"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৪৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5338535.html#pid5338535

🕰️ Posted on September 2, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3873 words / 18 min read

Parent
                 দ্বিতীয় খণ্ড                  ৩৫তম পর্ব "পিয়ালী দিদিকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে গেছে?" বাচ্চাটি কোনোমতে কথা শেষ করলো, "হোয়াট?" আদিত্যর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, বাচ্চাটির বাবা আবার বলতে থাকে, "হ্যাঁ, ছেলে তো ভয়ে আমার কাছে এসে জানায় আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি তারা চলে গেছে তখন ছুটে শহরে বাবুর বাড়িতে যাই ওখানে গিয়ে শুনি তুমি এখানে তাই ছুটতে ছুটতে এখানে এলাম"। কথাটি শুনে আদিত্য ছুট লাগায় বাড়ির উদ্দেশ্যে পিছনে সুপ্রতিমবাবু, বাচ্চাটি এবং তার বাবা। বাড়িতে ঢুকতেই আদিত্য বুঝতে পারলো সত্যিই সর্বনাশ হয়ে গেছে ড্রয়িংরুমে চেয়ার ছাড়াও আরো কিছু জিনিস মেঝেতে পরে আছে, নীচের কার্পেটটা গুটিয়ে আছে, বাচ্চাটি কাঁদতে কাঁদতে এসে আদিত্যকে ছড়িয়ে ধরে বলতে থাকে "আমি চেষ্টা করেছিলাম দাদা কিন্তু পারিনি"। এইটুকু বাচ্চা যে পারবে না এতে আর আশ্চর্যের কি তবুও সে যে চেষ্টা করেছে এই অনেক সুপ্রতিমবাবু বাচ্চাটির বাবাকে বললেন "একবার ফোন তো করতে পারতেন ওকে?" "আমার ফোনে চার্জ ছিল না বন্ধ হয়ে গেছে" "আদিত্য রিল্যাক্স পিয়ালীর কিচ্ছু হবে না আমি পুরো শহরের ট্রাফিককে জানিয়ে দিচ্ছি প্রতিটা গাড়ি সার্চ করতে" "ওরা কি পিয়ালীকে বাঁচিয়ে রাখবে?" অপ্রকৃতিস্থের মতো বললো আদিত্য। "আদিত্য শক্ত হ, এইসময় তুই এরকম ভেঙে পরলে চলবে না" ধমকে ওঠেন সুপ্রতিম বাবু, তিনি তৎক্ষণাৎ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়ে দিলেন, বাচ্চাটি তখনও আদিত্যকে জড়িয়ে কাঁদছে আদিত্য ওর মাথায় হাত বুলিয়ে একটা ফার্স্ট এড বক্স এনে বাচ্চাটির বাবার হাতে দিয়ে বললো "ওর একটু চোট লেগেছে এই ফার্স্ট এড বক্স থেকে ব্যাণ্ডেজ করে দিন"। "দাদা তুমি আমার উপর রেগে নেই তো.. আমি সত্যিই চেষ্টা করেছিলাম" বাচ্চাটা আদিত্যকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো, আদিত্য ছেলেটির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে তার চোখের জল মুছিয়ে বললো, "একদম না, বাবা তোমাকে ওষুধ লাগিয়ে দেবে তারপর বাবার সাথে বাড়ি চলে যেও" তারপর উঠে বাচ্চাটির বাবাকে বললো "ওষুধ লাগানো হয়ে গেলে ওকে বাড়ি নিয়ে যাবেন"। "একমিনিট" সুপ্রতিমবাবু ফোন করতে গিয়েছিলেন এখন এসে বাচ্চাটিকে বললেন, "বাবু ওখানে কতজন ছিল একটু মনে করে বলতে পারবে?" বাচ্চাটি যা বললো তা মোটামুটি এরকম 'পাঁচ ছয় জন ছিল একটা গাড়ি করে এসেছিল, আদিত্য ফিরবে বলে পিয়ালী দরজা খোলাই রেখেছিল হঠাৎই লোকগুলো ঘরের ভিতরে ঢুকে পরে এবং পিয়ালীকে নিয়ে যেতে চায়, বাচ্চাটি বাধা দিতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি তখন ওরা পিয়ালীকে তুলে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়, পিয়ালীর মুখটা চেপে ধরেছিল একজন তাই সে চেঁচাতে পারেনি'। সবশুনে সুপ্রতিমবাবু বাচ্চাটি আর ওর বাবাকে যেতে দিলেন আদিত্য পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে দেখে সুপ্রতিমবাবু বললেন "অনি এইসময় এরকম থাকলে চলবে না, তুই যদি এরকম করিস তাহলে তো মুশকিল আমি হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে শহরের সব ট্রাফিক সিগন্যাল আর চেকপোস্ট গুলোতে খবর করে দিয়েছি প্রতিটা গাড়ির চেকিং করে তবেই ছাড়বে, কিন্তু কারা এইকাজ করতে পারে বলে তোর মনে হয়?" "শিওর ন‌ই তবে অনুমান.." এতটা বলেই আদিত্যকে থামতে হলো কারণ তখনই তার মোবাইল বেজে উঠলো, আদিত্য ফোনটা রিসিভ করে এবং স্পিকার অন করে ধরলো, "হ্যালো অনি" একটা পরিচিত মেয়ের কণ্ঠ শোনা গেল, "ব‌উকে হারিয়ে খুব ভেঙে পরেছো নিশ্চয়ই?" "পিয়ালী কোথায় মৌমিতা?" "আপাতত আমার কাছে" "ওকে কেন তুলে নিয়ে গেলে ও তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি" "করেছিল তো সেদিন আমাকে থ্রেট করলো, অপমান করলো তাছাড়া আগে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেস লড়ছিল মনে নেই?" "কি চাও তুমি?" "কি চাই? উমমম সেটা না হয় ফেস টু ফেস বসে বলবো, চলে এসো তোমাদের গ্ৰামের বাইরে যে বাসস্ট্যাণ্ডটা আছে ওখানে আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আরেকটা কথা একাই এসো আমি জানি এতক্ষণে তোমার সেই স্যার আইমিন সুপ্রতিম দাশগুপ্তর কাছে খবর চলে গেছে কিন্তু ফোর্স নিয়ে আসবে না তাহলে আর কোনোদিন এই মেয়েটিকে দেখতে পারবে না" "ঠিক আছে আসছি" "কুকরটাকে নিয়ে আসতে পারো যদি ওকে মরতে দেখতে চাও" "একাই আসছি" ফোনটা কাটতেই সুপ্রতিমবাবু রাগে ফেটে পরলেন "হাউ ডেয়ার শি ইজ, ও তোর থেকে কি চায় কিছু গেস করতে পারিস?" "আমাকে মারতে চাইবে আর কি? আমাকে যখন চিনতে পেরেছে তখন এটা তো করবেই" "ও তোকে চিনতে পারলো কিভাবে?" "জানিনা, আমি যাই স্যার" "যাই মানে? তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি যে একা যাবি?" "শুনলেন না কি বললো অন্য কাউকে নিলে ও পিয়ালীকে মেরে ফেলবে" "আমি শুনেছি, কিন্তু তোকে আমি একা যেতে দেবো না" "জেদ করবেন না স্যার" "জেদ তুই করছিস" "ওদের কাছে পিয়ালী আছে আমি রিস্ক নিতে পারবো না স্যার আমি বাঁচি কি মরি আই ডোন্ট কেয়ার কিন্তু পিয়ালীর বাঁচাটা জরুরী" "তুই এত বোকা হয়ে গেলি কবে থেকে?" সুপ্রতিমবাবু ধমকে ওঠেন তার প্রিয় শিষ্যকে " তোর কি মনে হয়, তুই একা যাবি ওরা তোকে মারবে আর পিয়ালীকে ছেড়ে দেবে?" "তাহলে কি করবো বলুন?" "কিছু একটা প্ল্যান করতে হবে যাতে পিয়ালী আর তুই দুজনেই বেঁচে ফিরতে পারিস" "আমার মাথা কাজ করছে না স্যার" "সেটা বললে তো হবে না" এইসময় বাইরে কিছু হ‌ইচ‌ই শোনা গেল আদিত্য এবং সুপ্রতিমবাবু দুজনেই বাইরে বেরিয়ে এলেন দেখলেন জনা কুড়ি গ্ৰামবাসী হাতে লাঠিসোটা নিয়ে জমা হয়েছে আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অখিলবাবু এবং মোড়লমশাই। "আপনারা?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আদিত্য, "এসব কি শুনছি আদিত্য? বৌমাকে নাকি কারা তুলে নিয়ে গেছে?" "আমাদের গাঁয়ের মেয়ে ব‌উএর গায়ে হাত, তুমি শুধু নামটা বলো আদিত্য দা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো" প্রায় প্রত্যেকেই উত্তেজিত হয়ে আছে আদিত্য ওদের কি বলবে ভেবে পেল না ওকে চুপ দেখে অখিলবাবু জিজ্ঞেস করলেন "আদিত্য কি হয়েছে বলো? বৌমাকে কারা ধরে নিয়ে গেছে আর কেন?" "অখিল জ্যেঠু আপনাকে বলেছিলাম মনে আছে যে আমার জীবনের একটা অতীত আছে, সেই অতীতের কালো অন্ধকার থেকে কয়েকজন উঠে এসেছে আবার ওরাই পিয়ালীকে নিয়ে গেছে" "কেন ওরা কি চায়?" "ওরা আদিত্যকে মারতে চায়" সুপ্রতিমবাবু উত্তরটা দিলেন "কেন, আদিত্যর সাথে তাদের কি শত্রুতা?" "আদিত্য, বাল্মীকি কে সবাই চেনে জানে কিন্তু দস্যু রত্নাকর কে কজন জানে? কজন মনে রেখেছে? তোমার জীবনে যদি কিছু থেকেও থাকে তো." অখিলবাবু বললেন কিন্তু তাকে থামতে হলো আদিত্য কথা শুরু করেছে, "আমি বাল্মীকিও ন‌ই আবার রত্নাকর‌ও ন‌ই, আমি আপনাদের থেকে আমার অতীত লুকিয়েছি এটা ঠিক কিন্তু সেটা এইজন্য নয় যে সেখানে কোনো আমার কোনো অপরাধ আছে বরং এইজন্য যে সেটা আমার জন্য কষ্টের" "আদিত্য আমি সেইভাবে কথাটা বলিনি, আমি বলতে চেয়েছি তুমি আগে কি ছিলে না ছিলে সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, তুমি এই গ্ৰামে আসার পরে যা করেছো সেটাই আমরা জানি, আর এখন তুমি আমাদের একজন এবং বৌমাও কাজেই তুমি আমাদের সবকিছু খুলে বলো" "আপাতত এটুকু জেনে রাখুন ওরা আগেও একবার ওকে মারতে চেয়েছিল কিন্তু এতদিন পরে বুঝতে পেরেছে যে ব্যার্থ হয়েছে তাই আবার চেষ্টা করছে, আর এবার ওরা পিয়ালীকে সামনে রেখেছে কারণ ওরা জানে পিয়ালী আদিত্যর দুর্বলতা তাই ওকে সামনে রেখে ওর উপরে আঘাত হানতে চায়" সুপ্রতিমবাবু আবার উত্তর দেন। "আঘাত করাচ্ছি, আদিত্য আমরা সবাই তোমার সাথে আছি" "ধন্যবাদ, তবে এখন আমাকে একাই যেতে হবে" "আদিত্য এটা তুমি কি বলছো?" "ঠিক বলছি, ওরা ফোন করেছিল বলেছে আমি একা না গেলে ওরা পিয়ালীকে মেরে ফেলবে" "কিন্তু" সুপ্রতিমবাবু আবার কিছু বলতে চান কিন্তু আদিত্য তাকে থামিয়ে বলতে শুরু করে, "একটা প্ল্যান আমার মাথায় এসেছে" "কি বল?" "আমি আগে যাবো, একাই যাবো। কিন্তু তারপর আপনি যাবেন যদি অসুবিধা না থাকে তো ফোর্স নিয়ে যাবেন, আমি নিজের জন্য ভাবিনা কিন্তু পিয়ালীকে বাঁচানো দরকার" "বোকার মতো কথা বলিস না তোকে খুঁজবো কিভাবে? তারজন্য লোকেশন ট্র্যাকার লাগবে" "তার দরকার নেই, আমার কাছে জীবন্ত ট্র্যাকার আছে" "জীবন্ত ট্র্যাকার?" 'ভৌ' হটাৎ বাদশার ডাকে সুপ্রতিমবাবু ওর দিকে তাকালেন, আদিত্য বাদশার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে ওর গায়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো " তোর উপরেই এখন সব আমাকে আর পিয়ালীকে খুঁজে বার করে স্যারকে নিয়ে আসতে হবে তোকে, পারবি তো?" 'ভৌ' পোষ্যটি যেন বললো 'পারবো, আমাকে পারতেই হবে' "কিন্তু আদিত্য ওরা যদি বৌমাকে মেরে ফেলে থাকে?" অখিলবাবু আবার বললেন, "তাহলে জগতের কোনো শক্তিই ওদেরকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না, আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ র‌ইলো হতে পারে যে পিয়ালী বেঁচে গেল কিন্তু আমি পারলাম না" "আদিত্য" "জ্যেঠু, যদি এরকম হয় তাহলে আপনারা পিয়ালীকে দেখবেন ওর আমি ছাড়া কেউ নেই আমার কিছু হয়ে গেলে ও পুরো একা হয়ে যাবে" "ফের যদি এরকম ফালতু কথা বলেছিস তো এক থাপ্পড় মারবো তোকে" সুপ্রতিম বাবু আবার ধমক দেন "না স্যার আগের বার বেঁচে গিয়েছিলাম বলে যে এবারেও বাঁচবো তার কোনো মানে নেই তবে আপনাকেও এক‌ই অনুরোধ করবো যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে ওকে দেখবেন" আদিত্য এরপর আবার বাদশার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "তোকেও এক‌ই কথা বলছি যদি আমার কিছু হয়ে যায়" 'ভৌ' সারমেয়টি একবার ডেকে আদিত্যর হাত ছাড়িয়ে দু পা পিছিয়ে গেল যেন সে রেগে গেছে তার মনিব এরকম কথা বলছে বলে, আদিত্য আবার ওকে টেনে আদর করতে করতে বলে "রাগ করিস না বাবু বোঝার চেষ্টা কর যদি, আমি না ফিরি তাহলে তোর উপরেও দায়িত্ব থাকবে পিয়ালীকে দেখাশোনা করার" বাদশা যেন মনিবের কথা বুঝছে তার চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছে সে আদিত্যর কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো আদিত্য আবার বলে "তবে পিয়ালীকে বাঁচাতে গেলেও তোর সাহায্য দরকার তুই ঠিক সময়ে সবাইকে নিয়ে আসবি তো?" 'ভৌ' সারমেয়টি যেন বললো 'আসবো, আমি আসবো'। নির্দিষ্ট বাসস্টপে গিয়ে একটু দাঁড়াতেই একটা টাটা সুমো ওর সামনে এসে দাঁড়ালো সেটা থেকে চারজন লোক নেমে প্রথমে আদিত্যকে ভালো করে সার্চ করলো প্রথমে তারপর ওর চোখদুটো ভালো করে বেঁধে গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট করলো। ঘড়ি ধরে কতক্ষণ সেটা আদিত্য ঠিক বুঝতে পারলো না তবে বেশকিছুক্ষণ পরে গাড়িটা থামলো তারপর ওকে টেনে নামিয়ে দুদিক থেকে দুজন ধরে কিছুটা হাঁটিয়ে নিয়ে যেতেই পরিচিত গলার স্বর শুনতে পেলো, "ওয়েলকাম অনি, ওয়েলকাম"। একজন এবার চোখদুটো খুলে দেওয়ায় দেখতেও পেলো কণ্ঠের অধিকারিনি কে, মৌমিতা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, এবার একটু আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল যা বুঝলো তাতে মনে হলো কোনো পুরনো ভাঙা কারখানা জাতীয় কোথাও নিয়ে এসেছে ওকে, মৌমিতা ছাড়াও আরো কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে। "কেউ তোদের ফলো করেনি তো?" এবার আরও একটা পরিচিত পুরুষ কণ্ঠ শুনে তাকিয়ে দেখে মৌমিতার ভাই তাকে যারা নিয়ে এসেছে তাদের প্রশ্ন করছে তাদেরই একজন উত্তর দিল, "না, দাদা কেউ ফলো করেনি" "তোরা শিওর তো?" "একদম" "পিয়ালী কোথায়?" সময় নষ্ট না করে শুরুতেই পিয়ালীর কথা জিজ্ঞেস করে আদিত্য, উত্তরে মৌমিতা আর মনোজ পরস্পরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আদিত্যর দিকে তাকালো ওদের দুজনের ঠোঁটেই শয়তানি হাসি লেগে আছে, আদিত্য আবার জিজ্ঞেস করে, "পিয়ালী কোথায়?" একজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক ওর কাছে এসে বলে, "তোর ব‌উ? আমরা ওর সাথে ফূর্তি করে মেরে ফেলেছি" এরপর যা ঘটলো সেটা চোখের পলক ফেলার মধ্যেই শুধু মট করে একটা শব্দ আর লোকটা কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে পরে গেল, এই দেখে আরেকজন এগিয়ে এলো কিন্তু এবার আদিত্যর শরীরটা কোমরের উপর থেকে একদিকে কাত হয়ে ওর একটা পা মাটি থেকে সোজা উপরে উঠে লোকটার চোয়ালে আঘাত করলো আর সেও অনুরূপ ভাবে পরে গেল। "তোমার ব‌উ বেঁচে আছে, এখনও পর্যন্ত" তাড়াতাড়ি কথাটা বললো মৌমিতা সঙ্গে সঙ্গে মনোজ‌ও বললো, "কিন্তু ফের যদি আমাদের কারো গায়ে হাত তুলিস তাহলে ও বাঁচবে না" "ও কোথায়?" উত্তরে মৌমিতা একজনকে ইশারা করায় সে চলে গেল একটু পরে মৌমিতা আদিত্যকে চোখ দিয়ে একটা দিকে দেখালো আদিত্য সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটু আগের লোকটা একটা হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে আসছে আর হুইলচেয়ারে বসা আছে পিয়ালী, ওর মাথাটা একদিকে কাত হয়ে আছে, আদিত্য তাড়াতাড়ি ওর দিকে এক পা বাড়াতেই লোকটা তাড়াতাড়ি একটা ছুরি বার করে পিয়ালীর গলায় ধরলো, আদিত্য একটু থেমে লোকটার দিকে তাকিয়ে দুটো হাত উপরে তুলে সমর্পণের ভঙ্গিতে আস্তে আস্তে পিয়ালীর কাছে গেল, "পিয়ালী" তাড়াতাড়ি পিয়ালীর মুখটা ধরে নিজের দিকে ফেরাতেই রাগে আদিত্যর পুরো শরীর জ্বলে উঠলো, পিয়ালীকে মারধর করা হয়েছে ওর দুই গালে কারো হাতের দাগ লাল হয়ে আছে এছাড়া ওর ঠোঁটের এক কোণে কিছুটা রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে। "পিয়ালী, পিয়ালী" আদিত্যর ডাকেই বোধহয় পিয়ালী আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে স্বামীকে দেখতে পেয়ে কেঁদে উঠলো, আদিত্য কি করবে কি বলবে ভেবে না পেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। "এ যে দেখছি টুরু লাভ" মনোজের ব্যাঙ্গাত্মক কটূক্তি শুনে ওর দিকে ফিরে বললো, "কে ওর গায়ে হাত দিয়েছে?" প্রশ্নটার সাথে আদিত্য মনোজের দিকে তেড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিয়ালীর কাছে দাঁড়ানো গুণ্ডাটা আবার পিয়ালীর গলায় ছুড়ি ধরে বললো, "একদম না তাহলে.." আদিত্য বাধ্য হয়ে থেমে গেল নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে সে মৌমিতা আর মনোজকে জিজ্ঞেস করলো, "কি চাই তোমাদের?" "প্রতিশোধ" একটা নতুন কণ্ঠস্বর জবাব দিল তবে কণ্ঠস্বরটা নতুন হলেও আদিত্যর কাছে অপরিচিত নয়, একটু আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালেন প্রীতমবাবু। প্রীতমবাবুর এখানে থাকাটা আদিত্যর কাছে অপ্রত্যাশিত হলেও সে খুব একটা অবাক হলো না সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো "আপনি?" "এমন ভাব করছিস যেন আমাকে চিনিস না? আমি তোর পিসেমশাই রে অনিকেত ব্যানার্জী" শেষের নামটা অবশ্য রাগ আর ঘৃণার সঙ্গেই উচ্চারণ করলেন প্রীতমবাবু। "আমার স্ত্রীকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?" "কারণ তাহলেই তোকে হাতের মুঠোয় পাবো তাই" "এবার তো আমি চলে এসেছি এবার ওকে ছেড়ে দিন" "আমাদের মুখ দেখে কি আমাদের গাণ্ডু মনে হয়? ওকে ছেড়ে দি‌ই আর তারপর তুই আমাদের সবার গাঁড় মারবি তাইতো?" "আপনার সাথে এত লোক আর আমি একা তবুও ভয় কেন?" "এখানে যারা আছে তারা যে তোর সামনে কিছুই নয় এটা আমি ভালো করেই জানি, তোর এই ব‌উ আমাদের ইনসিওরেন্স" "আমার থেকে কিসের প্রতিশোধ চান আপনি? আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি?" "আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছিলি, অভিরূপ ব্যানার্জীকে মারার জন্য আমার প্রতিটা প্ল্যানে তুই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিস আর বলছিস কিছু করিসনি?" কথাটা বলে প্রীতমবাবু আদিত্যর গালে একটা চড় মারলেন, এবার মনোজ এগিয়ে এসে "আমার গায়েও হাত তুলেছিলি" বলে আদিত্যর কলার ধরে পেটে পরপর কটা ঘুষি মারলো,আদিত্য জানে এখন তাকে মার খেতে হবে কারণ সে হাত তুললেই পিয়ালীর জীবন বিপদে পড়ে যাবে তাই সে চুপচাপ মার সহ্য করতে থাকে কিন্তু পিয়ালী স্বামীকে মার খেতে দেখে কেঁদে ওঠে "আদিত্য চলে যাও এখান থেকে, কেন এলে এখানে চলে যাও" কান্নার সঙ্গে পিয়ালীর কথাগুলো আদিত্য শুনলেও জবাব দেয় না। এবার আদিত্যর উপরে মনোজ সহ প্রায় সবাই চড়াও হয় লাথি ঘুষি চলতে থাকে, ওদিকে পিয়ালী কাঁদতে থাকে, "ছেড়ে দাও ওকে ছেড়ে দাও আদিত্য" কিন্তু ওর কথায় কারো ভ্রুক্ষেপ নেই তারা আদিত্যকে মারতে ব্যাস্ত এমনকি আদিত্য মাটিতে উবুড় হয়ে পরে যাওয়ার পরেও লাথি থামে না। কিছুক্ষণ চলার পর অবশ্য থামে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে আস্তে আস্তে অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ায়, ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখে প্রীতমবাবু ব্যাঙ্গোক্তি করেন "আরিব্বাস তোর তো ক‌ইমাছের জান রে অনিকেত, অরুণাভ আর মৌমিতা পাহাড় থেকে ফেলে দিল মরলি না আবার এখন এত মার খাওয়ার পরেও একা একাই নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ালি, শাবাশ" "এইজন্যই তোমাকে এত ভালো লাগে" আদিত্যর কাছে এসে ওর গালে নিজের গাল ঘষতে ঘষতে বলে মৌমিতা, "আচ্ছা অনি তুমি যখন বেঁচেই গিয়েছিলে তাহলে ফিরলে না কেন? তোমার আমার কাছে ফেরা উচিত ছিল। আগেকার দিনে জমিদাররা রক্ষিতা রাখতেন আমি না হয় তোমাকে সেরকমই হিসেবে রেখে দিতাম" কথাটা বলে মৌমিতা দু পা সরে গিয়ে হো হো করে হাসতে থাকে, রাগে আদিত্যর হাত নিশপিশ করতে থাকে কিন্তু সে নিরুপায়, তবুও সে বলে "তোমাকে আমি খারাপ মেয়ে ভেবছিলাম কিন্তু এখন দেখছি তুমি মানসিক ভাবে অসুস্থ তোমার মস্তিষ্কের চিকিৎসা দরকার, মৌমিতা" "কি করবো বলো আমি এরকমই আর তুমি এইরকম আমাকেই তো ভালোবেসেছিলে" "আমি তোমাকে কোনোদিন‌ও ভালোবাসিনি ওটা আমার মনের ভ্রম ছিল যেটা এখন কেটে গেছে" "এই মেয়েটিকে পেয়ে? ওর মধ্যে এমন কি আছে অনি যে তুমি আমাকে ভুলে গেলে? আর আমি? আমি তো তোমাকে চাই, আমার সব চাই অনি, টাকা, মান, সম্পত্তি, ক্ষমতা সব চাই। অরুণাভ আমার স্বামী হ্যাঁ, আমার মনে ওর জন্য একটা সফট কর্ণার আছে স্বীকার করছি, কিন্তু তোমাকেও আমার হয়ে থাকতে হবে"। "তুমি অরুণাভর সঙ্গে থাকার জন্য আমাকে চিট করেছিলে, এবং তারপর তুমি ওর সাথে ছিলে তোমাদের দুটো সন্তান আছে সব পেয়েছিলে তুমি কিন্তু নিজের দোষে কিচ্ছু রাখতে পারলে না এখন তোমার জায়গা হবে হয় জেলে আর না হয় পাগলা গারদে কারণ ওই যে বললাম তুমি মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং বিকৃত, আর তোমার এই সঙ্গীরা এদের জায়গা হবে জেলে" "তবে রে?" কথাটা বলে মনোজ আদিত্যকে একটা লাথি মারলো আর এটাই সে একটা মোক্ষম ভুল করলো কারণ আদিত্য এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল যে সে লাথি খেয়ে পিছনে গিয়ে করলো পিয়ালীর কাছে দাঁড়ানো গুণ্ডাটার গায়ে সে তখন পিয়ালীকে ছেড়ে একটু এগিয়ে এসে আদিত্যর মার খাওয়া দেখছিল, আদিত্য ওর গায়ে পরেই বিদ্যুৎ গতিতে ওর ছুরি ধরা হাতটা ধরে মুড়িয়ে ওর পিছনে গিয়ে হাতটা ভাজ করে লোকটার বুকেই ঢুকিয়ে দিল ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে লোকটা বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগই পেল না। আর এই ঘটনায় বাকিরাও মুহুর্তের জন্য হতচকিত হয়ে গেল তারা ভাবতেই পারেনি যে আদিত্য এইভাবে প্রত্যাঘাত করবে, আদিত্য‌ও পিয়ালীকে গার্ড করে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠোঁটে এখন হাসি।  প্রীতমবাবুররা হতচকিত হলেও এবার তারা পাল্টা আক্রমণ করলো তারা অর্থাৎ প্রীতমবাবুর আদেশে তার পোষা গুণ্ডাগুলো আদিত্যর দিকে এগিয়ে এলো কিন্তু ওরা আদিত্যর কাছে পৌঁছনোর আগেই পরপর কয়েকটা গুলি কয়েকজনের পায়ে এসে বিঁধলো এবং সঙ্গে সঙ্গেই তারা পায়ে হাত দিয়ে বসে পরলো আর বাদশা একটা গর্জন করে আর একজন গুণ্ডার উপরে ঝাঁপিয়ে পরলো দেখতে দেখতে সুপ্রতিমবাবু আর তার সঙ্গে আসা কিছু সংখ্যক পুলিশ এসে ঘিরে ধরলো। মুহুর্তের মধ্যে যেন একটা খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে গেল পুলিশের সাথে প্রীতমবাবু এবং তার পোষা গুণ্ডাদলের, আদিত্য অবশ্যই পুলিশের দলের হয়ে লড়ছে হটাৎ সে খেয়াল করলো এই সুযোগে প্রীতমবাবু চুপিচুপি পালানোর চেষ্টা করছেন।  "বাদশা" আদিত্যর ডাক শুনে এবং মনিবের হাতের ইশারা দেখে সে ছুটে গিয়ে প্রীতমবাবুর একটা পা কামড়ে ধরলো প্রীতমবাবু যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠলেন, স্যার" আদিত্যর ডাকে সুপ্রতিমবাবু আদিত্যর দিকে তাকিয়ে তার চোখের ইশারায় ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন এবং পরমুহূর্তেই তার হাতে একটা পিস্তল এসে গেল যেটা তিনি প্রীতমবাবুর অপর পা লক্ষ্য করে চালালেন এবং বলাইবাহুল্য প্রীতমবাবুও পায়ে হাত দিয়ে একটা আর্তনাদ করে বসে পরলেন তার আর পালানো হলো না।বাদশা তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে আদিত্যর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আদিত্য একটু রিল্যাক্স হয়ে বাদশার মাথায় আদরের হাত বুলিয়ে পিয়ালীর দিকে তাকাতেই তার বুকটা ধড়াশ করে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে সে ছুট দিল কিন্তু সে পিয়ালীর কাছে পৌঁছনোর আগেই মৌমিতা ওর কাছে গিয়ে ওর পেটে লাথি মারতে গেল কিন্তু পিয়ালী কোনোমতে তার শরীরের সর্বশক্তি একত্রিত করে হুইলচেয়ারটা পাশে ঘুরিয়ে দিল ফলে মৌমিতার লাথিটা হুইলচেয়ারের পাশে লাগলো ফলে সেটা উল্টে পরে গেল আর সেইসঙ্গে পিয়ালীও একটা আর্তনাদ করে পরে গেল তবুও মোমিতা থামলো না সে পিয়ালীর সামনে গিয়ে আবার তার পেটে লাথি মারতে গেল কিন্তু এবার আদিত্য সেখানে পৌঁছে ওর একটা হাত ধরে একটা হ্যাঁচকা টান মেরে সরিয়ে দিল আর একটা লেডি অফিসার এসে ওকে ধরে ফেললো, এবং এই লেডি অফিসারটি যে তানিয়া সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পিয়ালী তখনও কাতরাচ্ছে আদিত্য তাড়াতাড়ি পিয়ালীর কাছে বসলো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে দেখলো পিয়ালীর দু পায়ের মাঝ থেকে হলুদাভ রক্তমিশ্রিত তরল বের হচ্ছে, "পিয়ালী পিয়ালী" আদিত্য ভয়ার্ত কণ্ঠে ডেকে উঠলো। "অনি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যা এক্ষুনি" সুপ্রতিমবাবু প্রায় হুকুমের স্বরে বললেন আদিত্য আর দেরী না করে তখনই পিয়ালীকে দুহাতে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এল, পুলিশের একটা গাড়িতে উঠে বসলো ড্রাইভারকে আর বলতে হলো না সে তক্ষুনি গাড়িতে উঠে গাড়ি ছোটালো বাদশাও অবশ্য তার মনিবের সঙ্গে এলো, একটু পরেই মেইন রাস্তায় এলো তারা, পিয়ালী তখনও প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সেটা দেখেই আদিত্য ড্রাইভারকে বললো "একটা তাড়াতাড়ি চালান ভাই", শুনে ড্রাইভার গতি বাড়ালো একটা জিনিস পিয়ালী খেয়াল করলো যেখানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই জায়গাটা তাদের গ্ৰামের বাইরে খুব একটা দূরে নয়, তার বুঝতে অসুবিধা র‌ইলো না যে তাকে নিয়ে আসার সময় ইচ্ছা করে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আনা হয়েছিল। জায়গাটা চেনা হ‌ওয়ায় সহজেই সবথেকে কাছের হাসপাতালের কথা জানিয়ে সেখানে নিয়ে যেতে বললো, একটু পরেই হাসপাতালে পৌঁছে কোনোমতে একটা স্ট্রেচার এনে তাতে পিয়ালীকে তুলে এমার্জেন্সীর ভিতরে নিয়ে গেল, ওখানে উপস্থিত ডাক্তাররা পিয়ালীর অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভিতরে নিয়ে গেল। একটু পরেই সুপ্রতিমবাবু, তানিয়াও চলে এলো অবশ্যই ড্রাইভারের থেকে জেনে নিয়েছেন তারা, এখানে এসে আদিত্যকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, কথার মাঝে সুপ্রতিমবাবু জানান প্রীতমবাবু সহ প্রত্যেকেকেই গ্ৰেফতার করা হয়েছে, সুপ্রতিমবাবু আদিত্যকে আরও একটা কথা বললো গ্ৰামে জানিয়ে দিতে ওনারা সুপ্রতিম বাবুর সঙ্গে আসার জেদ করছিল অনেক কষ্টে তাদের শান্ত করে এসেছেন" ওনার কথা শুনে আদিত্য অখিলবাবু কে ফোন করে সব জানায় এমনকি পিয়ালীর অবস্থার কথাও জানায়, অখিলবাবু হাসপাতালের ঠিকানা জেনে নিয়ে বলেন তিনি আসছেন। ওটির ভিতরে পিয়ালীর ট্রিটমেন্ট চলছে আর বাইরে আদিত্য সহ বাকিরা পায়চারী করছে, সুপ্রতিমবাবু মাঝে একবার বললেন গিয়ে সে যাতে তার আঘাতের জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে আসতে কিন্তু আদিত্য রাজী হলো না সে পিয়ালীর সুস্থতা নিয়ে নিশ্চিন্ত না হয়ে কোথাও যেতে রাজী নয়। অনেকক্ষণ পরে ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এলেন কিন্তু তার মুখ দেখেই সবাই বুঝতে পারলো খবর ভালো না, "আমার ওয়াইফ কেমন আছেন ডাক্তার?" জিজ্ঞেস করলো আদিত্য "মিস্টার ব্যানার্জী,  আয়্যাম ভেরী সরি টু সে অবস্থা সত্যিই খুব ক্রিটিক্যাল, আমরা আমাদের বেস্ট চেষ্টা করছি তবে.." "তবে?" "মিস্টার ব্যানার্জী আমরা ডাক্তাররা সবসময় চেষ্টা করি যাতে সব পেশেন্টকেই সুস্থ করে বাঁচিয়ে তুলতে পারি, কিন্তু সবসময় আমরা যে সফল হ‌ই না" "আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর?" "অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল তার উপরে ওনার পেটে বাচ্চা রয়েছে, এই অবস্থায় দুজনের প্রাণ‌ই সঙ্কটজনক" এতটা বলে ডাক্তার একটু থামলেন আদিত্য বুঝলো তার আরও কিছু বলার বাকী আছে তাই সে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো, ডাক্তার আবার শুরু করলেন "আমরা ভয় পাচ্ছি যে হয়তো আমরা আপনার ওয়াইফের যা অবস্থা তাতে ওনার সাথে না ওনার বাচ্চাটাও...তাই বলছিলাম আপনি যদি চান তাহলে আমরা আগে সিজার করে বাচ্চাটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি" "আর ইউ কিডিং উইথ মি?" আদিত্য যে রেগে গেছে সেটা ওর গলার স্বরেই বোঝা গেল। "এ আপনি কি বলছেন ডক্টর?" সুপ্রতিমবাবু আদিত্যকে থামিয়ে কথা বললেন "আপনি একজন ডাক্তার হয়ে এরকম কথা বলছেন?" "দেখুন মা এবং বেবী দুজনেই যদি সুস্থ এবং বেঁচে যায় তাহলে বিশ্বাস করুন আমরাও কম আনন্দিত হবো না কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা সত্যিই কঠিন" "কিন্তু ডক্টর আপনারা তো ট্রাই করবেন" এবার কথা বললো তানিয়া, সে আদিত্যকে ধরে রেখেছে "অবশ্যই আমরা চেষ্টা করবো, কিন্তু যদি সিচুয়েশন আমাদের হাতের বাইরে চলে যায় তাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে আপনি যদি চান তাহলে আমরা আপনার সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি" "আর আমার ওয়াইফ?" "ওনার অবস্থা সত্যিই আশঙ্কাজনক, তাই.." "আপনি একজন হাজবেন্ড এবং বাবার কাছে তার স্ত্রী এবং বেবীর মধ্যে যে কোনো একজনকে বেছে নিতে বলছেন, রিয়েলি ডক্টর?" আদিত্য আবার কথা বলে। "আয়্যাম সরি,কিন্তু আমি আপনাকে পরিস্থিতিটা জানালাম, আপনার ওয়াইফ বলছিলেন যাতে আমরা আপনার বেবীকে বাঁচাই তবুও আমরা আপনার ডিসিশনটা জানতে এসেছি" "ইনি কি বলছেন স্যার? আমি কিভাবে.." "ডক্টর কোনো চান্স নেই?" আদিত্যকে সান্ত্বনা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন সুপ্রতিমবাবু। "আমার ডাক্তারী জীবনে আমি বেশ কয়েকটা কেস এমন দেখেছি যেটাকে মীরাকল ছাড়া আর কিছু বলা যায় না, আমি মনেপ্রাণে চাই এক্ষেত্রেও সেরকম কিছু হোক, কিন্তু" "সেভ মাই ওয়াইফ ডক্টর" নিজের কান্নাটাকে চেপে কথা বলে আদিত্য। "আপনি ভেবে বলছেন তো কারণ যদি আমরা আপনার ওয়াইফ এবং বাচ্চাটিকে বাঁচাতে সফল হ‌ই তাহলে তো ভালোই কিন্তু যদি সেটা না হয় তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আর কোনোদিন সে মা হতে পারবে না" "সেভ মাই ওয়াইফ" ডাক্তার বোধহয় বুঝলো আদিত্যর মনের অবস্থাটা তিনি আদিত্যর কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন "আপনাকে শক্ত হতে হবে তবে বিশ্বাস করুন আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো যাতে মা এবং বেবী দুজনকেই সুস্থ অবস্থায় বাঁচিয়ে তুলতে পারি, আরেকটা কথা অনেকসময় ওষুধের থেকে প্রার্থনা বেশী কাজ দেয় সো লেটস্ প্রে" "প্রার্থনার কাজটা আমাদের উপরে ছেড়ে দিন ডক্টর আপনি আপনার কাজটা করুন আমরা মা এবং বেবী দুজনকেই সুস্থ এবং জীবিত চাই" নতুন গম্ভীর কণ্ঠস্বরে ডাক্তার সহ সবাই চমকে উঠলো সবাই তাকিয়ে দেখে অভিরূপবাবু উপস্থিত হয়েছেন সঙ্গে শ্রীতমাদেবী, স্বর্ণেন্দু বাবু, সুদেষ্ণা দেবী, সুনন্দা, মৈনাক, অখিলবাবু এবং পিউ। একসাথে সবাইকে দেখে অবাক হবারই কথা, ডাক্তার‌ও হয়েছিলেন তবে তিনি যে অভিরূপবাবুকে চেনেন সেটা তার পরের কথাতেই বোঝা গেল, "মিস্টার ব্যানার্জী আপনি এখানে?" "ডক্টর, আমি এখানে কেন সেকথা পর হবে আগে যেটা বললাম আমার মা এবং বেবী দুজনকেই চাই, আপনি কি করবেন আমি জানিনা যদি অন্য কারো গাইডেন্স এবং হেল্পের দরকার হয় তো বলুন আমি শহরের বেস্ট ডাক্তারদের এখানে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করছি" "মিস্টার ব্যানার্জী আপনি তো আমাকে.." "আমি আপনাকে ইনসাল্ট করছি না ডক্টর আপনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত পরিচয় না থাকলেও আপনার দক্ষতার উপরে আমি বিশ্বাস করছি" "মিস্টার ব্যানার্জী আমি ওনাকেও বলেছি আপনাকেও আশ্বস্ত করছি আমরা আমাদের বেস্টটা দেবো, সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, তবে কখনো কখনো ডাক্তারের হাতযশের থেকে বেশী কিছু দরকার হয় পেশেন্টের" একথা বলে ডাক্তার আবার ওটির ভিতরে চলে গেলেন। অভিরূপবাবু এখানে আসায় সুপ্রতিমবাবু তানিয়া এবং আদিত্য খুবই অবাক হয়েছে তিনজনেই কিছু না বলে চুপ করে অভিরূপবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকে, আর অভিরূপবাবু আদিত্যর কাছে এসে বললেন, "আমাদের পরিবারে সবসময়েই বাড়ির মেয়ে ব‌উদের কথা আগে চিন্তা করা হয়, নিজের বাড়ি নিজের পরিবারের থেকে এত বছর দূরে থাকার পরেও যে তুমি তোমার পারিবারিক শিক্ষা ভুলে যাওনি সেটা দেখে ভালো লাগলো"। "মিস্টার ব্যানার্জী আপনারা এখানে?" সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আদিত্য যদিও চুপ করে র‌ইলেন কিন্তু সুপ্রতিমবাবুর প্রশ্নের উত্তরটা স্বর্ণেন্দু বাবু দিলেন, "জামাইবাবুরা গ্ৰামে এলে প্রায় প্রতিদিন রাতেই আমি ফোনে কথা বলি, আজ‌ও সেরকমই ফোন করেছিলাম আর তখন দিদি আমাকে ওদের উপরে অ্যাটাকের কথাটা জানায় আর তার পরেই আমি গ্ৰামে আসার জন্য র‌ওনা দিয়ে দি‌ই, গ্ৰামে ঢুকে এক জায়গায় জটলা দেখে সেখানে জিজ্ঞেস করে পিয়ালীর কিডন্যাপের কথাটা জানতে পারি আর তখন জামাইবাবুকে গিয়ে জানাই তারপর আর কি জামাইবাবু অখিলবাবুর সঙ্গে কথা বলে সবটা জানেন আর তারপর এখানে আসি" "কিন্তু পিয়ালীর এই অবস্থার জন্য কে দায়ী সেটা নিশ্চয়ই অখিলবাবু বলেননি আসলে উনি জানেননা তাই বলেননি" "কে দায়ী? কে করেছে এটা?" গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করলেন অভিরূপবাবু। "বিশ্বাস করবেন তো আমার কথা? তাহলে শুনুন পিয়ালীর এই অবস্থার জন্য দায়ী আপনার বোনের হাজবেন্ড প্রীতমবাবু, এবং আপনার ছেলে অরুণাভর স্ত্রী মৌমিতা এবং তার ভাই মনোজ। এরাই পিয়ালীকে কিডন্যাপ করে অনিকে ডেকে পাঠিয়েছিল আর যখন আমরা পৌঁছাই তখন আর কোনো রাস্তা নেই বুঝে পিয়ালীকে মাটিতে ফেলে দিয়ে ওর পেটে লাথি মারতে গিয়েছিল সে"।
Parent