বুকুন - অধ্যায় ২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-6207-post-260312.html#pid260312

🕰️ Posted on March 16, 2019 by ✍️ Uttam4004 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2664 words / 12 min read

Parent
৩ ‘কী রে রবিদা তোকে না বললাম প্যান্ডেলে দাঁড়া আসছি আমি। তুই এতটা চলে এসেছিস। আমি ভাবছি গেল কোথায় লোকটা!’ ওর কথায় সম্বিৎ ফিরল আমার। সিগারেটটা ধরিয়ে সাইকেল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে এসেছি। ‘এই একটু হাঁটছিলাম আর কি, চলে তো যাই নি,’ নিজের খামখেয়ালীপনায় লজ্জা পেয়ে বললাম আমি। ‘বউদি, বাচ্চা এল না অঞ্জলি দিতে?’ ‘ওরা তো আসেই নি আমার সঙ্গে। একা এসেছি।‘ ‘ওহ। সে কি রে! পুজোর সময়ে ওদের কোথায় রেখে এলি!’ ‘ওদের এই গ্রামের পুজো ভাল লাগবে না। শহরের ভীড়- পুজো দেখা, বাইরে খেতে যাওয়া – এসবই পছন্দ ওদের। তাই একাই এলাম। তা তোর খবর কি? তুই কোথায় থাকিস এখন? কতদিন পরে দেখা হল!’ ‘হ্যাঁ রে। প্রায় কুড়ি বছর, না রে?’ ও জিগ্যেস করল। ‘হুম, বছর কুড়ি তো হবেই.. এম এস সি শেষ করে এম বি এ করে চাকরীতেই তো ঢুকেছি পনেরো বছর হয়ে গেল।‘ ‘আবার তোর বিয়ে যখন হল, তখন তো আমি শ্বশুরবাড়ি চলে গেছি। মার কাছে শুনেছিলাম তোর বিয়ের খবর।‘ মাথাটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য নামিয়ে নিল বুকুন। তারপর একটা বড় শ্বাস ছাড়ল যেন মনে হল। সোজাসুজি তাকাল আমার দিকে। ‘তুই তো সাউথ কলকাতায় থাকিস না রে? আমার এক দেওর ওদিকে ফ্ল্যাট কিনেছে।‘ ‘তুই থাকিস কোথায় এখন? জামশেদপুর না কোথায় বিয়ে হয়েছিল না তোর?’ আমি জানতে চাইলাম। ‘হুম বিয়ের সময়ে ও জামশেদপুরে থাকত। বর তো টাটায় কাজ করে। তবে বছর তিনেক হল আমরা কলকাতাতেই। সল্টলেকে অফিস থেকে ফ্ল্যাট দিয়েছে রে।‘ ‘ও তাই? সল্ট লেকে থাকিস? আমার তো অফিস সেক্টর ফাইভেই। দেখ কী কান্ড, রোজ যাতায়াত করি, কখনও দেখা হল না এত বছরেও!’ ‘দেখা না হয়ে ভালই হয়েছে মনে হয়। যাক শোন কদিন থাকবি রে তুই?’ ‘লক্ষ্মীপুজো অবধি তো আছি।’ ‘আমাদের বাড়িতে আয়। বরের সঙ্গে আলাপ করবি। এক কাজ কর। এখনই চল। আজ বাড়িতে লুচি বেগুনভাজা হবে।‘ ‘তোর বর অঞ্জলি দিতে এল না?’ ‘না কাল আসবে ওরা সবাই। চল বাড়ি চল।‘ ‘মা তো বোধহয় বাড়িতে কী সব ব্যবস্থা করছে। চল তুই বরং আমাদের বাড়িতে একটু চা খেয়ে যাবি।‘ হাঁটতে হাঁটতে আমরা বেশ অনেকটা চলে এসেছি। সেই যেখানে কাঁচা রাস্তায় বুকুনকে সাইকেলে নিয়ে যেতে গিয়ে পড়েছিলাম, সেই জায়গাটার কাছাকাছি প্রায়। ‘তোর মনে আছে রবিদা, আমাকে সাইকেল চালানো শেখাতিস এই রাস্তায়! আর একবার সাইকেল থেকে ফেলে দিয়েছিলি?’ ‘হ্যাঁ। মনে পড়ছিল অঞ্জলি দিয়ে প্যান্ডেলের বাইরে এসে সিগারেট খাচ্ছিলাম যখন তখন ভাবছিলাম ওইসব,’হাসতে হাসতে বললাম বুকুনকে। ‘কত্ত পাল্টে গেছে না রে রবিদা জায়গাগুলো!’ ‘হুম’ ‘সেই বিলের মাঠ তো পুরো হাওয়া হয়ে গেছে জানিস, কত্ত বাড়ি হয়েছে ওখানে!’ কত্ত বলতে গেলে সেই ছোট থেকেই একটা বাড়তি ত লাগায় বুকুন। ‘হুম জানি। বছরে এক দুবার তো আসিই আমি। একবার তো বাড়ি করব বলে ওখানে জমি কিনব ভেবেছিলাম।‘ হি হি করে হাসতে হাসতে বুকুন বলল, ‘সে-ই বিলের মাঠে তুই জমি কিনবি ভেবেছিলি! হিহি... মনে আছে সরস্বতী পুজোর দিনটা?’ সাইকেলের হ্যান্ডেলে রাখা আমার হাতটায় আলতো করে ছুঁয়ে দিল বুকুন হাসতে হাসতেই। ‘ফাজলামি হচ্ছে?’ কপট রাগ দেখালাম ছোটবেলার সেই স্মরণীয় দিনটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। ‘বাকি চারজন তো ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের দেখে অবাক। উফফফফফফফ,’ হাসতে হাসতে বলল বুকুন। ছোটবেলার সেই দিনটার কথা মনে পড়ে যেতে এবার এত বছর বয়েসে এসে আমারই লজ্জা করতে লাগল। বুকুনের সেসব ব্যাপার কোনও দিনই ছিল না, এখনও নেই। ফাজলামি তে সে চিরকালই ওস্তাদ। ‘তুই যে কতটা আনাড়ি ছিলি, সেদিন বুঝেছিলাম। চুমুটাও ভাল করে খেতে পারিস নি। ইশশ।‘ ‘আর তুই যেন ওসব কত করেছিলি তখন!’ আমরা যেন ফিরে গেছি সেই ছোটবেলায়। আমাদের খেয়ালই নেই যে প্রায় পচিশ বছর পেরিয়ে গেছে সেইসবের পরে। আমি কলকাতায় কলেজ-দিল্লিতে ইউনিভার্সিটি, এম বি এ পড়া শেষ করে চাকরী পাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছি প্রায় ৯ বছর হলো।  চাকরী পাওয়ার একটু তাড়াতাড়িই ছিল আমার। মনে মনে ভেবে রেখেছিলাম চাকরী পেয়েই মাকে বলব বুকুনের কথা।  কিন্তু এম এস সি পাশ করে এম বি এ-তে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই খবর পেয়েছিলাম যে বিয়ে ঠিক হয়েছে বুকুনের।  পুরণো কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির কাছে চলে এসেছি, খেয়াল করি নি। বাড়ির রাস্তাটা দেখেই ওকে বললাম, ‘চল বাড়িতে চা খেয়ে যাবি। মা খুব খুশি হবে।‘ ‘তুই চল না আমাদের বাড়িতে। বরের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতেই আমার লুচি ভাজা হয়ে যাবে।‘ ‘চল তাহলে, তোর বরের সঙ্গে আলাপটা করে আসি’ বললাম আমি। ৪ ওদের বাড়িতে ঢুকতেই কাকিমার সঙ্গে দেখা। কাকিমা তো আমাকে প্রথমে চিনতেই পারেন নি। বহুদিন পরে দেখছেন, তার ওপরে আজকাল চোখেও নিশ্চই ভাল দেখতে পান না। প্রণাম করে বললাম, ‘কাকি, আমি রবি। দত্ত বাড়ির রবি।‘ ‘র—বি... বাবা কত বছর পরে দেখছি রে তোকে! কেমন আছিস বাবা?’ ‘ভাল আছি। তুমি কেমন আছ গো?’ ‘আর এই বয়সে থাকা না থাকা। তা কবে এলি রে তোরা?’ ‘তোরা না, আমি একাই এসেছি। তোমার বৌমা নাতি কলকাতায় পুজোর আনন্দ ছেড়ে গ্রামে আসতে রাজী নয়।‘ কথার মাঝেই বাড়ির ভেতর থেকে বুকুন ওর বরকে ডেকে এনেছে। আলাপ হল তার সঙ্গে। লুচি বেগুনভাজা চা দিয়ে আড্ডা ভালই জমেছিল। বুকুনের বর এমনিতে বেশ আড্ডাবাজ লোক। ঘন্টাখানেক আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরলাম। কদিন থাকব, আবারও যাব বলে আসতে হল। ওদেরকেও বললাম বাড়িতে আসতে। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে উঠে পুরণো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরে ফোন করেছিলাম বউকে। তারা তখন হোল নাইট ঠাকুর দেখতে বেরচ্ছে। তাড়াহুড়ো ছিল পিয়ালীর। সাজছে। তার মধ্যেই বললাম , ‘জানো তো আজ প্যান্ডেলে বুকুনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! বলেছিলাম তোমাকে ওর কথা মনে আছে?’ পিয়ালীর গলার স্বরটা দেখলাম একটু পাল্টে গেল। জিগ্যেস করল, ‘ও তোমার সেইইইই বুকুন? প্রথম প্রেম? বাহ। সে-ও গেছে বুঝি। বাহ। ভালই তো।‘ একটানা কথাগুলো বলে গেল। বুঝলাম অভিমান হয়েছে। বুকুনের সঙ্গে যে ছোটবেলায় সম্পর্ক ছিল, সে কথা পিয়ালীকে বলেছিলাম। মেয়েরা যে এসব ব্যাপার মনে রেখে দেয় এত বছর সে কি আর জানতাম! খচে গেল বউ! ‘ঠিক আছে এখন রাখছি। বেরতে দেরী হয়ে যাবে,’ বলেই কট করে কেটে দিল লাইনটা। আমি ভাবলাম, ধুর, কী দরকার ছিল আমার বুকুনের কথা জানানোর ওকে! বুকুনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে মুডটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল, গেল নষ্ট হয়ে! তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকে পড়লাম। সিগারেট ধরিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম, মেইল, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ গুলো চেক করব বলে। হোয়াটস্ অ্যাপে বেশ কিছু মেসেজ এসেছে – বেশীরভাগই বন্ধু আর অফিস কলিগদের বিভিন্ন গ্রুপের – পুজোর শুভেচ্ছা আর জোকস। একটা অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে রোমান হরফে লেখা: ‘কী ঘুমিয়ে পড়েছিস?’  কার মেসেজ, সেটা বোঝার জন্য ডিসপ্লে প্রোফাইলটাতে আঙ্গুল ছোঁয়াতেই স্ক্রীণে ভেসে উঠল সকালে পুজোর প্যান্ডেলে দেখা হওয়া মাঝবয়সী বুকুনের ছবি। সকালে আমার নম্বর নিয়ে নিয়েছিল ও, আমারই ওর নম্বরটা নেওয়া হয় নি। বুকুনের ডি পি-টাতে আঙুল বোলাতে বোলাতে অনেক পুরণো কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিলের মাঠে যে কতক্ষণ বুকুন নিজের মুখের ওপরে আমার মাথাটা চেপে ধরে রেখেছিল, তা অবশ্য এতদিন পরে আর মনে নেই। কিন্তু সেদিন যে স্বাদ পেয়েছিলাম আমি ,সেটা এখনও কিছুটা মনে আছে – সেই প্রথম তো! ঘটনায় কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম প্রথম কিছুক্ষণ। তবে তারপরে আমিও বুকুনকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সেটা বেশ মনে আছে। আমাদের দুই জোড়া হাত তখন আর আমাদের কন্ট্রোলে ছিল না। এখন যেমন মোবাইলের হ্যান্ডস্ ফ্রি ব্যবহার করি, সেদিনও আমরা হ্যান্ডস ফ্রি হয়ে গিয়েছিলাম অনেকটা। অচেনা জায়গায় কি যে খুঁজছিলাম আমরা দুজন, সেটা তখনও ঠিকঠাক জানতাম না আমরা। আমাদের সম্বিৎ ফিরেছিল ‘এ কি রে...’ শব্দগুলো কানে যেতে। ঝোপের আড়াল থেকে আমাদের একজোড়া বন্ধু-বান্ধবী উঠে এসে আমাদের খোলা জায়গায় ওইভাবে থাকতে দেখে রীতিমতো শকড হয়েছিল। আমরা ঝটপট উঠে দাঁড়িয়েছিলাম লজ্জা পেয়ে। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বুকুন নিজের বাসন্তী রঙা শাড়িটা থেকে ধুলো আর শুকনো ঘাসটাসগুলো ঝেড়ে নিয়েছিল কোনও কথা না বলে। ওর ফর্সা মুখটা যেন পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের মতো লাল হয়ে গিয়েছিল।  উঠে দাঁড়িয়েছিলাম আমিও।  ঝোপের ওপাড়ে প্রায় ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আসা বুকুনের বান্ধবীটি ফিক ফিক করে হেসে যাচ্ছিল তখনও। ওর সঙ্গে থাকা আমার বন্ধুটি বয়সে অনেকটাই বড় – বেশ কয়েকবার ফেল করে আমাদের সঙ্গে পড়ত। সে মিচকি হেসে বলল, ‘তা ঝোপের ওপাশে গিয়ে করলেই পারতি!’ বুকুনের মুখ তখনও লাল। আস্তে আস্তে বলেছিল, ‘রবিদা দেরী হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি চল।‘ কথাগুলো বলেই ও এগিয়ে গিয়েছিল একটু। বাকি দুজন ওখানেই থেকে গিয়েছিল – আরেক জোড়ার অপেক্ষায়। সারা রাস্তা আর কোনও কথা বলে নি বুকুন। মাথাটা নামিয়ে নিয়ে রাস্তা দিয়ে তড়তড় করে হেঁটে ছিল আমার সাইকেলের পাশে পাশে।  সেদিন আর সাইকেলে ওঠার কথা বলি নি ওকে। সামনে পরীক্ষা, কিন্তু সেদিন বিলের মাঠের কথা ভাবলেই মনটা হু হু করে ওঠে।  বুকুনের সঙ্গে দেখা যে একেবারে হয় না, তা না। কখনও আমার মা ওদের বাড়িতে কিছু খাবার বানিয়ে পাঠায়, আবার কখনও ওর মা পাঠায় ওকে - হাতে খাবারের কৌটো। পুরণো দিনের সেইসব কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে হোয়াটস অ্যাপে লিখে দিয়েছি, ‘না রে ঘুমোই নি। জাস্ট খাওয়া হল।‘ মেসেজটা পাঠাতেই দুটো নীল রঙের টিক চিহ্ন দেখা গেল ওটার নীচে, ডান দিকে। ওর ফোন নম্বরের নীচে দেখলাম অনলাইন বুকুন। ওর নম্বরটা সেভ করে রাখাটা কি ঠিক হবে? পিয়ালী যদিও আমার মোবাইল ঘাঁটাঘাটি করে না.. তবুও! থাক! কী দরকার। বুকুন ‘টাইপিং’ দেখা গেল। অর্থাৎ কিছু একটা মেসেজ লিখছে। আমি নিজেই লিখলাম, ‘তোদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে?’ ওর উত্তর এল, ‘কাল অঞ্জলি দিতে যাবি তো? নটায় অঞ্জলি কিন্তু পুরুত মশাই আজ বলে গেছে।‘ তারপরে আমার দ্বিতীয় মেসেজের উত্তর: ‘ছেলে আর মাকে খাইয়ে দিয়েছি। আর আমি এখনই খাব কি? আমার বর তো আড্ডা দিতে গেছে টাউনে। ওর বেশ কিছু বন্ধু আছে ওখানে।‘ ‘ও আচ্ছা। তোর বর কি টাউনের ছেলে না কি?’ ‘না। ওদের বাড়ি তো কলকাতাতেই। কিন্তু বিয়ের পরে কী করে যেন সব আলাপ হয়েছে এদের সঙ্গে। জানি না আমি ঠিক। বলে না সে সব। মদ খাওয়ার সঙ্গী এরা।‘ ‘ওহো। ভালই তো। শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় মদ খাওয়ার সঙ্গী থাকলে মন্দ কী?’ ‘হ্যাঁ। তা আর মন্দ কী! শ্বশুর-শাশুড়ীর সামনে মাতাল হয়ে রাতবিরেতে ফিরে ঝামেলা করবে – খারাপ আর কি বল!’ ‘ও। মদ খেয়ে ফিরে ঝামেলা করে না কি?’ ‘বাদ দে ওসব কথা। এত্তদিন পরে দেখা হল তোর সঙ্গে। ওসব কথা তোকে বলতে ভাল লাগছে না এখন।‘ যেমন কথায়, তেমনই লেখাতেও – কতদিনকে ‘কত্তদিন’ লিখবেই বুকুন। -- ৫ আমি যখন কলকাতায় কলেজে পড়তে চলে গেলাম, তারপর থেকে ওর বিয়ে হয়ে যাওয়া পর্যন্ত যত চিঠি লিখেছিল বুকুন – সবগুলোতেই থাকত ওর এই কথাগুলো – ‘কত্তদিন’, ‘এত্তবড়’..  আরও কতকিছু যে লিখত মেয়েটা – সব চিঠি অনেকদিন রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু দিল্লিতে এম বি এ পড়ার সময়ে যেদিন মায়ের চিঠিতে জানতে পারলাম বুকুনের বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার পরের দিন ক্লাসে না গিয়ে ফাঁকা হোস্টেলের বাথরুমে নিয়ে গিয়ে সঅঅঅব চিঠি জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। ঘরে ফিরে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই।  সেই সরস্বতী পুজোর বিকেল থেকেই মনে মনে বুকুনকে আমার জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছিলাম।  কথাটা ওকে জানিয়েছিলাম আরও কিছুদিন পরে – আমার ফাইনাল পরীক্ষার পরে। কথাটা শুনতে শুনতে আমার চোখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল ও, আর তারপরেই মাথাটা নামিয়ে নিয়ে আমার হাতে আলতো করে একটা ভালবাসার চিমটি কেটেছিল। ওর মা আর আমার মা-ও বুঝত যে আমাদের দুজনের মধ্যে কিছু একটা আছে। আমার মা জানতে চেয়েছিল একবার – কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছিলাম।  ওর মা কিন্তু জানত সবটাই। বুকুন সবই বলেছিল – শুধু বিলের মাঠের মতো গোপন ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে। কিন্তু প্রায় দুই দশক আগের গ্রামের সমাজ, তাই ওর মা তাঁর স্বামীকে কিছু জানান নি মেয়ের ব্যাপারে।  তাই যেদিন এম এ ফার্স্ট ইয়ারে পড়া মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ প্রায় পাকা করে এসেছেন বলে ঘোষণা করলেন অফিস থেকে ফিরে, সেদিন মা-মেয়ে প্রথমে হতবাক, আর তারপর বিস্তর কান্নাকাটি আর অশান্তিও করেছিল দুজনে। কিন্তু তার বাপকে নাকি টলানো যায় নি।  ছেলে ভাল চাকরি করে টাটায়..এমন ছেলে পাওয়া কঠিন .. তা ও কোনও দাবী নেই ছেলের বাড়ির! এম এ পড়া শেষ করে কী করবে মেয়ে? চাকরী? হা হাহা.. ছেলেরাই চাকরী পাচ্ছে না.. আর মেয়েরা করবে চাকরী.. থাক তো বাড়িতে বসে.. আমার মতো ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করলে খবরাখবর রাখতে দেশ-দুনিয়ার!!!!! এ সবই নাকি গোটা পাড়াকে জানিয়ে জানিয়ে বলেছিলেন বুকুনের বাবা।  আর ওই ঝামেলা চলেছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। ওদের পড়শিরাই জানিয়েছিল আমার মা কে। আমার মায়ের কানে এসেছিল পড়শিদের কাছ থেকে। বুকুন অবশ্য একটা শব্দও জানায় নি আমাকে। হঠাৎই হারিয়ে গিয়েছিল। মায়ের কাছে চিঠিতে জিগ্যেস করেছিলাম কয়েকবার.. প্রথমে একটু এড়িয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারপরে বলেছিল সবটা।  পুরনো সেই সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎই খেয়াল করলাম আরও বেশ কয়েকটা মেসেজ এসেছে বুকুনের। ‘আচ্ছা, তোর তো ছেলে, না রে রবি দা?’  কত্ত বড় হয়ে গেছে নিশ্চই! কোন ক্লাস রে?’ ‘নিয়ে এলে পারতি বৌদি আর ছেলেকে’ আমি একটা মেসেজেই জবাব দিলাম: ‘ছেলের ক্লাস টু। ওদের গ্রাম ব্যাপারটাই ভাল লাগে না.. আর পুজোর সময়ে কলকাতা ছেড়ে আসবে?’ ও জবাব দিল, ‘আমি প্রতিবছর আসি। পালিয়ে আসি আসলে রোজকার জীবন থেকে।‘ ‘পালিয়ে আসিস কেন?’ লিখলাম আমি। ‘বললাম না বাদ দে ওসব কথা। তোকে বলতে ভাল লাগছে না এখন রে।‘ হঠাৎই লিখল, ‘তোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। একা আছিস রবিদা? ফোন করব?’ এর জবাবে কিছু না লিখে আমি-ই ফোন করলাম। রাত প্রায় এগারোটা তখন – পরস্ত্রীকে সেই সময়ে ফোন করা উচিত কী না সেটা না ভেবেই। একবার রিং হতেই ধরল সে। ঠিক যেভাবে কলকাতা বা দিল্লিতে পড়ার সময়ে আমি ফোন করলেই একবার রিং হতেই ফোনটা তুলে হ্যালো বলত বুকুন। তখন মোবাইল তো দূর অস্ত, বাড়িতে ফোনও ছিল না আমাদের গ্রামের কারও বাড়িতে। টাউনে বুকুনের এক বান্ধবীর বাবা ব্যবসায়ী। তার ফোন ছিল।  অনেক দিন আগে থেকে চিঠি লিখে ও জানাত যে কোন সময়ে ও ওই বান্ধবীর বাড়িতে যাবে আর আমরা একটু কথা বলে নিতে পারব। তখন রাত এগারোটার পরে এস টি ডি চার্জ চারভাগের এক ভাগ হয়ে যেত.. কিন্তু দিনের বেলা ফোন করতে আমার পকেট থেকে ভালই টাকা গলে যেত। তাই তিন চার মাস পরে হয়তো মিনিট দুয়েকের কথাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হত আমাদের। ফোন করার দিন-সময় জানিয়ে রাখতাম চিঠি দিয়ে। সেই মতো ও বান্ধবীর বাড়িতে চলে যেত। কয়েকবার যে চিঠি সময়মতো না পৌঁছনয় বা বান্ধবীর বাড়িতে কোনও অসুবিধা থাকায় এরকমও হয়েছে, আমি ফোন করেছি, অন্য কেউ ফোন তুলেছে। আর টাকা গচ্চা গেছে আমার। তবে যখন ফোনে পেতাম আমরা দুজনে দুজনকে, তখন কথাবার্তা শেষ হতো একটা ‘মুআ’ ‘মুআ’ শব্দে.. খুব আস্তে আস্তে বলতে হত সেটা – হোস্টেল থেকে বেশ কিছুটা দূরের এস টি ডি বুথটা একেবারে রাস্তার ওপরে.. আর হয়তো আমার পরে আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছে ফোন করার জন্য। আর বুথে বসে থাকতেন যে মাসীমা, তাঁর কানেও যাতে ওই শব্দগুলো না যায়, সেটাও খেয়াল রাখতে হত।  তবে সেটাই আমাদের কাছে তখন অনেক পাওয়া.. পরের ছুটিতে বাড়ি আসার আগে হস্টেলের কমন বাথরুমের বন্ধ দরজার ভেতরে তা দিয়েই কাজ চালাতে হত আমাকে! ছুটিতে বাড়ি এলে অবশ্য সেই সব না-পাওয়া ভাল করেই পুষিয়ে দিত বুকুন – বিলের মাঠে – ঝোপের পেছনে। কোনও কার্পণ্য করত না ও – তবে যেটা করতে আমার খুব ইচ্ছে করত, সেটা কখনও করতে দেয় নি।  ওর এক কথা – ‘এখন না বউভাতের রাতে হবে। সেদিনের জন্য কিছু তো বাকি রাখ।‘ সেই রাত আমাদের দুজনের জীবনে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু বউভাতের রাতে বিছানায় আমাদের দুজনের বিছানাতেই অন্য মানুষ ছিল। ‘এত্তদিন পরে.. যাহ, আমিও তো তোর মতো এত্ত বলে ফেললাম..’, খুব চাপা স্বরে কথাগুলো বললাম বুকুনকে ওর মোবাইলে। এখন আর এস টি ডি বুথ থেকে বান্ধবীর বাড়ির ফোনে নয় – দুজনেই কথা বলছি একান্ত গোপনীয়তায় – রাতের আঁধারে – যখন আমাদের দুজনের বউভাতের রাতের দুই পার্টনার কেউই কাছে নেই। ও পাশ থেকে খিল খিল করে হেসে উঠল বুকুন.. ‘বল কত্তদিন পরে ফোনে কথা হচ্ছে.. সেই আগের মতো চিঠি দিয়ে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ফোন ধরে তিন মিনিট হওয়ার আগেই কথা শেষ করতে হবে না এখন’ বলেই আবার হাসি। ওর গলার স্বরটা যদিও এখনও চাপা। ‘সকালে তোকে দেখার পর থেকেই খুব মনে পড়ছে রে রবিদা সেইসব কথা।‘ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলাম। ‘সব কিছুই কি আার নিজেদের চাওয়া পাওয়া মতো হয়ে রে।‘ সেই ছোটবেলা থেকে শেষবার বিলের মাঠে বসে যেদিন চুমু খেয়েছিলাম বুকুনকে – এম এস সি সেকেন্ড ইয়ারের পড়ার সময়ে পুজোর ছুটিতে বাড়ি থেকে ফিরে যাওয়ার আগের দিন বিকেলে - সেদিন পর্যন্ত আমি আর ও তুই তোকারি-ই করে এসেছি আর ও আমাকে চুমু খেতে খেতেও রবিদা বলেই ডেকেছে। একবার জিগ্যেস করেছিলাম বিলের মাঠে দুষ্টুমি করার সময়ে। ‘আচ্ছা, বিয়ের পরে কি আমাকে সবার সামনে রবিদা বলে ডাকবি তুই?’ ‘ইইইশশশ.. বদমাশ.. ..’ বুকে কয়েকটা কিল মেরেছিল বুকুন। ‘তোর জেঠতুতো বউদি যা শয়তান না.. পম্পিদি.. তোর মায়ের কাছ থেকে জেনেছে বোধহয় কিছু.. আমাকে সেদিন কলেজ থেকে ফেরার সময়ে ধরেছিল.. বাড়ি যাওয়ার আগে কী বলে জানিস?? ইইইই বাবাআআআ.. আমি তো লজ্জায় মরেই যাই!’ একটানা বলে গেল বুকুন। সেই সরস্বতী পুজোর দুপুরে বিলের মাঠের ব্যাপারটার পর থেকেই বুকুন শব্দটা মনে এলেই ‘বুক’ শব্দটাও আমার মাথায় চলে আসত। তা বুকুন যখন বলছিল আমার জেঠতুতো বউদির সঙ্গে ওর কথোপকথোন, তখন বুকুনের সঙ্গে মিল খাওয়া শব্দটা শরীরের যে জায়গাকে বোঝায়, সেখানেই ঘুরছিল আমার হাত দুটো। তখন আমরা দুজনেই এসব ব্যাপারে সপ্রতিভ হয়ে উঠেছি। সেই অবস্থাতেই জিগ্যেস করেছিলাম, ‘বউদি আবার কি বলল?’ ‘বলে কি.. তুই আমার দেওরটাকে তো রবিদা বলে ডাকিস.. তারমানে তুই ওর বোন? আর বোনের সঙ্গে করলে কী বলে জানিস তো.. .. বান.. দিয়ে গালিটাও শুনিয়ে তোর বউদি বলেছিল এবার থেকে আমার দেওরটাকে ওই কথাটা বলেই ডাকব .. আড়ালে.. খুব হেসে পালিয়েছিল তোর বউদি... আমি তো .. মানে.. ইশশ শশ বউদি কী করে কথাগুলো বলল রে.’ আমার হস্তশিল্পের আঘাতের মধ্যেই নিজে নিজে বিলের মাঠে বসে কথাগুলো বলেছিল বুকুন। ‘এ বাবাআআআআ.. আমি বাঞ্চোৎ?’ আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল কথাটা। বেশ জোরে ঘুষি মেরেছিল বুকুন আমার বুকে। তবে আমার আর বাঞ্চোৎ হওয়া হয় নি।
Parent