দোলন চাঁপার চাপা কথা/কামদেব - অধ্যায় ১৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-26340-post-1957468.html#pid1957468

🕰️ Posted on May 15, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1082 words / 5 min read

Parent
।।১৯।।            মা হয়েছি যখন আমাকে তো অভিমাণ করে বসে থাকলে হবে না।শরীর খারাপ বললে শুনছে কে?কেমন নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে।সান্তু খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে গেল।খেতে খেতে ভাবছি।মুনুকে বলেছিলাম,বাবা তুমি লেখা পড়া শিখে বড় হয়ে কবে তোমার মায়ের দুঃখ ঘোচাবে,আমি সেই আশায় দিন গুনছি। --তুমি এত দুঃখ-দুঃখ করো কেন বলতো?তোমার কিসের দুঃখ? --সে তুমি বুঝবে না বাবা।খেয়ে পরে বাচাটা নয়,মানুষের মত বাচতে হবে। --কি সব ফালতু কথা বলো না,মানুষ নয়তো আমরা তাহলে কি? আমরা কি? তা কি বলে বোঝাবো মুনুকে?করতলের পিছন দিয়ে চোখ মুছে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লাম।একদিক দিয়ে ভালই হল স্কুলে গিয়ে ফাদারকে বলব মুনু আমার একমাত্র সন্তান।ফাদার আপনি ওকে একটু দেখবেন বয়স কম ভুলচুক কিছু হলে আপনি কড়া শাসন করবেন। যাতে ছেলেটা আমার মানুষ হয়। সনাতন স্কুলের গেটের কাছে গাড়ী থামায়।ছোট ছোট ছেলেরা গাড়ি দেখে ভীড় করে।আমি গাড়ী থেকে নেমে সোজা ফাদারের ঘরে ঢুকলাম।উনি আমাকে বসতে বলে জিজ্ঞেস করলেন, বলুন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? সাহেবদের কথাবার্তাই আলাদা।আমি বললাম,আজ ত রেজাল্ট বেরিয়েছে? ফাদারের ভ্রু কুচকে যায় অবাক হয়ে বললেন,দেব শঙ্কর কিছু বলে নাই? --কি ব্যাপারে? --স্যরি মিসেস সিং,।কিছু মনে করবেন না--আপনি ওকে অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি করে দিন।ওকে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে দেওয়া হয়েছে,আপনাকে বলেনি? --টিসি?আপনি কি বলছেন?কানে শেল বিদ্ধ হল। --লজ্জায় হয়তো আপনাকে কিছু বলে নাই।বয়সের তুলনায় হি ইজ মোর ম্যাচিওর।আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি বাট এ্যাম হেল্পলেস।ঈশ্বর আপনার ভাল করবেন। মাথা ঘুরছিল ভাগ্যিস গাড়ী ছিল।স্কুল থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে উঠে চোখ বুজে হেলান দিয়ে বসলাম। মনে মনে ভাবি গাড়ী চলুক সারা জীবন ধরে চলতেই থাকুক।সনাতন জিজ্ঞেস করল,মেমসাব শরীর খারাপ লাগছে? চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে বললাম,না ঠিক আছে। সব এলোমেলো হয়ে গেল।ছেলেটার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিলাম বিনিময়ে কিছুই চাইনি তবু কেন এমন হল?ভগবান কেন এত শাস্তি দিচ্ছে আমাকে?আমার অপরাধের শাস্তি কেন ওকে দিচ্ছ ভগবান? আমি তো প্রায়শ্চিত্ত করছি । লেখাপাড়ায় মাথা ছিল কত ভাল রেজাল্ট করত কি যে হয়ে গেল।গাড়ি থামলে হুশ হয়।গাড়ী থেকে নেমে দেখলাম নীচে কয়েকজন লোক আমাকে দেখে ঘরে ঢুকে গেল। --আচ্ছা সনাতন,এরা কাজে যায়নি? --এদের অন্য কাজ মেমসাব। --অন্য কি কাজ? --সেটা আমি বলতে পারব না। মনে হল সনাতন কিছু চেপে গেল।উপরে উঠে এলাম।মুনু সব জানতো তাই শরীর খারাপের ভান করে স্কুলে যায়নি।ওকে জিজ্ঞেস করব কিনা ভাবছি।সান্তু ফিরুক ওর সামনেই জিজ্ঞেস করব। অবাক লাগে এমন নিশ্চিন্তে কি করে বাড়ি বসে থাকে। মুনুর ঘরের মধ্যে উকি দিয়ে চমকে উঠলাম।শূণ্য বিছানা ঘরে মুনু নেই।আসুক আজ বাড়ী একটা হেস্থনেস্থ করে ছাড়ব।নিজের ঘরে এসে কাপড় না ছেড়েই শুয়ে পড়লাম।এলোমেলো কত কি মনে আসছে,ভাবতে ভাবতে হয়তো চোখ লেগে গিয়ে থাকবে মোবাইল বেজে উঠল। মনে হচ্ছে মুনুর খবর জানতে চায় সান্তু।সুইচ টিপে কানে লাগাতে শুনতে পেলাম,দোলা আমি বুম্বদা বলছি। --ও বুম্বাদা কেমন আছো?হঠাৎ কি মনে করে? --তোর মামীর শ্রাদ্ধ কাল তাই--। --ফোনে সারতে চাইছো? --আমি নীচে দাঁড়িয়ে আছি।উপরে যেতে দিচ্ছে না আমাকে। তড়াক করে খাট থেকে নেমে পড়লাম।বোকাচোদার দারোয়ানগিরি বের করছি।সিড়ি দিয়ে নীচে নামতে যাব দেখলাম বুম্বাদা উপরে উঠে আসছে।সান্তু আসুক তারপর দেখাচ্ছি মজা।সারা মুখে দাড়ি এলোমেলো চুল হঠাৎ দেখলে বুম্বাদাকে চিনতেই পারতাম না।ঘরে এনে বসালাম।বুম্বাদা জিজ্ঞেস করল, কেমন আছিস? কি বলব বুম্বাদাকে?খুব ভাল আছি?নাকি ভাল নেইরে বুম্বদা।তাহলে আবার জিজ্ঞেস করবে কেন ভাল নেই? --তুই বেশ মুটিয়ে গেছিস।বুম্বাদা বলল। --কোনো কাজ নেই খাচ্ছি দাচ্ছি মোটা হব না?তারপর বলো তোমার অঞ্জনার কি খবর? --ভাল।রোজই আসে,আজও এসেছিল।ওকে বাসে তুলে দিয়েই এখানে এলাম।ওর খোজ নিচ্ছিস কেন? --রোজই আসে? আর আমি একদিনও যাইনি তারপর।মানুষ খুব স্বার্থপর তাই না বুম্বাদা? --তুই কি আমাকেও স্বার্থপর ভাবিস? --এমা ছিঃ ছিঃ।যা করেছি স্বেচ্ছায় করেছি,তুমি তো জোর করোনি। বুম্বাদা মাথা নীচু করে বসে থাকে।আমি বললাম,বুম্বাদা তোমার সেই কথাটা কিন্তু আমি ভুলিনি। বুম্বাদা চোখ তুলে তাকায়।কপালে রেখা ফোটে কোন কথা? --তুমি বলেছিলে তুই আমার বোন নাহলে তোকে বিয়ে করতাম। --তোর মনরাখার জন্য কথাটা বলিনি,তুই বিশ্বাস কর। --আমি জানি বুম্বাদা আর জানি বলেই খুব আফশোস বোধ করি।কি যে চায় ভগবান....। বুম্বাদা একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল,কেউ না যাক তুই কিন্তু যাবি দোলা। --চা-টা কিচ্ছু খাবে না? বুম্বাদা একটু ভাবে তারপর বসে বলল,আচ্ছা কর,দোলা তুই হাতে করে দিলে আমি বিষও খেতে পারি।দাড়ি গোঁফের ফাকে দাঁত স্পষ্ট হয়। --খুব হয়েছে,বলব অঞ্জনাকে? তাড়াতাড়ি চা করে দিলাম বুম্বাদাকে।সান্তু আসার সময় হয়ে গেছে।আমার ইচ্ছে নয় সান্তুর সঙ্গে দেখা হোক বুম্বাদার,তাছাড়া কি অবস্থায় আসবে কে জানে।চা খেয়ে বুম্বাদা উঠে পড়ল,আমি সিড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। বেশ ভাল লাগছে বুম্বাদার সঙ্গে কথা বলে, সারাদিনের ভারাক্রান্ত মনটা বেশ হালকা লাগছে।একবার ইচ্ছে হয়েছিল মুনুর কথা বলি বুম্বাদাকে,আবার ভাবলাম আমার মনের যন্ত্রণায় অন্যকে কেন জড়াবো।সান্তুর ফিরতে দেরী হচ্ছে, আগে জানলে বুম্বাদাকে আরেকটু বসাতাম।বুম্বাদার কাছে থাকলে মুনু হয়তো এরকম হতো না। নীচে গাড়ীর শব্দ হল মনে হচ্ছে এতক্ষণে ওরা ফিরল।মুনু উপরে উঠতেই জিজ্ঞেস করলাম,তোকে টিসি দিয়েছে আমাকে বলিস নিতো? --বললে তুমি কি করতে?সপাটে উত্তর দিল মুনু। তাকিয়ে দেখলাম সান্তু পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে গেল। --লজ্জা করছে না তোর?আবার মুখে মুখে তর্ক করছিস? --যাঃ শাল-আ তর্ক করলাম কোথায়?তুমিই তো আসতে না আসতেই কিচাইন শুরু করলে? --আমি শুরু করলাম? --খেটে খুটে আসলাম ফালতূ ঝামেলা কোরো না তো মাম। --খবরদার তুই আমাকে মা বলবি না।তোকে ছেলে বলে পরিচয় দিতে আমার ঘেন্না করে--। --তোমাকে মা বলতেও লজ্জা করে,তোমার কেচ্ছা জানতে বাকী নেই আমার? --কি বললি আমার কেচ্ছা?কি জানিস তুই কে বলেছে?বল---বল। --কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি কেন এসেছো সব জানি--এখন সেসব ঘাটতে ভাল লাগছে না। নিজের গুণপনা নিজের কানে আর নাই বা শুনলে। --হায় ভগবান শেষ পর্যন্ত ছেলের মুখে এইসব শোনার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলে? --রাত দুপুরে আর খোয়ারি কোর না তো।মুনু নিজের ঘরে চলে গেল। সারা পৃথিবী মনে হল কেমন নিস্তব্ধ।অতীত জীবনের কথা যা আমি চিরকালের জন্য ভুলে যেতে চেয়েছিলাম মুনুকে সেসব কথা কে বলল?সান্তু ছাড়া আর কে বলতে পারে?নিজের বউয়ের কেচ্ছা কেউ এভাবে বলতে পারে স্বপ্নেও ভাবিনি।এখন বুঝতে পারছি নামেই বউ আসলে আমি সান্তুর রমণ সঙ্গী।শেষ পর্যন্ত কপালে এই ছিল?যার জন্য এই শরীর লজ্জা মান বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছায় পশুর খাদ্য করে দিলাম সেই আমাকে এতবড় আঘাত করবে স্বপ্নেও ভাবিনি।পাপ করলে শাস্তি পেতে হবে,ভগবান এভাবেই শাস্তি দেয়।সান্তু নীচে নেমে গেল।বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকি আকাশ পাতাল।নিঃশব্দে কেটে যাচ্ছে সময়।শুয়ে থাকলে চলবে না,উঠে পড়লাম।মুনুর ঘরে উকি দিয়ে দেখলাম চুপ করে বসে আছে।সান্তু উপরে আসতে আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম। ডাল ঝোল গরম করে সবাইকে খেতে ডাকলাম।খাবার টেবিলে বসে লক্ষ্য করলাম মুনু অন্য মনস্কভাবে ভাত মেখে ঘাটাঘাটি করছে।আমি বললাম,কিরে খাচ্ছিস নাযে?শরীর খারাপ লাগছে? মুনু মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,মাম এ্যাম স্যরি।রাগের মাথায় বলেছি। --মিথ্যে তো বলিস নি।যা সত্যি তাই বলেছিস--আর আমি যে তোকে কিভাবে বড় করেছি তা কি সত্যি নয়?নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না বাষ্পরুদ্ধ গলায় বললাম,আমার পাপের শাস্তি আমাকে পেতেই হবে। মুনু চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমার মাথা জড়িয়ে ধরে মুখে গোজা ভাত আঙ্গুল দিয়ে বের করে জল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল। বুকে মাথা চেপে বলল,মাম অন্যায় হয়ে গেছে মাম। চেয়ার থেকে তুলে আমাকে ঘরে পৌছে দিল।বিছামায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছি।আমার পাপের ফল কি ভোগ করছে ছেলেটা? রাগের মাথায় বললেও কথাগুলো একেবারে মিথ্যে তাতো নয়।কিন্তু এ্যাতো কথা ও জানলো কি করে?আমার মুনুকে আমার থেকে আলাদা করতে চাইছে সান্তু? তাতে ওর কি লাভ?বুম্বাদা কখনোই এসব কথা বলবে না আমি নিশ্চিত।আর মামাই বা বলতে যাবে কেন?
Parent