ছায়ার আড়ালে আগুন -Crime Thriller [Part-2: দ্য গ্যাংওয়ার] - অধ্যায় ১৮
গল্প: "ছায়ার আড়ালে আগুন" (পার্ট-২: গ্যাংওয়ার)
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ: হোটেলের উৎসবে বিষাক্ত ফাঁদ
কলকাতার হৃদয়ে, একটি ফাইভ স্টার হোটেলের বলরুমে উৎসবের আলো ঝকমক করছিল। বিশাল ক্রিস্টাল ঝাড় সিলিং থেকে ঝুলছিল, তার প্রতিটি কাচের ফলকে রঙিন আলোর প্রতিফলন নাচছিল, যেন হীরের বৃষ্টি ঝরছে। পালিশ করা মার্বেলের মেঝেতে সোনালি আর লাল নকশার কার্পেট পড়েছিল, পায়ের তলায় নরম, বিলাসবহুল স্পর্শ দিচ্ছিল। বাতাসে দামি পারফিউম, সিগারের ধোঁয়া, আর শ্যাম্পেনের মৃদু মিষ্টি গন্ধ মিশে একটা মাদক আবহ তৈরি করছিল। লম্বা কাচের জানালার বাইরে শহরের আলোকিত স্কাইলাইন ঝকঝক করছিল, হুগলি নদীর দূরের ঢেউ চাঁদের আলোতে রুপোলি ঝিলিক দিচ্ছিল। বলরুমের এক কোণে একটি জ্যাজ ব্যান্ড মৃদু সুর তুলছিল, স্যাক্সোফোনের গভীর কণ্ঠ আর পিয়ানোর নরম ছোঁয়া বাতাসে ভাসছিল। টেবিলে সাজানো ছিল ক্রিস্টাল গ্লাসে শ্যাম্পেন, সোনালি প্লেটে ক্যাভিয়ার, আর রঙিন ককটেলের গ্লাসে বরফের মৃদু ঝংকার। এই উৎসব ছিল মুম্বাই থেকে আসা একটি বড় ড্রাগ অর্ডারের সাফল্যের উদযাপন, আর এর কেন্দ্রে ছিল চম্পা, শহরের ড্রাগ সিন্ডিকেটের উঠতি নক্ষত্র।
চম্পা, ৪১ বছর বয়সী, তার কুচকুচে কালো ত্বকে একটা তীক্ষ্ণ, ধূর্ত আভা। তার ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মিডিয়াম চেহারা একটি গাঢ় নীল সিল্কের সাড়িতে জড়ানো, সাড়ির পল্লব তার শরীরের বাঁকে আলতো লেপ্টে ছিল, যেন একটা বিষাক্ত সাপের চামড়া। তার চোখে গাঢ় কাজল, তার ঠোঁটে রক্তলাল লিপস্টিক, যেন একটা নির্মম হাসির ছোঁয়া। তার কানে ঝকঝকে হিরের দুল, প্রতিটি নড়াচড়ায় আলোর ঝিলিক তুলছিল। তার হাতে একটি পান্নার আংটি আর হিরের ব্রেসলেট, তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে একটা রাজকীয় নির্মমতা। তার পায়ের গঠন মজবুত, অথচ চকচকে সুন্দর, তার দীর্ঘ, সুগঠিত পায়ের আঙুলগুলো পরিষ্কার, মসৃণ, যেন একটা শিল্পকর্ম। সে একটি ক্রিস্টাল গ্লাসে শ্যাম্পেন নিয়ে বলরুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, তার ধূর্ত চোখে সবকিছু তদারকি করছিল। তার পাশে তার গ্যাংয়ের সদস্যরা—লালু, রাজু, নিতাই, নন্দু, আর শিবু—ব্যস্ত ছিল। লালু, তার মোটা গোঁফ আর খাকি জ্যাকেটে, টেবিলে পানীয় সাজাচ্ছিল, তার মুখে একটা দুষ্টু হাসি। রাজু, লম্বা, হাড়গিলে, তার কালো শার্টে ছুরির মতো তীক্ষ্ণ চেহারা, দরজার কাছে পাহারা দিচ্ছিল। নিতাই, ছোটখাটো, চটপটে, তার চোখে চোরা উত্তেজনা, অতিথিদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিল। নন্দু, তার টাক মাথায় চাঁদের আলো ঝকঝক করছিল, ব্যান্ডের সঙ্গে কথা বলে সুরের তাল ঠিক করছিল। আর শিবু, চম্পার ১৯ বছর বয়সী ছেলে, তার কুচকুচে কালো ত্বক আর দীর্ঘদেহী গঠনে একটা টাইট কালো টি-শার্ট, তার পেশীবহুল শরীরে একটা নির্মম শক্তি প্রকাশ পাচ্ছিল। সে চম্পার পাশে দাঁড়িয়ে, তার মায়ের নির্দেশের অপেক্ষায়, তার চোখে একটা অন্ধকার আনুগত্য।
হঠাৎ চম্পার ফোন বেজে উঠল। সে গ্লাসটা টেবিলে রাখল, তার পান্নার আংটি আলোতে ঝিলিক দিল যখন সে ফোনটা কানে তুলল। ওপারে তার গোপন ইনসাইডারের কণ্ঠ, নিচু, তীক্ষ্ণ: “রুবিনা তার বাজেয়াপ্ত ড্রাগ ফেরত পেয়ে গেছে। পুলিশের কেউ তার পক্ষে কাজ করছে।” চম্পার চোখ সরু হয়ে গেল, তার কালো ত্বকে একটা ঠান্ডা, বিষাক্ত হাসি ফুটে উঠল। রুবিনা, আফজলের তালাকপ্রাপ্তা বোন, ৪৩ বছর বয়সী, তার দুধসাদা, ছিপছিপে শরীর আর ধূর্ত মন নিয়ে আবার তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চম্পা জানত, রুবিনার গ্যাংয়ের শক্তি তার চিফ কমান্ডার নাসিরের ওপর নির্ভর করে—২৯ বছর বয়সী, ফর্সা, সুদর্শন, দীর্ঘ, মজবুত শরীরের অধিকারী। চম্পার মন দ্রুত চিন্তায় ডুবে গেল। রুবিনার গ্যাংকে দমাতে হলে তাদের ঐক্য ভাঙতে হবে। তার মনে একটা ধূর্ত পরিকল্পনা জন্ম নিল—রুবিনা আর নাসিরের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি করতে পারলে তার সুবিধা হবে। সে শিবুর দিকে তাকাল, তার চোখে একটা নির্মম নির্দেশ। “শিবু, নাসিরকে ফোন কর,” সে বলল, তার কণ্ঠে একটা মিষ্টি, কিন্তু বিষাক্ত সুর। শিবু তার পকেট থেকে ফোন বের করল, তার পেশীবহুল হাতে ফোনটা কাঁপছিল। সে নাসিরের নম্বর ডায়াল করল, তার কণ্ঠে একটা সতর্কতা। ফোনটা বেজে উঠল, আর চম্পা হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিজের হাতে নিল। তার পান্নার আংটি আলোতে ঝকঝক করছিল, তার লাল ঠোঁটে একটা ধূর্ত হাসি। “নাসির ভাই, আপনাকে আমাদের সাকসেস পার্টিতে আসতেই হবে,” সে বলল, তার কণ্ঠে একটা মিষ্টি, প্রলোভনময় সুর, যেন সে একটা ফাঁদ পাতছে। “আজ রাতে এখানে অনেক মজা হবে। আপনি না এলে আমরা কিন্তু মন খারাপ করব।” তার কথার পেছনে লুকিয়ে ছিল একটা অন্ধকার পরিকল্পনা, তার চোখে একটা বিষাক্ত ঝিলিক, যেন সে শহরের অন্ধকার জগতে একটা নতুন খেলা শুরু করতে চলেছে।