ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৮২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-4130560.html#pid4130560

🕰️ Posted on December 19, 2021 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 786 words / 4 min read

Parent
।।৮২।। মেয়ের মুখে কথাটা শোনা অবধি মনের মধ্যে একটা খুতখুতানি শুরু হয়।পরে বলবে নিশ্চয়ই মেয়ে তার কোনো কিছু গোপন করবে না।তবু বিজন চৌধুরীর মনে অস্থিরতা বাড়তে থাকে।কিছু একটা হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত।খাওয়া দাওয়ার পর আবার নীচে নামলেন।আশালতা জিজ্ঞেস করেন,আবার কোথায় যাচ্ছো? --আসছি একটা জিনিস রেখে এসেছি। বিজন চৌধুরীর মনে হল চারু হয়তো এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে।নীচে নেমে টেলিফোনের ডায়াল ঘোরালেন।রিং হচ্ছে...ঘুমিয়ে পড়ল নাকি?হ্যালো কে অশোক...হ্যা আমি বলছি...চারুকে দেওয়া যাবে...শুয়ে পড়লে থাক...বেলি বলছিল...হোয়াট...হোক আইএএস অফিসার আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করোনি...ও বলল মানে ওর কত বয়স...না না অশোক তোমাদের ওখানে রাখাই ভুল হয়েছে...না চারুকে বিরক্ত করার দরকার নেই...ভুল বোঝার প্রশ্নই আসছে না...ঠিক আছে রাখছি..গুড নাইট। রিসিভার নামিয়ে রেখে বিজন চৌধুরী চেয়ারে বসে পড়লেন।টেলিফোন শোনা খবরটা মনের মধ্যে তোলপাড় করতে থাকে।এমন একটা খবর শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।ছেলেটা আইএএস অফিসার কোন পদে আছে জিজ্ঞেস করা হল না।কথাটা শোনার পর এমন উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন কোথায় থাকে কেমন পরিবার কিছুই জিজ্ঞেস করা হয়নি।বেলির কাছে সব জানা যাবে।ও যে এমন একটা কাজ করতে পারে কখনো মনে হয়নি।বিয়ের কথা বললেই বলতো পাস না করে কোনো কিছু ভাবছে না। লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ল প্রজ্ঞা।মাস্তান ভালয় ভালয় পৌছেচে।রাতে শুয়ে ওর কথা মনে পড়ে আগে এমন হতোনা।মোটামুটি ভূমিকা করা হয়েছে আসল কথাটা বলা হয়নি।কিভাবে বলবে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে।পাত্র হিসেবে ও খারাপ কি,সুন্দর সুঠাম চেহারা সহজ সরল বাপির অসম্মান হবার কোনো কারণ খুজে পায় না।তেমন হলে লক্ষ্ণৌ চলে যাবে চরম অবস্থাটাও ভেবে রেখেছে।লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে এই যা।পাশ ফিরে শোয়ে প্রজ্ঞা। স্বামীর পাশে শুয়ে আশালতা লক্ষ্য করেন কেমন চুপচাপ।জিজ্ঞেস করলেন,তোমার কি হয়েছে বলতো? স্ত্রীর দিকে ঘুরে হেসে বললেন,কি আবার হবে। --একটা জিনিস লক্ষ্য করেছো বেলির চেহারা দিন দিন ফেটে পড়ছে? --হু-উ-উম। --হুম কি এবার মেয়ের বিয়ের কথা ভাবতে হবে তো নাকি? --সময় হলেই বিয়ে হবে। --আচ্ছা সত্যি করে বলতো কোর্টে কিছু হয়েছে? বউকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বীজন চৌধুরী বললেন,এই তো আমার আসল কোর্ট। স্বামীর বুকে মুখ চেপে মৃদু স্বরে বললেন আশালতা,বুড়ো বয়সে যত আদিখ্যেতা। একসময় গভীর ঘুমে ডুবে যান।আশপাশের কোলাহল ক্রমশ স্তিমিত হয়ে আসে।  মানিব্যাগ খুলে দেখল বেলি অনেক টাকা দিয়েছে। ট্রলি ব্যাগ টানতে টানতে মনসিজ এগোতে থাকে। একটা সস্তার হোটেল খুজে বের করে রাতটা কাটাবার জন্য।বাংলা কেউ বোঝে না ইংরেজীও সবাই বোঝে না।ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দি দিয়ে কাজ চালাতে হয়।রাতটা কোনমতে পার করে কাল সকালে বেরিয়ে পড়বে।অফিসটা দেখে এসেছে। প্রজ্ঞা একটু বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে।বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মায়ের ঘরে উকি দিয়ে দেখল বিছানায় আধশোয়া হয়ে বাপি কাগজে চোখ বোলাচ্ছে।কাগজ থেকে চোখ না তুলেই বিজন চৌধুরী বললেন,আয় মা। বিজন চৌধুরী সোজা হয়ে বসে মেয়েকে বসতে ইঙ্গিত করলেন।প্রজ্ঞা খাটে পা ঝুলিয়ে বসল। --পড়াশুনা কেমন চলছে? প্রজ্ঞা দেখল বাপির চোখ কাগজে বলল,ভালই। --আজ কলেজ আছে তো? --হ্যা। চোখ না তুলেই বিজন চৌধুরী বুঝতে পারেন বেলি কিছু বলতে চাইছে। --বাপি আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি,সেও আমাকে পছন্দ করে। বিজন চৌধুরী নির্বিকার প্রজ্ঞার অবাক লাগে বাপির কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে।প্রজ্ঞা বলল,আমি ওকে বিয়ে করেছি। বাপি কিছু বলছে না দেখে প্রজ্ঞা বলল,তুমি কি রাগ করেছো? কাগজটা সরিয়ে রেখে বিজন চৌধুরী সরাসরি মেয়ের দিকে তাকালেন।প্রজ্ঞা মাথা নীচু করে বসে থাকে।বিজন চৌধুরী বললেন,তুমি বলেছিলে পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না। --আমি তো পুটিমাসীর বাড়ীতেই থাকি।বিয়ে নামেমাত্র--। --আর ছেলেটি? --ও এখন লক্ষনৌতে আছে। বিজন চৌধুরীর ভ্রু কুচকে যায়।প্রজ্ঞা বলল,এবার সিভিল সার্ভিস পাস করে লক্ষ্ণৌতে ট্রেনিং-এ গেছে। --সবে পাস করেছে? --হ্যা ট্রেনিং-এ যাচ্ছে বলেই তো তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেললাম। বিজন চৌধুরীকে চিন্তিত মনে হল। --বাপি আমি কি অন্যায় করেছি? --ইণ্ডিয়া ক্যাডার ট্রেনিং শেষে বিহার কি ইউপিতেও পোস্টিং হতে পারে। --আগে মনে হয়নি তাহলে ওকে বিসিএস-এ বসাতাম। বিজন চৌধুরীর ঠোটে হাসির প্রলেপ,তুমি ওকে ইউপিএসসির পরীক্ষায় বসিয়েছো? --হ্যা ওতো কেরাণীগিরি করবে ভেবেছিল। --ঠিক আছে একটা কাগজে ওর ডিটেলস লিখে আমাকে দিয়ে যাও। প্রজ্ঞা উৎসাহিত হয়ে একটা কাগজে মনসিজের নামধাম এ্যাপয়মেণ্টের একটা কপি এগিয়ে দিল।বিজন চৌধুরী কাগজে চোখ বুলিয়ে বললেন,মনিময়বাবুর ছেলে?তোমার সঙ্গে কোথায় দেখা হল? --ওরা কলকাতার সিথীতে ফ্লাট কিনেছে। --উনি সব জানেন? --উনি মারা গেছেন।মাকে নিয়ে বেশ কষ্টে কাটছিল। বিজন চৌধুরী সমগ্র ব্যাপারটা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন।তারপর হেসে বললেন, আমি আবার মেয়ের বিয়ে দেবো। প্রজ্ঞা অবাক হয়ে তাকায়।বিজন চৌধুরী বললেন,ট্রেনিং শেষ হলে ধুমধাম করে বিয়ে দেবো। প্রজ্ঞা ঝাপিয়ে পড়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,আমার সোনা বাপি। মেয়ের খুশিতে আপ্লূত হন বিজন চৌধুরী বললেন, এখনই মাকে কিছু বলার দরকার নেই।   প্রজ্ঞা স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়ল।ওর মনে এখন হাজার মৌমাছির গুঞ্জন।মাস্তানকে এখন কিছু বলার দরকার নেই।আজ রিপোর্টিং করার কথা।অজানা অচেনা জায়গা কি করছে কে জানে।কলেজ না থাকলে ও সঙ্গে যেতো।শিয়ালদা স্টেশন হতে বেরিয়ে ট্রামে চেপে বসল।এত বেলা হল ফোন করল না ঠিক জায়গায় পৌছেছে তো?সায়েন্স কলেজের কাছে আসতে নেমে পড়ল।কদিন কলেজ কামাই হয়ে গেছে।হন হন করে কলেজের দিকে এগিয়ে যায়।গেটে ঢোকার মুখে মোবাইল বেজে উঠল।কানে লাগিয়ে বলল,বল ...হ্যা মামণি ভাল আছে,তোর কথা বল...এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট লেটার পেয়ে গেছিস...আচ্ছা যা, ছুটি হলে ফোন করবি...রাখছি। ক্লাসে ঢুকতেই শুভেন্দু জিজ্ঞেস করল,কিরে কদিন কলেজে আসিস নি কেন? --জরুরী কাজে আসতে পারিনি।স্যার কিছু নোট দিয়েছে? --তোর জন্য জেরক্স করে রেখেছি। প্রজ্ঞা হোচট খায়,জেরক্স করে রেখেছে। কোনো স্বপ্ন বাসা বাধেনি তো?বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না এক সময় ভেঙ্গে দেওয়া দরকার। 
Parent