ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - অধ্যায় ৮৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-39690-post-4643859.html#pid4643859

🕰️ Posted on January 20, 2022 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 933 words / 4 min read

Parent
।।৮৯।।   কাল রাতের কথা আন্দোলিত হয় মনে।জানলা দিয়ে নজরে পড়ে চেনা কলকাতার ছবিগুলো সরে সরে যাচ্ছে।প্রজ্ঞা আড়চোখে দেখে একেবারে চুপচাপ মাস্তান।কেমন জানলার দিকে ঘেষে বসে আছে পাশে যে ওর বউ বসে কে বলবে। এতদিন পরে দেখা হল তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই।প্রজ্ঞা বলল,কিরে কি ভাবছিস? মনসিজ তাকিয়ে হাসলো। --ওই মহিলার কথা ভাবছিস? মনসিজ চমকে ওঠে বেলি কি মনের কথাও বুঝতে পারে?প্রজ্ঞা ভ্রু নাচিয়ে বলে,কিরে? --আচ্ছা বেলি আমাকে দেখলে কি বাঙালী মনে হয়না? কি কথার কি উত্তর প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করে,হঠাৎ একথা কেন মনে হল? --রঞ্জিতা বলছিল আমাকে নাকি বাঙালী মনে হয়না।  --তুই কি ওকে আগে চিনতিস? --না না ট্রেনেই আলাপ।ওর ছিল লোয়ার বারথ আমার টপ।ও বলল আকেলি আউরত ও উপরে শোবার কথা বলল।কিন্তু উপরে না উঠে নীচে বসে সারাক্ষন বক বক--কি বকতে পারে।অনেক রাতে উপরে উঠে শুয়ে পড়ল। --জিজ্ঞেস করেনি লক্ষনৌ কেন এসছিলি? --না জিজ্ঞেস করেনি আমিও কিছু বলিনি। --কি বক বক করছিল? --তার কোনো মাথামুণ্ডূ আছে....কে নাকি ওর পিছনে লেগেছিল তাকে কিভাবে টাইট দিয়েছে...আমি অত মন দিয়ে শুনছিলাম নাকি? --কেন মন কোথায় ছিল? মনসিজ হাসল বলল,ভাবছিলাম কতক্ষনে মায়ের সঙ্গে দেখা হবে।প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার কথাও ভাবছিলাম। প্রজ্ঞা লাজুক হাসে।মনসিজ বলল,কি বিশ্বাস হচ্ছে না? --তুই মিথ্যে বলবি না আমি জানি। কৃষ্ণাদের বাড়ী ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।ওখানে চারতলা ফ্লাট হবে।আশিস চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রোমটারি শুরু করেছে।আশিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে।রাস্তার ধারে বেশ ভালো অবস্থান।ইতিমধ্যে বেশ কিছু মানুষ যোগাযোগ করেছে ফ্লাট বুক করতে চায়।প্রতিটা ফ্লোরে টু-রুম চারটে করে ফ্লাট হবে। কিছুটা গাথাহলে বুকিং শুরু করবে।টাকার দরকার।কৃষ্ণার জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেছে। একদিন বঙ্কার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলল,কিগো আশিসদা রকের কথা ভুলে গেলে? --ভুলিনি সব খবর রাখি, যাব একদিন। মনা সিভিল সার্ভিস পাস করে ট্রেনিং-এ গেছে,নির্মলের সঙ্গে রীমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে বঙ্কার কাছে শুনলো  অনেক কথা।সারাদিন বাইরে বাইরে থাকে সন্ধ্যে বেলা বাসায় ফিরে মেয়েটার সঙ্গে দেখা হয়।আর বেরোতে ইচ্ছে করে না।বঙ্কাকে এসব কথা বলেনি।মনাটা অন্যরকম একদিন ও বড় কিছু করবে আশিস জানতো।কত ঝড়ঝাপ্টা ছেলেটার উপর দিয়ে গেছে।কৃষ্ণার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য  যখন কিছুটা রেখে ঢেকে বলে মনার পরামর্শ চেয়েছিল, মনা কৃষ্ণার পক্ষ নিয়েই বলেছিল।এতো দেখছি উলটো ব্যাপার কার সঙ্গে পরামর্শ করছে। সেদিন খারাপ লাগলেও আজ বুঝেছে মনাই ঠিক।কৃষ্ণাই তার জীবনকে বদলে দিয়েছে।   বোসবাড়ির রক অতিক্রম করতে মনে পড়ল ওদের কথা।এখনো কি ওদের আড্ডা বসে।শান্তনীড়ের নীচে ট্যাক্সি থামতে ওরা ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল। প্রজ্ঞা উপরে তাকিয়ে দেখল বারান্দায় কেউ নেই।মাস্তানকে দেখে মামণির কি প্রতিক্রিয়া হবে অনুমান করার চেষ্টা করে। হিমানীদেবীর রান্না শেষ।বেলি বলেছে এখানে খাবে।সব গুছিয়ে বারান্দায় গিয়ে উকি দিলেন।ডোর বেল বাজতেই বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল, দ্রুত দরজা খুলতে গেলেন।  মনসিজ ঢুকতে আপাদ মস্তক চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকেন হিমানীদেবী।মনসিজ জিজ্ঞেস করল,কি দেখছো মা? --দেখছি তুই কত বড় হয়ে গেছিস।  মনসিজ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,তুমি ভাল আছো তো মা? --বেলি খারাপ থাকতে দিলে তো। মনসিজ মায়ের ঘরে গিয়ে বাবার ছবির সামনে স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে পড়ে ছবির দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে।প্রজ্ঞা লক্ষ্য করে মাস্তানের চোখে জল।হিমানীদেবী ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলেন প্রজ্ঞা বাধা দিল।বাইরে থেকে ছেলেকে দেখে তারও চোখ ঝাপ্সা হয়ে এল বললেন,ওর বাবার ওকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,দেখে যেতে পারল না লোকটা। --মামণি সেই সকালে বেরিয়েছি একটু চা খাওয়াবে?প্রজ্ঞা পরিস্থিতি হালকা করতে বলল। --চা খাবি?এখুনি করে দিচ্ছি। প্রজ্ঞা মনসিজের ঘরে গিয়ে বসল।বাইরে ডাকাবুকো ভাব কিন্তু মাস্তানটার মন খুব নরম।ছেলে মানুষের মত কাদতে দেখে প্রজ্ঞার খুব মায়া হয়।মনসিজ ঢুকে বলল,জানো বেলি আমার ব্যাপারে বাবা খুব হতাশ।আজ তাই বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।বাবা সারা জীবন পরিশ্রম করে গেছে কিন্তু আমি খুবই অলস। হিমানীদেবী চা নিয়ে ঢুকে বললেন,কিরে মনু স্নান করবি তো? --হ্যা স্নান করে নে শরীরটা ঝরঝরে লাগবে।প্রজ্ঞা বলল। --সারা শরীরের আবিলতা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। কথাটা তাকে ইঙ্গিত করে বলল প্রজ্ঞা বোঝে, ব্যাটা জাতে মাতাল তালে ঠিক,মনে মনে হাসে।মনসিজ স্নান করতে চলে গেল। একটা বই টেনে নিয়ে এলোমেলো চোখ বোলাতে থাকে প্রজ্ঞা।মাস্তানকে নিয়ে একটা চিন্তা মনের মধ্যে বিদ্যুতের মত ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছে।নিজেকে শাসন করে বাপি বলেছে ঘটা করে বিয়ে দেবে।তার সংযত হতে হওয়া উচিত। হিমানীদেবী ঢুকতে প্রজ্ঞা বলল,বোসো মামণি। খাটের একপাশে বসে হিমানীদেবী জিজ্ঞেস করলেন,বেলি মা আর কোথাও যেতে হবে নাতো মনুকে? --এই রাজ্যেই থাকবে তবে কাল জানা যাবে গভঃমেণ্ট ওকে কোন পদে বহাল করবে। অতীতে হারিয়ে যান ওর বাবা থাকলে আজ কি খুশিই হত।ছেলেটার চিন্তায় চিন্তায় ভাল করে ঘুমোতে পারতো না।মনসিজ ঢুকতে আচলে চোখ মুছে হিমানীদেবী বললেন,আয় খেতে আয়। শুভ একটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল,সরকারী চাকরি।শিউলিকে নিয়ে গেছিল প্যানেলে নাম উঠেছে কিনা দেখতে।নাম উঠলে ভাইভায় ডাকবে।দোতলায় উঠে নোটীশ বোর্ডের সামনে ভীড় দেখে বুঝতে পারে খবরটা ভুল শোনেনি।শুভ এগিয়ে যায় ভীড় সরিয়ে "এস" খুজতে খুজতে একেবারে তলায় চলে এল।বুঝতে পারে নাম ওঠেনি।হাসতে হাসতে ভীড় থেকে বেরোতে শিউলী জিজ্ঞেস করে,উঠেছে? --ধুস উঠবে না আমি জানতাম।কেরাণীর চাকরি বলে সিরিয়াস্লি পড়াশুনা করিনি। শিউলীর মন খারাপ হয়ে যায়।সিড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় এসে দাড়ায়।শুভ বলল,তুমি আবার কাউকে বলতে যেও না। --কাকে বলব আর একী বলার মতো খবর। --তোমার যা পেট পাতলা। --আমার পেট পাতলা,বাজে কথা বোলো নাতো। শুভ একটু ভেবে বলল,ভাবছি ব্যাঙ্কে ট্রাই করবো। --তাতাইদার সঙ্গে কথা বলো না। --ওই সব ধরাধরি করে শুভ ব্যানার্জী চাকরি করবে না। ওরা বাসস্ট্যাণ্ডে এসে দাড়ায়।সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে।ছায়া দীর্ঘ হয়। সারা রাত ট্রেন জার্নি করে নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছে মনসিজ।প্রজ্ঞা একটা পা কোমরে তুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।উষ্ণ নিঃশ্বাস বুকে লাগছে।মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী প্রজ্ঞা বুঝতে চেষ্টা করে সুন্দর পুরুষালী চেহারা পাশে যুবতী বউ এমন বেহুশ হয়ে ঘুমায় কিভাবে? মনে হয় ঘুম ভাঙ্গল দ্রুত কোমরের উপর থেকে পা-টা নামিয়ে নিল।মনসিজ চোখ মেলে হেসে বলল,ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।আসলে কাল বেশ ধকল গেছে। রান্না ঘরে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে মনে হয় মামণি উঠেছে।আজ কামাই হয়ে গেল কাল কলেজ যেতে হবে।হিমানীদেবী চা নিয়ে ঢুকলেন।মনসিজ উঠে বসে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিল।চায়ে চুমুক দিতে দিতে আড় চোখে বেলিকে দেখে।ভাবে কথাটা বললে বেলি কিভাবে নেবে। প্রজ্ঞা জিজ্ঞেস করল কিছু বলবি?  --অনেকদিন কারো সঙ্গে দেখা হয়না তাই ভাবছি--। --আড্ডা দিতে যাবি?  মনসিজ কোনো কথা বলে না প্রজ্ঞা মিট মিট হাসে তারপর বলল,যা ঘুরে আয় বেশি দেরী করবি না। চোখাচুখি হতে মনসিজ হেসে ফেলল।এতবড় অফিসার হয়েছে তবু পুরানো বন্ধুদের কথা ভুলে যায়নি,প্রজ্ঞার ভাল লাগে।অতীতকে যারা ভুলে যায় তারা ভয়ঙ্কর হয়।
Parent