ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৮১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-4119072.html#pid4119072

🕰️ Posted on December 16, 2021 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 954 words / 4 min read

Parent
   ।।৮১।। কাল মীনাক্ষীর বৌভাত।আত্মীয় স্বজন যারা দূর থেকে বিয়েতে এসেছিল তাদের কেউ কেউ থেকে গেছে।একেবারে সেরে বৌভাত সেরে তারা যাবে।আজ ছুটি সেজন্য রুক্সানা এসেছে দিলীপের কাছে।ওদের ব্যাপারটা বাড়ীর সবাই জানে।দিলীপ তার লেখা গল্প পড়ে শোনায়। আবেগ দিয়ে দিলীপ পড়ে চলেছে রুক্সানা উস্খুস করে।একসময় গল্পের শেষ লাইন পড়ে দিলীপ চোখ তুলে রুক্সানার দিকে তাকায়। রুক্সানা বুঝতে পারে না কি বলবে।এসেছে একটু গল্প করতে এখন তাকে গল্প শুনে মতামত দিতে হবে। রুক্সানা বলল,ভালই হয়েছে।পাঠিয়ে দেও। --পাঠাবো তো বটেই তোমার কেমন লেগেছে? --বললাম তো ভালই হয়েছে,শেষটা মানে--। --মনীষা সঞ্জয়কে ছেড়ে গেল তোমার খারাপ লেগেছে? --হ্যা মানে এতদিনের প্রেম--। --দেখো রুক্সা মনীষার এই চলে যাওয়া আমাকেও খুব কষ্ট দিয়েছে কিন্তু আমার কিছু করার ছিলনা। --আচ্ছা বাদ দাও।কাল কখন আসবো? --সন্ধ্যে ছটার মধ্যে বাস চলে আসবে।নির্মলের কথা কি বলছিলে? রুক্সানা হাসল।দিলুর বন্ধু নির্মল এখন তার সহপাঠী।দুজনেই ববীন্দ্রভারতীতে পড়ে।বলল,তুমি আবার বলতে যেওনা।তোমার বন্ধু কিন্তু খুব সুবিধের নয়। দিলীপ হেসে বলল,কেন কি করেছে? --ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ে গাড়ী নিয়ে কলেজে আসে তার সঙ্গে খুব দেখা যায়। --ফুল দেখলে ভ্রমর যাবেই এত স্বাভাবিক। --বাঃ বেশ বললে তো?ওর গার্ল ফ্রেণ্ড আছে না। দিলীপ গম্ভীর হয়ে গেল।রুক্সানা বলল,এর পরও বলবে স্বাভাবিক? --তুমি জানো না অবশ্য আমিও ভাল জানি না।শুনেছি রীমা ইদানীং একটু অন্য রকম আচরণ করছে। --মানে?এতদিনের প্রেম--। --দেখো প্রেম কোনো নিরালম্ব কিছু নয়,কিছু একটা অবলম্বন করে টিকে থাকে।মনা একটা মজার কথা বলেছিল প্রেম হচ্ছে ব্যঞ্জন বর্ণের মত স্বরবর্ণের সাহায্যে উচ্চারিত হয়।দিলীপ হাসতে হাসতে বলল। রুক্সানার মনে হয় কথাটা তাকে ইঙ্গিত করে বলল। --আচ্ছা আমি কেন চলে গেছিলাম বলে তোমার মনে হয়? --কেন আবার একটা বাউণ্ডূলে ছেলে ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়ায় কোনো ভবিষ্যৎ নেই কোন ভরসায় থাকবে? মুখ টিপে হাসে রুক্সানা,দিলুটা অনেক বদলে গেছে। দিলীপ বলল,বেলা হল চলো তোমাকে এগিয়ে দিই।ওদের আসার সময় হয়ে এল। বঙ্কিমের পেট ফাপছে কখন সবাইকে খবরটা দেবে।হাটতে হাটতে বোসবাড়ীর দিকে এগোতে থাকে।দূর থেকে নজরে পড়ে আড্ডা জমে উঠেছে।মনে হয় কালকে বিয়ে বাড়ী যাবার কথা নিয়ে কথা হচ্ছে।বঙ্কিম রকে বসতে বসতে বলল,শুভর কথাই ঠিক। সবাই বঙ্কিমের দিকে তাকায়।বঙ্কিম বলল,কাল মনা যাবে না। --তোর সঙ্গে দেখা হয়েছিল? --ওর বউয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। --এ্যাই পিয়াজী রাখতো তুই কি করে জানলি? বঙ্কিম সবিস্তারে সকালে বাজারের ঘটনাটা খুলে বলল। --যেই মহিলা রকের থেকে ওকে ডেকে নিয়ে গেল? --একদিনেই বিয়ে হয়ে গেল? বঙ্কিম বলল,অবশ্য শুভর কথা একেবারে ঠিক তা নয়।আই এ এস অফিসার হয়েছে বলে নয় ও এখন লক্ষ্ণৌতে সেজন্য আসতে পারছে না।এইতো দিলীপ এসে গেছে শুনেছিস? --কি ব্যাপারে?দিলীপ রকের এক জায়গায় বসল। --মনা বিয়ে করেছে। --কাকে? --ঐ যে মহিলা মনাকে রক থেকে ডেকে নিয়ে গেল। --তোকে কে বলল মনা কোথায়?কাল যাবার কথা বলেছিস? --মনা এখন ট্রেনিং-এ লক্ষ্ণৌতে। --খুব ভাল খবর।ভাবতে ভাল লাগছে আমাদের একজন বন্ধু জীবনে কিছু করে দেখালো। --একটা কথা আছে জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে,কার কোথায় বিয়ে হবে কে বলতে পারে।নির্মল উদাস গলায় বলল। --তুমি তো এখন ডূবে ডুবে জল খাচ্ছো?নির্মলকে বলল দিলীপ। --কিসের জল খাওয়া? --গাড়ী নিয়ে আসে মেয়েটা কে? --তোকে কে বলেছে রুক্সানা? --যেই বলুক সত্যি কিনা তাই বল। --মেয়েটি ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে।শুনেছে আমি সিথিতে থাকি জিজ্ঞেস করছিল মনাকে চিনি কিনা? --শালা এখানেও মনা? ট্রেন চাকদায় থামতে প্রজ্ঞা নেমে পড়ল।মামণির জন্য চিন্তা হয়।ভাবছে মাস্তান টাকা পাঠালে একটা ফোন কিনে দেবে।স্টেশন হতে বেরোতে নজরে পড়ে গাড়ী থেকে নেমে রমিবৌদি হাত নাড়ছে।প্রজ্ঞা গাড়ীর দিকে এগিয়ে যায়।দাদা নেই গাড়ীটা এখন বৌদির একমাত্র সঙ্গী।গাড়ী নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়।কাছে যেতে রমিতা বলল,কি ব্যাপার তুমি বাদিকে সিথি করেছো? --কেন খারাপ লাগছে? --আহা তোমার যা রূপ তোমাকে সব কিছুতেই ভাল লাগে।স্টিয়ারিঙ্গে বসতে বসতে বলল রমিতা। প্রজ্ঞাও সামনে উঠে পাশে বসল।রমিতা বলল,পাড়াটা একটু ঘুরবে? --না না গাড়ীতে অনেক ধকল গেছে তুমি বাড়ী চলো। --দিন দিন তুমি আরো সুন্দর হচ্ছো। লাজুক হাসে প্রজ্ঞা। বাড়ীর সামনে গাড়ী দাড়াতে প্রজ্ঞা নেমে সোজা তোতলায় উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।দরজা ভেজিয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সিথির দিকে তাকালো,রমিতা বুঝতে পারেনি। আশালতা ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন,পুটি কেমন আছে? প্রজ্ঞা ঘুরে তাকিয়ে দেখল মা হেসে বলল,ভাল--সবাই ভাল আছে। --তুই কি কলেজ থেকে আসছিস? --আজ ছুটি ছিল।তুমি কেমন আছো মা? --আমার কি খারাপ থাকার জো আছে।মায়ের কথায় অভিমানের ছোয়া। নীচে গাড়ীর শব্দ হতে আশালতা বলল,মনে হচ্ছে ফিরলো।নীচে চলে গেলেন। বিজন চৌধুরী পোশাক বদলে একটা চেয়ারে আয়েশ করে বসলেন।আশালতা ঢুকে বললেন,বেলি এসেছে। কাজের মাসী চা নিয়ে ঢুকতে আশালতা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে বললেন,বেলির কি দরকার দ্যাখ। স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে বিজন চৌধুরী চুমুক দিয়ে বললেন,কখন এল? --তুমি আসার একটু আগে। ফোন বাজতে টেবিল হতে রিসিভার তুলে কানে লাগিয়ে বললেন,চৌধুরী স্পিকিং...হুম...মি.জিন্দালকে কাগজ পত্র দিয়ে দিন...দেখব.. দেখব...কোলকাতার বাইরে যাই না...জিন্দাল সব জানে...ওকে বাই।ফোন রেখে তাকিয়ে দেখলেন এক মুখ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে আশা।হেসে বললেন,দাড়িয়ে রইলে কেন বোসো। আশালতা একটা চেয়ার টেনে বসতে বিজন চৌধুরী নিজের মনে বলেন,কলকাতায় একা একা কি যে করে মেয়েটা বাড়ী এলে মুখটা দেখলে শান্তি। --তোমায় কবে থেকে বলছি কোলকাতায় একটা বাড়ি কেনো--। বিজন চৌধুরী ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখেন।অতীত দিনগুলো যেন সামনে এসে দাড়ায়।তারপর বলেন,এক মক্কেল বলছিল কলকাতার কাছে সল্টলেকে একটা বাড়ীর কথা।বউমার তো এখানে মন টেকে না।বুলু এলে ওখানেই থাকবে। বাপির কাছে কিভাবে কথাটা বলবে প্রজ্ঞার মনে সেকথা আন্দোলিত হয়।মাকে বলা যাবে না শুনেই বিচার বিবেচনা না করে হৈ-চৈ শুরু করে দেবে।পুটি মাসীর কাছে শুনেছে ছোট থেকেই মা খুব জিদ্দি।ভাই-বোন সবাই মাকে খুব ভয় করে।মোবাইল বাজতে স্ক্রিনে নাম দেখে চমকে উঠে এদিক ওদিক দেখে কানে লাগায়,কি বল...এখন পৌছালি...আমি বাড়ীতে জয়েন করে কাল খবর দিবি...সাবধানে থাকিস...গুড নাইট..বাই। ভালোয়-ভালোয় লক্ষ্ণৌ পৌছে গেছে।কাল থেকে ওর নিয়োগ কার্যকরী হবে।রাত বাড়তে থাকে।মা উপরে উঠে এসেছে নীচে বাপি একা।সন্তপর্ণে নীচে নেমে বাপির ঘরে উকি দিতে বিজন চৌধুরী বইয়ে নিমগ্ন থাকলেও  বললেন,আয় মা। প্রজ্ঞা ভিতরে ঢুকে সামনের চেয়ারে বসে বলল,কেমন আছো বাপি? --কিছু বলবি? প্রজ্ঞা ঢোক গিলে বলল,আচ্ছা বাপি ধরো তোমাকে না জানিয়ে কিছু করে ফেলি তুমি কি রাগ করবে? বিজন চৌধুরী মুখের উপর থেকে বই সরিয়ে মৃদু হেসে বললেন,না। --কেন? --আমি জানি তার বাপির অসম্মান হয় আমার মা তেমন কিছু করতে পারবে না। --কি করে বুঝলে? --কত লোক আমার কাছে আসে কত কথা বিনিয়ে বিনিয়ে আমাকে বলে আমি মন দিয়ে শুনিনা একদিনের সাক্ষাতে বুঝতে পারি আসলে কি বলতে চায়।আর তুই যেদিন থেকে এলি--যাক কিছু করেছো?  --তোমাকে একটা কথা পরে বলব।এখন চলো মা খেতে ডাকছে।  
Parent