"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৪৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5323004.html#pid5323004

🕰️ Posted on August 13, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3827 words / 17 min read

Parent
                  দ্বিতীয় খণ্ড                   ৩১তম পর্ব আদিত্য পিয়ালীর সামনে যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক পিয়ালী ঠিকই বুঝতে পারে আদিত্যর মাথায় চিন্তা চলছে, তবে আদিত্য সবমময় তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছে নিয়মিত চেক‌আপ করাচ্ছে একটা ডেট‌ও মিস করছে না অবশ্য গ্ৰামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেক‌আপের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় টাউনের হাসপাতালে যেতে হয় আর টেস্টগুলোর জন্য অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক আছে। এখন অবশ্য চেক‌আপে গেলে বাইক নিয়ে যায় না,ক্যাব বুক করে নেয় তবে আজকের চেক‌আপে ক্যাব বুক করেনি গ্ৰামের একজনের গাড়ি আছে সে ওলা এবং উবের দুটোতেই রেজিস্ট্রেশন করে চালায় তবে সে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাওয়ায় ওর গাড়িটা চেয়ে রেখেছিল ওটাতেই পিয়ালীকে নিয়ে টাউনের ক্লিনিকে এসেছে কিছু টেস্ট করাতে। পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে বাদশাকে গাড়ি পাহারার দায়িত্বে রেখে ওরা বহুতল বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে গেল নির্দিষ্ট ফ্লোরের উদ্দেশ্যে। ঘন্টাদুয়েক পরে কাজ সেরে ফেরার পথ ধরলো মানে লিফটে প্রবেশ করলো, ওঠার সময়েও লিফটেই উঠেছিল আর এখন নামার সময়েও সেটাই করছে। লিফটে মাত্র দুজন আদিত্য আর পিয়ালী, লিফটে ঢুকে গ্ৰাউণ্ড ফ্লোরের সুইচ টিপে দিল আদিত্য, অটোমেটিক দরজা বন্ধ হবার আগে আরো একজন প্রবেশ করলো লিফটে। বয়স আন্দাজ বত্রিশ-তেত্রিশ হবে মাথায় কোঁকড়ানো চুল, পরনে একটা হাফ হাতা নীল টি শার্ট আর একটা জিনসের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, পায়ে শ্যু টি শার্টের উপর দিয়েও পেশীবহুল চেহারাটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। লিফটে ঢোকার সময় লোকটার দৃষ্টি সোজা আদিত্য এবং পিয়ালীর দিকে নিবদ্ধ সেটা দেখেই বোধহয় পিয়ালী একটু ভয় পেয়ে আদিত্যর একটা হাত আঁকড়ে ধরলো। আদিত্য ব্যাপারটা বুঝে পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে ইশারা করলো যার মানে "আমি আছি তো, ভয় কিসের?" আদিত্য আর পিয়ালী লিফটের পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে আছে পিয়ালী একেবারে কোণ ঘেষে আর আদিত্য ওকে গার্ড করে আছে। লোকটা ওদের সামনে বন্ধ দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়ালো, আদিত্য একদৃষ্টিতে লোকটাকে নিরীক্ষণ করতে থাকে লোকটা লিফট চালু হবার সাথে সাথে প্রথমে নিজের মাথাটা ঘুরিয়ে তারপর হাতগুলো নাড়িয়ে নিতে থাকে যেন ওয়ার্ম‌আপ করছে ফিল্ডে নামার আগে, আদিত্যর বুঝতে বাকি র‌ইলো না কি হতে চলেছে সে নিঃশব্দে নিজের হাতে ধরা ফোল্ডারটা যেটায় পিয়ালীর রিপোর্টের কাগজপত্র গুলো আছে সেটা পিয়ালীর দিকে বাড়িয়ে দেয় আর পিয়ালী‌ও চুপচাপ স্বামীর হাত থেকে ফোল্ডারটা নেয়। লোকটা আচমকা পিছনে ফিরে আক্রমণ করে হাতে একটা ছোটো অথচ তীক্ষ্ণ মুখের ধারালো ছুরি, আঘাতটা অবশ্য আদিত্যকে না আদিত্যর পিছনে থাকা পিয়ালীকে করতে চায় আদিত্যর পাশ দিয়ে হাত বাড়িয়ে কিন্তু আদিত্য অত্যন্ত ক্ষিপ্রতায় লোকটার কবজি ধরে তাকে প্রতিহত করে কিন্তু লোকটা নিজের হাতটা এক হ্যাঁচকা টানে আদিত্যর হাত থেকে ছাড়িয়ে আবার আক্রমণ করে কিন্তু এবারও আদিত্য তাকে প্রতিহত করে, লিফটের ভিতরেই দুজনের লড়াই শুরু হয়ে যায়। দুজনেই পরস্পরের আঘাত প্রতিহত করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে আঘাত করতে চায় এই লড়াইতে আদিত্যর একটা অসুবিধা হলো ওর পিছনে গর্ভবতী স্ত্রী যাকে বাঁচিয়ে লড়তে হচ্ছে, একসময় লিফট গ্ৰাউণ্ড ফ্লোরে আসে এবং টুং করে অটোমেটিক দরজা খুলতে শুরু করে এইসময় আদিত্যর একটা লাথি খেয়ে লোকটা খোলা দরজা দিয়ে লিফটের বাইরে ছিটকে পরে।  আদিত্য আর পিয়ালী লিফট থেকে বেরিয়ে আসে আশেপাশের কিছু লোক যারা হয়তো কোনো টেস্ট করাতে এসেছিল তারা এবং বিল্ডিংয়ের একজন সিকিউরিটি এগিয়ে আসে লোকটাকে ধরতে কিন্তু লোকটার হাতে ছুরি দেখে কেউ বেশি এগোতে সাহস পায় না। লোকটা আবার উঠে আদিত্যকে আক্রমণ করে কিন্তু এবারে আদিত্যর একটা সুবিধা হয়েছে যে জায়গাটা বড়ো হয়ে গেছে যেটা লিফটে ছিল না। এখন লোকটা আর তেমন পাত্তা পায় না আদিত্যর কাছে, লাথি ঘুষি খেয়ে ছিটকে যায়, এইভাবে তিনজন বিল্ডিংয়ের বাইরে আসে, বাইরেই সামনে পার্কিং এরিয়া যেখানে গাড়িতে বাদশা অপেক্ষা করছে একটা লোক তার মনিব আর মনিব পত্নীর উপরে ছুরি দিয়ে হামলা করছে এটা দেখে সেও গর্জন শুরু করে, আদিত্য গাড়ির পিছনের একটা জানালা খোলাই রেখেছিল বাদশা সেটা দিয়েই মুখ বার করে গর্জন করতে থাকে কিন্তু আদিত্য ওকে গাড়ি থেকে নামতে বারণ করে আসায় নামে না। লোকটা যে একা আসেনি এই সন্দেহ আদিত্যর আগেই হয়েছিল এখন সেটা সত্যি বলে প্রমাণিত হলো আরো একজন সঙ্গীকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো, আদিত্য এবার নিজের মোবাইলটা বের করে পিয়ালীর হাতে দিয়ে বলে "সুপ্রতিম স্যারকে ফোন করে বলো এক্ষুনি এখানে আসতে, উনি নিজেই যেন আসেন" তারপর লোকদুটোর দিকে এগিয়ে গেল। আবার লড়াই শুরু হলো তবে লড়াইটা আদিত্যর পক্ষে একতরফা না হলেও যত সময় যেতে থাকে আদিত্যর জয় নিশ্চিত হতে থাকে অবশ্য আদিত্য নিজেও আহত হয়েছে ওদের একজনের ছুরির আঘাত একবার হাতে আর একবার পেটের সাইডে লেগেছে, ঠিক সময়ে ব্লক করায় আঘাতটা গভীর হয়নি শুধু জামা আর কিছুটা চামড়া ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে আর তাতেই রক্তে লাল হয়ে গেছে পেটের জায়গাটা। আদিত্যর রক্তপাত দেখে পিয়ালী ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে আর বাদশা মনিবের রক্ত দেখে গাড়ির ভিতরে ছটফট করতে থাকে। আঘাত সত্ত্বেও আদিত্য লড়াই থামায় না লড়তে লড়তে প্রথমে একটা লাথিতে একজনকে ছিটকে দিয়ে আরেকজনের উপরে চড়াও হয় একটা বিশেষ টেকনিকে দ্বিতীয় জনের পায়ের পাতা ভেঙে দেয় ফলে লোকটা আর্তনাদ করে মাটিতে বসে পরে, এই দেখে দ্বিতীয় লোকটা পালাতে গেলে আদিত্য এবার ডাক ছাড়ে "বাদশা"। বাদশা যেন মনিবের এই ডাকের জন্যই অপেক্ষা করছিল এক লাফে গাড়ির জানালা দিয়ে বেরিয়ে লোকটার পিছনে ধাওয়া করে বেশিদূর যেতে হয় না এক লাফে বাদশা লোকটার পিঠের উপরে পরলে লোকটা ভয়ে হুমড়ি খেয়েমাটিতে পরে আর বাদশা লোকটার একটা পা কামড়ে ধরে টানতে টানতে আদিত্যর কাছে আনতে থাকে লোকটা যদিও যন্ত্রণায় চিৎকারের সাথে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু বাদশার ধারালো দাঁতপ্যান্ট ফুঁড়ে পায়ের মাংসে গেঁথে গেছে। পিয়ালী তাড়াতাড়ি আদিত্যর কাছে যায় আদিত্য তাকিয়ে দেখে পিয়ালী কাঁদছে, "আদিত্য তাড়াতাড়ি চলো, এ..খানে ট্রিটমেন্ট হয়তো চলো তোমার অনেক রক্ত বেরিয়েছে" "পিয়ালী রিল্যাক্স" "কি রিল্যাক্স" পিয়ালী কাঁদতে কাঁদতেই ঝাঁঝিয়ে ওঠে "তোমার রক্ত বেরোচ্ছে আদিত্য" "তোমাকে ফোন করতে বলেছিলাম করেছো?" উত্তরটা পিয়ালী দেবার আগেই পেয়ে যায় আদিত্য, প্রশ্ন শেষ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা গাড়ি এসে থামে আর সেটা থেকে নেমে দৌড়ে আসেন সুপ্রতিম বাবু। "আদিত্য কি হয়েছে তোমার?" "স্যার পরে কথা হবে এখন ওর ট্রিটমেন্ট দরকার অনেক রক্ত বেরিয়েছে" সুপ্রতিমবাবুর প্রশ্নের উত্তরে আদিত্য কিছু বলার আগেই পিয়ালী কথা বলে এরপর আদিত্য‌ও কথা বলে, "স্যার আগে এই দুজনকে অ্যারেস্ট করুন তবে বোধহয় ট্রিটমেন্টটা ওদের বেশী দরকার, বাদশা" বাদশার কামড়ে লোকটার একটা পা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে কিন্তু বাদশা তখনও পাটা কামড়ে ধরে টানতে টানতে আনছিল লোকটাকে মনিবের ডাক শুনে সে পা ছেড়ে দৌড়ে মনিবের কাছে এলো। "সে হয়ে যাবে, ওই দেখো কে এসেছে" এবার আরও একটা পুলিশের জিপ এসে থামে সেটা থেকে কয়েকজন কনস্টেবল এবং একটি যুবতী নামে। সুপ্রতিমবাবু অর্ডার দেন "এই দুজনকে অ্যারেস্ট করে প্রথমে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও ফার্স্ট এড দেওয়ার পরে সোজা লালবাজারে নিয়ে এসো, তানিয়া খেয়াল রাখবে পালাতে যেন না পারে" "পারবে না "  কথাটা বলে যুবতীটি একবার আদিত্যর দিকে তাকিয়ে লোকদুটোকে নিয়ে চলে গেল। ব্যানার্জী বাড়িতে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা বেশি হলেও সেটা বোঝা যায় না যে যার নিজের মতো থাকে এমনকি দু দুটো বাচ্চা থাকলেও হ‌ইচ‌ই তেমন হয় না কিন্তু আজ হচ্ছে আজ সকাল থেকেই অরুণাভ এবং মৌমিতাকে একটু বেশীই খুশী দেখাচ্ছে। বাড়ির অন্যান্যরা এতে অবাক‌ই হয়েছে কারণ অরুণাভ সচরাচর এরকম করে না তার মুখ বেশীরভাগ সময়েই গম্ভীর থাকে সে নিজে সিলেক্ট করে বাজার আনিয়েছে, ছেলেমেয়েকে কলেজে দিয়ে এসেছে। "আজ তোমাকে এত খুশী দেখাচ্ছে, কারণটা জানতে পারি অরু?" অভিরূপবাবু পেপার পড়ছিলেন পড়া থামিয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। "আজ আমার একটা ইচ্ছা পূরণ হয়েছে" "তোমার কোন ইচ্ছাটা পূরণ হতে বাকি ছিল অরু?" "আসলে ইচ্ছাটা ঠিক আমার না মৌএর, ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি সেটা পূরণ করতে পারবো গতকাল বিকেলের দিকে খবরটা পেয়েছি তখন থেকেই মনটা খুশিতে ভরে আছে" "ভালো, তোমরা খুশি হলেই আমরা খুশী"। অভিরূপবাবু আবার পেপারে মনোনিবেশ করলেন হঠাৎ বাড়ির একজন পরিচারক হন্তদন্ত হয়ে এসে জানালো বাইরে পুলিশ এসেছে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাইরের সিকিউরিটি ডেস্ক থেকে ইন্টারকমে কথাটা কনফার্ম করলো। অভিরূপবাবু বেশ ভালোই অবাক হলেন কারণ তার বাড়িতে পুলিশের আগমন বড্ড অস্বাভাবিক তবুও তিন আসতে বললেন বাঁধা দিলেন না যদিও একটু পরেই বুঝতে পারলেন বাধা দিতে পারতেন‌ও না। "কি ব্যাপার অফিসার আমার বাড়িতে হঠাৎ?" একজন তরুণ সুদর্শন অফিসার ঘরে ঢুকতেই প্রশ্নটা করেন অভিরূপবাবু, উত্তরে অফিসারটি একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন "আমরা মিস্টার অরুণাভ ব্যানার্জী কে অ্যারেস্ট করতে এসেছি, এই যে ওয়ারেন্ট প্লিজ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন"। ব্যানার্জী ভিলায় হটাৎ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো, উপস্থিত সবাই একেবারে থ হয়ে গেছেন এমনকি মৌমিতাও হতবুদ্ধি হয়ে গেছে শুধু অরুণাভ এখনো স্বাভাবিক রয়েছে বা স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করছে। "আপনি জানেন আপনি কাকে অ্যারেস্ট করতে এসেছেন?" প্রায় হুঙ্কারের স্বরে জিজ্ঞেস করলেন অরুণাভ, কিন্তু অফিসারটি ঠাণ্ডা স্বরেই উত্তর দিল, "জানি, বললাম যে আমরা ওয়ারেন্ট নিয়েই এসেছি" "আমার অপরাধ?" "লোক লাগিয়ে এক দম্পতিকে খুনের চেষ্টা" এই কথা শুনে বোধহয় অরুণাভর যাবতীয় মানসিক প্রতিরোধ ভেঙে গেল সে আর কোনো কথা বললো না কিন্তু অভিরূপবাবু বলতে থাকেন, "এ আপনি কি বলছেন অফিসার, আপনার অভিযোগের প্রমাণ?" "প্রমাণ অবশ্যই আছে মিস্টার ব্যানার্জী তাই তো আমরা অ্যারেস্ট করতে এসেছি, প্লিজ আমাদের কাজটা করতে দিন" অফিসারটি অরুণাভর হাতে হাতকড়া লাগিয়ে নিয়ে চললো বলাইবাহুল্য পিছনে শ্রীতমাদেবী কান্নাকাটি শুরু করেছেন, অভিরূপবাবু অবশ্য বিস্ময়ে এতটাই হতবাক হয়ে গেছেন যে কিছু বলা বা করার শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছেন। "আমাকে এখানে কেন এনেছেন জানতে পারি?" অরুণাভকে সোজা লালবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানে পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে ওনাকে সোজা একটা কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে সুপ্রতিম দাশগুপ্তকে দেখে আবার গলায় জোর এনে প্রশ্ন করে অরুণাভ। "গলা নামিয়ে কথা বলুন মিস্টার অরুণাভ ব্যানার্জী, আর আপনাকে এখানে কেন আনা হয়েছে তার কারণ নিশ্চয়ই আমাদের অফিসার আপনাকে বলেছে" শান্ত স্বরেই কথা বললেন সুপ্রতিম বাবু। "আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তার প্রমাণ কোথায়?" "প্রমাণ নাহয় কোর্টে দেবো" "কিন্তু ওর পরিবারের জানার অধিকার আছে যে কিসের ভিত্তিতে ওকে অ্যারেস্ট করে আনা হলো" নতুন স্বর শুনে সুপ্রতিমবাবু তাকিয়ে দেখেন দরজার বাইরে স্বর্ণেন্দু বাবু দাঁড়িয়ে আছেন এবং তার পিছনে অভিরূপবাবু। "অ্যাজ এক্সপেক্টেড" ব্যাঙ্গের সুরে বললেন সুপ্রতিমবাবু উদ্দেশ্য স্বর্ণেন্দু বাবু "জানতাম আসবে তবে এত তাড়াতাড়ি সেটা সত্যিই এক্সপেক্ট করিনি" স্বর্ণেন্দু বাবু এবং অভিরূপবাবু কেবিনের ভিতরে এলেন তার সাথে শ্রীতমাদেবী এবং মৌমিতা। স্বর্ণেন্দু বাবু আবার জিজ্ঞেস করেন, "কি প্রমাণের ভিত্তিতে অরুণাভকে অ্যারেস্ট করেছেন বলবেন কি মিস্টার দাশগুপ্ত?" বন্ধুর মুখে এই সম্বোধন শুনে একটু অবাক হলেন সুপ্রতিম বাবু, আর সুপ্রতিমবাবুর অবাক হবার ব্যাপারটা স্বর্ণেন্দু বাবু বুঝতে পারলেন তাই তিনি বললেন "এই মূহুর্তে আমি আমার ক্লায়েন্টের জন্য এসেছি" "উনি লোক লাগিয়ে দুজনকে খুনের চেষ্টা করেছেন" "তার প্রমাণটাই তো দেখতে চাইছি" সুপ্রতিমবাবু এবার তরুণ অফিসারটিকে ইশারা করতে সে বেরিয়ে গেল এবং একটু পরেই আরো দুজন কনস্টেবল সহ একজন বন্দীকে নিয়ে হাজির হলো, "এরা কারা মিস্টার দাশগুপ্ত?" সুপ্রতিমবাবু সরাসরি স্বর্ণেন্দু বাবুর কথার উত্তর না দিয়ে অরুণাভকে প্রশ্ন করলেন "এদের চিনতে পারছেন মিস্টার অরুণাভ?" "না, কে এরা?" স্বাভাবিক ভাবেই অরুণাভ অস্বীকার করে, কিন্তু সুপ্রতিমবাবু আবার জিজ্ঞেস করেন, "একটু ভালো করে দেখুন হয়তো চিনতে পারবেন" "আমি এদের চিনি না" দৃঢ় স্বরে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেও একটু দুর্বলতা থেকেই যায় অরুণাভর গলায়। কিন্তু এদের সাথে আপনার যে নিয়মিত কথোপকথন হয়, এটা আমরা জানি আপনার কলরেকর্ডস সেটা প্রমাণ করে দেবে, তা কি কথা হয় একটু বলবেন?" "মিস্টার দাশগুপ্ত এদের সঙ্গে যদি অরুণাভর কথোপকথন হয়েও থাকে তাহলেই বা কি প্রমাণ হয়?" "আপনাকে একটা কলের রেকর্ডিং শোনাচ্ছি, শুনুন" এইকথা বলে সুপ্রতিমবাবু একটা মোবাইল থেকে একটা অডিও প্লে করলেন, 'হ্যালো' 'স্যার কাজ হয়ে গেছে' 'সত্যি বলছো?' 'হ্যাঁ, স্যার দুজনকেই খতম করে দিয়েছে আমার ছেলেরা' 'গুড তোমাদের টাকা তোমরা পেয়ে যাবে' 'স্যার একটু বেশি লাগবে, আমাদের দুজন ছেলেই গুরুতর জখম হয়েছে ওদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে, একজনের আঘাত একটু বেশী‌ই গুরুতর, ওর একটা পা এর অনেকটা মাংস কুকুরে প্রায় ছিঁড়ে নিয়েছে' 'তার জন্য আমি কি করতে পারি, কাজটা তুমি নিয়েছিলে তার পেমেন্ট আমি করে দেবো আর মনে থাকে যেন এ বিষয়ে কেউ জানতে না পারে' "আপনার কিছু বলার আছে মিস্টার অরুণাভ?" রেকর্ডিং বন্ধ করে প্রশ্ন করেন সুপ্রতিম বাবু। "এই গলা আমার নয়" "এই গলাও আপনার, নম্বর‌ও আপনার আপনার কলরেকর্ডস সেই কথাই বলছে, আপনি আর কিছু বলবেন মিস্টার মূখার্জী?" স্বর্ণেন্দু বাবু চুপ করে অডিওটা শুনলেন তারপর শান্ত স্বরেই বললেন "আপনি নিশ্চয়ই কোর্টে তুলবেন কেসটা, তো যা বলার ওখানেই বলবো আপাতত এই নিন জামিনের কাগজ, আমার ক্লায়েন্টকে আর আপনি আটকে রাখতে পারবেন না মিস্টার দাশগুপ্ত" "খুনের মামলায় জামিন হয় না মিস্টার মূখার্জী এটা আপনার জানা উচিত" "কিন্তু খুন তো হয়নি, খুনের জন্য লোক পাঠানো হয়েছিল অন্তত আপনার কথা অনুযায়ী তাই, কিন্তু সেখানেও কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই এই যাদের আপনি ধরে এনেছেন এরা যে সত্যি বলছে তার তো কোনো প্রমাণ নেই আর আমার ক্লায়েন্ট কাউকে খুন করাতে চাইবেই বা কেন মোটিভ কি?" "মোটিভ? কিছুদিন আগে ওনার সাথে এক দম্পতির ঝামেলা হয় এবং সেটা আপনাদের সবার সামনে কথা কাটাকাটি হয় যদিও আপনার ক্লায়েন্ট‌ই ওই দম্পতিকে অপমানটা করে কিন্তু ওই দম্পতির সাথে আরো কয়েকজন স্থানীয় লোক ছিল তারা ওদের হয়ে উত্তরটা দেয় ফলে তখন কিছু করা সম্ভব হয়নি" "আপনি কাদের কথা বলছেন বলুন তো মিস্টার দাশগুপ্ত?" সুপ্রতিমবাবুর কথার মাঝখানে জিজ্ঞেস করেন অভিরূপবাবু, উত্তরে সুপ্রতিমবাবু মুখে কিছু না বলে দরজার দিকে তাকিয়ে ইশারা করেন, সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখেন আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান দরজায় আদিত্য দাঁড়িয়ে, এবার সে কেবিনের ভিতরে আসে আর তার পিছনে তানিয়ার হাত ধরে আসে পিয়ালী। "চিনতে পারছেন মিস্টার অরুণাভ?" সুপ্রতিমবাবুর গলায় আবার ব্যাঙ্গের সুর। "দেখলে বাবা আমি বলেছিলাম না তুমি এই ছেলেকে মাথায় তুলছো একদিন এই আমাদের ক্ষতি করবে" আদিত্যকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলে অরুণাভ। "অন.. মানে আদিত্য তুমি?" অভিরূপবাবু সত্যিই অবাক হয়েছেন আদিত্যকে এখানে দেখে, কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তরটা সুপ্রতিমবাবু দেন, "হ্যাঁ, মিস্টার ব্যানার্জী আদিত্য আর ওর ওয়াইফ পিয়ালীকে মারার জন্যই লোক পাঠিয়েছিল আপনার ছেলে নেহাত আদিত্য সেলফ্ ডিফেন্স জানে তাই পিয়ালী বেঁচে গেছে কিন্তু আদিত্যর চোট লেগেছে দেখবেন?" সুপ্রতিমবাবুর ইশারায় তরুণ অফিসারটি এগিয়ে এসে আদিত্যর শার্ট তুলে পেটের কাছের আঘাতের জায়গাটা দেখায় ওখানে এখন ব্যাণ্ডেজ লাগানো আছে। "আপনারা কি এখনো অপরাধীর সাথ দেবেন?" সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করেন "এরকম কোরো না স্বর্ণেন্দু একজন অপরাধীকে সাহায্য কোরো না আমি রিকোয়েস্ট করছি ও ছাড়া পেলে আবার অ্যাটাক করবে এটা বোঝো" "এই নিন জামিনের কাগজ আমার ক্লায়েন্টকে ছেড়ে দিন" সুপ্রতিমবাবুর দিকে না তাকিয়েই কাগজর তাড়া এগিয়ে দেন স্বর্ণেন্দু বাবু, সুপ্রতিম বাবু বোঝেন তার কথায় কোনো কাজ হবে না তিনিও গম্ভীর স্বরে বলেন "বেশ, তবে শহর ছেড়ে কোথাও যাওয়ার চেষ্টা যেন না করে এটা বুঝিয়ে দেবেন আপনার ক্লায়েন্টকে, বাকী কথা কোর্টে হবে"। এতক্ষণ আদিত্য এবং পিয়ালী দুজনেই চুপ করে ছিল একটাও কথা বলেনি কিন্তু হটাৎ শ্রীতমাদেবী ওদের সামনে এসে কাঁদতে আরম্ভ করলেন হাতজোড় করে বলতে শুরু করেন, "আদিত্য আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি কেসটা তুলে নাও" শ্রীতমাদেবীর এই কথায় সবাই হতবাক হয়ে যায় এমনকি আদিত্য‌ও সে এবার কথা বলে "আমার ওয়াইফ প্রেগনেন্ট আর ওকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে" "আমি কথা দিচ্ছি এরকম আর হবে না, আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দাও ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না, প্লিজ কেসটা তুলে নাও" "আপনি এটা কি বলছেন মিসেস ব্যানার্জী?" সুপ্রতিমবাবু প্রায় আর্তনাদ করে ওঠেন, অভিরূপবাবুও বলেন "অরু জামিন পেয়ে গেছে শ্রীতমা বাড়ি চলো"। কিন্তু শ্রীতমাদেবী কারো কথা শোনেন না তিনি আদিত্যর সামনে এসে এক‌ই কথা বলতে থাকেন "প্লিজ আদিত্য আমার পরিবারের বদনাম হবে, তুমি কেসটা তুলে নাও আমি হাতজোড় করছি তোমার পায়ে পড়ছি" আদিত্য এবার আর থাকতে পারে না শ্রীতমাদেবী ঝুঁকতে গেলে ওনাকে ধরে ফেলে তারপর সুপ্রতিমবাবুর দিক তাকিয়ে বলে "আমি কেসটা উইথড্র করে নিচ্ছি স্যার" সুপ্রতিমবাবু অবাক হলেও বোধহয় আদিত্যর মনের অবস্থা বুঝতে পারেন তাই কিছু বলেন না এমনকি যখন তানিয়া কিছু বলতে যায় তখন তাকেও বাঁধা দেন। "বেঁচে থাকো তুমি" শ্রীতমাদেবী আদিত্যকে একপ্রকার আশীর্বাদ করে নিজের ছেলে-বৌমাকে নিয়ে বেরিয়ে যান আদিত্য একটা চেয়ারের উপরে দুহাতে ভর দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অভিরূপবাবু তার কাছে আসেন, "থ্যাংক ইউ, কিন্তু কেন করলে এটা? কোর্টে গেলে তুমি জিততেও পারতে কেসটা" আদিত্য মাথা ঘুরিয়ে অভিরূপবাবুর দিকে তাকায় তার চোখের দিকে তাকিয়ে অভিরূপবাবুর বুকের ভিতরটা আবার ছ্যাঁৎ করে ওঠে আদিত্যর চোখে তিনি স্পষ্ট রাগ, এবং আগের থেকে কয়েকগুণ বেশি অভিমান দেখতে পান আদিত্য জবাব দেয়, "কর্নরা বরাবর‌ই নিজের মৃত্যু অবধারিত জেনেও কুন্তীকে তাঁর ছেলেদের জীবন দান করে, ধরে নিন না আমি এই সময়ের কর্ন যে এক কুন্তীকে আজ তার ছেলের সম্মান আর জীবন ফেরত দিলাম" "কর্ন‌ও কিন্তু কুন্তীর ছেলে ছিল" "সত্যি?" আদিত্যর ঠোঁটের কোণে একটা বিষণ্ণ হাসি দেখা যায় সে কথাটা সম্পূর্ণ করে "সেটা দ্বাপর যুগে এটা কলিযুগ, এখানে হয়তো কর্ন কুন্তীর ছেলে নয়, দ্বাপর যুগে জন্মের পরে কর্নকে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর হয়তো এ যুগে নদীতে ভাসমান অবস্থা থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল তবুও কর্নদের দেওয়াটাই অভ্যাস সেটা দ্বাপর হোক বা কলি" অভিরূপবাবুর বুকের অন্তঃস্থল থেকে একটা ডাক বেরিয়ে আসতে চাইছে "অনি" কিন্তু তাঁর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোলো না তিনি চুপ করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকেন। "আয়্যাম সরি সুপ্রতিম" মৌনতা ভেঙে কথা বলেন স্বর্ণেন্দু বাবু, "আয়্যাম সরি আমার কোনো উপায় ছিল না বিশ্বাস করো, দিদির সামনে আমি বাধ্য হয়েছি এটা করতে" "আপনি সবসময়েই বাধ্য থাকেন আঙ্কেল" সুপ্রতিমবাবুর আগে কথা বলে তানিয়া "আমি আপনার থেকে বয়সে ছোটো তাই হয়তো বলা উচিত হচ্ছে না কিন্তু না বলে থাকতে পারছি না আপনি আজ বাধ্য ছিলেন, অনিকেতদার মৃত্যুর পরেও বাধ্য ছিলেন কোনো সময়েই আপনার উপায় থাকে না" স্বর্ণেন্দু বাবুর কাছে এই কথার কোনো উত্তর নেই তিনি চুপ করে থাকেন আসলে তিনি ভালো করেই জানেন এই দুই বাবা মেয়ে ক্রাইমকে যেমন ঘৃণা করে তেমনি ভালোবাসে অনিকেতকে, ওর মৃত্যুটা এখনো এরা সহ্য করতে পারেনি। তানিয়া চুপ করলে মুখ খোলেন সুপ্রতিমবাবু, "মিস্টার মূখার্জী আজকের পর থেকে আপনার এবং আমার মধ্যে যেটুকু বন্ধুত্ব বাকি ছিল সেটাও শেষ হয়ে গেল এখন থেকে আমাদের মধ্যে শুধুই প্রফেশনাল রিলেশন থাকবে আর কিচ্ছু না" "সুপ্রতিম একটু বোঝার চেষ্টা করো" স্বর্ণেন্দু বাবু কিছু বলতে চান কিন্তু তার কথা মাঝখানে থামিয়ে সুপ্রতিম বাবু আবার বলতে শুরু করেন, "আপনি একবারও ভেবে দেখেছেন আপনার ক্লায়েন্ট যদি আবার ওই মেয়েটিকে মারতে লোক পাঠায় তখন কি হবে? সবসময় যে আদিত্য সেলফ্ ডিফেন্সে জিতবে এমনটা নয় আবার হয়তো আদিত্য কোথাও গেল তখন? ওই মেয়েটি এই অবস্থায় কি করবে ভেবে দেখেছেন? না ভাবেননি  অবশ্য সেসব ভাবার দরকার কি? কিন্তু এবার নিজের ক্লায়েন্টকে একটা কথা ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেবেন এই দুজনের গায়ে যদি একটা আঁচড়‌ও লাগে তাহলে তার জবাবটা আমি দেবো, কথাটা ভালো করে ওনার মাথায় ঢুকিয়ে দেবেন" স্বর্ণেন্দু বাবু আর অভিরূপবাবু কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলেন কিন্তু সুপ্রতিমবাবু পিছু ডাকলেন "মিস্টার ব্যানার্জী" অভিরূপবাবু পিছনে ফিরে তাকালে তিনি বলতে থাকেন, "আপনি একদিন আমার কাছে এসে বলেছিলেন যে অনিকেত হয়তো বেঁচে আছে কিন্তু কোনো কারণে আপনার থেকে দূরে সরে আছে আমি যেন তাকে খুঁজে বার করি কিন্তু আজ যা হলো তার পরে আমি যদি অনিকেতের খোঁজ‌ও পাই তাহলেও সেটা আপনাদের বলবো না আর ওকেও বলবো ফিরে না আসতে " "মিস্টার দাশগুপ্ত" অভিরূপবাবু কিছু বলতে চান কিন্তু পারেন না, সুপ্রতিমবাবু বলতে থাকেন, "আপনি এক‌ই ভুল দুবার করলেন সেদিনও করেছিলেন অনিকেতের সঙ্গে আর আজ করলেন আদিত্যর সঙ্গে। জানেন অনিকেত আমাকে কোনোদিন আপনাদের বাড়ির সম্বন্ধে কিছু বলেনি এমনকি ওর সঙ্গে কি কি হতো সেটাও না আমি যা কিছু জেনেছি সেটা অনেক পরে আপনাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে, আজ বুঝতে পারছি তারা ভুল বলেনি অনিকেত আপনার নিজের ছেলে নয়, হলে আপনি সেদিন ওর সঙ্গে ওই অন্যায়টা করতে পারতেন না সেদিন‌ও আপনি নিজের ছেলে অরুণাভর সাথ দিয়েছিলেন আর আজ‌ও দিলেন ওর অপরাধের কথা জেনেও দিলেন কারণ আজ‌ও কথাটা নিজের ছেলের সঙ্গে অন্য একজনের,সেদিন‌ও আপনার সামনে দুটো অপশন ছিল নিজের ছেলে আর অন্যের ছেলে আপনি নিজের ছেলেকে বেছেছিলেন আর আজ‌ও সেম অপশন ছিল নিজের ছেলে আর অন্যের ছেলে আজ‌ও আপনার সিদ্ধান্ত নিজের ছেলের পাশে থাকাই হলো" "অনি আমার নিজের ছেলে সুপ্রতিম বাবু" অনেক কষ্টে মুখ খোলেন অভিরূপবাবু, কিন্তু সুপ্রতিম বাবুর স্বরে অবিশ্বাস "আজকের পরেও সেটা বিশ্বাস করতে বলছেন?" অভিরূপবাবু আর কোনো কথা না বলে আদিত্যর দিকে তাকান সে তখনও চেয়ারে ভর দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তার পাশে স্বামীর একটা কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিয়ালী, কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে অভিরূপবাবু বেরিয়ে গেলেন। "আয়্যাম সরি স্যার" অভিরূপবাবুরা বেরিয়ে গেলে কথা বলে আদিত্য, "আয়্যাম সরি আপনার অনেকটা মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম তার সাথে আমার জন্য আপনাকে অপমানিত হতে হলো" "আপনি কেসটা উইথড্র করে নিলেন কেন?" সুপ্রতিমবাবুর কিছু বলার আগে তানিয়া জিজ্ঞেস করলো কিন্তু উত্তরটা সুপ্রতিমবাবু দিলেন, "ওর জায়গায় তুমি থাকলে তুমিও এক‌ই কাজ করতে" "মানে?" "কর্ন, কুন্তী, ছেলেদের জীবন দান এখনো বোঝোনি তানিয়া?" "আমি সত্যিই এখনও বুঝতে পারছি না" সুপ্রতিমবাবু এবার আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললেন "সত্যিটা তুই বলবি না আমি বলবো?" আদিত্য তাও কোনো কথা না বলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে সুপ্রতিমবাবু বলেন "'There are more things in heaven and Earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy', কি ভেবেছিলি বুঝতে পারবো না?" এবার আদিত্য কথা বলে "বোঝার জন্যই বলেছিলাম তবে বুঝতে এত দেরী করবেন সেটা আমি বুঝিনি" "কারণ আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে তুই এত বড়ো কথা আমার থেকে লুকিয়ে যাবি" "আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি কিন্তু.." আদিত্য কথাটা সম্পূর্ণ করলো না তার বদলে সোজা সুপ্রতিমবাবুর কাছে গিয়ে তার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো, "আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার, আমাকে ক্ষমা করে দিন" সুপ্রতিমবাবুও কোনো কথা না বলে আদিত্যকে দুহাতে ধরে তুলে জড়িয়ে ধরলেন দুজনের চোখেই জল উপস্থিত বাকী তিনজন অর্থাৎ তানিয়া, পিয়ালী এবং তরুণ অফিসারটি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে দেখছে, "আমি বুঝতে পারছি না ড্যাড, ও কে?" প্রশ্ন করে তানিয়া উত্তরে আদিত্য সুপ্রতিম বাবুকে ছেড়ে তার দিকে ফিরে বলে, "'There are more things in heaven and Earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy' : বেণীলস্করের মুণ্ডু" এটুকু শুনে তানিয়ার চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায় যেন সে অসম্ভব কিছু দেখে ফেলেছে, কিন্তু পাশ থেকে তরুণ অফিসারটি বলে "এই কোটেশানটা শেক্সপিয়ারের, বেণীলস্করের মুণ্ডু কথাটার মানে কি?" "এক্স্যাক্টলি, আদিত্য এসবের মানে কি?" পিয়ালীও জিজ্ঞেস করে, কিন্তু আদিত্য উত্তর দেবার আগেই তানিয়ার মুখে "অনিকেত দা" শুনে ওর দিকে তাকায় আর সঙ্গে সঙ্গে ও প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আদিত্যর উপরে, ওর গলা জড়িয়ে ধরে আদিত্য‌ও তানিয়ার মাথায় স্নেহভরা হাত বোলাতে থাকে।  একটু পরে তানিয়ার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাকী দুজনের প্রশ্নের উত্তর দেয় "তুমি তো লয়্যার পিয়ালী এটা তোমার অন্তত জানা উচিত" "কেন? লয়্যারের সাথে এটার কি সম্পর্ক?" "কোটেশানটা শেক্সপিয়ারের রচনার এটা ঠিক কিন্তু বিশ্ব সাহিত্যের অনেক জায়গায় এটার ব্যবহার আছে তেমনই একটা হলো বাংলা সাহিত্যের গল্প বেণীলস্করের মুণ্ডু এবং এই গল্পটা মোক্তার বা লয়্যার নিয়ে তাই বললাম" "কিন্তু এর সাথে আপনার আর স্যারের.." আবার প্রশ্ন করে তরুণ অফিসারটি উত্তর দেবার আগে সুপ্রতিমবাবু পরিচয় করিয়ে দেন, "অনিকেত ও হলো দিগন্ত রায়, খুবই সিনসিয়ার অফিসার আমার এক ব্যাচমেটের ছেলে। ওর আরও একটা পরিচয় আছে সেটা হলো ও তানিয়ার ফিঁয়ান্সে" "কনগ্ৰাচুলেশনস্ এণ্ড গুড লাক" দিগন্তের দিকে করমর্দন করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল আদিত্য, দুজনে হাত মেলানোর পরে আদিত্য জবাব দেয়, "ওটা একটা সংকেত বলতে পারো, সবাই এটা শেক্সপিয়ারের লাইন বলেই জানে কিন্তু বেণীলস্করের মুণ্ডুতেও যে এটার উল্লেখ আছে এটা সবাই জানে না এই আর কি"। "অনিকেত এবার আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দে" সুপ্রতিমবাবুর স্বরে আদিত্য ওরফে অনিকেত গম্ভীর হয়ে গেল সে জানে কি প্রশ্ন আসতে চলেছে তাই সে আগেই বলে "থাক না স্যার, পুরনো কথা আর মনে করে লাভ নেই" "লাভ লোকসান পরে ভাবা যাবে আপাতত বল গ্যাংটকে কি হয়েছিল? তুই কি সত্যিই খাদে পরে গিয়েছিলি? গেলে কিভাবে? নিজে থেকে যে পরিসনি এটা আমি খুব ভালো করে জানি" সুপ্রতিমবাবুর কথায় আদিত্য কোনো উত্তর দেয় না দেখে সুপ্রতিমবাবু।আবার বলেন "কি রে উত্তর দে" "থাক না স্যার ওসব কথা" "না, থাকবে না তুই বল" "আমি বলছি" হটাৎ পিয়ালী কথা বলে ওঠে সুপ্রতিম বাবুর দৃষ্টি সটান তার দিকে কিন্তু আদিত্য পিয়ালীকে ইশারা করে বলতে বারণ করলেও সুপ্রতিমবাবু এবার পিয়ালীকেই জিজ্ঞেস করেন "তুমি জানো?" "ওই বলেছে আমাকে" "বলো" আদিত্য আবার বারণ করতে যায় কিন্তু সুপ্রতিম বাবু ধমকের সুরে "অনিকেত একদম চুপ থাক" বলায় আদিত্য আর কিছু বলে না, পিয়ালী একে একে আদিত্যর মুখে শোনা গ্যংটকের ঘটনা সবটা বলে, সুপ্রতিমবাবুকে সবটা শুনে ওনার মুখ রাগে লাল হয়ে ওঠে, ওনার মনের অবস্থা বুঝতে কষ্ট হয় না আদিত্যর সে বলে, "শান্ত হন স্যার, এখন আর ওসব ভেবে লাভ নেই" "তার মানে তুই বলছিস ওরা এত বড়ো অপরাধ করেও বেঁচে যাবে?" "অপরাধ প্রমাণ করবেন কিভাবে? প্রমাণ কোথায়?" "তুই আছিস তো?" "আপনি বিশ্বাস করেন আমি সত্যি বলছি পিয়ালী বিশ্বাস করে, ধরে নিলাম তানিয়া এবং দিগন্ত‌ও বিশ্বাস করলো কিন্তু কোর্ট বিশ্বাস করবে কি? তারা তো প্রমাণ চাইবে" "কিন্তু." "আজ যা হলো তার পরেও আপনার মনে হয় আপনি ওদের শাস্তি দিতে পারবেন?" সুপ্রতিমবাবু বুঝতে পারেন আদিত্য ঠিক কথাই বলেছে আদিত্য বলে চলে, "তার থেকে এটাই ভালো ওনারা ওনাদের মতো থাকুক আর আমি আমার মতো থাকি, অনিকেত মরে গেছে স্যার এখন যে আছে সে আদিত্য আর এটাই থাক" "বেশ, কিন্তু ওরা এখন তোর পিছনে পরলো কেন?" "সেটা আমিও বুঝতে পারছি না" "আমি বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি" "কি?" "তোর বাবা মানে অভিরূপবাবু তোকে চিনে ফেলেছে, আমার কাছে এসেছিল তোকে খোঁজার জন্য" "তাতে কি?" "হয়তো উনি অরুণাভকে এই কথা বলে দিয়েছেন আর তাতে অরুণাভ ভয় পেয়ে গেছে যে যদি তুই সবাইকে সব বলে দিস তাই" "কিন্তু স্যার পিয়ালীর উপরে অ্যাটাক কেন? "সেটা আমারও মাথায় আসছে না" "তবে একটা কথা আপনাকে বলে রাখছি, আমার সঙ্গে যা করেছে তাতে আমি হয়তো কিছু বলবো না কিন্তু আবার যদি পিয়ালী আর আমার হবু সন্তানের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে আমি ওদের ছাড়বো না, আদিত্য বা অনিকেতের ভয়ঙ্করতম রূপটা তখন ওরা দেখতে পারবে"।
Parent