"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৪৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5344191.html#pid5344191

🕰️ Posted on September 2, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2658 words / 12 min read

Parent
                 দ্বিতীয় খণ্ড                  ৩৭তম পর্ব অতীন্দ্র বাবু ঘরটা দেখিয়ে দিলেন আদিত্য ওনাকে ছেড়ে সেই ঘরের দরজার সামনে গিয়ে একটু দাঁড়ালো অবশ্য যাওয়ার আগে আয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে নিয়েছে। দরজার সামনে একটু দাঁড়িয়ে যেন মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে নিল ভয়টা অভশ্য তার নিজের জন্য নয় তার ভয় তাকে দেখে যদি উমাদেবী আবার উত্তেজিত হয়ে বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন সেটার, তবুও সে ঘরের ভিতর ঢুকলো। ঘরে ঢুকে দেখে উমাদেবী জানালার একপাশে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন, দরজাটা তার পিছন দিকে থাকায় তিনি যেমন দেখতে পেলেন না ঘরে কে ঢুকেছে তেমনি আদিত্য দেখতে পেলনা তার মুখ। নি দেখলেও ঘরে কেউ ঢোকার আওয়াজ পেলেন উমাদেবী কিন্তু তবুও দরজার দিকে না তাকিয়েই বললেন, "বললাম না আমার খেতে ইচ্ছা করছে না আমি খাবো না তোমরা শুনছো না কেন?" আদিত্য একটু ভয়ে ভয়েই জবাব দিল, "যখন তোমার কথা কেউ শুনছে না তখন তোমার উচিত তাদের কথা শোনা" গলার আওয়াজ চিনতে পেরে উমাদেবী ফিরে তাকালেন আর তাকানো মাত্র আদিত্য চমকে উঠলো এ কাকে দেখছে সে? এই কি সেই করুণাময়ী উমাদেবী যার স্নেহ মমতার পরশ সে দীর্ঘ আটবছর পেয়েছিল কোথায় দেবীর মতো স্নেহ মমতায় ভরা মুখ কিন্তু এখন চোখের নীচে কালি পরেছে মুখটাও শুকনো লাগছে, শরীর যে যথেষ্ট অসুস্থ এটা আর বলে দিতে হয় না। "তুমি এখানে?" গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করেন উমাদেবী কিন্তু আদিত্য এতটাই হতবাক হয়ে গেছে যে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না, উমাদেবী আবার বলেন, "তুমি এখানে কি করছো? কে নিয়ে এসেছে তোমাকে এখানে চলে যাও, চলে যাও এক্ষুনি" "চলে যাবো কিন্তু আগে তোমাকে খেতে হবে" অতিকষ্টে সাহস সঞ্চয় করে কথা বললো আদিত্য। "আমি খাবো না" "খেতে তো তোমাকে হবেই" আদিত্যর সাহস ক্রমাগত বাড়তে থাকে। "তোমার কথায় নাকি?" "ঠিক তাই, তুমি তো ভালো করেই জানো আমার কথা না শুনলে কিভাবে শোনাতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি" "তোমার কথায় নাকি? ভুলে যেও না তুমি আমার ছেলে ন‌ও" "আমি ভুলিনি, আমি তোমার ছেলে না হতে পারি কিন্তু তুমি আমার মা আর একথা আমি আগেও বলেছি" একথা বলে আদিত্য তার কাছে এগিয়ে গেল, কিন্তু উমাদেবী "আমি কিন্তু খাবোনা বলছি, কি হলো শুনছো কোথায় তুমি?" বলে অতীন্দ্র বাবুকে ডাকতে থাকেন কিন্তু কেউ ঘরের ভিতরে এলো না, আদিত্য এক গ্ৰাস নিয়ে উমাদেবীর মুখের সামনে ধরলো কিন্তু উমাদেবী সেটা না খেয়ে বললেন, "কেন এরকম করছিস?" আদিত্য খেয়াল করলো উমাদেবী এতক্ষণ তুমি করে কথা বলছিলেন এবং এখন তুই করে বলছেন কিন্তু দুটো ক্ষেত্রেই তার গলার স্বরে এক অন্য রকম ভাব আছে উমাদেবী বলে চললেন, "আমি মরে গেলে তোর কি?" "আমার আবার কি? কিছুই না কিন্তু স্যারের লটারি লেগে যাবে" আদিত্যর দুষ্টুবুদ্ধিটা উমাদেবী ধরতে পারলেন না তিনি একটু অবাক হয়ে বললেন, "মানে ওনার আবার কি হবে?" "হবে না? ধরো তুমি মরে গেলে এদিকে তোমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কি দাঁড়ালো অত বড়ো বাড়িতে উনি একা এখন যদি আবার কাউকে বিয়ে করে আনেন তুমি কিছু করতে পারবে?" "উনি বিয়ে করবে? এ তুই কি বলছিস?" "ঠিকই বলছি, এই তো একটু আগেই দেখলাম ফোনে কার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছেন" "তবে রে, বুড়োর তো বেশ শখ জেগেছে দেখছি" "তবেই বলো এরকম সুন্দরী ব‌উ থাকতে বাইরের দিকে চোখ দিচ্ছে" "দেখাচ্ছি মজা" বলে উমাদেবী দরজার দিকে এক পা এগোতেই বাধা দেয় সে বলে, "করছো কি এভাবে কি তুমি আটকাতে পারবে?" "তাহলে কি করি বলতো?" "সব‌ই তো তোমার দোষ" "মানে?" "এই দেখো না খেয়ে না ঘুমিয়ে নিজের শরীরটাকে খারাপ করছো এটা তোমার দোষ না?" "তাতে কি আমি মরে গিয়ে ভূত হয়ে বুড়োর ঘাড়ে চাপবো" "ভূতেদের শরীর থাকে না তুমি চাপলেও ওনার কিস্যু হবে না আমার কথা যদি শোনো তাহলে বলি বেঁচে থেকে বুড়োর ঘাড়ে চেপে থাকো যাতে তোমার জায়গা কাউকে দিতে না পারেন" উমাদেবী কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু ভাবলেন তারপর বললেন "ঠিক বলেছিস, আমি বেঁচে থেকেই বুড়োর ঘাড়ে চেপে থাকবো" "একদম, নাও এবার খেয়ে নাও" এবার আর উমাদেবী আদিত্যকে বাধা দিলেন না তার হাতে খেতে লাগলেন একটু পরে তিনি বললেন, "বলছিস আমি তোর মা আর আমার একটা থাপ্পড়ে দেখা না করেই ছেড়ে চলে গেলি? এতটাই রাগ আমার উপরে?" "আমি তোমার থাপ্পড়ের জন্য যাইনি" "তাহলে?" "যে চোখে আটটা বছর ভালোবাসা, স্নেহ দেখেছিলাম সেই চোখে আমি ঘৃণা দেখতে চাইনি সেই শক্তি আমার ছিল না তাই চলে গিয়েছিলাম" "তাহলে আজ কেন ফিরে এলি?" "তুমি অসুস্থ জানার পর আর থাকতে পারিনি" উমাদেবী আর কোনো কথা না বলে আদিত্যকে বুকে টেনে নিলেন কাঁদতে কাঁদতে বললেন "আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাবি না তো" "না যাবো না" কথায় কথায় প্রায় খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল অল্প‌ই বাকী ছিল কিন্তু উমাদেবী আর খেতে চাইছিলেন না তখন আদিত্য তাকে বললো "খেতে তো হবেই, খেয়ে নাও তারপর একটা সারপ্রাইজ আছে" "কি সারপ্রাইজ?" "আগে পুরোটা খাবে তারপর ওষুধ খাবে তারপর" এরপর উমাদেবী চুপচাপ খেয়ে নিলেন তারপর আদিত্য আয়াটিকে ডেকে ওষুধ খাইয়ে দিলে, এবার উমাদেবী আদিত্যর কাছে আবার সারপ্রাইজের কথা জিজ্ঞেস করলে আদিত্য পিয়ালীকে ঘরে ডেকে আনে তারপর উমাদেবীকে বলে, "মা ও পিয়ালী আর ওর কোলে শ্রীমা" উমাদেবীকে আর কিছু বলতে হয় না তিনি পিয়ালীকে কাছে টেনে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন এবং নিজের হাতে থাকা একজোড়া সোনার চুরি খুলে ওর হাতে পরিয়ে দেন এবং তারপর নিজের গলায় থাকা আরেকটা সোনার চেন খুলে বলেন "এটা আমার শ্রীমার জন্য এটা সে পরবে" অতীন্দ্র বাবু, প্রীতি আর নীলাদ্রি ঘরে ঢুকে উমাদেবীকে হাসতে দেখে অবাক হয়ে যায় যেটা তারা এত দিন ধরে করতে পারছে না সেটা আদিত্য কয়েক মিনিটেই করে দিয়েছে, অতীন্দ্র বাবু ডাক দেন "উমা?" উমাদেবী স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন "খুব শখ না তোমার? কিন্তু আমি অত সহজে নিজের জায়গা ছাড়বো না আর এখন তো আমার ছেলে ব‌উমা আর নাতনী‌ও এসে গেছে" অতীন্দ্র বাবু কিছু না বুঝে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান আদিত্য উমাদেবীর কাছে ব্যাপারটা স্বীকার করে যে সে অতীন্দ্র বাবুর সম্পর্কে যেটা একটু আগে বলেছে সেটা মিথ্যা ছিল" শুনে উমাদেবী বলেন "আমি জানি কিন্তু তবুও আমি ওনাকে জানিয়ে রাখলাম যে আমি নিজের জায়গা ছাড়বো না" তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন "আমি যত তাড়াতাড়ি ছেলে বৌমা আর নাতনীকে নিয়ে আমার বাড়িতে ফিরতে চাই তুমি ব্যাবস্থা করো" "মা..আমি নর্থবেঙ্গলে যেতে পারবো না" আদিত্যর কথা শুনে সবার মুখ আবার ছোটো হয়ে যায় উমাদেবী কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন "বুঝেছি আমার উপরে এখনো রেগে আছিস আর তাছাড়া ওনার মুখে শুনেছিলাম তোর নিজের বাবা মা এখানে থাকে তাই আর আমাদের সাথে যাবি না তাইতো? আমি তো এখন পর" আদিত্য উমাদেবীর চোখের জল মুছিয়ে বলে, "আমার বাবা মা এখানে থাকে এটা ঠিক কিন্তু আমার না যেতে চাওয়ার পিছনে অন্য কারণ আছে" "কি কারণ?" "মা, তার আগে একটা কথা আমি আবার বলছি শুনে রাখো আমার কাছে আমার মা আর তোমার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই আর কখনো বলবে না যে আমি তোমাকে পর ভাবি তুমিও আমার মা" "তাহলে যাবি না কেন?" "এখানে আসার পরে আরও একজন ভালো মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয় অবশ্যই ওই বাদশার জন্য, ওই ভালো মানুষটি আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান সেখানে থাকতে দেন। মারা যাওয়ার আগে উনি আমাকে বিশ্বাস করে একটা কাজের দায়িত্ব দিয়ে যান আর আমিও ওনাকে কথা দি‌ই যে আমি আজীবন ওনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো, আর তুমি তো জানো আমি কাউকে কোনো কথা দিলে সেটা রাখি" "তার মানে আমি তোর সাথে থাকতে পারবো না?" "তা কেন? আপাত যতদিন না পুরো সুস্থ হচ্ছো ততদিন আমার কাছে থাকবে আর তারপর যদি নর্থবেঙ্গলে ফিরেও যাও তখনও যখনই তোমার আমাদের দেখতে ইচ্ছা করবে বলবে আমরা চলে যাবো, আমার‌ই বলতে ভুল হয়েছে আমি ওখানে পার্মানেন্টলি থাকতে পারবো না কিন্তু যাবো তো অবশ্যই ওই জায়গা আমার বড়ো প্রিয়, কতদিন ওই পাহাড় ওই জঙ্গল দেখি না" "তুই সত্যি বলছিস তুই যাবি?" "যদি তুমি তাড়িয়ে না দাও, দেবে না তো তাড়িয়ে?" উমাদেবী আবার আদিত্যকে বুকে টেনে নিলেন। সত্যি সত্যিই উমাদেবীকে নিজের কাছে এনে রাখলো আদিত্য অভিরূপবাবু আর শ্রীতমাদেবীর সাথে অতীন্দ্র বাবু আর উমাদেবীর পরিচয় করিয়ে দিল এবং এটাও বললো যে অতীন্দ্র বাবুই তাকে বাঁচিয়েছিলেন, অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী দুজনেই কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না। উমাদেবী সুস্থ হলে তারা আবার নর্থবেঙ্গলে ফিরে গেলেন  এবার আদিত্য আর পিয়ালীও সঙ্গে গেল দুজনেই খুশী আদিত্য খুশী আবার তার প্রিয় পাহাড়, জঙ্গল দেখবে বলে আর পিয়ালী খুশী আবার তার জন্মশহরে ফিরছে বলে। সিংহ রায় প্যালেসে ঢোকার আগে উমাদেবী পিয়ালীকে বাড়ির বৌএর মতো বরণ করে নিলেন। আদিত্য গিয়ে একবার এখানের সেই হরি কাকার সঙ্গে দেখা করে এলো এছাড়া বাড়ির অন্যান্যরা তো আছেই। অতীন্দ্র বাবুরা ফিরেছে শুনে সুবিমল বাবুরাও তিনজন দেখা করতে এলেন, সবাই তখন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিল বহুদিন পরে সুবিমল বাবু তার প্রাণ রক্ষাকারী আদিত্যকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন চারুলতা দেবীও আদিত্যকে ধন্যবাদ দিলেন সাথে ঝর সাথে যে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন তার জন্য ক্ষমাও চাইলেন, আদিত্য খেয়াল করলো তাদের পিছনে অদ্রিজা একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে দেখছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না। "কেমন আছেন মিস চক্রবর্তী? নাকি মিসেস বলতে হবে?" অদ্রিজা জবাব দিতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই তার দৃষ্টি পরে উমাদেবীর কোলে থাকা বাচ্চাটির দিকে এবং তার পাশে বসা পিয়ালীর উপরে, আদিত্য সেটা দেখে বলে, "পরিচয় করিয়ে দি‌ই ও হলো পিয়ালী আমার ওয়াইফ আর ও শ্রীমা আমার মেয়ে" কথাটা শুনে অদ্রিজার মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে যেতে দেরী হলো না কিন্তু তবুও সে বাচ্চাটির কাছে এসে বললো, "সুন্দর দেখতে হয়েছে" তাকে দেখে আদিত্যর মনে, হলো যেন সে কিছু একটা গোপন করে গেল। রাতে নিজের সেই পুরনো ঘরে ফিরে আদিত্য কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়লো পিয়ালী জিজ্ঞেস করলে সে সেকথা গোপন‌‌ও করলো না এইঘরে থেকেই যে সে পিয়ালীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছিল সেকথাও বললো। আরেকটু রাত হলে সে ছাদে গেল যে জায়গাটা তার অতি প্রিয় ছিল তার একাকিত্বের সাক্ষী এই ছাদ।  পিয়ালী উমাদেবীর কাছে মেয়ের জন্য দুধ গরম করে নিয়ে গেছে, প্রীতি সহ প্রায় সবাই সেখানে আছে তাই আদিত্য একা হতেই ছাদে চলে এলো। ছাদে এসে সে পায়চারি করতে থাকে কতদিন পরে সে এলো হটাৎ অন্ধকারে কারো ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ কানে এলো তার একটু অবাক হলো সে অন্য কেউ হলে হয়তো ভূত ভেবে চিৎকার শুরু করে দিত কিন্তু আদিত্য সেসব করলো না সে ছাদের লাইটটা জ্বালালো, এমনিতে সে আগেও যখন ছাদে আসতো তখন লাইট জ্বালাতো না অন্ধকারেই থাকতো আজ‌ও তাই করেছিল কিন্তু কান্নার আওয়াজ শুনে লাইট জ্বালালো দেখলো ছাদের ছক দিকে কার্ণিশে হেলান দিয়ে একটি মেয়ে কাঁদছে, হটাৎ লাইট জ্বলে ওঠায় মেয়েটি মুখ তুলে তাকাতেই আদিত্য অবাক হয়ে যায়, "মিস চক্রবর্তী আপনি এখানে? আর এই অন্ধকারে বসে কাঁদছেন কেন?" "কিছু না এমনি" "এমনি কেউ কাঁদে না হয় খুব আনন্দে কাঁদে নতুবা খুব দুঃখে আপনার কোনটা?" "কি হবে আপনার জেনে? অদ্রিজার গলার স্বর আদিত্যকে একটু অবাক করে অদ্রিজা ঝাঁঝালো স্বরে বলতে থাকে "কোনোদিন জানতে চেয়েছেন আমার কি হয়েছে?" অদ্রিজার কথা আদিত্যকে অবাক করলেও সে শান্ত গলায় বলে "আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না" "বুঝতে হবে না আপনাকে, আমাকে একটু একা থাকতে দিন" "আপনার যদি সত্যিই কোনো প্রবলেম হয় বলতে পারেন যদি পারি তো হেল্প করবো" "পারবেন না আপনি" "বলেই দেখুন না" "না, আমার প্রবলেম আমার কষ্ট সেটা আমার‌ই থাক" "কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করলে কমে আপনি আমার সাথে শেয়ার নাই করতে চান কিন্তু আপনার বাবা মায়ের সাথে করুন বা আপনার ফ্রেন্ড মানে প্রীতির সাথে করুন বা যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে তার সাথেও করতে পারেন" "আমার বয়ফ্রেন্ড নেই" "ওহ তাহলে বাকীদের কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করুন দেখবেন মন হাল্কা হয়ে যাবে" "আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ, আপনার ওয়াইফ বোধহয় আপনার জন্য ওয়েট করছে" আদিত্য আর কোনো কথা না বলে ছাদ থেকে নেমে নীচে চলে আসে। সে চলে আসার পরে পিছনে অদ্রিজা কান্নায় ভেঙে পড়ে, কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, "তুমি সুখে থেকো আদিত্য কষ্টটা নাহয় আমার জন্যই থাক, তুমি কোনোদিন‌ও জানবে না যে অদ্রিজা তোমাকে কতটা ভালোবাসে সেকথা কেউ জানবে না কাউকে জানানোর নয়, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা‌ই করি যেন তুমি চিরকাল সুখে থাকো"। অদ্রিজার কথাগুলো আদিত্য না শুনলেও  ছাদের গেটের বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ঠিকই শুনলো যদিও তার শোনার কথাটা কেউ জানলো না। দশ বছর পরে, একটা চেঁচামেচির শব্দে আদিত্যর ঘুম ভেঙে গেল রাতে কাজ সেরে অনেক দেরীতে শুয়েছিল ফলে এখন তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভাঙায় একটু রেগেও গেল নিজের মনেই বললো, "কোন শালা সংসারে সুখের কথা বলে এর থেকে তো সন্ন্যাসী হয়ে গেলেই ভালো হতো", সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে না উঠে আরও কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম আর আসবে না বুঝতে পেরে উঠে পরলো, ফ্রেশ হয়ে বাইরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে দেখলো রান্নাঘরে দুজন মহিলা হাতে হাত মিলিয়ে সব তৈরি করছে আর ব্রেকফাস্ট টেবিলে একটা দশ বছরের মেয়ে এবং বছর আট নয়ের ছেলে বসে আছে মেয়েটি পরম স্নেহে ছেলেটির চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। "তোরা একটু শান্তিতে ঘুমোতে দিবিনা আমাকে তাই না?" ছেলে আর মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে আদিত্য, ছেলেটিও সমানভাবে উত্তর দেয়, "আমার কি দোষ বাড়িতে এরকম একটা আতঙ্কবাদী রেখেছো তো কি হবে? আচ্ছা বাবা সত্যি করে বলোতো এই আতঙ্কবাদীটাকে কোত্থেকে জোটালে?" "দুটোই নর্থবেঙ্গল থেকে এসেছে" আদিত্যর মুখ থেকে কথাটা বেরিয়ে গেল কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললো,  "আতঙ্কবাদী সেটা আবার কে?" "ওই যে তোমার দু নম্বর ব‌উ আমাকে সবসময় আতঙ্কে রাখে" "ওটা তোর মা হয় রে হতভাগা" "তাহলে আমাকে সবসময় ঠেঙায় কেন?" "ঠেঙানোর কাজ করলে ঠেঙানি খেতেই হবে" রান্নাঘর থেকে সদ্য তৈরি হ‌ওয়া খাবারের পাত্রটা এনে টেবিলে রেখে মন্তব্য করে এক মহিলা তারপর আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে, "আমরা দুইজন আতঙ্কবাদী? শুনেছো দিদি আমরা দুজন আতঙ্কবাদী" অপর মহিলাটিও রান্নাঘর থেকে আরেকটা পাত্র নিয়ে এসে বলে, "শুনেছি, বাপ ব্যাটা দুজনেই সমান অবশ্য শুধু বাপ ব্যাটা কেন মেয়েটাও হয়েছে বাপের মতো" তারপর ছেলেটিকে বললো "অভীরেন্দ্র মাকে কেউ এসব বলে?" "বড়োমা তুমি তো আমাকে অভী বলে ডাকো তাহলে আজ আবার অভীরেন্দ্র কেন" ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো, "কেন নামটা তোর পছন্দ নয়?" আদিত্য জিজ্ঞেস করে। "অভী নামটা স্মার্ট লাগে শুনতে" "তোর নামটা তোর ঠাকুর্দা আর ঠাকুর্দাসম দুজনের নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছে তোর দিদির টাও দুই ঠাকুর্মার নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছে আর নামটা তোদের পছন্দ নয়?" "সেটা কে বললো আমি বললাম নামটায় স্মার্টনেস আছে কিন্তু পুরো নামটায় একটা রাজা রাজা ভাব আছে, আই লাইক ইট আচ্ছা বাবা দাদু আর ঠাকুমা কবে ফিরবে?"। "অভী আগে আমার কথার উত্তর দাও মায়ের সঙ্গে এভাবে কেন কথা বলছো? বারণ করেছি না?" অভী চুপ করে থাকে মহিলাটি বলতে থাকে, "তুমি আমার কথা শুনবে না তো? ঠিক আছে আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলবো না আর" "সরি বড়োমা আর হবে না" বাচ্চা ছেলেটি মাথা নীচু করে বলে, "সরিটা আমাকে না মাকে বলো" "সরি মা, আমি তো মজা করছিলাম আর কখনো এরকম বলবো না" "মনে থাকে যেন" "থাকবে বড়োমা" "ঠিক আছে, এখন দুজনে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, কলেজ যেতে হবে" দ্বিতীয় মহিলাটি বললেন। "বাবা আজ কলেজ যাবো না" ছেলেটি আবদারের সুরে বললো। "হ্যাঁ বাবা আজ তো দিদিয়া আর ভাই আসবে" এবার মেয়েটিও ভাইকে সমর্থন করে বললো। "ওরা আসবে বিকেলে ওদের কলেজ কলেজ সেরে, কাল রবিবার কাল ওদের সঙ্গে যত ইচ্ছা ঘুরবি, খেলবি আজ কলেজে যা" আদিত্য ছেলেমেয়ে দুটোকে বললো। "চল দিদিয়া যাই, বাপটাও আমাদের কষ্ট বুঝবে না নিজে ছোটোবেলায় কষ্ট করেছে আর এখন আমাদের দিচ্ছে" ছেলেটি বললো। "কিরকম পাকা পাকা কথা শিখেছে, এসব কির থেকে শিখেছিস অভী?" প্রথম মহিলা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু সে উত্তর দেওয়ার আগে দ্বিতীয় মহিলা উত্তর দেয়, "কার থেকে আবার শিখবে,বাপ ছাড়া? পুরো বাপের কপি হয়েছে" "আমি তোদের মতো কখনো কলেজ বাদ দিতাম না আর তোদের দুই মাকে দেখ একজন লয়্যার আর একজন ডাক্তার, বুঝলি? এখন খা"। "আচ্ছা মা তুমি বলেছিলে বাবা নাকি একবার তোমাকে জঙ্গলে একা ছেড়ে এসেছিল? তারপর কি করলে বলো না?" ছেলেটি আবার জিজ্ঞেস করে। "ওই কথা তুই অনেকবার শুনেছিস" "আচ্ছা তাহলে এটাই বলো যে তোমাদের দেখা কিভাবে আর কোথায় হয়েছিল?" "অভী কলেজ তোকে যেতেই হবে তাই এখন গল্প শোনার বাহানা করে লাভ নেই, ওসব লম্বা ঘটনা পরে শুনে নিস, এখন খেয়ে রেডি হয়ে নে একটু পরেই গাড়ি চলে আসবে" আদিত্য ছেলেকে বলে। ছেলেমেয়েরা খেয়ে কলেজে চলে গেলে আদিত্য ব্রেকফাস্ট টেবিলেই বসে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে, হটাৎ তার ফোন বেজে ওঠে, "হ্যালো" "কেমন আছো অনি?" এক মহিলার কণ্ঠ ভেসে আসে আর সেটা শোনামাত্র আদিত্যর বুকটা ধড়াশ করে ওঠে এতবছর পরেও সে কণ্ঠস্বরটা চিনতে পেরেছে তার মুখ শুকনো হয়ে যায় তার মুখ থেকে কথা বের হয় না কিন্তু ওপাশ থেকে আওয়াজ আসতে থাকে, "বলেছিলাম না ফিরে আসবো এসেছি কিন্তু তোমার তো দেখছি ভাগ্য ফিরে গেছে দু-দুটো ব‌উ, ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার,  কিন্তু কতদিন সুখ থাকবে অনি?" এরপর একটা অট্টহাসি দিয়ে ফোন কেটে যায়। ফোনটা কাটার পরে সে তক্ষুনি একটা নম্বরে ফোন করে কিন্তু নাম্বারটা বিজি বলায় ফোনটা রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির সামনে যায় ছবিতে আদিত্যর সাথে একটা বিকটদর্শন কালো কুকুর দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য যেন সেই কুকুরটাকেই বলতে থাকে,  "এবারের লড়াইটা তোকে ছাড়াই লড়তে হবে রে বাদশা, তোকে খুব মিস করছি আমি এইসময় তুই যদি পাশে থাকতি তাহলে কাউকে ভয় পেতাম না, তোকে খুব দরকার রে আমার" "ভৌ" একটা ডাক শুনে আদিত্য পিছনে ফিরে দেখে একটা কালো কুকুর দাঁড়িয়ে আছে প্রায় পুরোটাই ছবির কুকুরটার অনুরূপ শুধু আকার কুকুরটার চেয়ে একটু ছোটো আর বয়সটাও কম, কুকুরটা এসে আদিত্যর পায়ে মুখ ঘষতে থাকে আদিত্য বসে ওর মাথায় আদরের হাত বোলাতে থাকে এবার আবার একটা ফোন আসে উঠে নামটা দেখে ফোনটা রিসিভ করে আদিত্য, "বল অনি কি হয়েছে?" "স্যার, শী ইজ ব্যাক"। শেষে কিছু কথা: ধূসর পৃথিবীর এই খণ্ড এখানেই শেষ করলাম, যখন শুরু করেছিলাম তখন থেকে আজ পর্যন্ত যতজন পাশে ছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এই লেখাটা কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ
Parent