বিকৃত নিশিকাব্য - অধ্যায় ৩
হোমিও ঔষধের ব্যাপারে রাশেদের একটা বিশ^াস অনেক আগে থেকে। বিভিন্ন আর্টিক্যাল পড়ে বেশ তথ্য জেনেছে সে এতোদিন। তাছাড়া, বছর পাঁচেক আগে তার খালু সম্পর্কীয় এক নিকট আত্মীয় চিকিৎসা নিয়ে সফলতা পান। এই ডাক্তারের কাছেই নিয়ে এসেছিল সে। খালুরও বীর্যের ঘনত্ব আর পরিমানের দরকার ছিল।
চেম্বারে ঢুকে ডাক্তারকে দেখতে পায়। পাশে বসা ২ জন রোগী। তাকে দেখে ইশারায় বসতে বলে ডাক্তার। রোগীদের বিদায় করে কুশল বিনিময় সারে দুজন। এরপর মূল কথা আসে রাশেদ।
রাশেদ- ডাক্তার সাহেব, আপনি তো জানেন। আমি নানা সময় নানা জনেরই উপকার করেছি। আপনার কাছেই এসেছি খালুকে নিয়ে এরআগে। দুর্দান্ত কাজ হয়েছে। আপনার কল্যাণে খালু আজও সুখ পাচ্ছে। এবার সেরকমই একটা সমস্যা নিয়ে এসেছি। যার জন্য নিবো, তিনি নিজেও আসলে জানেন না আদতে বীর্যের ঘনত্ব কেমন বা সময় ধরে রাখার ক্ষমতা কতটুকু।
ডাক্তার- বুঝতে পেরেছি। নিশ্চয় পেশেন্ট বিয়ে করবেন সদ্য। তার বিয়ে ঠিক হয়েছে, রাইট?
রাশেদ- আ্যা?.....হ্যা হ্যা। একদম ঠিক কথা।
ডাক্তার- বিয়ের আগে যদি কারো সেক্স অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলেই এমন চিন্তা শুরু হয়। আর এমন চিন্তা থেকেই একটা মনরোগের স্থায়ীত্ব পায়। যার ফলে কেউ যদি পারফেক্ট সেক্স পার্টনার হয়ও, সেই দুশ্চিন্তার কারণে তার সেক্সলাইফ দুর্বিসহ হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে দুটোই পথ। প্রথমটি হলো- তাকে কনভিন্স করা এই বলে যে, আপনি যদি সেক্সের পর বুঝেন যে আপনার মাঝে কোন কমতি আছে। তাহলে চিকিৎসা করা যাবে পরবর্তীতে। তার আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। আর তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতি- তা হলো একদম পাশর্^প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছু মেডিসিন। যা ওনার সেক্স টাইম বাড়াবে। আর বীর্যের ঘনত্বও থাকবে। তবে, ঔষধ ছাড়া কাজ হলেই বেশী ভালো। এসব কেইসে একটাই ফল পাওয়া যায়, মনোরোগ। সেক্সের আগেই মনোরোগ পেয়ে বসে। আর কিছু না। আমি ঔষধ দিয়ে দিচ্ছি। যদি প্রয়োজন পড়ে তখন খেতে বলবেন।
ঔষদ বানানোর পর- এই শিশির ঔষধটা খেতে হবে প্রতিদিন সকালে ও রাতে। ২ চামচ নিয়ে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। আর এই শিশির ঔষধ খেতে হবে শুধুমাত্র সেক্সের আধাঘন্টা আগে। প্রতিবার একসাথে ৭টি বা ১০টি গুলি খেতে হবে। এগুলো খেয়ে তো অবশ্যই পল পাবে। তবে, একদিন খাওয়ার পর চাইলে বন্ধ করেও দিতে পারেন। মনে কনফিডেন্স চলে আসলে দেখবেন ঔষধের আর প্রয়োজন পড়বে না।
রাশেদ- অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। তা আপনার আর খবর বলুন। মাসি মা, বৌদি সবাই ভালো তো?
ডাক্তার- সবাই ভালো আছেন- বলতে হয় দাদা। তাই বলি সবাইকে। কিন্তু সত্যি কথা হলো- আমি ভালো নেই। আপনি তো কামরুপ কামাইক্যা থেকে দীক্ষা নিয়েছেন। আপনার সাথে এই নিয়ে আমি আলাপ করবো। তার আগে বাসায় মা ও বৌয়ের সাথে একটু বুঝে নেই। মনে হচ্ছে আপনি পারবেন সাহায্য করতে।
রাশেদ- আচ্ছা, দাদা, পরের টা পরে দেখা যাবে। এবার একটু হিন্টস দেন। আমিও একটু জেনে রাখি। পরে কাজে লাগি বা না লাগি। কোন পরামর্শও দেয়া যায় কি না শুনে দেখি।
ডাক্তার- বেশ, আপনাকে তাহলে বলি একটু। সময় আছে তো?
রাশেদ মোবাইলে সময় চেক করে নেয়। দুপুর এখন। একটু পরেই ২টা বাজবে। তার আগে ডাক্তারকে সে সময় দিতেই পারে। আপাতত তাড়া নেই।
রাশেদ- দাদা, বিস্তারিত বলুন। সময় আছে আমার। একসাথেই বের হবো। আপনি লাঞ্চে যাবেন তো? তখন একসাথেই বের হবো। কথা শেষ করেন।
ডাক্তার- ধন্যবাদ দাদা। শুনুন তাহলে। বেশ ৩ বছর হয়ে গেছে। একটা সমস্যা দিন দিন বাড়ছেই। আর এতে করে আমার ততপারিবারিক জীবন পুরাই যেন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। প্রায় ৫ বছর আগে আমাদের বাসার উপরের ফ্ল্যাটে একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। আমাদের পরিবারের সঙ্গে উনার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমার মা উনাকে আপন ভাইয়ের মতোই দেখতেন। আর আপনার বৌদিও তার কথা বলা বা ছবি আকার বেশ ফ্যান হয়ে পড়ে। বয়স তেমন বেশী না, আবার কমও নয়। এই ধরুন ৫০ কিংবা ৫২ হবে। ২ বছর এভাবেই কাটে। আপনার বৌদি তো সময় পেলেই উনার কাছে যেয়ে গল্প শুনতেন। মাও থাকতেন। কখনো ছবি আঁকা আবার কখনো গল্প শুনতেন। হটাৎ করে একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে ইনি বাসা ছেড়ে চলে যান। কেউই তাঁর খোঁজ জানে না। তার এভাবে চলে যাওয়াতে মা ও আমার স্ত্রী একটু মুষড়ে পড়ে। সমস্যা তখন থেকে বাড়তে থাকে অল্প অল্প করে। প্রায়ই আমার স্ত্রী স্বপ্নে উনার নাম ধরে ডাকে। আর হাসে, কথা বলে। দিনের বেলাতেও সে উনার ছায়া দেখতে পায়। উনাকে সে নাকি অনুভব করে। আশেপাশেই আছেন। মা প্রথম দিকে একটু মন খারাপ করলেও ধীরে ধীরে মা ভুলে যায়। কিন্তু আমার স্ত্রী ভুলতে পারেনি। আসলে খুব বেশী ভক্ত ছিল সে। আমি অনেক সাইক্রিয়েটিস্ট দেখিয়েছি। কাজ হয়নি। দিন দিন যেন বাড়ছে। আজ সকালেও আপনার বৌদি দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে আর কথা বলছে। জিজ্ঞেস করতেই মুখ শুকিয়ে তাকায়। কিছু না বলেই দ্রুত ঘরে ঢুকে পড়ে।
একটা ইনফরমেশন আপনাকে দেই। তা হলো আমি এই ঘটনাগুলো শুরুর প্রায় ৬ মাস পর খোঁজ করতে শুরু করি। ভদ্রলোক কোথায় গেলেন বা কোথায় আছেন এখন। যতদূর জেনেছি, উনি ছিলেন একটি ফ্রড চক্রের সদস্য। আমাদের এখান থেকে চলে যান জরুরী খবর পেয়ে। শুনেছি কোন এক ফ্রড কেইসে জেলে যান। এরপর সেখানেই হার্ট এটাকে তিনি মারা গেছেন। তার দ্রুত চলে যাওয়ার কারণই ছিল এই গ্রেপ্তার এড়ানো। এসব নিয়ে পত্রিকায়ও বেশ কয়েকটি সংবাদ ছেপেছে। আমার সন্দেহ হচ্ছে, তার মৃত্যুর পর তার আত্মার কোন দোষ থাকতে পারে আমার স্ত্রীর উপর। যদিও আমার মতো একজনের মুখে এগুলো শুনে আপনার হয়তো হাসি পাবে। তাও দাদা। এসব কিন্তু সত্যি। আছে এমন দূষিত আত্মা। যাদের মৃত্যু হয় অপঘাতে কিংবা অতৃপ্তি নিয়ে মারা যাওয়া। আমার এখন দৃঢ় বিশ^াস। লোকটি তার জীবনের অতৃপ্তি নিয়ে মারা গেছে। এই ৫০/৫২ বছরেও সে ছিল অবিবাহিত। এর মাঝে এমন অকষ্মাৎ মৃত্যু।তার কারণেই আজ আমার এই অবস্থা।
রাশেদ- দাদা চিন্তা করবেন না। আমি আপাতত এ বিষয়ে কোন কাজে এগুবো না। আপনার পক্ষ থেকে বলার পরই আমি আগাবো। তার আগে আমার একটা কথা রাখবেন। আপনি বাসায় যেয়ে মাসিমার সাথে আলাপ করে নিবেন। এর সাথে আমাকে কিছু ডকুমেন্ট আজকেই পাঠাবেন। বৌদিকে এ পর্যন্ত যে ক’জন ডাক্তার দেখিয়েছেন তার সবগুলো প্রেসক্রিপশনের কপি।
ডাক্তার- কপি তো এখনই দিতে পারবো। চেম্বারেই আছে। আমার ফাইলে।
রাশেদ- বেশ, তাহলে তো খুবই সহজ হলো। আমাকে কপিগুলো দিন। আমি এগুলো দেখে আপাতত একটা ধারণা নেই। এ কাজ আমার পক্ষে সম্ভব না কি ডাক্তারি চিকিৎসাতেই হবে। আমাকে বুঝতে দিন একটু।
ডাক্তার ড্রয়ার থেকে ফাইল বের করে গোটা ফাইলটাই দেয় রাশেদের হাতে।
রাশেদ ফাইল নিয়ে নিজের মোবাইল নাম্বার কাগজে লিখে দেয়। পরে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয় বাসার উদ্দেশ্যে। ডাক্তারের সাথে একসাথে বের হওয়ার কথা থাকলেও ডাক্তারের স্ত্রীর চেহারা মনে ভাসতেই যেন রাশেদ একটু তাড়া পায় মনে। একই এলাকাতে বাসা হওয়ার সুবাদে দু’একবার দেখা হয়েছে ডাক্তার ও তার মায়ের সঙ্গে। কলকাতার টিভি সিরিয়ালগুলোর চরিত্রের মতো দেখতে হট আর লাস্যময়ী এই বৌদি।
বাসায় এসে গোসর সেরে নেয় রাশেদ। মা ভাত বেড়ে আগেই রেখেছিলেন টেবিলে। দ্রুত খেয়ে উঠে রাশেদ। প্রেসক্রিপশনগুলো তাকে দেখতেই হবে। কি এমন ঘটলো ঐ বৌদির সাথে?
নিজের রুমে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফাইলটা নিয়ে দেখতে থাকে। কাগজে লিখা অনুযায়ী বৌদির নাম চিত্রা ঘোষ। বয়স হিসেব করলে আজ সে ত্রিশ বছর বয়সের। ডাক্তারের নাম সৌমেন্দ্র ঘোষ। ডাক্তারের বয়স জানা না গেলেও আনুমানিক বলা যায়। ৪০ এর মতন হতে পারে। তাও শিওর হওয়া যাবে পরে।
ফাইলে ৩জন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। সবগুলোতে মেডিসিনের নাম ভিন্ন হলেও রোগের লক্ষণের নাম ছিল কমন। তিনটাতেই একটাই নাম। সে অনুযায়ী রাশেদ দ্বারস্থ হয় গুগল মামার। ল্যাপটপে বসে গুগল ঘাটাঘাটি করে যা জানলো, তাতে আবারো মনের মাঝে একটা শিহরণ জাগলো। গুগল মামার তথ্য অনুযায়ী- কেউ যদি কারো প্রতি প্রবল আকর্ষণ বোধ করে। মানে, তাকে কাছে পাবার, আপন করে পাবার। একান্ত আপন করে। যাকে যৌন আকর্ষনও বলা চলে। ক্রাশ খাওয়ার লক্ষণ। তবে এক্ষেত্রে নরমাল ক্রাশ খাওয়ার চেয়ে সিমড্রোম একটু বেশী পর্যায়ে চলে যায়। মূলত যৌন জীবনে অসুখিরা এমন আকর্ষন ফিল করে থাকে। আবার ভিন্ন ভিন্ন কেইসে ভিন্নরকমও হয়। আমাদের এই দেশে এখনো এসব ব্যাপার খোলাসা হয়নি। আদতে অনেকে জানেই না যে সে যৌন জীবনে তৃপ্ত কি না। কিংবা তার চাওয়া কতটুকু। নিজে ডাক্তার হলেও স্ত্রীর এই ব্যামো সে ধরতে পারেনি। ৩০ মিনিট ঘাটাঘাটির পর রাশেদ মোটামুটি শওির হয়ে যায়। চিত্রা বৌদি অসম্ভব রকমের ক্রাশড লোকটির উপর। যার কারণে তীব্র আকর্ষনবোধ থেকে সে সবসময় হেলুসিনেশনের মধ্যে দিয়ে লোকটিকে ফিল করে। তার হাসি আর কথা বলার ধরন শোনে বোঝা যায় যে, সে কতোটা তীব্রভাবে লোকটাকে কাছে চায়। যাক, এই কেইসও কিভাবে সমাধান করা যায় সে পথের সন্ধানেও অনেক তথ্য গুগল মামা তাকে জানিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে একজনের মোহ কাটাতে আরেকজনকে সেই স্থানে বসতে হবে। আর এজন্য সময় প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে- মোহ কেটে স্থলাভিষিক্ত হলে আগের চেয়ে পরের টার রেশ হালকা থাকে। ধীরে ধীরে রোগী স্বাভাবিক হতে থাকে। হেলুসিনেশন কেটে যায়। এ ব্যাপারে আরো বিষদভাবে জানা যাবে। সেই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বন্ধুর মাধ্যমে আবারো সাহায্য নেবে বলে ঠিক করে রাশেদ।
............................................(চলবে)