বিল্টু ও তার মা অভাবের ফাঁদে! - অধ্যায় ৭
বিল্টু কথাটা শোনার পর নিজের পা দুটো মেলে ,নিজের শরীরটাকে এলিয়ে দিল সোফার দিকে।মাটিতে বসে মাথাটা ফেললো সোফার দিকে। বিল্টুর চোখ তখন বন্ধ।
দুজনেই চুপ ,রাত তখন গভীর ....
বিল্টু এক ঝটকায় মাথা তুলে সোফা থেকে , সনজু উপর ভীষণ ক্রোধের সঞ্চার হয় ,সেটাই স্বাভাবিক। আর বলতে থাকে :আপনি একটা জানোয়ার শয়তান পাপী ,
এই বলতে বলতে সনজু র গলা টিপে ধরে, সনজু কে মাটিতে ফেলে শুইয়ে দেয়।
বিল্টু তখন সনজু কে মাটিতে ফেলে ভীষণ জোট দিয়ে গলার নালীতে চাপ দিয়ে থাকে। সনজু তখন কাৎরাতে কাৎরাতে বলতে থাকে, তুমি আমাকে মেরে ফেলতেই পারো, আমার তাতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমাকে মেরে ফেলার আগে তুমি আমাকে বাকি কথাগুলো বলতে দাউ।
বিল্টু তখন সনজুর কথাগুলো শুনতে চায় না ,সনজু কে বলতে থাকে কি আর কথা বাকি আছে তোর বলার- শয়তান ,হারামি, ইতর। ....
গলা নলি টেপা অবস্থায় সনজু হাত জোড় করে বিল্টুকে বলে: তুমি আমাকে মেরে ফেলবে আমি জানি। কিন্তু পুরো কথাগুলো শোনো আমার , তারপর মেরে ফেলো আমাকে। আমার আর কোনো আক্ষেপ থাকবে না জীবনে, আমার এই পঙ্গুর জীবনে আর বেঁচে থাকার মতো কি বা আছে ।
বিল্টু কয়েক মুহূর্তের জন্য নিজেকে শান্ত করল, সত্যি তো লোকটার তো একার কোন দোষ নেই এখানে মা ও তো লোকটাকে ভালোবেসেছিল।
বিল্টু সনজু কে ছেড়ে দেয়, বিল্টু নিজেওগ্লাস এ মদ ঢেলে খেয়ে ফেলে। তারপর সনজু কে বলে বলুন যা বলার তাড়াতাড়ি সব ,আমার হাতে আর বেশি সময় নেই।
সনজু কোনরকমে প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজের প্রাণভিক্ষা চেয়ে বাকি কথা বলার জন্য গলার নলি তে হাত দিয়ে ঘসতে ঘসতে উঠে বসে। কাশি দিতে দিতে বলতে থাকে, মাস খানিক পর তোমার মা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই ,ডাক্তার জানায় যে সন্ধ্যা একমাস হল অন্ত:সত্ত্বা।
বিল্টু মদের গ্লাসে তখন চুমুক দিচ্ছিল, কথাটা শোনা মাত্র বিল্টুর হাত থেকে মদের গ্লাসটা পড়ে ভেঙে যায় ,আর চোখের পাতা স্থির , চোখ গোল গোল করে
সনজুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, মুখে একটাও কোন কথা নেই।
সনজু :আমি তোমার মাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই, তোমার মাকে বাড়িতে সব জানাতে বলি ।এমনকি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারটাও।
কিন্তু তোমার মা আমাকে জানায় আমি বাড়িতে বিয়ের ব্যাপারটা জানাতেই পারি কিন্তু অন্ত:সত্ত্বা র ব্যাপারটা বলতে পারব না ,তাহলে আমাকে বাবা দাদারা ঘর থেকে বার করে দেবে আর আমি বাবা কে এইভাবে ঠকাতে পারবো না তাই প্রেগনেন্ট হওয়ার ব্যাপারটা আমি বাড়িতে কিছুতেই বলতে পারব না। এই কথাটা জানবে কেবল তুমি আর আমি।
আর জানতো সে ডাক্তারটা।
যেহেতু তোমার দাদু এবং মামারা আমাকে খুব একটা পছন্দ করত না তাই তোমার মাকে বলেছিলাম প্রথমে তুমি গিয়ে আমাদের ব্যাপারটা বলো, আমি পরের দিন তোমাদের বাড়িতে যাব এবং বিয়ের বন্দোবস্ত করতে বলবো। আমার তো তিন কূলে আত্মীয় বলতে কেউ নেই তাই আমি পরেরদিন একাই যাব ঠিক করি তোমার মা আর আমার বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে।
কথামতন আমি অপেক্ষা করতে থাকি পরের দিনটার সূর্য ওঠার জন্য , কখন তোমার সন্ধ্যা -নিজের বাবা কে ,দাদাদের রাজি করিয়ে , আমাকে তোমার দাদু ও মামাদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলাতে নিয়ে যাবে তোমার মা।
সেদিন রাত্রে এমনিতেই আমার ঘুম আসছিল না বিছানায় শুয়ে ছিলাম ,হঠাৎ জোরে ধাক্কা মেরে ভিতর থেকে দরজার ছিটকিনি খুলে কয়েকটা লোক আমার ঘরে ঢুকে পরে । তাদের প্রত্যেকের হাতেই শাবল আর ধারালো অস্ত্র। আমার হাত, পা , মুখ সব বেঁধে দিচ্ছে ওরা । তারপর আর আমার আর কিছু মনে নেই, আমার মুখের মধ্যে কিছু একটা চাপা দিয়ে আমার কে অজ্ঞান করে দেয় ওরা।
তার দুদিন পর আমার জ্ঞান ফেরে , তখন আমি একটা হসপিটালে বেডে শুয়ে রয়েছি আর ডান পায়ে দিকটা ভীষণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকি। জ্ঞান ফিরতে চিৎকার করতে থাকি , দৌড়ে আসে একজন নার্সা ,তারপর ডাক্তার , ওরা এসে আমাকে বলতে থাকে ....আপনি শান্ত হন, আপনি শান্ত হন, তারপর জানায় , আপনার ডান পা টা কেটে বাদ দিতে হয়েছে, তা না দিলে এতটাই ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল আপনার ডানপায়ে জখম লেগে যে ইনফেক্শনটা ছড়িয়ে সারা শরীরে চলে যেত , আপনাকে হয়তো আর বাঁচানো যেত না, তাই আপনার পা টা বাদ দিতেই হলো।
তখন আমার অবস্থাটা যে কি হয়েছিল তোমাকে আর আমি বলে এখন বোঝাতে পারবো না।
দুদিন পর স্থানীয় এলাকার মানুষেরা কাঠ কাটতে এসে আমাকে একটা বড় পাথরের খাঁজে পরে থাকতে দেখে। সেই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে তারা ভেবেছিল আমি নাকি মরে গেছি, সেটা হলেই হয়তো ভালো হত ,কিন্তু ভগবান আমাকে পঙ্গু করে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।
গভীর রাতে যখন উচু টিলা থেকে হাত-পা মুখ বেঁধে যখন আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তখন হয়তো উঁচু টিলা থেকে পড়ার সময় ডান পা টা সজরে গিয়ে পাথরের গড়াতে গড়াতে ধাক্কা লাগে আমার,আর পাথরের ফাঁকে ঢুকে যায় পা টা আর আমি অচৈতন্য অবস্থায় দুদিন পরে থাকি, প্রচন্ড রক্ত পড়েছিল মনে হয়। সেটা আমি ঠিক বলতে পারব না কিন্তু আমার পা টা চিরতরে বাদ চলে যায়।
আমার কাছে কোন যুক্তিযুক্ত প্রমাণ ছিল না ,তোমার মামাদের ভাড়া করা গুন্ডারা যেহেতু গামছায় মুখ বেঁধে এসেছিল তাদের আমি চিনতেও পারিনি। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলাও করতে পারিনি। এটা একটা কেবল এক্সিডেন্ট ছিল এর বেশি আমি কিছুই প্রমাণ করতে পারিনি।
বিল্টু মুখ বুজে চুপচাপ সব কথা শুনে যাচ্ছে একটা কথা আর বলছে না।
তারপর দুমাস পর আমি বাড়ি ফিরে এসে দেখি সন্ধ্যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, আমি পাগলের মতো সন্ধ্যা কে খুঁজতে থাকি,তোমার দাদু-মামারা সন্ধ্যা কে এতটা চুপিসারে, এতটা তাড়াতাড়ি যে বিয়ে দিয়ে দেবে আমি ভাবতেও পারিনি।
তখনকার দিনে তো মোবাইল ছিল না যে কল করব, তাই এলাকার লোকেদের কাছ থেকে সন্ধ্যার কোথায় বিয়ে হয়েছে সে জায়গাটার ঠিকানা জোগাড় করি।
আমি জানতে পারি তোমার মায়ের ওয়েস্ট বেঙ্গলে বিয়ে হয়েছে ,তাই আমি ওয়েস্ট বেঙ্গলে যাই এবং বেশ কয়েকদিন সেখানে ঘোরাফেরা করতে থাকি এবং তোমার মার কোথায় বিয়ে হয়েছে, কোন বাড়িতে বিয়ে হয়েছে তার ঠিকানা জোগাড় করতে থাকি। আমি ওয়েস্ট বেঙ্গলের বিশেষ কোনো জায়গা চিনতাম না। কিন্তু অনেক কষ্টে বিভিন্ন লোকজনের সাহায্যে খবর নিয়ে আমি তোমার মায়ের নতুন বিয়ে হওয়া বাড়ির সন্ধান পাই ।
আমি লক্ষ্য করতে থাকি তোমার বাবা ব্যবসার কাজে কখন বাড়ি থেকে বের হয় ,আর কখন বাড়িতে থাকে। আমি লক্ষ্য করেছিলাম তোমার বাবা সকাল দশটার পর বাড়িতে থাকে না আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমি তোমার মা -সন্ধ্যার সাথে দেখা করতে যাই। দরজার বেল বাজাতেই তোমার মা দরজা খুলে দেখে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি ,তোমার মার সামনে। আমাকে দেখে চমকে ওঠে, -আমাকে দেখে আর আমার হাতে ক্র্যাচেরস দেখে । সন্ধ্যা আমাকে দেখার পর এক রাশ রাগ, অভিমান, ক্ষোভে ফেটে পরে। আমার হাতে কেন ক্র্যাচেরস ,আমার পায়ে কি হয়েছে সে কথা জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধও করেনি তখন।
সাথে সাথে তোমার মা আমাকে দেখে বলতে থাকে তুমি এক্ষুনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও শয়তান , বেইমান, নির্লজ্জ, পাপী।
আমি দরজার সামনে তখন দাঁড়িয়ে তোমার মায়ের সমস্ত অপমান সহ্য করছি ,তারপর আমি তোমার মাকে বললাম আমি যদি এতটাই পাপী, এতটাই বেইমান ,এতটাই নির্লজ্জ হয়ে থাকি তাহলে আজ কেন তোমার কাছে এসেছি তোমার সাথে দুটো কথা বলতে। আমি চাইনা তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি বলে তুমি অসুখী হও।
আমি শুধু তোমার কাছে কয়েকটা কথার উত্তর শুনতে চাই।
সনজু : তুমি আমাকে ফেলে কেন বিয়ে করে নিলে সন্ধ্যা ?সেদিন রাত্রে ঠিক কি হয়েছিল সবকিছু খুলে বল আমাকে!!!
সন্ধ্যা আমাকে ঘরের ভিতরে গিয়ে সোফায় বসতে বললো ।
সন্ধ্যার চোখে তখন আমার উপর অভিমানের জল , সন্ধ্যা আমাকে বললো , সেদিন কথা মত বাড়িতে বাবা-দাদা দের কে বলেছিলাম যে , আমি সনজু মাস্টারকে ভালোবাসি, আর ও আমাকেও খুব ভালোবাসে ,তাই আমরা দুজন দুজনকে বিয়ে করতে চাই।
আমার বাবা দাদারা তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি ও হয়ে যায় কিন্তু তার ঠিক পরের দিন আমি জানতে পারি তুমি বাড়ি থেকে পালিয়েছো। তুমি বাড়ি থেকে চম্পট দিয়েছিলে
কারণ তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে বলে । তখন আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ধোকা দিয়েছো। তুমি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলে আর সেই মুহূর্তে আমার অবস্থাটা কি তুমি সেটা ভালোই বুঝতে পারছ তখন আমি একমাস হল অন্তঃসত্তা ,বাড়িতে আমি আর কিছু বলিনি আমি যে একমাসের সন্তান সম্ভবা কিশোরী।
বাড়িতে বাবা, মা, দাদারা আমার জোর করে বিয়ে দেবার জন্য তোর জোর শুরু করে দেয়। আমাকের ওরা জোরকরে বিয়ে দিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী অবিনাশ দাস এর
সাথে ,ওয়েস্টবেঙ্গলে। বিয়ের পর আমি ওয়েস্টবেঙ্গলে চলে আসি।
এদিকে আমি এক মাসের অন্তঃসত্তা , বাড়িতে কিছুতেই এই ব্যাপারটা আমি মুখফুটে বলতে পারিনি, বাবা-দাদা দের।
আমি তখন রাগে , দুঃখে, অভিমানে, অপমানে এই সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম আমার গর্ভে যে একমাসের ভ্রূণ সন্তান রয়েছে সে তো কোন দোষ করেনি , তাই আমি তাকে জন্ম দেব , এই সিদ্ধান্তই নি।
তোমার মা সন্ধ্যা তখন আমাকে বলে আমার গর্ভে যে সন্তান লালিত পালিত হচ্ছে তাকে আমি ভবিষ্যতে অবিনাশ দাসের পিতৃ পরিচয়েই বড় করব আর সেই কথা যেন তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীতে কেউ ,কোনোদিন জানতে যেন না পারে। তুমি যদি সত্যি সত্যিই আমাকে ভালবেসে থাকো ,তাহলে তুমি চাইবে যে ,আমি সুখে শান্তিতে থাকি , তাই তুমি এই কথা পৃথিবীতে কোনদিন কাউকে বলবে না। কথা দাও।
আমি শুধু তোমার মাকে এই কথা টুকুই বলেছিলাম যে , ঠিক ,আছে। তোমার সুখী দাম্পত্যের ভাগিদার হয়ে ,তোমাকে আমি কোনোদিন বিরিক্ত করবো না ,তুমি সুখী থাকো ,আমি সেটাই চাই। কিন্তু যদি কোনোদিন আমার নিজের রক্তের সন্তান এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে- তোমার -আমার কথা , তার পরিচয়ের কথা, কেবলমাত্র আমার রক্তের সন্তানকে দেখে ,আমার পিতৃসত্তাকে বিসর্জন দিতে পারবো না সন্ধ্যা। কারণ আমার সেই রক্তের সন্তানের সত্যিটা জানার অধিকার রয়েছে।আমি অন্তত তাকে মিথ্যে কথা বলতে পারব না।
বিল্টু তখন আরেকবার সনজুর কাছে গিয়ে ডান হাতের থাবা বসিয়ে ,সনজুর গলা চেপে ধরে আর দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে: গল্পটা ভালই ফেঁদেছিস বল, তার মানে তুই বলতে চাস তুই আমার বাপ।
বিল্টু সনজু র গলা গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোরে টিপে ধরে,সনজু বিল্টুর হাত টা গলা থেকে কোনোরকমে ছাড়িয়ে নিয়ে ,হাঁপাতে ,হাঁপাতে বলে ,--- আমি মিথ্যা কথা বলতেই পারি , তোমাকে বিল্টু , কিন্তু ডি.এন. এ টেস্টের রিপোর্ট কিকরে মিথ্যা বলবে । ....বিল্টু
বিল্টু তখন রাগে ,দুঃখে ,অভিমানে বলতেথাকে : আজই মাকে নিজের আসল পিতৃ পরিচয় এর কথা বলব? কেন তুমি এতদিন আমাকে মিথ্যা কথা বলেছ, কেন তুমি আমাকে সবকিছু গোপন করে রেখেছ ,আমার আসল পরিচয় কে কেন তুমি আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছো।.....বলতে বলতে কান্নায় মাটিতে বসে পরে। ..
সনজু ধীর গলায় বললো বিল্টু তোমার আর আমার মধ্যে শর্তে থাকা তিন নম্বর শর্তটা কি তুমি ভুলে যাচ্ছ , এ কথা তুমি কোনদিন কাউকে বলতে পারবে না। আর এটাও বলেছিলাম যদি তুমি কাউকে বলো তাহলে তোমার আপন কারুর ক্ষতি হবে, সে হয়তো পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। তুমি যেদিন বাবা হবে, সেদিন হয়তো বুঝবে, আজ আমি কেন তোমাকে তোমার আসল পিতৃ পরিচয় এর সত্যি কথাগুলো বলতে বাধ্য হয়েছি।
কারণ একজন পিতার কাছে তার রক্তের সম্পর্কের সন্তান কে নিজের পিতৃ পরিচয় কে গোপন করতে আমি পারিনি ,বিল্টু ,আমি তোমার মায়ের কাছে বেইমান, নির্লজ্জ, পাপী হতে পারি ,কিন্তু নিজেই নিজের পিতৃ সত্তাকে কে তো অস্বীকার করতে পারবো না আমি।
তুমি তোমার মাকে একথা বলতেই পারো ,তার আগে ভাঙ্গা কাঁচের গ্লাসটা আমার পেটের ঢুকিয়ে আমাকে মেরে ফেলো। তারপর তুমি বাড়ি চলে যাও, পরের দিন পুলিশ এসে জানবে- আমি -নিজে কে নিজে -শেষ করে দিয়েছি। সুইসাইড করেছি।
আমি চাইনা আমার মুখ দিয়ে তোমাকে বলা সব সত্যি কথা তোমার মা জানুক। সন্ধ্যা হয়তো জানবে আমি তার ক্ষতি চাই , তার সংসার ভেঙে দিতে চাইছি। কিন্তু বিশ্বাস করো বিল্টু আমি চাই না তোমার মার সংসারটা ভেঙে যাক।
তুমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছো বলেই তোমাকে আমি সত্যি কথা বলতে বাধ্য হলাম তোমার মার সংসারটা ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়।
বিল্টু বললো সনজু কে ---তারপর মার কাছে সব সত্যি জানবার পর কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ?
তারপর কথা বলা শেষ হতেই আমি ক্র্যাচেরস এর সাহায্যে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেটদিয়ে বেরোবার সময় তোমার মা আমাকে বলেছিলো ,সনজু দা ,তোমার পায়ে কি হয়েছে , আমি তখন দরজারসামনে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তোমার মাকে বলেছিলাম , আমার পায়ের কথা তোর না জানলেও চলবে , বেঁচে আছি সেটাই দুর্ভাগ্য ,তবে তুই সুখে থাক , স্বামীর ঘর কর ,তোকে আমি কোনোদিন বিরিক্ত করতে আসবো না। কোনো দিন ও না। এইবলে চলেআসি। সন্ধ্যার লেখা আমার কাছে থাকা সমস্ত চিঠি আমি বাড়িফিরে এসে আমি পুড়িয়ে ফেলি। সন্ধ্যার কোনো স্মৃতি আমি আমার জীবনে রাখতে চাইনি আমি। শুধু ওই চিরকুটের আই লাভ ইউ টু ! লেখাটা ছাড়া।
সনজু মাস্টারের দুর্ঘটনার ব্যাপারটা সন্ধ্যা পরে অবশ্য বাপের বাড়িগিয়ে শুনেছিলো ঠিকই কিন্তু সেটা বাবা , দাদা দের মুখথেকে , আর এটাই জানতো সনজু মাস্টারের পা এর দুর্ঘটনাটা কেবল একটা দুর্ঘটনা বলেই জানতো সন্ধ্যা।এটা যে তার দাদাদের কীর্তি বলে জানতো না সন্ধ্যা। ঠিক তেমনি সনজু র কাছেও দুর্ঘটনার কোনো সুযোগ্য প্রমাণ ও ছিলোনা।
তাই সনজু মাস্টারও সন্ধ্যাকে তার দুর্ঘটনার সত্যি কথাটার আসল রহস্য খোলসা করে বলেনি কোনোদিন ,কারণ সনজু মাস্টার চেয়েছিলো সন্ধ্যার যখন বিয়ে অন্য লোকের সাথে হয়েই গেছে , তখন সন্ধ্যার সুখী জীবনে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে চায়নি সনজু মাস্টার।
আর সন্ধ্যা এটাই সঠিক বলে মনে করেছিল যে , সনজু মাস্টারের সাথে যখন সময়মতো বিয়েটা হয়নি তাই আর সনজু মাস্টারের দুর্ঘটনা টা কি ভাবে হয়েছিল ,কখন হয়েছিল জানার বিষয়ে নিয়ে আর বেশিদূর জলঘোলা করে নতুন বিয়ে হয়ে আসা একটা পরিবারকে সমস্যায় ফেলতেও চাইনি সন্ধ্যা।
এদিকে তখন ভোর হয়ে এসেছে।
বিল্টু সব সত্যি জানবার পর বিল্টুর মাথা তখন বন বন করে পাক খাচ্ছে। এই সনজু মাস্টার হল তার আসল বাবা। বিল্টু এরপর সনজু মাস্টারের সাথে তাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সব কথা জানিয়েছিল ,কেন তারা এখানে এসেছে , এবং ডাকু মঙ্গল সিং তাদের জমি দখল করে নিয়েছে , এবং তারসাথে আজই তাদের থানায় দেখা হবে। এইসব কথা বলাতে সনজু বিল্টুকে বললো :আমার যদি টাকা থাকতো আমি তোমাকে কম্পিউটার ইঞ্জেনিয়ারিং পড়ার সমস্ত ব্যায়ভার নিয়েনিতাম ,কিন্তু আমি এখন নিজেই নিঃস্ব হয়ে বেঁচে রয়েছি। তবে আমার যা সাহায্য লাগবে ,আমি করবো ,তোমাদের দরকার হলে ,আমার সর্বস্য দিয়ে সাহায্য করবো। কারন তুমি আমরা ছেলে।
বেশ কিছুক্ষন সনজু মানে বিল্টুর আসল বাবার সাথে কথাবার্তা চলতে থাকলো।
সকালের দিকে বিল্টু যাবার আগে সন্জুকে বিল্টু বললো :আসছি ,নিজের খেয়াল রেখো। আবার দেখা হবে। ।
বাড়িতে ফিরে বিল্টু সন্ধ্যাকে কিছু বললো না ,কারন বিল্টু জানতো পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না ,মা কেই সামলাতে হচ্ছে। তাছাড়া শর্ত অনুসারে সনজুর দেয়া কথাগুলো যে সে প্রকাশ করতে পারবেনা সে কথা বিল্টুর অস্বীকার কারবার সাহস দেখতে পারলোনা ।
তাই বিল্টু ব্যাপারটা চেপেই গেল। শুধু বুকে বেঁধে থাকলো একরাশ অভিমান।