"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৩৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5309823.html#pid5309823

🕰️ Posted on July 30, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3857 words / 18 min read

Parent
                দ্বিতীয় খণ্ড                 ২৭তম পর্ব দেখতে দেখতে অভিরূপবাবুদের নতুন বাড়ি তৈরী হয়ে গেল খুব বড়ো করেননি একতলাই বাড়িটা গ্ৰামের আর পাঁচটা সাধারণ বাড়ির মতোন‌ই তবে চারপাশে কিছুটা ফাঁকা জমি রেখেছেন বাগান করার জন্য। বাড়ি তৈরী হলে আবার একটা ভালো দিন দেখে গৃহপ্রবেশের পূজোর ব্যবস্থা করেন অভিরূপবাবু। ফলত পূজোর দিন আবার ওনার বাড়িতে একটা উৎসবের আমেজ তৈরী হয় যথারীতি পুরো গ্ৰামের সবার নিমন্ত্রণ থাকে এবং তারা সবাই এসে পূজোর কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে তবে এবার না চাইতেও বাধ্য হয়েই আদিত্য এবং পিয়ালীকে আসতে হয়।  অভিরূপবাবু এতদিনে ভালো ভাবেই বুঝে গেছেন এখানে যারা আদিত্যর থেকে বয়সে বড়ো যেমন অখিল বাবু বা মোড়লমশাই এদের কথা আদিত্য মেনে চলে তাই এবার ওনাদের নিয়েই গেছেন ওকে রাজী করাতে এবং যথারীতি আদিত্য তাদের কথা ফেলতে পারেনি তাই আসতে হয় তাকে যদিও সে নিজের স্ত্রী এবং বাদশাকে নিয়ে একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। চুপ করে আছে বলাটা একটু ভুল হবে নিজের স্ত্রীর সাথে গল্প করছে আর মাঝে মাঝে পূজোর আয়োজন লক্ষ্য করছে, বলাইবাহুল্য তার এখানে আসা ইস্তক পিউ এবং টোবো তাদের কাছে চলে এসেছে, পিউর আদিত্যর কাছে আসা নিয়ে সুনন্দা এখন আর আপত্তি করে না যেন সে বুঝতে পেরেছে মামা-ভাগ্নির এই আন্তরিক স্নেহের অদৃশ্য বন্ধনটা, যেন সে জানে তার মেয়ে সুপারম্যান আঙ্কেলের কাছে পুরোপুরি নিরাপদ। আদিত্য আর পিয়ালী এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে তবে এখন আর একা নয় গ্ৰামের কয়েকটা ছেলে বুড়ো এসেছে তাদের সঙ্গে গল্প করছে গ্ৰামের সবাই এই দুজন স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসে আদিত্য আর পিয়ালীও সবার সাথে আপন জনের মতোই মিশে গেছে সবার সুখদুঃখের কথা পরস্পরের সাথে শেয়ার করে এখনও তাই করছে হটাৎ মেয়েলি কণ্ঠে "এক্সকিউজ মি" শুনে আদিত্য ফিরে তাকায় দেখে এক যুবক এবং যুবতী দাঁড়িয়ে আছে যুবতীটাই আওয়াজ দিয়েছে, এনারা অভিরূপ বাবুর বাড়ির গৃহপ্রবেশের পূজো উপলক্ষ্যে কলকাতা থেকে এসেছেন এবং এনারা হলেন অভিরূপ বাবুর ছেলে মিস্টার অরুণাভ ব্যানার্জী এবং তার স্ত্রী মিসেস মৌমিতা ব্যানার্জী। অ্যাক্সিডেন্টের পরে বেশ কিছুদিন হাঁটাচলা করতে অসুবিধা হলেও ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য ইদানিং ধীরে ধীরে হাঁটতে পারছে অরুণাভ অফিসের কাজ এখন একাই সামলাচ্ছে, ধীরে ধীরে আবার পুরনো অরুণাভ ফিরতে শুরু করেছে। তার বাবা যে নতুন জমি কিনেছে এই খবরটা তার কাছে বেশীদিন গোপন থাকেনি অবশ্য অভিরূপবাবু গোপন করেন‌ওনি তিনি সত্যিটাই জানিয়েছেন যে জমি তিনি কিনেছে এবং সেখানে বাড়ি বানিয়ে থাকার প্ল্যান করছেন, অরুণাভ ভালো করেই জানে যে তার বাবা কিছু ঠিক করলে তাকে আটকানো কঠিন তাই সে বাধা দেয়নি হয়তো দিত কিন্তু মৌমিতার ইনফ্লুয়েন্সে সেটা হয়নি। প্রথমে অ্যাক্সিডেন্ট আর তারপর বাবার উপরে অ্যাটাক এই দুইয়ের জন্য কিছুদিন মৌমিতার সঙ্গে তার একটা মনোমালিন্য চললেও ধীরে ধীরে সেটা মিটে যায় তার বাবার বাড়ি বানিয়ে চলে যাওয়ার খবর শুনে যখন সে ঠিক করলো বাবার সাথে কথা বলবে তখন মৌমিতাই তাকে বোঝায় "বাবা মা যদি এখন এই বয়সে একান্তে থাকতে চান তাহলে তোমার বাধা দেওয়া উচিত নয় বরং ওনাদের সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে" তবুও অরুণাভ একটু গাঁইগুঁই করছিল তখন মোমিতা তাকে আরও বোঝায় "ভেবে দেখো যতদিন উনি এখানে থাকবেন তোমার উপর আমাদের উপরে ছড়ি ঘোরাতে থাকবেন, ওনারা চলে গেলেই পুরো বিজনেস তোমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আর ওনার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হবে না" এরপর আর অরুণাভ মৌমিতাকে মানা করতে পারেনি একপ্রকার তার কথা মেনে নিয়েই আর বাধা দেয়নি। কিন্তু বাবার কথায় প্রথমে ভিতপূজোর দিন আর তারপর আজ গৃহপ্রবেশের পূজোর দিনে বৌ ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছে এখানে। কথায় বলে 'কখনো অহংকার করতে নেই কারণ অহংকার পতনের কারণ' কথাটা শতকরা ২০০ ভাগ খাঁটি আর টাকার অহংকার তো একদমই করতে নেই তবুও কিছু মানুষ প্রতিযুগে প্রতি দেশে প্রতি শহরেই থাকে যারা এই নীতিবাক্যটাকে ভুলে গিয়ে অহংকারে ডুবে যায় তারা তখন তারা নীতি আদর্শ মনুষ্যত্ব সব ভুলে যায় বিবেক কালিমালিপ্ত হয়ে যায়। ঠিক এই অবস্থাই হয়েছে অরুণাভ মৌমিতা প্রীতমবাবুদের, নারায়ণতলা গ্ৰামে আসা ইস্তক তারা নিজেদের এই মিথ্যা অর্থের স্ট্যাটাস দেখিয়ে চলেছে হাবেভাবে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছে যে তারা এখানকার লোকেদের থেকে আলাদা এবং উঁচু স্তরের বাসিন্দা। গ্ৰামবাসীরা সবাই যেখানে মিলেমিশে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে সেখানে এরা এদের থেকে তফাতে তফাতে থাকছে যেন সরল গ্ৰামবাসীরা অস্পৃশ্য। স্বভাবতই গ্ৰামবাসীদের এই ব্যাপারটা নজর এড়ায়নি এবং তারা যে এটা ভালোভাবে নেবে না এতে আর আশ্চর্য কি তবুও অভিরূপবাবু কে সম্মান দিয়েই তারা এখনো কোনো বিঘ্ন ঘটায়নি আর করেনি তাদের আদরের আদিত্যর কথা শুনে, জিনিসটা তার‌ও নজরে পরেছে তবুও সেই কয়েকজনকে বলে সবাইকে শান্ত করে রেখেছে কিন্তু কতক্ষণ পারবে সেটা বোধহয় সে নিজেও জানে না। অপরদিকে অরুণাভ মৌমিতাও আলাদা দাঁড়িয়ে আছে তাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মতোই হয়েছে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই তবে তারা ঠাকুমার কাছে বসে পূজা দেখছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল মৌমিতা আর অরুণাভ, "তোমার বাবা দেখছি এই ভিখিরীদের সাথে একটু বেশীই মেলামেশা করছেন" ব্যাঙ্গের সুরে কথাটা বললো মৌমিতা। "বাবা ওরকম‌ই সবার সাথে সমানভাবে মেশেন নিজের স্ট্যাটাস ভুলে যান" "তোমার গিয়ে কথা বলা উচিত" "পাগল নাকি? এখনই আমাকে কথা শুনিয়ে দেবেন তাল থেকে ছাড়ো না আর তো কিছুক্ষণ তারপরেই তো এখান থেকে চলে যাবো আমরা" "তা ঠিক তবে.." কথা বলতে বলতে হঠাৎ মৌমিতার কথা বন্ধ হয়ে যায় অরুণাভ তাকিয়ে দেখে সে একদিকে দেখছে মৌমিতার দৃষ্টি অনুসরণ করে চোখ ঘোরাতেই তার দৃষ্টি যায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক এবং তার পাশে চেয়ারে বসে থাকা যুবতীর দিকে, "কি দেখছো বলোতো?" অরুণাভ জিজ্ঞেস করে তবে মৌমিতা কোনো উত্তর দেয় না সে একদৃষ্টিতে যুবকটির দিকে তাকিয়ে আছে। যুবকটিকে এর আগে ভিতপূজোর দিন‌ও দেখেছে মোমিতা, সেদিন এসে একটু গ্ৰামের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিল তখনই রাস্তায় দেখেছিল শুধু দেখেছিল তাই নয় দুজনের মধ্যে কয়েক মুহুর্তের জন্য দৃষ্টি বিনিময়‌ও হয়েছিল আর তাতেই মৌমিতার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল এক অজানা ভয়ে। ছেলেটার চোখদুটো তার ভীষণ চেনা লেগেছে কিন্তু কোথায় কার চোখ সেটা কিছুতেই মনে পরেনি সেদিন ছেলেটার চোখে সেদিন নিদারুণ জিঘাংসার স্পষ্ট ছাপ দেখেছিল যেন আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছিল তার সেই চোখ দুটো থেকে যে আগুন পারলে মৌমিতাকে তখনই পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। কোনো কথা হয়নি শুধু কয়েক মুহুর্তের দৃষ্টি বিনিময় তারপর ছেলেটা আশ্চর্যভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, কিন্তু সে চলে যাবার বেশকিছুক্ষণ পর্যন্ত ভয়ে একজায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ফিরে আসে যদিও এই ঘটনার কথা সে কাউকে জানায়নি এমনকি অরুণাভকেও না। "কি হলো কি দেখছো?" আবার জিজ্ঞেস করে অরুণাভর আর এতেই চমক ভেঙে জেগে ওঠে মৌমিতা, সে আমতা আমতা করে বলে, "ওই ছেলেটা ওকে কোথায় যেন দেখেছি,ভীষণ চেনা চেনা লাগছে" "কে? ওই যে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে?"অরুণাভ আঙুল দেখিয়ে ইশারা করে। "হ্যাঁ, চলো তো একটু দেখি" বলে মোমিতা এগিয়ে যায় বাধ্য হয়েই অরুণাভ তার পিছু নেয়। "এক্সকিউজ মি" যুবক এবং যুবতীর কাছে গিয়ে ডাক দেয় মৌমিতা স্বর শুনে যুবকটি ফিরে তাকায় আর পরক্ষণেই তার চোখের দৃষ্টি দেখে আবার মৌমিতার বুক কেঁপে ওঠে সেই এক‌ই দৃষ্টি সেদিনের মতো জিঘাংসায় পরিপূর্ণ আগুন ঠিকরে বেরোনো দৃষ্টি তবে সেটা ক্ষণিকের জন্যই মুহূর্ত পরেই ছেলেটি নিজেকে সামলে নেয় আবার স্বাভাবিক দৃষ্টি তার। "ইয়েস?" "আপনাকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কোথায় যেন দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না" "আপনাদের বাড়িতে গিয়ে আপনার ভাইকে এবং আপনার হাজবেন্ডের কাজিনকে ঠেঙিয়ে এসেছিলাম" কথাটা শুনেই অরুণাভ এবং মৌমিতা দুজনেরই সেদিনের ঘটনা মনে পরে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুখ রাগে লাল হয়ে ওঠে ছেলেটা যেন সেটা বোঝে আর বুঝেই তার ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে তাতে দুজনের রাগ আরো বেড়ে যায়। "মনে পরেছে" রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলে অরুণাভ "তা আপনি এখানে?" "এখানে বলতে কি এই আপনাদের পূজোর জায়গায় বলছেন? তাহলে বলি আপনার বাবা আমাকে ডেকে এনেছেন?" "আপনি এখানে থাকেন?" "হ্যাঁ" "আমার ভাইয়ের গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয় কিভাবে আপনার? সেদিন আপনাকে কিছু বলতে পারিনি" মৌমিতা রাগে কথাগুলো বলে। "আজ‌ও পারবেন না, কিন্তু আপনাদের ভাগ্য ভালো ওদের শুধু দু এক ঘা মেরে ছেড়ে দিয়েছিলাম নাহলে ওরা যা করেছিল তাতে ওদের মেরে ফেললে ঠিক হতো" "আপনি জানেন না আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন?" "খুব ভালো করে জানি, আপনার এই সুন্দর মুখোশের আড়ালে যে কত কুৎসিত চেহারা লুকিয়ে আছে সেটা খুব ভালো করেই জানি" "আপনি কিন্তু আমার স্ত্রীকে ইনসাল্ট করছেন, আপনার ধারনাও নেই এর জন্য আপনার কি অবস্থা আমি করতে পারি?" "খুব ভালো করেই জানি কিচ্ছু করতে পারবেন না তবে আমি আমার কথা কারেকশন করছি আপনাদের দুজনেরই সুন্দর মুখোশের আড়ালে কুৎসিততম চেহারা লুকিয়ে আছে আর সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি, উঁচু জায়গায় বাস করা একদম নোংরা জগতের বাসিন্দা আপনারা দুইজন" "গেট আউট" রাগে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বললো অরুণাভ "আমাদের জমিতে দাঁড়িয়ে আমাকেই ইনসাল্ট করছেন বেরিয়ে যান এখান থেকে নাহলে ধাক্কা মেরে বের করে দেবো আপনাদের ঔকাত নেই আমাদের সামনে দাঁড়ানোর" "আপনার বাবাই আমাদের এখানে ইনভাইট করে ডেকে এনেছেন আমরা নিজে থেকে আসিনি" স্বামীর অপমান দেখে আর থাকতে পারলো না যুবতী সে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল। "সেটাই তো প্রবলেম, বাবাকে ভালো মানুষ পেয়ে নিজেদের আখের গোছানোর ধান্দায় আছেন। এই গণ্ডগ্ৰামে বাবা কেন জমি কিনে বাড়ি বানাচ্ছেন সেটা এখন বুঝতে পারছি" "কেন?" ছোট্ট জিজ্ঞাসা যুবকের। "আবার কি আপনারা ব্রেণ ওয়াশ করেছেন যত্তোসব ভিখিরির দল জুটেছে এখানে। বাবা ডাকলো আর অমনি সুড়সুড় করে চলে এলেন তাই না?" যুবক কোনো কথা বললো না কিন্তু অপমানে আবার যুবকের চোখ দুটো জ্বলে উঠলো আর সেটা দেখেই মৌমিতার মধ্যে রাগ উবে গিয়ে ভয় বাসা বাঁধলো সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে যুবককে দেখতে থাকে। অরুণাভ বলতে থাকে "একটা কথা ঠিকই বললেন আমরা আপনাদের থেকে অনেক উঁচু লেভেলের বাসিন্দা আমাদের ব্যানার্জীদের সামনে ভিখিরির দশা আপনাদের আর ভিখিরীদের মতোন‌ই এখানে চলে এসেছেন"। যুবকটি এখনো চুপ করে শুনে যাচ্ছে কিন্তু তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কালো সারমেয়টি গরগরানি শুরু করেছে বোধহয় সে বুঝতে পারছে যে সামনের লোকটি তার মনিবকে অপমান করছে সে তো এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পরে তার মনিবের অপমানকারীর উপরে কিন্তু যুবকটি হাতের ইশারায় তাকে নিরস্ত করে রেখেছে, যুবতীটি কিন্তু শান্ত হবার নয় সেও সমান তেজে জবাব দেয়, "আপনি কিন্তু এবার লিমিট ক্রস করছেন" "বেশ করেছি কি করবেন? আপনার কোনো ধারণা নেই আমি কি করতে পারি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যান নাহলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো" উত্তরে যুবতী কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আরেকজনের হুংকার শোনা যায় "আদিত্য দাদাকে আর একটা বাজে কথা বললে এখানেই কেটে ফেলে দেব" চমকে উঠে আদিত্য, পিয়ালী, অরুণাভ, মৌমিতা তাকিয়ে দেখে একজন যুবক গ্ৰামবাসী দাঁড়িয়ে আছে, রাগে ঠকঠক করে কাঁপছে সে তার অগ্নিদৃষ্টি সোজা অরুণাভর দিকে, যুবকটি বলতে থাকে "অনেকক্ষণ থেকে আপনার কথা শুনছি সমানে আদিত্য দাদাকে অপমান করে যাচ্ছেন আর নয়" "কি করবে?" অরুণাভ ও ছেলেটির দিকে ফিরে জবাব দেয় ছেলেটিও সমান তেজের সঙ্গে উত্তর দেয়, "মাথা কেটে ফেলে দেবো" অরুণাভ আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু কয়েকজনের গলা ভেসে আসে "কি হয়েছে রে?" সবাই তাকিয়ে দেখে মোড়লমশাই সাথে কয়েকজন লোক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বলাইবাহুল্য তাকে দেখে ছেলেটা আদিত্যকে অপমান করা এবং ভিখিরী বলার কথাটা সব তাকে জানায় এবং দেখতে দেখতে উপস্থিত সবাই সেকথা জেনে যায় এমনকি অভিরূপবাবু, শ্রীতমাদেবী এবং বাকীরাও। গ্ৰামবাসীরা সবাই আদিত্যকে প্রচণ্ড ভালোবাসে ফলে তার অপমানে সবাই খুব রেগে গেছে পারলে তো অরুণাভকে টুকরো টুকরো করে কাটে। অভিরূপবাবু এবং স্বর্ণেন্দু বাবু কোনোমতে তাদের ঠাণ্ডা করতে চেষ্টা করেন কিন্তু কে শোনে কার কথা? এর সাথে অরুণাভ এখনো বোকার মতো উল্টোপাল্টা বলে যাচ্ছে ফলে পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বাধ্য হয়েই আদিত্যকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। কয়েকজন যুবক সত্যি সত্যিই অরুণাভকে মারতে ওর দিকে অগ্ৰসর হলে আদিত্য ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়, একজন ছেলে বলে "দাদা সরে যাও গ্ৰামের যে কারো অপমান মানে গ্ৰামের অপমান আর এ তো তোমাকে অপমান করেছে আজ একে মেরেই ফেলবো" "আর তারপর কি হবে? গ্ৰামের সম্মান বাড়বে?" ছেলেগুলো আদিত্যর কথা শুনে একটু থেমে যায় আদিত্য সকল গ্ৰামবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, "আমি জানি আপনারা আমাকে খুব ভালোবাসেন তাই আমার অপমান দেখে রেগে গেছেন এবং ওনাকে মারতে চাইছেন কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তারপর কি হবে? এই মুহূর্তে উনি আমাদের গ্ৰামের অতিথি আর অতিথিকে আঘাত করতে নেই, আর তাছাড়া এখানে একটা পূজো হচ্ছে আমাদের গ্ৰামে কখনো কারো পূজোয় বিঘ্ন হয়নি আজ‌ও হবে না" "অতিথি বলে কি যা খুশী তাই বলবেন? টাকা আছে বলে এত অহংকার? মানুষকে মানুষ ভাবেন না এরা আজ এদের শিক্ষা দিতেই হবে" "বেশ আপনারা যখন আমার কথা শুনবেন‌ই না তখন দিন ওনাদের শিক্ষা মারুন ওনাদের তাতে গ্ৰামের সম্মান নষ্ট হলে হোক তাইতো? একবারো ভেবেছেন এই গ্ৰামের সম্মান নষ্ট হলে একজন মানুষ সবথেকে বেশী কষ্ট পাবেন সেটা তিনি যেখানেই থাকুন না কেন সেই মানুষটা হলেন ডাক্তার জ্যেঠু আপনাদের ডাক্তার বাবু"। ডাক্তার বাবুর নাম শুনে সবাই চুপসে যায় আদিত্য বলে চলে "আমার সম্মানের থেকেও বড়ো এই গ্ৰামের সম্মান কারণ এর সাথে ডাক্তার জ্যেঠুর স্মৃতি ওনার সম্মান জড়িয়ে আছে তাই আমি আবার অনুরোধ করছি অন্তত আপনাদের ডাক্তার বাবুর কথা ভেবে শান্ত হয়ে যান" পিয়ালী এতক্ষণ অবাক হয়ে নিজের স্বামীকে দেখছিল, দেখছিল কিভাবে ক্ষিপ্ত গ্ৰামবাসীকে শান্ত করলো আদিত্য। গ্ৰামবাসীদের‌ ডাক্তারবাবু অর্থাৎ শৈলেশবাবুকে সে দেখেনি কিন্তু আদিত্যর মুখে শুনেছে যে এই গ্ৰামের সবাই তাঁকে কতটা সম্মান করে এমনকি আদিত্য নিজেও কতটা সম্মান করে শ্রদ্ধা করে এটা তার কথায় বারবার বুঝতে পেরেছে আজ চাক্ষুষ দেখতে পেলো। "যান এবার সবাই যে যার দায়িত্ব পালনে ফিরে যান, মনে রাখবেন এই পূজো আমাদের গ্ৰামে হচ্ছে আর আমাদের গ্ৰামের পূজা কখনো অসম্পূর্ণ থাকে না" পিয়ালী সহ অভিরূপবাবু এবং তার পরিবারের উপস্থিত সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখলো আদিত্যর কথা শুনে ক্ষিপ্ত গ্ৰামবাসীরা যে যার কাজে ফিরে গেল কিন্তু গ্ৰামবাসীরা সরে যেতেই অরুণাভ আবার নিজের রূপ ধরলো, "সব নাটক আমি কিছু বুঝিনা ভেবছেন?" "অরুণাভ" গর্জে উঠলেন অভিরূপবাবু "ওদের অপমান করার সাহস হয় কিভাবে তোমার? ওদের আমি ডেকে এনেছি" "কিন্তু বাবা" মৌমিতা বোধহয় স্বামীর হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু অভিরূপবাবু তাকে এক কথায় থামিয়ে দেন "আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলছি তোমাকে মাঝখানে কথা বলতে হবে না" "দাদা তুই এই ছেলেটাকে সাপোর্ট করছিস কেন? তুই ভুলে গেছিস যে এই ছেলেটা আমাদের বাড়িতে ঢুকে সুশান্তর গায়ে হাত তুলেছিল" মৌমিতা থামলেও মণিমালা দেবী শুরু করেন কিন্তু অভিরূপবাবু তাকেও থামিয়ে দেন, "সুশান্ত কি করেছিল সেটা নিশ্চয়ই তুই ভুলে যাসনি?" "দাদা আপনি বুঝতে পারছেন না এইরকম ছেলেদের লোভ সাংঘাতিক হয়,ভালো মানুষের মুখোশ পরে কখন ক্ষতি করে দেবে আপনি বুঝতেও পারবেন না" এবার প্রীতমবাবু কথা বলেন কিন্তু অভিরূপবাবুর উত্তরের সামনে তিনিও কেঁচোর মতো গুটিয়ে যান, "তাই নাকি প্রীতম? লোভ আর ভালো মানুষের মুখোশের কথা অন্তত তোমার মুখে মানায় না আর তাছাড়া তুমি আদিত্যকে কতদিন চেনো? কাউকে না চিনে না জেনে তার সম্পর্কে খারাপ কথা বলাটা অভদ্রতা এবং কুশিক্ষার পরিচয় দেয়"। অভিরূপবাবু এবার আদিত্য এবং পিয়ালীর দিকে ফিরে বলেন "আমি আমার ছেলের হয়ে ক্ষমা চাইছি" "আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই " আদিত্য শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয় তার গলার স্বর এতটাই শান্ত যে দেখে কে বলবে একটু আগেই রাগে তার দুটো চোখ যেন জ্বলছিল। মৌমিতা এখনো আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আছে তার মনের ভিতর আবার ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করেছে কারণ আদিত্যর সেই চোখদুটো তার বারবার মনে হচ্ছে এই চোখ তার চেনা কিন্তু কার চোখ কোথায় দেখেছে সেটা সে মনে করতে পারছে না। "আচ্ছা তাহলে আমরা এবার আসছি নমস্কার" হাতজোড় করে আদিত্য নমস্কার করে চলে আসছিল শ্রীতমাদেবী এবং অভিরূপবাবু বাধা দেন, "তুমি চলে যাবে মানে? পূজো এখনো শেষ হয়নি" "পূজো কিছুটা তো দেখলাম আর তাছাড়া আমি এইসবে বিশ্বাস করি না" "তুমি আমার ছেলের জন্য চলে যাচ্ছো তাই না? আমি তো ক্ষমা চাইলাম" "আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই তবে উনি গ্ৰামবাসীদের‌‌ও অপমান করেছেন এবার আমি ওদের শান্ত করলেও আবার যদি উনি এটা করেন তাহলে আমার পক্ষে নিজেকে শান্ত রাখা মুশকিল হবে" "থ্রেট করছেন?" অরুণাভ আবার কথা বলে তবে এবারও বাবার ধমক খেয়ে চুপ করে যায় "তুমি আবার কথা বলছো? এই মণি ওকে এখান থেকে নিয়ে যা" অরুণাভ, মৌমিতা, মণিমালা দেবী এবং প্রীতমবাবু অন্য জায়গায় চলে গেলে হটাৎ সুদেষ্ণা দেবী বলেন "কিন্তু তুমি চলে গেলে সবাই যদি আবার অরুর উপরে হামলা করে?" "আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন সেরকম কিছু হবে না তবে ওনাকেও নিজের স্বভাব সংযত করতে হবে, চলি, চলো পিয়ালী" অভিরূপবাবু বাধা দিতে গিয়েও পারলেন না তার চোখের সামনে দিয়ে তার বড়ো ছেলের কাছে অপমানিত হয়ে তার ছোটো ছেলে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল.... আবার... সেইসঙ্গে আরও দুটো জিনিস অভিরূপবাবু বুঝতে পারলেন এক, বড়ো ছেলের প্রতি তার কিছুটা দুর্বলতা এখনো রয়ে গেছে তাই তার সামনে এরকম কাজ করার পরেও শুধু একটু ধমক ছাড়া আর কিছুই করতে পারলেন না আর দুই, যেটুকু কাছে এসেছিল এখন তার থেকেও দূরে চলে গেল তার ছোটো ছেলে। বাড়িতে গিয়েও পিয়ালী রাগে ফুঁসতে থাকে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে তার উল্টোদিকে আদিত্য আশ্চর্য রকমের শান্ত মুখে একটুকরো হাসিও লেগে আছে। সেটা দেখে পিয়ালী যেন আরো রেগে যায় আদিত্য তার হাত ধরে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসিয়ে নিজে তার পাশে বসে শান্ত স্বরে বলে, "এত রেগে যাওয়ার কিছু নেই শান্ত হয়ে যাও" "তোমাকে কেউ অপমান করলে তোমার গায়ে নাই লাগতে পারে কিন্তু আমার সহ্য হয় না" "পিয়ালী" "তোমাকে ভিখারী বলার সাহস হয় কিভাবে? আর তুমিও কিছু বললে না কেন? অন্তত এক ঘুষিতে নাকটা ফাটিয়ে দিতে পারতে?" "পিয়ালী রিল্যাক্স এত উত্তেজিত হয়ো না" "আমাকে নিয়ে এলে কেন? এক থাপ্পড়ে দাঁতকটা ফেলে দিতাম" "সেইজন্যই নিয়ে এসেছি, কারণ এই অবস্থায় তোমার বেশী রাগ দেখানো বা উত্তেজিত হ‌ওয়া ঠিক না তাতে আমাদের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে" সন্তানের কথায় পিয়ালী কিছুটা শান্ত হয় তবে তার রাগ যায় না সমানে গজরাতে থাকে "এত সাহস? টাকা আছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি? যে যা খুশী বলবে যা.." পিয়ালীর কথা থেমে গেল কারণ সেইমুহুর্তে আদিত্য এক কাণ্ড করেছে সে পিয়ালীর ঠোঁটদুটো বন্ধ করে দিয়েছে নিজের দুটো ঠোঁট দিয়ে। একটি দীর্ঘ চুম্বনের পরে আদিত্য যখন পিয়ালীকে ছাড়ে তখন তার চোখ বন্ধ। এই আকস্মিক চুম্বনের জন্য সে প্রস্তুত ছিল না তাই ধাতস্থ হতে কয়েক মুহুর্ত নেয় কিন্তু চুম্বনেও তার রাগ কমেনি সেটা আদিত্য অচিরেই বুঝতে পারে ঠোঁট মুক্ত হতেই আবার পিয়ালীর কথা শুরু হয় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আবার আদিত্য পিয়ালীকে চুম্বনে আবদ্ধ করে এভাবে বারবার করে যতবার পিয়ালী মুক্তি পেয়ে কথা বলতে যাবে তখনই আবার যার ঠোঁট আবদ্ধ হয়ে যায়। একসময় চুম্বন শেষে পিয়ালী হেসে ফেলে সে বুঝতে পারে তার স্বামী যতক্ষণ না তার রাগ কমছে ততক্ষণ এভাবেই করতে থাকবে আদিত্য‌ও বুঝতে পারে অবশেষে তার স্ত্রীর রাগ কমেছে এবার তারা দুজন আরও একবার গাঢ় চুম্বনে লিপ্ত হয় তবে এবার নিজেদের মধ্যে স্বাভাবিক আকর্ষণে। "কি দেখছো এভাবে? আরও কিস চাই? আমি কিন্তু রেডি" চুম্বন শেষে পিয়ালী আদিত্যর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আদিত্য সহাস্যে জিজ্ঞেস করে। "দেখছি একটা মানুষ কিভাবে সবকিছু হারিয়েও মুখে হাসি নিয়ে নিজের ব্যাথা নিজের দুঃখ লুকিয়ে রাখতে পারে" আদিত্যর দিকে এক‌ইভাবে তাকিয়ে কথাটা বলে পিয়ালী। স্ত্রীর কথা শুনে মুহুর্তের জন্য আদিত্যর মুখ থেকে হাসি উধাও হয়ে গিয়ে গম্ভীর হয়ে যায় তবে বেশীক্ষণের জন্য না প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার হাসি ফিরে আসে, সে বলে "আমার আবার দুঃখ কিসের?" "আমি তোমার স্ত্রী তুমি আমার থেকেও লুকোতে চেষ্টা করছো? যদিও পারবে না আমার থেকে লুকোতে" "পিয়ালী মানুষের অতীত যখন সামনে চলে আসে তখন কখনো সেটা আনন্দ দেয় আবার কখনো কষ্ট দেয়, কিন্তু মানুষের উচিত অতীত আঁকড়ে ধরে না থেকে বর্তমানে বাঁচা এবং ভবিষ্যতের চিন্তা করা, আমিও সেটাই করছি। আমার অতীত সামনে চলে আসছে কিন্তু আমি এখন আর অতীত নিয়ে ভাবি না, এই গ্ৰাম এখন আমার বর্তমান আমার পরিবার আমি এই গ্রাম আর তোমাকে নিয়েই বাঁচতে চাই এবং এই যে আমার আগত ভবিষ্যৎ এটার বিষয়েই ভাবতে চাই আর কিছু নিয়ে না" কথাটা বলে আদিত্য পিয়ালীর পেটে হাত রাখে। "কিন্তু অরুণাভ ব্যানার্জী তোমাকে ভিখিরি বললো এটা আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না" "আমি তো ভিখিরি‌ই, আমার চেহারা অন্য একজনের, নাম অন্য একজনের, থাকি অন্য একজনের বাড়িতে আমার নিজের বলতে তো কিছু নেই তাহলে তো আমি ভিখারী‌ই। কিন্তু এক‌ই সঙ্গে আমার মতো ধনী‌ও কম‌ই আছে, এই গ্ৰামের প্রতিটা মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, যে ভালোবাসা কখনো টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না কিন্তু আমি পেয়েছি এছাড়া বাদশার মতো একটা বিশ্বস্ত সঙ্গী আছে আমার, একটা সুন্দরী তবে খুব রাগী ব‌উ আছে আর ওর গর্ভে আমার সন্তান থুড়ি আমাদের সন্তান তাহলে হলাম কি না আমি ধনী?" পিয়ালী আর কোনো কথা না বলে আদিত্যর কাঁধে মাথা রাখে আদিত্য আবার ওর কপালে একটা চুম্বন দেয়। "আদিত্য, আদিত্য আছো?" বাইরে থেকে দুজন মানুষের ডাক শোনা যায় আদিত্য একটু অবাক হয় এইসময় এরা? "মোড়ল জ্যেঠু আর অখিল জ্যেঠুর গলা না?" কথাটা বলে বাইরে এসে দেখে তার অনুমান নির্ভুল গেটের বাইরে দুজন প্রৌঢ় দাঁড়িয়ে আছেন, "আপনারা? আসুন ভিতরে আসুন" দুজনেই ভিতরে আসেন, পিয়ালী জল এনে দেয় সোফায় বসে জল খেয়ে পরস্পরের দিকে তাকান যেন কিছু একটা বলতে এসেছেন অথচ বলতে সংকোচ হচ্ছে বলতে পারছেন না আদিত্য বোঝে সেটা তাই একটু হেসে বলে "কি ব্যাপার বলুন তো আমাকে কিছু বলতে এত ভাবতে আরম্ভ করলেন কবে থেকে?" "আসলে আমরা তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি" অতি কষ্টে কথা বললেন মোড়লমশাই। "ক্ষমা? কিসের জন্য?" আদিত্য অবাক‌। "আসলে আমাদের কথাতেই আজ তুমি ওখানে গিয়েছিলে আর তোমার অপমান হলো, আমরা যদি না বলতাম তাহলে তুমি না ওখানে যেতে আর না তোমার অপমান হতো, আমরা খুবই লজ্জিত" এবার অখিলবাবু কথাটা সম্পূর্ণ করেন। "আর সেইজন্য আপনারা দৌড়াতে দৌড়াতে সোজা এখানে চলে এসেছেন তাইতো? না.. এখানে আপনারা আসতেই পারেন কিন্তু ক্ষমা কিসের জন্য?" "আসলে.." "দেখুন মোড়ল জ্যেঠু আপনারা ক্ষমা চাইছেন কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না?" "তুমি আমাদের উপরে রেগে নেই?" আদিত্য মোড়লের কথা শুনে হেসে ফেলে বলে, "পিয়ালীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল  আপনাদেরকেও সেটাই বলছি আপনারা এই গ্ৰামের সবাই আমার আপন জন,আমার পরিবার‌ কোথাকার কে আমাকে ভিখিরি বলেছে তাতে আমি আমার পরিবারের উপরে কেন রেগে থাকবো? আর আপনারাই কেন ক্ষমা চাইছেন? প্লিজ ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোটো লজ্জিত করবেন না বরং ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত, গ্ৰামের সবার অপমান শুনেও চুপ ছিলাম কিন্তু আমি কিছু বলিনি কারণ" "থাক বাবা আর কিছু বলতে হবে না তুমি কেন কিছু বলোনি সেটা আমরা সবাই জানি। ডাক্তারবাবুকে তুমিও যে কম ভালোবাসো না এটা নিজে মুখে না বললেও আমরা জানি" "ব্যাস তাহলে তো মিটেই গেল" "আরেকটা কথা ছিল" "হ্যাঁ বলুন" "তোমার জ্যেঠিমা বলছিলেন বৌমার একটা সাধের ব্যবস্থা করতে" "সেটা কি?" "ওটা একটা নিয়ম গর্ভবতী মেয়েদের দিতে হয় যদিও এটা মেয়েদের বাপের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই করে,এখন অবশ্য অনেকেই মানে না তবে তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে.."। আদিত্য একবার পাশে বসা পিয়ালীর দিকে তাকায় তারপর বলে "জ্যেঠু আবার সেই এক‌ই কথা বলছেন, আমাদের এখন আপনারা ছাড়া আর কে আছে বলুন?আপনারাই তো এখন আমাদের পরিবার" "তার মানে তুমি রাজী?" "কেন নয়?" "বৌমা তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?" "ও ঠিকই বলেছে জ্যেঠু, আপনারই এখন আমাদের আপন জন আমাদের পরিবার। কি নিয়ম আছে আমরা জানিনা আপনারাই তো বলে দেবেন নাহলে কিভাবে হবে?" "ঠিক আছে তাহলে ওইকথাই র‌ইলো, বৌমার সাধ আমরা দেবো" "কিন্তু কবে জ্যেঠু?" "সে এখনো কিছুটা দেরী আছে" "ঠিক আছে একটু আগে বলবেন, আয়োজন করতে সময় লাগবে তো" "না, যা আয়োজন আমরা করবো তুমি না" "সে কি, কেন?" "এই তো বললে আমরা তোমার পরিবার" "অবশ্যই আপনারা পরিবার" "ব্যাস, তাহলে আমরা সব করবো" "বেশ, আমি মানা করলে আপনারা কষ্ট পাবেন আর আমি সেটা চাই না, তাই ঠিক আছে"। "আজ তাহলে উঠি আদিত্য" "আসুন"। বাড়ি তৈরি হয়ে গৃহপ্রবেশ হয়ে গেলেও অভিরূপবাবু এখনো পাকাপাকিভাবে নারায়ণতলা গ্ৰামে এসে থাকেননি মাঝে মাঝে আসেন কিছুদিন থাকেন তারপর আবার চলে যান।  যখন গ্ৰামে থাকেন তখন সবার সাথেই স্বাভাবিকভাবেই মেশেন সেদিনের ঘটনার কোনো প্রভাব দেখা যায় না তাতে এমনকি আদিত্যর সাথেও স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে যদিও এখনো আদিত্য নিজের পরিচয় দেয়নি আর যেকোনো কারনেই হোক অভিরূপবাবুও ও নিয়ে আর কিছু বলেননি। সবকিছুই আগের মতোই স্বাভাবিক চলছে ব্যাতিক্রম শুধু অরুণাভ আর মৌমিতা। অরুণাভ এখনও সেদিনের ঘটনাটা ভুলতে পারেনি কিন্তু বাবাকে সেই বিষয়ে কিছু বলতে সাহস পায় না নিজের ভিতরেই রাগে ফুঁসতে থাকে। আর মৌমিতা, সেও কাউকে কিছু না বললেও তার মনের ভিতরে এক সর্বক্ষণের ভয় বাসা বেঁধেছে ভয়ের কারণ আর কিছুই না নারায়ণতলা গ্ৰামে দেখা দুখানি চোখ আদিত্যর চোখ। উঠতে বসতে শয়নে স্বপনে সবসময় মৌমিতার চোখের সামনে ওই দুটো চোখ‌ই ভাসে তবে ভালোবাসায় নয় ভয়ে আতঙ্কে।  ভয় পেলেও চোখদুটো তার ভীষণ চেনা চেনা লাগে যেন আগে কোথাও দেখেছে অনেকদিন আগে কিন্তু কোথায় বা কার চোখ কিছুতেই মনে করতে পারে না একবার তো রাতে স্বপ্নে চোখদুটো দেখে ভয়ে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে কপালে তখন বিন্দু বিন্দু ঘামে ভর্তি গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে অনেক ভেবেও চোখদুটোর কথা না কিছুতেই মনে করতে পারে আর না ভুলতে পারে মৌমিতা। আদিত্যর কথা মেনে কলকাতার কয়েকবছরের পুরনো কেসগুলো আবার স্টাডি করতে থাকেন সুপ্রতিমবাবু কিন্তু কিছুতেই কিছু পান না বিরক্ত হন তবে নিজের উপরে কিন্তু পরক্ষণেই আবার কাজ শুরু করেন নিজের সমস্ত ইনফর্মারদের অ্যাক্টিভ করেছেন খবরের জন্য কিছু কিছু খবর পেয়েওছেন কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয় তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তবে তিনি হাল ছাড়তে নারাজ তিনি যেন একপ্রকার প্রতিজ্ঞা করেছেন শহর কলকাতাকে এই ক্রিমিনালদের হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার, তাই আবার কাজে ডুবে যান। কথায় আছে অশুভ শক্তি কখনো শান্ত থাকে না তারা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে অন্যের ক্ষতি করার। ঠিক যেমন এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছেন প্রীতমবাবু এবং মনোজিৎবাবু তাদের দুজনেরই লক্ষ্য এক 'ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্' এর দখল নেওয়া এই উদ্দেশ্যেই দুজনে ব্যানার্জী পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধ গড়ে তুলেছেন প্রীতমবাবু অভিরূপবাবুর বোন অর্থাৎ মণিমালা দেবীকে বিয়ে করেছেন আর অপরদিকে মনোজিৎবাবু নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অভিরূপবাবুর ছেলে অরুণাভর সঙ্গে, যদিও প্রথমে অভিরূপবাবুর ছোটো ছেলে অনিকেতকে ধরে ব্যানার্জী পরিবারে ঢুকতে চেয়েছিলেন সেইরকমই প্ল্যান করেছিলেন কিন্তু তারপরেই বুঝতে পারেন যে অনিকেত না ব্যানার্জী পরিবারের উত্তরাধিকারী যদি কেউ হয় তাহলে সেটা অরুণাভ তখন তিনি প্ল্যান চেঞ্জ করেন নিজের মেয়েকে অরুণাভর সঙ্গে বিয়ে দেন তার জন্য অবশ্য অনিকেতকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়।
Parent