্ত বড্ড বিরক্ত হল। খামোকা যেন বিপদের বোঝা ঘাড়ে নেওয়া। প্রথম দেখেই জয়ন্ত বুঝেছে ক্যানসারের লাস্ট স্টেজ বোধ হয়। চিকিৎসা যে কিছুই হয়নি তাও জয়ন্ত টের পেয়েছে। এ' রোগী মরলে ঝামেলা তাদেরই নিতে হবে। বস্তি এলাকার ভাড়াটে কয়েকজনও সাহায্য করল। বেশ একটা ভিড়ও জমে গেল জয়ন্তের গাড়ির চারপাশে। বেশিরভাগ হিন্দিভাষী মহিলা। কেউ একজন সেই ভিড়েই বলল ''গফুর কাঁ হ্যায় রে?'' একজন বয়স্ক লোক জবাব দিল ''কাঁ দারু পিকর পড়া হ্যায়, ভোসড়িকে"। সাত-আট বছরের বাচ্চা ছেলেটা ওর মাকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোথাও দেখে বড্ড ভয় পেয়েছে। কেঁদেই চলেছে সে। এক বিহারী মহিলা ওকে খান্ত করে বলল---বিট্টু, রোনা বন্ধ কর বেটা, তেরা মা আভি আ জায়েগা। ***
Parent