বিল্টু ও তার মা অভাবের ফাঁদে! - অধ্যায় ১৫
সন্ধ্যা বিল্টুর ফোন নিয়ে বিল্টুর ঘরে গিয়ে তাড়াতাড়ি শেফালী কে কল করলো।
শেফালী ফোন ধরেই বললো , কি রে সন্ধ্যা , তুই তো ভারী ,বেয়াক্কেলে মেয়ে দেখছি। ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিস কেন ?
সন্ধ্যা : ও সব বাদ দে , পরে কাল অফিসে তোকে বলবো। তুই'কেন কল করেছিলিস ,কি দরকারে ,তাই বল ?
শেফালী : আরে ,ম্যানেজার অংশুমান ,তোকে কলে পাচ্ছে না ,তাই আমাকে কল করে জিজ্ঞেস করছিলো ,সন্ধ্যার ফোন কেন সুইচ অফ। তুই তাড়াতাড়ি অংশুমান
কে কল কর। আর শোন্। ...বিশেষ যেকারনে অংশুমান তোকে ফোন করেছিল সেটা। .....
সন্ধ্যা : সেটা আবার কি ????
শেফালী : বিল্টু নেই তো তোর পাশে ?
সন্ধ্যা : না ,নেই বল তুই !
শেফালী : তোর সাথে খেলতে চাইছে মনেহয় মাল টা। তুই ও ভালোকরে খেলিস কিন্তু। আর তোর লোনের বা টাকা ধারের ব্যাপারে অংশুমান রাজি হলো কি ,
তুই তো আজ অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে ছিলিস ?
সন্ধ্যা : এমনিতেই ম্যানেজার অংশুমান লোকটাকে খুব একটা পছন্দ হয়না সন্ধ্যার। কেমন গা ঢলানে টাইপের ,তারউপর রাতে কল করতে হবে শুনে সন্ধ্যার মেজাজ বিগড়ে গেল। তাই শেফালী কে বললো ,কাল তোকে অফিসে সব বলবো।
শেফালী অবশ্য খোলা মনের ভালো বান্ধবী সন্ধ্যার। বর, দুটো ছেলে নিয়ে সুখের সংসার শেফালীর ।সন্ধ্যাকে যতটা পারে ভালো বন্ধু হিসেবে টাকা -বুদ্ধি দুটোই দিয়ে সাহায্য করেছে বহুবার।
শেফালী সন্ধ্যার ভালোই চায় । ক্ষতি চায়না। সন্ধ্যা যদি ম্যানেজার অংশুমানকে পটিয়ে প্রমোশন বা ধার ,লোন যাই পাক ,শেফালী সন্ধ্যাকে হিংসে করবে না।
সন্ধ্যা ফোন কেটে বারান্দায় ডাইনিং রুমে গেল বিল্টুকে খেতে দিতে ও নিজেও খেতে বসলো। আবার একটু অন্যমনস্ক হয়ে রুটি ,তারকা চিবোচ্ছে সন্ধ্যা।
অন্যমনস্ক হয়ে খেতে গিয়ে হঠাৎ বিষম খেলো সন্ধ্যা। সাথে সাথে জলখেয়ে সন্ধ্যার খেয়াল পড়লো বিল্টুর দিকে ,বিল্টুও যেন কেমন কেমন ভাবে তাকাচ্ছে আজ। হাতকাটা নাইটি তো আমি প্রতিদিনই বাড়িতেই পরি । কিন্তু বিল্টু আমার বুকের দিকে যেন কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে। বিল্টুর চাহুনি টা তো ভালো লাগছে না আমার।
আসলে রতন বিল্টুকে যে বলেছিলো ওর মায়ের ছবি তোলার ব্যাপারটা। তার উপর রতন , বিল্টুকে ফোন করে মনেকরিয়ে দিয়েছে ,বিল্টু যখন রুটি আনতে গেছিলো।
বিল্টু তাই আজ অন্য রকম দৃষ্টিতেই সন্ধ্যার দিকে তাকাচ্ছে।
সন্ধ্যা বিষম খেয়ে জলখেয়ে বিল্টুকে মনে করিয়ে দিলো , আরে। বিল্টু তুই তো বললি না আমাকে ,কেন তুই দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ি ফিরলি ,ধারামকরে দরজা বন্ধ করে দিলি। ..কেন রে ?????
বিল্টুও অন্যমনস্ক হয়ে রুটি চিবোচ্ছিলো। মায়ের কথাই ঘোর কাটলো ,তারপর যা বললো ....কাল থেকে, জানত মা আমাদের ফ্ল্যাটের চারপাশে একটা লম্বা ,লম্বা কালো দাড়ি ,গোঁফ আলা ,মাথায় ঝুটি ,গায়ে গেরুয়া বসন পরে দুটো লোক আমাদের ফ্ল্যাটের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখছি। তুমি কি দেখেছো ?
সন্ধ্যা : না , তো ,আমি দেখিনি , আমি তো আজ ই অফিস থেকে সকালে বেরিয়ে রাতে বাড়ি ফিরলাম।
বিল্টু : হুম ,না আজ তুমি অফিস যাবার পর থেকেই দেখলাম
সন্ধ্যা : তান্ত্রিক -ফ্যান্ত্রিক হবে হয়তো। তুই আবার ওদের পাল্লায় পরিস না। ওরা খুব ডেঞ্জার হয়।
বিল্টু : না ,তা ঠিক নয় ,আমি এখন রাতে রুটিনিয়ে বাড়িফিরছি আমাদের নিচের তালার ফ্ল্যাটের গেটের কাছে দাঁড়িয়েই ছিল ওরা দুজন। এদিকে ফ্ল্যাটের নিচে সবাই
বাইরে টিভিতে খেলা দেখছিলো। ....
সন্ধ্যা : তারপর। ...
বিল্টু :ওই তান্ত্রিক লোকদুটো না আমাকে দেখতে পেয়েই আমাকে কাছে এলো , তারপর ওদের মধ্যে একজন আমাকে বললো তোমাদের অনেক বিপদ আসছে। ভালো চাও তো তুমি আর তোমার মা আমাদের স্বরণাপন্ন হও। এইবলে আমার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বললো কোই তোমার ফ্লাট কোনটা দেখি।
সন্ধ্যা :মানে ,তুই কি বলছিস তুই ,আমার তো গায়ে কাটা দিচ্ছে শুনে !!!!
বিল্টু : আমার কাছে ফ্ল্যাটের বাইরের গেটে চাবি ছিল ,আর ফ্ল্যাটের দারোয়ান রাম সিং সিঁড়ির ঘরে তখন সিকিউরিটি রুমে মোবাইলে খেলা দেখছিলো। আর ১০টার পর ফ্ল্যাটের বাইরের গেটে এমনিতেই তালা পড়ে যায়।।
আমি ভাবলাম ফ্ল্যাটে এখন যদি তালা খুলে ঢুকি , ওই তান্ত্রিক গুলো যদি আমার পিছন পিছন সিঁড়িদিয়ে উপরে উঠে আসে , তাই আমি ওদের কে কিছু না বলে ফ্ল্যাটের সামনে থেকে পালিয়ে গেলাম। এদিকে তোমাকে কল করছি। তোমার ফোন অফ।
সন্ধ্যা র বুক টা ধিকঃ ধিকঃ করছে শুনে , বিল্টুকে বললো : তারপর। ...
বিল্টু : আধঘন্টা মতো বাইরে পালিয়ে গিয়ে , তারপর বাড়িতে ঢুকলাম। আর ফ্ল্যাটের দারোয়ান রাম সিং কে বললাম , তান্ত্রিক গুলোর ব্যাপারটা , একদম যেন ফ্ল্যাটের চারপাশে ঢুকতে না দেয় কোনো অপরিচিতকে।
সন্ধ্যা : ভালো করে বলেছিস তো , রাম সিং কে। আমার তো কেমন গা ছম ,ছম করছে রে। আজ রাতে যদি। ....
বিল্টু : না না মা ,রামসিং সবকিছু শুনে টুনে আমাকে বললো। বিল্টু বাবু তোমার কিছু চিন্তা নাহি করবে একদম ,হামি ২০ বছর ধরে ফ্ল্যাটে একটা মাক্ষি ভি গলতে দিলাম না , তো কি বলবো তুমাকে। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও বিল্টু বাবু। পিতাজির খেয়াল ভি রাক্ক। ওরা তুমাকে ছোটা লাড়কা দেখেছে ,তাই ভয় খাইয়ে ,টাকা -পায়সা মাঙতে এসেছে। ও কুচভি টেনশন মত্ কারিও বিল্টু বাবু।
এসব বললো রাম সিং আমাকে।
সন্ধ্যা : যাক গে। চল বেসিনে থালা বাসুন কটা মেজে নি গিয়ে। আমার তো আবার কাল অফিস।
সে আপনি থালা বাসুন যাই পরিষ্কার করুন ,অফিস যান,ফুচ্কা খান। ...কিন্তু মঙ্গোল সিং কিন্তু তান্ত্রিক ছদ্মবেশে আপনার দরজার কাছে চলে এসেছে। । ।
আসলে সেই সত্য যুগ ,ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ, বর্তমানে কলি যুগ বাল্মীকির রামায়ণে যেমন রাবন ছিল ,বেদব্যাস এর মহাভারতে ছিল দুর্যোধন,দুঃশাসনরা ।
সীতামায়ের চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যাওয়া থেকে ,দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ। কোনো কিছুরই বাদ ছিল কি ?
যুগ যুগ ধরে চলেই আসছে।
ছদ্মবেশী তান্ত্রিক মঙ্গোল সিং কি রামায়ণের ছদ্মবেশী ভিক্ষুক সেই রাবন?
নাকি সুধাংশু কলিযুগের দুর্যোধন ?
আর সন্ধ্যা ম্যাডাম। আপনার জন্য তো সবাইনা পার্কে দ্রুততম পিছে আশির দশকের ওয়েস্টইন্ডিয়ান সব বিখ্যাত বোলাররা হাতে বল নাচাতে,নাচাতে আপনার আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছে ,কখন আপনি ব্যাট হাতে নামবেন ,বিল্টুকে সঙ্গে নিয়ে।
একটা সেঞ্চুরি তো কম সে কম হাঁকান। ক্লিন বোল্ড ও হয়তো হবেন জানি।
আবার বল করে উইকেট গুলোও তো নিতে হবে!!!
কিন্তু বল যখন হাতে পাবেন , .....জাস্ট ছাড়বেন না !!! আর আপনার সাথে বল করার জন্য অবশ্য একটা ভালো ফাস্ট বোলার আপনি পাবেন।
যাই হোক ফিল্ডিং টা ঠিক ঠাক সাজাবেন কিন্তু ????
দেখাই যাক!!!
এই কলিযুগেই যেমন রাবন , দুর্যোধন , দুঃশাসন ,কংসর পরিবারের লোক যেমন আমাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে ,ঠিক তেমনি যুধিষ্টির ,অর্জুন ,রামভক্ত হনূমান জির পরিবারের লোক ও তো রয়েছে আমাদের চারিপাশে। তাই বলতেই হয় :-
"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥
পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥"