এক মুঠো খোলা আকাশ - নতুন রূপে - অধ্যায় ১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69058-post-5962473.html#pid5962473

🕰️ Posted on June 10, 2025 by ✍️ Manali Basu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1740 words / 8 min read

Parent
পর্ব ১ "সাবধানে যেও, টেক কেয়ার। আমি রাতে ফোন করবো। আর কালকে আনতে যাবো।" নন্দিনীর স্বামী বাসের বাইরে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বললো। বাস ধর্মতলার বাস স্ট্যান্ড ছেড়ে বেড়োলো। নিজের স্বামীকে বিদায় জানাতে নন্দিনী বাইরে হাত বের করে "টা টা" করতে যাচ্ছিলো, চাইছিলো ততোক্ষণ অবধি তা করতে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার স্বামী তার চোখের আড়াল হয়। কিন্তু সে দেখলো অনিকেত অনেক আগেই পিছন ফিরে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে। "সে আরেকটু দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না? অন্তত বাসটা মেইন রোডে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই পারতো," নিরাশ নন্দিনী মনে মনে ভাবলো। সে আশা করেছিল অনিকেত আরেকটু বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হবে। সাত বছরের বিবাহিত জীবন, সাথে রয়েছে চার বছরের কন্যাসন্তান। কিন্তু যতদিন গ্যাছে ততো যেন দাম্পত্য জীবনে একঘেয়েমি চলে এসছে, বিশেষ করে অনিকেতের তরফ থেকে। হাত ঢুকিয়ে নন্দিনী বাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে বসার চেষ্টা করলো। বাসে প্রচন্ড ভিড়। ভাগ্গিস আগে এসেছিলো, তাই শুধু সিট নয়, জানালার ধারের সিট পেয়েছে, যেটা অনেক প্রয়োজনীয় এমন ভিড় বাসে প্রাণ খুলে শ্বাস নেয়ার জন্য। নন্দিনী বাসের চারিপাশে একবার তাকালো। সহযাত্রীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। কিছু মহিলা আছে যারা নিজ স্বামীর সহিত অথবা পরিবারের সহিত ভ্রমণ করছিলো। বাসের গন্তব্য যে সকল স্থান হতে গমন করে, সেখানে সচরাচর কোনো মহিলা একা ভ্রমণ করেনা, তাও আবার চাকুরিক্ষেত্রে। নন্দিনী খেয়াল করলো কিছু চক্ষুজোড়া তার দিকে চেয়ে রয়েছে। তা দেখে নন্দিনী নিজের শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিলো। অজানা এক গ্রামে সে পাড়ি দিচ্ছে, এইভাবে বাসে ট্র্যাভেল করাটা কি উচিত ছিল? অনিকেতকে তো বলেছিলো যাতে সে তাকে গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে আসে। কিন্তু অনিকেত বললো ব্যাংকে একটা জরুরি মিটিং আছে, সময় হবে না। অগত্যা এই সরকারি ভিড় বাসেই যাত্রা। এটা একটা শর্ট ট্রিপ। এক দিন থেকে পরের দিনই ফিরে আসবে। তবুও একটা থ্রিল, এক্সসাইটমেন্ট কাজ করছিলো নন্দিনীর মধ্যে। তার মনে হচ্ছিলো সে একটা অ্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছে। অ্যাডভেঞ্চারই তো বটে, বিয়ের পর এই প্রথম বাপের বাড়ি, শশুর বাড়ি ব্যতিত অন্য কোথাও একা রাত্রিযাপন করতে চলেছিল। একটাই চিন্তা, তার আদরের মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে হবে গোটা একটা দিন। গুড্ডিকে সে শশুর শাশুড়ির জিম্মায় রেখে যাচ্ছে। জন্মের পর গুড্ডি এই প্রথমবার মাকে ছেড়ে থাকবে। কিন্তু নন্দিনী তো কোথাও ছুটি কাটাতে যাচ্ছেনা, যাচ্ছে নিজের কাজের তাগিদে। রাস্তাটা খুব একটা ভালো ছিলোনা। বাস বারবার জার্কিং খাচ্ছিলো। জানলা দিয়ে বাইরে দেখতেই বড়ো বড়ো রাজনৈতিক হোডিং চোখে পড়ছে। ইলেক্শনের সময় বলে কথা! ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে নন্দিনীর গন্তব্যস্থল চলে এলো। বাস থেকে নামলো। চোখের সামনে দিয়ে ধুলো উড়িয়ে বাসটা বেরিয়ে গেলো। নন্দিনীর ডাস্ট অ্যালাৰ্জি নেই, কিন্তু কিছু ধূলোকণা নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করায় সে কয়েকবার হাঁচলো। রুমাল দিয়ে নাক মুখ পরিষ্কার করে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু ছোট ছোট দোকান রাস্তার ধারে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে সবে খুলেছে এবং আগত কিছু ক্রেতার সহিত বিকিকিনির মাধ্যমে দিনের বউনি হচ্ছে। বেশ সকাল সকালই পৌঁছে গেছিলো সে। প্রথমে ভাবলো তাদের মধ্যেই কাউকে জিজ্ঞেস করবে হাকিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টা কোথায়? কিন্তু তাকে তো বলা হয়েছিল লোক আনতে আসবে বাস স্টপেজে। নন্দিনী তাই ঠিক করলো আগে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা যাক। অজানা জায়গায় অচেনা মেয়ে দেখে কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলবে তা ঠাহর করা মুশকিল। সাহায্য চাইতে গিয়ে উল্টে তখন বিপদে পড়তে হতে পারে। তার চেয়ে সরকারী নির্দেশিকা পালন করে সঠিক ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করাই শ্রেয়। বসিরহাটের এক প্রত্যন্ত গ্রামে মিসেস নন্দিনী চ্যাটার্জি একটা লাগেজ ব্যাগ ও একটা হ্যান্ড ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একটু ঘামতে শুরু করেছিল। সূর্যের দাপট থেকে চোখ বাঁচতে নন্দিনী হ্যান্ড ব্যাগ থেকে সানগ্লাসটা বের করে পড়ে নিলো। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও স্কু'ল থেকে কোনো আগন্তুকের পাত্তা নেই দেখে সে অবাক। বাসে উঠেই সেকেন্ড পোলিং অফিসারকে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিয়েছিলো তার আগমনের আনুমানিক সময়। তবুও এখনো তাকে আনতে স্কু'ল থেকে কেউ এলো না কেন? ভাবতে ভাবতে সে নিজের পোলিং বুথের সেকেন্ড অফিসারকে ফোন করতেই যাচ্ছিলো কি তখুনি একটা রিক্সা এসে তার সামনে দাঁড়ালো, "আপনি কি নন্দিনী দি, প্রিসাডিং অফিসার?" রিক্সাওয়ালা নিজেকে রিংকু বলে পরিচয় দিলো, বললো তাকে বুথ থেকেই পাঠানো হয়েছে। নন্দিনীও নিজের পরিচয় দিয়ে নিশ্চিত করলো রিংকুর অনুমান যে আসন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাকিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পোলিং বুথের প্রিসাডিং অফিসার সে। জানামাত্রই রিংকু তড়িঘড়ি নন্দিনীর হাত থেকে লাগেজ ব্যাগটা নিয়ে তাকে রিক্সায় উঠতে বললো। নন্দিনী ওঠার পর ব্যাগটা রিক্সার পাদানিতে রেখে রিংকু রিক্সা টানতে শুরু করলো। মেইন রাস্তা থেকে গ্রামের এবড়ো খেবড়ো পথে রিক্সাটা নামলো। ফলত প্রচুর ঝাঁকুনি শুরু হলো। প্রথমে বাসে জার্কিং, তারপর এই গ্রাম্য মেঠো পথের ঝাঁকুনি, দুটোই নন্দিনীর তন বদনে ব্যথা ধরিয়ে দিয়েছিল। নির্বাচন আসে আর যায়, কেউ যেতে কেউ হারে, কিন্তু এই পোড়া বঙ্গে উন্নয়ন কলকাতার বাইরে পা ফেলতে পারেনা। রোদের তাপ এবং খারাপ রাস্তার ফলে গ্রাম বাংলার মনোরম দৃশ্য চাক্ষুস করতে পারলেও উপভোগ করতে পারছিলো না নন্দিনী। তাও এই চলার পথে তার সারথী রিংকুর সাথে প্রাথমিক আলাপচারিতা সেরে নিলো।  রিংকু এই গ্রামেরই ছেলে। রিক্সা চালায়। প্রয়োজনে লোকের ফাইফরমাশ খাটে। যেতে যেতে এক চেনা পথচারী রিংকুর দিকে হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করলো, "কই যাও?" উত্তরে রিংকু বললো, "স্কু'ল বাড়ি" রিংকুর কাছ থেকে জানতে পারলো যেই স্কু'লে নন্দিনীর ইলেক্শন ডিউটি পড়েছে, সেটি গ্রামের একমাত্র বিদ্যালয়, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক অবধি পড়ানো হয়, সরকারি অধিভুক্ত কো-এডুকেশন স্কু'ল। স্কু'ল বিল্ডিংটা গ্রামের সবচেয়ে বড়ো এবং প্রশস্ত পাকাবাড়ি। তাই সবাই স্কু'ল বাড়ি বলেই চেনে, কেউ সরকারি নামটা অত মনে রাখেনা। গ্রামের পথঘাট, পুকুর, জঙ্গল, চাষাবাদ সম্পর্কিত টুকটাক আরো কিছু গল্প করতে করতে রিংকু নন্দিনীকে কলেজ বাড়ি তথা পোলিং বুথে পৌঁছে দিল। স্কু'ল প্রাঙ্গনে পা রাখতেই নজর পড়লো এক সুঠাম দেহশালী কৃষ্ণবর্ণের মধ্য ত্রিশের যুবকের উপর। যেন সে তার জন্যই অপেক্ষারত হয়ে দাঁড়িয়ে। এগিয়ে এসে নিজেই জিজ্ঞেস করলো, "ম্যাডাম, চিনতে পারছেন?" যুবকটি নিকটে আসায় তার মুখটা কিছুটা চেনা চেনা লাগছিলো ঠিকই, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে স্মরণে আসছিলো না। নন্দিনীর ভাবলেশহীন প্রতিক্রিয়া দেখে বীরেন বুঝতে পারলো তার প্রিয় ম্যাডাম তাকে চিনতে পারেননি। তাই সে নিজেই তাকে স্মরণ করাতে বললো, "আমি বীরেন বাহাদুর মন্ডল। কলকাতায় ট্রেনিং এর সময় আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, মনে নেই?" তখন নন্দিনীর মনে পড়লো, এই সেই লোক যে অযাচিত ভাবে হলেও ইলেক্শন ট্রেনিং এর সময় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করেছিল। নির্বাচনী রীতিনীতি থেকে শুরু করে নির্বাচন সম্বন্ধিত ছোটোখাটো সকল বিষয় একপ্রকার হাতে খড়ির করানোর মতো বুঝিয়ে দিয়েছিলো। বীরেন নন্দিনীর থেকে বয়স এবং অভিজ্ঞতা উভয়ে বরিষ্ঠ। অপরদিকে নন্দিনীর এটা প্রথম ইলেক্শন ডিউটি। তাই নন্দিনীর পক্ষে তার সাহায্য গ্রহণ না করার কোনো কারণ ছিল না। "ওহঃ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এবার আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি ট্রেনিং এর সময়ে অনেক সাহায্য করেছিলেন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জটিল বিষয় গুলো বুঝতে। আপনাকে যে এখানেও পেয়ে যাবো, সেটা ভাবিনি। তাই এভাবে হঠাৎ দেখায় আপনাকে প্রথমে চিনে উঠতে পারিনি। সরি, কিছু মনে করবেন না।" "কোনো ব্যাপার নয়, আমি আবার নিজের পরিচয় দিয়ে দিচ্ছি। অধমের নাম বীরেন বাহাদুর মন্ডল, আমি এই স্কু'লেই পড়াই, জিওগ্রাফির টিচার।" "ও আচ্ছা" "আমি কিন্তু আপনার নাম মনে রেখেছি, শ্রীমতি নন্দিনী চ্যাটার্জি, ইংরেজির টিচার, নলিনীকান্ত শেঠ মেমোরিয়াল স্কু'ল।" "হুম", নন্দিনী আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। কারণ বীরেন এর নাম, সাবজেক্ট তার কিছুই মনে ছিলনা। এমনকি তার মুখটাও সে ভুলে গেছিলো। যদিও মনে থাকার কথা নয় ওই দু'তিন দিনের স্বল্প সাক্ষাতে। তা সে বীরেন যতই নিঃস্বার্থভাবে নন্দিনীকে সাহায্য করে থাকুক না কেন। নন্দিনী চ্যাটার্জির মন-মস্তিষ্কের দাগ কেটে জায়গা করা অত সহজ কার্য নয়। কিন্তু উল্টোদিকে বীরেনের নন্দিনী সম্পর্কিত সকল তথ্য ঠোটস্থ ছিল। ফলে নন্দিনী বেশ অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছিল। উচ্চতায় বীরেন বেশ লম্বা ছিল। গায়ের রং খুব কালো না হলেও বেশ চাপা। গালে হালকা দাড়ি, চওড়া ছাতি। বোঝাই যায় এই শরীর নিয়মিত ডন বৈঠক দেয়। দেখতে নায়কোচিত নয়, তবে তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নজরকাড়ার মতো, যা উপস্থিত বাকি সকল পুরুষদের থেকে তাকে অনেক আলাদা করে। বীরেন জানালো সেই এই বুথের লোকাল পোলিং অফিসার। কয়েক সপ্তাহ আগে যার সাথে নন্দিনী ট্রেনিং ওয়ার্কশপ করেছিল, সে এখন তারই অধীনে কাজ করবে। নন্দিনীকে আগামী দেড় দিন বীরেন এবং তার মতো স্থানীয় লোকজনদের সাথেই মানিয়ে গুছিয়ে কাটাতে হবে। এই গ্রামে তার ডিউটি পড়েছে, তাকে একটু সমঝে চলতে হবে। গরম পড়েছে, রোদের মধ্যে নন্দিনী দাঁড়িয়েছিল। তাই তার বগলের তলায় অল্প অল্প ঘাম জমতে শুরু করেছিল। তার ছাপ বাইরে থেকে লক্ষণীয় ছিল। নন্দিনী সেটা বুঝতে পেরে নিজের আঁচলটা ঠিক করে নিলো বীরেনের থেকে আড়াল করতে। তা দেখে বীরেন তাকে নিকট অশ্বত্থ গাছের তলায় নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসার আহবান জানাতে চাইলো। এই গরমে অনেক দূর থেকে আসায় ডাব আনিয়ে খাওয়ানোর প্রস্তাবও দিলো। নন্দিনী উভয় প্রস্তাবই বিনম্রতার সাথে খারিজ করে দিয়ে কন্ট্রোল রুম কোন দিকে তা জিজ্ঞেস করলো। আপাতত টিচার্স রুমটাতেই সকলের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরে প্রিসাডিং অফিসার ম্যাডাম চাইলে অন্য কোথাও শিফট করিয়ে নিতে পারেন। তা শুনে নন্দিনী রিংকুকে ডেকে সুস্মিতা ম্যাডাম কোথায় আছেন জানতে চাইলো। রিংকু বললো টিচার্স রুমেই আছেন। নন্দিনীর ভালো লাগছিলো না বীরেনের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলে যেতে। ট্রেনিং এর সময় থেকে সে খেয়াল করেছে লোকটা বড়ো গায়ে পড়া, বিশেষ করে নন্দিনীর প্রতি। তথাকথিত সিনিয়র বলে সেইসময় মুখে রা কাটতে পারেনি, কিন্তু এখন সে চাইছে কিছুটা এড়িয়ে যেতে। তাই রিংকুকে একটা অবান্তর প্রশ্ন করলো, "সুস্মিতা ম্যাডাম কখন এসেছেন?" "তা প্রায় ঘন্টা খানেক হলো। উনিই তো আমাকে পাঠিয়েছিলেন আপনাকে আনতে, যান আপনারই জন্য অপেক্ষা করছেন।" "টিচার্স রুমটা কোন দিকে?" রিংকু বলার আগেই বীরেন বলে উঠলো, "আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি ম্যাডাম। আসুন আমার সাথে।" অগত্যা নন্দিনী বীরেনকে অনুসরণ করে টিচার্স রুমে গেলো। নন্দিনীকে দেখা মাত্রই সুস্মিতা নিজের সিট্ ছেড়ে উঠে এসে নন্দিনীকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলো। সুস্মিতা নন্দিনীর স্কু'লের কলিগ। বীরেনের মতো সেও জিওগ্রাফির টিচার। ওর আর নন্দিনীর একই জায়গায় ইলেক্শন ডিউটি পড়েছে। সুস্মিতা নন্দিনীকে নিয়ে গিয়ে তার পাশের সিটে বসালো। বীরেন তাদের থেকে অনুমতি নিয়ে সাময়িক কোনো একটা কাজে বেরিয়ে গেলো। বীরেনকে দেখে সুস্মিতা নন্দিনীর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, "কিরে, পাঠালাম রিংকুকে আর এলি বীরেনের সাথে। কেস টা কি?" "কিছুই না.... রিংকুই আমায় নিয়ে এসছে। স্কু'ল প্রেমিসেসে ঢুকতেই ওই বীরেন বাবুর সাথে দেখা হয়েগেলো। ব্যাস! খেজুরে আলাপ জুড়ে দিলেন। রিংকুকে বললাম টিচার্স রুমটা দেখিয়ে দিতে কিন্তু উনি উপযাচক হয়ে আমার সাথে এলেন।" "বাহঃ! তোর প্রেমিক তো দেখছি তুই আসতে না আসতেই তোর খেয়াল রাখা শুরু করে দিয়েছে!" নন্দিনী হকচকিয়ে বললো, "কে প্রেমিক?" "কে আবার, তোর ওই বীরেন বাবু।" "ধ্যাৎ, কি যা তা বলছিস! শুনতে পেলে কি ভাববে?" "এতে অত ভাবাভাবির কি আছে! ট্রেনিং এর সময় থেকে দেখছি লোকটার তোর উপর নজর রয়েছে। এখানে এসে যখন ওকে আবার দেখলাম তখন ভাবলাম ভাগ্যের কি পরিহাস! ঠিক ওর স্কু'লেই তোর আর আমার ডিউটি পড়েছে। মন বলছে কিছু একটা ধামাকা হতে চলেছে। কে জানে, কি লেখা আছে তোর কপালে! এই ইলেক্শনের ডিউটিটা তোর জীবনের মোড়ই না ঘুরিয়ে দেয়।" "এসব কি বলছিস তুই!" "ঠিকই বলছি। তুই আসার আগে বীরেন অনেকবার তোর সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে। খুঁটিনাটি জানতে চাইছিলো। কোনো সন্দেহ নেই লোকটার তোর উপর যথেষ্ট ক্রাশ রয়েছে।" "আমাকে তো তাহলে একটু সাবধানে থাকতে হবে", আতংকিত হয়ে নন্দিনী বললো। "কিসের সাবধান! এই প্রথম তুই বাড়ি থেকে বাইরে বেড়িয়েছিস, একা থাকবি। একটু খোলা আকাশে শ্বাস নে। একদিনের জন্য হলেও সংসারের বেড়াজাল ভেঙে স্বাধীনতার স্বাধ নিয়ে দেখ।" "যাহঃ! তোর সবসময়ে খালি বাজে কথা।" "গরিবের কথা বাসি হলে সত্যি হয়, দেখে নিস্।" "সে যখন বাসি হবে তখন দেখা যাবে।" বলার পর দুজনেই হেসে ফেললো। রিংকু নন্দিনীর লাগেজ ব্যাগটা রেখে গেলো। যাওয়ার আগে সুস্মিতা ওকে দু'কাপ চায়ের অর্ডার দিলো তার আর নন্দিনীর জন্য। কিছুটা ফাঁকা সময় রয়েছে, এর মধ্যে কিছু গসিপ করে নিলে মন্দ হয়না। এটা তো সুস্মিতার একপ্রকার হবি বললেও ভুল বলা চলেনা।
Parent