"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৩১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5279302.html#pid5279302

🕰️ Posted on June 25, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1873 words / 9 min read

Parent
                   দ্বিতীয় খণ্ড                    ২০তম পর্ব একটু পরেই একটা ফাইল নিয়ে কেবিনে ঢুকলেন মিস তানিয়া সেনগুপ্ত যিনি একজন দক্ষ পুলিশ অফিসারের সাথে সাথে সুপ্রতিমবাবুর মেয়েও বটে তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "ওটা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট? কি আছে রিপোর্টে?" "পেটে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পাওয়া গেছে আর মৃত্যু খুলি ফেটে হয়েছে" "মানে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম ঠিক তাই, আগে লোকটাকে মাতাল করে কেউ বা কারা ওভারব্রিজ থেকে ফেলে দেয় ফলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু এবং তারপর ট্রেনে কাটা, খুব সম্ভবত ট্রেন আসার মুহুর্তে ঠেলে ফেলা হয়" "কিন্তু ও নিজেও তো নেশার ঘোরে পরে গিয়ে থাকতে পারে?" "সম্ভাবনা হয়তো আছে কিন্তু এই কেসে এটা পসিবল না" "কেন?" "দিন দিন তোমার ব্রেন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে কেন? অবশ্য আমি নিজেই তো এতবড়ো জিনিসটা দেখতে পাইনি তোমাকেই বা বলি কিভাবে? যে লোককে পুলিশ পুরো শহরে হন্যে হয়ে খুঁজছে সে লোক মাতাল হয়ে কি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করবে? এটা তুমি বিশ্বাস করো?" "কিন্তু ওকে ঠেলে ফেলবে কে? ওর সঙ্গীরা?" "হতে পারে তবে আসল মাথা অন্য লোক" "আসল মাথা?, মানে এই ডাকাতির পিছনে কোনো একজনের হাত রয়েছে?" "এখানেই তো চালাকি লোকটার, এটা আসলে কোনো ডাকাতির কেস‌ই নয় আমাদের ইনভেস্টিগেশনকে ডাইভার্ট করার জন্য ডাকাতির রূপ দেওয়া হয়েছে" "তারমানে কয়েকমাস ধরে যে ডাকাতির ঘটনাগুলো ঘটছিল সেগুলো আসলে" "প্রস্ততি ছিল আসল লক্ষ্য ছিল অভিরূপবাবু, তাঁকে মার্ডার করাই ওদের উদ্দেশ্য ছিল হয়তো সফল‌ও হয়ে যেত কিন্তু ওদের প্ল্যান ফেল হয়ে যায় একটা ছেলের জন্য যে অভিরূপবাবুকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং লোকগুলো পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়" "তাহলে ড্রাইভারটিকে মারলো কেন?" "কারণ ও শনাক্ত হয়ে গেছে ওদের বোধহয় অন্য প্ল্যান ছিল ওকে নিয়ে যদি অভিরূপবাবু বেঁচে না যেতেন তাহলে কি করতো বলা মুশকিল কিন্তু এখন পুলিশ ওকে খুঁজছে আর ও ধরা পরলে লোকটার সমস্যা তাই ওকে সরিয়ে দেওয়া হলো" "লোকটা কে কিছু আন্দাজ করেছেন?" "কে হতে পারে সেটা আন্দাজ করেছি, কিন্তু প্রমাণ নেই তাই বলাটা ঠিক হবে না, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ওর লোক থাকা আশ্চর্য নয় কোনোভাবে যদি জানতে পারে আমরা সন্দেহ করছি সতর্ক হয়ে যাবে তখন ওকে ধরা আরও কঠিন হয়ে যাবে" "তাহলে তো খুব মুশকিল হলো এবার, একটাই লীড ছিল সেটাও গেল" "বরং উল্টো, এতে বাকি পুরো দলটা ধরা পরার চান্স বেশী" "কিভাবে?" "এর আগের প্রতিটা ডাকাতির সময় লোকগুলো অক্ষত পালিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এইবার সেটা নয় এবারে ওরা ঘায়েল হয়েছে, তুমি এক কাজ করো তানিয়া পুরো শহরেই বিশেষ করে সাউথ কলকাতায় তোমার ইনফর্মারদের অ্যাক্টিভ করে দাও, বলো খবর নিতে কোথাও কোনো ডাক্তারখানায় কেউ হাত ভাঙা বা পা ভাঙা নিয়ে এসেছে কি না বা জখম অবস্থায় সেলাই ব্যাণ্ডেজ করিয়েছে কি না?" "ঠিক আছে আমি নিজে প্রতিটা হাসপাতালে যাচ্ছি কিন্তু." "উঁহু শুধু হাসপাতালে নয়, শহর জুড়ে অনেক ছোটোখাটো ডাক্তারি ক্লিনিক আছে সেখানে বিশেষ করে যেসব ডাক্তারি ক্লিনিকে তেমন পেশেন্টদের আসা যাওয়া নেই সেখানে আর তুমি যেও না ধরা পরে যাবে, ইনফর্মার লাগাও ওরা সাধারণ লোকদের মাঝে মিশে যেতে পারে" "কিন্তু লোকগুলো যদি গুরুতর আহত হয়ে থাকে তাহলে হাসপাতালে খুঁজলেই তো সুবিধা হবে" "না, হতে পারে লোকগুলো হাসপাতালে গেল‌ই না, কোনো ক্লিনিক থেকে ডাক্তার ডেকে কাজটা করিয়ে নিল বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিল তাই সব জায়গায় খোঁজ নাও, সাথে এটাও খোঁজ নাও শহরের কোনো বাড়িতে একাধিক লোক একসঙ্গে অসুস্থ বা আহত হয়েছে কি না এবারে খোঁজ পেতেই হবে তানিয়া এবারে ওদের ধরতেই হবে" "ঠিক আছে আমি ইনফর্মারদের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছি"। সকালে ব্রেকফাস্টের সময় কফি খেতে খেতে মোবাইলে নিউজ দেখছিল আদিত্য খবর বলতে 'বিকেলে অভিরূপ ব্যানার্জীকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে তবে রেস্টে থাকতে হবে' আর দ্বিতীয় খবরটা হলো ড্রাইভারের লাশ পাওয়া গেছে এটাই, পিয়ালীও পাশে বসে দেখছিল ড্রাইভারের খবরের সময় সে একবার স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিত্যর মুখে উদ্বেগের কোনো চিহ্নমাত্র নেই কোনো তাপ‌উত্তাপ নেই দিব্যি সে যেন নিশ্চিন্ত মনে কফি খাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি কিন্তু পিয়ালী বুঝতে পারছে ওর মাথায় কিছু একটা চলছে একটার পর একটা চিন্তা চলছে তবে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই বা এটাও হতে পারে আদিত্য পিয়ালীকে বুঝতে দিতে চাইছে না। "এভাবে তাকিয়ে আছো, কিছু বলবে?" মোবাইলের দিকে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করে আদিত্য" "এবার কি হবে?" "কিসের?" "একমাত্র ড্রাইভারকেই শনাক্ত করা গিয়েছিল কিন্তু ও অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল" "তুমি বলেছিলে তুমি ক্রিমিনাল লয়্যার এই তোমার বুদ্ধি?" "আমি লয়্যার, গোয়েন্দা ন‌ই" "এটা বোঝার জন্য তার দরকার‌ও হয় না শুধু একটু কমন সেন্স আর ব্রেণের দরকার হয়,অবশ্য দুটোই তোমার আছে কিন্তু এখন আর কাজে লাগাও না। এটা না অ্যাক্সিডেন্ট না সুইসাইড এটা মার্ডার, লোকটাকে প্ল্যান করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পুলিশ ওর মাধ্যমে আসল লোকের কাছে পৌঁছাতে না পারে, যাকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে সে কখনোই মাতাল হয়ে ওভারব্রিজে ঘোরাঘুরি করবে না" "এবার তাহলে পুলিশ কি করবে বলে তোমার মনে হয়?" "সুপ্রতিম স্যারকে চিঠিতে হিন্ট দিয়েছিলাম তবে উনি খেয়াল করেছেন কি না জানিনা" "তার মানে তুমি জানতে এরকম হবে?" "এটাই আশা করেছিলাম ইনফ্যাক্ট এটা না করলেই আমি বেশী অবাক হতাম, তাও তো ড্রাইভারের লাশ পাওয়া গেছে যদি আমি ওদের জায়গায় থাকতাম তাহলে সেটাও পাওয়া যেত না" পিয়ালী চুপ করে আছে দেখে আদিত্য একটু হেসে বলে, "মেইন কালপ্রিট যে সে যেমন ধূর্ত তেমনি নিষ্ঠুর, এখন আমার চিন্তা বাকিদের নিয়ে ওর কি প্ল্যান? এতগুলো লোককে একসাথে কি শেষ করবে নাকি অন্য কিছু ভাবছে?"। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অভিরূপবাবু, অবশ্য সেইসঙ্গে আবার আত্মীয়, পরিচিত বন্ধুদের আগমন হয়েছে যেসকল আত্মীয় পরিচিত বছরে এক আধবার‌ও দেখা দিতেন কি না সন্দেহ তারাও এসে বোঝাতে চেষ্টা করছে তাদের কত চিন্তা কত ভাবনা অভিরূপবাবুর প্রতি, অভিরূপবাবু সব বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকেন মুখে একটা প্রসন্নতার হাসি। আত্মীয় পরিচিতদের এই ভিড় কিছুটা খালি হলে এবার অভিরূপবাবুর কাছে আসে একটি বাচ্চা মেয়ে ইনি স্বর্ণেন্দু বাবুর নাতনী অর্থাৎ সুনন্দা এবং মৈনাকের মেয়ে। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি দাদুর কাছে এসে হুড়োহুড়ি করবে এই আশংকায় সুনন্দা একটু ধমক দিতেই অভিরূপবাবু সুনন্দাকে ধমক দেন। সন্ধ্যায় অভিরূপবাবু, শ্রীতমাদেবী, স্বর্ণেন্দু বাবু, সুদেষ্ণা দেবী, মণিমালা দেবী, সুনন্দা এবং মৈনাক নিজেদের মধ্যে হাল্কা মেজাজে হাসিঠাট্টা করছে আসলে অভিরূপ বাবুকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা। প্রীতমবাবু এইসময়ে বাড়ি থাকেন না আজ‌ও নেই, সুশান্ত এবং ওর স্ত্রীর দৈনন্দিন আমোদ প্রমোদে বাধা নেই ওরা ওসব নিয়েই ব্যাস্ত, অভিরূপবাবুর উপরে আক্রমণের পরে অরুণাভ আবার অফিস যেতে শুরু করেছে হুইলচেয়ার নিয়েই যাচ্ছে, অফিসের কাজ তো বন্ধ রাখা যায় না, বাড়ির বৌ মৌমিতা ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত, ওদের কলেজ, টিউশন ছাড়াও আরও অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিজের ক্লাসে ভর্তি করা হয়েছে   কলেজ ছুটি থাকলেও বাকিগুলো বন্ধ থাকে না, মৌমিতাই এখন ওদের ওখানে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসার কাজটা করে। কথা বলতে বলতে হটাৎ মৈনাক বললো, "আচ্ছা ডাক্তার তো এখন পিসুকে রেস্ট নিতে বলেছে, তো এখান থেকে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন তো এই শহরের কোলাহল থেকে দূরে কোথাও" "এটা দারুণ বলেছো তো জামাই, কিন্তু কোথায় পাঠানো যায় বলোতো?" স্বর্ণেন্দু বাবু জামাইয়ের কথায় সমর্থন জানান। "তার আবার দরকার কি? এই নিজের ঘরেই তো ঠিক আছি" অভিরূপবাবু মৃদু আপত্তি জানান, কিন্তু স্বর্ণেন্দু বাবু তাকে থামিয়ে বলে ওঠেন, "দরকার আছে, এখানে থাকলে বিভিন্ন বিষয়ে তুমি মাথা ঘামাতে থাকবে দেখা গেল কোনোদিন দুম করে অফিসে চলে গেলে, ওটা হচ্ছে না আগে পুরো সুস্থ হবে তারপর অন্য কাজ, আর সুস্থ হবার জন্য এখন তোমার এখান থেকে দূরে গিয়ে কমপ্লিট রেস্টে থাকতে হবে, কি দিদি তাই তো?" "সে তো যাওয়া যায় কিন্তু যাবো কোথায়? মৈনাক তো বললো শহর থেকে দূরে কোথাও এরকম কোনো জায়গা জানা আছে নাকি মৈনাকের?" শ্রীতমাদেবী ভাইয়ের কথার উত্তরে বললেন। "ঠিক আছে যেতে আমি রাজী কিন্তু গেলে সবাই মিলে যাবো" অভিরূপবাবু সম্মতি জানান, এইসময় অরুণাভ এবং মৌমিতা ছেলেমেয়েদের নিয়ে একসাথেই ঘরে ঢোকে এবং ঢুকতে ঢুকতে কিছু কথা হয়তো তাদের কানে এসেছে, সেই কারণেই বোধহয় অরুণাভ জিজ্ঞেস করে, "কোথায় সবাই মিলে যাবেন বাবা?" "আয় অরু এই দেখনা এরা চাইছে আমি হাওয়া বদলে যাই তাই বলছিলাম গেলে সবাই মিলে যাবো" "ঠিকই বলেছে আপনার এখন কোথাও গিয়ে হাওয়া বদল করে সুস্থ হয়ে আসতে পারেন কিন্তু আমার যাওয়া বোধহয় হবে না, অফিসে কাজ বেড়েছে কাউকে তো থাকতেই হবে" "আর এদের ক্লাস বাদ দিয়ে আমিও কোথাও যেতে পারবো না তার থেকে আপনারাই ঘুরে আসুন" মৌমিতাও তার মতামত দিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে রুমে চলে যায়, অরুণাভ‌ও আস্তে আস্তে নিজের রুমে যায়, ওদের কথা শুনে অভিরূপবাবুর মুখের হাসিটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায় শ্রীতমাদেবী স্বামীর মুখটা লক্ষ্য করেন তিনি বুঝতে পারেন তার স্বামীর মনের অবস্থাটা কষ্ট তো হবেই নিজের ছেলে কাছে থেকেও কাছে নেই তার কাছে বাবার জন্য সময় নেই, এইসময়ে মণিমালা দেবীর কথা বলেন, "দাদা আমার আর ওর বাবার‌ও বোধহয় যাওয়া হবে না আর সুশান্ত আর বৌমার‌ও না ওরা দুইজন তো কাজে যাবে ছুটি পাবে না, ওর বাবাও যাবে আর এদিকে অরু আর বৌমাও থাকবে ওদের খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা করার জন্য তো কাউকে থাকতে হবে তার থেকে ভালো তোমরা সবাই ঘুরে এসো" এইবলে মণিমালা দেবী উঠে চলে যান। অভিরূপবাবুর মুখে এতক্ষণ যে ঔজ্জ্বল্য ছিল সেটা মুছে যায় মনে মনে তিনি ভাবেন, 'এই না হলে পরিবার কারো কাছে কারো জন্য সময় নেই, ছেলে বাবার সাথে সময় কাটাতে চায় না, নাতি-নাতনি দাদুর কাছে আসার সময় পায় না, বোন সেও তার নিজের স্বামী সন্তান নিয়ে ব্যাস্ত আর ওদিকে আরেক ছেলে তার মনে এতটাই অভিমান ভরে আছে যে সে দূরে লুকিয়ে আছে, তার মাথায় একটা মিথ্যা এমনভাবে গেঁথে আছে যে সে কাছে এসেও নিজের পরিচয় দেয় না, নিজের ঠিকানা দেয় না। সেখানেও নিজের নাতি বা নাতনি আসবে হয়তো কিন্তু তিনি হয়তো তাদের মুখ‌ও দেখতে পারবেন না' অভিরূপবাবুর বুকটা কষ্টে একটু মোচড় দিয়ে ওঠে তিনি শুকনো মুখে বলেন, "থাক কারোরই যখন যাওয়ার সময় হবে না তখন যাওয়ার দরকার নেই" "কেন পিসু আমরা তো আছি আমরা কি তোমার কেউ ন‌ই?" সুনন্দা বলে ওঠে। "অবশ্যই তাই আমরা তো আছি কিন্তু পিসু এমন করছে যেন আমরা ওনার কেউ ন‌ই, আর কেউ না হোক আমি তো পর‌ই" মৈনাক স্ত্রীকে সমর্থন করে বলে। "মৈনাক, পিউ দিদি সামনে না থাকলে তোমাকে আমি.." অভিরূপবাবু কিছু বলতে গিয়ে বাঁধা পান, স্বর্ণেন্দু বাবু তার আগেই কথা বলেন, "ঠিকই তো বলেছে জামাইবাবু আমরা কি কেউ ন‌ই তোমার?" "স্বর্ণেন্দু তুমিও? আমি কি সেটা বলেছি নাকি?" "তাহলে এই তো তুমি বললে যে." "আরে বাবা আমি বলেছি কারো যখন সময় হবে না, তোমার কথাই ধরো তোমার সময় হবে?" "আমার তো সময়‌ই সময়, অ্যাডভোকেটরা কি ভ্যাকেশনে যায় না?" "তাহলে তোমার সময় হবে?" "আলবাত হবে, আগে ফ্যামিলি তারপর অন্য কাজ" "বেশ তবে সুনু আর মৈনাক তোদের সময় হবে তো? পিউ দিদির কলেজ টিউশন" "ওসব আমরা ম্যানেজ করে নেবো, মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে গেলে মন তাজা থাকে, আমরা রাজী" সুনন্দা জবাব দেয়। "কিন্তু যাওয়া কোথায় হবে? দীঘা না পুরী নাকি অন্য কোথাও?" সুদেষ্ণা দেবী জিজ্ঞেস করেন। "ওসব জায়গায় যাওয়া যায় তবে ওখানে বড্ড লোকের ভিড়, যদি সবার আপত্তি না থাকে তবে আমি একটা জায়গার হৃদিশ দিতে পারি" "কোথায় জামাই তাড়াতাড়ি বলো" "আনন্দ নিকেতন রিসর্টে" "কোথায়? রিসর্ট? সেটা কোথায়?" স্বর্ণেন্দু বাবু প্রশ্ন করেন, উত্তরে মৈনাক মোবাইলে কয়েকটা ছবি বার করে সবাইকে দেখতে দিয়ে বলে, "আমার এক বন্ধু কয়েকদিন আগে ওখান থেকে ঘুরে এসেছে ওই ছবিগুলো দিয়েছে ছবিগুলো দেখুন খালি, একেবারে শান্ত গ্ৰাম্য পরিবেশ আমার বন্ধুটি তো ঘুরে এসে এখানকার কথাই বলে যাচ্ছে, যেরকম থাকার ব্যাবস্থা সেরকম, খাওয়া দাওয়া। ওরা তো আবার যাবে বলেছে শীতকালে ওখানে নাকি ফায়ারক্যাম্পিং করা হয়"। "সেসব ঠিক আছে কিন্তু জায়গাটা কোথায়?" "ঘটকপুকুর মালঞ্চ থেকে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে আরও কিছুটা গেলে নারায়ণতলা বলে একটা গ্ৰাম আছে ওখানে, আমি তো শোনার পর থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে এবার শীতকালে যাবোহ কিন্তু এখন ভাবছি আগে একবার ঘুরে এলে মন্দ হয় না" "বেশ, তবে তাই যাওয়া হোক কিন্তু কবে যাওয়া হবে?" "আমি আগে ওখানে কথা বলে দেখি কবে রুম পাওয়া যায়, জায়গাটা অফবিট হলেও অনেকেই একরাতের জন্য ঘুরতে যায়, তবে বুকিং পেয়ে যাবো বলেই মনে হয়" "তা এখনই করে দেখো না, নাম্বার নাওনি তোমার বন্ধুটির থেকে?" সুনন্দা স্বামীকে ভর্ৎসনার সুরে বলে, উত্তরে মৈনাক একটা বোকা হাসি দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে একটা নম্বরে ফোন করে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে ফোনটা কেটে জানায়, "ওখানে এখন হালকা রেনোভেশনের কাজ চলছে তবে ট্যুরিস্টদের যেতে বাধা নেই, বুকিংও পাওয়া যাবে কবে যাবেন বলুন তো আমি আবার ফোন করে বুকিং করে ফেলছি", ঠিক হলো দুদিন পরেই অভিরূপবাবু, শ্রীতমাদেবী, স্বর্ণেন্দু বাবু, সুদেষ্ণা দেবী, মৈনাক, সুনন্দা এবং পিউ এইকজন‌ই যাবে, প্রাথমিকভাবে তিনদিন থাকা হবে পরে যদি ভালো লাগে তবে আরও বাড়ানো হবে, সেইমতো মৈনাক আবার ফোন করে বুকিং করে ফেললো।
Parent