এক মুঠো খোলা আকাশ - নতুন রূপে - অধ্যায় ৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69058-post-5967137.html#pid5967137

🕰️ Posted on June 18, 2025 by ✍️ Manali Basu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1454 words / 7 min read

Parent
পর্ব ৫ নন্দিনীর বাপেরবাড়ি কাঁচড়াপাড়ায়। মফস্সল এলাকায় থাকলেও তার পরিবার অনিকেতের শহুরে পরিবারের থেকে অনেক বেশি উদার। নন্দিনীর পড়াশুনা, বেড়ে ওঠা সেখানেই। কাঁচড়াপাড়া কলেজ থেকে স্নাতক, এবং কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ ইংরেজিতে। দ্বাদশ শ্রেণী অবধি সে স্থানীয় একটা গার্লস স্কু'লে পড়েছে, কিন্তু কলেজ জীবনের ফ্রেন্ড সার্কেলে ছেলে মেয়ে উভয়েরই উপস্থিতি ছিল, তবুও কখনো বেপরোয়া লাইফস্টাইল নিজের জন্য বেছে নেয়নি সে। কলেজ জীবনে নন্দিনী অনেক স্মার্ট চটপটে ছিল। ফ্লুয়েন্ট ইংলিশে কথা বলতো। বাকি মেয়েদের মতোই জিন্স টপ পড়তো। কিন্তু বিয়ের পর সব বন্ধ হয়েগেল। শাশুড়ি মার্ নির্দেশে শাড়ি পড়া শুরু হল। পুরোনো জিন্স টপ টিশার্টের জায়গা হল বাপের বাড়ির আলমারিতে। কলেজ জীবন আর ফিরে দেখা হল না। শাড়ি ব্যাতিত অন্য কিছু পড়া বারণ ছিল অনিকেতের বাড়ির বউয়ের। মা বাবা যখন বিয়ের সম্বন্ধ দেখছিল তখন সে স্কু'ল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বসে। পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো চাকরি পরীক্ষার ফলাফল বেড়োতে বছর পার হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। বিয়ের পর সে চাকরিটা পায়। কলকাতার মধ্যে এবং স্কু'ল টিচারের চাকরি বলে শশুড়বাড়ির কেউ আর বাধা দেয়নি। তবে চাকরি পেয়েই তার জীবনযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। কর্মক্ষেত্রেও তাকে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। স্কু'লটা বাংলা মিডিয়াম হলেও কো-এডুকেশন। ফলে টিচিং ফ্যাকাল্টিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা উভয়েরই নিয়োগ রয়েছে। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, তারপর স্কু'ল যেখানে সে শিক্ষকতা করে, সবজায়গায় কেউ না কেউ থাকতোই লোলুপ দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে। ছলে বলে কৌশলে কাছে আসার প্রচেষ্টা চলতো এবং এখনো চলে। কলেজেও এরকম ভাবেই নন্দিনী একটি ছেলেকে কষিয়ে চড় মেরেছিল তার সাথে অসভ্যতা করতে চাওয়ার জন্য। বীরেনকে প্রশ্রয় না দিয়ে উল্টে চড় মারাটা তার কাছে নতুন কিছু নয়। সে আগেও এভাবে সকলের নিষিদ্ধ কামনাকে প্রতিহত করে নিজেকে পবিত্র রেখেছে। চড় মেরে টিচার্স রুম থেকে বেড়োলো নন্দিনী। আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা পাশের রুমে পৌঁছে সুস্মিতার পাশে গিয়ে আবার বসলো। "কিরে, তোর প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গেছিলিস?", মুচকি হেসে সুস্মিতা জিজ্ঞেস করলো। নন্দিনী তখন মজা করার বা নেওয়ার মানসিকতায় ছিলনা। তবু সে কোনো রিএক্ট করলো না। চারিপাশে অনেক লোকজন আছে। পাছে তারা সঠিক আন্দাজ করে ফেলে বীরেন আর তার মধ্যে ঘটে যাওয়া শীতল যুদ্ধের ব্যাপারে! তাই শুধু বিরক্তির স্বরে নন্দিনী উত্তর দিল, "তুই একটু থাম এবার। সকাল থেকে খালি বাজে কথা বলে যাচ্ছিস।" "দেখ তোর শাশুড়ি মা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তোকে নজরে নজরে রাখার। পাছে তার বউ হারিয়ে যায়। বা কারোর সাথে পালিয়ে যায়।" "আবার??" "সরি সরি। আচ্ছা সিরিয়াসলি জিজ্ঞেস করছি কোথায় গেছিলিস? টিচার্স রুমে?" "হুম!", অন্যমনস্ক হয়ে জবাব দিল নন্দিনী। "কি করতে গেছিলি আবার?" "আমি তো........" প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মনে পড়লো, যে কাজের জন্য সে গেছিল সেটাই তো হয়নি! তার ফোন! সেটা তো খুঁজে পায়নি! তাহলে কি আবার যাবে একবার? নাহঃ নাহঃ, আবার গেলে যদি বীরেন ধরে! সে ভাবতেই পারে তার টানে ফিরে এসছে নন্দিনী। উৎসাহ পেয়ে যাবে তখন। ..... নন্দিনীকে চিন্তামগ্ন দেখে সুস্মিতা আবার জিজ্ঞেস করলো, "কিরে? বললিনা তো, কেন গেছিলিস?" "কি..... ক্কি.. কিছুনা.. ওই কয়েকটা সই-সাবুত বাকি ছিল সেটা ভুলে গেছিলাম করতে, মনে পড়লো, তাই যেতে হল আবার।" ফোনের কথাটা ইচ্ছে করে বললো না, নাহলে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করতো। ফোনটা পেয়েছিস কিনা? পাসনি যখন তখন গেল কোথায়? এতক্ষণ সময় কেন লাগলো ওখানে? বীরেনকে জিজ্ঞেস করেছিলিস কিনা ফোনের ব্যাপারে? কেন সাহায্য চাসনি ওর কাছ থেকে? সে (সুস্মিতা) কি সাহায্য করতে যাবে খোঁজার জন্য? ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ফোন খুঁজতে যদি নন্দিনী সুস্মিতাকে নিয়ে যায় তাহলে না জানি বীরেন কি না কি বলে বসবে। অনিশ্চয়তায় ভরে গেছিল তার মন-মস্তিস্ক। সবটা কিরকম ধোঁয়াশা লাগছিল নন্দিনীর এই হাকিমপুর গ্রামে এসে। "ধুড়ড়ঃ!!" বিরক্ত হয়ে উঠেছিল নন্দিনী মনে মনে! ...... "হুমঃ!! বুঝি বুঝি, সব বুঝি! সই সাবুত কি পরে করা যেতনা? আসলে তুই বীরেনকে ডাকতে গিয়েছিলিস খাওয়ার জন্য, এটা বললেই হয়। নাহ আমি এটা বলছি না যে তুই অন্য কোনো বিশেষ টানে গেছিস। আসলে প্রিসাইডিং অফিসার ম্যামের তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি, এটা দেখার যে তার সকল সহকর্মী ঠিকমতো খেয়েছে কিনা, এবং আরো কত কি.... হি হি হি হি!...." সুস্মিতা ক্রমাগত নিজের বান্ধবীর লেগ পুল করছিল। নন্দিনীর তাতে একেবারেই ভালো লাগছিল না। অন্য সময় হলে তাও হালকা মেজাজে সয়ে নেওয়া যেত, কিন্তু সে-ই জানে কিছুক্ষণ আগে টিচার্স রুমে তার সাথে ঠিক কি হয়েছে! তাই সে না পারতে অবশেষে সুস্মিতাকে হালকা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল। সুস্মিতা নিজের বান্ধবীকে ভালো মতো চেনে। অনেকদিন ধরে একসাথে দুজনে শিক্ষকতা করছে। নন্দিনী যে কোনো একটা ব্যাপারে খুব আপসেট হয়ে আছে সেটা বুঝতে বাকি নেই। আর সেই ব্যাপারটা টিচার্স রুমে যাওয়ার কারণে হয়েছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে। সুস্মিতা ভাবলো ওই রুমে তো বীরেন ছাড়া আর কেউ নেই। তবে সে কি কিছু করেছে? এক গভীর রহস্য দানা বাঁধলো সুস্মিতার মনে। বীরেন লাঞ্চ করতে আসেনি। কেউ সেটা খেয়াল করেনি। নন্দিনী বুঝলো সে এখন এমুখো হবেনা। হয়তো লজ্জায়, অনুশোচনায়। তাই নন্দিনী তাড়াতাড়ি লাঞ্চটা সেরে সাহস করে আরো একবার টিচার্স রুমের দিকে পা বাড়ালো, ফোনটা খুঁজতে, সবার অলক্ষ্যে। সুস্মিতাও ওর পিছু নিল, বিষয়টা খতিয়ে দেখতে। টিচার্স রুমে ঢুকে নন্দিনী দেখলো সেই একইভাবে বীরেন ঘরের কোণায় চেয়ারে বসে রয়েছে। নন্দিনী গম্ভীরভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি আমার ফোনটা দেখেছেন?" বীরেন আবার নিজের চেয়ার থেকে উঠলো। তাকে আবার কাছে আসতে দেখে নন্দিনী অবাক হয়ে গেল। চড় খেয়েও লজ্জা হয়নি লোকটার! সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবেনা তো সে? ভেবে আঁতকে উঠলো! কিন্তু নন্দিনী এবার আগের থেকে অনেক বেশি দৃপ্ত ও প্রস্তুত ছিল, সকল অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য। তবে বীরেনের মন ততক্ষণে অন্য মোড় নিয়েছিল। সে বুঝেছিল এভাবে নন্দিনীকে বাগে আনা যাবেনা। অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে। তাই সে নম্রভাবে নন্দিনীর কাছে এসে প্রথমে ক্ষমা চাইলো পূর্বের ঘটনার জন্য। তারপর পকেট থেকে নন্দিনীর ফোনটা বের করে তার হাতে তুলে দিয়ে বললো, "এটা আপনি প্রথমবার টিচার্স রুম থেকে বেড়োনোর সময়ে টেবিলেই ভুলে রেখে গেছিলেন। আমি তখন ফোনটা নিজের জিম্মায় নিয়েছিলাম যাতে এরকম জায়গায় কোনো অচেনা অজানা কারোর হাতে এটা না পরে।" নন্দিনী বীরেনের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি লাঞ্চ করতে যাননি কেন? সেখানে গিয়েই তো ফোনটা দিয়ে আসতে পারতেন। এখানে নিজের কাছে রেখে বসে থাকলেন কেন?" "আমার খিদে ছিলনা ম্যাডাম, তাই খেতে যাইনি। ভাবলাম পরে সুযোগ পেয়ে ফোনটা ঠিক হ্যান্ডওভার করে দেব। কিন্তু তার আগেই আপনি ফোনটা খুঁজতে চলে এসেছিলেন।" "আর তাই জন্য বুঝি আপনি লাইসেন্স পেয়ে গেছিলেন একটা মেয়েকে ঘরে একা পেয়ে তার সাথে অসভ্যতামো করার? "ছিঃ ছিঃ এটা কি বলছেন!.. আসলে তখন হঠাৎ মাথায় একটু দুস্টু বুদ্ধি খেলেছিল, আর তাই বোকামিটা করে ফেলি। আপনি সেটাকে ভালোভাবে না নিয়ে আমার দু'গালে চড় কষিয়ে চলে গেলেন। ফোনটা আর দেয়া হলনা।" "এটাকে বোকামি বলেনা, এটা রীতিমতো..... থাক্!", নন্দিনী কথাটা বললো না। .. "কি? থামলেন কেন? আমিও জানতে চাই গ্রামে যেটাকে বোকামি বলে সেটা শহরের মানুষরা কি বলে?" "কি বলে সেটা নাই বা বললাম। তবে আপনি যেটা করতে যাচ্ছিলেন সেটাকে পৃথিবীর কোনো প্রান্তেই বোকামি বলেনা।" "অতিথি সমান প্রিসাইডিং অফিসার ম্যাডামের সাথে ফ্লার্ট করাটা যদি আপনি গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মনে করেন তাহলে আপনার অপরাধী আপনার সামনে এই হাঁটু গেড়ে বসলো। পৃথিবীর যেকোনো আইনের দ্বারা আপনি আমাকে শাস্তি দিতে পারেন। শুধু একটাই শর্ত, তারপরে যেন এই অধ্যায়টা ভুলে গিয়ে আপনি নতুন করে আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন।" এই বলে বীরেন নাটকীয়ভাবে নন্দিনীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো ক্ষমা চাইতে। তাতে নন্দিনী বেশ বিড়ম্বনায় পড়লো। এখন যদি কেউ চলে আসে কি ভাববে! সবার তো মোটামুটি খাওয়া শেষ হয়ে এসছে বোধহয়। কেউ দেখে ফেলার ভয়ে নন্দিনী বীরেনকে বারবার উঠতে বলছিল। বীরেন ছাড়বার পাত্র নয়। সে বলছিল দুটো চড় যথেষ্ট নয়, নন্দিনীর তাকে আরো আঘাত করুক যদি মনে করে তার অপরাধ আরো গর্হিত। নন্দিনী বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিল বীরেনের অপরাধ অতটাও দণ্ডনীয় নয়, সে যেন তার পা ছেড়ে উঠে পড়ে। কেউ চলে আসলে যে কেলেঙ্কারি কান্ড বাঁধবে। কিন্তু বীরেন তার কথায় অনড়। যতক্ষণ না ম্যাডাম তাকে ক্ষমা করছেন ততক্ষণ সে ম্যাডামের পদতলে পড়ে থেকে নিজের পাপমোচন করবে। বারবার নিজের কৃতকর্মের জন্য বীরেন নন্দিনীর কাছে ক্ষমা চাইছিল। বোঝাতে চেষ্টা করছিল ওসবের পিছনে ওর কোনো পাশবিক অভিলাষ ছিলনা। সে একটু মজা করছিল। ব্যস, আর কিছু না! বীরেনের পীড়াপীড়িতে অবশেষে নন্দিনী তার কথা মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দিল। লোকলজ্জার ভয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে বীরেনকে ক্ষমা করে দিতে হল। সাথে এটাও বলে দিল যেন এরকম তথাকথিত মজা বীরেন পূনরায় তার সাথে আর না করে। আত্মপক্ষ সমর্থনে বীরেন পুরো বিষয়টা-কে এমনভাবে সাজিয়ে নন্দিনীর কাছে উপস্থাপন করেছিল, তাতে উল্টে নন্দিনীর নিজেকে নিয়েই সংশয় হলো এটা ভেবে যে সে-ই হয়তো বীরেনের উপর ওভার রিএক্ট করে ফেলছে। গ্রামের মানুষ টিসিং আর ফ্লার্টিং এর মধ্যেকার সূক্ষ্ম পার্থক্যটা হয়তো বোঝেনা যতক্ষণ না তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেই কারণেই বীরেন ভুলটা করে ফেলেছে। যতই সে হম্বিতম্বি করুক, আদতে তো লোকটা একটা গেঁয়ো ভূত। এই ভেবে নন্দিনী বিষয়টা নিয়ে আর জলঘোলা করলো না। বীরেনকে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার নির্দেশ দিয়ে নন্দিনী ফোনটা নিয়ে টিচার্স রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো। যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো বীরেন কি লাঞ্চ করবে না? উত্তরে বীরেন বললো, প্রথমে তার খিদে ছিলনা বলেই বাকি সকলের সাথে পাশের রুমে যায়নি। তারপর নন্দিনী ম্যাডামের কাছে দুটো গালে চড় খেয়ে আরোই খিদে মিটে গেছিল। এই কথা শুনে নন্দিনী হেসে ফেললো। মজা করে বললো, "তা শুকনো চড়ে কি চিঁড়ে ভিজলো, নাকি গামছা ভিজিয়ে উত্তম মধ্যম দিতে হবে?" নন্দিনীর কথায় বীরেনও হেসে ফেললো। বললো, "না না, চিঁড়ে ভিজলেও হজম হয়নি। খিদে এখন পেয়েছে, তবে সেটা খাবারের।" "তাহলে লাঞ্চটা সেরে নিন গিয়ে। আমি আসছি", বলে নন্দিনী বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বাইরে থেকে সুস্মিতা সব শুনলো। নন্দিনী বেরোনোর আগেই সে দরজার বাইরে থেকে সরে গেল যাতে নন্দিনী তাকে দেখে না ফেলে।
Parent