এক মুঠো খোলা আকাশ - নতুন রূপে - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69058-post-5965566.html#pid5965566

🕰️ Posted on June 16, 2025 by ✍️ Manali Basu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2482 words / 11 min read

Parent
পর্ব ৪ বসিরহাটের হাকিমপুর গ্রামের এই স্কু'লটা ছিল জনবসতির থেকে একটু দূরে। চারিপাশে ধানের খেত, এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকটা বাড়ি, আর তার মাঝে স্কু'লবাড়ি। নুরুল হাসান চলে যাওয়ার পর নন্দিনী আর বীরেন ফের টিচার্স রুমের দিকে পা বাড়ালো। দুজনকে একসাথে ঢুকতে দেখে সুস্মিতার ঠোঁটের কোলে একটা দুস্টু হাসি খেলে উঠলো। সে মনে মনে বাসনা করলো এই জুটির রসায়ন যাতে আরো গভীরতর হয়। দুজনকে বেশ ভালোই মানিয়েছে। আলাদা বর্ণ, আলাদা সংস্কৃতি, আলাদা আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠা এক্কেবারে দুই ভীন্ন মেরুর মানুষ। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই দুই বিপরীত ধারার নদী জীবনে চলার পথে একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়েছে ততবারই প্রলয় অবশ্যম্ভাবি হয়েছে। নন্দিনী টিচার্স রুমে এসে নিজের টিম মেম্বারদের উদ্বুদ্ধ করতে একটা পেপ টক্ দিল। বললো, "guys, আমরা নিশ্চই জানি আমরা কি কারণে এখানে এসছি! আমরা সকলেই নিজের নিজের দায়িত্ব ও কাজ নিয়ে অবগত। সকলেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। নতুন করে আমার আপনাদের দিকনির্দেশন করার মতো কিছু নেই। তবুও কিছু কথা বলে রাখা ভালো। প্রথমত, যতই লোকমুখে আমরা শুনিনা কেন যে এলাকাটা খুব শান্ত, কোনো ঝুট-ঝামেলা হয়না, তাও আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে সকল অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য। দ্বিতীয়ত, যতক্ষণ না ইলেক্শন কমিশন কালকে আমাদের থেকে সবকিছু বুঝে নিয়ে ব্যালট বাক্সগুলি নিজেদের জিম্মায় নিচ্ছে ততক্ষণ এই ব্যালট বাক্সগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব শুধু আমাদের। তৃতীয়ত, আমরা কোনো রাজনৈতিক চাপে মাথা নত করবো না। শেষ কথা, যতই ঝড়ঝাপটা আসুক, আমার একসাথে এক টিম ইউনিট হয়ে তার মোকাবেলা করবো, কেমন!" "ঠিক বলেছেন ম্যাডাম, আমরা এক ইউনিট এক পরিবারের মতো কাজ করবো, কি বলেন আপনারা?", নন্দিনীর বলা কথাগুলোর প্রবলতা আরো বাড়িয়ে দিতে একা কোরাস গাইলো বীরেন। সবাই সেই তালে তাল মিলিয়ে নন্দিনীকে ইতিবাচক অভিবাদন জানালো। "হ্যাঁ, ঠিক ঠিক! আমরা সবাই প্রিসাইডিং অফিসার ম্যাডামের সাথে রয়েছি, কোনো চিন্তা নেই", টিচার্স রুমে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা একযোগে বলে উঠলো। অন্যান্য কর্মীরাও তাতে সমর্থন দিল। নন্দিনীর নিজেকে নিয়ে কিছুটা গর্ববোধ হচ্ছিলো। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের কোনো নির্বাচনের দায়িত্ব পাওয়া সত্যিই একটা মহৎ ব্যাপার। তার উপর নন্দিনী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। এটা তার কাছে একটা বড়ো সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার। শশুরবাড়িতে তাকে বড্ড দমিয়ে রাখা হয় শশুড়-শাশুড়ির দ্বারা। আর চার-পাঁচটা বাঙালি ঘরোয়া ছেলেদের মতো অনিকেতও নিজের বাবা-মার্ বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রীর হয়ে কথা বলতে পারেনা। দূর্গম এলাকায় ইলেক্শন ডিউটি পড়েছে জেনে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি নন্দিনীকে। প্রচুর কাঠ-খড় পুড়িয়ে শশুড়-শাশুড়িকে রাজি করাতে পেরেছে সে। এই প্রথম নন্দিনী কাজের কারণে বাড়ির বাইরে রাত কাটাবে, তা তার শাশুড়ির একেবারে না-পসন্দ। বাড়ির বউ একা একা দূর প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে থাকবে, নৈবচ নৈবচ! নন্দিনীর শাশুড়ি চেয়েছিলো অনিকেতও যাক নন্দিনীর সাথে। কিন্তু ইলেক্শনের কিছু প্রোটোকল থাকে। তাছাড়া বললেও যে অনিকেত যেতে রাজি হত তা তো এমন নয়। নন্দিনী প্রায় হাতে পায়ে ধরে অনিকেতকে দিয়ে তার বাবা মাকে রাজি করায়। পারমিশন আদায় করে আনে শশুড় শাশুড়ির থেকে এক রাত হাকিমপুরে থাকার। বিশেষ করে শাশুড়ির থেকে। কারণ তিনিই বেশি বেঁকে বসেছিলেন যাওয়ার ব্যাপারে। নন্দিনীর কাছে ট্রিপটা এই জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ কাজের জায়গায় তার নরম স্বভাবের জন্য তাকে উঠতে বসতে সহকারী শিক্ষকদের দ্বারা অবমূল্যায়নের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষকরা মেয়ে বলে তাকে একটু বেশি হেয় করে। মেয়েদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাটা তাদের যেন একপ্রকার দৈনন্দিন রুটিন হয়েগেছে। সুস্মিতা এসব গায়ে না মাখলেও নন্দিনীর জাত্যাভিমানে লাগে। নারী হিসেবে কেউ তাকে ছোট করবে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। যখন হাকিমপুরে তার ইলেক্শন ডিউটি পড়লো তখন স্কু'লের প্রিন্সিপাল সমেত সহ-শিক্ষকরা সবাই একযোগে বলেছিল নন্দিনীর শশুরবাড়ি যা রক্ষণশীল তারা কিছুতেই বাড়ির বউকে অত দূরে পাঠাবে না। স্কু'লে চাকরি করতে দিচ্ছে এই অনেক। নন্দিনী তখন দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছিল সে শুধু ডিউটি করতেই যাবেনা, তার উপর সুষ্ঠভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে সবার মুখে ঝামা ঘষে দেবে। স্কু'লের সহকর্মীদের থেকে শুরু করে বাড়িতে শশুড়-শাশুড়ি অবধি, যারা যারা তাকে নরম স্বভাবের মেয়ে বলে হেয় করে, দুর্বল ভাবে, তাদের প্রত্যেককে উচিত জবাব দেবে বলে ঠিক করেছিল। তাই নন্দিনীর কাছে এই নির্বাচনটা নিজেকে প্রমাণ করার লড়াইও ছিল বটে। নন্দিনী খেয়াল করলো যখন সে পেপ টক্ দিচ্ছিলো তখন বীরেন একনাগাড়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। এভাবে সবার সামনে হাঁ করে তাকিয়ে থাকাটা খুব একটা ভালো ঠেকছিলো না নন্দিনীর। বাকিরাও তো উপস্থিত আছে সেখানে, তারা কি ভাববে? নন্দিনী জানে বীরেনের তার প্রতি একটা অতিরিক্ত উৎসাহ রয়েছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে আকছার পুরুষদের মধ্যে এরকম ঘটে থাকে। কিন্তু সেটা সবাইকে জানান দেওয়ার কি খুব দরকার? তারপর যখন নন্দিনী নিজের কথা শেষ করলো তখন গোটা রুমের মধ্যে একমাত্র বীরেনই কথা বলে উঠলো, হোক না তা সমর্থন করে বলা কথা, তবুও নন্দিনী কি তার কাছে কোনোরকম বিশেষ সমর্থন চেয়েছিল? এসব দেখে ঘরে উপস্থিত লোকাল পুলিশকর্মীরা চোখ টিপে টিপে হাসছিল। পুলিশকর্মীদের সাথে বীরেনের তাল মিল খুব ভালো। সেই জন্যই বীরেনের সঙ্গ দিতে একযোগে বলে উঠেছিল যে তারাও নাকি নন্দিনী ম্যাডামের সাথে রয়েছে। আসলে তারা বীরেনের সাথে রয়েছে, আর বীরেন নন্দিনীর সাথে। এইভাবে দুইয়ে দুইয়ে চার হয়েছে। কিন্তু স্কু'লে উপস্থিত কিছু শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের অতটাও প্রিয় পাত্র নয় বীরেন। স্থানীয় হওয়ার সুবাদে শুধু পরিচিতিটা আছে। হয়তো তারা বীরেনের স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। না জানে লোকটা এর আগে আর কতজনের সাথে এরকম ফ্লার্ট করার চেষ্টা করেছে। কতজনই বা সেই ফাঁদে পা দিয়েছে! যারা দিয়েছে তাদের সাথে নন্দিনীকে একই শ্রেণীতে রাখছে না তো গ্রামের লোকাল পুলিশ থেকে শুরু করে শিক্ষাকর্মীরা? সেটাই ভয় নন্দিনীর। সকাল থেকে সেই রিকশাওয়ালা রিংকু আছে তার সাথে, যাকে শুধু ফাইফরমাশের জন্য নয়, বিভিন্ন কারণে পরিবহণের বিষয়ে কাজে লাগাতেও রাখা হয়েছে। এছাড়া স্কু'লের পিওন রমেন দা, এস পি ভুতোড়িয়া, ব্লক সভাপতি নুরুল হাসান প্রায় সবাই সাক্ষী এই বীরেন লোকটা কিভাবে অবিরাম নন্দিনীর পিছনে ঘুর ঘুর করছে। যদিও এরা কি ভাবলো তাতে নন্দিনীর কিছু এসে যাবেনা। কারণ মাত্র একদিনের ব্যাপার, তারপর সে আবার বাড়ি ফিরে যাবে। আর হয়তো কোনোদিনও হাকিমপুরে আসা হবেনা তার। এবং সুস্মিতা তার প্রাণের বন্ধু। ওর মধ্যে হাজার খামতি থাকলেও সে কখনোই নন্দিনীর ব্যাপারে কুকথা রটায়ও না, সহ্যও করতে পারেনা। তাই সুস্মিতার পরকীয়ার ব্যাপারে নন্দিনী আপত্তি করলেও তার সাথেই মেশে, কারণ সে বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু বীরেন? সে কি বিশ্বাসযোগ্য? সত্যিই লোকটা কিরকম বোঝা মুশকিল। তার চেয়ে বরং নন্দিনীকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। লোকটাকে নিজের থেকে যতদূরে রাখা যায় ততই মঙ্গল। এই ভেবে সে একটা ফন্দি আঁটলো। ভোটিংয়ের জন্য স্কু'লের দুটি রুম বরাদ্দ হয়েছিল। নন্দিনী প্রিসাডিং অফিসার হিসেবে ঘোষণা দিল এই ইলেকশন টিমটা-কে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হবে যা দুটি আলাদা রুমের দায়িত্বে থাকবে। একটি টিম লিড করবে সে নিজে এবং কৌশিক বাবু, অপরটি সুস্মিতা ও বীরেন স্যার। এই ঘোষণার শুনে বীরেন নন্দিনীকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু সে তাকে বলার সুযোগ দিল না। প্রিসাইডিং অফিসারের কথাই শেষ সিদ্ধান্ত বলে সে অন্যান্য কাজ গুলো দেখতে লাগলো। বীরেন স্বভাবতই খুব হতাশ হল। কিন্তু তার কিছু করার ছিলনা। প্রকাশ্যে সে নন্দিনীর টিমে থাকার আবদার করতে পারতো না, তা খুবই দৃষ্টিকটু লাগতো। লোকাল পুলিশকর্মীরা তখনো একে অপরের দিকে চেয়ে চোখের ইশারায় নন্দিনী ম্যাডামকে নিয়ে আকার ইঙ্গিতে গসিপ করে যাচ্ছিলো। নন্দিনী সেটা বুঝতে পেরে তাদের গোটা গ্রাম ঘুরে একবার রেকি করে আসতে বললো। সুস্মিতাকে বললো ভোটার লিস্টটা নিয়ে এসে চেক করতে কতজন ভোটার রয়েছে গ্রামে। কৌশিক বাবুকে নির্দেশ দিলো স্টোরেজ রুমে গিয়ে দেখে আসতে ব্যালট বাক্স গুলো সব ঠিকমতো সিল করা আছে কিনা। বীরেনকে জিজ্ঞেস করলো কাল ভোটের পর কমিশন কখন ব্যালট বাক্স গুলো নিয়ে যাবে? বীরেন বললো সে যতদূর জানে কাল সন্ধ্যের পর সদরের কন্ট্রোল অফিস থেকে লোক আসবে ব্যালট বক্স গুলো নিতে। নন্দিনী বীরেনকে নির্দেশ দিল যেকোনো ভাবেই হোক সঠিক সময়টা জেনে তাকে বলতে। আসলে সেইমতো সে অনিকেতকে কালকে আসতে বলবে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রমেন দা টিচার্স রুমে জলের বোতল নিয়ে এল। তখন নন্দিনী গ্রামের আবহাওয়া কিরকম, অর্থাৎ বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলো। রমেন দা অভিজ্ঞ মানুষ। আবহাওয়াবিদ না হলেও তাঁর মতো গ্রামের মানুষদের আকাশের চরিত্র সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থেকে থাকে। চাষবাস করেই তাদের জীবনযাপন চলে কিনা, তাই জন্য। সেই অভিজ্ঞতার উপর ভর করেই রমেন দা বললো, বৃষ্টির সম্ভাবনা তো রয়েছে, তবে তা আনুমানিক পঞ্চাশ শতাংশই। নন্দিনী মনে মনে প্রার্থনা করলো কাল অবধি যেন আকাশের মুখ ভার না হয়। আজকে এখনকার মতোই যেন রৌদ্রোজ্জ্বল ঝলমলে থাকে পরিবেশ। নাহলে গ্রামের বৃষ্টি কবিতা সাহিত্যে ভালো লাগে। শহর থেকে ডিউটি করতে এসে পাঁকে পা পড়লে, এবং বৃষ্টিতে কাপড় ভিজলে রোম্যান্টিসিজ্ম জানলা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের টিম রেকি করে ফিরে এল। নন্দিনী গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো। আশানরুপ উত্তর পেলনা। ওই ব্লক সভাপতি নুরুল হাসান নিজের সঙ্গী সাথী নিয়ে জটলা করে কোনো ঘোঁট পাকানোর তালে রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। তাই সতর্ক থাকতে হবে। নন্দিনী এই কথায় বিন্দুমাত্র আর ভয় না পেয়ে খুব দৃপ্ত কণ্ঠে পুলিশকর্মীদের আদেশ দিল কোনোভাবেই কোনো রাজনৈতিক নেতা যেন ভোটারদের ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করতে না পারে। ম্যামের এই আগ্রাসী মনোভাব দেখে পুলিশকর্মীদের মনোবল বেড়ে গেল। তাদের মনে নন্দিনী ম্যাডামকে নিয়ে শ্রদ্ধা জন্মালো। এতক্ষণ যেই নন্দিনী ম্যাডামকে মেয়ে বলে তারা দুর্বল ভাবছিল, সুন্দরী হওয়ার দরুন পিঠ পিছনে তাকে বীরেন স্যারের সাথে জড়িয়ে নানান কাল্পনিক গল্প ফেঁদে রসালো গসিপ করছিল, সেই নন্দিনী ম্যাডামের এত আগ্রাসী ও আত্মবিশ্বাসী বার্তা শুনে পুলিশগুলো সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নিয়মনিষ্ঠ হয়ে একসাথে "ইয়েস ম্যাম" বলে স্যালুট মারলো! নন্দিনীও তার জবাবে তাদের স্যালুট করলো। প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে সে পারতো এক্সট্রা ফোর্সের জন্য সদরের কন্ট্রোল অফিসে আবেদন করতে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকার দরুন নিরাপত্তা রক্ষীর অভাব প্রায় প্রতি বুথেই হবে। সুতরাং কন্ট্রোল অফিসে বললেই রিইনফোর্সমেন্ট পাওয়া যাবেনা। নন্দিনী তাই বর্তমান বুথে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের উপরই ভরসা রাখলো। শুধু কন্ট্রোল অফিসকে ফোন করে জানিয়ে রাখলো গ্রামের বর্তমান অন্তর্নিহিত অবস্থার কথা, যাতে এমার্জেন্সি হলে এক্সট্রা ফোর্স চাইলে পাওয়া যায়। লাঞ্চের সময় হয়ে এল। রিংকু নিজের রিক্সা করে আলির দোকান থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট পার্সেল করে নিয়ে এসছিলো। নন্দিনী সচরাচর রেড মিট খেতে পছন্দ করেনা। তাই মটনের বদলে সে চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার করেছিল। সুস্মিতাও তার বান্ধবীর দেখা দেখি চিকেন বিরিয়ানি আনতে বলেছিল। আর বাকিদের জন্য ছিল আলির দোকানের রেওয়াজি খাসির স্পেশাল এ-ওয়ান মটন বিরিয়ানি! খাবার পাশের রুমে সার্ভ করার ব্যবস্থা হয়েছে। টিচার্স রুম থেকে একে একে সবাই বেরিয়ে পাশের ঘরে যেতে লাগলো। প্রিসাইডিং অফিসার নন্দিনীও যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো। কিন্তু বীরেনের কোনো হেলদোল ছিলনা। সে চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে। নন্দিনীর তা দেখে একটু অদ্ভুত লাগলো। একবার ভাবলো ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করবে কিনা সে কখন খেতে যাবে? পরক্ষণে ভাবলো শুধু শুধু অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন করে লাভ নেই। কথায় কথা বাড়বে ফালতু। তাছাড়া বীরেন তো শুনেছে পাশের ঘরে রিংকু আর রমেন দা মিলে খাবার সার্ভ করছে সবাইকে। খিদে পেলে নিজেই আসবে। নন্দিনীর অহেতুক নাক গলানোর দরকার নেই। এইভেবে নন্দিনীও রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রইলো থেকে শুধু বীরেন। বীরেন খেয়াল করলো নন্দিনী ম্যাডাম তার ফোনটা নিয়ে যেতে ভুলে গ্যাছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। সে ঝট করে কেউ আসার আগে ফোনটা সরিয়ে নিয়ে নিজের কাছে রাখলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো নন্দিনী টের পাবে সে ফোনটা ফেলে এসছে, তখন সে আবার ফিরে আসবে টিচার্স রুমে ফোনটা নিতে। সেই অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে ওঁত পেতে বসে রইলো বীরেন। ঠিক সেইমতোই নন্দিনীর হঠাৎ মনে পড়লো সে ফোনটা নিয়ে আনেনি। ওই রুমে ফেলে এসছে। তা নিতে সে আবার টিচার্স রুমে গেলো। দেখলো বীরেন সেই তখন থেকে চুপচাপ এক কোণায় চেয়ারে বসে আছে। নন্দিনী নিজের বসার জায়গায় ফোনটা খুঁজছিল। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে ফোনটা সে পাচ্ছিলো না, তন্ন তন্ন করে খুঁজেও না। অবশেষে বীরেন নিজের চেয়ার থেকে উঠলো। নন্দিনীর দিকে এগোতে থাকলো। বীরেনকে এভাবে হঠাৎ উঠে আসতে দেখে নন্দিনী কিছুটা ঘাবড়ে গেল। রুমে কেউ নেই। কোনো অন্যায় সুযোগ নেবে না তো সে? নন্দিনী চারদিকটা ভালো করে তাকালো। সত্যিই ঘরে সে এবং বীরেন ব্যতীত আর কেউ উপস্থিত নেই। ঘরে তো কেউ নেই-ই, উপরন্তু দরজার বাইরেও এমন কেউ নেই, যার উপস্থিতির কারণে বীরেন নিজের কদম নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। টিচার্স রুমে তখন কেবল দুটি মানুষ, নন্দিনী ও বীরেন। নন্দিনী ফের বাইরের দিকে একবার চেয়ে দেখলো। নাহঃ! সত্যিই সেইমুহূর্তে সেই জায়গা দিয়ে এমন কেউ যাচ্ছেনা যাকে দেখে বীরেন সাবধান হয়ে যাবে। শুধু একটাই বাঁচোয়া, রুমের দরজাটা খোলা। ফলে কারোর হঠাৎ আগমনের শঙ্কা নিশ্চই বীরেনের মধ্যে বিদ্যমান! সুতরাং তার এমন কোনো দুঃসাহসী উদ্যোগ নেওয়া উচিত হবেনা যা তাকে বিপাকে ফেলতে পারে! নন্দিনীর বারবার দরজার দিকে তাকানোতে বীরেন বুঝলো তার শিকার হয় পালাতে চাইছে নতুবা বাইরে থেকে কারোর নজর তার দিকে আকর্ষণ করিয়ে এই একাকী মুহূর্তটাকে নষ্ট করতে চাইছে। তাই সে নন্দিনীকে চমকে দিয়ে টিচার্স রুমের দরজাটা গিয়ে বন্ধ করে দিল। তারপর বীরেন আবার নন্দিনীর পানে পা বাড়ালো। বেপরোয়া ভাবে এগিয়ে যেতে লাগলো নিজের লক্ষ্যের দিকে। নন্দিনীর যত নিকটে সে আসছিল, ততই ম্যাডামের হৃদস্পন্দন বেড়ে চলেছিল। নন্দিনী তখন এক বেচাড়া শিকারের মতো দাঁড়িয়েছিল দানব শিকারির সামনে। খুব কাছে চলে এসেছিল সে। বীরেনের মুখ থেকে নির্গত সিগারেটের নেশাময় গন্ধে নন্দিনীর গা গুলিয়ে উঠছিল। নন্দিনী সিগারেট বা তামাকজাতীয় কোনো নেশার ধোঁয়া বা গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। অনিকেতের হাজার দোষের মধ্যেও এই একটা গুণ তাকে কিছুটা হলেও স্বামী হিসেবে ভালো নম্বর দিয়ে যায়। সেও আগে খুব ধূমপান করতো। বিয়ের পর বউয়ের কথায় তা কমিয়ে আনে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে সঙ্গ দিয়ে খেলেও, নন্দিনীর সামনে কখনো সিগারেটে হাত দেয়না অনিকেত। বীরেনের থেকে দূরে যেতে নন্দিনী দু'পা করে পিছতে লাগলো। পিছতে পিছতে দেওয়ালে ধাক্কা খেলো, অর্থাৎ পেছোনোর আর জায়গা নেই। বীরেন আরো কাছে আসায় নন্দিনী দেওয়ালের সাথে একেবারে সিঁটিয়ে গেল। বীরেন নিজের দু'হাত নন্দিনীর দুই দিকে করে দেওয়ালে রাখলো, এমন করে যেন সে নন্দিনীকে চারদিক দিয়ে ঘিরে নিয়েছে, অথচ তাকে স্পর্শ করেনি। বীরেনের এরূপ মনোভাব দেখে নন্দিনী প্রবলভাবে আতংকিত হয়ে পড়লো। বীরেনের এই উন্মাদনার ব্যাপারে সবাইকে অবগত করতে তার মন চাইছিল চিৎকার করে উঠতে। কিন্তু সে তো প্রিসাইডিং অফিসার। একজন লোকাল ইনচার্জ এভাবে তাকে র‍্যাগিং করছে সেটা জানাজানি হলে লোকে তার উপর হাসবে। মেয়ে বলে ফের হেয় করবে। তাই তাকেই এই পরিস্থিতিকে একা হাতে সামাল দিয়ে মোকাবিলা করে বেরিয়ে আসতে হবে। সে বীরেনের দিকে চেয়ে দেখলো, একজন ছয় ফিট লম্বা হাট্টাগোট্টা দানবাকৃতি লোক তার মতো ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির কোমল শরীরের সামনে দন্ডায়মান হয়ে দাঁড়িয়ে। নন্দিনীকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বীরেন বললো, "আপনি খালি আমার থেকে দূরে সরে সরে থাকেন কেন? আমি কোথায় আপনার সাহায্য করতে মুখিয়ে আছি, আর আপনি সবসময়ে আমার থেকে গা বাঁচিয়ে চলছেন!" বীরেন নিম্নস্বরে কথাটা বললেও তার কথা ছিল আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। একটা ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড, তার এলাকায় দাঁড়িয়ে কেউ তাকে কিচ্ছু বলতে পারবেনা গোছের মনোভাব। বীরেনের বাংলা শহুরে দের মতোই মার্জিত ও পরিষ্কার, গ্রাম্য ছাপটা সেই অর্থে নেই বললেই চলে। হয়তো অনেকদিন কাজের সূত্রে শহরে কাটিয়েছে বলে। "আমি থুড়ি আপনাকে খেয়ে ফেলবো! এত ভয় পাচ্ছেন কেন?" নন্দিনীর নীরবতা ভাঙতে বীরেন বলে উঠলো। নন্দিনী নিজের সকল সাহস একত্রিত করে বীরেনের চোখের দিকে তাকালো। নন্দিনী ভাবলো আত্মবিশ্বাসের সাথে চোখে চোখ রাখলে সে হয়তো একটু সমঝে যাবে, নন্দিনীকে দূর্বল ভাববে না। কিন্তু বীরেন তো তার এই দুই নয়নে ডুবে যেতে চাইছিল। উল্টে সে ঘোরাচ্ছন্ন চোখে নন্দিনীর দিকে চেয়ে রইলো। নন্দিনী তার চোখের ভাষা বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলো। তবে সে বীরেনের সেইসব কল্পনাপ্রসূত ভাবনা গুলিকে কোনোপ্রকার এন্টারটেইন করতে চাইলো না। বীরেন ফের বলে উঠলো, "এই গ্রামে আপনি আমার অতিথি। আপনার যত্ন করা আমার পরম কর্তব্য। চিন্তা করবেন না, বিনা অনুমতিতে আমি আপনার সাথে এমন কিচ্ছু করবো না যাতে আপনাকে কোনো অস্বস্তিতে পড়তে হয়।" এই কথা শুনে নন্দিনী একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। পরিস্থিতিটাকে স্বাভাবিক করার জন্য নন্দিনী চেষ্টা করলো একটা সৌজন্যের হালকা হাসি দিয়ে বীরেনকে অভিবাদন জানাতে। কিন্তু স্নায়বিক দুর্বলাবস্থার চাপে তার চোয়াল এতটাই শক্ত হয়েগেছিলো যে তখনকার মতো ঠোঁট চওড়া করে সৌজন্যের স্বল্প হাসিটুকুও আর নন্দিনীর মুখে ফুটে উঠলো না। নন্দিনী খেয়াল করলো বীরেন চোখ দুটোর নজর তার চোখ থেকে নেমে এসে সেই শক্ত হয়ে আসা চোয়ালের উপর অধিষ্ঠিত ঠোঁটের উপর গিয়ে পড়েছে। তার ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বীরেন বললো, "এটা ঠিক যে আমি আপনার অনুমতি ছাড়া একটা পাও আগে বাড়াবো না। তবে যদি আপনি এই অধমের উপর কৃপা করেন তাহলে আমাদের মধ্যে অনেক কিছুই হতে পারে....." নন্দিনীর বুঝতে সময় লাগলো না বীরেন ঠিক কি বোঝাতে চাইছিলো এই কথার মাধ্যমে। লজ্জায়, অপমানে তার মাথায় আগুন চড়ে বসলো। সে আর কিচ্ছু না ভেবে কষিয়ে একটা চড় বসালো বীরেনের গালে, "ঠাঁসসস্স!!" বীরেন হতবাক হয়েগেল। সে কিছু বুঝে উঠবে তার আগেই নন্দিনী আবার একটা চড় বসালো অপর গালে। বীরেন ছিটকে গিয়ে পিছিয়ে এল। সেই ফাঁকে নন্দিনী সটান দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে বাহির হতে গমন করলো, পিছনে ফিরে একবারও তাকালো না।
Parent