বিল্টু ও তার মা অভাবের ফাঁদে! - অধ্যায় ১৭
পর্ব -১৪
"ইয়েনা রাসকালা, মাইন্ড ইট" বিল্টুকে বললো রাহুল সুব্রামানিয়াম।
রাহুল সুব্রামানিয়াম হল বিল্টুর বন্ধু।
এই যে গল্পটা এতক্ষন আপনারা শুনলেন সেটা ছিল বর্তমান সময় থেকে ৪ বছর আগের বিল্টু ওরফে বিশ্বরূপ দাস ও সন্ধ্যা দাসের জীবনে ৪ বছর আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ ,যেটা বিল্টু , বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরে কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে একটি নামি বহুজাতিক সংস্থা চাকরিরত অবস্থায় বিল্টুর বন্ধু কাম রুম পার্টনার রাহুল সুব্রামানিয়াম কে তার জীবনের ঘটেযাওয়া ঘটনাটা বলছিলো এতক্ষন ধরে । আর আমি লেখক হিসেবে আপনাদের গল্পটা পরিবেশন করলাম।
বি:দ্র
(রাহুল সুব্রামানিয়াম কথাগুলো বিল্টুর সাথে হিন্দি ,ইংলিশ ও তামিল মিশ্রিত ভাষা ব্যবহার করে বললেও গল্পটির স্বার্থে তা বাংলা ভাষাতেই লেখা হবে । )
এই রাহুল যখন বিল্টুর মুখে ব্যাঙ্গালোরের ফ্ল্যাটে বসে বর্তমান সময়ে গল্পটা শুনছিলো ঠিক যখন শুনলো গল্পে তান্ত্রিক এর আগমন , রাহুল বুঝতে পারছিলো বিলটুরমুখে গল্পটা শুনতে শুনতে যে এই তান্ত্রিক টা কিন্তু ডাকু মঙ্গোল সিং ই হবে হয়তো ??? রাহুল এর বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিস্ক বিল্টুর মুখে তার জীবনের ৪ বছর আগে ঘটনাটা শুনতে শুনতে তান্ত্রিক এর আসল পরিচয় বিল্টুর বলার আগেই তুখোড় বুদ্ধিমান রাহুল কিন্তু আগেই বুঝতে পেরে গিয়ে বিল্টুকে দক্ষিণ ভারতীয় স্টাইলে বললো ""ইয়েনা রাসকালা, মাইন্ড ইট" "
বাংলায় "এটা কিন্তু একটা বদ মতলব এর লোক ছিল সেদিন , মনে রাখিস "
বিল্টুর মুখে তান্ত্রিক এর আসল পরিচয় না শুনেই রাহুল কিন্তু বুঝে নিয়েছিল নকল তান্ত্রিক টা সুবিধার লোক ছিল না। ছদ্মবেশী ক্ষতিকারক কেউ হবে।
শুধু তাই নয় তান্ত্রিকর সাথে পাশের আরেক ভন্ড তান্ত্রিকটি কিন্তু ..... ওই যে ঘনশ্যাম। ওই যখন বোম্ব ,মারপিট হচ্ছিলো (পর্ব ৭)মঙ্গোল সিং এর পিঠের কাছাকাছি বিল্টু যখন চুরি ঢুকিয়ে দিয়ে সন্ধ্যাকে নিয়ে পালালো ,তখন মঙ্গল সিং কিছুক্ষন পর নিজেকে সামলে ঘনশ্যামকে সন্ধ্যাদের খোঁজ করে পিছনে ধাওয়া করতে বলে। আর রেলস্টেশনে গিয়ে খুঁজতে বলে ঘনশ্যামকে , আর এটাও খুব স্বাভাবিক ছিল সন্ধ্যা -বিল্টুকে ট্র্যাক করাটা মঙ্গোল সিং এর জন্য। কারন বাস ,টোটো ,আটো গরুরগাড়ি,হেটে ,দৌড়ে সন্ধ্যা পাখি পালিয়ে যাবে টা আবার কোথায়। পালতে গেলেতো সেই ট্রেনেই যেতেহবে। উড়ে যাবে তো আর না ,হেলিকাপ্টারে করে।
প্লেনেও সম্ভব একেবারেই নয়।
যথারীতি ঘনশ্যাম খুঁজতে, খুঁজতে এসে দেখে সন্ধ্যা -বিল্টু রেলস্টেশনে বসে রয়েছে। ঘনশ্যাম তখন আর কি করবে , সন্ধ্যা কে তুলে নিয়ে যাবে কি করে , যদি সন্ধ্যার গায়ে হাত পরে , তাও আবার লোকজন ভর্তি রেল স্টেশনে এবার সন্ধ্যা যদি লোক ,জন নিয়ে হাঙ্গামা বাধিয়ে দেয় তখন।
রেল পুলিশ তো আর ছেড়েকথা বলবেনা। মানলাম মঙ্গোল সিং এর নিজের এলাকার পুলিশএর বড় বাবু রা মঙ্গোল সিং যে কুখ্যাত সেটা জানে ,কিন্তু রেল পুলিশ ফোর্স। .... সেটা তো আর মঙ্গোল সিং এর বাপের জমিদারির মতো নয় ,তাই মঙ্গোল সিং তার চামুন্ডা ঘনশ্যামকে সন্ধ্যার সাথে হুজ্জতি না করে সন্ধ্যাকে ধাওয়া করতে বলে। ।
মঙ্গোল সিং মনে মনে বলে "পাখি যাবে কোথায়, ছাম্মাক, ছাললো সন্ধ্যা মাহবুবা কে নিজের ডেরার বন্দি করে প্রতিরাতে " মাহবুবা ,মাহবুবা " ডান্স দেখতে হবেনা।
তারউপর এমন সুন্দর নরম সুফলা উর্বর আগাছা যুক্ত জমি লঙ্গন দিয়ে চাষ ও তো করতে হবে আয়েশ করে ।
তাই ঘনশ্যাম করেছিল কি মঙ্গোল সিং এর কথামতো সন্ধ্যাকে শিকার করতে ট্রেনে চড়ে পরে আর ওই মঙ্গোল সিং এর প্রোমোটারির বিল্ডিং এর কাজ করা অধীনে মুটে গুলোকে সাথে নিয়ে। বাকিটা (পর্ব ৮)
অথচ সেদিন বিল্টু ৪বছর আগে যখন রাতে তরকা-রুটি আনতে গিয়েছিল ,সেদিন রাতে ফ্ল্যাটের সামনে ছদ্মবেশী মঙ্গল সিংকে ও ঘনশ্যামকে চিনতেই পারেনি বিল্টু। ছদ্মবেশে ধারি তান্ত্রিক যে ডাকু মঙ্গোল সিং ই ছিল সেটা ও বোঝার বুদ্ধি বুল্টুর ছিল না। আর ঠিক বর্তমান সময় রাহুল ব্যাঙ্গালোরের ফ্ল্যাটে বসে বিল্টুর মুখে গল্প শুনতে শুনতে তান্ত্রিক এর আগমন শুনেই চোখ বন্ধ করে বলেফেললো - তান্ত্রিক টা আসলে ডাকু মঙ্গোল সিং ছদ্মবেশ ধারন করে এসেছিলো তোর মা সন্ধ্যাকে তুলে নিয়ে যাবার জন্য।
পরে অবশ্য বিল্টু-সন্ধ্যা সেটা হাড়ে -হাড়ে টেরও পেয়েছিলো।
এবার গল্পথেকে ৪ বছর পর , বর্তমানে যখন বিল্টুর বয়স ১৯ থেকে ২৩ এ ঠেকেছে সন্ধ্যার ৪০থেকে ৪৪ এ। মাঝখানে গঙ্গার জলে বয়েগেছে অনেক নোংরা -আবর্জনা ,মল ,মূত্র সর্বত্রই প্রবাহিত হয়েছে। । বিল্টুর বাবা অবিনাশ বাবুও জীবনযুদ্বের ইতি টেনে গত হয়েছেন আগেই । যখন বিল্টুর কম্পিউটার সফটওয়্যার এর উপর কোর্স টা ভর্তির আগেই অবিনাশ বাবু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রেসমেকার আর জোটাতে পারেনি সন্ধ্যা অবিনাশ বাবুর জন্যে। পরে বলছি সব।
আসলে কি জানেন ,কাঠের বাটামে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পেরেক গুলো ভাগ্যে না মাথায় হাতুড়ির ঘাঁ ই জোটে , কিন্তু দেখুন হাতুড়ির ঘাঁ মারতে গিয়ে বাঁকা পেরেক গুলোকে আমরা কিন্তু হাতুড়ির ঘাঁ আর মারিনা। অবিনাশ বাবু তো খুব ভালো লোক ছিলেন। তাই কপালে হাতুড়ির ঘাঁ টা বেশি ই পড়েছিল। পরে বলছি সব কথা।
হতভাগী সন্ধ্যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর বৌ ,একসময়কার বিখ্যাত কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালকিনএখন বরকে হারিয়ে পেটের দায়ে কলকাতার কোনো এক নাইট বারের ডান্সার।
আর এই নাইট বারে ডান্সের টাকা দিয়েই আর মধ্যপ্রদেশের জমি বিক্রির টাকা দিয়েই বিল্টুকে কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টা কোনোরকমে কষ্টে শিষ্টে পড়িয়েছে সন্ধ্যা ।
মধ্যপ্রদেশের জমি বিক্রির টাকা মঙ্গোল সিং এর থেকে কি ভাবে পেলো সন্ধ্যা ধুমধুমার কান্ড ঘটিয়ে ,সেটা আমি পরে বলছি। আমার কীবোর্ডের আঙুলের চাপেই আপনাদের জন্য টাইম মেশিন রেডি করা আছে।
বিল্টু এখন ব্যাঙ্গালোরে কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে একটি নামি বহুজাতিক সংস্থা কর্মরত ,আর আগেই বলেছি তার মা হতভাগী সন্ধ্যা এখন কলকাতার কোনো এক নাইট ডান্স বারের ডান্সার। নিজের পরিচয় গোপন রেখে। সন্ধ্যা বিল্টুর এই পড়ার খরচ বিগত ৪বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছিলো । শেষমেশ কিছুদিন আগেই সন্ধ্যার ছেলে বিল্টু ব্যাঙ্গালোরের বহুজাতিক নামিদামি কোম্পানিতে চাকরিটা পেলো।
আর ব্যাঙ্গালোরের যে ফ্ল্যাটে বিল্টু এখন থাকছে চাকরিরত অবস্থায় সেই ফ্ল্যাটেই একসাথে থাকে রাহুল ও থাকে বিল্টুর সাথেই। ।
রাহুল এখন সি.এ বা চাটার্ড একাউন্টেন্ট পদে নিযুক্ত একটা বেসরকারি সংস্থায় বিল্টুর বন্ধু রাহুল সুব্রামানিয়াম।
আর সেই বেসরকারি সংস্থা টির মালিক আর কেউ নন "স্যার সুধাংশু সেন "।
সুধাংশু এই চারবছর নিজের ব্যাবসাটা ওয়েস্টবেঙ্গলর পর ব্যাঙ্গালোরে সম্প্রসারিত করে। আর সেই ব্যাঙ্গালোর ব্রাঞ্চের হেড একাউন্টেন্ট পদে নিযুক্ত সি.এ পাস চাটার্ড একাউন্টেন্ট রাহুল সুব্রামানিয়াম।
আচ্ছা এটা জানা আপনাদের খুবই গুরুত্ব পূর্ণ তা হলো ,
বিল্টু ,সুধাংশু বাবুকে কিন্তু খুব ভালোকেই চেনে। মানে এতদিনে চিনে গেছে খুব ভালোকরে। মাঝের ৪ বছর এই সুধাংশু কম ঝড় বইয়েছে কি বিল্টুর জীবনে।
আবার সুধাংশুর মানে যে অফিসে রাহুল কাজ করেন সেখানকার হেড বস ও তো বটে। তাই বিল্টু ও রাহুল দুজনেই সুধাংশু বাবুকে খুব ভালোকরেই চেনে। দুজন দুই ভাবে। বিল্টুর জীবনের খলনায়ক যে সুধাংশু তা নিশ্চই রাহুল বুঝেই যাবে গল্প শুনেই । আর বিল্টু এটাও জানে রাহুল এর অফিসের মালিক হাড়বজ্জাত সেই লোক টি তার পরিচিত সুধাংশু।তার কু-কীর্তির গল্প হচ্ছে দুজনের মধ্যে।
হাড় বজ্জাত সুধাংশু সেন এর অবস্থা এখন পোয়া বারো। হুম কথাটা পাশা খেলাতে ব্যবহার হয়। চার বছর আগে সুধাংশু সন্ধ্যার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন একেবারে ।
পরে সব বলছি সব ঘটনা। । টাইম মেশিন রেডি করা আছে।
সুধাংশুর সুন্দরী সুশিক্ষিত স্ত্রী নাম অর্পিতা সেন , সুধাংশুর কোম্পানির ২৫% ই বৌ কে মালকিন বানিয়ে দিয়েছেন। আর ১৫%এর মালিক সুধাংশুর ছেলে শোভন সেন ডাকনাম ভিকি আমেরিকায় পড়াশোনা করে বর্তমানে আমিরিকা থেকেই বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছেন আর বাকি ৫% এর মালকিন সেক্সি ঝিঙ্কু মামনি সুদেষ্ণা কে যিনি বর্তমানে বাবা সুধাংশুর সাথেই ব্যবসা সামলাচ্ছেন তাকে দিয়েছেন ।
ফ্যামিলি বিসনেস ফেঁদে বসেছে একেবারে।
আর রাহুল আসলে দক্ষিণ ভারতের একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত সুব্রামানিয়াম পরিবারের ছেলে। তবে এই জায়গাটা একটু মাথায় রাখবেন দয়া করে !!!রাহুলের একটা পাস্ট হিস্ট্রি আছে ।
তাই আপনাদের আমি লেখক হিসেবে রাহুল র মতো করে বলতে চাই ....ডোন্ট ফরগেট।....মাইন্ড ইট , ...
কিন্তু এই মাঝখানের চার বছর তাহলে কি কি হলো .... সেটাই তো বলবে বিল্টু আমাদের , এই চার বছর আগের বাকীঘটনা বিল্টুর বন্ধু রাহুল কে ব্যাঙ্গালোরের ফ্ল্যাটে বসেই বলছে ,আমি কলম ধরেছি । ....
এবার আমরা ফিরে যাবো সেই ৪ বছর আগে দিনটিতে ...যেদিন বিল্টু রাতে তারকা ,রুটি নিয়ে হাঁপাতে ,হাঁপাতে বাড়ি ফিরেছিল।
সময়ের ভেলা নামক টাইম মেশিনে চেপে আমরা আবার ফিরে যাবো ঠিক ৪বছর আগে ,যেখানে গল্পটা থেমেছিল ....
বি:দ্র
গল্পটির ঘটনা গুলো কে পাঠকদের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরতে ঠিকমতো বোঝার জন্য" সময়ের ভ্যালা নামক " টাইম মেশিনে আপনাদের আমি চাপাবো মাঝে মাঝে।
...তারপর। ...বিল্টু বোলাতে শুরু করলো ...