ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৪৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-3863478.html#pid3863478

🕰️ Posted on October 22, 2021 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1399 words / 6 min read

Parent
       ।।৪৮।। আবার পড়াশোনা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল।মাও তালে তাল দিল।মায়ের অবাধ্য হওয়ার কথা ভাবতেই পারেনা।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুরু করলেও এখন কেমন নেশার মত পেয়ে বসেছে।পরীক্ষার চেয়ে জানার আগ্রহই তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।প্রাসঙ্গিক আরও বই দরকার,একটা ইতিহাস নয় কয়েকজন অথরের বই ঘেটে পড়তে হয়।কিভাবে রাত কেটে যায় হুশ থাকে না।শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে মনসিজ। হিমানীদেবী শুনেছেন রেজাল্ট বেরোবার কথা।পড়াশোনায় খারাপ নয় পাস করে যাবে।কেমন রেজাল্ট হয় সেটাই চিন্তা।ওর বাবা বলতো বিত্ত-সম্পত্তি হয়তো রেখে যেতে পারব না কিন্তু শিক্ষাই তোমার সম্পদ।উনি থাকলে আজ এত চিন্তা করতে হতোনা।বিছানা থেকে নেমে চা করতে গেলেন।মনু কি ঘুম থেকে উঠেছে।সারারাত জেগে পড়ে ঘুম ভাঙ্গাতে ইচ্ছে হয়না।ও নিজেই উঠে পড়ে।ওর বাবা বলতো পরিশ্রমের বিকল্প নেই।নিজেও সারা জীবন পরিশ্রম করেছেন ছেলেকেও সেভাবেই তৈরী করেছে।হাসপাতাল আর আদালত এড়িয়ে চলার কথা বলতো।ওকে কোনোদিন দু-জায়গার কোনো জায়গায় যেতে হয়নি। পিছনে এসে দাঁড়ায় মনসিজ।বুঝতে পেরে ঘুরে বললেন,উঠে পড়েছিস?নে চায়ের কাপটা ধর। --বাজার যেতে হবে? --কাল গেলেও হবে। --আজই সেরে আসি।কবে রেজাল্ট বেরোবে কে জানে। চা খেয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে বাজারে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।হিমানী দেবী টাকা দিয়ে বললেন,মেয়েটা অনেকদিন আসছে না। --বেশী মায়া বাড়িও না। --মায়া নয় এলে ভাল লাগে। --আজ আসবে। --আমাকে বলিস নি তো।কখন আসবে? --সেসব বলেনি।খালি নিজের কথা বলে অন্যের কথা শোনে না।দাও থলি দাও। লক্ষী জুয়েলারীর মালিক বিনয় মণ্ডল দোকানের একপাশে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসে।সামনে ক্যাশ বাক্স।নজরে পড়ল প্রথম কাউণ্টারে কি নিয়ে যেন গোলমাল হচ্ছে।একজন মহিলা বলছে,তাহলে ফোন করি? বিনয়বাবু হাক পাড়েন,এই সুদর্শন কি হয়েছে? সুদর্শন কাছে গিয়ে নীচু হয়ে ফিস ফিস করে বলল,চোরাই মাল চোর নাকি থানায়...ফেরৎ চায়। --ম্যাডাম এদিকে আসুন।বিনয় মণ্ডল উচু গলায় ডাকল।মহিলা এগিয়ে গেলে বিনয়বাবু বলল,একটা চেয়ার দে। একটা চেয়ার দিয়ে গেল একজন।মহিলা বসতে বিনয়বাবু বলল,ঐ সব কর্মচারীর কথা বাদ দিন বলুন কি হয়েছে। মহিলা ব্যাগ থেকে একটা কানপাশা বের করে বলল,এর জোড়া চুরি হয়ে গেছে।আমাদের কাছে খবর ছিল আপনার দোকানে বিক্রী করেছে। --দেখুন অভাবে পড়ে অনেকেই আসে কে চোর কে সাধু দেখে তো বোঝা যায় না।তা ছাড়া পুরানো সোনা আমরা গলিয়ে ফেলি--। --কদিন আগে এসেছিলাম আমি দেখে গেছি।চোরাই মাল এমনি সিজ করতে পারি তবু আমি টাকা দিয়েই নিতে চাই।যার গয়না তাকে ফেরৎ দিতে হবে। --এই সুদর্শন এদিকে আয়।উনি কি বলছেন ওই কানপাশাটা আছে নাকি? সুদর্শনের মুখে কথা নেই।বিনয়বাবু বলল,তাহলে বের ওনাকে দে।যান ম্যাডাম।সই করিয়ে রাখবি। কানপাশা হাতে নিয়ে এগিয়ে দেওয়া কাগজে সই করল,প্রজ্ঞা চৌধুরী।দোকান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখা রিক্সায় উঠে বলল,চলুন ভাই।  খাওয়া দাওয়া শেষে নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ল।বেলি বলেছিল আসবে,আসেনি।অবশ্য এখন আড়াইটে বাজে সময় আছে।শুয়ে শুয়ে পুরানো দিনের কথা ভাবে।অভাবের মধ্যে বড় হয়েছে সে।বাবা কোনোমতে এই ফ্লাটটা কিনে গিয়েছিল তাই পথে দাড়াতে হয়নি।দেওয়ালে চোখ পড়তে ঈশ্বরচন্দ্রের ছবিতে চোখ আটকে যায়।জ্বল জ্বল চোখে তাকিয়ে আছেন।দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন।নিজের জন্য অপেক্ষা অন্যের জন্য ভেবে জীবনাতিপাত করেছেন।নারীজাতি সম্পর্কে ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা।নিজের সমস্যাগুলো আর বড় মনে হয়না।মনসিজের মধ্যে জেগে ওঠে আত্ম্য প্রত্যয়।বাইরে কলিং বেলের শব্দ হল মনে হল।উঠেতে গিয়ে বুঝতে পারে মা উঠেছে।বেলি এলোনা তো?মনসিজ আবার শুয়ে পড়ল। হিমানীদেবী দরজা খুলে অবাক।ঘেমে নেয়ে একশা বেলি দাঁড়িয়ে কাধে বিশাল এক ঝোলা ব্যাগ। --কিরে তুই তো ঘেমে একেবারে স্নান করে গেছিস।আয় ভিতরে আয়। ভিতরে বসিয়ে পাখার গতি বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,তোর ব্যাগে কি? --মস্তানের বই। হিমানী দেবী ব্যাগ হতে বইগুলো বের করে টেবিলের উপর রেখে বললেন,তুই বোস আমি সরবৎ করে আনি। --মামণি তুমি বোসো আমার কাছে। হিমানী দেবী খাটে সামনা সামনি বসলেন।প্রজ্ঞা উঠে বলল,এই দেখো তোমার জন্য কি এনেছি।হিমানীদেবীর হাতে কানপাশা জোড়া তুলে দিল। অবাক হয়ে হিমানীদেবী বললেন,ওমা এ তুই কোথায় পেলি? --তুমি পরো।অত কথার দরকার কি? উচ্ছ্বসিত হিমানীদেবী খাট থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কানে পাশা আটতে আটতে ডাকলেন,এই মনু দেখ বেলি কি এনেছে। মনসিজ এসে মায়ের কানে পুরানো পাশাজোড়া দেখে অবাক হয়ে বলল,তোমার লজ্জা করছে না ছিঃ মা। --এই মস্তান কাকে কি বলছিস? --আমি আমার মাকে বলেছি। --তুই আরেকবার ছিঃ বলে দেখ। হিমানীদেবী বললেন,ছেড়ে দে বেলি ওর কথা--। --মামণি তুমি চুপ করো,তুমি কোনো কথা বলবেনা। মনসিজ অবাক মাকেও ধমকাচ্ছে! --কিরে আরেকবার বল ছিঃ। --কি করবে তুমি? --তুই আরেকবার ছিঃ বল। --তুমি বললেই বলতে হবে।আমি বলব না। মনসিজ পা দাপাতে দাপাতে নিজের ঘরে চলে গেল।হিমানীদেবী আর বেলি হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে।হিমানীদেবী বল্লেন,একেবারে ছেলে মানুষ। --ছেলে মানুষ থাকলে হবে বড় হতে হবে না। --এমনি ঠিক আছে আসলে তোকে দেখলে ঘাবড়ে যায়। --আমি একটু গায়ে জল দেবো।সারা গা চট চট করছে।সরবৎ নয় তুমি বরং আমার হলে একটু চা দিও। হিমানীদেবী একটা পরিষ্কার তোয়ালে এগিয়ে দিলেন।প্রজ্ঞা তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকতে মনসিজ এল রান্না ঘরে। --তুই ঘরে গিয়ে বোস চা হলে দিয়ে আসবো। --মা তুমি খেয়াল করেছো বেলি তোমাকে মামণি বলছিল? --বলছিল তাতে কি হয়েছে?ওতো আমার মেয়ের মতই। --মেয়ের মত হলেও অন্যের মাকে কেউ মা বলে?ভিখিরিরা ভিক্ষে চাওয়ার সময় বলে,মাগো দুটো ভিক্ষে দেবে মা।বেলি কি ভিখিরী? --মনু তুই কিরে?মেয়েটা এত গুলো বই তোর জন্য বয়ে বয়ে নিয়ে এল--কে করে এরকম? --বেলি আমার জন্য অনেক করে চিরকাল মনে রাখব।কিন্তু ও যে আমাকে মস্তান বলে আমার নাম কি মস্তান? --মস্তানী করে বেড়াতিস তাই বলে। --বাঃ বাঃ তোমার দেখিছি ওর খারাপ কিছুই নজরে পড়েনা। হিমানীদেবী মুখ টিপে হেসে বললেন,বেলি যদি আমার বৌমা হয় তাহলে আমাকে মা বলবে না? মনসিজের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।কোন জগতে বাস করছে তার মা।মনসিজ বলল,মা তুমি কি পাগল হলে? --কেন পাগলামীর কি হল? --ওরা কত বড়লোক তুমি জানো চাকদায় ওর বাবার কত প্রতিপত্তি তুমি ভুলে গেছো?মা আকাশ কুসুম কল্পনা করলে শেষে দুঃখ পেতে হবে। প্রজ্ঞা বাথরুম হতে বেরোচ্ছে বুঝতে পেরে বইগুলো নিয়ে দ্রুত নিজের ঘরে চলে গেল।ঘরে এসে বইগুলো নিয়ে বসল।যে বইগুলোর খোজ করছিল বেলি ঠিক সেই বইগুলো এনেছে।রাতের জন্য অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই এখনি বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করছে।মুখ তুলে দেওয়ালে ছবিগুলোর দিকে দেখে মনে হচ্ছে সবাই তার দিকে চেয়ে আছে।প্রজ্ঞা চা নিয়ে ঢুকে খাটের একপাশে নামিয়ে রাখে।মনসিজ মুগ্ধ হয়ে দেখে চুলে জল কণা লেগে আছে।মনে হচ্ছে যেন শিশির সিক্ত ভোরের বেল ফুল।প্রজ্ঞা কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেল।বাথরুম হতে তার কথা শোনেনি তো?চায়ের কাপ তুলে চুমুক দেয়।   চা খেতে খেতে হিমানীদেবীর সঙ্গে কথা বলছে প্রজ্ঞা। --আচ্ছা মা তুই পেলি কোথায়? --মস্তান লক্ষ্মী জুয়েলারসে বিক্রী করেছিল। --তুই জানলি কি করে?  --কয়েকটা দোকান ঘুরে শেষে এখানে হদিশ পেলাম। --ওরা দিয়ে দিল? --এমনি-এমনি কি দেয় অনেক কায়দা কৌশল ভয় টয় দেখাবার পর---কম ঝামেলা করতে হয়েছে।মামণি এবার উঠবো। --এই মনু।হিমানীদেবী গলা তুলে ডাকলেন। মনসিজ আসতে বললেন,বেলিকে একটু এগিয়ে দে। --একাই তো এসেছে। --থাক ওকে যেতে হবে না। --যাবনা বলিনি।জামা টামা গায়ে না দিয়েই যাবো নাকি? মনসিজ ঘরে গিয়ে দ্রুত নিজেকে প্রস্তুত করে ফিরে এল।প্রজ্ঞা ততক্ষনে বেরিয়ে গেছে।মনসিজ বলল,দেখলে কেমন তেজ। --তুই তাড়াতাড়ি যা। সামনে প্রজ্ঞা পিছন পিছন মনসিজ হাটতে থাকে।বেশ কিছু টা যাবার পর প্রজ্ঞা দাঁড়িয়ে পড়ল।মনসিজ কাছে যেতে প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করে,তোদের এখানে কোনো পার্ক নেই? --ছোট একটা আছে দোলনা পার্ক,ঐ দিকে। --চল পার্কে গিয়ে বসি। --আমার কাজ আছে। --কাজ তো রকে গিয়ে গ্যাজানো।আজ নাহয় আমার সঙ্গে একটু গল্প করবি। --তোমার সঙ্গে গল্প।সারাক্ষন চোটপাট করো যেন আমি একটা বাচ্চা ছেলে।আমার বন্ধুরা এভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতে সাহস করবে না। প্রজ্ঞা হাসল,সব আমি জানিরে মস্তান। কেন চোটপাট করি জানিস?আমি একটা জিনিস পরীক্ষা করে দেখছি। --চোটপাট পরীক্ষা? --চল পার্কে গিয়ে বলব। ওরা পার্কের দিকে এগোতে থাকে এমন সময় ওদের পাশে একটা গাড়ী এসে থামে।গাড়ীর ভিতর থেকে গলা বাড়িয়ে এক মহিলা বলল,কাল আসছো তো? মনসিজ বলল,হ্যা ম্যাডাম। মহিলা একনজর প্রজ্ঞার দিকে চোখ বুলিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট করল। পার্কে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে প্রজ্ঞা বলল,তোর একটা গুণ মেয়েদের খুব সমীহ করিস। --মেয়েরা আমার মায়ের মতো। -- একটা লোককে দিয়ে এক গণিকাকে মা বলিয়েছিলি। মনসিজ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,তোমাকে এসব কে বলল? প্রজ্ঞা হাসে পা দোলাতে দোলাতে বলল,আমি চোটপাট করি কেন জানিস,কখন তোর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখলাম না তুই আমার অসম্মান করেছিস। মনসিজের চোখ ছল ছল অন্যদিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে।প্রজ্ঞা ওর চিবুক ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বলল,কি হল? --বেলি তুমি যা বললে ঠিক নয়।আমি খুব খারাপ খুব নোংরা তুমি শুনলে আমাকে ঘেন্না করবে--। --আমি জানি। --তুমি জানো? --দ্যাখ মস্তান পাড়াগ্রামে গরু খুটো দিয়ে বেধে রাখে ঘাস খাবার জন্য।খুটো থেকে ছুটে গেলে অন্যের জমির বেড়া ভেঙ্গে ফসলে মুখ দেয়। --মানে? --মানুষের শরীর জামা কাপড়ের মত।ধুলেই ময়লা সাফ হয়ে যায়।কিন্তু মনের ময়লা সাফ করা যায়না।তোর মন পরিস্কার,আমি আছি আর তোকে অন্যের জমিতে মুখ দিতে হবে না। --বেলি তুমি খুব ভাল। --ওসব থাক।তুই আমার কথা শুনে চলবি তো? --তুমি বলেছো কোন কথা শুনিনি বলো? --তোর পছন্দ না হলেও আমার কথা অমান্য করবি না। --ঠিক আছে।বেলি এবার তোমাকে একটা কথা বলি? --তোর আবার কি কথা? --আমার মা না খুব সরল।তোমাকে নিয়ে আবোল তাবোল ভাবে।যদি কিছু বলে কিছু মনে কোর না।মা কিন্তু তোমাকে খুব ভালবাসে। --এ্যাই মামণিকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।তোকে যা জিজ্ঞেস করছি তাই বল,ওই মহিলা কে,কোথায় যাবার কথা বলল? --ও ওনার নাম উশতী পাকড়াশি।ওর মেয়েকে আমি পড়াই। --তুই ঐ টিউশনিটা ছেড়ে দিবি। --দুশো টাকা দেয়। --তুই বলেছিস আমার সব কথা শুনবি। পার্ক থেকে বেরিয়ে প্রজ্ঞা দেখল দূর থেকে একটা ট্যাক্সি আসছে বলল,তোকে আর যেতে হবে না।ট্যাক্সিটা থামা। ট্যাক্সি থামিয়ে প্রজ্ঞা উঠে জানলা দিয়ে মুখ বের করে জিজ্ঞেস করল,মামণির মতো তুই কিছু ভাবিস না? মনসিজের মুখ লাল হয়।প্রজ্ঞা হাত নাড়ে মনসিজও হাত নাড়ে।
Parent