ছায়ার আড়ালে আগুন -Crime Thriller [Part-2: দ্য গ্যাংওয়ার] - অধ্যায় ১৯
গল্প: "ছায়ার আড়ালে আগুন" (পার্ট-২: গ্যাংওয়ার)
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ: বিলাসের আড়ালে ফাঁদ
বলরুমে অতিথিরা ছিল শহরের অন্ধকার জগতের নানা মুখ। ছিলেন ড্রাগডিলার, ধনী ব্যবসায়ী, তাদের ঝকঝকে স্যুটে হাতে সিগার আর শ্যাম্পেনের গ্লাস, তাদের চোখে লোভ আর সতর্কতার মিশ্রণ। ছিলেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, তাদের কুর্তা আর নেহরু জ্যাকেটে একটা ভণ্ডামির হাসি, তাদের কথায় ছিল গোপন চুক্তির ইঙ্গিত। ছিলেন চম্পার গ্যাংয়ের সদস্যরা—লালু, তার মোটা গোঁফ আর খাকি জ্যাকেটে, টেবিলে পানীয় সাজাচ্ছিল, তার মুখে একটা দুষ্টু হাসি; রাজু, লম্বা, হাড়গিলে, তার কালো শার্টে ছুরির মতো তীক্ষ্ণ চেহারা, দরজার কাছে পাহারা দিচ্ছিল; নিতাই, ছোটখাটো, চটপটে, তার চোখে চোরা উত্তেজনা, অতিথিদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিল; নন্দু, তার টাক মাথায় চাঁদের আলো ঝকঝক করছিল, ব্যান্ডের সঙ্গে কথা বলে সুরের তাল ঠিক করছিল। আর শিবু, চম্পার ১৯ বছর বয়সী ছেলে, তার কুচকুচে কালো ত্বক আর দীর্ঘদেহী গঠনে একটা টাইট কালো টি-শার্ট, তার পেশীবহুল শরীরে একটা নির্মম শক্তি প্রকাশ পাচ্ছিল। সে চম্পার পাশে দাঁড়িয়ে, তার মায়ের নির্দেশের অপেক্ষায়, তার চোখে একটা অন্ধকার আনুগত্য।চম্পা, ৪১ বছর বয়সী, তার কুচকুচে কালো ত্বকে একটা তীক্ষ্ণ, ধূর্ত আভা। তার ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার মিডিয়াম চেহারা একটি গাঢ় নীল সিল্কের সাড়িতে জড়ানো, সাড়ির পল্লব তার শরীরের বাঁকে আলতো লেপ্টে ছিল। তার চোখে গাঢ় কাজল, তার ঠোঁটে রক্তলাল লিপস্টিক, যেন একটা নির্মম হাসির ছোঁয়া। তার কানে ঝকঝকে হিরের দুল, প্রতিটি নড়াচড়ায় আলোর ঝিলিক তুলছিল। তার হাতে পান্নার আংটি আর হিরের ব্রেসলেট, তার প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে একটা রাজকীয় নির্মমতা। তার পায়ের গঠন মজবুত, অথচ চকচকে সুন্দর, তার দীর্ঘ, সুগঠিত পায়ের আঙুলগুলো পরিষ্কার, মসৃণ, যেন একটা শিল্পকর্ম। সে বলরুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, একটি ক্রিস্টাল গ্লাসে শ্যাম্পেন নিয়ে ঠোঁটে ছোঁয়াল, তার লাল লিপস্টিক গ্লাসের কিনারায় একটা দাগ রেখে গেল।
টেবিলগুলো ছিল বিলাসের প্রতীক। সোনালি প্লেটে সাজানো ছিল ক্যাভিয়ার, ঝিনুকের উপর শুয়ে থাকা প্রণ, আর মশলাদার পনিরের কিউব। ছিল বাটারে ভাজা লবস্টার, তার উপর লেবু আর পার্সলির ছিটে, আর তন্দুরি মুরগির টুকরো, তার লালচে রং যেন আগুনের ছোঁয়া। পানীয় ছিল একেকটি শিল্পকর্ম—ডম পেরিগন শ্যাম্পেন, তার ফেনিল বুদবুদ ক্রিস্টাল গ্লাসে নাচছিল; ১৮ বছরের ওল্ড ম্যাকালান স্কচ, তার সোনালি রং আর ওকের গন্ধ বাতাসে ছড়াচ্ছিল; আর কসমোপলিটান ককটেল, তার গোলাপি আভায় বরফের ঝকঝকে টুকরো। বারের কাউন্টারে সারি সারি বোতল—জনি ওয়াকার ব্লু লেবেল, পেট্রন টেকিলা, আর ক্রিস্টাল হেড ভদকা, তাদের বোতল আলোতে ঝকঝক করছিল। অতিথিরা গ্লাস হাতে হাসছিল, কিন্তু তাদের চোখে ছিল সতর্কতা, যেন প্রতিটি হাসির পেছনে লুকিয়ে ছিল একটা গোপন পরিকল্পনা।
বলরুমের কেন্দ্রে একটি ছোট মঞ্চে বার গার্লরা নাচছিল, তাদের শরীরের প্রতিটি নড়াচড়া জ্যাজ ব্যান্ডের সুরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল। তাদের পোশাক ছিল চকচকে, সিকুইন-জড়ানো মিনি ড্রেস, যা আলোতে ঝিলিক দিচ্ছিল। তাদের নাচে ছিল একটা মাদকতা—কোমরের দোল, হাতের সূক্ষ্ম ভঙ্গি, আর পায়ের দ্রুত তাল। কিন্তু সবার মাঝে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল পাওলিনা, এক ২১ বছর বয়সী বেলারুশীয় তরুণী। তার সোনালি চুল মঞ্চের আলোতে ঝকঝক করছিল, যেন একটা তরল আগুন তার কাঁধে নাচছে। তার ফর্সা ত্বক চাঁদের আলোর মতো উজ্জ্বল, তার ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার স্লিম শরীরে একটা রুপোলি মিনি ড্রেস, যা তার প্রতিটি বাঁককে আলোকিত করছিল। তার নীল চোখে একটা রহস্যময় আকর্ষণ, তার ঠোঁটে একটা সূক্ষ্ম হাসি, যেন সে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল। তার নাচে ছিল একটা অনায়াস মাধুর্য—তার পায়ের দীর্ঘ, মসৃণ আঙুল মঞ্চে আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছিল, তার কোমরের দোল যেন স্যাক্সোফোনের সুরের সঙ্গে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। অতিথিরা তার দিকে তাকিয়ে ছিল, তাদের চোখে মুগ্ধতা আর লোভের মিশ্রণ। চম্পা, তার শ্যাম্পেনের গ্লাস হাতে, পাওলিনার নাচ দেখছিল, কিন্তু তার চোখে ছিল একটা ধূর্ত চিন্তা—তার মন এখনো নাসিরের উপর কেন্দ্রীভূত।