"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৪০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5309826.html#pid5309826

🕰️ Posted on July 30, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1485 words / 7 min read

Parent
                  দ্বিতীয় খণ্ড                   ২৮তম পর্ব কথায় আছে অশুভ শক্তি কখনো শান্ত থাকে না তারা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে অন্যের ক্ষতি করার। ঠিক যেমন এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছেন প্রীতমবাবু এবং মনোজিৎবাবু তাদের দুজনেরই লক্ষ্য এক 'ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্' এর দখল নেওয়া এই উদ্দেশ্যেই দুজনে ব্যানার্জী পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধ গড়ে তুলেছেন প্রীতমবাবু অভিরূপবাবুর বোন অর্থাৎ মণিমালা দেবীকে বিয়ে করেছেন আর অপরদিকে মনোজিৎবাবু নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অভিরূপবাবুর ছেলে অরুণাভর সঙ্গে, যদিও প্রথমে অভিরূপবাবুর ছোটো ছেলে অনিকেতকে ধরে ব্যানার্জী পরিবারে ঢুকতে চেয়েছিলেন সেইরকমই প্ল্যান করেছিলেন কিন্তু তারপরেই বুঝতে পারেন যে অনিকেত না ব্যানার্জী পরিবারের উত্তরাধিকারী যদি কেউ হয় তাহলে সেটা অরুণাভ তখন তিনি প্ল্যান চেঞ্জ করেন নিজের মেয়েকে অরুণাভর সঙ্গে বিয়ে দেন তার জন্য অবশ্য অনিকেতকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়। প্রীতমবাবু এবং মনোজিৎবাবু দুজনেই অনেকদিন থেকেই পরস্পরের পরিচিত শুধু তাই নয় প্রায় সবকাজেই দুজনে পার্টনার হিসেবে কাজ করেন। মজার ব্যাপার হলো দুজনেই জানেন যে 'ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্' তাদের দুজনেরই লক্ষ্য, অন্য ক্ষেত্রে হয়তো একজন অপরজনকে সরিয়ে দিতে চাইতো যেটা এক্ষেত্রেও দুজনেই চান কিন্তু দুজনেই দুজনের ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন তাই সতর্ক থাকতে হয় তবে এইদিক থেকে প্রীতমবাবু মনোজিতবাবুর থেকে এক পা এগিয়ে আছেন তার কারণ তার কাছে এমন একটা জিনিস আছে যেটা মনোজিৎবাবু এবং তার ছেলে মেয়েকে খুনের দায়ে জেলের ঘানি টানাতে পারে অনিকেতকে পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার ভিডিও আছে তার কাছে। অবশ্য এটা ঠিক অনিকেতকে মারার প্ল্যানটা প্রীতমবাবুর‌ই করা কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই অপরদিকে মৌমিতা যদি ফাঁসে তাহলে নিঃসন্দেহে মনোজিতবাবুর‌ও নাম জড়িয়ে যাবে সাথে জড়াবে ব্যানার্জী পরিবারের উত্তরাধিকারী অরুণাভ ব্যানার্জীর নাম‌ও। নিজের গোপন আস্তানায় চেয়ারে বসে ল্যাপটপে অনিকেত হত্যার ভিডিও দেখতে দেখতে মুচকি হাসেন প্রীতমবাবু নিজের মনেই বলতে থাকেন "এই খেলায় আমার জিত নিশ্চিত একঘায়ে সবকটাকে ফেলে দেবো তারপর আমি শুধু আমি‌ই রাজা আর কেউ না এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা সঠিক সময়ে সঠিক চাল,আগে অভিরূপ ব্যানার্জীকে সরাবো তারপর বাকি সবকটাকে"। দূরে নিজের বাড়িতে তখন মনোজিতবাবুও চিন্তায় বিভোর কিভাবে রাস্তার বাধাগুলোকে সরিয়ে সবকিছু হাতের মুঠোয় নেওয়া যায় তার জন্য আগে অভিরূপ ব্যানার্জী আর তারপর প্রীতমকে সরানো দরকার এইদুজন‌ই প্রধান বাধা তার লক্ষ্যের পথে তাই এদের আগে সরাতে হবে। ভয় থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে কাজে ব্যাস্ত করে ফেলে মৌমিতা এমনিতে খুব একটা কাজ করতে হয় না তাকে সব কাজের জন্যই লোক রাখা আছে এমনকি নিজের ছেলেমেয়ে দুটোর কাজগুলোর জন্যও লোক রাখা আছে তাদের জামাকাপড় পরিষ্কার থেকে কলেজে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা তারপর টিউশনি তে আসা যাওয়া সবের জন্যই লোক আছে ফলে কিছুই করতে হয় না বলা চলে কিন্তু ইদানিং সে শুরু করেছে ছেলেমেয়েদের টিফিন করা ওদের সকালে কলেজের জন্য তৈরী করা এসবই নিজে করতে শুরু করে। বাড়ির সবাই এতে কিছুটা আশ্চর্য হলেও কিছু বলে না আর মৌমিতাও কাউকে কিছু বলে না পাছে তার দুর্বলতা এবং ভয় সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে যায় যেটা সে একদমই চায় না। এরকমই একদিন ছেলেমেয়েদের কলেজে পাঠানোর পরে বাড়িতে সে একাই আছে পরিচারক ও পরিচারিকারা প্রাত্যাহিক কাজ সেরে ফিরে গেছে, এদিকে তার শ্বশুর শাশুড়ি অর্থাৎ অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী তাদের গ্ৰামের বাড়িতে গেছেন, অরুণাভ অফিসে গেছে প্রীতমবাবু ও সুশান্ত‌ও তাদের কাছে গেছে মণিমালা দেবী ও তার ছেলের ব‌উ বাইরে গেছে শপিংএ। বিশাল বাড়িতে একা হতেই মৌমিতার মনে আবার ভয় বাড়তে শুরু করেছে, ভয় কাটাতে সে ঘর গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করে তার এবং অরুণাভর বেডরুম, ছেলেমেয়েদের রুম একে একে গোছাতে থাকে। কাজের জিনিসগুলো গুছিয়ে রেখে দরকারি নয় এমন জিনিসগুলো সরিয়ে রাখে স্টোর রুমে রেখে দেওয়ার জন্য। ঘর গোছানোর কাজ সেরে আলাদা করে রাখা জিনিসগুলো নিয়ে স্টোররুমে যায় সেখানে অনেক জিনিস ছড়ানো ছিটানো আছে সেগুলো সরিয়ে সদ্য নিয়ে আসা জিনিসগুলো রাখতে থাকে। স্টোররুমে রাখা একটা বাক্স খুলতেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে, সঙ্গে সঙ্গে একটা আর্তনাদ করে দু পা পিছিয়ে যায় মৌমিতা, ভয় কাটাতে এসে তার মনে ভয়টা আরও বেড়ে যায় কারনটা বাক্সটার ভিতরে থাকা একটা ফটো ফ্রেম না শুধু ফটো ফ্রেম বললে ভুল বলা হবে ফটোতে থাকা মানুষটাই মৌমিতার ভয়ের কারণ। ফটোতে একটা উনিশ- কুড়ি বছরের যুবকের ছবি, কোনোমতে নিজের মনের ভয়টাকে সামলে আস্তে আস্তে বাক্সের কাছে এসে ছবিটা হাতে নেয় ভয়ে গলাটা শুকিয়ে যায়। "এই চোখ.. এই চোখ" নিজের মনেই বলতে থাকে মৌমিতা "কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? তবে কি ও বেঁচে আছে?" কথাটা মনে আসতেই যেন শিউরে ওঠে মৌমিতা। তাড়াতাড়ি স্টোররুম থেকে বার হয়ে আসে তার পা কাঁপছে কোনোমতে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। একটু পর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ফোনটা হাতে তুলে নেয় "হ্যালো... অ...অ...অনি হয়তো বেঁচে আছে"। প্রায় সারাদিন মৌমিতা নিজেকে রুমের ভিতরে আটকে রাখে ভয়ে আতংকে তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ভয় কাটানোর জন্য কাজ করতে গিয়ে দ্বিগুণ ভয় নিয়ে ফিরে আসে মৌমিতা, ছবিটার যুবকের চোখের সাথে সেদিনের নারায়ণতলা গ্ৰামের সেই ছেলেটার চোখদুটোর আশ্চর্য রকম মিল কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে পারে না এটা কিভাবে সম্ভব? তার মনে ভয়টা আরও বেড়ে যায় যখন তার মনে হয় তবে কিও বেঁচে গেছে? ছবিটা এই বাড়ির ছোটো ছেলে ও মৌমিতার এক্স বয়ফ্রেন্ড অনিকেতের যাকে সে এবং অরুণাভ মিলে প্রায় দশ বছর আগে গ্যংটকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু অনিকেত কি বেঁচে গিয়েছিল? নাহলে দুজন আলাদা মানুষের চোখের এতটা মিল কিভাবে হয়? এই কারনেই গ্ৰামের ছেলেটার চোখদুটো এত চেনা লাগছিল মৌমিতার, এতদিন চিনতে পারেনি আজ পেরেছে চিনতে না পারার একটা কারন এবাড়িতে কোথাও অনিকেতের ছবি নেই শুধুমাত্র অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবীর ঘরের দেওয়ালে একটা ছবি আছে এছাড়া পুরো বাড়িতে কোথাও, কোনো দেয়ালে, কোনো অ্যালবামে কোথাও অনিকেতের একটা ছবিও নেই বিয়ের পরেই অরুণাভকে বলে আর অরুণাভ একপ্রকার জিদ করেই নিজের ছোটো ভাইয়ের সব চিহ্ন ঘর থেকে মুছে দেয়। নতুন বাড়িতে আসার আগে অনিকেতের ব্যাবহৃত প্রায় সব কিছুই দানসামগ্ৰী করে দেওয়া হয় আর ছবিগুলোর জায়গা হয় স্টোররুমে, যেহেতু স্টোররুমে মৌমিতা যেত না তাই তার আপত্তি ছিল না অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবী অবশ্য প্রথমে একটু আপত্তি করেছিলেন কিন্তু বড়ো ছেলের জিদ বা আবদারের সামনে তার কথা মেনে নিতে বাধ্য হন, একপ্রকার এই পুরো বাড়ি থেকে অনিকেতের সব স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলে দুজনে। আর আজ এত বছর পরে সেই অনিকেতের ছবি সামনে আসতেই ভয়ে পাংশু হয়ে গেছে সে, আর যদি তার অনুমান সত্যি হয় যে অনি বেঁচে আছে তাহলে? "মৌ মৌ কোথায় তুমি?" অরুণাভর গলার আওয়াজ পেয়ে কিছুটা সাহস ফিরে আসে মৌমিতার সে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। "কি হয়েছে বলোতো? তখন ফোন করে কি একটা বলছিলে আমি ঠিক শুনতে পাইনি, তবে তাড়াতাড়ি কাজ মিটে যাওয়ায় চলে এলাম কিন্তু কি ব্যাপার বলোতো তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছো, যে মেয়ে কথায় কথায় লোকের গলা কাটতে রাজী হয়ে যায় সে ভয় পেয়েছে? ব্যাপারটা সত্যিই আশ্চর্যের" স্বামীর কথা শুনে ভয়ের মাঝেও কিছুটা রাগ হয় মৌমিতার সে বলে "তুমি ইয়ার্কি করছো ওদিকে যেটা আমি ভাবছি সেটা সত্যি হলে আমাদের খুব বড়ো বিপদ" "বিপদ? কেন আবার কি হলো?" ঘরে এসে নিজের ড্রেস ছাড়তে ছাড়তে জিজ্ঞেস করলো অরুণাভ। "তোমার সেই ছেলেটাকে মনে আছে? সেই গ্ৰামে যার সাথে ঝামেলা হলো?" অরুণাভ কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় তার মুখে রাগফুটে ওঠে বলে, "ওকে কিভাবে ভুলবো বলো, কিন্তু এখন ওর কথা কেন?" "আ..আমার মনে হচ্ছে ও অনিকেত" "হোয়াট?" অরুণাভ যেন আকাশ থেকে পরলো কিন্তু পরক্ষণেই হো হো করে হেসে উঠলো। "আমি সত্যি বলছি" মৌমিতা দৃঢ় স্বরে বলে কিন্তু অরুণাভ তবুও বিশ্বাস করে না, "আচ্ছা তোমার এই ধারণা কেন হলো? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো যে অনিকে আমরাই পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছিলাম" "কিন্তু আমরা ওর বডি দেখিনি" "মৌ ও যেখানে পরেছিল সেখানে ওর বডি দেখবো কিভাবে? এতদিনে হয়তো ওর শুধু হাড়গুলো পাহাড়ের নীচে কোথাও পরে আছে" "না, আমার মনে হচ্ছে ও বেঁচে গেছে" "আর ওই গ্ৰামে থাকছে?" বলে আবার হাসতে থাকে অরুণাভ তারপর বলে "তোমার এই ধারণা হলো কেন বলোতো? ওর চেহারা দেখেছো?" "চেহারা দেখেছি কিন্তু তুমি বোধহয় ওর চোখদুটো দেখোনি আমি দেখেছি পুরো অনিকেতের চোখ, না আমার ভুল হচ্ছে না ওই অনিকেত" "মৌ, অনি আমার ভাই ছিল আমিই চিনতে পারলাম না আর তুমি চিনে ফেললে?" আবার হাসতে শুরু করে অরুণাভ। "একবারো ভেবেছো তোমার বাবা এত জায়গা থাকতে ওখানেই কেন জমি কিনে বাড়ি বানালেন?" "ওটা বাবার খেয়াল দেখছো না ওখানে কিছুদিন থাকছেন আবার এখানে ফিরে আসছেন" "আর যদি সেটা না হয়?" "মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?" অরুণাভ ঈষৎ গম্ভীর এবার। "ধরো যদি তোমার বাবার‌ও এটা মনে হয়ে থাকে যে ও অনিকেত, আফটারঅল উনি বাবা, তখন? ধরো যদি ও সত্যিই অনিকেত হয়ে থাকে আর ও তোমার বাবাকে সব সত্যিটা জানিয়ে দেয় আমাদের ব্যাপারে তখন কি হবে ভেবে দেখেছো?" এবার অরুণাভ‌ও একটু চমকে উঠলো যতই অসম্ভব লাগুক মৌমিতার যুক্তিটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মৌমিতা বলতে থাকে, "তোমার বাবা যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেন যে আমরা অনিকেতকে মেরেছি তাহলে আমাদের ছাড়বেন না তুমি ওনার ছেলে তার উপরে আদরের তোমাকে ছাড়লেও ছাড়তে পারেন কিন্তু আমাকে ছাড়বেন না" "চিন্তা করো না, বাবাকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি কিন্তু আমার এখনো মনে হচ্ছে তোমার ভুল হচ্ছে অনি বেঁচে আছে এটা অসম্ভব" "এটা সত্যি না হলেই আমাদের জন্য ভালো" "আচ্ছা যদি তোমার কথা সত্যি বলে ধরেও নি‌ই তাহলে একটা কথা বলো ও যদি বেঁচেই ছিল তাহলে এত বছর কোথায় ছিল? এল না কেন? আর ওর চেহারা পাল্টালো কিভাবে?" "এত কথা জানিনা হয়তো আমাদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরী করছিল,পুরো প্ল্যান করে এগোচ্ছে দেখছো না কিভাবে তোমার বাবাকে হাত করে নিয়েছে সেদিন শুনলে না কি বললো আমাদের মুখোশের নীচের আসল চেহারা ও জানে" অরুণাভকে এবার সত্যিই একটু চিন্তিত লাগে সে বলে "তুমি কি করতে চাইছো?" "অন্য সময় হলে বলতাম ওকে সরিয়ে দাও সে যেই হোক" "তাহলে তাই করা হোক" "তোমার বাবা ওখানে আছে ভুলে যাচ্ছো? ওই ছেলেটা ওনার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে, এখনই ওর কিছু হলে উনি সহজে ছাড়বেন না" "তাহলে কি করবে?" "আগে ওর সম্বন্ধে জানতে হবে ও কে কোথা থেকে এসেছে সবকিছু তারপর ভেবে দেখবো"।
Parent