"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ২৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5265547.html#pid5265547

🕰️ Posted on June 11, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3729 words / 17 min read

Parent
                 দ্বিতীয় খণ্ড                  ১৫তম পর্ব গল্ফগ্ৰীনে সুপ্রতিমবাবুর নিজস্ব দোতলা বাড়ি, পুরো বাড়িটা এক মানুষ সমান উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, ভিতরে ঠিক বাগান না থাকলেও একাধিক ফুলের গাছ টবে লাগিয়ে বসানো আছে। মেইন গেটে দুজন উর্দিপরা দারোয়ান পাহারা দিচ্ছে। সকাল নটার সময় গাড়িতে করে অভিরূপবাবু আর স্বর্ণেন্দু বাবু সুপ্রতিমবাবুর বাড়ির মেইন গেটের সামনে এসে থামলেন, অভিরূপবাবু আজ নিজেই ড্রাইভ করে এসেছেন, ড্রাইভারকে আনেননি। গেটে থামতেই স্বর্ণেন্দু বাবু মুখ বার করে তাকাতেই দারোয়ান দুজন চিনতে পারলো ফলে তাদের মুখে হাসি দেখা গেল তবুও নিয়মমাফিক চেক করে গাড়িটা ভিতরে অ্যালাও করলো। পোর্টিকোর উপর দিয়ে গিয়ে স্বর্ণেন্দু বাবুর দেখানো জায়গায় গাড়িটা পার্ক করে দুজনে নেমে ঘরের দিকে র‌ওনা দিলেন। কলিংবেল বাজাতেই একজন পরিচারক এসে দরজা খুলে দিলে তারা ভিতরে ঢুকলেন, এই পরিচারকের মুখেও হাসি দেখে অভিরূপবাবু বুঝতে পারলেন এই বাড়ির সবাই তার শ্যালককে চেনে, "তুমি যে বলছিলে সুপ্রতিমবাবু তোমার সাথে দেখা করেন না, কিন্তু এখানে তো দেখছি সবাই তোমাকে ভালো করেই চেনে" "কেসের ব্যাপারেই আসতে হয় তখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া থাকে তাই কিছু বলে না কিন্তু পার্সোনালি ঢুকতে দেয় না আইমিন দিত না সেইজন্যেই তোমার সাথে দেখা করানোর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে একটু সময় লাগলো শেষমেশ ওর অফিসে একপ্রকার জোর করে ঢুকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নি‌ই আজ বোধহয় আমার কথা বলে রেখেছে তাই ঢুকতে দিল" "বুঝলাম" পরিচারকটি দুজনকে একটা সোফা দেখিয়ে বসতে বলে চলে গেল বোধহয় বাড়ির কর্তা সুপ্রতিমবাবুকে ডাকতে। অভিরূপবাবু সোফায় বসে চারিদিকে দেখতে থাকেন, বেশ সাজানো গোছানো ড্রয়িংরুম দেখতে দেখতে একটা জায়গায় এসে চোখটা আটকে গেল একদিকের একটা শেলফে সেখানে অনেক ট্রফি সাজিয়ে রাখা আছে সাথে কিছু সার্টিফিকেট বাঁধিয়ে রাখা আছে, কয়েকটা ছবিও বাঁধিয়ে রাখা আছে, এর উপরে দেয়ালে একটা তুলনামূলক বড়ো ছবি বাঁধিয়ে দেয়ালে টাঙানো আছে। অভিরূপবাবু সোফা থেকে উঠে শেলফের কাছে গিয়ে ছবিটা দেখতে থাকেন ছবিটায় একটা মধ্যবয়স্ক লোক দুসাইডে একজন কিশোর এবং কিশোরীর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনজনের মুখেই হাসি। মধ্যবয়স্ক লোকটির চেহারা চিনলেও ওনার সাথে সম্মুখ পরিচয় আগে হয়নি আজ হবে, ইনি নগরপাল সুপ্রতিম দাশগুপ্ত, কিশোরীটিকে না চিনলেও কিশোরটিকে চিনতে ভুল হয়নি অভিরূপবাবুর তার ছোটো ছেলে অনিকেত। অভিরূপবাবু একদৃষ্টে নিজের ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকেন তারপর তার চোখ পরে নীচে সার্টিফিকেট আর ট্রফিগুলোর উপরে সেখানে ট্রফি বিজেতা এবং সার্টিফিকেটে অর্জনকারীর নাম লেখা আছে। অভিরূপবাবু অবাক হয়ে দেখেন কয়েকটা ট্রফি এবং সার্টিফিকেটে অনিকেতের নাম লেখা আছে, তার মানেটা বুঝতে অভিরূপবাবুর অসুবিধা হয় না ওগুলো তার ছেলের অনিকেতের, সেই ওগুলো জিতেছিল। তন্ময় হয়ে তিনি নিজের ছেলের অর্জনগুলো দেখছিলেন যেগুলোর বিষয়ে তিনি এর আগে জানতেন না বা কখনো জানার চেষ্টাও করেননি, শুধু তিনি কেন তার স্ত্রী শ্রীতমাও যে ছেলের এই কৃতিত্বের ব্যাপারে জানেন না এতে তিনি নিশ্চিত। "অনির ট্রফিগুলো দেখছো জামাইবাবু?"  স্বর্ণেন্দু বাবুর আওয়াজ শুনে পিছনে ফিরে দেখেন কখন যেন তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন স্বর্ণেন্দু বাবু। "আমার ছেলে এগুলো সব.." "অনি জিতেছিল সঙ্গে কিছু তানিয়ার আছে বোধহয়" "তানিয়া?" "ওই যে ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখছো সুপ্রতিমের মেয়ে বর্তমানে নিজেও একজন রাফ এণ্ড টাফ অফিসার"। এইসময় পিছনে পায়ের আওয়াজ পেয়ে দুজনেই পিছনে ফিরে দেখেন সুপ্রতিমবাবু এসে দাঁড়িয়েছেন। স্বর্ণেন্দু বাবু পরিচয় করানোর জন্য বললেন, "পরিচয় করিয়ে দি‌ই ইনি আমার জামাইবাবু অভিরূপ ব্যানার্জী, আর জামাইবাবু ও এই শহরের নগরপাল সুপ্রতিম দাশগুপ্ত" অভিরূপবাবু এবং সুপ্রতিম বাবু দুজনেই পরস্পরকে সৌজন্যমূলক নমস্কার করলেন। তারপর সুপ্রতিমবাবু "বসুন" বলে সোফা দেখিয়ে নিজেও তাদের মুখোমুখি বসলেন, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একজন পরিচারিকা ট্রে তে তিনকাপ চা এবং বিস্কুট নিয়ে এলো তারপর তিনজনের হাতে তিনটে চা ভর্তি কাপ প্লেটে করে দিয়ে চলে গেল। "তানিয়া মা কোথায় সুপ্রতিম? এখনো পর্যন্ত ঘুমানোর মেয়ে তো নয়" স্বর্ণেন্দু বাবু প্রশ্ন করলেন। "ও ভোর থাকতে বেরিয়েছে একটা ইনফর্মার থেকে খবর পেয়েছে তাই" তারপর অভিরূপবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন "এবার বলুন মিস্টার ব্যানার্জী আপনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলেন কেন?" "আমি আসলে আমার ছেলের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি, ওকে বোধহয় আপনি চিনতেন" অভিরূপবাবু একটু সংকোচের সঙ্গে কথাটা বললেন। "আপনার ছেলে মানে অরুণাভ ব্যানার্জী, ওনাকে তো পুরো শহর চেনে যদিও কখনও সম্মুখ পরিচয় হয়নি তার কারণ ব্যানার্জী পরিবারের রাজনৈতিক ক্ষমতা, যার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই উনি ক্রাইম করেও পার পেয়ে গেছেন। কিন্তু ওনার ব্যাপারে কি কথা? ওনার যে অ্যাক্সিডেন্টটা হলো সেই ব্যাপারে?" "না, অরুণাভ নয় আমি কথা বলতে এসেছি আমার ছোটো ছেলে অনিকেতের ব্যাপারে, স্বর্ণেন্দুর কাছে শুনলাম যে আপনি ওকে চিনতেন আর এখানে এসে ওই ছবি আর ট্রফি সার্টিফিকেট দেখে নিশ্চিত হলাম" অভিরূপবাবু শেলফের দিকে দেখালেন। সুপ্রতিমবাবু কয়েকমুহূর্ত একদৃষ্টিতে অভিরূপবাবুর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, "শুধু চিনতাম বললে ভুল বলা হবে আমার খুব কাছের ছিল আর ওই ট্রফি আর সার্টিফিকেটগুলোর বেশিরভাগই অনিকেতের অর্জন করা। মার্শাল আর্ট কম্পিটিশন তারপর রাইফেল শ্যুটিং কম্পিটিশন এইসবে জেতা তাও প্রথম হয়ে" "তার মানে কি আপনি.." "বলতে পারেন অনিকেত আমার শিষ্য ছিল" সুপ্রতিমবাবু যেন স্মৃতির পথ ধরে ফেলে আসা অতীতে হাঁটতে শুরু করেন, "কলকাতায় এখন অনেক মার্শাল আর্ট কোচিং সেন্টার আছে কিন্তু আজ থেকে আট নয় বছর আগে এত ছিল না তখন কোনো পাড়ার ক্লাব যদি অর্গানাইজ করতো তখন সেখানে ইচ্ছুকরা শিখতে পারতো, পুলিশের চাকরি ছাড়াও এরকমই কয়েকটা ক্যাম্পে আমি শেখাতে যেতাম পেশা নয় জাস্ট সবাইকে বিশেষ করে মেয়েদের সেলফ্ ডিফেন্স শেখাতেই যেতাম। এরকম‌ই কোথাও অনিকেত আমাকে দেখেছিল তারপর হয়তো কোনোভাবে জানতে পেরেছিল যে স্বর্ণেন্দুর সাথে আমার পরিচয় আছে তাই ওর থেকেই আমার ঠিকানা নিয়ে এখানে আসে বলে মার্শাল আর্ট শিখতে চায় টুকটাক সেলফ্ ডিফেন্স না পুরো ডিটেইলসে শিখতে চায়। আমি যথারীতি মানা করে দি‌ই কারণ মার্শাল আর্ট শেখা সহজ নয় এটা সাধনার জিনিস অনেক কষ্ট ব্যাথা সহ্য করতে হয় যেটা ওর ছিল কি না আমি শিওর ছিলাম না, কত‌ বয়স ছিল তখন তেরো কি চোদ্দ হবে হয়তো কিংবা তার থেকেও এক দুবছর কম ছিল হয়তো" "হ্যাঁ, তখনও ওর মাধ্যমিক কমপ্লিট হয়নি ক্লাস নাইনে উঠেছে কিংবা ওই মাঝামাঝি সময়ে" স্বর্ণেন্দু বাবু মাঝে বলে ওঠেন। সুপ্রতিমবাবু আবার বলতে শুরু করেন, "প্রথম প্রথম বেশ কয়েকদিন আমি ফিরিয়ে দি‌ই কিন্তু শেষপর্যন্ত ওর জেদের কাছে আমাকে হার স্বীকার করতেই হয়, আর সত্যি বলতে এখনো আমি এই সিদ্ধান্তে খুশী যে আমি অনিকেতকে শেখাতে রাজী হয়েছিলাম, প্রত্যেক গুরুইতো এরকম শিষ্য চায় ওর আগ্ৰহ একাগ্ৰতা, অধ্যবসায় ছিল দেখার মতো ঘন্টার পর ঘন্টা একনাগাড়ে প্র্যাকটিস করে যেত বয়স যত বাড়তে থাকে ততই ধারালো হয়ে উঠতে থাকে তারপর তো ওর বয়স আঠারো হবার পরে শ্যুটিং শুরু করে এবং সেটাতেও টপ। আগেই বলেছি তখন মার্শাল আর্ট কোচিং কম ছিল ফলে টুর্ণামেন্ট তো আরো কম হতো তারপরেও যেকটা হতো ওকে যোগ দিতে বলতাম কিন্তু ও বারণ করে দিত, শেষে একবার জোর করেই নাম দেওয়াই ওর উপর বিশ্বাস ছিল বলেই এটা করি কিন্তু অবিশ্বাস্য মনে হলেও প্রথমবারেই চ্যাম্পিয়ন হয়, ফাইনালে ওর থেকে বয়সে বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কিন্তু জাস্ট দাঁড়াতে দেয়নি। আমার আজ‌ও মনে আছে ফাইনালের দিন ওর জন্মদিন ছিল ট্রফি আর সার্টিফিকেট বাড়িতে নিয়ে যায় কিন্তু পরেরদিন ফেরত নিয়ে আসে মুখ থেকে আগের দিনের জেতার হাসিটা উধাও বলেছিল বাড়িতে কারো কাছে সময় নেই ওটা দেখার, তাই আমাকে দিয়ে দেয় ওটা তারপর আরও অনেকগুলো জেতে কিন্তু একটাও আর নিজে নেয়নি সবগুলোই আমি রেখে দিয়েছি, দাঁড়ান" এতটা বলে সুপ্রতিমবাবু শেলফ্‌টার কাছে গিয়ে কিছু খুঁজলেন তারপর একটা মেডেল আর একটা সার্টিফিকেট নিয়ে এসে অভিরূপবাবুর হাতে দিয়ে বললেন, "এটা সেই প্রথম জেতা মেডেল আর সার্টিফিকেট যেটা বাড়ি নিয়ে যায় আর পরদিন ফেরত নিয়ে আসে" অভিরূপবাবু মেডেলটা হাতে নিয়ে আলতোভাবে হাত বোলাতে থাকেন সুপ্রতিমবাবু বলে চলেন, "ভেবেছিলাম পুলিশে জয়েন করাবো আমি জানতাম আমি বললে না করতো না কিন্তু তার আগেই সব শেষ, আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দুর্ভাগ্য যে ওর মতো একটা অ্যাসেটকে পেলো না" একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সুপ্রতিমবাবুর ভিতর দিয়ে, অভিরূপবাবু তখনও মেডেলটায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন দেখে সুপ্রতিমবাবু বলেন,  "আপনি অনিকেতের ব্যাপারে এতকিছু জানতেন না তাই না?" অভিরূপবাবু মাথা নেড়ে না বলেন কিন্তু মুখে কিছু বলেন না তার দৃষ্টি তখন‌ও মেডেলটার দিকে, একসময় সেটা ফেরত দিয়ে বলেন, "আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি এই মেডেল আর সার্টিফিকেটের একটা ছবি তুলে নিতে পারি?" "আপনি যদি চান তাহলে এইদুটো নিয়ে যেতে পারেন" "না, আমার ছেলে আপনাকে দিয়ে গেছে ওগুলো আপনার কাছেই থাকুক আমি শুধু ছবি তুলে বাঁধিয়ে রাখবো" "ঠিক আছে নিন" সুপ্রতিমবাবুর পার্মিশন পেয়ে অভিরূপবাবু মোবাইলে ছেলের অর্জিত মেডেল এবং সার্টিফিকেটের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেন। এইসময় সুপ্রতিমবাবু একটা প্রশ্ন করে বসেন যেটার জন্য অভিরূপবাবু তো নয়‌ই এমনকি স্বর্ণেন্দু বাবুও বোধহয় তৈরী ছিলেন না। "একটা কথা জিজ্ঞেস করবো মিস্টার ব্যানার্জী? যদিও এটা আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার, হয়তো অবাঞ্চিত কৌতূহল দেখাচ্ছি তবুও" "বলুন" "অনিকেত কি আপনাদের নিজেদের ছেলে ছিল নাকি কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে ছিল? আসলে অনিকেতের মৃত্যুর পরে আপনারা তো তদন্ত করতে দিলেন না নিজেদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে থামিয়ে দিলেন তবুও আমি চুপ থাকতে পারলাম না অনিকেত আমার খুবই কাছের একজন ছিল তাই আপনাদের ঢাকুরিয়ার প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলেছিলাম এমনকি তখন আপনাদের বাড়ির পরিচারিকার সাথেও কথা বলেছিলাম তিনিই বলেছিলেন যে ওনার সন্দেহ অনিকেত আপনাদের নিজেদের ছেলে নয় তাই আপনাদের পরিবারের সবার ওর প্রতি অবহেলা একটু বেশি ছিল" "হোয়াট" অভিরূপবাবু দুঃখে, ক্ষোভে, বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান তারপর কোনোমতে নিজের কথাটা শেষ করেন "অনি আমার নিজের ছেলে আমার নিজের রক্ত ও" "তাহলে ওর মৃত্যুর তদন্ত করালেন না কেন? এদিকে সম্প্রতি আপনার বড়ো ছেলের অ্যাক্সিডেন্টের তদন্তের জন্য আপনাদের এলাকার থানার ইনচার্জকে রীতিমতো ব্যাতিব্যস্ত করে রেখেছেন বলে খবর পেয়েছি" "কারণ অরুণাভর ধারণা ওটা অ্যাটেম্পট টু মার্ডার ছিল" "আর অনিকেতেরটা? অ্যাক্সিডেন্ট?" "অরুণাভ আর মৌমিতা মানে আমার বড়ো পুত্রবধূ জানিয়েছিল অনি ড্রিংক করেছিল তাই হয়তো খাদ থেকে পরে যায়" "আর আপনি বিশ্বাস করে নিলেন? "স্বর্ণেন্দুর মুখে শুনলাম আপনার সন্দেহ অনিকে খুন করা হয়েছে এবং আপনার সাসপেক্ট অরুণাভ আর মৌমিতা" "উঁহু সন্দেহ নয় বিশ্বাস যে অনিকেতকে খুন করা হয়েছে" "এরকম বিশ্বাসের কারণ?" "যে ছেলে ড্রাংক অবস্থাতেও নিজেকে সামলাতে পারতো এমনকি ড্রাংক অবস্থাতেও হ্যাণ্ড টু হ্যাণ্ড কমব্যাটে একাধিক লোকের মোকাবেলা করতে পারতো সে নেশা করে খাদ থেকে পরে গেছে  এটা ঠিক বিশ্বাস হয় না এক যদি না পরিচিত কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে" "নেশা করে লড়াই ..." "জ্যাকি চ্যানের নাম শুনেছেন?" "জ্যাকি চ্যান মানে হলিউড অভিনেতা?" "হ্যাঁ, অবশ্য শুধু অভিনেতা নন উনি একজন মার্শাল আর্ট এক্সপার্ট‌ও, তো এই জ্যাকি চ্যানের একটা মুভি আছে 'ড্রাংকেন মাস্টার' এই ড্রাংকেন মাস্টার মুভি দেখে অনিকেতের এই টেকনিক শেখার ইচ্ছা হয়, আমিও এই টেকনিকটা জানিনা কিন্তু ও দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস করে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিল। এমনিতে যে ড্রিংক করতো সেটা নয় শুধু এই টেকনিক প্র্যাকটিস করার জন্যই একটু খেতো যদিও যাকে মাতাল বলে সেরকম কিছু হতো না নিজের উপরে অসম্ভব কন্ট্রোল ছিল" অভিরূপবাবু চুপ করে কিছু একটা চিন্তা করতে থাকেন, সুপ্রতিমবাবু আবার বলেন "আচ্ছা আপনারা কিজন্য আমার সাথে দেখা করতে চাইছিলেন সেটাই শোনা হলো না" অভিরূপবাবুকে দেখে মনে হচ্ছে তার কথা আটকে গেছে  বলার অনেক কিছুই আছে কিন্তু বলতে পারছেন না কোনোমতে স্বর্ণেন্দু বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "স্বর্ণেন্দু শুরুটা তুমিই বলো তারপর আমি বলছি" "ঠিক আছে জামাইবাবু" স্বর্ণেন্দু বাবু বলতে আরম্ভ করেন, "সুপ্রতিম ব্যাপারটা একটু আজব, শুনলে তুমি আমাদের কি ভাববে জানিনা" "তুমি শুরুই করো না আমার ভাবনা আমার উপরে ছেড়ে দাও" সুপ্রতিমবাবু মাঝখানে বলে ওঠেন, স্বর্ণেন্দু বাবু আবার শুরু করেন, "জামাইবাবুর বোন অর্থাৎ মণিমালা দেবীর হাজবেন্ড প্রীতমবাবুকে তুমি চেনো?" "ওরে বাবা উনি তো আরেক কীর্তিমান, হঠাৎ ওনার কথা?" "মাসতিনেক আগে ওনার ছেলে সুশান্তর বিয়ে ছিল, বৌভাতের দিন রিচুয়ালসের পরে সুশান্ত ওর ব‌উকে নিয়ে ওর ইনভাইটেড ফ্রেণ্ডসদের সাথে আলাপ করাতে নিয়ে যায়, নিয়ে যায় বলতে বাড়ির বাইরে না ব্যানার্জী ভিলাতেই আমরা বড়োরা ওখানে ছিলাম না হটাৎ একটা হ‌ইহট্টগোল শুনে দৌড়ে সেখানে যাই গিয়ে দেখি একটা ছেলে সুশান্ত আর মনোজিত বাবুর ছেলে মনোজকে  প্রচণ্ডভাবে ঠ্যাঙাচ্ছে, শুধু ওদের নয় ওদের বাঁচাতে যেকজন সিকিউরিটি এসেছিল তাদের‌ও একাই ঠেঙিয়ে শুইয়ে দিয়েছে" "এই ছেলেটি কি ওদের ইনভাইটেড বন্ধুদের কেউ?" সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করেন। "না, বাইরে থেকে এসেছিল" "বাইরে থেকে এসে বাড়ির ভিতরে ঢুকে শহরের সবথেকে বড়ো দুজন ক্রিমিনালের ছেলে যারা আবার শহরের সবথেকে বিত্তবান এবং ক্ষমতাধর পরিবারের সাথে সম্পর্কিত তাদের গায়ে হাত দিয়েছে? ছেলেটার সাথে আলাপ করার লোভ হচ্ছে, ছেলেটা কে আর ওদের হটাৎ মারলোই বা কেন কিছু বলেছে?" "নামটা বলেনি তবে ওর সাথে একটা মেয়ে ছিল যাকে নিজের স্ত্রী বলছিল। মনোজ আর সুশান্ত ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে ওকে রেপ করার থ্রেট দিয়েছে তাই" সুপ্রতিমবাবুর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল তিনি বললেন "আর সেটা তোমরা কিভাবে জানলে? মানে মনোজ আর সুশান্ত তো স্বীকার করেনি" "না সেটা করেনি, কিন্তু ছেলেটা প্রমাণ দিয়েছিল" "কি প্রমাণ?" "কল রেকর্ডিং যেখানে মনোজ আর সুশান্তর গলা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে" "তারপর তোমরা ওই দুজনের সাথে কি করলে?" "সুশান্তর বিয়ে ছিল ওকে কোনো শাস্তি দিলে মেয়েটা অযথা কষ্ট পেতো আর শুধু মনোজকে শাস্তি দিলে সেটা উচিত হতো না"  "তারমানে দুজনকেই ছেড়ে দিলে, দারুণ... তারমানে ছেলেটা জানতো এই দুজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে গিয়ে লাভ নেই তাই নিজেই শাস্তি দিয়েছে অবশ্য শাস্তিটা কম হয়ে গেছে, কিন্তু এখন আমাকে কি করতে বলছো স্বর্ণেন্দু?" "ছেলেটাকে খুঁজে বার করতে হবে" "যাতে তোমরা ওকে শেষ করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে পারো?" "সুপ্রতিম!" স্বর্ণেন্দু বাবুর গলায় বিস্ময়, একটু থেমে স্বর্ণেন্দু বাবু বলতে থাকেন "সুপ্রতিম তোমার সত্যিই মনে হয় যে ছেলেটার ক্ষতি করতে চাইলে সেইদিন ওকে যেতে দিতাম?" "তাহলে এখন ওকে খুঁজতে চাইছো কেন? আর যদি আমি ওকে খুঁজিও তাহলে ওকে প্রটেক্ট করবো" "আর সেইজন্যেই আমরা তোমার কাছে এসেছি" "মানে?" "প্রীতম আর মনোজিত এতসহজে ওকে ছাড়বে না, ওরা নিশ্চয়ই ওদের দুজনকে খুঁজছে, আবার আমরা যদি লোক লাগাই তাহলে ওরা ঠিক জানতে পারবে কিন্তু তুমি নিজের বিশ্বস্ত সোর্স দিয়ে লুকিয়ে ওর খোঁজ করতে পারবে" "একটা কথা বলোতো শুধু প্রীতম বাবু আর মনোজিত বাবুর হাত থেকে বাঁচাতে ওকে খুঁজতে চাইছো নাকি অন্য কারণ আছে? না মানে নিজের হোক বা না হোক অনিকেতের সাথে যা করেছিলে তোমরা তাতে একজন বাইরের ছেলের জন্য এত ভাবনা, ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে" "অনি আমার নিজের ছেলে মিস্টার দাশগুপ্ত, বারবার এই এক কথা বলবেন না প্লিজ। কে কি বলেছে আমি জানিনা আর জানতেও চাইনা কিন্তু সত্যি এটাই অনি আমার নিজের ছেলে" এতক্ষণে মুখ খুললেন অভিরূপবাবু আর কথাটা বললেন বেশ জোরের সঙ্গেই, "মিস্টার দাশগুপ্ত, স্বর্ণেন্দুর মুখে শুনলাম আপনি অনিকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাই হয়তো আমার উপরে রাগ আছে যেটা স্বাভাবিক কিন্তু আপনি বলুন বাবা হয়ে এক ছেলেকে আরেক ছেলের খুনি ভাববো কিভাবে? আপনার কোনো ধারণা নেই যেদিন অনির খাদ থেকে পরে যাওয়ার খবরটা শুনলাম সেদিন আমার মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল? কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনি সবাই আমাকেই খারাপ ভাবে হয়তো অনিও ভাবতো কিন্তু আমিও ওকে কম ভালোবাসতাম না, শুধু ওকে কোনোদিন বলতে পারিনি" সুপ্রতিমবাবু এতক্ষণ চুপ করে অভিরূপবাবুর কথা শুনছিলেন এবার তিনি থামতেই বললেন,  "আয়্যাম সরি মিস্টার ব্যানার্জী আমি হয়তো একটু ওভার রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি।" "মিস্টার দাশগুপ্ত আমি সত্যিই চাই ছেলেটা প্রীতম আর মনোজিত বাবুর হাত থেকে সেফ থাকুক কিন্তু ওকে খুঁজতে চাওয়ার এটাই একমাত্র কারণ নয় আর একটা কারণ আছে যেটা হয়তো আপনাকেও ইন্টারেস্টেড করবে" "আর সেই কারনটা কি?" "আমার স্ত্রীর ধারনা ওই ছেলেটা আর কেউ নয় আমার ছেলে অনিকেত" কথাটা শুনে সুপ্রতিমবাবু চমকে উঠলেন অভিরূপবাবু বলতে থাকেন "সত্যি কথা বলতে ছেলেটা যখন আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো তখন আমারও ওরকম মনে হয়েছিল" "একমিনিট আপনার মনে হয় মানেটা কি? ও যদি অনিকেত হয় তাহলে তো আপনাদের চেনার কথা" "অবশ্যই চিনে নিতাম যদি ওর চেহারা অনির হতো, কিন্তু চেহারার দিক থেকে এই ছেলে অন্য একজন সত্যি বলতে প্রথমে আমি অতটা গুরুত্ব দি‌ইনি কিন্তু তারপর এমন একটা ঘটনা ঘটলো যাতে আমারও ধারণা পাল্টে গেল আমারও এখন মনে হয় যে ওই অনিকেত ছিল" "কি ঘটনা একটু ডিটেইলসে বলুন মিস্টার ব্যানার্জী" "আপনি জানেন কি না জানিনা যে আমাদের বাড়িতে একটা কুকুর আছে নাম টোবো, অনি‌ই এনেছিল ওকে একদম বাচ্চা অবস্থায়" "হ্যাঁ, জানি অনিকেত একবার নিয়েও এসেছিল, কিন্তু সে কি করেছে?" অভিরূপবাবু সেদিনের টোবোর কার্যকলাপ আনুপূর্বিক বর্ণনা করলেন, এমনকি শেষে বাইকের পিছনে ছুটে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাও‌। সব শুনে সুপ্রতিমবাবুর কপালে একটু ভ্রুকুটি দেখা গেল অভিরূপবাবু এবার জিজ্ঞেস করলেন, "এবার আপনি বলুন টোবোর এই আচরণটা কি আপনার অদ্ভুত মনে হচ্ছে না? যে কুকুর অনির চলে যাওয়ার পর থেকে কাউকে নিজের কাছে আসতে দিত না শুধু আমি আর আমার স্ত্রী যেতে পারতাম এছাড়া আমাদের অনুপস্থিতিতে একজন বৃদ্ধ পরিচারক যেতে পারেন তাও শুধু খাবার দিতে। যে কুকুর এতগুলো বছর চুপচাপ শান্ত হয়ে ছিল সেই কুকুর সেদিন যা করলো আপনি না দেখলে বিশ্বাস করবেন না, আর ও যে কত খুশী ছিল সেটা ওর ঘনঘন লেজ নাড়ানো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। মিস্টার দাশগুপ্ত মানুষ মানুষকে চিনতে ভুল করতে পারে কুকুর কিন্তু মানুষ চিনতে ভুল করে না আর একথা আপনিও ভালো করে জানেন" সুপ্রতিমবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে র‌ইলেন বোধহয় ঘটনাটা অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন তারপর বললেন, "আপনার কথাগুলো আমাকেও ভাবিয়ে তুললো মিস্টার ব্যানার্জী" "তাহলে আপনি ওকে খুঁজবেন তো মিস্টার দাশগুপ্ত?" "মিস্টার ব্যানার্জী ওই ছেলে যদি সত্যিই অনিকেত হয় তাহলে আমিও কম খুশী হবো না, কিন্তু ওকে খুঁজতে গেলে কিছু ডিটেইলস জানা দরকার এদিকে আপনি বলছেন নামটাও জানেন না এভাবে তো মুশকিল একটু মনে করুন তো কিছু তো বলেছে যার থেকে ওর এখনের পরিচয় বা ঠিকানার খোঁজ পাওয়া যায় বা অন্য যেকোনো ইনফরমেশন" অভিরূপবাবু একটু ভেবে বলেন "মনে পরেছে, একটা কথা বলেছিল তবে নিজের সম্বন্ধে নয় ওর সঙ্গের মেয়েটির সম্বন্ধে যাকে ওর ওয়াইফ বলে পরিচয় দিয়েছিল" "কি বলেছিল?" "মেয়েটি উকিল, মনোজিত বাবুর ছেলের বিরুদ্ধে একটা কেসে ওর লড়ার কথা ছিল কিন্তু কোর্টে ওঠার আগেই ভিক্টিম মারা যায় এবং বাড়ির লোক কেসটা উইথড্র করে নেয় কিন্তু মনোজিত বাবুর ছেলে মেয়েটির পিছনে পরে যায়, ওকে তুলে আনার জন্য বারবার লোক পাঠাতে থাকে" এইসময় স্বর্ণেন্দু বাবু কথা বললেন, "সুপ্রতিম, মেয়েটা উকিল জানার পরে আমিও কিছু খোঁজখবর নি‌ই মেয়েটির নাম পিয়ালী সরকার, আগে একজনের অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতো তারপর নিজে প্র্যাকটিস শুরু করে একটা না দুটো কেস লড়ে সেগুলো জেতেও তারপর এই কেসটা তারপর আর প্র্যাকটিস করে না কোর্টেও আসে না, ও যার অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতো তার সাথে কথা বলে জেনেছি মেয়েটি কসবা এলাকায় একটা মেসে থাকতো, আমি ওখানেও খোঁজ নি‌ই ওরা বলে মেয়েটা মাসখানেক আগে একবার কাউকে কিছু না বলে মেস ছেড়ে চলে যায় তারপর তিনমাস আগে ফিরে আসে নিজের হাজবেন্ডকে নিয়ে যে জিনিসগুলো ছেড়ে গিয়েছিল সেগুলো নিতে" "কবে বললে তিনমাস আগে?" "সেইরকমই তো বললো কেন বলোতো?" সুপ্রতিমবাবু "একমিনিট দাঁড়াও" বলে কাকে যেন ফোন করলেন তারপর বেশকিছুক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলে ফোনটা রেখে আবার আরেকজনকে ফোন করলেন আবার কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে বললেন, "তিনমাস আগে কসবা থানার অফিসাররা ওখানকার স্থানীয়দের থেকে কয়েকজন লোককে উদ্ধার করে, একেবারে পিটিয়ে আধমরা করে দিয়েছিল" "কিন্তু তারসাথে আমাদের কি?" "লোকগুলো মনোজিত বাবুর হয়ে কাজ করে, যদি আমার অনুমান ভুল না হয় তাহলে এই লোকগুলোকেই পাঠানো হয়েছিল মেয়েটিকে তুলে আনার জন্য তারপর কোনো বিষয় নিয়ে লোকাল লোকদের সাথে ঝামেলা হয়, সেখান থেকে ওদের পেটানো হয়েছে" "মিস্টার দাশগুপ্ত আপনি প্লিজ খুঁজে বার করুন" "হ্যাঁ, সুপ্রতিম মেসে নাকি মেয়েটির সম্পর্কে খোঁজখবর করে গেছে কয়েকজন, আমি শিওর এরা প্রীতম বা মনোজিত বাবুর লোক"। অভিরূপবাবু এবার মোবাইলে একটা ভিডিও চালিয়ে সুপ্রতিমবাবুকে দেখিয়ে বললেন, "এই দেখুন মিস্টার দাশগুপ্ত এই হচ্ছে ওদের ফুটেজ বাড়ির সিসিটিভি তে উঠেছে" সুপ্রতিমবাবু মন দিয়ে দেখলেন তারপর বললেন, "মিস্টার ব্যানার্জী আপনি এই ফুটেজটা আমাকে ফরোয়ার্ড করুন আমি খোঁজ নিচ্ছি" "আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো" "ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু হয়নি, অনিকেত আমারও খুব কাছের ছিল ও বেঁচে থাকলে আমিও খুব আনন্দিত হবো"। বাড়ি ফেরার পথে অভিরূপবাবুকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে স্বর্ণেন্দুবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "জামাইবাবু কি হয়েছে? এত চুপচাপ হয়ে গেলে?" "তুমি জানতে যে অনি এতগুলো ট্রফি, মেডেল জিতেছিল?" "হ্যাঁ, দেখেছিলাম তবে তোমার মতোই আমিও ওগুলো দেখে অবাক হয়ে যাই" "কখনো বলোনি তো?" "বলে লাভ ছিল না, কারণ ততদিনে অনি আমাদের থেকে দূরে চলে গেছে" অভিরূপ বাবু একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকালে স্বর্ণেন্দু বাবু বলেন, "অনি থাকতে সুপ্রতিম ওগুলো ওরকম সাজিয়ে রাখেনি, অনি ওগুলো দেখতে পছন্দ করতো না, এমনকি জেতার পরে দেখতো‌ও না সুপ্রতিমকে দিয়ে দিত"। "ওইদিনটা আমার মনে পরেছে" "কোন দিনটা?" "ওই যে যেদিন ও প্রথম মেডেল জিতলো ওর জন্মদিনের দিন" স্বর্ণেন্দু বাবু চুপ করে শুনে যেতে থাকেন অভিরূপবাবু বলতে থাকেন, "ও হাসতে হাসতে কিছু একটা দেখাতে এসেছিল আমাকে আর তোমার দিদিকে কিন্তু ও কিছু দেখানোর আগেই অরু আসে ওর একটা শার্ট পছন্দ হয়েছিল ওটাই কিনতে যাওয়ার জন্য জেদ করছিল, আমরা অনিকে পরে দেখবো বলে অরুকে নিয়ে বেরোই অনিকে যেতে বলেছিলাম কিন্তু ও যায়নি। ফিরে এসে ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কি দেখাতে চাইছিল কিন্তু ও বলে কিছু না" "ও কতটা অভিমানী ছেলে ছিল সেটা তো আমরা সবাই জানি জামাইবাবু" "তুমি ভাবতে পারছো স্বর্ণেন্দু, আমার ছেলের জেতা প্রথম মেডেল আর সার্টিফিকেট আমার ঘরে নেই সেটা অন্য একজনের ঘরে সাজানো আছে..কেন যে সেদিন অনির সাথে কথা বললাম না" অভিরূপবাবুর গলায় আফশোষ ঝরে পরে। "তুমি চাইলে কিন্তু নিয়ে আসতে পারতে ওগুলো" "আমার ছেলে ওগুলো তার গুরুকে দিয়ে গেছে কোন অধিকারে আমি ওগুলো নিয়ে আসতাম? রাতে নিজের রুমের ব্যালকনিতে আরামকেদারায় বসে ছিলেন অভিরূপবাবু কোলে একটা বাধানো ছবির ফ্রেম, সকালে সুপ্রতিমবাবুর বাড়িতে নিজের ছেলে অনিকেতের জেতা প্রথম মেডেল এবং সার্টিফিকেটের ছবি তুলে এনেছিলেন তারপর সেটা এনলার্জ করিয়ে বাধাতে দিয়েছিলেন, আর্জেন্ট বলায় দোকানদার সন্ধ্যার মধ্যেই দিয়ে দেয় সেটাই এখন তার কোলে। শ্রীতমাদেবী ঘরে ঢুকে ব্যালকনিতে স্বামীকে দেখে অবাক‌ই হন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তার সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া ব‌ইছে মানুষটার ঠান্ডা লেগে গেলে কি হবে? সে খেয়াল আছে নাকি? "কি গো এখানে কি করছো?" স্বামীর পিছন গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন শ্রীতমাদেবী এবার সামনে এসে দাঁড়ালেন বললেন, "ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে ভিতরে চলো, ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে" অভিরূপবাবু স্ত্রীর কথায় উত্তর না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন, "আজ একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম অনির পরিচিত তিনি" শ্রীতমাদেবী একটু বিস্মিত হন কারণ তাদের বাড়িতে আসা একটা ছেলেকে তার ছেলে অনিকেত বলে মনে হয়েছিল, হয়েছিল না বলে মনে হয় বলাটাই উচিত কারণ তার সেই মনোভাব এখনো বদলায়নি। স্বামীকে একবার বলেছিলেন ছেলেটাকে খুঁজতে কিন্তু তারপর তার স্বামী ওই বিষয়ে আর কথা বলেননি, শ্রীতমাদেবীও আর বলেননি কারণ তিনি জানেন তার স্বামী যখন একবার বলেছেন যে ছেলেটাকে খুঁজবেন তখন খুঁজবেন তাই আজ স্বামীর মুখে ছেলের পরিচিতর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা শুনে তার মনে একটু আশার আলো জ্বলে উঠলো, "কি বললেন তিনি? তিনি জানেন অনি কোথায় আছে? আমাকে নিয়ে গেলে না কেন?" একসাথে তিনটে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন স্বামীর উদ্দেশ্যে। "না তিনি জানেন না তবে আজ এক বড়ো কঠিন মিথ্যার মুখোমুখি হলাম যেটা আমাদের কাছে মিথ্যা হলেও হয়তো বাইরের সবার কাছে সত্যি" "কি বলছো বুঝতে পারছি না, কি হয়েছে একটু খুলে বলবে?" "আজ যার কাছে গিয়েছিলাম তিনি শুধুমাত্র আমাদের অনির পরিচিত‌ই নন তিনি ছিলেন অনির গুরু আজ তিনি আমাকে একটা কথা বললেন" "কি কথা?" "বললেন তিনি আমাদের পুরনো বাড়ির আশেপাশের লোকদের মুখে শুনেছেন অনি নাকি আমাদের নিজেদের ছেলে নয় ও কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে" "কি" শ্রীতমাদেবী স্তম্ভিত হয়ে যান "এসব কে বলেছে ওনাকে" "কে বলেছে সেটা বড়ো কথা নয়" "বড়ো কথা নয়? আমার ছেলের সম্পর্কে এইধরনের মিথ্যা কে ছড়িয়েছে সেটা জানতে হবে" "শ্রীতমা কে ছড়িয়েছে সেটা জেনে কোনো লাভ নেই কিন্তু ভেবে দেখো এই মিথ্যাটা যদি অনি জেনে থাকে তখন? আর যদি এটা সত্যি হয় যে ও বেঁচে আছে তাহলে হয়তো এই কারণেই ও ফিরছে না কারণ ও ভাবছে আমরা ওর বাবা-মা ন‌ই" "অনি এরকম কেন ভাববে? কেউ যা খুশী বলবে আর ও বিশ্বাস করে নেবে? অনি এতটা বোকা নাকি?" অভিরূপবাবু হাতে ধরা ফটোফ্রেমটা স্ত্রীর হাতে দিলেন শ্রীতমাদেবী "এটা কি" বলে ছবিটা ভালো করে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন, খানিকক্ষণ পরে বিস্মিত কণ্ঠে বললেন "এতে তো আমার অনির নাম লেখা" "এটা অনির জেতা প্রথম মেডেল আর সার্টিফিকেট, যেটা ও মার্শাল আর্ট কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জিতেছিল" "কিন্তু এ জিনিস তো বাড়িতে দেখিনি" "বাড়িতে ছিল না তাই দেখোনি, এটা জিতে ও আমাদের দেখাতেই এনেছিল ওর জন্মদিন ছিল কিন্তু আমরা সেদিন ওর কথা না শুনে অরুর জিদের জন্য ওকে নিয়ে বেরিয়ে যাই আর অনি পরদিন এগুলো ওর গুরুকে দিয়ে দেয়, আমি আজ ছবি তুলে এনেছি এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ট্রফি মেডেল সার্টিফিকেট আছে যেগুলো অনি জিতেছিল কিন্তু একটাও ওর নিজের বাড়িতে নেই, বুঝতে পারছো কতটা অভিমান ওর মনে ছিল এরপরেও তোমার মনে হয় যে কেউ যদি ওকে কোনো মিথ্যা বলে তাহলে ও সেটা সত্যি বলে ধরে নেওয়াটা অসম্ভব?" শ্রীতমাদেবীর চোখ থেকে জল ঝরতে থাকে অভিরূপবাবু বলতে থাকেন, "আমাদের এক ছেলে সবকিছু পেয়েছে তারপরেও ওর চাহিদা মেটেনি, লোভ হিংসা সবকিছু ওর মনের মধ্যে জমা হয়েছে অপরদিকে আরেক ছেলে সে আমাদের থেকে একটু হলেও অবহেলা পেয়ে মনের মধ্যে গুমরে গুমরে অভিমানে ধীরে ধীরে কবে যে আমাদের থেকে দূরে সরে গেছে বুঝতেই পারিনি। গ্যাংটকের ঘটনাটা তো শুধু ওর শরীরকে আমাদের থেকে দূরে করেছে বাস্তবে তো ও আমাদের থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গিয়েছিল, আমার ভয় হয় যে যদি ও বেঁচে থাকেও তাহলেও ও আর আমাদের কাছে আসবে কি না?"।
Parent