"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৩৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5290531.html#pid5290531

🕰️ Posted on July 8, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3779 words / 17 min read

Parent
                দ্বিতীয় খণ্ড                 ২১তম পর্ব অফিসে নিজের কেবিনে একা বসে ছিল অরুণাভ অ্যাক্সিডেন্টের পরে অনেকদিন অফিসে আসেনি বাড়িতেই রেস্ট নিচ্ছিল কিন্তু সম্প্রতি বাবার উপরে প্রাণঘাতী আক্রমণ হ‌ওয়ায় অরুণাভকে আবার অফিসে আসতে হচ্ছে যদিও হুইল চেয়ার নিয়েই আসছে এখনো নিজের পায়ে হাঁটার শক্তি আসেনি ডাক্তার যাই বলুক অরুণাভ‌র নিজের মনেই যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে সে আর কোনোদিন নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে কি না। অফিসে আজ এইসময়ে অরুণাভর কোনো প্রোগ্রাম ছিল না তাই নিজের কেবিনে একাই বসে ছিল, আগামীকাল বাবাকে নিয়ে মা,মামা মামীরা কয়েকদিনের জন্য ছুটিতে যাচ্ছে চাইলে সে নিজেও যেতে পারতো অফিসের কাজ যে ওখান থেকে করা যাবে না এমন নয় মাঝে মাঝেই তো বাড়ি থেকেই অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স কলে মিটিং করতো কিন্তু আজ ইচ্ছা করেই যাচ্ছে না। আসলে মাঝে মাঝেই এখন অরুণাভর বিবেক নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয় কম খারাপ কাজ তো করেনি সে, মৌমিতার সঙ্গে মিলে নিজের ভাইকে পর্যন্ত খুন করেছে, প্ল্যানটা যদিও মৌমিতার বাবা মনোজিতবাবুর ছিল ওরা দুইজন শুধু এক্সিকিউট করেছিল সেই শুরু তারপর থেকে এই কবছরে নাজানি আরও কত খারাপ কাজ করেছে তার ইয়ত্তা নেই এখন তো নিজের‌ই উপর রাগ হয় নিজের বাবার দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারে না এড়িয়েই চলে প্রায়শই, এইজন্যেই সে বাবার সঙ্গে ছুটিতে গেল না। না, শুধুমাত্র এটা একটা কারণ নয় আরও একটা কারণ আছে সেটা হলো যারা তার বাবাকে মারতে চেয়েছিল তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া, দরকারে পুলিশের সাহায্য নেবে তবুও ওদের ছাড়বে না। প্রথম থেকেই একটা সন্দেহ ছিল যে তার বাবার উপরে এই হামলাটা নিছক ডাকাতি নয় এটা বাবাকে খুনের চেষ্টা আর এখন তো সে নিঃসন্দেহ কারণ ড্রাইভারটির লাশ পাওয়া গেছে, তার মনে আর কোনো সন্দেহ নেই যে ইচ্ছা করে ড্রাইভারটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আর এই প্ল্যানটি যে কার মাথা থেকে বেরিয়েছে এটা তার অজানা নয় তাদের‌ই নুন খেয়ে নেমকহারামি করতে যার একটুও বাঁধে না সেই বেইমান পিসেমশাই প্রীতমবাবুর। অরুণাভ এবার মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে যে যেভাবেই হোক বাবার উপরে এই হামলার প্রতিশোধ নেবেই, পিসেমশাইকে শাস্তি দেবেই। ভাবতে ভাবতে অরুণাভর চোয়াল শক্ত হয়ে যায় সে টেবিলের উপরে রাখা মোবাইলটা তুলে একটা নম্বরে ফোন করে, "হ্যালো, আমি বলছি" "বলুন স্যার" ওপাশ থেকে একটা খসখসে পুরুষ কণ্ঠ আসে। "তোমাকে একটা কাজ করতে হবে, পারবে?" "কাজটা কি স্যার? সেটা তো বলবেন" "কয়েকজনের উপর চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখতে হবে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে দেখা করছে সব" "কার কার উপরে রাখতে হবে?" "নামগুলো বলছি নোট করে নাও" "বলুন স্যার" "প্রীতমবাবু, সুশান্ত, মনোজিত বাবু এবং মনোজ" "কিন্তু স্যার এনারা তো আপনার" "সেটা দেখার দরকার নেই পারবে কি না বলো" "হয়ে যাবে" "ওদের সব সময়ের খবর চাই আমার" "ঠিক আছে" "আরেকটা কাজ করতে হবে" "বলুন স্যার" "কয়েকমাস ধরে সাউথ কলকাতায় যে ডাকাতিগুলো হচ্ছে সে খবর তো নিশ্চয়ই জানো?" "জানি স্যার, কিন্তু এখনো কেউ ধরা পরেছে বলে শুনিনি" "না পরেনি, তবে আমার বিশ্বাস এই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত লোকগুলো এখনো শহরেই আছে বা বলা ভালো আমাদের সাউথেই কোথাও কোনো বাড়িতে লুকিয়ে আছে তোমাদের ওদের খোঁজ নিতে হবে" "ঠিক আছে স্যার চেষ্টা করছি তবে দামটা.." "দাম নিয়ে আজ পর্যন্ত চিন্তা করতে হয়েছে কখনো?" "না তা হয়নি" "এবারেও চিন্তা করতে হবে না তবে কাজগুলো হ‌ওয়া চাই" "ঠিক আছে আমি আমার ছেলেদের নিয়ে কাজে লেগে পড়ছি" "সাবধান থাকবে লোকগুলো যেন বুঝতে না পারে বিশেষ করে প্রীতমবাবু" "পারবে না স্যার আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন" "গুড" অরুণাভ ফোনটা রেখে দেয় তার দুচোখ যেন রাগে জ্বলছে সে নিজের মনেই বলতে থাকে, 'আমার বাবার উপরে হামলা করে বড়ো ভুল করেছো তোমরা এবার তার মাশুল দিতে হবে, দিতেই হবে'। "তুমি ঠিকই বলেছো মৈনাক জায়গাটা সত্যিই শান্ত আর সুন্দর" সকালে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে কথাটা বললেন অভিরূপবাবু গতকাল দুপুরের একটু আগে সবাই মিলে আনন্দ নিকেতন রিসর্টে এসেছেন। লাঞ্চের সময় হয়ে যাওয়ায় এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করেই যে যার রুমে একটু ভাতঘুম দিতে চলে গিয়েছিল। অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী একটা রুমে, স্বর্ণেন্দু বাবু এবং সুদেষ্ণা দেবী একটা রুমে এবং মৈনাক আর সুনন্দা একটা রুমে পিউ এর অবশ্য তিনটে রুমেই থাকতে বাঁধা নেই আর আছে টোবো, অভিরূপবাবু মৈনাককে বলে রিসর্টের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে ওকেও নিয়ে এসেছেন রিসর্টে, টোবো অভিরূপবাবুদের রুমেই আছে। গতকাল বিকেলে সবাই মিলে রিসর্টটাই ঘুরে ঘুরে দেখছিল এখানকার বাগান, পুকুর তারপর বাচ্চাদের জন্য একটা ছোট্ট পার্ক‌ও আছে সেখানেই সবার বিকেলটা কেটে গেল, চারিপাশে ভর্তি গাছপালা থাকার জন্যে ট্যুরিস্টদের গরম খুব একটা লাগে না, গাছপালার ছাওয়া তো আছেই তাছাড়া প্রাকৃতিক হাওয়া শরীর ও মনে শান্তির অনুভূতি এনে দেয়। সন্ধ্যায় অনেকক্ষণ সবাই মিলে পুকুরের ধারে বসার জায়গায় বসে খোশগল্প করে তারপর ডিনার করে ঘুমাতে যান, আর আজ সকালে ছি ব্রেকফাস্ট করতে করতে কথা হচ্ছিল কথার মাঝখানে অভিরূপবাবু‌ই বললেন, "তুমি ঠিকই বলেছো মৈনাক জায়গাটা সত্যিই শান্ত আর সুন্দর, আসার সময় চারপাশটা দেখছিলাম একদম গ্ৰাম্য পরিবেশ, এতকাছে যে এরকম একটা জায়গা আছে সেটা জানতামই না" "যা বলেছো জামাইবাবু জায়গাটা খাসা সাথে খাওয়াদাওয়াও চমৎকার, এখানে কিছুদিন থাকলে তুমি একেবারে চাঙ্গা হয়ে উঠবে" স্বর্ণেন্দু বাবু অভিরূপবাবুর কথায় সম্মতি জানালেন। "তুমি ঠিকই বলেছো যিনি রান্না করেন তার রান্নার হাতটি সত্যিই দারুণ, থ্যাংকস মৈনাক সবকিছুই তোমার জন্য" "আমিও জানতাম নাকি আমার ওই বন্ধুটা না বললে তো জানতেই পারতাম না" মৈনাক হাল্কা হেসে জবাব দেয়। "সত্যি বলোতো তোমার বন্ধু এসেছিল না তুমি এসেছিলে?" সুনন্দা স্বামীকে টিজ করে, উত্তরে মৈনাক যেন একটু থতমত খেয়ে যায় কোনোমতে বলে, "আমি? আমি কিভাবে আসবো? না না তবে ভেবেছিলাম এবার শীতকালে তোমাকে আর পিউকে নিয়ে আসবো, শীতকালে নাকি এখানে টাটকা খেজুরের রস পাওয়া যায় সাথে রাত্রে ক্যাম্প ফায়ারিং হয়" "আচ্ছা মৈনাক এখানে রিসর্টের বাইরে সাইট সিইং করার মতো কি আছে?" "অনেস্টলি বলছি পিসেমশাই আমি ঠিক জানি না কারণ আমার যে বন্ধুটি এখানে এসেছিল ও গরমকালে এসেছিল প্রায় সারাক্ষণই এই বাগানে ঘুরে বেড়াতো, নয়তো সুইমিং পুলের জলে নেমে বসে থাকতো, দাঁড়ান ওই তো একজন স্টাফ আসছে ওকেই জিজ্ঞেস করছি" কথা বলতে বলতে একজন অল্পবয়সী স্টাফ এসে দাঁড়ালো অভিরূপবাবুদের সামনে এসে দাঁড়ালো, "আপনাদের আর কিছু লাগবে স্যার?" "না, এগুলো তুলে নিন" "ওকে স্যার" স্টাফটি চলে যাচ্ছিল কিন্তু অভিরূপবাবু ডাকলেন "একটু শুনুন" "হ্যাঁ, স্যার বলুন" "আচ্ছা এখানে কি রিসর্টের বাইরে বেরোনো যায় নাকি রিসর্টের ভিতরেই থাকতে হয়?" "সেরকম কিছু নেই, আপনারা বাইরে ঘুরতে চাইলে ঘুরতে পারেন আবার ভিতরে ঘুরতে চাইলে সেটাও পারেন" "আচ্ছা এখানে দেখার কিছু আছে?" "স্যার এটা একটা গ্ৰাম যাকে বলে অজ পাঁড়াগাঁ এখানে তেমন কিছু নেই তবে ওই গ্ৰামে যা থাকে একটা পুরনো মন্দির আছে, তার পাশে একটা আমবাগান আছে এছাড়া দুটো ভেড়ি আছে যেখানে বোটের ব্যবস্থা আছে, চাইলে চালাতে পারেন, ম্যানেজার বাবুকে বললে উনি‌ই ব্যবস্থা করে দেবেন, এছাড়া এখানের তো জানেন সুইমিং পুল আছে,বাগান আছে ও হ্যাঁ ভেরীতে চাইলে মাছ‌ও ধরতে পারেন" "আরিব্বাস মাছ ধরাও যায় নাকি? কেউ কিছু বলে না?" "না স্যার তবে মাছটা ধরে আবার জ্যান্ত ভেরীতে ছেড়ে দিতে হবে এটা নিয়ম" "কেন এরকম নিয়ম কেন?" স্বর্ণেন্দু বাবু মাঝখানে প্রশ্ন করেন। "স্যার ভেরীতে যে মাছ চাষ হয় সেটা বিক্রি করে এই গ্ৰামের অনেকের সংসার চলে কিন্তু ট্যুরিস্টদের অনেকের‌ই মাছ ধরার ইচ্ছা থাকে বলে মাছ ধরতে দেওয়া হয়, কিন্তু সেই মাছ তারা করবেন কি? নিজেদের সঙ্গে তো নিয়ে যাবেন না আবার রিসর্টেও ওই মাছ রান্না হবে না খামোখা মাছটা মেরে নষ্ট করে লাভ কি? তার থেকে ধরুন ধরে আবার ছেড়ে দিন এতে আপনাদের‌ও মনোরঞ্জন হবে আবার এখানকার কারো কোনো ক্ষতিও হবে না" "আর যদি কেউ মাছটা নিয়ে যেতে চায় তখন?" আবার প্রশ্ন করেন স্বর্ণেন্দু বাবু। "সেক্ষেত্রে আপনাকে মাছটা কিনতে হবে তবে আগে মোড়ল মশাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে তিনি পার্মিশন দিলে তবেই পারবেন" "ওকে ধন্যবাদ" অভিরূপবাবু কথা শেষ হয়েছে বুঝতে পেরে স্টাফটি চলে গেল একটু পরেই আরেকজন এসে খালি কাপ প্লেটগুলো নিয়ে চলে গেল। "কি গ্ৰাম দেখতে বেরোবে? নাকি মাছ ধরতে যাবে?" স্বর্ণেন্দু বাবু অভিরূপবাবুকে প্রশ্ন করেন, কিন্তু অভিরূপবাবু কিছু বলার আগে মৈনাক কথা বলে, "আপনারা মাছ ধরতেও পারেন?" "বলো কি জামাই?" স্বর্ণেন্দু বাবু সোৎসাহে বলতে শুরু করেন "আমাদের দুজনের মধ্যে তো রীতিমতো কম্পিটিশন হতো কে কতো বড়ো আর ভারী ওজনের মাছ ধরতে পারে অবশ্য এসব আজকের কথা নয় এখন আর পুকুর কোথায়? হাতে গোণা কয়েকটা হয়তো আছে তাও মাছ থাকে না থাকলেও ধরা বারণ, মাছ ধরার যে কি আনন্দ সে যে না ধরেছে সে বুঝবে না" "কিন্তু জাল ছাড় ছিপ ফেলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা তাও কোনো শিওরিটি নেই যে মাছ উঠবেই এটা আনন্দের?" "বললাম যে তোমরা আজকালকার ছেলেমেয়েরা এসবের আনন্দ বুঝবে না, কি জামাইবাবু কোনটা করবে?" "আছি তো এখানে কদিন মাছ নাহয় অন্য কোনোদিন ধরা যাবে তাছাড়া ব্যাবস্থাও করতে হবে এখন বরং চলো সবাই মিলে গ্ৰামটা ঘুরে দেখি" "সেই ভালো সেরকম হলে যদি কোনো ভালো জমি পাওয়া যায় তো কেনা যায় কি না দেখবো জায়গাটা পছন্দ হয়েছে শেষবয়সে এখানে একটা ছোট্ট বাড়ি বানিয়ে থাকতে পারলে মন্দ হবে না"। সবাই বেরিয়ে পড়লেন একসাথে গল্প করতে করতে গ্ৰামটা ঘুরে দেখতে থাকেন যদিও সত্যিই তেমন কিছু দেখার নেই তবুও অভিরূপবাবুর চোখে এই গ্ৰামের পথঘাট পরিবেশ অপরূপ লাগছে। পুরনো মন্দিরে গিয়ে সবাই ভক্তিভরে প্রণাম করলো তারপর পাশেই আমবাগান দেখতে গেল, বাগানটা মন্দিরের নামে উৎসর্গিত সেইমতো একটা ফলক বসানো আছে, অভিরূপবাবুরা বাগানটা ঘুরে দেখতে থাকেন, আমগাছের সংখ্যা বেশী থাকার জন্যই বোধহয় আমবাগান নাম নয়তো আম ছাড়াও কাঁঠাল, জাম গাছ‌ও একাধিক রয়েছে এছাড়া বট অশ্বত্থ গাছ‌ও রয়েছে। আমবাগান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতেই একটা মাঠ দেখতে পেলেন অভিরূপবাবুরা এখানে  সকালেও গ্ৰামের কয়েকজন ছেলে ফুটবল খেলছে মাঠের পরে কিছুটা গিয়ে কলেজ, কলেজ ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই রাস্তার একপাশে ছোট্ট বাঁশবন পড়লো, সেটা পার করে পুকুর এবং তার একটু দূরেই ভেরী এখানে অনেকজন মিলে ব্যাস্ততার সঙ্গে কিছু একটা করছে, অভিরূপবাবুরা পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকেন, হটাৎ সুনন্দ আর্তনাদ করে উঠলো, "পিউ কোথায় গেল?" সঙ্গে সঙ্গে সবারই খেয়াল হয় যে তাদের সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটি অনুপস্থিত সবাই চিৎকার করে পিউর নাম ধরে ডাকতে থাকে, চেঁচামেচি শুনে পুকুরে কাছ করা লোকগুলো ছুটে আসে কি হয়েছে জানতে? সব শুনে তাদের একজন বলে, "চিন্তা করবেন না দিদিমণি গ্ৰামের মধ্যেই তো থাকবে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে চলেন খুঁজে দেখি" সবাই যে পথ দিয়ে এসেছিল সেইপথ ধরে পিছিয়ে গিয়ে খুঁজতে থাকে কিন্তু পিউর দেখা পাওয়া যায় না, সুনন্দা এবার কান্নায় ভেঙে পড়ে তার উপরে স্বর্ণেন্দু বাবু তাকে ধমকাচ্ছেন মেয়ের খেয়াল না রাখার জন্য কাঁদতে কাঁদতেই সুনন্দা জানায় "পিউ তার হাত ধরেই ছিল কিন্তু মাঝখানে কখন যে সে হাত ছেড়ে দিয়েছে সেটা সে টের‌ই পায়নি" এতে স্বর্ণেন্দু বাবুর ধমকের মাত্রা বেড়ে যায়। কথায় কথায় লোকগুলো জানতে পারে যে অভিরূপবাবুরা আনন্দ নিকেতনে উঠেছেন, বেশকিছুক্ষণ খোঁজার পরেও যখন পিউর খোঁজ মিললো না তখন অভিরূপবাবু সহ প্রত্যেকেই আতঙ্কিত হয়ে উঠলো, স্বর্ণেন্দু বাবু থানায় যাওয়ার কথা বললে একজন বলেন, "কত্তা আপনারা থানায় যেতে চান যান কিন্তু তার থেকেও ভালো হয় যদি মোড়লমশাইকে বলেন" "মোড়ল কোথায় থাকেন?" মৈনাক জিজ্ঞেস করলো, উত্তরে আরেকজন একটা দিকে দেখিয়ে বললো "ওই তো মোড়লমশাই আসছেন" অভিরূপবাবুরা তাকিয়ে দেখেন কিছুটা দূরে দুজন প্রৌঢ় লোক এদিকেই আসছে, একটু পরেই তারা এলে অভিরূপবাবুদের সঙ্গে থাকা লোকগুলো তাকে সব জানায়, মোড়ল সব শুনে বলেন, "চিন্তা করবেন না আপনাদের মেয়েকে অবশ্যই পাওয়া যাবে আমরা এখনই খুঁজে দেখছি যাবে আর কোথায়? আছে এখানেই আশেপাশে আপনারা আনন্দ নিকেতনে যান আমি নিজে ওখানে গিয়ে খবর দিয়ে আসবো" কিন্তু মোড়লের কথায় অভিরূপবাবুরা কেউই আশ্বস্ত হননা সেটা ওনাদের মুখের ভাব দেখেই বোঝা যায়, মোড়ল‌ও বোধহয় সেটা বুঝতে পারে তাই একটু স্মিত হেসে বলেন, "আমাদের এই গ্ৰামের লোক গরীব হতে পারে, তবে আমরা সৎ আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন, আপনারা থানায় যেতে চান যেতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুন তার দরকার নেই আমরাই খুঁজে দেখছি" মোড়লের স্বরে হয়তো এমন কিছু ছিল যাতে অভিরূপবাবুরা কিছুটা হলেও শান্ত হন কিন্তু ফিরে যেতে অস্বীকার করেন সবাই দৃঢ় কণ্ঠে বলেন যে নিজেদের মেয়েকে না খুঁজে তারা কোথাও যাবেন না, অগত্যা আবার সবাই মিলে খোঁজা শুরু করলেন, মোড়ল নিজে অভিরূপবাবুদের সাথে লোক দিয়ে দিলেন যাতে তাদের রাস্তা চিনতে অসুবিধা না হয় এবং নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে অভিরূপবাবুর টা নিলেন বলে দিলেন যেই আগে খুঁজে পাবে অপরজনকে জানাবে। অভিরূপবাবু শ্রীতমাদেবী একদিকে গেলেন স্বর্ণেন্দু বাবু এবং সুদেষ্ণা দেবী আরেকদিকে এবং মৈনাক ও সুনন্দা আরেকদিকে প্রত্যেকের সাথেই স্থানীয় লোক দিয়েছিলেন মোড়লমশাই এবং অভিরূপবাবু আর শ্রীতমাদেবীর সঙ্গে টোবোও র‌ইলো, রাস্তায় মাঠে কাউকে দেখলেই জিজ্ঞেস করছেন যে কোনো বাচ্চা মেয়েকে দেখেছেন কি না তাতে কেউ বলেন না দেখেননি আবার কেউ বলেন হয়তো দেখছিলেন তবে সে কোনদিকে গেছে বলতে পারবেন না, সুনন্দা একেবারে ভেঙে পড়েছে মৈনাক কোনোমতে তাকে সামলে রেখেছে অপরদিকে বাকিদের মনের অবস্থাও এক‌ই। খুঁজতে খুঁজতে অভিরূপবাবু আর শ্রীতমাদেবী একটু জিরিয়ে নেবার জন্য একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছেন এমন সময় তার ফোন বেজে উঠলো অভিরূপবাবু অবাক হয়ে দেখেন সেটা এসেছে রিসর্ট থেকে তিনি রিসিভ করে কানে দেন ফোনটা, "হ্যালো, মিস্টার ব্যানার্জী?" "বলছি" "আমি আনন্দ নিকেতন রিসর্টের ম্যানেজার বলছি" "হ্যাঁ, বলুন" "আপনাদের সঙ্গে যে বাচ্চা মেয়েটি আছেন তিনি কি.." "আপনি জানেন ও কোথায়? আমরা ওকে খুঁজে পাচ্ছি না ও কি রিসর্টে গেছে?" ম্যানেজারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ব্যাগ্ৰভাবে জিজ্ঞেস করলেন অভিরূপবাবু। "তার মানে ও আপনাদের বলে যায়নি?" "আপনি জানেন ও কোথায়? ও রিসর্টে ফিরে গেছে?" "চিন্তা করবেন না মিস্টার ব্যানার্জী, বাচ্চা মেয়েটি বোধহয় আপনাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল তখন আমাদের একজন পরিচিত তাকে পায়, আমরা আনতে লোক পাঠিয়ে দিয়েছি আপনারা রিসর্টে ফিরে আসুন" "আপনি সত্যি বলছেন?" "একদম সত্যি বলছি আপনারা ফিরে আসুন" "ঠিক আছে আসছি" ফোন রেখে অভিরূপবাবু তৎক্ষণাৎ বাকীদের ফোন করে সবকথা বলে রিসর্টে ফিরতে বলেন এমনকি মোড়লমশাইকেও ফোন করে কথাটা জানান। অভিরূপবাবুরা সবাই রিসর্টে ফিরে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একজন বাইকে করে পিউকে নিয়ে আসে, বাইক থেকে নামা মাত্র সুনন্দা হামলে পড়ে মেয়ের উপরে, কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে কান্না একটু কমলে সুদেষ্ণা দেবী মেয়ের কোল থেকে নাতনীকে নিজের কাছে নিয়ে তিনিও জড়িয়ে ধরেন, তারপর একে একে মৈনাক সহ বাকিরাও মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন সবারই বুকের উপর থেকে যে চিন্তার পাথর নেমে গেছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। যে ছেলেটি পিউকে নিয়ে এলো তাকে অভিরূপবাবু একটা প্রশ্ন করেন, "ভাই ও কার কাছে ছিল, তার সাথে একবার দেখা করিয়ে দেবে? ধন্যবাদ জানাতাম" ছেলেটি কিছু বলার আগেই পিউ অভিরূপবাবুর কথার উত্তর দিল, "আমি সুপারম্যান আঙ্কেলের কাছে ছিলাম, পিসুদাদু"। এমনিতে আদিত্যর ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই সে ওঠেও না তার জীবনের সবথেকে বড়ো দুর্ঘটনা যেটায় সে প্রায় মৃত্যুমুখে চলে গিয়েছিল সেটার পরে অর্থাৎ সেই ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরার পরে তার চোখে ঘুম ছিল না, দিনে তো বটেই এমনকি বেশীরভাগ রাতেও সে বিনিদ্র রজনী কাটাতো কিন্তু পিয়ালীর সাথে বিয়ের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায় আবার তার জীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করে বলা ভালো একটা নতুন জীবন সে শুরু করে এবং সেই সঙ্গে বিনিদ্র রজনী কাটানোর ইতি হয়। আজ একটু আগেই ঘুম ভাঙে আদিত্যর আসলে মোড়লমশাই একটু দেখা করতে বলেছেন সকালে ছাড়া ওনার সময় হচ্ছে না, আসল ব্যাপারটা হচ্ছে গ্ৰামের কিছু ব্যাপারে তিনি আদিত্যর সাথে পরামর্শ করতে চান, এমনিতে আদিত্য গ্ৰামের মাতব্বর বলতে যা বোঝায় তা নয় তবে গ্ৰামের সকলের প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় শৈলেশবাবুর বা গ্ৰামবাসীদের ডাক্তার বাবুর আস্থাভাজন হ‌ওয়ায় গ্ৰামের সকলেই আদিত্যকে ভরসা করে আর ওর কয়েকটা পরামর্শে গ্ৰামের মোড়লের উপকার হ‌ওয়ায় মোড়ল‌ও ওকে পছন্দ এবং স্নেহ করেন তাই গ্ৰামের ছোটো থেকে বড়ো প্রায় সব বিষয়েই তিনি আদিত্যর সঙ্গে একবার আলোচনা করে নেন, আজ‌ও তাই তবে দিনের বেলা তিনি নিজের মাছের ব্যাবসায় ব্যাস্ত থাকেন আর সন্ধ্যা থেকে তার বাড়িতে আড্ডার আসর বসে তাই আদিত্যর সাথে কথা বলতে হলে তিনি সকালেই ওকে ডেকে নেন আজ‌ও সেরকম ডেকেছিলেন। ঘুম ভেঙে আদিত্য বিছানায় উঠে বসে পাশে তাকিয়ে দেখে পিয়ালী তখনও ঘুমাচ্ছে কয়েকটা চুলের গোছা ওর মুখের উপর এসে পড়েছে আদিত্য কনুইয়ের উপরে ভর দিয়ে পিয়ালীর মুখের কাছে গিয়ে খুবই আলতোভাবে যাতে ওর ঘুম না ভেঙে যায় এমনভাবে চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে পিয়ালীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আদিত্য এক আশ্চর্য স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ওর মুখ জুড়ে বিরাজ করছে, সিঁথিতে সিঁদুর কপালে ছোট্ট একটা টিপ তখনও স্বস্থানে অবস্থান করছে যাতে তার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, আদিত্যর মনে পড়ে পিয়ালীকে প্রথমবার দেখার দিনটার কথা তখন মুখে স্নিগ্ধতার বদলে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি ছিল যেটা পারলে আদিত্যকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়, আদিত্যর মনে তখন কোনো ভাব পরিবর্তন না হলেও পিয়ালীর হয়েছিল, পরে পিয়ালী বলেছিল তাকে যে সেদিনেই আদিত্য ওর মনে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেয়। তারপর অবশ্য আদিত্যর অগোচরেই তার মনেও পিয়ালীর জায়গা হয় আর সেটা সে বুঝতে পারে সেদিন যেদিন শুনেছিল অ্যাক্সিডেন্টে পিয়ালী আর নেই, কি এক অব্যাক্ত ব্যাথা তার পুরো দেহ মনে অনুভব করছিল আর তারপর এই রিসর্টে আবার ওকে দেখা। ভাবতে ভাবতে আদিত্যর চোখ পরলো পিয়ালীর উন্মুক্ত নাভির উপরে, ঘরে শাড়ী পরেই থাকে সে রাতেও শাড়ী পরেই শুয়েছিল এমনিতে এখন নাভির নীচে শাড়ি পরে, তার উপরে পাখার হাওয়ায় আঁচলটা সরে গিয়ে নাভিটা দৃশ্যমান হয়েছে আদিত্য আলতোভাবে পিয়ালীর নাভিতে একটা হাত রাখে। "বাবা ঘুম থেকে উঠে পরলেও বাবার বেবি এখন‌ও ঘুমাচ্ছে" পিয়ালীর আওয়াজ পেয়ে আদিত্য পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে দেখে তার ঠোঁটের কোণে হাসি যদিও তার চোখ বন্ধ, আদিত্য একটু হেসে জবাব দেয়, "কিন্তু বেবির মা তো দেখছি জেগে থেকেও ঘুমানোর ভান করছে" পিয়ালী এবার চোখ খোলে ওর ঠোঁটে তখনও হাসি আদিত্য এবার পিয়ালীর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে, "সরি তোমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম" "সেরকম কিছু না কিন্তু তুমি উঠে পরলে?" "বললাম না মোড়লমশাই ডেকেছেন" "কিন্তু আজ তো.." পিয়ালী কিছু বলতে গিয়ে শেষ করতে পারে না আদিত্য তার আগেই বলে ওঠে, "আমার মনে আছে চিন্তা কোরো না আমি চলে আসবো" আদিত্য বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে সেই দেখে পিয়ালীও উঠতে যায় কিন্তু আদিত্য বাধা দেয়, "এতো তাড়াতাড়ি উঠে কাজ নেই শুয়ে থাকো পরে উঠবে" আদিত্যর কথা শুনে পিয়ালী আবার শুয়ে পরে কারণ সে জানে এখন আদিত্যর কথা না শুনলে ধমক খেতে হবে, আদিত্য ফ্রেশ হয়ে নেয় বাদশাও যাবে বলে উঠে এসেছিল কিন্তু আদিত্য ওকে ঘরে থাকতে বলে বেরিয়ে যায়। গ্ৰামের প্রায় সববিষয়েই মোড়লমশাই আদিত্যর সাথে আলোচনা করেন আজ‌ও হাঁটতে হাঁটতে আলোচনা করছেন দুজনের সঙ্গে গ্ৰামের‌ই এক মাতব্বর গোছের প্রৌঢ়। অনেকক্ষণ কেটে গেলেও মোড়লের কথা শেষ হয় না এপথ সেপথ হাঁটতে হাঁটতে কথা চলতেই থাকে ইতিমধ্যে যে একটি বাচ্চা মেয়ে তাদের পিছু নিয়েছে সেটা তিনজনের কেউই খেয়াল করেনি, অনেকক্ষণ কথা হবার পরেও যখন মোড়ল থামে না তখন বাধ্য হয়েই আদিত্যকে তাকে থামাতে হয়, "মোড়লমশাই আজ আমাকে একটু যেতে হবে আসলে পিয়ালীকে নিয়ে একটু চেক‌আপে যাব টাউনের দিকে, একটু তাড়াতাড়ি গেলে সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে পারবো"। "ওই দেখেছো কথায় কথায় খেয়ালই নেই" মোড়ল ব্যাস্ত হয়ে ওঠেন, "আগে বলবে তো আমিও আটকে রেখেছি, ঠিক আছে যাও বাকী কথা পরে হবেখন" "ধন্যবাদ" মোড়লমশাই এর থেকে বিদায় নিয়ে আদিত্য নিজের বাড়ির পথ ধরলো মোড়লমশাইও অন্য পথে এগিয়ে গেলেন, আদিত্য নিজের মনেই মোবাইল চেক করতে করতে হেঁটে ফিরছে একটি বাচ্চা মেয়ে যে অনেকক্ষণ থেকে চুপি চুপি তার পিছু নিয়েছে এটা সে খেয়াল‌ই করেনি খেয়াল করার কথাও নয় এই গ্ৰামে সবাই তার অতিপরিচিত প্রত্যেকেই প্রায় আপন জন তাদের মধ্যে কেউ যে তার পিছু নিতে পারে এটা সে খেয়াল করবে কিভাবে? তাই একটা বাচ্চা মেয়ে যে তার পিছনে পিছনে হেঁটে আসছে এটা সে খেয়াল করেনিখেয়াল করলো নিজের বাড়িতে এসে। বাড়িতে ঢুকতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে পরিচিত কণ্ঠে একটা ডাক শুনতে পায় আদিত্য "সুপারম্যান আঙ্কেল"। ডাকটা পরিচিত হলেও বর্তমানে স্থান এবং সময়ে এতটাই অপ্রত্যাশিত যে ডাকটা শুনে চমকে পিছনে তাকালো আদিত্য, দেখে তার অতি পরিচিত বাচ্চা মেয়েটি ভয়ার্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে তবে তার দৃষ্টি মাঝে মাঝে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ানো কালো সারমেয়টির দিকে যাচ্ছে, বোধহয় তাকে দেখেই ভয়ে মেয়েটি তার 'সুপারম্যান আঙ্কেল'কে ডেকে ওঠে। "তুমি এখানে কিভাবে?" পিছনে ফিরে অবাকভাবে জিজ্ঞেস করে আদিত্য কিন্তু মেয়েটি উত্তর দেবার আগে দ্রুত পায়ে আদিত্যর কাছে এসে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যেন সে জানে যে তার সুপারম্যান আঙ্কেল তাকে কোলে তুলে নেবে। আদিত্য‌রও বাচ্চা মেয়েটির এই মনের ভাবটা বুঝতে বাকি থাকে না সেও তাক দুহাতে ধরে কোলে তুলে প্রথমে দুগালে দুটো স্নেহচুম্বন দেয় তারপর  বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। "তুমি এখানে কিভাবে? আর একা কেন?" বাড়ির ভিতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় বসে জিজ্ঞেস করে আদিত্য। "আমি তো কখন থেকে তোমার পিছনে হাঁটছি তুমি পিছনে তাকালেই না" "তুমি একবার ডাকতে তো পারতে?" "আমি ডাকবো না, আমি রেগে গেছি" "এই রে আবার রেগে গেছো? এবার আমি কি করলাম?" "কে এসেছে?" এইসময় পিয়ালী ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে এবং সেও মেয়েটিকে দেখে অবাক হয় পিয়ালী মেয়েটিকে চিনতে পারে ফলে তার‌ও এক‌ই প্রশ্ন "তুমি এখানে, কিভাবে?" "আমি তোমাদের সাথে কথা বলবো না আমি রেগে আছি" "কেন আমরা কি করেছি?" আদিত্য সহাস্যে জিজ্ঞেস করে। "তোমরা বলেছিলে আমার সাথে দেখা করতে যাবে যাওনি কেন?" "তাইতো খুব ভুল হয়ে গেছে কিন্তু কি বলোতো তোমার পিয়ালী আন্টিকে নিয়ে মাঝেমাঝেই ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে তাই সময় হচ্ছে না" "কেন আন্টির শরীর খারাপ?" "আন্টির শরীর খারাপ না তবে আর কিছুদিন পরে তোমার একটা ভাই বা বোন আসবে তো তাই আন্টিকে নিয়ে বেশি কোথাও যাতায়াত করা ডাক্তারের বারণ আছে" "সত্যি আমার ভাই আর বোন আসবে?" "একদম সত্যি, এবার বলোতো তুমি এখানে কেন? আর কার সাথে এসেছো?" "আমি, মাম্মি, ড্যাডি, দাদুন, দিদান পিসুদাদু, পিসিদিদা এসেছি" "কোথায়? কারো বাড়িতে?" "আনন্দে এসেছি, কালকে" "আনন্দে?" "ও বোধহয় আনন্দ নিকেতনের কথা বলছে" পিয়ালী মাঝখানে বলে, আদিত্যর মুখটা ক্ষণিকের জন্য গম্ভীর হয়ে যায় যদিও সেটা পিয়ালীর দৃষ্টি এড়ায় না, আদিত্য আবার মুখে হাসি এনে জিজ্ঞেস করে "কিন্তু তুমি আমাকে দেখলে কোথায়? আমি তো আজ ওখানে যাইনি" "আমরা সবাই ঘুরতে বেরিয়েছিলাম তখন‌ই তোমাকে দেখতে পাই" "আর অমনি তুমি আমার পিছু নিলে তাইতো?" আদিত্যর কথায় ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায় মেয়েটি আদিত্য‌ আবার জিজ্ঞেস করে, "কাউকে বলে এসেছো?" "না" "এটা কিন্তু খুব অন্যায় করেছো তুমি, সবাই চিন্তা করবে না?" "আমি তোমাকে দেখতে পেয়ে চলে এসেছি" সহজ সরল স্বীকারোক্তি বাচ্চা মেয়েটির আদিত্য আবার হেসে ওঠে বলে "আচ্ছা আমি জানিয়ে দিচ্ছি, পিয়ালী ওকে কিছু খেতে দাও" আদিত্যর কথা শেষ হ‌ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিয়ালী প্লেটে কিছু মিস্টি আর ফল কেটে নিয়ে এল বলে "তুমি বলবে তারপর আমি দেবো?" তারপর মেয়েটিকে বলে, "এই নাও এগুলো খেয়ে নাও" "আমি সকালে খেয়েছি এখন খাবো না" "খেয়ে নাও নাহলে কিন্তু আন্টি দুঃখ পাবে?" এরপর মেয়েটি আর কোনো কথা না বলে একটা মিস্টি তুলে খেতে লাগলো আদিত্য রিসর্টের ম্যানেজারকে ফোন করে "হ্যালো আমি বলছি আদিত্য" "বলো দাদা" "কাল রিসর্টে কোনো গেস্ট এসেছিল যাদের সঙ্গে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে?" "হ্যাঁ, কিন্তু তারা এখন রিসর্টে নেই একটু বেরিয়েছে" "তুমি ইমিডিয়েটলি তাদের কাউকে ফোন করো, তাদের বাচ্চাটি আমার পরিচিত তাই সে আমার পিছনে পিছনে আমার বাড়িতে চলে এসেছে কাউকে না বলে তারা হয়তো বাচ্চাটিকে খুঁজছে তুমি তাদের বলো গ্ৰামের একজনের কাছে বাচ্চাটি আছে তাই চিন্তা না করতে ওদের রিসর্টে ডেকে নাও আর রিসর্ট থেকে কাউকে বাইক নিয়ে আসতে বলো ওকে নিয়ে যাবে" "ঠিক আছে দাদা"। একটু পরেই একজন ছেলে বাইক নিয়ে চলে এলো আদিত্য মেয়েটিকে বাইকে সামনে বসিয়ে ছেলেটিকে বললো "সাবধানে নিয়ে যাবে" এইসময় পিয়ালী একটা ক্যাডবেরী এনে মেয়েটির হাতে দিল। "বাই আঙ্কেল, বাই আন্টি" "বাই"। "আমি সুপারম্যান আঙ্কেলের কাছে ছিলাম, পিসুদাদু" পিউর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। "কার কাছে?" সুনন্দা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তবে এবার কিছুটা রাগ‌ও মিশে আছে তার স্বরে, শুধু সুনন্দা নয় সবাই অবাক হয় পিউর কথা শুনে। "পিউ তোমাকে ক্যাডবেরী কে দিল?" মৈনাকের এইপ্রশ্নে সবাই লক্ষ্য করে পিউর হাতে একটা ক্যাডবেরী আছে, সেটা দেখিয়েই মৈনাক মেয়েকে প্রশ্নটা করেছে এবারেও পিউর এক‌ই উত্তর "এটা সুপারম্যান আঙ্কেল আর আন্টি দিয়েছে" "কোন সুপারম্যান আঙ্কেল? কার কাছে গিয়েছিলে তুমি?" এবার ধমকের সঙ্গে সুনন্দা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, তাতে মেয়েটা ভয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলে, "আমি সত্যি বলছি সুপারম্যান আঙ্কেলের বাড়িতে গিয়েছিলাম, আমি তখন দেখলাম সুপারম্যান আঙ্কেল ওই দাদুদের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন আমিও পিছনে গেলাম" শেষের কথাটা পিউ মোড়লমশাইকে দেখিয়ে বলে, ফলে এবার সবার দৃষ্টি মোড়লমশাই এবং তার সঙ্গের প্রৌঢ় লোকের উপরে পড়ে, ইতিমধ্যে রিসর্টের অখিলবাবুও এখানে চলে এসেছেন তিনি মোড়লকে জিজ্ঞেস করলেন, "মোড়লমশাই কে ছিল আপনাদের সঙ্গে?" "মোড়লমশাই মেয়েটি বোধহয় আদিত্যর কথা বলছে, আমাদের সঙ্গে তো আদিত্য‌ই ছিল" আদিত্য নামটা শুনে অভিরূপবাবু চমকে উঠলেন কিন্তু বাকিদের কোনো হেলদোল নেই অখিলবাবু মোড়লের সঙ্গের লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন "কিন্তু এই বাচ্চাটি আদিত্যকে চিনবে কিভাবে?" "একমিনিট একমিনিট" অভিরূপবাবু সবাইকে থামিয়ে পিউর কাছে যান তারপর খুব মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করেন "দিদিভাই এই সুপারম্যান আঙ্কেলকে তুমি চেনো? আগে কোথাও দেখেছো?" "হ্যাঁ দাদু দেখেছি" "কোথায়?" অভিরূপবাবুর বুকের ভিতরে কেউ যেন দামামা বাজাতে শুরু করেছে, পিউ তেমনি শান্তস্বরে জবাব দেয় "আঙ্কেল‌ই তো আমাকে গাড়িতে ধাক্কা থেকে বাঁচিয়েছিল তারপর তোমাদের বাড়িতেও তো দেখা হলো ভুলে গেলে?" এতক্ষণে মৈনাকের‌ও বোধহয় ঘটনাদুটো মনে পড়লো সে বলে উঠলো "আরে তাই তো পিউর সুপারম্যান আঙ্কেল তো একজন‌ই, কিরকম বারবার ভুলে যাই আমরা, কিন্তু উনি এখানে থাকেন?" "আপনারা আদিত্যকে চেনেন?" অখিলবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, উত্তরে অভিরূপবাবু তাড়াতাড়ি মোবাইলে থাকা আদিত্যর ফুটেজটা তাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন "দেখুন তো এই সেই আদিত্য নাকি?" "আরে হ্যাঁ, এই তো আদিত্য কিন্তু আপনারা চিনলেন কিভাবে?" "ও কোথায় থাকে?" "থাকে পাশেই কিন্তু আজ আমি ওকে ডেকেছিলাম একটু কথা ছিল তাই অন্যদিকে গিয়েছিল" মোড়লমশাই জবাব দেন।
Parent