বুকুন - অধ্যায় ১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-6207-post-260309.html#pid260309

🕰️ Posted on March 16, 2019 by ✍️ Uttam4004 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2407 words / 11 min read

Parent
বুকুন ১. কাল বাড়ি পৌঁছতে বেশ রাত হয়েছে, তারপর মায়ের সঙ্গে একটু গল্পগুজব করে ঘুমিয়েছি। তাই আজ সকালে মা যখন চা নিয়ে ডাকাডাকি করছে, তখন আমি গভীর ঘুমে। এক তো কলকাতা থেকে এতটা জার্নির ক্লান্তি, তারপর অত রাতে ঘুমনো। তাই উঠতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু তারপরেই খেয়াল হল অঞ্জলি দিতে হবে। আজ সপ্তমী। অনেকদিন পরে পুজোর সময়ে গ্রামে এসেছি। রোজই অঞ্জলিটা দেব ভেবে রেখেছি। ঝট করে উঠে পড়ে দরজা খুলে এসে দেখি মা চায়ের কাপটা নিয়ে গিয়ে খাবার ঘরে টেবিলের ওপরে রাখছে। আমাদের এই গ্রামের বাড়িতে ঘরের সঙ্গে লাগানো বাথরুম নেই। তাই মাকে বললাম, ‘চা টা ঢাকা দিয়ে রাখ। আমি বাথরুম থেকে আসছি।‘ ফিরে এসে চা খেয়ে বাথরুমে গিয়ে স্নান করে বেরলাম একেবারে। পিয়ালী - আমার বউ - সুটকেসের কোন জায়গায় যে পাজামা পাঞ্জাবিগুলো দিয়েছে! দুটে পাজামা আর গোটা তিনেক পাঞ্জাবি দিতে বলেছিলাম ওকে। একটু নীচের দিকে ছিল। খুঁজে পেয়ে একটা আকাশী নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়লাম। তারপর সাইকেলটা বার করতে করতে মাকে বললাম, ‘বেরলাম। অঞ্জলি দিয়ে একটু ঘুরে টুরে আসব।‘ ছোটবেলার চেনা জায়গাতে আজকাল আর পুজোটা হয় না। ওখানে বাড়িঘর হয়ে গেছে। তাই একটু দূরের মাঠে সরে গেছে আমাদের গ্রামের বারোয়ারি পুজো। ছোটবেলায় দলবেঁধে সকালবেলা চলে আসতাম প্যান্ডেলে। দুপুরে একটু স্নান খাওয়া করেই আবার সেই রাত অবধি। ঠাকুর দেখতে বেরনোর অত ব্যাপার ছিল না আমাদের তখন। কয়েক বছর পরপর হয়তো কাছের টাউনের দিকে নিয়ে যেত কাকারা কেউ। না নিয়ে গেলেও আমাদের মাথা ব্যাথা ছিল না। পুজোর সময়ে সারাদিন খেলতে পারাটাই আনন্দের। এইসব ভাবতে ভাবতেই সাইকেল নিয়ে পুজোর মাঠে হাজির।  একদিকে সাইকেলটা রেখে প্যান্ডেলের ভেতরে ঢুকে দেখি অনেকলোক অঞ্জলি দিতে দাঁড়িয়ে গেছে। এরপরের বার হয়তো আমার জায়গা হবে।  যে ভদ্রমহিলা স্টেজের ওপরে দাঁড়িয়ে সবার হাতে ফুল দিচ্ছিলেন, তার মুখটা বেশ চেনা চেনা লাগছিল। গ্রামেরই কেউ হবে, সেটা তো নিশ্চিত। কিন্তু ঠিক কে, সেটা মনে করে উঠতে পারলাম না। এমনিতেই কলেজের সময়ে থেকে আর গ্রামে থাকি না, আর এখন তো বছরে এক আধবারই আসা হয়! তাই ঠিক চিনতে পারছিলাম না কে ওই ভদ্রমহিলা। প্রথম ব্যাচের অঞ্জলি শেষ হল। সবাই শান্তি জল নিয়ে আস্তে আস্তে জায়গা ছাড়তে শুরু করল। আমি এগিয়ে গেলাম একটু। ওই ভদ্রমহিলা আবারও ফুলের ঝুড়ি নিয়ে সবাইকে ফুল দিতে শুরু করলেন। আগে তো দূর থেকে দেখছিলাম, এখন কাছ থেকে দেখছি। আরও বেশী চেনা মনে হচ্ছে, কিন্তু মনে করতে পারছি না কে! ভদ্রমহিলা একটা সুন্দর তাঁতের শাড়ি পড়েছেন – লালপাড় দেওয়া। মাথায় সিঁদুর। কাজের সুবিধা হবে বলে শাড়ির আঁচলটা পেঁচিয়ে কোমরে গুঁজে দিয়েছেন। সামান্য মেদ আছে কোমরের কাছে। ঘামে ভিজে গেছে উনার বগলটা। হাত বাড়িয়ে রয়েছি আমি, ফুল নেওয়ার জন্য। আমার দিকে ফুলভর্তি হাতটা এগিয়ে দিয়ে কয়েক সেকেন্ড হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রমহিলা। তারপর বলে উঠলেন, ‘আরে রবিদা না? কবে এসেছিস?’ গলার স্বরটাও খুব চেনা, আমাকে দাদাও বলে আবার তুই-ও বলে! কিন্তু মনে করতে পারছি না কেন এ কে? আমি মাথা নেড়ে ভদ্রতা করে একটু হেসে বললাম , ‘কাল রাতে।‘ আশপাশের সবাইকে ফুল দিতে দিতেই উনি বললেন, ‘আমাকে চিনতে পারছিস তো, নাকি?  আমি একটু বোকা বোকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম যে উনাকে চিনেছি। বুঝতে দিলাম না যে চিনতে পারি নি উনাকে তখনও। ‘কত্তদিন পরে দেখলাম তোকে রে!’ এই একটা শব্দ – ‘কত্তদিন’টা শুনেই মনে পড়ে গেল। এইভাবে কত্তদিন একজনই বলত। ঝট করে মনে পড়ে গেল, বু-কু-ন...  আমার ছোটবেলা, বড় হয়ে ওঠার সঙ্গী.. আরও কত কিছু প্রথম পাওয়া ওর কাছ থেকেই ‘বু-কু-ন তো?’ আমার গলায় তখনও একটু অনিশ্চয়তা। ‘যাক চিনেছিস তাহলে! অঞ্জলি দিয়ে চলে যাস না কিন্তু।‘ পুরোহিত মশাই মন্ত্র পড়তে শুরু করেছেন। আমি মা দুর্গার দিকে তাকিয়ে মন্ত্র পড়ছি বিরবির করে আর মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছি বুকুনের দিকে। একবার চোখাচোখিও হয়ে গেল। ও ঠোঁট টিপে একটু হেসে মুখটা ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে। অঞ্জলির শেষে প্যান্ডেলের বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। কত স্মৃতি ভিড় করে এল মনের মধ্যে।  এরকমই একটা পুজোর দিন ছিল সেটা – সরস্বতী পুজো। -- ২ বুকুন আমার থেকে বছর খানেকের ছোট। কাছাকাছিই বাড়ি, ওর মা কে কাকিমা বলে ডাকি ছোট থেকেই। কাকা বাইরে চাকরী নিয়ে চলে গেল, আর আমি পেলাম কাকার সাইকেলটা। সময় পেলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আর টোটো করে ঘুরে বেড়াই বন্ধুরা মিলে। কয়েক বছর আগেই একটু লায়েক হয়েছি। মেয়েদের দিকে নজর টজরও দিতে শুরু করেছি। তবে গ্রাম এলাকা – মেয়েরাও সব এলাকারই কাকা, জেঠাদের – বেশী তাকানোর সাহস হত না। কিছুদিনের মধ্যেই বুকুন বায়না ধরল, ‘এই রবিদা, আমাকেও সাইকেল চালানো শিখিয়ে দে না রে।‘ আমি প্রথম কয়েকদিন একটু দাদাগিরি দেখালাম, ‘না না পড়ে যাবি। কাকিমা বকবে আমাকে।‘ তবুও সে ছাড়ে না, মাঝে মাঝেই বায়না ধরে সাইকেল চালানো শিখবে বলে। বেশ কয়েক মাস কাটিয়ে দিলাম এই করে। কিন্তু ওর বায়না থামে না আর। আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার প্রথম কিছুটা পাকা রাস্তা ছিল, কিন্তু তারপর মাঠ পেরিয়ে যেতে হত। পাকা রাস্তা ছেড়ে মাঠে নামার পরে আমি একদিন বাধ্য হয়ে বললাম, ‘আচ্ছা, বোস সাইকেলে।‘  আমার বন্ধুরা একটু আগেই নিজের নিজের বাড়ির দিকে চলে গেছে। আমি সাইকেলটা ধরে রেখে বুকুনকে চড়া শেখানোর মধ্যেই খেয়াল করলাম এই প্রথম একটা মেয়ের অত কাছাকাছি আছি আমি। সাইকেলের সিটটা শক্ত করে ধরে আছি যাতে ও না পড়ে যায়।  বেশ মজা পেলাম আমার সদ্যপ্রাপ্ত শিক্ষকতার কাজটা। বুকুন বলল, ‘তুই আমাকে চালিয়ে নিয়ে চল। আজ আর শিখব না। পা ব্যথা করছে।‘ কাকার সাইকেলে আবার পেছনে কেরিয়ার ছিল না, সামনে বাস্কেট লাগানো ছিল। তাই বুকুনকে সাইকেলের রডেই উঠতে হল। এসবে ও অভ্যস্থ বাবা কাকাদের সাইকেলে চেপে চেপে। আমি সাইকেলে উঠে বসার পরে বুকুনও উঠল। আমার বুকটা একটু ধুকপুক করছে। ও কিন্তু বেশ স্মার্টলি একদিকে সাইড করে রডের ওপরে চেপে বসে পড়ল। হ্যান্ডেলটা ধরে বলল, ‘কী রে রবিদা, চল!’ আমি প্যাডেল করতে লাগলাম। শীতের বিকেল। গ্রামের দিকে তখন বেশ ঠান্ডা। কিন্তু আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। সোয়েটার পড়েও গরম লাগছে বেশ। ওর হাত আমার হাত ছুঁয়ে রয়েছে। ওর চুলের গন্ধ পাচ্ছি।  ও কীসব যেন বকবক করছিল, আমার কানে সেসব ঢুকছিল না তখন। হার্টের শব্দটা যেন সেদিন এমনি এমনি-ই শুনতে পাচ্ছি। এইসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে খেয়াল করি নি মাঠের রাস্তায় একটা বড়সড় মাটির ঢেলা পড়েছিল। সেটাকে শেষ মুহুর্তে কাটাতে গিয়ে ব্যালান্সটা গেল আর হুড়মুড় করে পড়লাম দুজনে – সঙ্গে সাইকেলটা। বুকুনের ‘আআআআ পড়ে গেলাআআম’ শুনেই আমার সম্বিৎ ফিরল। কিন্তু ততক্ষণে সাইকেল আর আমার নিয়ন্ত্রনে নেই।  আমি আর বুকুন আছাড় খেলাম.. প্রায় জড়াজড়ি করে, আমাদের ওপরে পড়ল সাইকেল। কিন্তু সেই বয়সেও শিভালরি-টা তো দেখাতে হবে। তাই ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম। তারপরে সাইকেলটা এক ঝটকায় তুলে নিয়ে স্ট্যান্ড করালাম। বুকুন তখনও পড়ে আছে। ওকে হাত ধরে তুললাম। তারপর দেখি ওর সাদা সালোয়ার কামিজটায় ধুলো লেগে গেছে বেশ। ‘কী রে লাগল?’ ‘তুই কি কানা? আমি বলছি সামনে বড় মাটির ঢেলা দেখ দেখ – তোর কানে ঢোকে নি?’ কথাটা বলতে বলতে নিজের সালোয়ার কামিজটা ঝাড়ছিল ও। আমি বললাম, ‘আমিও দেখেছি। তুই ছিলি বলে কাটাতে গিয়ে ব্যালান্স হারালাম। এ বাবা তোর ড্রেসটা গেল। ইশ কতটা ধুলো লেগেছে রে।‘ বলে আমিও ওর সঙ্গে ধুলো ঝাড়ায় হাত লাগাতেই বুকুন বলল, ‘থাক তোকে আর আমার জামা থেকে ধুলো ঝাড়তে হবে না।‘ আমি ওকে আরও একটু ছুঁয়ে নেওয়ার আশায় বুকুনের কথায় কান না দিয়ে ওর পিঠ, কোমর আর কোমরের পেছন দিকটা একটু ঝেড়ে দিলাম। নিজের অজান্তেই বোধহয় একটু চাপটাপও দিয়ে দিয়েছিলাম।  এবার বুকুন ধমক দিল, ‘এই রবি দা! কী হচ্ছে ! ধুলো ঝাড়ার নাম করে এদিক ওদিক হাত দিচ্ছিস না? জেঠিকে বলে দেব কিন্তু!’ বলে একটা ফিচেল হাসি দিল। আমি বললাম, ‘তোকে তো হেল্প করছিলাম। পেছন দিকে কত ধুলো লেগেছে!’ ও নিজেই নিজের পেছন দিকটা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, ‘তোকে আর হেল্প করতে হবে না। বাড়ি চল। পায়ে এমনিতেই ব্যথা ছিল, এখন আরও ব্যথা করছে।উ:’ ‘হাঁটতে পারবি?’ ‘হুম। আস্তে আস্তে চল।‘ দুপা যেতে না যেতেই আবারও কঁকিয়ে উঠল বুকুন। ‘উফ। কোমরে লেগেছে রে খুব। এদিকে কাৎ হয়ে পড়লাম তো। তুই একটা গাধা জানিস। আবার আমাকে সাইকেল চালাতে শেখাবেন উনি,’ ধমক দিল বুকুন।  কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। শীতের বিকেলে আলো বেশ কমে এসেছে, কিন্তু ওর মুখে চোখে ব্যথার ছাপ স্পষ্ট। ‘তুই সাইকেলে ওঠ বুকুন। আর ফেলব না। হেঁটে বাড়ি যেতে পারবি না।‘ ‘তোর সাইকেলে আমি আর উঠছি না। তুই বরঞ্চ একটু দাঁড়া, এখানটাতে একটু বসি। একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।‘ রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ বসে রইল ও। আমিও পাশেই বসলাম। আমাকে সমানে ধমক দিয়ে চলল আর নিজেই কোমরটা মাসাজ করতে থাকল বুকুন। একবার ভাবলাম যে বলি আমি কোমরটা একটু টিপে দেব কী না, কিন্তু ধুলো ঝাড়তে গিয়ে যা ঝাড় খেয়েছি, তারপরে আর কোমরে মাসাজ করে দেওয়ার কথা বলি!!! ‘চল রবি দা। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। মা কী ভাবছে কে জানে! সাইকেলেই নিয়ে চল,’ বলল বুকুন। আবারও ওকে সাইকেলের রডে উঠিয়ে প্যাডেল ঘোরালাম। এবার বেশীই সতর্ক হয়ে। কদিন পরেই সরস্বতী পুজো। সেসময়ে তো আর ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল না। আমাদের কাছে সরস্বতী পুজোটাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সেদিন একটু স্বাধীনতা দিত বাবা মায়েরা। বাড়ির পুজোতে কোনও মতে অঞ্জলি দিয়েই সাইকেল নিয়ে ছুটেছিলাম। বুকুন বলে দিয়েছিল আজ ওর বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরবে, ওকে যেন ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। আবার ফেরার পথেও যেন আসি। অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যেন কোথাও না চলে যাই। বুকুনকে ওর বাড়ি থেকে ডাকতে গেলাম। সে দেখি বাসন্তী শাড়ি আর ব্লাউজ পরে সেজেগুজে রেডি। কাকিমা বলল, ‘রবি একটু প্রসাদ খেয়ে যা।‘ বসলাম। প্রসাদ কোনও মতে খেয়ে নিয়েই দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। কাকিমা বলে দিলেন, ‘বিকেল বিকেল ফিরবি। দূরে কোথাও যাস না যেন।‘ আমরা মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলে রওনা হলাম। ‘শাড়ি পড়ে সাইকেলে বসতে পারবি?’ জিগ্যেস করলাম। ‘হেঁটেই চল না আজ। অ্যাই রবিদা, কেমন লাগছে রে আমাকে শাড়ি পড়ে?’ ওর দিকে একটু তাকিয়ে নিয়ে বললাম, ‘দা-রু-ণ।‘ একটু যেন লজ্জা পেল। আজকের আসল মজাটা তো লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া হবে আজ – বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছি। মেয়েরাও সব বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে পরী সেজে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের স্কুলের পুজোর পরে প্রসাদ আর দুপুরে লুচি ছোলার ডাল আর আলুর দমের প্যাকেট নিয়ে আমরা কজন বন্ধু বিলের মাঠের দিকে গিয়েছিলাম। লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার জন্য ওর থেকে যে ভাল জায়গা আর হয় না, সেটা আমাদের আগের কোনও ব্যাচের ছেলেরা অনেক বছর আগে ঠিক করেছিল। তারপর থেকে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।  ছেলেদের সিগারেট খাওয়ায় হাতেখড়ির পার্মানেন্ট জায়গা বিলের মাঠ। একদিকে বিল আর অন্যদিকে বড় মাঠের ধারে ঝোপঝাড়। ঝোপের আড়ালে বসে পড়লে কারও দেখার কোনও চান্স নেই। আর এদিকটায় কেউ সকাল-দুপুর কোনও সময়েই বিশেষ আসে না। সন্ধের পরে শুনেছি নেশা করতে আসে কেউ কেউ। বিলের মাঠে যাওয়ার জন্য দুটো সিগারেট নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে একটা দেশলাইয়ের বাক্স। সবই ঝাড়া।  আমাদের কাউকেই গ্রামের দোকানে সিগারেট কিনতে দেখলেই বাড়িতে পৌঁছনর আগেই খবর চলে যাবে। তারপর যে কী হবে, সেটা আর নাই-বা বললাম। তাই অতি কষ্টে যোগাড় করা হয়েছে সিগারেট দুটো। বিলের মাঠে গিয়ে তো দেখি আরও আমাদের বয়সী আরও কয়েকজন সেখানে হাজির। তারমধ্যে আবার আছে আমাদের লাল্টু মার্কা ফার্স্ট বয় শ্যামলও।  ও যে স্যারেদের চর, সেটা আমরা সবাই জানি। তাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও নিজেই আশ্বস্ত করল, যে ‘প্রমিস কাউকে বলব না। বললে তো আমিও কেস খাব রে শালা।‘ সেই প্রথম সিগারেট খাওয়া। সকলেই কেশে অস্থির। কারও কাছে জলও নেই। কোনওমতে সিগারেটগুলো শেষ করে পুজোর কাছে ফিরে এলাম সবাই। স্কুলের টিউবওয়েলে ভাল করে মুখ টুখ ধুয়ে আবারও একটু প্রসাদ খেয়ে মুখের গন্ধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।  কেউ বলল, ‘চল পান খাই।‘ সকলে মিলে পান কিনে মুখের গন্ধ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে করতেই খেয়াল হল, আরে বুকুন তো বলেছিল ওকে ডাকতে। আমি বন্ধুদের বললাম, ‘আমি চলি রে। গার্লস স্কুলের বুকুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।‘ ওরা একটু আওয়াজ দিল আবারও, ‘বাড়ি যাবি তো নাকি অন্য কোথাও?’ ‘ধুর শালা।‘ সাইকেল চালিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলাম বুকুনের স্কুলে।  এদিক ওদিক তাকাতেই কোথা থেকে আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে বুকুন এসে হাজির। ‘কীরে রবিদা, এত দেরী করলি? প্রসাদ খাবি তো?’ ওর বন্ধুদের কে একজন যেন বলল, ‘ভাল করে প্রসাদ খাওয়া রবিকে।‘ এই আওয়াজ দেওয়াতে বুকুনও একটু লজ্জা পেল। বলল, ‘প্রসাদটা খেতে খেতেই চল।‘ ওর দুই বন্ধুও স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এল। গেটের একটু বাইরে দেখি আমার আরও দুই বন্ধু।  ‘কি রে তোরা এখানে? ভেতরে গিয়ে প্রসাদ নিয়ে আয়।‘ ওরা দুজন আমাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেছে মনে হল। বুকুন আর ওর অন্য দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে কী যেন ফিস ফিস করে বলল। বুকুন আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, ‘অ্যাই রবিদা, এখনই বাড়ি যাবি? নাকি একটু বিলের মাঠে যাবি রে? আমার বন্ধুদুটোর সঙ্গে তোদের স্কুলের ওই দুটো ছেলে বিলের মাঠে যাচ্ছে। যাবি তুই?’ এবার আমার ঘাবড়ে যাওয়ার পালা। বিলের মাঠে তো আমরা সিগারেট খেতে গিয়েছিলাম। এরা কী করতে যাবে! ওকে বললাম, ‘কেন রে বিলের মাঠে কী?’ বুকুন আবারও গলা নামিয়ে বলল, ‘ধুত গাধা, বুঝিস না? ওরা প্রেম করে রে হাঁদা। অন্যদিন পারে না তো, আজ একটু তাই যাবে।‘ ‘কী করতে যাবে ওখানে?’ ‘তোকে বুঝতে হবে না। তুই যাবি তো চল। নাহলে বাড়ি চল। আমার বন্ধুদুটো আসলে একটু ভয় পাচ্ছে ছেলেদুটোর সঙ্গে যেতে। এদিকে প্রেম করবে, এদিকে আবার ন্যাকামি।‘ ‘চল তাহলে।‘ ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা আমার। বিলের মাঠে লোকচক্ষুর আড়ালে কী করে ওরা দুই জোড়া সেটা জানার আগ্রহও আছে, আবার ভয়ও আছে।  প্রথমে তিনজনে কাছাকাছিই হাঁটছিলাম। তারপরে একটু আগুপিছু হয়ে গিয়ে তিন জোড়া আলাদা হয়ে গেল। জোড়ায় জোড়ায় সবাই নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছে। অন্য মেয়েদুটোর মাথা নীচু। প্রেম করতে যাচ্ছে, আবার লজ্জাও পাচ্ছে। সেদিক থেকে আমি আর বুকুন ঠিক আছি। আমরা তো আর প্রেম করি না! ওকে বললাম, ‘শোন, বিলের মাঠে গিয়ে ওরা কী করবে রে?’ ‘তোকে বলছি না গাধা প্রেম করতে যাচ্ছে। আমি আর তুই গল্প করব, হয়েছে?’ বেশী কথা বললাম না আর। আমি একটু আঁচ করতে পারছি কী ধরণের প্রেমের জন্য বিলের মাঠের আড়াল দরকার হতে পারে এদের। বিলের মাঠে পৌঁছিয়ে বাকি চারজন দুদিকে চলে গেল একটু ঝোপের আড়ালে।  আমি আর বুকুন একটা ফাঁকা জায়গায় ঘাষের ওপরে বসে পড়লাম। ও যেন একটু বেশী কাছাকাছিই বসল আমার। এটা সেটা গল্প হচ্ছিল, মাঝে মাঝে ওই দুই জোড়ার হাসির খিক খিক শব্দ পাচ্ছিলাম। হঠাৎ বুকুন বলল ‘এই রবিদা। একটা মজা করবি? চল ঝোপের এপাশ থেকে ওদের একটু ঘাবড়ে দিই গিয়ে।‘ মজা পেলাম। বুকুন উঠে দাড়িয়ে নিজের শাড়ি পড়া পেছন দিকটা একটু ঝেড়ে নিল। ঘাস- ধুলো লেগে গেছে একটু। আমরা যেন কোনও অভিযানে যাচ্ছি, এইভাবে ও আমার হাতের বাজুটা ধরে দুই জোড়ার একটা জোড় যে ঝোপের পেছনে ছিল বলে মনে হল, সেদিকে নিয়ে গেল। ঠিকই ধরেছে। এটার ওদিকেই আছে। মিনিট কয়েক কান পাতলেই ফিস ফিস শব্দ আসছে, আর কিছু অচেনা শব্দ। বুকুন আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসল একবার, তারপর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলল।  গলাটা একটু মোটা করে নিয়ে বলল, ‘এইইইই কেরে ওখানে!!!’ বলতেই ওদিক থেকে আসা সব শব্দ বন্ধ।  সেকেন্ড দশেক পরে ঝোপের ধার থেকে বুকুনের একটা বন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই শয়তান আড়ি পাতা হচ্ছে? তোর গলা চিনি না না?’ বুকুনের বন্ধুটার শাড়িটা দেখলাম বেশ অবিন্যস্ত। চুলটাও একটু যেন অগোছালো। বুকুন বলল, ‘আর কতক্ষণ রে। বাড়ি চল এবার। আমি আর রবিদা তো বোর হচ্ছি।‘ পাশ থেকে উঠে দাঁড়াল আমাদের বিমল। ‘তোরা থাক না নিজের মতো। আমাদের পেছনে কাঠি করছিস কেন রে!’  ডিসটার্ব করায় বেশ রেগে গেছে মনে হল। আমি বুকুনের হাত ধরে টানলাম। ও হিহি করে হেসে বলল, ‘আচ্ছা বাবা আচ্ছা। দেখি আরেক জোড়া কী করছে।‘ ওই ঝোপ থেকে সরে এসে অন্য জোড়টা আর খুঁজতে দিলাম না বুকুনকে। ‘তুই কেন ওদের পেছনে লাগছিস রে। ছাড় না। আচ্ছা ওরা কী করছিল বল তো। তোর বন্ধুর শাড়িটা দেখলাম অগোছালো!’ আমার হাত ধরে মাটিতে বসালো বুকুন। ‘রবি দা তুই কি সত্যিই বুঝিস নি ওরা কি করছে না কি জেনেও বোকার মতো জিগ্যেস করছিস রে?’ ‘আন্দাজ করছি, তবে ঠিক কী করছে জানি না।‘ বুকুন বলল, ‘দেখ -- ওরা এটা করছে....’ এত বছর পরে হঠাৎ সরস্বতী পুজোর সেই দুপুরটা মনে পড়ে গেল। --
Parent