বিকৃত নিশিকাব্য - অধ্যায় ৭
চেম্বার থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে একটা সিগারেট ধরায় রাশেদ। ৭টা বেজে ৪০ মিনিট। রিক্সা খুঁজতে থাকে। পেয়েও যায়। রিক্সায় উঠে চিন্তা করতে থাকে। ১০/১২ দিন পর হলে মোটামুটি কাজটিতে জড়াতে পারবে সে। একটু ট্রাই করে দেখতে তো দোষ নেই। হঠাৎ সাজ্জাদের কথা মনে পড়ায় মোবাইল বের করে কল করে।
ওপাশে এক রিং হওয়ার পরই-
সাজ্জাদ- বন্ধু, ধন্যবাদ তোকে। আকাশ লোকটি কাজের মনে হচ্ছে। সে কালকের মধ্যে একটা কিছু ব্যবস্থা করে ফেলবে মনে হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে পর্যটন শিল্প বিষয়ে উদ্যোক্তাদের একটি সেমিনার চলছে। শর্মিলাকে ঐ সেমিনারের ইনভাইটেড দেখিয়ে ভিসা বের করছে। আমার ফ্লাইট হিসেব করে একসাথে টিকিটের ব্যবস্থাও করছে।
রাশেদ- ওকে। যেভাবে যা বলে করে নেয়। টাকা মে বি একটু বেশী লাগবে। তাও করে নেয়। আমাকে জানাস পরে।
সাজ্জাদ- আরে চিন্তা করিস না। আমি কাল তোকে ফোন করে সব জানাবো।
কথা বলা শেষে আবারো মোবাইল পকেটে রেখে দেয়। আরো একটি সিগারেট ধরায় রাশেদ। ভাবতে থাকে রাতের কাজের ব্যাপারে। আসলে, প্ল্যানগুলো আরো একবার রিভাইস করে নেয় মনে মনে।
সকালে আসমা ভাবির সাথে ঘটে যাওয়া কিছু মুহূর্ত, তারপর খুকুকে দেখে তার নিজের মাঝে নিজেকে খোঁজা এবং শেষে খুকুর মায়ের অমন চিত্র! সবকিছু যেন খুব দ্রুত, অথচ ঘটেই চলেছে। রাশেদ চিন্তা করতে করতে নিজেই যেন বিশ^াস করতে পারে না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে নিজের বাসার কাছে চলে আসে সে। টং দোকানের চাওয়ালা মামার সালামে ঘোর ভাঙ্গে রাশেদের। বাসায় পৌছে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর মা কে গিয়ে জানায় আজ রাতে বাইরে থাকার কথা। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে ৮টার উপরে বাজে। বের হওয়া প্রয়োজন। তার আগে তারেক সাহেবকে ফোন করে সব ঠিক আছে কি না জেনে নেয় রাশেদ। ওপাশ থেকে তারেক সাহেবও গ্রিণ সিগন্যাল দেন। ব্যাস, ব্যাগ কাঁধে বের হয় যায় সে।
রিক্সা করে ওলিগলি ঘুরে মেইনরোড, তারপর আবারো বাক নিয়ে ঢুকে পড়ে অন্য একটি এলাকায়। সেখানে কয়েকটি বাঁক ঘুরে তারেক সাহেবের বাসা। রিক্সা থেকে নেমে উপরে তাকাতে দেখে, তারেক সাহেবের ফ্ল্যাটের একটি রূমে লাইট জ¦লছে। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দরজায় নক করতেই তাকে সাহেব দদরজা খুলে দেন।
তারেক- সব ঠিক আছে? বাসায় কিন্তু কেউ নেই, আমি আর আসমা কেবল। কাজের সহকারী রুকসানাকে বিকেলেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
রাশেদ- গুড। তারেক ভাই....ভাবি কই? ডাকেন।
তারেক- সে রান্না ঘরে। তোমার জন্য চা করছে। আসমা......শুনছো? আগে এসো
ডাক শুনে আসমা ঘরে ঢুকেন। লাল নেট জর্জেটের শাড়ী পড়া। এরকম সাজ দেখে রাশেদ সহ্য করতে পারলো না। এই মহিলাকে আগে কখনোই এমন হালকা উগ্র টাইপ ড্রেসআপে সে দেখেনি।
আসমা- রাশেদ ভাই চলে এসছেন? চা তো খাবেন? আপনার জন্য চা করছিলাম।
রাশেদ- থ্যাংক ইউ ভাবি। চা খাবো বলতেই খুঁজেছি।
আসমা হাসি বিনিময় করে চা আনতে ভেতরে চলে যায়।
রাশেদ- তারেক ভাই, আমরা আজ বসবো আপনাদের বেডরুমে। ওখানে মেঝেতে আমার প্রায় ১০ মিনিটের একটা কাজ আছে। ওই কাজটি শেষ করে তারপর এক এক করে বলে দিবো। সে অনুযায়ী আপনাদের কাজ করলেই হবে।
তারেক- আচ্ছা। তুমি যেভাবে বলবে।
রাশেদ- আরো একটা কথা তারেক ভাই। আগামী ২ দিন পর, তৃতীয় দিনের রাত থেকে আমি এই ফ্ল্যাটে থাকবো আপনাদের সাথে, একটানা ৭ দিন কিংবা ৮দিন। এক্ষেত্রে আপনি দিনে থাকলেও রাতে আপনার থাকা যাবে না। কারণ, প্রতিদিন রাত ১২ টা থেকে আমি আসন করবো। ভাবিকে লাগবে আসনে। আপনার আসনটি শুধুমাত্র আজকেই হবে। ব্যাপারটা হয়েছে কি, অশরীরিদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে। সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, আপনাদের কোনই সমস্যা নেই। বাইরে থেকে কিছু নেগেটিভ শক্তি আপনাদের বাধা দেয়। যেহেতু ভাবি গর্ভে নিবে বাচ্চাটি। তারজন্যই ভাবির প্রয়োজন বেশী। আপনি যদি আবার তাতে সায় না দেন। তাহলে কাজটি এখনই বন্ধ করতে হবে।
তারেক- রাশেদ, তোমাকে জানাতে ভুলেই গেছি। পরশুদিন আমাকে চিটাগং যেতে হতে পারে, নিউ শিপম্যান্ট আর কিছু নতুন অর্ডারের জন্য। আর ঐ যে, সায় দেয়ার কথা বললে না? তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো, বাচ্চা পাওয়ার জন্য কতোটা ব্যকুল আমরা। সো, এগুলো নিয়ে কোন চিন্তা করোনা। বরং কিভাবে মকি করতে হবে....শুধু বলবা। আমরা তৈরী থাকবো।
রাশেদ- থ্যাংকস ভাই। তো চিটাগং আপনি যেতে পারেন। আপনার দরকার আজকেই শেষ হচ্ছে। আপনি যেতে পারবেন। কোন দরকার পড়লে এখানে আমি ম্যানেজ করতে পারবো।
তারেক- তাহলে একটা কাজ করি। কাল দুপুরের ফ্লাইটে যাই। তাহলে এক রাত রেস্ট নিতে পারবো। আর পরদিন থেকে কাজ দেখে নিলাম।
রাশেদ- আপনি যেমনটা মনে করেন।
চায়ের ট্রে নিয়ে আসমা ঘরে ঢুকে। তার দিকে তাকিয়েই আছে রাশেদ....হ্যা করে যেন গিলছে। এটা আড়চোখে খেয়াল করে আসমা। মনে মনে সেও তো কম উত্তেজিত নয়, আজ রাতেই কি তাহলে.......রাশেদ তাকে......ভাবতেই গায়ের সকল লোম কাটা দিচ্ছে।
আসমা- রাশেদ ভাই, নিন। চা খেয়ে তারপর কাজ।
রাশেদ- থ্যাংক ইউ ভাবি। তারেক ভাইকে আমি ব্রিফ করেছি। আপনাকেও বলছি। আজ রাতে আপনাদের বেডরুমে আসন পাতবো আমি। আপনারা তো থাকেবনই। আর আজকের পর তৃতীয় দিন রাত থেকে আমি এখানে থাকবো ৭দিনের জন্য। (আসমাকে খতিয়ে দেখতে চায় রাশেদ, তাই কিছু কথা বলে, তার এক্সপ্রেশন দেখতে চায়। কোনরকম রিস্ক নিতে চায় না সে) তবে, তারেক ভাই থাকবে না। আমি আর আপনি। সমস্যা নেই তো ভাবি??? (আসমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে রাশেদ....)
আসমা- (মুখ লাল হয়ে উঠে তার, যেন গরম ভাপ বের হচ্ছে....তবে, মজা করার ইচ্ছা হলো তারও) রাশেদ ভাই, ডোন্ট ওরি। আমি বাগ-ভাল্লুক নই। আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার সাথে একা ফ্ল্যাটে থাকলে আপনার ক্ষতি হবে না। লাভ হবে বলেই মনে করি।....না চাইতেই তো পাবেন......চা
রাশেদ- (বিপরীত দিকে কোন সমস্যা নাই, সমস্যা একটাই....যদি আসল কাজে গিয়ে মনা পারে? এই একটাই চিন্তা ওর....টেবিল থেকে চায়ের মগটি বাড়িয়ে নেয়) ভাবি, আমি তো ভাবছি আপনার কথা। চায়ের চাহিদা মেটাতে মেটাতে যদি আবার বিরক্ত হয়ে বের করে দেন.....হা হা হা....! এইবার কাজের কথায় আসি। আপনাদের গোসল করা শেষ?
তারেক ও আসমা দুজনেই হ্যা সূচক মাথা নেড়ে জানায়।
রাশেদ ব্যাগ থেকে দুপুরে কেনা থানকাপড়গুলো বের করে। দুজনের হাতে একটা একটা করে দেয়। তারপর ব্যাগ থেকে আরো কিছু অনুষঙ্গ বের করে টেবিলে রাখে। চা শেষ করে উঠে বেডরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তারেক সাহেবের বেডরুমটি বেশ বড় না আবার ছোটও নয়। বিছানার ঠিক সামনে মেঝের অংশটুকু বেছে নেয় রাশেদ। মেঝেতে একটা চাইনিজ ভুডুর চিহ্ন আঁকে। গুগল দেখে আগেই ঠিক করে রেখেছে। তারপর সেই চিহ্ন বরাবর ৪টি মমবাতি জ¦ালিয়ে রাখে। মাঝে কিছু হলুদগুড়ো আর কিছু দুর্বাঘাস ছড়িয়ে দেয়। এরপর একটি পানির বোতল আর দুটি গ্লাস আনতে বলে রাশেদ। ব্যাগ থেকে ঘুমের মিশ্রন বের করে হাতের কাছে রাখে। পানির বোতল আর গ্লাস পাওয়ার পর রুমের লাইট অফ করে দেয়। এখন রুমে শুধু মমবাতির আলো।
তারেক ও আসমাকে থান কাপড়টি পরে নিতে বলে। শুধুই এই কাপড়। আর কোন কিছু যেন শরীরে না থাকে। দুজনে উঠে বাথরুম থেকে কাপড় বদল করে আসে। রাশেদও এক ফাঁেক নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয় থান কাপড়। মমের আলোতেও আসমার শরীরে পাতলা থান কাপড়ের নিচে অবয়ব বুঝতে পারছিল রাশেদ। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতো কাপড়টি জড়িয়ে দুজন। তারপর রাশেদের ঠিক উল্টো দিকে দুজন বসে পড়ে মেঝেতে, আসনের ভঙ্গিমায়।
একটি গ্লাসে ২ চামাচ মিশ্রন নিয়ে তাতে পানি মিশায় রাশেদ। আরে গ্লাসে শুধুই পানি নেয় সে। এবার তারেককে মিশ্রনওয়ালা গ্লাস বাড়িয়ে দেয়।
রাশেদ- তারেক ভাই, এই পানিটুকু পুরোটা খাবেন। আপনার শরীরে কোন নেগেটিভ শক্তি থাকলে তা আপনাকে জানান দিবে। আপনার অবশ লাগবে। কেমন ঘোরের মতো মনে হবে। এরপর আপনি ক্ষানিকক্ষন ঘুমোবেন। তাতে ভয় পেলে চলবে না। আপনাকে শক্ত থাকতে হবে। পারবেন? নেগেটিভ শক্তি বিদায় নেয়ার পর আমার অশরীরিরা আপনার সাথে কথাও বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভয় পাবেন না। ঠিক আছে?
তারেক- এমনিতে ভয় পাচ্ছি না। তবে, নেগেটিভ শক্তি কোন ক্ষতি করবে না তো?
রামেদ- ওরা আপনার কিছুই করবে না। অশরীরিরাই আপনার সাথে থাকবে আপনাকে ট্যাকল দিতে।
তারেক- তাহলে তো আর সমস্যা নেই।
তারেকের দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দেয় রাশেদ। সে জানে, এই মিশ্রন কাজ করবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টা। এর মাঝেই তাকে তার প্লট রেডি করে ফেলতে হবে। তারেক এক ঢোকে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে।
এবার আরেক গ্লাসে শুধু পানি ঢালে রাশেদ। এগিয়ে দেয় আসমার দিকে। খেয়ে নিতে বরে পুরোটা। আসমা গ্লাসের পুরোটা খালি করে ফিরিয়ে দেয় রাশেদের দিকে।