ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৫৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-3920871.html#pid3920871

🕰️ Posted on November 5, 2021 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 933 words / 4 min read

Parent
     ।।৫৯।। সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে,পার্কে লোকের ভীড় বাড়তে থাকে।বেলি তাকে কেন ডেকেছিল মনসিজ এতক্ষনে বুঝতে পারল।মস্তানি করার জন্য তাকে অতদুর হতে এখানে নিয়ে এসেছে।বেলি তাকে মস্তান বলতো তারও মজা লাগতো এখন বুঝতে পারছে ওর চোখে সে একজন গুণ্ডা মাস্তান।মন্দাকিনী অবাক হয়ে দেখে মনসিজকে,কোথায় দেখেছে ছেলেটাকে?সন্ময়কে আচ্ছা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।মনে হচ্ছে এই ছেলেটাই তার আশ্রয়।মন্দাকিনী জিজ্ঞেস করল,আপনি কোথায় থাকেন? --সিথীতে থাকি। --আমার গাড়ী আছে চলুন আপনাকে পৌছে দিই। --ওর কাজ আছে ও যাবে না।প্রজ্ঞা বলল। --আবার কি কাজ?যে জন্য ডেকেছিলে মস্তান তো করে দিল। --ঠিক আছে যা। মন্দাকিনীর সঙ্গে বেরিয়ে গেল মনসিজ।প্রজ্ঞা দুহাতের তালুতে চোখ ঢাকে।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।মন্দাকিনী যেতে যেতে বলল,আপনার নম্বর পাওয়া যাবে? মনসিজ নম্বর বলতে নিজের মোবাইলে সেভ করে জিজ্ঞেস করল,আপনার নাম? --মনসিজ মজুমদার। --সুন্দর নাম।আমার নাম মন্দাকিনী দত্ত। রাস্তা পেরিয়ে গাড়ীর কাছে এসে মন্দাকিনী বলল,উঠূন। মনসিজ ইতস্তত করে বলল,আমার একটু কাজ আছে,আপনি আসুন। --তাহলে আজ একাই যাই।মন্দাকিনী হেসে গাড়ীতে উঠে বলল,ফোন করব। গাড়ী চলে যেতে মনসিজ রাস্তা পেরিয়ে পার্কে ঢূকল যা ভেবেছে তাই।বেলি বেঞ্চে বসে মনে হল কাদছে।কাছে এসে বলল,আবার কান্না হচ্ছে।আমি কি এমন বলেছি?তুমি আমাকে মাস্তান ভাবো না? প্রজ্ঞা চোখ মুছে বলল,কাদতে আমার বয়ে গেছে।তুই আজ যা করলি আমি কি করতে বলেছি? --ছেলেটা তোমার উপর তেড়ে যায়নি?তুমি আমাকে মাস্তান কেন বলো? --আমার ইচ্ছে।মাস্তান মানে জানিস? --বাচ্চা ছেলেরাও জানে গুণ্ডা মাস্তান কি? --অশিক্ষিতদের এই দোষ। --হ্যা আমি অশিক্ষিত তুমি তো শিক্ষিত। --মাস্তান মানে মাতোয়ারা মাতাল। --আমি মদ খাই জানা ছিল না।কি কাজ আছে বলছিলে? --কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা কথাটা শুনেছিস? মনসিজের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বেলিটা এত বকতে পারে।কাজ  আছে কি কাজ আছে বললেই হয় তানা কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা শালা যতসব।ঐ মেয়েটার সঙ্গে গেছিল সেজন্য বলছে নাতো? বিরক্ত হয়ে বলল,তুমি কি ভেবেছো তোমার বন্ধুর প্রেমে পড়েছি? --তুই বেলির প্রেমে পড়েছিস। --আবার ইয়ার্কি? --বেলির বিপদ শুনে কেন ছুটে এলি?বেলির সঙ্গে ছেলেটা খারাপ ব্যবহার করেছে বলে কেন ঝাপিয়ে পড়লি? বেলি কাদছে দেখে কেন তোর কষ্ট হচ্ছে? --আমার কান্নাকাটি ভাল লাগে না। প্রজ্ঞা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আমি তোকে ডেকেছি অন্য কারণে। এখন কথা ঘোরানো হচ্ছে বেলিটা হেভি চালু।মনসিজ কিছু বলে না,দেখা যাক কি বলে। --চল আমাকে পৌছে দিবি। --এইটা তোমার কারণ? --থাক তোকে যেতে হবে না।প্রজ্ঞা পার্ক থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ ধরে হাটতে শুরু করল। রাগ আছে ষোলোআনা মনসিজ পার্ক থেকে বেরিয়ে প্রজ্ঞাকে অনুসরণ করতে থাকে।মিট্মিট করে হাসে প্রজ্ঞা।রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলে না।কলকাতা মনসিজের অচেনা দু-পাস দেখতে দেখতে হাটতে ভাল লাগছে।এক সময় একটা দোতলা বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে প্রজ্ঞা। --তুমি এখানে থাকো?মনসিজ জিজ্ঞেস করল। --আয় ভিতরে চল। --না না বেলি তোমার মাসীমা আবার উল্টোপাল্টা সন্দেহ করতে পারেন? প্রজ্ঞা অতি কষ্টে হাসি সামলে নিয়ে বলল,তুই আমাদের পাড়ায় আগে থাকতি হঠাৎ দেখা হয়ে গেল।আর সন্দেহ করল তো বয়ে গেল। --বুঝতে পারছো তোমার বাবা যদি জানতে পারেন তাহলে তোমার কলকাতায় পড়া বন্ধ করে দেবেন। --তুই এত বকতে পারিস,চল ভেতরে চল। পুরানো আমলের বিশাল বাড়ী ঘরটা বেশ বড়।সোফা দিয়ে সাজানো পরিপাটি।মনসিজকে বসতে বলে উপরে উঠে গেল প্রজ্ঞা।মনসিজ চারপাশ দেখতে থাকে।দেওয়ালে হাতে আকা তৈল চিত্র। বেলির মাসীও বেশ বড়লোক মনে হল।  খাবারের ট্রে হাতে এক মহিলা প্রবেশ করল।এই কি বেলির মাসী মনসিজ বুঝতে পারেনা।ট্রেটা সেণ্টার টেবিলে রেখে একটা ঝোলা ব্যাগ মনসিজকে দিয়ে বলল,এইটা দিদিমণি দেল। মহিলা মাসী নয় মনসিজ নিশ্চিত হল।ঝোলা ব্যাগ খুলে দেখল একটা সাধারণ জ্ঞানের বই কিছু কাগজ পত্র।বেলি ওর মাসীকে নিয়ে ঢূকলো।মনসিজ উঠে দাড়াতে ভদ্রমহিলা বসতে বললেন।একেবারে বেলির মায়ের মত দেখতে।বেলি বলল,এই আমার মাসীমণি।সবার ছোট সবার আদরের চারুলতা সেন।আর এর নাম--কিরে নাম বল। --মনসিজ মজুমদার। বড়দির এই মেয়েটা ছোট থেকেই ডাকাবুকো কিন্তু ওর মনটা খুব সরল।জামাইবাবুর প্রশ্রয়ে দস্যিপনা বেড়েছে।সোফায় বসে মনসিজের আপাদ মস্তকে চোখ বুলিয়ে নিলন।দেখতে শুনতে বেশ এক  পলক দেখে ছেলেটিকে পছন্দ হয়।চারুলতা হেসে বললেন,আমাদের চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট।পুব পাকিস্তান হতে আমার দাদু এখানে বালীগঞ্জে বাড়ী করেন।এখন বড়দা ওখানে থাকে।মেজদা এ্যামেরিকা।তোমার দেশ কোথায়? --শুনেছি যশোর জেলা থেকে আমার বাবা এসেছে। --মাসীমণি তোমরা কথা বলো।প্রজ্ঞা উপরে উঠে গেল। --তোমার বাবা কি করেণ? --উনি মারা গেছেন। --স্যরি।কি করতেন? --উনি সরকারী কেরাণী ছিলেন। চারুলতার মুখে কালোছায়া পড়ে একটু ভেবে জিজ্ঞেস করেন,তুমি কি করো? --আমি বি এস সি পাস করেছি। প্রজ্ঞা এসে ঢুকল।চারুলতা জিজ্ঞেস করেন,কোন সাবজেক্ট? --ফিজিক্স অনার্স। --বাঃ।এখন কি এম এস সি? --ওর বাবার মৃত্যুর পর ওকেই সব দেখতে হয় চাকরির চেষ্টা করছে।প্রজ্ঞা বলল।  ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো ভাগ্যিস বেলি এসেছিল।চারুলতা বললেন,তোমাদের কি নিজেদের বাড়ি? --আগে তাল্পুকুরে ভাড়া থাকতাম তারপর সিথিতে ফ্লাট কিনেছি। --তুমি খাও।বেলি উপরে আয়। চারুলতা চলে গেলেন।বেলি কাছে এসে বলল,ঘাম মুছে ফেল বলে মাসীর সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল।উপরে এসে মাসীমণির মুখ দেখে প্রজ্ঞা বুঝতে পারে মাসীমনির পছন্দ হয়নি। চারুলতা বললেন,ছেলেটি দেখতে বেশ কিন্তু বাইরের রূপই কি সব? --মাসীমণি ও আমাকে বুক দিয়ে আগলে রাখবে। --ওসব নাটক নভেলে শুনতে ভাল লাগে।সংসার বড় কঠিণ ঠাইরে মা।মাথার উপর বিধবা মা বাপের পেনশন একমাত্র ভরসা। --আহা এখনই কিছু করছি নাকি? --বড়দি জানে? --কেউ জানে না।তুমি এখনই কিছু বোলো না।কয়েক বছর দেখি।বেলিকে তুমি অত বোকা ভাবো নাকি? --তুই আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলি।শেষে জামাইবাবু আমাকেই দুষবে।যা নীচে যা কি করছে একা একা। --মাসীমণি আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না।বেলি তোমারই বোন-ঝি। প্রজ্ঞা চলে যাচ্ছিল চারুলতা ডাকলেন,বেলি শোন।প্রজ্ঞা কাছে আসতে জিজ্ঞেস করেন,তুই ওর সঙ্গে ওভাবে কথা বলছিলি কেন?্বয়সে তোর চেয়ে বড় না? প্রজ্ঞা হেসে ফেলল। --তুই হাসছিস? --শাসনে রাখতে হচ্ছে লাই দিলে মাথায় চড়ে বসবে। প্রজ্ঞা নীচে নেমে দেখল প্লেট একেবারে শেষ,জিজ্ঞেস করল,আর মিষ্টি দেবে? --পাগল আমি রাক্ষস নাকি? এক প্লেট মিষ্টি চেটেপুটে খেয়েছে।প্রজ্ঞা হাসি সামলাতে পারে না।হঠাৎ হাসির কি কারন মনসিজ বোঝার চেষ্টা করে। --মাসীমণিকে প্রণাম করেছিস? --এমা ভুল হয়ে গেছে। প্রজ্ঞা গলা চড়িয়ে ডাকল,মাসীমণি একবার নীচে আসবে,তোমাকে ডাকছে। --আমি ডাকলাম কোথায়? প্রজ্ঞা ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলে বলল,প্রণাম করে বলবি আমি আসি। চারুলতা নীচে আসতে মনসিজ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল,আণ্টি আজ আসি। চারুলতা চিবুক ধরে আশির্বাদ করলেন।মনসিজ রাস্তায় বেরিয়ে এলো সঙ্গে প্রজ্ঞাও বলল,শোন একটা জেনারেল নলেজের বই--এটা লেটেস্ট  আর কিছু সাজেশন আছে,সময় হয়ে এল---।   মোবাইল বাজতে মনসিজ বাটন টিপে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো...মন্দাকিনী...কেন চিনব না...এখন আমি...।প্রজ্ঞা হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,কিরে মন্দা ফোন করেছিস কেন...আহা এতে ধন্যবাদ জানাবার কি হল...ও এসব কার্টসি ফার্টিসির ধার ধারে না...আচ্ছা রাখছি। 
Parent