চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী - অধ্যায় ৮৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-34178-post-4774513.html#pid4774513

🕰️ Posted on April 23, 2022 by ✍️ bourses (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2910 words / 13 min read

Parent
৩২ পাড়ি (খ) চিঠিটা এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলি আমি… তারপর সেটা হাতে ধরে চুপ করে বসে থাকি বেশ খানিকক্ষন সমুর সামনে, চেয়ারের উপরে… ও বোধহয় বুঝেছিল যে সেই মুহুর্তে কিছু না বলাই উচিত… তাই কোন কথা বলে না… হয়তো ওর ফেরার দেরী হয়ে যাচ্ছিল, তাও… তাও চুপ করে আমার সামনে বসে থাকে… আমার মনের মধ্যে বয়ে চলা ঝড়টাকে একটু সামলাতে সময় দিয়ে… একটু বেশিই সময় নিলাম নিজেকে সামলাতে… ততক্ষনে মনস্থির করে ফেলেছি… ডাক্তারি পরীক্ষায় বেশ ভালোই রেসাল্ট করেছিলাম… আর তাই তখনই ভেবে নিয়েছিলাম এফআরসিএস করতে আমায় লন্ডন যেতেই হবে… সেই মত ওখানকার কলেজের সাথে যোগাযোগও করছিলাম… একটা সম্ভাবনার কথাও উঠে আসছিল… এখন হাতে এই চিঠি… যদি ওখানে যেতেই হয়, তাহলে এখনই বা নয় কেন? আমার যা রেসাল্ট, তাতে ডাইরেক্ট অ্যাডমিশন হয়ে যেতে পারে… আর যদি না হয়… তাহলেও কুছ পরোয়া নেই… এন্ট্রান্স এক্স্যামে বসবো… ক্র্যাকও করে যাবো নিশ্চয়ই সে পরীক্ষায়… তার জন্য আর একটু কষ্ট করতে হবে… হয়তো কোথাও একটা ছোট খাটো চাকরী জুটিয়ে নিতে হবে… হয় কোন পাবএ… বা কোনো রেস্তোরায়… তাতে হাতে কিছু পয়সা আর মাথা গোঁজার একটা জায়গা জুটিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না… কিন্তু… এখানে একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে… যাবার ভাড়া… সেটা জোগাড় করাটাই আসল… কারণ বাড়িতে যদি জানতে পারে, তাহলে যাওয়াটা কোন সমস্যাই নয়… কিন্তু সেটা তো আমি কোন মতেই জানাবো না… ওবাড়ির কারুর কাছে আমি হাত পাতা তো দূর অস্ত এক কানাকড়ি সাহায্যও নেবো না কোন মতেই… তাতে একটাই বিকল্প খোলা আছে… এখান থেকে মাদ্রাস… সেখান থেকে সমুদ্র পথে লন্ডন… তাতে সময় বেশি লাগবে ঠিকই কিন্তু ভাড়া অনেকটাই কম হবে… এদিকে চিঠি পড়ে যা বুঝলাম, তাতে দিদিমার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়… মামা লিখেছেন যে উনি মৃত্যুশয্যায়… তার মানে হাতে সময় খুবই কম… এই সময় যদি জাহাজে যাই, তাতে সময়ের অপচয় অনেকটাই হবে… ভাবতে ভাবতে তাকাই মুখ তুলে… আর তখনই সমুকে দেখেই মাথার মধ্যে একটা সম্ভাবনা ঝিলিক দিয়ে ওঠে… ইয়েস… সম্ভব… টাকা যোগাড় হয়ে যাবে… যদি সমু আমায় একটু সাহায্য করে… ভাবতে ভাবতে চিঠিটা সমুর দিকে এগিয়ে দিলাম আমি… “কি?” চিঠিটা হাতে নিয়ে তাকায় আমার দিকে সমু…  “কি আবার? পড় চিঠিটা…” উত্তর দিই আমি… “পড়বো?” পরের চিঠি পড়তে গিয়ে একটু কুন্ঠিত বোধ করে ভাই… সেটা বুঝতে পারি আমি… “পড়ার জন্যই তো বাড়িয়ে দিলাম… পড়ে দেখ… তারপর বলছি…” বলে উঠি আমি… আর কোন দ্বিরুক্তি করে না ভাই… চিঠিটাকে চোখের সামনে মেলে ধরে পড়তে থাকে মন দিয়ে… আমি শান্ত মনে অপেক্ষা করি ওর পড়া শেষ হওয়া অবধি… পড়া হয়ে গেলে মুখ তোলে সমু… “কি বুঝলি?” জিজ্ঞাসা করি আমি… “তোর দিদিমা খুব অসুস্থ!” আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় সমু… “হু… মামা তো তাইই লিখেছেন…” জবাব দিই… “কি করবে ভাবছিস? যাবি?” ফের প্রশ্ন করে ভাই… মাথা নাড়ি আমি ওর কথায়… “যাবো…” তারপর একটু থেমে বলি, “দেখ… এফআরসিএসটা করতে তো এমনিতেই আমি ভেবেছিলাম যাবো লন্ডনে… তাহলে এখন নয় কেন? তাই না? আমার কলেজে জয়েন করাও হবে, আবার দিদিমার শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ করা হবে… তুই কি বলিস?” ফিরিয়ে প্রশ্ন করি ভাইকে… “হ্যা… এটা তো বেশ ভালো কথা… তাহলে আমি বাড়ি গিয়ে বলি কাকান কে!” উৎসাহিত স্বরে বলে ওঠে সমু… কাকান মানে আমার বাবা… ও আমার বাবাকে কাকান বলে… আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারি না ওর কথায়… “কাকান কে বলবি মানে?” “না… মানে তুই বিদেশ যাবি, তার জন্য তো টাকার প্রয়োজন… তাই আমি গিয়ে…” ওর কথাটা শেষ করতে দিই না আমি… ঝাঁঝিয়ে উঠি ওর কথার মাঝেই… “তুই এই চিনেছিস আমায়?” আমার ঝাঁঝানোতে মিইয়ে যায় ভাই… আমতা আমতা করতে থাকে… কিছু বলতে যায় সে… আমি হাত তুলে থামিয়ে দিই তাকে… “তুই থাম… অনেক ভেবেছিস… এখন আমার কথাটা আগে মন দিয়ে শোন…” তারপর একটু থেমে বলতে থাকি… “তোর কি মনে হয় আমি আমার বিদেশ যাত্রার জন্য বাড়িতে হাত পাতবো?” “আহা… হাত পাতার কথা কোথা থেকে আসছে দি-ভাই?” প্রতিবাদ করে ওঠার চেষ্টা করে সমু… আমি দৃঢ় স্বরে বলে উঠি… “ও বাড়িতে টাকা চাওয়া মানে হাত পাতাই হলো… আর যেখানে আমি সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি, সেখানে আবার গিয়ে টাকা চাইবো! ভাবলি কি করে?” “না সেটা নয়… আমি সে ভেবে বলতে চাই নি… আমি বলছিলাম যে…” মিনমিনিয়ে বলতে শুরু করে সে… আমি ফের তাকে তার কথার মাঝেই থামিয়ে দিই… “তোকে আমার হয়ে শুধু একটা কাজ করতে হবে… সেটা কি পারবি?” সোজা হয়ে বসে বলে ওঠে সমু… “হ্যা হ্যা… তোর জন্য সব করতে পারবো দি-ভাই… শুধু বল একবার… কি করতে হবে…” “হু… বেশ…” ওর কথায় নিশ্চিন্ত হই… “শোন… আমি ভেবে দেখলাম এই মুহুর্তে ওদেশে যেতে হলে যে পরিমাণ টাকার দরকার, সেটা আমার হাতে নেই…” আমার কথার মধ্যে কোন কথা বলে না সমু… চুপ করে তাকিয়ে শুনতে থাকে… “এখন এতগুলো টাকা জোগাড় করতে একটাই কাজ করা যেতে পারে… সেটা হলো আমার নিজস্ব ও-বাড়িতে যা যা গয়না আছে… আর আমার মায়ের যা আছে… তা মিলিয়ে বিক্রি করলে অনেকগুলো টাকাই হয়ে যাবে… আর যে হেতু এ সবই আমার আর মায়ের… তাই আর কারুর কিছু বলার অধিকার নেই…” বলতে বলতে আমি থামি… তাকাই ওর মুখের দিকে… বোঝার চেষ্টা করি যেটা বলছি সেটা ওর বোধগম্য হচ্ছে কি না… “কিন্তু আমি ও বাড়ি যাবো না… অথচ গয়না আছে মায়ের আলমারীতে… আর ওটার চাবি আছে আমার কাছে…” আমার কথার মাঝেই প্রায় তড়াক করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ভাই… মুখের অভিব্যক্তিতে প্রায় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা ওর… “আমায় তোর আলমারী খুলে গয়না আনতে হবে?” “ঠিক তাই… আমি তোকে আমার আলমারীর চাবি দিয়ে দেবো… তুই ওটার লকার খুলে গয়না নিয়ে এসে আমায় দিবি… ব্যস… আমার যাওয়ার টাকার যোগাড় হয়ে যাবে…” অন্ধকার নেমে আসে ওর মুখে… “কিন্তু দি-ভাই… যদি কেউ বলে কিছু… মানে বাড়ির গয়না… তুই বেচে দেবি…” “আরে! অদ্ভুত তো!... আমার গয়না আমি রাখি না বেচি তাতে কার কি বলার আছে?” ওর দ্বিধায় আমি একটু রেগেই যাই… “আর আমি তো আর গয়না বেচে ফুর্তি করতে যাচ্ছি না…” ঢকঢক করে মাথা হেলায় ভাই… “না না… তা তো বটেই… ঠিক আছে… তুই বলছিস যখন… আমি এনে দেবো তোর গয়না… তুই চিন্তা কোরিস না…” কথাটা বলে ঠিকই, কিন্তু সেটা যে একান্তই বাধ্য হয়ে, সেটা বলার প্রয়োজন থাকে না… এক দিকে ওর বাড়ি… অন্য দিকে ওর দি-ভাই… ওর তখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা… বুঝে উঠতে পারে না সে কি করবে বলে… আমি সেটা বুঝে ওকে আস্বস্থ করি… “অত চিন্তা করিস না… কিচ্ছু হবে না… তবে একটা কথা মাথায় রাখবি… কেউ যেন জানতে না পারে… চুপচাপ কাজটা সারবি...” বললাম বটে, কিন্তু কতটা ওকে বোঝাতে পারলাম সেটা বুঝলাম না… যতই হোক… এতো এক প্রকার চুরিই… নিজের জিনিস নিজেই চুরি করার মত… “দাঁড়া… চাবিটা এনে দিই তোকে…” বলে ওকে অফিস রুমে রেখেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাই আমি… চাবি আনতে… . . . গাধা আর কাকে বলে… আলমারী খুলে গয়না বের করতে গিয়ে ভাই একেবারে পিমার হাতে ধরা পড়ে গেলো… ব্যস… আর তারপর যাকে বলে তুলকালাম কান্ড শুরু হয়ে গেলো বাড়িতে… ভাইকে ধরে জেরার পর জেরা… ও তিতাসের আলমারীর চাবি কোথায় পেলো? কেনো খুলেছে? কি নেবার জন্য খুলেছে… এ বাড়িতে এ ধরণের ঘটনা কোন দিন ঘটেনি… ও এ বাড়ির ছেলে হয়ে কোন সাহসে সেটা করতে গিয়েছে!... তিতাস যদি কোন দিন জানতে পারে, ওর মুখ কোথায় থাকবে!... কি করে এ দুঃসাহস করলো ও… ইত্যাদি ইত্যাদি… ও যত বোঝায় যে দি-ভাই ওকে চাবি দিয়েছে একটা দরকারী জিনিস নেবার জন্য… কিছুতেই কেউ বোঝে না সে কথা… কেউ বিশ্বাসই করে না ওর কথা কিছুতেই… বাড়ির সবার বক্তব্য হলো যে তিতাস এ বাড়ির চৌকাঠ ডিঙায় নি প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেলো, সেই তিতাস ওকে চাবি দিয়েছে… এটা হতেই পারে না… ও নির্ঘাত কোন ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে তিতাসের আলমারী খুলে কিছু নিতে গিয়েছিল… শেষে আমার হোস্টেলে ফোন… দুপুরে আমার ডিউটি ছিল, তাই আমায় সেই সময় ফোনে পায় নি… কিন্তু আমি হোস্টেলে ফিরতেই খবর পেলাম যে বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল নাকি… যোগাযোগ করতে বলেছে… আমি সেই শুনে ফোন করলাম বাড়িতে… ফোনটা ওঠালো পিমাই… আমি বলছি শুনেই প্রথম প্রশ্ন… “হ্যা রে… সমু বলছে যে তুই নাকি ওকে তোর আলমারীর চাবি দিয়েছিস? এটা সত্যিই?” আমি কিছু উত্তর দেবার আগেই শুনলাম আরো বেশ কিছু লোকের গলার স্বর… বুঝলাম ভাই নির্ঘাত ধরা পড়ে গিয়েছে… আর সেটা নিয়েই কোন ঝামেলা হচ্ছে বাড়ির মধ্যে… দুপুরে ফোন এসেছিল, আর এখন প্রায় রাত আটটা… মানে সেই থেকে চলছে বাড়ির মধ্যে ব্যাপারটা নিয়ে… কানে এলো সমুর গলা… একটু তফাৎ থেকে কাঁদতে কাঁদতে বলছে দেখি, “দেখ দি-ভাই… এরা সবাই আমায় চোর ভাবছে… বলছে যে আমি নাকি তোর আলমারী খুলে চুরি করতে গিয়েছিলাম…”  আমি শান্ত ধীর গলায় বললাম পিমাকে… “হ্যা… আমিই দিয়েছি ভাইকে চাবিটা…” আমার উত্তরটা শুনে পিমা কাউকে সেটা বলল বুঝলাম… এরপরেই বাবার গলা ফোনে… পিমার হাত থেকে ফোনের রিসিভারটা নিয়ে আমায় বলে উঠল, “ওরে… তোর কি দরকার আমায় তো বলতে পারতিস… শুধু শুধু সমুকে কেন চাবি দিতে গেলি?” আমি বললাম… “আমি মায়ের কিছু জিনিস নেবো, আমার দরকার, তাই চাবিটা সমুকে দিয়েছিলাম ওগুলো আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য…” বাবা কিছু বলার আগেই শুনি পাশ থেকে নতুন মা বলে উঠল… “চাবি ও নিজের কাছে রেখে দিয়েছে মানেই কি ফ্যামিলির প্রপার্টি ওর একার হয়ে গেছে নাকি? ইচ্ছা হলেই বের করে নিয়ে যেতে চাইছে?” কথাটা কানে যেতেই ব্যস… দুম করে আমার মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠলো যেন… আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম বাবাকে… “বাপি… আমি আসছি বাড়িতে… তারপর যা করার করছি…” বলে আর কাউকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দুম করে ক্র্যাডেলে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলাম… তারপর নিজের রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়ে একটা ছোট হাত ব্যাগে পুরে ওই সারাদিনের হস্পিটালের ড্রেস পড়া অবস্থাতেই হোস্টেল থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে সোজা বাড়ি… অন্য সময় হস্পিটালের ডিউটি থেকে ফিরে বেরুবার হলে সারা দিনের পড়া ড্রেসটা চেঞ্জ করে নিই সাধারনত… কিন্তু সেই সময় মাথার মধ্যে দাবানল জ্বলছে… বাড়ির সদর দরজা পেরোবার সময়ই বেশ অনেক গুলো গলার সমষ্টি কানে এলো আমার… বুঝতে অসুবিধা হয় না যে বৈঠকখানার ঘরে এই মুহুর্তে এখন প্রায় বাড়ির সকলেই উপস্থিত… মানে তখনও ব্যাপারটা নিয়ে সকলের মধ্যে একটা গজল্লা চলছে… আমি ঘরে ঢুকতেই নিমেশে সকলের গলার স্বর বন্ধ হয়ে গেলো… উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষের চোখে দরজার দিকে… আমার উপরে… প্রত্যেকেই যেন আমায় দেখে কেমন থমকে গিয়েছে মনে হলো… হয়তো মনে মনে তৈরী হতে শুরু করে দিয়েছিল কে কি ভাবে আমার ঝড় সামলাবে ভেবে… আমি ঘরের প্রত্যেকের মুখের উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম… কে নেই?... বাপি, জেঠু, পিমা, সৌমো মানে সৌমেন্দ্রনারায়ণ, আমার ছোট ভাই… সেই সাথে জ্যেম্মা আর আমার বাপির দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী, সৌরিমা… আর সবার মাঝে, একটা চেয়ারে মাথাটা নীচু করে বসে সমু… আমার পায়ের শব্দ সে মাথা তুলে তাকায়… তারপর প্রায় ছিলে ছেঁড়া তিরের মত রীতিমত দৌড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ায় সে…  প্রায় কেঁদে ফেলে স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে… “দি-ভাই… বল তুই এদের… চাবিটা তুইই দিয়েছিলিস… তাই না রে?... তুইই বলেছিলিস তোর আলমারী খুলতে…” আমি ঠান্ডা গলায় বলে উঠি… “সেটা আমি ইতিমধ্যেই জানিয়েছি…” তারপর থেমে বলি, “চাবিটা দে আমায়…” বলে ভাইয়ের সামনে হাত পাতি…  ভাই নিজের পকেট থেকে চাবিটা বের করে তুলে দেয় আমার হাতের মধ্যে… এই একটা কাজ ও বুদ্ধি করে করেছে দেখলাম… হাজার অশান্তির মধ্যেও, কারুর হাতে ও চাবিটা তুলে দেয় নি… ওর থেকে নাকি চাবি চেয়েছিল সৌরিমা, মানে আমার সৎ মা, কিন্তু ও জবাবে বলেছিল যে দি-ভাই আমায় দিয়েছে, আমি দি-ভাইকেই ফেরৎ দেবো… ভালো লাগলো ওর বুদ্ধিমত্তায়… কয়েক পা পিমা এগিয়ে এলো আমার দিকে… “আচ্ছা তিতাস… হটাৎ করে কেন তোর আলমারী খোলার দরকার পড়লো? কি হয়েছে? কিসের কি দরকার পড়লো তোর এই এতদিন পরে?” পিমার সাথে ঘরের অন্য বড়রাও গলা মেলায় সাহসে ভর করে… “হ্যা তিতাস… কি দরকার তোর? কি হয়েছে এমন কি যে এই ভাবে ভাইকে দিয়ে আলমারী খোলানোর দরকার পড়ে গেলো?” ভেবে দেখলাম সত্যি কথাটাই বলে দেওয়া ভালো… শুধু শুধু সকলের মনের মধ্যে একটা সংশয় তৈরী করার কোন প্রয়োজন নেই… আর তাছাড়া আমি যখন আলমারী খুলে মায়ের গয়না বের করবো তখন আরো এক ঝাঁক প্রশ্নের মুখোমুখি পড়তেই হবে… হয়তো উত্তর দেবার কোন দায় নেই আমার… তাও… যতই হোক, সকলেই বয়ঃজেষ্ঠ আমার কাছে… এঁদের অসন্মান করার কোন অধিকার আমার নেই… প্রত্যেকেই আমায় যথেষ্ট স্নেহ করে, ভালোবাসে… হয়তো সহ্যও করে এরা আমার এই ধরনের জেদ আর রাগটাকে… সেটা জানি আমি… আমার তো এক মাত্র দ্বন্ধ তো শুধু মাত্র নতুন মায়ের সাথে… বাকি বাড়ির কারুর সাথেই নেই কিছু…  আমি শান্ত গলায় বললাম তাদের… “আমি লন্ডন যাচ্ছি… টাকা লাগবে… তাই আমি ভেবে নিয়েছি যে আমি আমার আর আমার মায়ের গয়নাগুলো নেবো…” শুনে প্রায় হাঁ হাঁ করে ওঠে বাপি… “সেকি তিতাস… তোর টাকার দরকার, তাতে গয়না নিয়ে কি করবি? আমরা বেঁচে থাকতে… কত টাকা লাগবে তোর? সেটা তো তুই আগে বললেই পারতিস… বোস মা বোস… একটু শান্ত হয়ে বোস তো এখানে… আমি এখুনি টাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি…” পেছন থেকে ঘাড় নাড়ে জ্যেঠুও… “হ্যা… ঠিকই তো… তোর টাকার দরকার, সেটা একবার ফোন করে বলে দিলেই তো হয়ে যেতো… এত কিছু ঝামেলাই হতো না… কেন ওই সব বের করবি আলমারী থেকে… ও তো তোর মায়েরই স্মৃতি… তোরই তো জিনিস… একবার গেলে আর কি ফিরে আসবে বল? আর আমাদের পরিবারে কি টাকার অভাব? যে এই ভাবে গয়না বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতে হবে?” আমায় বলে বটে কিন্তু আমি চুপ করে দাঁড়িয়েই থাকি সোজা হয়ে… তাদের কথার কোন উত্তর দিই না… যত যাই হোক… দূরে থাকা আর সামনে এসে দাঁড়ানো… দুটোর মধ্যে তো একটা পার্থক্য থেকেই যায়… তাই তখন মায়ের গয়না বেচে দেবো ভেবে নিলেও এখন বাবা বা জ্যেঠু জ্যেম্মার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেরই যেন কেমন অস্বস্থি হয় এই ভাবে ওদের চোখের সামনে দিয়ে গয়না গুলো নিয়ে বেরিয়ে যাবো ভেবে… হয়তো আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে গয়না গুলোর উপরে… তাও… সেটাও তো এই বাড়িরই… কিন্তু আবার এটাও ভাববার… এটা যদি না করি, তাহলে আমার লন্ডন যাওয়াটা কি ভাবে সম্ভব? কারণ এরা বললেও, এটা সুনিশ্চিত যে আমি এদের কারুর দেওয়া টাকা হাত পেতে নেবো না… সেটা আমার জেদ… আর আমার জেদ মানে ব্রহ্মান্ড উল্টে গেলেও সে কথার নড়চড় হবে না কোন মতেই… কি যে করি… বুঝে উঠতে পারি না… মনে মনে ফিরে যাবো কি না, সেটাও ভাবতে শুরু করে দিয়েছি ততক্ষনে… না হয় অন্য ভাবে চেষ্টা করে দেখতে হবে… এই আর কি… কিন্তু সত্যিই তো… বাড়ির জিনিস বিক্রি করে দেওয়াটা ঠিক সমুচিন হবে না এখন বুঝতে পারছি… বাপি বা জেঠুর খারাপ লাগতে পারে তাতে… অন্তত যে ভাবে ওরা আমায় বারণ করছে, সেটা আমারও বোঝা উচিত… ভাবতে ভাবতেই ফিরে যাবো বলে ঘুরতে যাবো, সৌরিমা বলে উঠল… “তোমার আলমারীতে আছে মানেই কি ওগুলো তোমার সম্পত্তি হয়ে গেলো নাকি?” থমকে গেলাম আমি… চোখ সরু করে মুখ তুলে তাকালাম আমি সৌরিমার দিকে… দাঁতে দাঁত চেপে বসে গেলো… চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন করলাম আমি… “কি বলতে চাইছ? স্পষ্ট করে বলো…” “এর থেকে আর কি স্পষ্ট করে বলবো বাবা… হটাৎ করে একদিন উদয় হলে… তারপর বলে উঠলে যে বাড়ির গয়না নাকি তোমার একার… সেটা আবার হয় নাকি? ওতে কি শুধু তোমার একার অধিকার আছে নাকি?” একেবারে চোখ ঘুরিয়ে কথাগুলো বলে উঠল সৌরিমা… কথাটা শুনে বাপি তাড়াতাড়ি কিছু বলতে গিয়েছিল নতুন মাকে… সম্ভবতঃ এর পর কি ঘটতে পারে তার আঁচ করে নিয়েই… কিন্তু সেটাও উনি বড় দেরি করে ফেলেছিলেন… তার আগেই যা বিস্ফোরণ ঘটার আমার মাথার মধ্যে ঘটে গিয়েছে… পা থেকে মাথা অবধি আমার জ্বলে উঠল কথাগুলো শুনেই… “চোওওওওওওপ…” প্রায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলাম আমি… “এক দম চুপ… এই ব্যাপারে তুমি আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ মানুষ তুমি দেখবে না…” বলতে বলতে হাঁফাতে থাকি আমি প্রচন্ড উত্তেজনায়… রক্ত যেন তখন আমার মাথার মধ্যে ফুটছে… তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে নতুন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠি আমি… “আমায় অধিকার দেখাচ্ছ? প্রপার্টি? জানো প্রপার্টি কাকে বলে? শোনো… ফ্যামিলি প্রপার্টি কাকে বলে সেটা তোমার হাজবেন্ডের থেকে জেনে নাও আগে… তারপর আমার সামনে এই ধরণের কথা উচ্চারণ করতে এসো… আমি আমার আলমারী থেকে যেটা বুঝবো সেটা বের করে নেবো… যদি তোমার ক্ষমতা থাকে… আমায় আটকাও…” বলে আর দাঁড়াই না আমি… দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাই বৈঠকখানার ঘর ছেড়ে সিড়ি বেয়ে আমার ঘরের দিকে… প্রথমে আমার রুদ্রানী মূর্তি দেখে তো খানিক থতমত খেয়ে গিয়েছিল ঘরের উপস্থিত সবাই… তারপরই হুস ফিরতে তাড়াতাড়ি আমার পেছন পেছন প্রায় সকলেই এসে উপস্থিত হয় আমার ঘরের মধ্যে… আমি ঘরে ঢুকে একবার চোখ বোলাই নিজের ঘরের মধ্যে… একই রয়েছে… একদম যে ভাবে ছেড়ে গিয়েছিলাম আমি… সমস্ত কিছু সেই ভাবেই পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা… ঘরের কোন কিছুই এতটুকুও সরানো হয় নি… আমার খাট, চেয়ার, আলমারী… স-অ-ব… দেখে ভালো লাগল আমার… অন্তত বাড়ির লোকের কাছে এখনও যে আমি ব্রাত্য হয়ে যাই নি… এতদিন না থাকার পরেও… সেটা প্রমাণ করে… আমি আলমারীর সামনে দাঁড়িয়ে পাল্লা খুলে লকারের চাবি ঘোরাই… ততক্ষনে ঘরে এসে গিয়েছে সকলে… পিমা তখনও আরো আর একবার বলার চেষ্টা করে, “তিতাস… কথা শোন মা… শুধু জেদ করিস না… টাকাটা না হয় আমি দিয়ে দিচ্ছি… তোকে বাপি বা তোর জেঠুর কাছ থেকে নিতে হবে না…” আমি পিমার কথার কোন উত্তর দিই না… লকার খুলে ঝুঁকে তাকাই ভেতরের দিকে… সত্যি বলতে আমিও আজ পর্যন্ত এই আলমারী খুলি নি… এটা আসলে আমার মায়ের আলমারী ছিল… পাশের আলমারীটাতে আমার জিনিস থাকতো… তাই, ভেতরে কি আছে বা নেই, সেটা আমিও সঠিক জানি না… শুধু যখন এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, তখন কি মনে করে যাবার সময় দুটো আলমারীর চাবি সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম… কিছু না ভেবেই… ভবিষ্যতে যে এখানে আবার ফিরে আসবো বা এই আলমারী খোলার কোন প্রয়োজন হতে পারে, সেটা ভেবে দেখিনি আগে কখন… লকার খুলতে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম বলতে গেলে… ভেবেছিলাম লকারে মায়ের আর আমার গয়নাই আছে হয়তো… কিন্তু সেটা ছাড়াও যা দেখলাম, তা যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না… ভেতরে বেশ কয়েক তাড়া নোটের বান্ডিল… লকারের ভিতরে একটা পাশ করে বেশ যত্ন করে সাজিয়ে রাখা… হয়তো মাই রেখেছিল… তারপরই তো দুম করে অমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো… মা সুযোগই পেলো না কিছু বলে যাওয়ার… আর বাবা কখনই কোনদিন বিষয় আশয় নিয়ে মাথা ঘামায় নি… তাই মায়ের আলমারীতে কি আছে কি নেই, তা সে নিশ্চয়ই ভাবেও নি কখনও… টাকার বান্ডিল দেখে বুঝে গেছি ততক্ষনে যে আমার সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে… বান্ডিলগুলো বের করে বিছানার উপরে রাখলাম… তারপর ভালো করে মন দিয়ে গুনলাম… দেখলাম যা আছে, তা যথেষ্ট… শুধু লন্ডন যাওয়াই নয়… ওখানে গিয়েও বাকি কিছু খরচ খরচা সামলে দিতে পারবো প্রাথমিক ভাবে… তারপর না হয় ভেবে দেখা যাবে’খন… সব কটা টাকা আমার ব্যাগের মধ্যে ভরে নিয়ে ফের আলমারীর লকারে চাবি দিয়ে বন্ধ করে দিলাম… তারপর ঘুরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম… কাউকে একটাও কোন কথা না বলে… নীচে আসতে দেখি আমার নতুন মা, সৌরিমা দাঁড়িয়ে রয়েছে তখনো… আমি সোজা এগিয়ে গিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম… তারপর ঠান্ডা গলায় মুখ তুলে বললাম… “শোনো… তিতাস নিজের অধিকার খুব ভালো করে জানে… আর তিতাসের শিরায় শিরায় দর্পনারায়ণের রক্ত বইছে… তাই আর এ ভূল ভবিষ্যতে কখন করতে যেও না… দু-বার ভাববো না যে তুমি আমার বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী… তোমার দেওয়ের থেকে শুনে নিও আমার সম্বন্ধে…” বলে আর দাঁড়াই না আমি… বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে আসি… পেছন হতদ্যম মানুষগুলোকে রেখে দিয়ে… ক্রমশ…
Parent