"ধূসর পৃথিবী" - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51711-post-5098299.html#pid5098299

🕰️ Posted on January 12, 2023 by ✍️ Monen2000 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2704 words / 12 min read

Parent
                                                                                      ৫ম পর্ব যথারীতি আসার পর থেকেই অদ্রিজা আদিত্যকে ক্ষণে ক্ষণে নিজের শব্দ শলাকার খোঁচা দিতে থাকে প্রীতির বারণ সত্ত্বেও সে থামে না আদিত্যকে রাগিয়েই যেন তার আনন্দ। আদিত্য রেগে গেলেও কোনো উত্তর দেয় না চুপচাপ সহ্য করে যায় তার একটা কারণ হলো অদ্রিজারা এখন অতিথি আর অতিথিদের সাথে ঝামেলা করাটা উমাদেবী পছন্দ করেন না কিন্তু অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে অদ্রিজাকে ভস্ম করতে চায় আদিত্য, যদিও পারে না অদ্রিজা এটা বোঝে যে এই মূহুর্তে আদিত্য তাকে কিছু বলবে না তাই সে আরো বেশি করে আদিত্যকে রাগাতে থাকে এমনকি যখন আদিত্য বললো যে সে মন্দিরে যেতে চায় না তখন যেন শব্দের খোঁচার তীব্রতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নীলকণ্ঠ মন্দিরটা আসলে একটা শিবমন্দির যেটা সিংহ রায়দের গ্ৰামে জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত এবং যথেষ্ট পুরনো একটা মন্দির, মন্দির চত্বর থেকে কিছুটা দূরেই গাড়ি রাখার জায়গা সেখান থেকে হেঁটেই ঢুকতে হয়, সিংহ রায় রা এবং চক্রবর্তী পরিবার যখন মন্দিরের সামনে গাড়ি থামালো তখন প্রায় দেড়টা বাজে, সবাইকে মন্দিরে পৌঁছে দিয়ে আদিত্য নিজে গাড়িতে রয়ে গেল সাথে বাদশা মায়ের কথায় সবার সঙ্গে গেলেও মন্দিরে ঢুকতে রাজী হলো না আদিত্য বলাইবাহুল্য এই না যাওয়ার জন্য আরেকপ্রস্থ অদ্রিজার খোঁচা সহ্য করতে হলো আদিত্যকে এবং এবারেও কোনো উত্তর দিল না। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে পূজো শেষ হয়ে সবাই মন্দির থেকে বেরিয়ে আসছে হটাৎ প্রীতি চেঁচিয়ে উঠলো "আরে অদ্রিজা কোথায় গেল?" এবার সবাই খেয়াল করলো সঙ্গে সঙ্গে অদ্রিজার নাম ধরে ডাকাডাকি ও খোঁজা শুরু হলো আবার মন্দিরে ফিরে গেল আশেপাশে খোঁজা হলো কিন্তু অদ্রিজাকে খুঁজে পাওয়া গেল না, চারুলতা দেবীতো কেঁদেই ফেললেন উমাদেবী ও প্রীতি তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন,  প্রীতি বলে "হয়তো গাড়িতে ফিরে গেছে আমরা ওখানে গিয়ে আগে দেখি, অতীন্দ্র বাবু আর সুবিমল বাবু বাদে তিনজন গাড়ির কাছে এল যেখানে আদিত্য বসে অপেক্ষা করছিল অতীন্দ্র বাবু এবং সুবিমলবাবু আবার খুঁজতে চলে যান, প্রীতি উমাদেবী এবং চারুলতা দেবী গাড়ির কাছে থাকেন আর থাকে আদিত্য তার যেন কোনো হেলদোল নেই। "অদ্রিজা এখানে এসেছে দাদা?" "অদ্রিজা?" বোনের প্রশ্নটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে আদিত্য বলে "ক‌ই না তো"। এরপর আর কোনো কথা চলে না তাই সবাই অপেক্ষা করতে থাকে বাকিদের ফিরে আসার, আদিত্য‌ও যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে বাদশাকে আদর করতে থাকে। "আদিত্য তুই কিছু বলিসনি তো অদ্রিজাকে যাতে মেয়েটা মনখারাপ করে কোথাও চলে গেছে?" উমাদেবী হটাৎ প্রশ্নটা করেন আদিত্যকে, গাড়ির কাছে ফিরে আসার পর থেকেই আদিত্যর এই শান্তভাব তার মনে খটকা জাগাচ্ছিল আদিত্য এরকম নয়, কেউ বিপদে আর ও চুপ করে বসে থাকবে এমন ছেলেই ও নয় অথচ আজ কিরকম শান্ত নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে তাই মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটা করেন তিনি। "আমি.. আমি তো গাড়িতেই ছিলাম আমি কি বলবো?" অবাক হয়ে উত্তর দেয় আদিত্য, কিন্তু উমাদেবীর বিশ্বাস হয় না তিনি আবার বলেন "সত্যি বলছিস? অদ্রিজা তোকে কতকিছু বলেছে তখন তুই চুপ করে ছিলি তখন, এখন এখানে আসনি?." "আমি তখন চুপ করে ছিলাম, তারপরেও তোমার মনে হচ্ছে আমি মিস চক্রবর্তীকে কিছু বলেছি যাতে তিনি চলে গেছেন তিনি তো তোমাদের সাথেই ছিলেন"। "কিন্তু মাঝে একবার বেরিয়েছিল" কথাটা বলে প্রীতি, উত্তরে আদিত্য কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখন অতীন্দ্র বাবু এবং সুবিমল বাবু ফিরে আসেন এবং তাদের হতাশ মুখ দেখে আর বলে দিতে হয় না যে অদ্রিজাকে খুঁজে পাননি, ফলে চারুলতা দেবীর কান্না আরও বেড়ে যায়। উমাদেবী নিজের বাল্যবান্ধবীকে শান্ত করতে করতে আদিত্যকে প্রায় হুকুমের স্বরে বলেন "আদিত্য তুই এখনো চুপ করে থাকবি, কিছু করবি না?" "আমি কি করবো?,মিস চক্রবর্তী হয়তো কোথাও গেছেন চলে আসবেন" "ও যে এইভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে যাওয়ার মেয়ে নয় সেটা আমরা সবাই জানি" "তাতে আমি কি করতে পারি?" "এই এলাকায় অনেক লোক তোর চেনা যারা এই জঙ্গলে যাতায়াত করে তুই নিজেও ঘোরাঘুরি করিস" "তাতে কি?" "অদ্রিজাকে তুই খুঁজে আনবি?" "মা. আমি" "বাবা আমি হাতজোড় করছি অদ্রিজার কথায় যদি তোমার খারাপ লাগে তো আমি ক্ষমা চাইছি কিন্তু তুমি আমার অদ্রিজাকে খুঁজে এনে দাও আরেকটু পরেই জায়গাটা অন্ধকার হয়ে যাবে আমার মেয়েটা ভালো করে চেনেও না জায়গাটা বাবা তুমি কিছু করো।" চারুলতা দেবী হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলেন, সুবিমল বাবুও অনুরোধ করেন তিনি যদিও কাঁদছেন না কিন্তু মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছে কোনোমতে কান্নাটাকে নিজের ভিতরে আটকে রেখেছেন। উমাদেবী এবার ছেলেকে হুকুম করেন "তুই যেখান থেকে পারিস খুঁজে নিয়ে আয় অদ্রিজাকে" "মা আমি কিভাবে? তার থেকে থানায় খবর দেওয়া উচিত" "সেটা আমরা দেখছি কিন্তু আমি জানি তার দরকার হবে না,তুই ওকে খুঁজে নিয়ে আসতে পারবি" "মা কিন্তু" "তুই শুনবি না তো আমার কথা?" অগত্যা আর কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নামে আদিত্য,যাওয়ার আগে বলে "ঠিক আছে আমি খুঁজে দেখছি তোমরা বাড়ি যাও" বলে মন্দিরের দিকে চলে গেল। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো অদ্রিজা মাথাটা ভার হয়ে আছে কয়েকমিনিট বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে, বুঝলো একটা গাছের তলায় শুয়ে আছে, উঠে বসে চারিদিকটা দেখলো বুঝতে পারে না সে এখানে কিভাবে এলো তারপর ধীরে ধীরে মনে পড়লো, তাকে এখানে তুলে আনা হয়েছে আর এনেছে আদিত্য.. অদ্রিজার মনে পরলো মন্দিরে পূজো দেওয়ার সময় সে একটু বাইরে এসেছিল, আশেপাশে জঙ্গলটা দেখছিল হঠাৎ একটা পাখির আওয়াজ শুনে সেটাকেই ধাওয়া করতে করতে মন্দির থেকে একটু দূরেই চলে এসেছিল, কিন্তু পরে ফেরার সময় রাস্তা হারিয়ে ফেলে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক দৌড়াতে থাকে কিন্তু তবুও পথ খুঁজে পায় না। একটু একটু করে যত সময় যেতে থাকে ততই আতঙ্ক বাড়তে থাকে অদ্রিজার, হটাৎ‌ই একটা পায়ের আওয়াজ শুনতে পায় কেউ তার দিকেই এগিয়ে আসছে আওয়াজটা লক্ষ্য করে কিছুটা এগিয়ে যেতে দেখে হ্যাঁ একজন এসেছে পরিচিত‌ই সে আদিত্য। গভীর সমুদ্রে দিকভ্রস্ট নাবিক যখন ডাঙার চিহ্ন দেখে তখন তার মনে যেভাব জেগে ওঠে ঠিক সেরকমই হলো অদ্রিজার তাড়াতাড়ি আদিত্যর কাছে ছুটে গেল হাফাতে হাফাতে বললো "থ্যাংক গড আপনি এসেছেন আমি তো পথ‌ই খুঁজে পাচ্ছিলাম না খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম" "ভয় পাওয়ার‌ই কথা এবং ভয় পাওয়াই উচিত আপনার" কথাগুলো যত না অবাক করলো কথাগুলো বলার ধরন আরো বেশি অবাক করলো অদ্রিজাকে সে জিজ্ঞেস করলো "ম..মানে?" "কখনো ম্যান‌ইটারের সাথে মুখোমুখি হয়েছে আপনার?" কথাটা শুনেই আতঙ্কের চোরাস্রোত বয়ে গেল অদ্রিজার শিরা-ধমনী দিয়ে কোনোমতে উত্তর দিল "ন..না"। "চিন্তা নেই আজ হয়ে যাবে এই জঙ্গলের ভিতরে আপনার লাশ তো দূরের কথা কাল সকালে যদি কেউ আপনার এতটুকু অংশ খুঁজে পায় তাহলে সেটাই হবে আপনার জন্য সৌভাগ্যের" "এ..এসব কি বলছেন আপনি?" "ওই দেখুন" আঙুল দিয়ে কিছুটা দূরে মাটিতে কিছু একটা দেখায় আদিত্য, সেদিকে তাকাতেই আরও একবার আতঙ্কের স্রোত বয়ে যায় অদ্রিজার শরীর জুড়ে, বেশ খানিকটা অংশ জুড়ে কাদার উপর অনেকগুলো পায়ের দাগ, পায়ের দাগ বলা ভুল বলা উচিত থাবার দাগ,বাঘের থাবা। দেখে আর কথাই বেরোতে চায় না অদ্রিজার মুখ থেকে কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলে "ও..ওগুলো" "বাঘের থাবার দাগ" অদ্রিজাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই বলে আদিত্য, তারপর আবার বলে "এপথে তাদের যাতায়াত আছে" "আপনি মিথ্যা কথা বলছেন, এগুলো আপনার কোনো চালাকি আমাকে ভয় দেখানোর জন্য কিন্তু আমি ভয় পাবো না" গলায় বেশ কিছুটা জোর এনে বলে অদ্রিজা, আদিত্য অবশ্য তার স্বাভাবিক গম্ভীর স্বরেই কথা বলে, "আপনাকে ভয় দেখাতে নয় মারতে চাই আমি,অবশ্য আমার প্ল্যান অন্য ছিল কিন্তু এখন তো দেখছি আমাকে কিছুই করতে হবে না আর ওগুলো সত্যি সত্যিই বাঘের থাবার দাগ" "আ..আমাকে মারতে চান কিন্তু কেন? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?" অদ্রিজার গলার জোর আবার কমে গেছে। আদিত্য দুহাতে অদ্রিজার দুটো বাহু জোরে চেপে ধরে, ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে অদ্রিজা, কিন্তু তাতে আদিত্যর কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না সে বলে, "আপনাকে অনেকবার বলেছি আমার থেকে দূরে থাকুন, আমাকে রাগাবেন না কিন্তু আপনি. আপনি সেই কাজটাই বারবার করেছেন তাই এবার তার শাস্তি ভোগ করুন আমি আপনাকে এখানে ছেড়ে রেখে যাবো কেউ জানতে পারবে না আপনার কি হয়েছিল" "আ..আপনি এরকম করতে পারেন না" "আমি কি করতে পারি সে সম্পর্কে আপনার কোনো ধারনাই নেই" "বাঁচাও.. কেউ আছেন বাঁচাও" অদ্রিজা চিৎকার শুরু করেছে, কিন্তু কেউ নেই এক আদিত্য ছাড়া, সে বলে "কেউ নেই, কেউ আসবে না"। কথাটা সত্যিই আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না অদ্রিজা ভয়ে অবিশ্বাসে তার মুখে কোনো কথা বেরোলো না তার উপরে তার দুই বাহুতে আদিত্যর হাতের চাপ বাড়ছে তার ব্যাথাও করছে কিন্তু আদিত্যর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, "কেউ খুঁজে পাবে না আপনাকে কেউ জানবে না আপনার কি হয়েছে এখানেই আপনার জীবন শেষ হবে" বলে অদ্রিজাকে একটা হাল্কা ঠেলে সরিয়ে দেয় আদিত্য, হতবিহ্বল ভাবটা কাটে না অদ্রিজার সে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে আদিত্যর দিকে এমনকি যখন সে দ্রুত পায়ে চলে যাচ্ছে তখনও সম্বিত ফিরতে কিছুটা সময় লাগে তার, যতক্ষণে তার পুরোপুরি বোধগম্য হয় যে কি হয়ে গেল ততক্ষণে আদিত্য জঙ্গলের মধ্যে প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে, তাকে ধরার জন্য দৌড় শুরু করতেই কিসে যেন হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে আর তারপরেই মাথায় একটা চোট তারপর সব অন্ধকার। জ্ঞান ফেরার পরে সবকিছু মনে পড়তে একটু সময় লাগলো তারপর তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়েই একটা আর্তনাদ করে আবার মাটিতে বসে পড়ে অদ্রিজা, পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা খুব সম্ভবত অজ্ঞান হবার আগে হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার সময় মাথার সাথে পায়েও আঘাত পায় সে যার কারনে এই যন্ত্রণা, আরও একবার ওঠার চেষ্টা করে সে পাশের গাছটা ধরে কিন্তু কোনোমতে উঠে দাঁড়ালেও হাঁটতে পারে না আবার বসে পড়ে। ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে জঙ্গলের মধ্যে অন্ধকারটা আরও দ্রুত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে অদ্রিজার দুই হাঁটু ভাঁজ করে মাথা গুঁজে কাঁদতে শুরু করে সে, তার বাবা মা এতক্ষণে হয়তো কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে, হয়তো তার খোঁজ করছে তবে এদিকে কি আসবে? আর যদি না আসে? যদি আসেও ততক্ষণ কি সে অক্ষত থাকবে? প্রশ্নগুলোর সাথে আতঙ্ক চেপে বসতে থাকে অদ্রিজার মনে, সাথে খুব রাগ‌ও হয় আদিত্যর প্রতি, আদিত্যর কথা মনে পড়তেই তার একবার মনে হলো আদিত্য হয়তো সত্যিই তার সাথে মজা করছে এরকমভাবে জঙ্গলের ভিতরে কি একা রেখে যাবে সে? দু-একবার আদিত্যর নাম ধরে ডাকে অদ্রিজা কিন্তু কোনো সাড়া পায় না। আদিত্য সত্যি সত্যিই তাকে জঙ্গলের ভিতরে ফেলে রেখে চলে গেছে এবার কি করবে সে? হাঁটতে পারলে বেরোনোর চেষ্টা করতো কিন্তু যন্ত্রনায় তো হাঁটতেই পারছে না যন্ত্রণা কমা পর্যন্ত কি বেঁচে থাকবে নাকি তার আগেই.. হটাৎ আবার পায়ের আওয়াজ শোনে সে তবে এবার অন্ধকার আরো কিছুটা বেড়েছে কিন্তু একেবারে রাত হয়নি, একটু পরে জ্বলজ্বলে দুটো চোখ দেখতে পায় সে আর দেখেই ভয়ে একেবারে কাঠ হয়ে যায় তবে কি সত্যি সত্যিই সে বাঘের পেটে যাবে?আর ভাবতে পারে না, জ্বলন্ত চোখদুটোর দিকে তাকাতেও পারে না নিজেই নিজের দুচোখ বন্ধ করে আর তখন‌ই পরিচিত পুরুষকণ্ঠ শুনতে পায়, "বাহঃ এখনো টিকে আছেন দেখছি বাঘের পেটে যাননি দেখছি বাঘ‌ও খেল না তাহলে আপনাকে?" আদিত্যর আওয়াজ শুনে চোখ খোলে অদ্রিজা দেখে সামনে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ছোটো টর্চ যদিও নেভানো আবার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনেই প্রচণ্ড রাগ হয় অদ্রিজার কোনোমতে আবার গাছের গুঁড়ি ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সে, ততক্ষণে আদিত্য তার কাছে চলে এসেছে এতক্ষণে অদ্রিজা বুঝতে পারে জ্বলজ্বলে চোখদুটো আসলে বাদশার। কাছে আসতেই ঠাস করে আদিত্যর গালে একটা চড় মারে অদ্রিজা, বাদশা তো প্রায় লাফিয়ে পড়ছিল কিন্তু মনিবের হাতের ইশারায় থেমে যায় কিন্তু গরররর করতে থাকে রাগে, অদ্রিজা কিন্তু থামে না অপরগালে আবার আরেকটা চড় মারে সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য আবার ওকে চেপে ধরে দুজনের মুখমণ্ডল পরস্পরের অত্যন্ত কাছে চলে এসেছে দুজনেই দুজনের চোখে রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, প্রথম কথাটা অবশ্য অদ্রিজাই বলে, "আই হেট ইউ, আই হেট ইউ মিস্টার আদিত্য সিংহ রায়। এই পৃথিবীতে যদি কাউকে সবথেকে বেশি ঘেন্না করি তাহলে সেটা আপনি" আদিত্য‌ও অবশ্য রাগী স্বরেই উত্তরটা দেয় "ইচ্ছা করছে এখনই আপনাকে বাদশার সামনে ফেলে দি‌ই কিন্তু মা বলেছেন আপনাকে খুঁজে নিয়ে যেতে তাই না চাইলেও শুধু যে ফিরতে হলো তাই নয় আপনাকে বাঁচিয়েও রাখতে হচ্ছে" "আমি ফিরে গিয়ে সবাইকে আপনার এই আসল রূপটা সম্পর্কে বলবো" "যদি এটা করেছেন তাহলে সত্যি সত্যিই আপনাকে বাদশার পেটে যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না কথাটা মনে রাখবেন এখন চলুন" কথাটা বলে অদ্রিজাকে ছেড়ে হাঁটা লাগায় অদ্রিজা অবশ্য হাঁটার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না যন্ত্রনায় আর্তনাদ করে গাছ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, আদিত্য পিছন ঘুরেই বুঝতে পারে ব্যাপারটা আবার অদ্রিজার কাছে আসে সে, "এটা ধরুন" বলে টর্চটা অদ্রিজার হাতে দেয় তারপর ঝুঁকে অদ্রিজাকে কোলে তুলে নিতে গেলে অদ্রিজা ঝংকার দিয়ে ওঠে "দরকার নেই আপনার সাহায্যের আমি একাই হাঁটতে পারবো"। কিন্তু আদিত্য তবুও দুহাতে কোলে তুলে নেয় তারপর হাঁটা শুরু করে। কিছুক্ষণ পথ চলার পরে একটা কুটির জাতীয় ছোটো ঘরের সামনে আসে আদিত্য বাইরে থেকেই হাঁক দেয় "হরি কাকা হরি কাকা?"। ডাক শুনে একজন রোগা মতো প্রৌঢ় লোক বেরিয়ে আসেন পরনে আধময়লা ধুতি ও একটা সুতির ফিনফিনে পাঞ্জাবি মাথায় লম্বা পাকা চুল মুখেও লম্বা দাঁড়ি গোঁফ। "কে? ওহ ছোটো জমিদার মশাই আসেন আসেন, তা এটি কে?" বলাইবাহুল্য শেষের কথাটা আদিত্যর কোলে থাকা অদ্রিজাকে লক্ষ্য করে বলা। কুটিরের সামনে একটু জায়গা নিয়ে উঠোন সেখানেই অদ্রিজাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য, বলে "হরি কাকা ইনি আমাদের অতিথি জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে এনার পায়ে চোট লেগেছে হাঁটতে পারছেন না আর আমার গাড়িটাও নেই যে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবো তাই আপনার কাছে নিয়ে এলাম"। "আরে বলো কি? তাড়াতাড়ি ভিতরে আসো ভিতরে শুইয়ে দাও আমি দেখছি" প্রৌঢ় যেন ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন, আদিত্য ভিতরে গিয়ে একটা ছোটো ঘরের একধারে পাতা একটা খাটিয়ার উপরে শুইয়ে দিল, প্রৌঢ় লোকটি অদ্রিজার পায়ের কাছে এসে দেখলেন পায়ে হাত দিতে গেলে অবশ্য অদ্রিজা বারণ করেছিল কিন্তু উনি শোনেননি, কিছুক্ষণ দেখে বললেন "কয়েক জায়গায় ছড়ে গেছে আর বোধহয় মোচড় লেগেছে তাই না মা?" প্রশ্নটা অদ্রিজাকে করা, সে হ্যাঁ জানালে প্রৌঢ় বললেন "ঠিক আছে তোমরা বসো আমি আসছি, আদিত্য বাবা তুমি ততক্ষণ এই পরিষ্কার কাপড়টা দিয়ে ক্ষতের জায়গাগুলো একটু পরিষ্কার করে দাও" বলে একটা পরিষ্কার সাদা কাপড় আদিত্যকে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।  "আমাকে এখানে আনলেন কেন, উনি ডাক্তার?" প্রৌঢ় লোকটি বেরিয়ে যেতেই অদ্রিজা প্রশ্ন করলো,আদিত্য অদ্রিজার পায়ের ছড়ে যাওয়া জায়গাগুলো কাপড় দিয়ে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে করতে বললো "কেন এনেছি সেটা তো আগেই বললাম আর ডাক্তার কি না সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন"। খানিক পরে প্রৌঢ় হাতে একটা বাটিতে কিছু একটা নিয়ে ফিরে এলেন, এসে আবার অদ্রিজার পায়ের কাছে বসে আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে বাটিতে আনা কিছু একটা লাগাতে থাকেন, সেটা কি অদ্রিজা জিজ্ঞেস করায় বলেন "এটা প্রকৃতির ওষুধ,একটা বিশেষ গাছের পাতা বেটে এনেছি এর রস খুব উপকারী, চিন্তা নেই মা কাল সকালের মধ্যেই তুমি হাঁটতে পারবে", তারপর আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন "জমিদার মশাই এইনাও কিছুটা নিয়ে ওই কপালের কাটা জায়গাটায় লাগিয়ে বেঁধে দাও"। আদিত্য কোনো কথা না বলে একটু খানি নিয়ে অদ্রিজার কপালের কাটা জায়গাটায় লাগিয়ে দেয়, লাগানোর সময় ব্যাথায় একটু "সসস্" করে ওঠে তখন আস্তে আস্তে ফু দিয়ে লাগায়, দুজনের মুখ আবার কাছাকাছি দৃষ্টি পরস্পরের চোখে আবদ্ধ দেখে কে বলবে যে খানিকক্ষণ আগেই এদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ রাগারাগি হয়েছে। ওষুধ লাগানো হয়ে গেলে প্রৌঢ় ভদ্রলোক মাটির গ্লাসে কিছুটা দুধ এনে দিলেন অদ্রিজাকে। "এটা না করলেই পারতেন" দুধটা খেতে খেতে আদিত্যকে কথাটা বলে অদ্রিজা, আদিত্য অবশ্য অবাক হয় কথাটায় বলে "মানে? কোনটা?" "এই যে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য বাঘের থাবার ছাপ তৈরি করা, আমি বোকা ন‌ই বাঘ কোনোদিন দুপায়ে হাঁটে না এটা আমি জানি, আপনি বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন"। কথাটা শুনে প্রৌঢ় হরি কাকার মুখে হাসি দেখা দিলেও আদিত্য গম্ভীর, বলে "এই বুদ্ধি নিয়ে আপনি ডাক্তারি পাস করলেন কিভাবে?। "আর লুকাতে হবে না" "লুকানোর কিছু নেইও, ওই ছাপগুলো সত্যি সত্যিই বাঘের থাবার দাগ" "তার মানে আপনি বলছেন বাঘ দুপায়ে হাঁটে?" "চলার সময় বাঘের সামনের পা এবং পিছনের পা প্রায় এক‌ই জায়গায় পড়ে তাই ছাপ দেখলে মনে হয় দুপায়ে হেঁটে গেছে, বুঝেছেন?" অদ্রিজা একটু যেন চুপসে যায় বলে "ঠিক আছে ঠিক আছে আমি মানুষের ডাক্তারি পড়েছি, বাঘের বা জঙ্গলের জানোয়ারদের উপর নয়" "যে মেয়ে জঙ্গলে আনাড়ির মতো ঘুরে বেড়ায় তার দ্বারা ওটা হবেও না" "দেখুন.." অদ্রিজা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তাকে থামতে হয় কারণ তখনই জঙ্গলের ভিতর থেকে বাঘের গর্জন ভেসে এল, খুব বেশি দূরে নয় শুনে হরি কাকা আর আদিত্যর বিশেষ ভাবান্তর হলো না কিন্তু অদ্রিজার মুখ শুকিয়ে গেল দেখে আদিত্য বললো "ভয় পাওয়ার কিছু নেই আপনি বিশ্রাম নিন খাবার হলে ডেকে দেবো" "কিন্তু বাড়িতে চিন্তা করবে" "আমি দেখছি মোবাইলে টাওয়ার পেলে জানিয়ে দেবো আর আমি বা হরি কাকা আর যাই হ‌ই না কেন চরিত্রহীন লম্পট ন‌ই তাই নিশ্চিন্ত থাকুন" "আপনি সত্যিই আমাকে মারতে চেয়েছিলেন?" "ওরকম আনাড়ির মতো জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করলে অন্য কারো দরকার হবে না আপনাকে মারার জন্য" "আপনি জঙ্গলে কি করছিলেন?" "জঙ্গলের নির্জনতা আমার খুব ভালো লাগে, আমাকে টানে তাই সময় পেলেই জঙ্গলে বা অন্য কোথাও একা থাকি" "আপনি কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না?" "কোন কথা?" "ওই যে সত্যিই আমাকে মারতে চেয়েছিলেন?" "না, সেরকম কোনো ইচ্ছা ছিল না' "তাহলে প্রথমবারে আমাকে একা রেখে চলে গিয়েছিলেন কেন?" "ভয় দেখানোর জন্য" "যদি সত্যিই বাঘ আসতো?" "লোক ছিল আপনাকে সরিয়ে নিত" "কোথায় আমি তো দেখিনি" "ছিল, আপনার উপর নজর রাখছিল পরে আমি ফিরে এলে ওরা চলে যায়" "জঙ্গলের ভিতরে লোক?" "হ্যাঁ, কাঠুরে, কাঠ সংগ্ৰহ করতে গিয়েছিল। এবার রিল্যাক্স করুন আরেকটা কথা যেটা বলেছিলাম সেটা যেন মনে থাকে বাড়িতে যেন কেউ না জানে যে আমি আপনাকে জঙ্গলে ছেড়ে গিয়েছিলাম, কথাটা মনে রাখবেন"। অতীন্দ্র বাবু সকালেই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, রাতে আদিত্য জানিয়ে রেখেছিল সকালে গাড়ি পাঠানোর জন্য।গাড়িতে করে অদ্রিজা এবং আদিত্য যখন আবার সিংহ রায় প্যালেসে ফিরলো তখন সেখানে রীতিমতো হুড়োহুড়ি লেগে গেল বিশেষ করে অদ্রিজাকে নিয়ে। উমাদেবী, চারুলতা দেবী প্রীতি অতীন্দ্র বাবু সুবিমল বাবু সবাই একসাথে প্রশ্ন করতে থাকেন একটু পরেই অবশ্য সবাই ভুল বুঝতে পারে তাই থেমে যায় কিন্তু অদ্রিজা তখনও জানায় তার পায়ে ব্যাথা আছে হাঁটতে গেলে লাগছে এটা শুনে উমাদেবী ছেলেকে বলেন অদ্রিজাকে ড্রয়িংরুমে পৌঁছে দিতে, এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিত্যকে কাজটা করতে হয়, ড্রয়িংরুমে বসার পরেই উমাদেবী আবার জিজ্ঞাসা করেন কি হয়েছিল অদ্রিজা কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল? উত্তরে অদ্রিজা যা বলে সেটা ঘরের সবাইকে চমকে দেয়, "আন্টি আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করুন কি হয়েছিল? উনি আমাকে জঙ্গলে একা রেখে চলে গিয়েছিলেন"। চমকে ওঠে আদিত্য এবং পরক্ষনেই খেয়াল করে ঘরের সবার চোখ তার দিকে নিবদ্ধ।
Parent