ভাঙনের পরে - অধ্যায় ৯১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-64501-post-5817158.html#pid5817158

🕰️ Posted on November 29, 2024 by ✍️ Henry (Profile)

🏷️ Tags:
📖 660 words / 3 min read

Parent
অংশু স্কু ল বেরোনোর সময় তাড়াহুড়ো করতে লাগলো। আজ বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ফার্স্ট ক্লাস আজ কেমিস্ট্রির। তারপরেই ল্যাব আছে। দ্রুততার সাথে ও' কলেজ ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিল। আজ আবার বড্ড গরম, ড্রয়িং রুমে এসি নেই। ফ্যানটা যেন বড্ড স্লো ঘুরছে। ঘেমে যাচ্ছে সে। সুচি ছেলের মুখটা আঁচল দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে দিয়ে বলল---কেমন ঘামে ভিজে যাচ্ছিস! জল নিয়েছিস? অংশু স্বল্প উত্তরে জানালো---না। ---দাঁড়া...! দ্রুত সুচিত্রা জলের বোতলে জল ভরে ছেলের ব্যাগে দিয়ে বললে---জল না খেলে ডিহাইড্রেট হয়ে যাবে। উফঃ যা গরম পড়েছে! এই বৃষ্টি তো এই রোদ! অংশু চলে যাবার সময় ভাবলে আজ আবার গফুর আসবে না তো! মা আর গফুর আবার...অশ্লীল ভাবনাটা আসতেই অস্বস্তি বাড়লো তার। স্কু লের পথে রওনা দিল সে। *** জয়ন্ত যখন ফিরল দুপুর আড়াইটে। সুচি স্নান করে ছাদ বারান্দায় ভেজা চুল মেলে দাঁড়িয়ে আছে। জয়ন্ত ব্যাগটা নামিয়ে রেখে শার্ট খুলতে খুলতে বলল---পিউ পরশু আসছে। ---হুম্ম জানি। সুচিত্রা এটুকুই প্রত্যুত্তর করল। জয়ন্ত বলল---অংশু কলেজ গেছে? ---হুম্ম। জয়ন্ত শার্ট খুলে তোয়ালেটা জড়িয়ে নিয়ে লক্ষ্য করল বিট্টু-লাট্টু ঘুমোচ্ছে। সটান বাথরুমে গেল সে। বাথরুমের ভেতরটা কেমন একটা কটু গন্ধ। গন্ধটা বড্ড ঘেমো ধরনের। নিজের গা থেকেই এমন কটু গন্ধ আসছে কিনা কে জানে। বাড়তি সময় নিয়েই আজ স্নান করল তাই জয়ন্ত। এমনিতেই গরমে গায়ে জল দিতে বেশ আরামপ্রদ অনুভূতি হল তার। কিছুক্ষণ পরে মনে হল গন্ধটা ভীষণ কটু। তার গায়ের ঘ্রাণ নয়। হালকা উগ্রতা আছে এই গন্ধের সাথে। ভেবেছিল খাবার টেবিলে বসে সুচিত্রার সাথে আজ একটা ফয়সালা করবে। ছেলে-মেয়েদের এর ভেতরে কেন টানছে সে। কেন সে মেয়েকে ডিভোর্সের কথা বলেছে, ইত্যাদি। কিন্তু বাথরুম হতে বার হতেই দেখল ডাইনিং টেবিলে খাবার রেখে সুচি কোথাও বের হচ্ছে। হালকা হলদে একটা সিল্ক শাড়ি পরেছে ও'। জয়ন্ত বললে---এই রোদে আবার কোথায় বেরোলে? আয়নার সামনে চুলটা ক্লিপ এঁটে খোঁপা করতে করতে সুচিত্রা বলল---দরকার আছে। ফিরতে দেরি হবে। ছবি এলে বলে দিও অংশুর জন্য জলখাবার করে রাখতে। জয়ন্ত পুনরায় বলল---বাইরে ভীষণ রোদ। এখন কি বেরোনোর খুব একটা দরকার ছিল? সুচিত্রা তার চশমাটা হাতে নিয়ে বলল---ডাঁটিটা কাল লাট্টুর টানাটানিতে ভেঙে গেছে। ওটা সারানো দরকার। ---কখনো কি এসব কাজ তোমাকে করতে হয়েছে? ওটা রেখে দাও, আমি কাল সকালে সারিয়ে এনে দেব। সুচি শান্ত অথচ অবলীলায় বলল---নিজের কাজ নিজে করতে পারাটাই ভালো। তাই আমি এটা পারবো। জয়ন্ত আর কোনো জবাব দিল না। সুচি চলে গেল। জয়ন্ত লাঞ্চ সেরে মুখ হাত ধুয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। বড্ড গরম, এসিটা খানিক বাড়িয়ে দিল সে। কলেজ থেকে ফিরল অংশু ঠিক সাড়ে চারটায়। মা বাড়িতে নেই। বাবা একটা মোটা বই নিয়ে ছাদ বারান্দায় বসে রয়েছে। ছবি মাসি রান্নাঘরে। অংশু ঢুকতেই ছবি বলল---বাবু, লুচি করে দিই? ---মা কোথায়? ---জানিনে। কোথায় বেরিয়েছে, দাদা বলল। অংশু বিট্টু-লাট্টুর ঘরে উঁকি দিল। ওরা দুই ভাই ঘুমোচ্ছে তখনও। জয়ন্ত বলল---অংশু, তোর মাকে ফোন কর তো কখন আসবে? ইচ্ছে করছিল না অংশুর মাকে ফোন করে। তবু সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাধ্য হয়ে টেলিফোন করল মায়ের মোবাইল নম্বরে। রিং হলেও ফোনটা কেউ তুলল না। ছবি মাসি লুচি আর আলু কষা করে দিয়েছে। অংশু মুখ হাত ধুয়ে জলখাবার সারলো দ্রুত। তার ইংরেজির হোম টিউটর সুখবিলাস বাবু সন্ধে ছ'টার দিকে আসবেন। সকালে আসার কথা ছিল, পারিবারিক অসুবিধার জন্য তিনি আজ সন্ধেতে পড়াতে আসবেন। ঘড়ির দিকে তাকালো অংশু। পাঁচটা কুড়ি। লাট্টু ঘুম থেকে উঠেই 'মা মা' করে ডাকাডাকি শুরু করেছে। অংশুর বড্ড বিরক্তি হয় আজকাল এই দুটো ছেলের ওপর। এমনিতে ওরা তার মায়ের ভালোবাসা, আদরের দখল নিয়েছে, তার ওপরে গফুর আর মায়ের সম্পর্কের পর গফুরের ছেলে ওরা বলে অংশুর যেন আরো রাগ। ধমক দিয়ে লাট্টুকে চুপ করালো অংশু। বলল---চুপ কর, নাহলে বাঘের কাছে ছেড়ে আসব। লাট্টু ভয় পেল বটে, তবে তার ফুঁপিয়ে কান্না তাতে বাড়লো। চিৎকার শুনে জয়ন্ত বললে---কি করছিস অংশু? ওদের ভয় দেখাচ্ছিস কেন? তোর মা কি বলল? ---ফোন তোলেনি। অংশু লক্ষ্য করল মায়ের ঘরে যেখানে বিট্টু শুয়ে আছে তার এক প্রান্তে মায়ের ঐ নীল রঙের ডায়েরিটা রাখা। ওটা তুলে নিয়ে কয়েক পাতা আওড়াতেই ওর চোখ আটকে গেল সদ্য মায়ের হাতের লেখায় আরো বাড়তি কয়েক পৃষ্ঠা। অন্ধসন্ধিৎসু অংশু বিস্মিত হল। সেদিন যে পর্যন্ত সে ডায়েরিটা পড়েছিল, তা বহুদিন আগে মা লিখেছে। শেষবার লিখেছে তার দিদির জন্মের সময়। আবার এতদিন পর মা এই ডায়েরির পাতা ভরিয়ে লিখেছে অনেক কথা। অংশুর কৌতূহল হলেও সে বাবা এখন থাকায় ডায়েরিটা যেমন ছিল তেমনই রেখে দিল ওখানে। ***
Parent