ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৪২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-3808915.html#pid3808915

🕰️ Posted on October 10, 2021 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 807 words / 4 min read

Parent
     ।।৪২।। শান্তিনীড়ের নীচে ট্যাক্সি থামলো।প্রজ্ঞা ভাড়া মিটিয়ে মনসিজের সঙ্গে উপরে উঠে এল।কলিং বেল টিপতে দরজা খুলে বিস্ময়ে হতবাক হীমানীদেবী।মনসিজ মাকে পাস কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।প্রজ্ঞা বলল,মাসীমনি তোমাকে এই বেশে দেখবো--?। হিমানীদেবী নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না,বেলিকে জড়িয়ে ধরে যেন এতদিনের চেপে রাখা  কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।মনসিজ পোশাক বদলে উকি দিয়ে দেখে অবাক।বাবা মারা যাবার পর মাকে কাদতে দেখেনি বেলিকে দেখে এখন কি এমন হল?যাক এতে যদি মনের ভার লঘু হয়।মাসীমণিকে  সামলে প্রজ্ঞা ঘরে নিয়ে যায়।হিমানী দেবী বললেন,আগের দিন রাতে কত কথা।মনুকে নিয়ে তার যত চিন্তা, ছেলেটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতো।সকালে সেই মানুষটা যে এভাবে সব ফেলে চলে যাবে ভাবিনি। --মাসীমণি তোমরা তো ওকে এতদিন সামলেছো এবার আমি ওর দায়িত্ব নিলাম।কোনো চিন্তা কোরোনা। --তোকে তো আবার অনেক দূর যেতে হবে--। --আমি কলকাতায় থাকি ছোটমাসীর কাছে।তুমি চিন্তা কোরোনা।এতদিন পরে এলাম খুব ক্ষিধে পেয়েছে কিছু খেতে-টেতে দেবে নাকি? -- ও হ্যা দাড়া মনুকে বলছি--।হিমানীদেবী উঠে দাড়ালেন। --দোকানের খাবার আমিও কিনে খেতে পারি।তোমার হাতে তৈরী খাবার কতদিন খাইনি। হিমানীদেবী হেসে ফেলে বললেন,লুচি আলুর দম করছি। --যা খুশি। মনসিজ ঘরে বসে ভাবছে বেলিটা খুব চালু কাকে কিভাবে পটাতে হয় জানে।তাপসকাকুর সঙ্গে দেখা হয়নি শুনলে মা বিরক্ত হবে।ঐটা গেলে মাকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে কেন কাকুর সঙ্গে দেখা হয়নি। ময়দা মাখা ছিল হিমানীদেবী আলু সেদ্ধ করছেন।প্রজ্ঞা এসে ঢুকে জিজ্ঞেস করল,মাসীমণি দাও আমি ময়দা মেখে দিই। --সব করা আছে তোকে কিছু করতে হবেনা।ঐ টুলটা নিয়ে তুই বোস।এখন কি করিস? প্রজ্ঞা টুলটা নিয়ে বসে বলল,বেথুনে বিএ পড়ছি এবার ফাইন্যাল ইয়ার সামনের বছর পরীক্ষা দেবো। --তালপুকুরে যাস না? --যাইতো।ছুটিছাটা পেলেই যাই। --মা কেমন আছে? --মা ভালই আছে।গতমাসে কলকাতায় এসেছিল বোনের কাছে।তোমাকে বলা হয়নি দাদা বিয়ে করে বিলেতে পড়তে গেছে।বৌদি অবশ্য এখন আমাদের কাছেই থাকে। --প্রদোষ বিয়ে করেছে? --দাদা বিয়ে করতে চায়নি।বাবা বলেছে বিয়ে না করলে বিদেশ যাওয়া হবে না।তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। খাবার হয়ে যেতে মনসিজের ডাক পড়ে।রান্না ঘরে আসতে প্রজ্ঞা একটা প্লেটে লুচি একটা বাটিতে আলুরদম সাজিয়ে দিল।প্লেট নিয়ে ঘুরে বেরোতে যাবে হিমানীদেবী জিজ্ঞেস করলেন,ঠাকুর-পো ডেকেছিল কেন? হায় ভগবান জিজ্ঞেস করার সময় পেলনা।ঘুরে একবার বেলির দিকে তাকায়।তারপর আমতা আমতা করে বলল,বাড়িতে ছিল না।বলল,পাচটার পর যেতে--। --পাঁচটার পর যেতে তোমার কি হয়েছিল?একটা কাজ যদি ঠিকমতো করতে পারে--। মনসিজের রাগ হয়ে যায় বলে,কি করে যাবো?বলে কিনা গাড়ীতে ওঠ।যত বলি আমার কাজ আছে কে শোনে কার কথা রাস্তার মধ্যে এমন চোটপাট শুরু করল--। --হয়েছে-হয়েছে এখন যা। --কি হল মুখে কথা নেই কেন? --তুই যাবি?হিমানীদেবী ধমক দিলেন। প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল,কি কাজ মাসীমণি? --কাজ আর কি?তোর মেশোর অফিসের একজন বলেছিল পাস করলে মেশোর জায়গায় যাতে কাজটা পায়--।হিমানীদেবী ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে থাকেন। --ঐ চাকরি?কপালে চাপড় মেরে প্রজ্ঞা বলল,আচ্ছা মাসীমণি তুমিও শেষে ওর মত হয়ে যাচ্ছো।যা খেতে দেয় খাও যেখানে শুতে বলে শুয়ে পড়ো কোনো চাহিদা নেই এ্যাম্বিশন নেই।এই বয়সে কেরাণীর চাকরি কারো জীবনের লক্ষ্য আমি ভাবতেও পারিনা।শোনো মাসীমণি  অনেক কষ্ট করেছো আর কটা দিন।ঐ চাকরি করতে হবে না।বয়স কম এখন কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসুক। --আমিও তো সেই কথা বলি। যা পেনশন পাচ্ছি তাতে মোটামুটি চলে যাবে,এমন তো নয় গাছতলায় বসে আছি।হিমানীদেবী তাল দিলেন। মনসিজের বিস্ময়ের সীমা থাকে না।খাবারের প্লেট হাতে দপদপিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করে।ওকে বাড়ী চিনিয়ে দেওয়াই ভুল হয়েছে।এসেই রান্নাঘরে ঢুকেছে।মায়ের মত ব্যক্তিত্বশালিনী মহিলা কি করে যে ওর কথায় ভুললো দুর্বোধ্য মনেহয়। প্রজ্ঞা চা দিয়ে চলে গেল।পিঠের উপর বিনুনী ঝুলছে শাড়ী পরে একটু বয়স্ক লাগছে।"তোর চা" এরকম কোনো কথা নয় পাশে নামিয়ে রেখে চলে গেল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে এই চাকরিটা যদি না নেয় তাহলে পরে কি এই চাকরি পাবে।শেষে এ কূল ওকূল দু-কূল যাবে নাতো?বেলিটা যাক মাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।অনেকদিন পর দেখা হয়েছে আবেগে মা-র মাথার ঠিক নেই।কিছুক্ষন পর মায়ের ডাক শুনে যেতে হিমানীদেবী বললেন,বেলিকে একটু এগিয়ে দিয়ে আয়। --ওকে আবার কষ্ট করে যাবার কি দরকার।প্রজ্ঞা বলল। --তোমাকে বলেছি আমার কষ্ট হচ্ছে? --বলবি কেন প্যাঁচার মতো মুখ দেখলেই বোঝা যায়। হিমানীদেবী হাসলেন। --মাসিমণি আবার আসবো। মনসিজের এই আশঙ্কা ছিল একবার যখন বাড়ী চিনেছে শুরু হল যাতায়াত। প্রজ্ঞার পিছন পিছন মনসিজ সিড়ি দিয়ে নেমে গেল।বোসবাড়ীর রক অতিক্রম করতে কানে এল,হেবভি দেখতে মাইরি। --আস্তে মনার চেনা। কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে প্রজ্ঞা।মনসিজ দ্রুত কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,দাড়ালে? --ঐ রকে তুই আড্ডা মারিস? --কেন তোমায় কেউ কিছু বলেছে?ফুসে ওঠে মনসিজ। প্রজ্ঞা হেসে ফেলে বলল,কিছু না চল। বেলিকে কেউ কিছু বললে ওর রাগ হয় ভেবে মজা পায় প্রজ্ঞা।বাসে তুলে দিয়ে রকে এসে বসল মনসিজ। --কোথায় গেছিলি? --একটা মেয়ে এসেছিল ওকে বাসে তুলে দিয়ে এলাম। --মেয়েটা কে তাইতো জিজ্ঞেস করছি। মনসিজ ইঙ্গিতটা বুঝতে পারে বলল,তোরা যা ভাবছিস তা নয়।আমাদের আগের পাড়ায় থাকতো।বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে মার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। --আগের পাড়া তাহলে বাসে তুলে দিয়ে এলি? --বেথুন কলেজে ভর্তি হয়েছে সেজন্য কলকাতায় মাসীর কাছে থাকে। রাতে খেতে বসে মায়ের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে কথাটা তুললো মনসিজ,আচ্ছা মা তুমি বেলিকে কতটুকু চেনো।ওর বাবা নামজাদা উকিল হতে পারে কিন্তু ঐটুকু মেয়ের উপর তুমি কি হিসেবে ভরসা করো। --শোন বাবা আমি জানি বেলি জ্ঞানত তোর কোনো ক্ষতি করবে না। মনসিজ আর তর্ক করেনা।যেখানে অন্ধ বিশ্বাস সেখানে তর্ক চলে না।আবার মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করার কথা ভাবতেও পারেনা।বেলির একটা কথা খারাপ লাগেনি।জীবনে একটা এ্যাম্বিশন থাকা দরকার।স্কুলে থাকতে এইম অফ লাইফ রচনা লিখেছে,স্কুল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সব লক্ষ্য হারিয়ে গেছে।    
Parent