এক মুঠো খোলা আকাশ - নতুন রূপে - অধ্যায় ২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69058-post-5963171.html#pid5963171

🕰️ Posted on June 12, 2025 by ✍️ Manali Basu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1195 words / 5 min read

Parent
পর্ব ২ সুস্মিতা একটু বেপরোয়া গোছের মেয়ে। সংসারে তার শান্তি নেই। স্বামী একদম ভালো নয়। মাঝে মাঝেই চলে রাগের মাথায় মারধর। সুস্মিতা তাই মন দিয়েছে বাইরে। তার একটা এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার হয়েছে। ছেলেটির সাথে ফেসবুকে আলাপ, তারপর প্রেম, লুকিয়ে চুরিয়ে। নন্দিনী এই বিষয়ে অবগত। সুস্মিতা ওর থেকে কোনো কিছুই লুকোয় না। ছেলেটিকে নন্দিনী মাঝে মাঝেই দেখে সুস্মিতার সাথে। কখনো স্কু'লের বাইরে অপেক্ষা করে, কখনো বা গায়ে পড়ে ওদের সাথেই বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে। নন্দিনীর তাকে একদম পছন্দ নয়, কমবয়সী বখাটে ছেলে একটা। সুস্মিতাকে সে বারবার সাবধান করে, এইসব অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকতে। যতই হোক, সুস্মিতা বিবাহিতা, সেটা ওকে বুঝতে হবে। কিন্তু সুস্মিতা উল্টে নন্দিনীকেই প্রেরণা দেয় তার মতো একটা পরকীয়ায় জড়াতে। নন্দিনী এসব কথা কানেই তোলেনা। ভাবা তো দূর অস্ত। নন্দিনী জানতে পারে অঙ্কিতই সুস্মিতাকে নিয়ে এসছে। অনিকেতের মতই সুমনেরও সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই হয়নি। তবে নন্দিনীর কোনো বিকল্প মানুষ না থাকলেও সুস্মিতার রয়েছে। তাই স্বামীর বদলে প্রেমিকের বাহনে সওয়ার হয়ে সুস্মিতা ডিউটি করতে এসেছে। সুস্মিতার এই বেলেল্লাপনায় নন্দিনী বেশ অসন্তুষ্টই ছিল। সে বিবাহের বন্ধনটাকে অনেক বেশি মর্যাদা দেয়। স্বামী যেমনই হোক না কেন, সে স্বামীই। তার কোনো প্রতিস্থাপন হয়না, হওয়া উচিতও না। বারবার তা বুঝিয়েও সুস্মিতাকে বাগে আনা যায়না। প্রত্যুত্তরে বরং নন্দিনীকেই সুস্মিতার থেকে শুনতে হয় পরকীয়ার বিবিধ উপকারিতা। নন্দিনী ও সুস্মিতা রিংকুর আনা চা খেতে খেতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গসিপ করছিলো। ঠিক সেই সময়ে স্কু'লে এসে হাজির জেলার পুলিশ সুপার। রিংকু দৌড়ে গিয়ে সেই খবর নন্দিনীকে দিলো। এস পি এর সাথে সাক্ষাৎ করতে নন্দিনী ও সুস্মিতা বাইরে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলোই কি ভুতোড়িয়া সাহেব সটান টিচার্স রুমেই এসে উপস্থিত। পুলিশ সুপার নন্দিনীকে প্রথম দেখায় বিভোর হয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সে এসেছিল প্রিসাডিং অফিসারকে বুথের অন্যান্ন পোলিং অফিসার এবং ভোট কর্মীদের সুরক্ষা সম্পর্কিত কাজ ও প্রোটোকল বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু সামনে আস্ত একটা পরীকে দেখে থতমত খেয়ে গেল। নন্দিনীকে জিজ্ঞেস করলো তিনিই কি প্রিসাইডিং অফিসার? নন্দিনী ইতিবাচকভাবে মাথা নাড়ালো। এস পি ভাবছিলো কোনো নারী এত সুন্দরীও হয়? এ যেন সাক্ষাৎ ঊর্বশী স্বর্গ থেকে এই অভাগা মর্তে নেমে এসেছে। ভুতোড়িয়া কিছুক্ষণ একভাবে নন্দিনীর দিকে চেয়ে থাকলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে লাগলো। নন্দিনী মন দিয়ে সব নির্দেশাবলী শুনছিলো। পাশ থেকে সুস্মিতা চিমটি কেটে বান্ধবীকে টিজ করছিলো। কিন্তু নন্দিনী এই ধরণের লোলুপ চাউনিতে অভ্যস্ত ছিল। নিজ স্কু'লে আকছার পুরুষ শিক্ষক বিশেষত প্রধান শিক্ষকের কুনজরে পড়তে হয় তাকে। তবে সে সবসময় নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রেখে চলে বলেই কারোর সাহস হয়না সীমা অতিক্রম করার। শুধু দূর থেকে সবাই নিজেদের চোখ সেঁকে, আর বাড়ি যাওয়ার আগে বাথরুম হয়ে আসে। না জানে কতবার কতজনের কল্পনায় অনিকেতের স্ত্রী নগ্ন হয়ে শয্যাসঙ্গিনী হয়েছে! কিছুক্ষণ পর টিচার্স রুমে বীরেন এলো। পুলিশ সুপারকে সে চেনে। গল্প গুজব শুরু হয়ে গেল তাদের মধ্যে। নন্দিনী অবাক হয়ে ভাবলো এই বীরেন লোকটার তো সবাই চেনা। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার অবধি। বীরেন নন্দিনীকে পুলিশ সুপার মিস্টার সুবীর ভুতোড়িয়ার সাথে ভালো ভাবে ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিতে চাইলো, হয়তো ইমপ্রেস করার জন্য। "স্যার, আমাদের বুথের প্রিসাডিং অফিসার, মিস নন্দিনী চ্যাটার্জি, উপপস্স, মিসেস নন্দিনী চ্যাটার্জি।" "হ্যাঁ হ্যাঁ, আলাপ হয়েছে। আর বীরেন বাবু, ওনাকে দেখে কেউ বলবে না উনি মিসেস, তাই আপনার ভুলবশত মিস বলে সম্বোধন করাটা স্বাভাবিক। উনি নিজেকে খুব ভালো মেইনটেইন করে রেখেছেন। নাহলে তো আজকালকার মেয়েরা বিয়ের পরপরই বৌদি না হয়ে একবারে কাকিমার মতো হয়ে যায়। কি বলেন, হা হা হা হা!" দুই পরপুরুষের মধ্যে নিজেকে নিয়ে এহেন আলোচনা শুনতে নন্দিনীর একেবারেই ভালো লাগছিলো না। কিন্তু কি আর করা যাবে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বলে কথা। কোনো নারী নিজের যোগ্যতায় কোনো উচ্চপদে অভিষিক্তা হলে তার আশেপাশের কিছু পুরুষরুপী জন্তুগুলো তার আত্মবিশ্বাসের কাপড় খুলে নগ্ন করতে চায়, কল্পনায় বা বিছানায়। "শুধু তাই নয়, খুব বুদ্ধিমতী মানুষ ইনি.. চট করে সবকিছু শিখে ফেলেন", বীরেন যেন নন্দিনীর নামে প্রশংসার মালা গাঁথছিলো পুলিশ সুপারের সামনে। নন্দিনীর তা একদম ভালো লাগছিলো না। সে খানিকটা বিরক্তই হচ্ছিলো বীরেনের অতিরিক্ত আনুগত্য দেখে। "তা আপনি কি করে জানলেন, এখনো তো আমাদের পোলিং এর কাজ শুরুই হয়নি ", থাকতে না পেরে নন্দিনী বলে উঠলো। "আপনি ভুলে যাচ্ছেন ম্যাডাম, আমরা কলকাতায় একসাথে ট্রেনিং করেছি। আপনি হয়তো আমাকে অত খেয়াল করেননি, তাই তো আজ প্রথমে চিনতেই পারেননি। কিন্তু আমি তো আপনাকে করেছিলাম, খেয়াল", বলেই বীরেন হাসতে লাগলো। এরকম দ্ব্যর্থ কথা শুনে নন্দিনী খুব বিব্রত হচ্ছিলো। সুস্মিতা খুব মজা পাচ্ছিলো। সে আরো একটা সুযোগ পেয়ে গেলো নন্দিনীর লেগ পুল করার। তবে সেই মুহূর্তে স্থান কাল পাত্র বুঝে সে চুপ থাকলো। আরো কিছু ফরমাল কথাবার্তা সেরে পুলিশ সুপার মিস্টার ভুতোড়িয়া বিদায় নিলেন। বীরেন তাঁকে এগিয়ে দিতে গেল। তারপর সুস্মিতা যথারীতি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় নন্দিনীকে খোঁচা মারার জন্য উদ্যত হয়ে উঠলো। নন্দিনী তাতে কোনোভাবেই বিশেষ আমল দিলনা। তার একদম ভালো লাগছিলো না। কোন্ এক গ্রামে এসে সে পড়েছে, যেখানে তাকে একটা গোটা রাত ও দুটো দিন কাটাতে হবে! পরিবারকে ছেড়ে নিজের স্বামী-সন্তানকে ছেড়ে, একা, এই কিছু অজানা অচেনা মানুষদের সাথে থাকতে হবে! তার উপর এখানে শিক্ষক থেকে পুলিশ অফিসার সকলে শুধু তার রূপ নিয়ে চর্চা করছে! সুন্দরী হওয়াটা কি পাপ? সুস্মিতা প্রিয় বান্ধবী হলেও, ওর উপর সে অত ভরসা করতে পারেনা। কারণ সুস্মিতা এখন বখে গ্যাছে, পরকীয়া করছে। তার কাছ থেকে কোনো সদুপদেশ আশা করা বৃথা। অবসর সময়ে ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে গসিপ করা আলাদা, কিন্তু টেনশনের সময়ে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, নট্ পসিবল উইথ সুস্মিতা। নন্দিনীর মনে পড়লো অনেকক্ষণ হয়েগেছে এখানে এসে কিন্তু বাড়িতে ফোন করে ওঠা হয়নি এখনো। সে চট করে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরোলো। প্রত্যন্ত গ্রামে নেটওয়ার্ক পাওয়া শহরের তুলনায় একটু কঠিন। তাই সে ফাঁকা একটা জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে বাড়িতে কল দিল। শাশুড়ি মা ফোনটা ধরলো। কিছুক্ষণ কথা হলো তাদের মধ্যে। নন্দিনী জানালো সে পৌঁছে গ্যাছে ভালো মতো, সেখানে সবকিছু ঠিকঠাক আছে। মেয়ে গুড্ডির কথা জিজ্ঞেস করলো। সব কুশলে আছে জেনে ফোন রাখলো। তারপর সে অনিকেতকে একবার ফোন ঘোরালো। এখন অফিসে আছে তাই সে বেশিক্ষণ ফোন ধরে রাখতে পারলো না। মোটামুটি কথা সেরে ফোন রেখে দিলো। নন্দিনী চেয়েছিলো আরেকটু কথা বলতে। সে তার ঘরবাড়ি, স্বামীকে মিস করছিলো। কিন্তু মুখ ফুটে তা বলতে পারলো না। ইন্ট্রোভার্ট মেয়ে, নিজের ইচ্ছাকে মনের মধ্যেই সে দাবিয়ে রাখে। অনিকেতও তো কোনোদিন জানার চেষ্টা করেনি তার মনের খবর। এখন আর এসব ভেবে কি হবে। না করে করেও সাত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে বিয়ের। পেছন ফিরে তাকালে যেন মনে হয় সবটাই মরীচিকার জলের মতো, দৃশ্যমান কিন্তু প্রবাহমান নয়। যখন সে আক্ষরিক অর্থেই পিছন ফিরলো তখন দেখলো বৃহদাকার চেহারার আদিম অকৃত্রিম সেই বীরেন দাঁড়িয়ে। "এ কি আপনি এখানে! কি করছেন?", চমকে উঠে নন্দিনী জিজ্ঞেস করলো। "আমি তো আপনাকেই খুজছিলাম। কয়েকটা ডকুমেন্টসে সাইন করতে হবে। সুস্মিতা ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলাম তো উনি বললেন একটু বাইরে গেছেন আপনি। খুঁজতে খুঁজতে এখানে আপনাকে পেয়ে গেলাম।" "ওহঃ! তা ওয়েট করতে পারতেন কিছুক্ষণ। এত তাড়া কিসের ছিল যে এখানে চলে এলেন। যাই হোক, চলুন।" "আপনি আপনার হাসব্যান্ড এর সাথে কথা বলছিলেন?" "দ্যাটস নান অফ ইওর বিসনেস", রাগের ছলে চোখ কটমটিয়ে বললো নন্দিনী। "আমি জানি। কিন্তু কি বলুন তো আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় আপনি সুখী নন, সুখে থাকার ভান করেন শুধু। আপনার এরূপ অবস্থা আমাকে বিচলিত করে তাই স্বামীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে ফেললাম। ক্ষমা করবেন, আপনার অভ্যন্তরিণ বিষয়ে নাক গলানোর জন্য আমি দুঃখিত ", বলে বীরেন চলে গেলো। বীরেন ওর কাজ করে দিয়েছিলো। নন্দিনীর মনে নিজেকে নিয়ে ধন্ধের বীজ পুঁতে দিয়েছিল। নন্দিনী কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে রওনা দিলো টিচার্স রুমের দিকে। রুমে গিয়ে দেখলো বীরেন ওর জন্য অপেক্ষা করছে। দুজনে একসাথে সই সাবুত করলো, একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে তো একজন লোকাল ইনচার্জ ওরফে অফিসার হিসেবে। বুথের সেকেন্ড পোলিং অফিসার সুস্মিতা সেনগুপ্ত আগেই নিজের সব ফর্মালিটিস পূরণ করে রেখেছিল। সে তখন শুধু নীরব দর্শক হয়ে বীরেন ও নন্দিনীর গতিবিধি পরিমাপ করার মধ্যে দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ রসায়নের আনুমানিক চিত্রনাট্য মনে মনে এঁকে চলেছিল।
Parent