ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৪৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-3847083.html#pid3847083

🕰️ Posted on October 18, 2021 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1364 words / 6 min read

Parent
।।৪৬।। ছোটবেলা থেকে মনসিজের নানা বিষয়ে কৌতূহল।বিষয়ের বাছ বিচার করেনা।এতকাল বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছে তার মধ্যে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার ইচ্ছে প্রবল হয়ে ওঠে।নিছক পরীক্ষা পাসের জন্য যতটা তার বেশী জানার আগ্রহ।কোনো বিষয় নিয়ে শুরু করলে এমন নিমগ্ন হয়ে যায় ক্ষিধে তৃষ্ণাও তাকে বিচলিত করতে পারেনা।ইতিহাস সংক্রান্ত নানা বই দেখেছে মীনাক্ষীর আলমারিতে।পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে,বিছানায় ইতি-বিক্ষিপ্ত ছড়ানো বই।সকাল হতে হিমানীদেবী চা নিয়ে এসে ঘুমন্ত ছেলের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকেন।তারপর চায়ের কাপ পাসে নামিয়ে রেখে ছেলের মাথায় স্নেহশীতল হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন।মনসিজের ঘুম ভেঙ্গে যায় মায়ের হাত চেপে ধরতে হিমানীদেবী বললেন,ওঠ বাবা চা এনেছি। মনসিজ উঠে বসে মাকে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা মা একটা বাইরের লোক তোমার ছেলের উপর খবরদারি করে তোমার খারাপ লাগে না? হিমানীদেবী চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,কে বাইরের লোক? --কেন উকিলের মেয়ে। হিমানীদেবী হাসলেন বললেন,তুই বেলির কথা বলছিস? --বেলি কে?ঐটুকু মেয়ে আমাদের ব্যাপারে ও নাক গলাবে কেন?তোমার প্রশ্রয়ে ও আরো বেড়েছে। --শোন মনু বেলি বাইরের লোক না।মানুষ চিনতে শেখ, ও তোর ভাল চায়। --দরকার নেই আমার মানুষ চিনে।তুমি তোমার বেলিকে নিয়ে থাকো। হিমানীদেবী হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।মনুটা বেলিকে সহ্য করতে পারেনা।বেলিটাও তেমনি সব সময় অত বকাবকি করলে হয়।তবে মেয়েটা শুধু মুখে নয়,করছেও ওর জন্য। ওর জন্যই মনুর পড়াশুনায় অত মন।সেদিনের কথা মনে পড়তে শিউরে ওঠেন।বিজন চৌধূরী অত্যন্ত প্রভাবশালী লোক। ঐটুকু মেয়ে হলে কি হবে বহুৎ সেয়ানা।মাকে কিভাবে যাদু করেছে কে জানে।বোঝালেও বুঝতে চায়না মা।কাল রাতের পড়াশুনা নিয়ে ভাবতে খেয়াল হল ইতিহাস আর সংবিধান সম্পর্কিত অনেক প্রশ্ন থাকে ইউপিএসি পরীক্ষায়।মীনাক্ষির আলমারিতে ইতিহাসের অনেক বই দেখেছে।এটা সেটা করতে করতে আটটা বেজে যায়।ভাবল একবার দিলীপের বাড়ি ঘুরে আসবে।হিমানীদেবী বললেন,স্নান করে বেরোবি।বেরোলে তো হুশ থাকে না। বাথরুম যেতে হবে স্নানটাও সেরে ফেলা যাক।মনসিজ ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে বাথরুমে ঢূকে গেল। আশিস স্নান করতে করতে ভাবে মনাকে দিয়ে হবে না সে নিজেই একবার ভজুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।দরকার হয় কিছু টাকাও দিতে হয় দেবে।একবার ভাল করে কড়কে দিলে মাগীর বিয়ের নেশা কেটে যাবে।এখন মনে হচ্ছে কালকে না চুদলেই ভাল হতো।শরীর গরম হয়ে গেলে জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়।হাসপাতালে গেলেই ওর সঙ্গে দেখা হবে ভেবে বিরক্ত হয়।ওর জন্য তো চাকরি ছাড়তে পারেনা।একটা অন্য চাকরি পেলে বাচা যেতো।তাতাইদাকে অনেক বলেছে।গ্রাজুয়েট হলে ভাল হতো।দুনিয়ার সবাই কি গ্রাজুয়েট।আবারও বলতে হবে।এলিনাবৌদিকে দিয়ে বলাবার কথা ভাবতে মনে হল বৌদি ইদানীং আর ডাকে না।অফিস যেতেও দেখে না,ছুটি নিয়েছে নাকি? দিলীপ উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি না হয়ে কলেজে পিইউতে ভর্তি হয়েছে।ক্লাস শুরু হয়নি।মীনাক্ষী লক্ষ্য করেছে দিলুর মধ্যে একটা পরিবর্তন।পড়াশুনার সঙ্গে যার অহি-নকুল সম্পর্ক সে এখন তার আলমারি থেকে গল্পের বই নিয়ে পড়ে,ডায়েরী লেখে।চুপি চুপি একদিন ডায়েরীর পাতা উলটে দেখেছে।বন্ধু-বান্ধব সম্পর্কে নানা মতামত।গুরুর খুব প্রশংসা--গুরু সম্ভবত মনসিজ।বঙ্কিম সম্পর্কেও ভাল ভাল কথা।বঙ্কিম অনেক করেছে ঠিক কিন্তু মনসিজ সম্পর্কে এত প্রশংসার কি হল বুঝতে পারেনা। স্টাডি রুমে গিয়ে দেখল দিলীপ বই নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে আছে।নিঃশব্দে দিলীপের পিছনে গিয়ে দাড়ায়।কিছুক্ষন ভাইকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছিস রে ভাই? দিলীপের সম্বিত ফেরে পিছনে তাকিয়ে বলল,তুই কখন এলি? --সকালে বেরোস না,একা একা কি ভাবিস বলতো? --দুজনে মিলে ভাবা যায়?মানুষ তো একা-একাই ভাবে। মীনাক্ষী বোঝে এইসব ডায়লগ মনসিজের কাছে শিখেছে,জিজ্ঞেস করে,কি ভাবছিলি বলতো? --ভাবছিলাম কিভাবে রকে গেজিয়ে সময় নষ্ট করেছি।কত কি জানার শেখার আছে কখনো মনে হয়নি।একটা বই পড়ি আর মনে হয় আরো আগে কেন পড়িনি।দেখতো মনে হয় কেউ ডাকছে। মীনাক্ষী বাইরে বেরিয়ে দরজা খুলে মনসিজকে দেখে বলল,তুমি?কি ব্যাপার পথ ভুলে? --পথ চিনেই এসেছি একটা দরকারে। --ও দরকার ছাড়া বুঝি আসতে নেই।এসো তোমার বন্ধু ভিতরে আছে। --আমি তোমার কাছে এসেছি। --আমার সৌভাগ্য। এ ধরণের আলাপ মনসিজের ভাল লাগছিল না।মীনাক্ষী বেশ বদলে গেছে। --তোমাকে দেখলাম একটা মেয়ের সঙ্গে যেতে।মেয়েটি কে? --তুমি কাকে দেখেছো না জানলে কিকরে বলবো? --কোমর দুলিয়ে হাটছিল।ক্যাটকেটে ফর্সা। কার কথা বলছে মনসিজ বোঝার চেষ্টা করে।মীনাক্ষী বলল,মেয়েটি আগে আগে তুমি পিছনে। বেলির কথা নয়তো?বেলি কোমর দুলিয়ে চলে খেয়াল করেনি। মনসিজ জিজ্ঞেস করল,কোথায় দেখেছো বলতো? --তোমরা বাস স্ট্যাণ্ডের দিকে যাচ্ছিলে মনে হল ওকে পৌছে দিতে যাচ্ছো। বেলিই হবে।মনসিজ বলল,একটি মেয়ে এসেছিল আমাদের আগের পাড়ায় থাকে। --তোমার গার্ল ফ্রেণ্ড? মনসিজ হেসে ফেলে বুঝতে পারে কেন মীনাক্ষী এভাবে বলছিল।হাসি থামিয়ে বলল,ও যদি জানতে পারে তা হলে আমাকে পেটাবে। --অনেক বই খোয়া গেছে,মিলিয়ে দেখছি।কদিন পরে এসো।  মনসিজকে দেখে দিলীপ বলল,আরে তুই সকাল বেলায়? --মীনাক্ষীর কাছে এসেছিলাম একটা বই নিতে। গার্ল ফ্রেণ্ড শুনলে পেটাবে কথাটা নিয়ে ভাবে মীনাক্ষী,তাহলে কি গার্ল ফ্রেণ্ড নয়।দিলীপ জিজ্ঞেস করল,কি বই? --ভারতের ইতিহাস সংক্রান্ত। --হঠাৎ ইতিহাস নিয়ে পড়লি? --বর্তমানকে বুঝতে অতীতকে জানতে হবে। --কথাটা দারুণ বলেছিস।মানুষের বর্তমান দেখে তাকে বিচার করতে গেলে ভুল হবে। --এই দিলু তোরা কি চা খাবি? --চা হলে তো ভাল হয় কি বল মনা? মীনাক্ষী চলে যেতে দিলীপ বলল,কিরে তোর শরীর খারাপ? --না না শরীর ঠীক আছে। --তুই এসেছিস ভাল হয়েছে।আমি একটা লেখা তোকে পড়াতে চাই। --কার লেখা? দিলীপ একটু সময় নিয়ে বলল,আমি একটা গল্প লিখেছি।কোথাও পাঠাবার আগে তোর মতামতটা নিতে চাই। মনসিজের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।দিলীপ গল্প লিখেছে শুনে দিলীপের কথাটা মনে পড়ল,মানুষের বর্তমান দেখে বিচার করতে যাওয়া ভুল।লেখক মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় কখনো ভাবেন নি তিনি লেখক হবেন।বন্ধুদের ধারণা ভুল প্রমাণ করতে তিনি প্রথম গল্প লেখেন।মনসিজ বলল, তোর কি খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে? --ধুর স্নানই হয়নি।এখন না পরে সময় নিয়ে তোকে পড়াতে চাই।শোন মীনাকে এসব বলতে যাস না।কাউকে এখন বলার দরকার নেই। মীনাক্ষী চা নিয়ে ঢুকতে ওদের আলোচনার গতি বাক নেয়।দিলীপ জিজ্ঞেস করে,তোর সেই আগের পাড়ার মেয়েটা আর এসেছিল? --এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা হয়নি।  দিলীপের বাড়ী থেকে বেরিয়ে ভাবে,হঠাৎ ব্যবহার এমন বদলে গেল কেন?নিজেকে বোঝায় আশা করলে আশাহতের বেদনা সহ্য করতে হয়।  কল্পনা দোলনা পার্কের দিকে যাচ্ছিল দূর থেকে মনসিজকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।কেমন যেন চিন্তিত মনে হচ্ছে ওকে।মুড ভালো নেই কথা বলবে কিনা ভাবে।রেজাল্ট বেরোবার সময় হয়ে এসেছে সে কারণে কি চিন্তিত।কাছে আসতে চোখাচুখি হতে কল্পনা বলল,ভাল আছেন? --হ্যা আপনি এখানে? --বঙ্কিম আসছে তাই--। --সব খবর ভাল? --বঙ্কিমকে নিয়ে মুষ্কিলে পড়ে গেছি। --কি হল আবার? --আর বলবেন না।রেজাল্ট বেরোবার দিন যত এগিয়ে আসছে কেমন আপ সেট হয়ে পড়ছে।বললাম,তুমি কি লিখেছো তুমি বুঝতে পারছোনা।বলে কিনা কিছু মনে করতে পারছে না।দেখা হলে বুঝিয়ে বলবেন তো। মৃদু হেসে মনসিজ বাড়ীর পথ ধরে।নিজেকে খুব অসম্মানিত বোধ করে।স্পষ্ট করে প্রথমেই বলে দিতে পারতো বই দেবে না।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা বাহানা।বেলি অনেক সুন্দর দেখতে কোমর দুলিয়ে অসভ্যের মত হাটেনা অনেক স্মার্ট।বাইরে একটু ছটফটে ভাব আছে কিন্তু অনেক পরিণত বুদ্ধি।ক্যাটকেটে ফর্সা নয় গেরুয়া রঙ বলা যায়।রাতারাতি একটা মানুষ কিভাবে বদলায় ভেবে অবাক লাগে। বাসায় ফিরে নিজের ঘরে ঢুকতে মনটা বেশ চাঙ্গা বোধ হয়।পোশাক না বদলেই খাটের উপর শুয়ে পড়ল।কি চমৎকার পরিবেশ।মনে হয় মা ঘর গুছিয়েছে।বইগুলো এক পাশে পরিপাটি করে সাজানো।দেওয়ালে ঈশ্বর চন্দ্র বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ নজরুলের ছবি দেখে অবাক লাগল।ছবিগুলো কে লাগালো?মা কোথায় ছবি পাবে? --কিরে এসেই শুয়ে পড়লি? --মা এসব ছবি কে লাগালো? --বেলি এসেছিল একটা লোক নিয়ে।তাকে দিয়ে ঘর পরিষ্কার করিয়েছে ছবি লাগিয়েছে। --এইটা কি ওর ঘর?গলায় উষ্মা ছিল। --এই চিৎকার করবি নাতো।মেয়েটা কত কষ্ট করে অতদূর থেকে এসে করছে কোথায় একটু প্রশংসা করবে---ও ভাল কথা টেবিলের উপর কানপাশাটা ছিল তুই দেখেছিস? --দেখো তোমার ঘরের মেয়ের কাণ্ড। হিমানীদেবী গর্জে উঠলেন,মনু! মনসিজ চমকে ওঠে চোখের দিকে তাকাতে পারেনা।হিমানী দেবী বললেন, যা মুখে আসছে বলে যাচ্ছিস--। মনসিজ সামলাবার জন্য বলল,আমি বলেছি ঘরের মেয়ে হয়তো কোথাও গুছিয়ে রেখেছে। --কি বলতে চেয়েছো আমি শুনতে চাইনি।ভাত দিচ্ছি খেতে এসো। মনসিজের খারাপ লাগে,কথাটা ওভাবে বলতে চায়নি।রাগের মাথায় মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।মাথা নীচু করে চুপচাপ খেতে থাকে।খাওয়া শেষে ঘরে এসে পড়তে বসে।ঘরটা গোছানোতে পরিবেশটাই বদলে গেছে।মোবাইল বেজে উঠতে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নাম দেখেই নিজেকে কেমন অপরাধী-অপরাধী মনে হল,মৃদু স্বরে বলল,বলো। --হ্যারে মস্তান মীনাক্ষী কে? --কেন? --তুই ওর কাছে কেন গেছিলি? --বই আনতে। --শোন তোকে কোথাও যেতে হবে না।সময় হলেই আমি বই দিয়ে আসবো। --এত টাকার বই তুমি কেন দেবে? --সব লিখে রাখছি চাকরি পেলে শোধ করে দিবি। --যদি পাস করতে না পারি? --এবার মার খাবি যত নেগেটিভ চিন্তা।টাকা শোধ করতে হবে ভেবে পড়বি। --তুমি এইসব ছবি টাঙ্গিয়েছো কেনো? --তোর ভাল না লাগলে খুলে ফেলে দিবি। মনসিজ চুপ করে থাকে কত সহজে বলে দিল খুলে ফেলে দিবি। --কিরে কথা বলছিস না কেন? --ঈশ্বর আমাকে এত শক্তি দেয়নি ছবিগুলো খুলে ফেলে দেবো। ওপাস থেকে খিল খিল হাসি ভেসে এল।মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, হাসলে গজদন্ত বেরিয়ে যায়,বেশ লাগে। --ছবিগুলো ফেলতে পারছিস না।দেখলি ছবির কত শক্তি।ওরা তোর অভিভাবক সারাক্ষন তোর উপর নজর রাখবে যাতে অবাঞ্ছিত চিন্তা মাথায় না আসে।বুঝলি? --তাহলে তোমার একটা ছবিও লাগিয়ে দাও সারাক্ষন নজরে রাখবে। --পাকামী হচ্ছে।শোন নিজের ছবি নিজের টাঙ্গাতে খারাপ লাগছিল।যখন থাকবো না তুই লাগিয়ে দিবি। কথাটা কানে যেতে বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে উঠল। --কিরে বেলির মৃত্যুর কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল? --তা নয় যেকোনো মৃত্যুর কথা শুনলে খারাপ লাগে।তুমি এরকম বললে আমি আর ফোন ধরবো না। মীনাক্ষীর কথা মার কাছে শুনে থাকবে হয়তো।সব কথা ওকে বলার কি দরকার।মাকে নিয়ে পারা যাবে না।  --শোন মস্তান বাইরের পরিবেশ মনের উপর প্রভাব ফেলে।বাইরেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে মনও ভাল থাকে।এবার ফোন রেখে পড়। ফোন রেখে মনসিজ দেখল ছবিগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে।  
Parent