বুকুন - অধ্যায় ৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-6207-post-260316.html#pid260316

🕰️ Posted on March 16, 2019 by ✍️ Uttam4004 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2676 words / 12 min read

Parent
-- ৬ -- বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল সে রাতে। তারপরে হঠাৎই বুকুন বলেছিল, ‘শোন রবিদা, মনে হচ্ছে ও এসে গেছে। এখন রাখি। কাল প্যান্ডেলে দেখা হবে। কাল কিন্তু ও থাকবে সঙ্গে।‘ ‘আচ্ছা’ বলে ফোনটা রেখে দিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ ঘুম আসে নি সপ্তমীর রাতে। তারপরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, খেয়ালই নেই। পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেছিল মায়ের ডাকে। চা খেতে খেতে হোয়াটস্ অ্যাপ চেক করে নিয়েছিলাম – বউ একটা ছবি পাঠিয়েছে রাত তিনটের সময়ে – আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে তোলা সেলফি – কোনও একটা পুজো প্যান্ডেলের সামনে তোলা! ভালই এঞ্জয় করছে রাতভর! যার মেসেজ আশা করেছিলাম – তার কাছ থেকে সেই কাল রাতের পরে আর কোনও মেসেজ নেই।  স্নানটান সেরে তৈরী হয়ে নিয়েছিলাম প্যান্ডেলে যাব বলে। মা আশপাশের বাড়ির মাসিমা-কাকিমাদের সঙ্গে রিক্সা করে একটু আগে চলে গেল। আমি পড়ে বেরলাম সাইকেল নিয়ে। অষ্টমীর অঞ্জলি শুরু হতে তখনও দেরী আছে। পাড়ার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব – তাদের বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে এসেছে অঞ্জলি দিতে। কাল এদের কয়েকজনের বাড়ি গিয়ে আড্ডা দিয়ে এসেছি। বাকি কয়েকজনও জেনেছে যে আমি এসেছি। গ্রামে এলেই ওদের বাড়ি যাই, তাই বউ-ছেলে-মেয়েদের সঙ্গেও পরিচয় আছে আমার। ওদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকেই দেখলাম বুকুনের বর আসছে ছেলে আর শাশুড়িকে নিয়ে। বুকুনকে আগেই দেখে নিয়েছি – কালকের মতোই স্টেজের ওপরে পুজোর কাজে ব্যস্ত।  দূর থেকে দেখে মনে হল ওর শাড়িটা বোধহয় কমলা রঙের পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি। সঙ্গে বোধহয় কমলা ব্লাউজ। আগের দিনের মতোই আঁচলটা কোমরে গুঁজে রাখা। আমাকে বোধহয় এতদূর থেকে খেয়াল করে নি। বুকুনের বরকে আসতে দেখে আমার কয়েকজন বন্ধু বলল, ‘ওই যে আসছে মালটা!’ আমার দিকে তাকিয়ে এক বন্ধু বলল, ‘রবি, এ কে জানিস তো? বুকুনকে মনে আছে তোর? ওর বর আর ছেলে। একেবারে লুচ্চা একটা। প্রতিবার গ্রামে এসে একটা না একটা ক্যাচাল বাধায় মাল খেয়ে।‘ আমার আর বুকুনের সম্পর্কটা এরা সবাই জানত। বুকুনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাই এতগুলো বছরে ওর নামটাও আর আমার সামনে বলত না ওরা। কিন্তু ওর বরকে আসতে দেখে ওদের নিজেদের তৈরী নিয়মই ভাঙ্গল। ‘ও তাই নাকি? কাল হঠাৎই প্যান্ডেলে দেখা হয়েছিল বুকুনের সঙ্গে। ওদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে বরের সঙ্গে আলাপও করিয়ে দিয়েছে। কথা বলে মনে হয় নি তো যে ক্যাচাল করার লোক!’বললাম আমি। ‘ও প্রথম দিনেই দেখা হয়েছে তোর সঙ্গে?’ এক বন্ধু ফাজলামি করল। আরেক জন বলল, ‘আরে জানিস না। গ্রামে এলেই কিছু না কিছু ঝামেলা করবেই। একবার আমার সঙ্গে হয়েছিল, দিয়েছিলাম একটা থাবড়া।’ পাশ থেকে ওর বউ বলল, ‘ভদ্রলোক এমন ভাবে তাকিয়ে থাকেন না মেয়েদের দিকে, গা জ্বলে যায়। যেন জীবনে মেয়ে দেখে নি – গিলে খায় একেবারে। পাড়ার জামাই বলে কিছু বলতেও পারি না। আপনার বন্ধু সেটা বলতে গিয়েছিল বলেই তো ঝামেলা শুরু হল।‘ আমি বললাম, ‘ভদ্রলোক তো খুব ভাল চাকরী করেন, উঁচু পোস্টে!’ বন্ধুদের মধ্যে কে একজন বলল, ‘তাতে কী হয়েছে?’ এইসব কথাবার্তার মধ্যেই বুকুনের বর আমাদের দিকে তাকাতে তাকাতেই প্যান্ডেলের দিকে আসছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আমাকে দেখে আর এদিকে এল না। গালে চড় খাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল বোধহয়! বুকুনের মা বোধহয় খেয়াল করেন নি আমাকে। অঞ্জলি শুরু হল – আজ ভীড় বেশি কালকের থেকে। বন্ধু আর তাদের বউরা কেউ কেউ এগিয়ে গেল ভেতরে – অঞ্জলি দিতে।  শেষের দিকে আমরা বাকিরা গেলাম। আজ আর স্টেজের বেশি কাছাকাছি যাই নি। সঙ্গে বন্ধুরা আছে, বুকুনের বরও থাকতে পারে কাছে পিঠে। বুকুন আমার সঙ্গে কথা বললে ওরা কি ভাববে! আগের দিনের মতোই হাতে হাতে ফুল-বেলপাতা দিতে দিতে আমার সঙ্গে চোখাচুখি হল ওর। কিন্তু আজ আর কিছু বলল না। দূর থেকে ঠিকই আন্দাজ করেছিলাম – সাদা শাড়ির পাড়টা গাঢ় কমলা রঙের – সঙ্গে কমলা ব্লাউজ। বেশ ঘেমে গেছে বোঝাই যাচ্ছে। পাশ থেকে এক বন্ধু কনুই দিয়ে গোঁতালো, ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ঠোঁট টিপে হাসছে। আমি রিঅ্যাক্ট করলাম না! অঞ্জলির পরে বাইরে এসে আবার কিছুক্ষণ গুলতানি চলল। মা-মাসিমা-কাকিমারা এখনও ভেতরেই বসে আছে পুজো দেখছে।  দেখি বুকুনের বর আমার দিকে এগিয়ে আসছে। যতই বন্ধু আর ওদের বউরা এই লোকটা সম্বন্ধে কিছুক্ষণ আগে খারাপ কথা বলে থাকুক – কালকেই মাত্র আলাপ হয়েছে – আড্ডাও হয়েছে, তাই আমিও মুখে একটু হাসি টেনে বললাম, ‘কি খবর? অঞ্জলি দেওয়া হল?’ ‘হ্যাঁ। তো এখন কি প্ল্যান তোমার?’ জিগ্যেস করল বুকুনের বর। কালকে আলাপের একটু পরেই ও বলেছিল, ‘আমি না বেশিক্ষণ আপনি-টাপনি বলতে পারি না। আর তুমি তো বউয়ের বন্ধু, তাই ছোটই হবে – তুমি বলছি.. কেমন?’ আমি আপত্তি করি নি! জবাব দিলাম, ‘কোনও প্ল্যান নেই। এদিক ওদিক ঘুরব – আড্ডা দেব – আর কি!’ ‘দুপুরে ফাঁকা আছ?’ ‘কেন?’ ‘মাল টাল খাও তো নাকি? বসবে নাকি?’ ‘দুপুরবেলা? না না! আর আমি সেরকম খাই না.. মাঝে সাঝে পার্টিফার্টিতে গেলে খাই একটু। তবে গ্রামে এসে দুপুরে খাব না দাদা।‘ স্পষ্ট করেই বললাম। ‘তাহলে রাতে বসি চলো। আমার কিছু বন্ধুবান্ধব আছে টাউনে। ওখানে যাব। তোমার বন্ধুও যাবে আজ... আড্ডা হবে। এখন চলি বুঝলে?’ বুকুনও কি মদ খায় নাকি? সেই প্রশ্নটা আর করা হল না! এটাও বলা হল না যে আমি বুকুনের বর আর তার বন্ধুদের সঙ্গে বসে মদ খেতে রাজি কী না! ওর বর ছেলে আর শাশুড়িকে নিয়ে এগিয়ে গেল রাস্তার দিকে। টুং করে একটা মেসেজ এল মোবাইলে। বার করে দেখি একটা সেভ না করা নম্বর থেকে মেসেজ। কাল রাতেই মাত্র এই নম্বরটা চিনেছি আমি। লেখা আাছে, ‘চলে যাস না রবিদা’ বন্ধুরা আর ওদের বউয়েরা কয়েকজন বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে। আমাকে জিগ্যেস করল, ওদের কারও বাড়ি যাব কী না। মা আছে পুজো প্যান্ডেলে – সেকথা বলে ওদের কাটিয়ে দিলাম। পুজোর অঞ্জলি শেষ হয়েছে। প্যান্ডেল বেশ ফাঁকা হয়েছে। মা আর মাসিমা-কাকিমারা এগিয়ে আসছে। রিক্সা করে বাড়ি যাবে। আমি বললাম ‘পরে যাব একটু। তুমি এগোও।‘ আরও কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করার পরে আবারও সেই নাম দিয়ে সেভ না করা নম্বর থেকে মেসেজ। ‘প্যান্ডেল থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়া। আমি আসছি।‘ সাইকেলটা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে গেলাম। বুকুন বোধহয় চাইছে না সবাই দেখুক যে ও আমার সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফিরছে পর পর দুদিন। মিনিট পাঁচেক পরেই হন্তদন্ত হয়ে এল ও।  ‘কী রে রবি দা। জেঠিমা চলে গেছে?’ ও আমার মা কে জেঠিমা বলে ছোট থেকেই। ‘হুম। এই তো গেল।‘ ‘তুই কোথাও যাবি এখন?’ ‘না । কেন রে?’ ‘আমার এখন বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি গেলেই অশান্তি আছে একটা। কোথাও বসবি একটু?’ ‘আমাদের বাড়িতে চল,’ বললাম আমি। ‘বাড়িতে? জেঠিমা কী মনে করবে!’ ‘কেন কিছু মনে করবে? আমি তো কাল বললাম যে তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম!’ ‘ও বলেছিস?’ ‘চল তাহলে’ ‘সাইকেলে উঠবি নাকি?’ হঠাৎ হেসে বললাম। ‘ধ্যাৎ। বদমাশ।‘ ও এইভাবেই বদমাশ কথাটা বলত ছোটবেলায় – বিলের মাঠে যখন আমরা দুজনে খুব ঘণ হয়ে বসে থাকতাম, অথবা আমার সাইকেলের রডে চাপিয়ে যখন ফিরতাম সন্ধ্যেবেলার অন্ধকার, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে, সেইসময়ে। কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছুটিতে এসে বুকুনকে নিয়ে সাইকেলে ঘোরাটা আমার ফেভারিট পাসটাইম ছিল। বুকুনও আমার ছুটির সময়গুলো নিজের কলেজ-পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে আমার সঙ্গে ঘুরত। দুজনের বাড়ির মায়েরাই কখনও আপত্তি করে নি। তবে তারা তো আর জানত না যে বিলের মাঠে আমরা কী করি, বা সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে আসার সময়ে কী করি! তাহলে যতই কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ি না কেন, মেরে বাড়ি থেকে বার করে দিত হয়তো দুজনকেই। অত বছর আগে গ্রামের উঠতি বয়সের মেয়েদের মধ্যে স্কার্ট পড়ার চল ছিল না, সালোয়ার পড়ত অনেকে। কিন্তু বিলের মাঠে যেতে হলে আমি বুকুন শাড়ি পড়ে আসত। প্রথমবার কলেজ থেকে ছুটিতে যখন এসেছিলাম, প্রথম বিকেলেই বিলের মাঠে গিয়েছিলাম দুজনে। পড়ন্ত বিকেল তখন। বুকুন একটা গাঢ় সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছিল। একটা গাছে আড়ালে বসেই ওর মুখটা টেনে নিয়েছিলাম নিজের দিকে। ও আঁকড়ে ধরেছিল আমার কাঁধদুটো। সেদিনই আরও কিছুটা পড়ে ওর ওই সালোয়ার নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম আমি। ফিতে খুলতে গিয়ে জট পাকিয়ে ফেলেছিলাম।  অনেকক্ষণের চেষ্টায়, তড়বর তড়বর করে অনেক বকাঝকার পরে যখন গিঁটটা ও নিজেই ছাড়াতে পেরেছিল, তখনই উঠে পড়ে বুকুন বলেছিল, ‘রবিদা বাড়ি চল। ভাল্লাগছে না আজ।‘ অবাক হয়ে আমিও উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন সাইকেলেও ওঠে নি। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে প্রায় কোনও কথা না বলেই বাড়ি চলে এসেছিলাম। কয়েকবার জিগ্যেস করেছিলাম, ‘তোর হলটা কী?’ ‘কিছু না। একটা জিনিষও যদি ঠিক মতো করতে পারিস।‘ চুপ করে গিয়েছিল ও। আমি পড়েছিলাম আতান্তরে – সালোয়ারের ফিতেতে যদি অনভ্যস্ত হাতে গিঁট পড়ে যায়, আমি কী করব!! বুকুনের মেজাজ দেখে আর সেদিন কথা বাড়াই নি। চলে যাওয়ার আগে শুধু বলেছিল, ‘কাল টাউনে সিনেমা দেখতে যাব। কলেজ যাওয়ার পথে টিকিট কেটে রাখব। ম্যাটিনি শো। সময়মতো পৌঁছে যাস গাধা।‘ বুকুন চলে গিয়েছিল। পরের দিন কলেজ পালিয়ে ও সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। শাড়ি পড়েছিল ও সেদিন। তারপর থেকে আমি এলে ও শাড়ি-ই পড়ত। এই যে কাল আর আজ – দুদিন ওর সঙ্গে দেখা হল – সেই শাড়িতেই! আজ বুকুন যে গাঢ় কমলা রঙের ব্লাউজটা পিঠের দিকে বেশ কিছুটা কাটা। আমার বন্ধুদের বউরাও আজকাল সালোয়ার কামিজ বা কেউ কেউ বেড়াতে গেলে জিনস টিন্সও পড়ে – ফেসবুকে ছবি দেখেছি। তবে গ্রামে থাকলে এতটা পিঠ খোলা ব্লাউজ পড়তে চট করে কাউকে দেখি নি।  বুকুন তো এখন আর গ্রামের মেয়ে না। সে জামশেদপুর ঘুরে কলকাতার সল্টলেকবাসী। টুকটাক কথাবার্তার মধ্যেই ও জিগ্যেস করেছিল, ‘হ্যাঁ রে রবিদা প্যান্ডেলের বাইরে আমার বর তোকে কী বলছিল রে?’ আমি ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিছুক্ষণ আগে শোনা বন্ধু আর ওদের বউদের কাছে শোনা কথাগুলো বললাম। ‘তোর বর কি গ্রামে এসে মদ খেয়ে ঝামেলা করে নাকি? শুনলাম!’ ‘সে অনেক কথা রে রবিদা। এই জিনিষ এতগুলো বছর ধরে সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছি। আরও অনেক কিছুই করতে হয় আমাকে, যেগুলো তোকে বলতে পারব না!’ ‘যেমন?’ ‘থাক না রবিদা। এত্তবছর পরে দেখা হল। পুজোর কটা দিনের আনন্দ আর মাটি করে দিস না প্লিজ।‘ চুপ করে গেলাম। কখনই আমি বুকুনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরে নিজের মত চাপাই নি। এখনও ও যখন বলতে চাইছে না, তখন আর কথা বাড়ালাম না আমিও। ‘দুপুরবেলায় মদ খাওয়ার কথা বলছিল তোর বর। আমি না করে দিয়েছি। তখন আবার সন্ধেবেলায় টাউনের বন্ধুদের আড্ডায় আমাকে যেতে বলল। তুই-ও নাকি যাবি?’ ‘ইশশ... কী শুরু করেছে কী লোকটা! ছি ছি!’ মুখে আঁচল চাপা দিল বুকুন। ‘তুই ও ওর বন্ধুদের সঙ্গে মদের পার্টিতে যাস নাকি?’ বাড়িতে আসার আগে পর্যন্ত ওর মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বেরয় নি। বুকুনকে দেখে মা একটু অবাক হল – তবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য।  তারপরেই বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কতদিন পরে এলি রে মা। আয় বোস।‘ -- -- ৭ -- ‘কেমন আছ জেঠিমা তুমি?’ মায়ের গলা জড়িয়ে ধরেই জিগ্যেস করেছিল বুকুন। ‘আর আমার থাকা না থাকা, তোর খবর বল। জামাই, নাতি সব কেমন আছে? এসেছে তো ওরা? তোর সঙ্গে তো এই পুজো প্যান্ডেলেই দেখা হয় বছরে একবার করে। বাড়িতে তো আর আসিস না সেই কতবছর!’  কতবছর পরে যে বুকুন আমাদের বাড়িতে এল, সেই হিসাব আমি, মা, বুকুন – তিনজনেই জানি। কিন্তু কেউই আর সেই হিসাবটা বলল না মুখ ফুটে। ওর বাবার চাপে পড়েও বিয়েতে মত দেওয়ার আগে প্রথমে ওর মা দুতিন বার, পরে ও নিজেই নাকি একবার এসেছিল এ বাড়িতে – আমার মায়ের কাছে। ওর মা নাকি আমার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে আমি যেন খুব তাড়াতাড়ি একটা ভাল চাকরী যোগাড়েরর চেষ্টা করি। ওর বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মাস-দুতিনেক পিছিয়ে দিতে পারবে বুকুনের মা। ততদিনে আমি যদি চাকরী পেয়ে যাই, তাহলে বুকুনের বিয়েটা যে আমার সঙ্গেই দেবে ওরা, সেটাও বলেছিল ওর মা। আমাকে পড়াশোনা শেষ না করে চাকরী যোগাড়ের চেষ্টার কথায় রাজি হয় নি আমার মা। তাই আমাকে কিছু জানায়ও নি তখন। এ সবই অনেক পরে মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম আমি।  না বুকুন, না ওর মা – আমাকে কিছুই জানায় নি। শেষে নাকি বুকুন নিজেও এসেছিল – তবে সেটা আমাকে পড়া ছেড়ে চাকরী যোগাড়ের কথা বলতে না! মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে। খুব নাকি কেঁদেছিল সেদিন মায়ের কাছে বসে।  দুই মা-ই তো আসলে আমাদের সম্পর্কটা জানত খুব ভাল করে – বিশেষত বুকুনের মা। সেই যখন আমি কলেজে পড়তে কলকাতা চলে যাওয়ারও আগে ওদের বাড়িতে গেলেই বুকুনদের বাড়ির পিছনে পুকুর পাড়ে বসে বসে গল্প করতাম ঘন্টার পর ঘন্টা – তখন থেকেই ওর মা কিছু্ একটা আন্দাজ করেছিল। নজরও রাখত বাড়ির জানলা দিয়ে আমাদের ওপর। সেখানেই প্রথম ওর মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাই আমরা – ঘটনাটা বিলের মাঠে আমাদের ‘প্রথম দিন’-এর বেশ কয়েক মাস পরের। অন্য দিনের মতোই দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়া করে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম গল্প করতে। আমাদের গ্রামে কারেন্ট ছিল সবার বাড়িতেই, কিন্তু সেই সময়ে বারে বারেই লোডশেডিং হত। ওদের ঘরে বসে বসে গল্প করতে করতে কারেন্ট চলে গিয়েছিল। গরম কাল, তাই বুকুন আর আমি ওর মা কে বলে পুকুরপাড়ে গিয়েছিলাম গল্প করতে। জায়গাটায় বেশ ফুরফুরে হাওয়া দিত – চারদিকে অনেক গাছ – আম, কাঁঠাল, কলা। ঘন্টা কয়েক গল্প করে বাড়ির দিকে আসার সময়ে আমি আলতো করে বুকুনের হাত ধরেছিলাম। ও ঝট করে চারদিকে তাকিয়ে নিয়েছিল যে অন্য কেউ দেখছে কী না, তারপরেই আমার হাতটা হাল্কা করে টেনেছিল – পাশেই ছিল একটা বড়সড় আমগাছ। ওটার চওড়া গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিল বুকুন। বেশী টানতে হয় নি আমাকে।  আমরা ভেবেছিলাম মোটাসোটা গুঁড়িটার আড়ালে আমাদের ওই সেকেন্ড দশেক হঠাৎ লুকিয়ে পড়া কারও চোখে পড়বে না। কিন্তু কে জানত যে ঠিক সেই সময়েই আমাদের ডাকতে পুকুরের দিকে আসছিলেন কাকিমা, মানে বুকুনের মা। আমাদের লুকিয়ে পড়তে দেখে তখন কিছু বলেন নি। আমরা ঘরে ফেরার পরে চা জলখাবার দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে আমি ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরে বুকুনকে গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করেছিলেন, ‘তোমরা আমগাছের আড়ালে কী করছিলে?’ মায়ের কাছ থেকে প্রশ্নটা শুনে প্রথমে বুকুন ঘাবড়ে গিয়েছিল। কিন্তু গলা না কাঁপিয়ে ও পাল্টা জিগ্যেস করেছিল, ‘আমগাছ? কোন আমগাছ? কী করলাম আবার?’ ও ঠিকই বুঝেছিল যে মা দেখে ফেলেছিলেন ওই সেকেন্ড দশেক হারিয়ে যাওয়া।  মা মেয়েতে কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল আমগাছ না পুকুরপাড় – কোন জায়গায় গল্প করছিলাম আমরা – সেটা নিয়ে।  ওর মা আর কিছু বলে নিজে লজ্জিত হতে চান নি বোধহয়! তাই আর কথা বাড়ান নি সেদিন। শুধু নাকি বলেছিলেন এবার থেকে ঘরে বসেই গল্প কোরো তোমরা। ইঙ্গিতটা বুঝে নিতে বুকুনের দেরী হয় নি।  পরে যখন ও আমাকে বলছিল ঘটনাটা, আমি তো বলেই ফেলেছিলাম, ‘ইশশশ.. আর কোনওদিন কাকিমার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারব না।‘ বুকুন আলতো করে আমার হাতে চাপ দিয়েছিল। তবে তারপর থেকে ও-ই বেশী আসত আমাদের বাড়িতে। এই যেমন আজ ওকে দেখে বাড়ির, বরের, বাচ্চাদের সব খবরাখবর নেওয়ার পরেই বলল, ‘রবি তোর ঘরে নিয়ে যা বুকুনকে। আমি চা জলখাবার দিচ্ছি ওখানেই। লুচি করছি।‘ ‘আমাদের বাড়িতেও তো লুচি। চলো জেঠি, আমি রান্নাঘরে যাই তোমার সঙ্গে,’ বলল বুকুন। মা-ও হয়তো বুঝল যে বুকুন এখন আর সেই ছোট নেই যে কারণে-অকারণে আমাদের বাড়িতে এসে রবিদার খোঁজ করত পড়া দেখে নেওয়ার ছলে। আর তারপরে যখন শুনত আমি নিজের ঘরে পড়ছি, তখন পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকেই পেছন থেকে আমার চোখ টিপে ধরত দুহাতে।  চেনা হাত, চেনা ছোঁয়া, তাই মুহুর্তেই বুঝে যেতাম কে, তবুও ও এই খেলাটা খেলত। কিন্তু এখন যে রবির বয়স হয়েছে, বিয়ে, ছেলেপুলে হয়েছে, বুকুনেরও তাই, সেটা প্রথমে মা-র মাথায় বোধহয় ছিল না। তাই সরাসরি আগের মতোই ওকে আমার ঘরে নিয়ে যেতে বলল। বুকুনেরও নিশ্চই লজ্জা করছিল যে এত্তগুলো বছর পরে আমাদের বাড়িতে এসেই আমার ঘরে চলে যাওয়ার কথায়। তাই বুদ্ধি করে রান্নাঘরে গিয়ে মাকে লুচি ভাজায় হেল্প করার কথা বলল। মেয়েদের যে কতকিছু মুহুর্তের মধ্যে ভেবে নিয়ে কথা বলতে হয় মনের ইচ্ছা লুকিয়ে রেখেও! আঁচলটা কোমরে গুঁজে নিয়ে বুকুন মায়ের সঙ্গে চলে গেল লুচি ভাজতে। আমি নিজের ঘরে যেতে যেতে বললাম, ‘মা এক কাপ চা আগে পেলে ভাল হত। তারপরে লুচি খেতাম।‘ মা বলল, ‘দাঁড়া করছি।‘ ঘরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে প্যাকেট আর লাইটারটা টেবিলের ওপরে রাখলাম। আজকাল আর লুকিয়ে রাখি না। আগে কলেজ বা ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ি এলে, এমন কি চাকরী পাওয়া, বিয়ে হয়ে যাওয়ার অনেক পর অবধিও সিগারেট দেশলাই টেবিলের ওপরে এভাবে রাখতাম না। টেবিলটা বাবা করিয়ে দিয়েছিলেন অনেক ছোটবেলায়। সেক্রেটারিয়েট টেবিল, - মাঝখানে সবুজ রেক্সিন, সঙ্গে কাঠের চেয়ার।  এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে চেয়ারটাকে একটু টেনে নিয়ে গিয়ে জানলার ধারে বসলাম।  এই চেয়ারে বসেই আমি পড়াশোনা করতাম আর মাঝে মাঝে ভর দুপুরে বুকুন হামলা করত পেছন থেকে দুহাত দিয়ে চোখ চেপে ধরে – আমাকে চমকে দেওয়ার ব্যর্থ খেলায়! একবার কলেজের ছুটিতে এসেও দুপুরে পড়ছিলাম আমি। ফিরে গিয়েই বোধহয় কোনও পরীক্ষা ছিল। মা দুপুরে খাবার সময়েই বলেছিল, ‘সারাদিন টোটো করে ঘুরছিস, একটুও তো বই খাতা বার করতে দেখি না। ছুটিতে বাড়ি এলে তোর পড়াশোনা সব বন্ধ!’ আমারও খেয়াল হয়েছিল যে কলেজ খুললেই পরীক্ষা। তাই বইপত্রগুলো একটু নাড়াচাড়া করছিলাম অথবা কোনও রেফারেন্স বই থেকে নোট তৈরী করছিলাম। হঠাৎই পেছন থেকে অতি পরিচিত হাতে আমার চোখদুটো ঢাকা পড়ে গেল। বুঝেইছিলাম কে এসেছে! বুকুনের হাতদুটো বেশ গরম ছিল। ওর হাতের আড়ালে চোখ রেখেই জিগ্যেস করেছিলাম, ‘কী রে, তোর হাতের তালুটা গরম কেন? জ্বর এসেছে নাকি?’ বলে নিজের হাতটা তুলে ওর হাতে বুলিয়ে দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম গায়ে জ্বর আছে না কি! ও চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে আমার মাথাটা আরও একটু টেনে নিয়ে ফিস ফিস করে বলেছিল, ‘হুম রবিদা, জ্বর এসেছে। কামজ্বর।‘ বলেই আমার মাথাটাকে পেছন দিকে আরও একটু টেনে নিজের গায়ে চেপে ধরেছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ওর শরীরের কোন অংশে আমার ব্রহ্মতালুটা গিয়ে ঠেকেছে! ওই জায়গাটাও তো আমার চেনা – দেখি নি যদিও সরাসরি কখনও, তবুও স্পর্শতো পেয়েছি! ‘এই কী হচ্ছে বুকুন। বাড়িতে মা আছে!’ ধমক দিয়েছিলাম একটু। ‘না নেই! আমাকে দরজা খুলে দিয়ে জেঠি বলল পাশের অন্তুদের বাড়ি যাচ্ছে। অন্তুর মার সঙ্গে গল্প করতে। তোর নিজের বাড়ির ব্যাপারে আমি বেশি জানি, বুঝেছিস রবিদা?’ কথা বলতে বলতেই ও নিজের মুখটা আমার চুলের মধ্যে গুঁজে দিয়েছিল। আমি সেই যে ওর জ্বর দেখার জন্য ওর হাত ধরেছিলাম, আমার হাতটা সেখানেই রয়ে গিয়েছিল। আর বুকুনের কথা শুনে অন্য হাতটাও উঠে গিয়ে ছুঁয়েছিল ওর আরেকটা হাত। --
Parent