এক মুঠো খোলা আকাশ - নতুন রূপে - অধ্যায় ৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-69058-post-5967220.html#pid5967220

🕰️ Posted on June 19, 2025 by ✍️ Manali Basu (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1222 words / 6 min read

Parent
পর্ব ৬ সুস্মিতার ফোনে একটা কল এসছিল। তড়িঘড়ি সে একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে কলটা রিসিভ করলো। দূর থেকে নন্দিনী তার বান্ধবীকে দেখলো, ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। একবার ভাবলো বীরেনের ব্যাপারটা গিয়ে বলবে কিনা। এখানে আপন বলতে এখন শুধু সে-ই। বীরেন যদিও বা নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে তবু ভরসা নেই, আবার যদি বেপরোয়া কিছু ঘটিয়ে ফেলে। তার চেয়ে সুস্মিতাকে সব বলে ওকে কনফিডেন্সে নিয়ে নেওয়া ভালো। নন্দিনী জানতো না সুস্মিতা আগ বাড়িয়ে তার আর বীরেনের কথোপকথন প্রায় সবটাই শুনেছে। নন্দিনী খেয়াল করলো তার বান্ধবী এত রোদেও বাইরে স্কু'ল প্রাঙ্গনে সবার অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে দূরত্ব বজায় রেখে ফোনে কথা বলছে। কথোপকথনের ভঙ্গিমা জানান দিচ্ছিলো ফোনের ওপারে যিনি রয়েছেন সেটা ওর স্বামী নয়। সুমনের সাথে কখনো এত হেসে ভালো করে কথা বলেনা সুস্মিতা। নন্দিনী তার বান্ধবীকে চেনে। এ নির্ঘাত সেই লোফার অঙ্কিতটাই, যার সাথে সুস্মিতা কথা বলছে। "উফ্ফ্ফ্হঃ!! এই মেয়েটা দেখছি নিজের সংসারটা ভেঙেই ছাড়বে", মনে মনে ভেবে সুস্মিতার দিকে এগোলো নন্দিনী। নন্দিনীকে আসতে দেখা মাত্রই সুস্মিতা চট করে ফোনটা কেটে দিল। নন্দিনী বান্ধবীর কাছে গিয়ে বললো, "কিরে, এত রোদে সবার থেকে আলাদা হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস যে? অঙ্কিতের সাথে কথা বলছিলিস?" "সবই তো জানেন প্রিসাইডিং অফিসার ম্যাডাম, তাও কেন জিজ্ঞেস করছেন?" "করছি কারণ তোকে সাবধান করার জন্য। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমি তোর খারাপ কখনোই চাইবো না নিশ্চই!" "সত্যি তুই আমাকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস?" "হ্যাঁ, কোনো সন্দেহ আছে?" "তাহলে বল, বীরেনের সাথে তোর এক্সাক্টলি কি হয়েছে?" মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে নন্দিনী বললো, "সেটা বলতেই তো তোর কাছে এলাম" সুস্মিতা তখন নন্দিনীর হাত ধরে স্কু'ল বিল্ডিংয়ের একটা কোণে ছায়ার তলায় নিয়ে গেল যাতে তাদের প্রাইভেট টক্ পাঁচ-কান না হয়। নন্দিনীকে একটু নিরিবিলিতে নিয়ে এসে সুস্মিতা জানতে চাইলো সব কথা। যদিও সে আড়িপেতে বেশ কিছুটা শুনেছে। তাও বিস্তারিতভাবে নন্দিনীর থেকে জানার জন্য উদগ্রীব ছিল তার মন। নন্দিনী সবটা খুলে বললো সুস্মিতাকে। সবটা শুনে সুস্মিতা আন্দাজ করতে পারলো বীরেন ঠিক কতটা ডেসপারেট তার বান্ধবীর জন্য। মনে মনে একবার ভাবলো তার এখন কি পরামর্শ দেওয়া উচিত নন্দিনীকে? সেই অর্থে বীরেন নন্দিনীর সাথে কিছুই করেনি। হ্যাঁ, পরোক্ষভাবে কুপ্রস্তাব দিয়েছে, তবে তার জন্য নন্দিনীকে বীরেনের থেকে দূরে থাকতে বলাটা কি একটু বেশিই রুক্ষ পদক্ষেপ হয়ে যাবে না? তাছাড়া সুস্মিতা খুব করে চায় তার মতো নন্দিনীর জীবনেও এক মুঠো খোলা আকাশ নেমে আসুক। আর সেই আকাশ বীরেনই নিয়ে আনতে পারে। তাই তাকে লঘু পাপে গুরু দণ্ড দিয়ে লাভ নেই। "কিরে, কি ভাবছিস? কিছু বল ....", সুস্মিতার ভাবনা ভাঙিয়ে নন্দিনী বলে উঠলো। নন্দিনীর কথায় চেতনা ফিরে সুস্মিতা পরমার্শ দিল বীরেনকে ক্ষমা করে দেওয়ার। সে বললো, "তোর কথা শুনে যা বুঝলাম বীরেনের মধ্যে অনুশোচনা কাজ করছিলো। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই তাকে একটা সুযোগ দেওয়াই যায়।" "কিসের সুযোগ?" "তোর বিশ্বাস জেতার।" "ধ্যাৎ! আমার বিশ্বাস জিতে সে কি করবে?" "সেটা বীরেনকে বুঝতে দে। তুই ওকে জেতার সুযোগ তো দে। দেখবি ও কিরকম উঠে পড়ে লেগেছে তোর জন্য। আর তাতে তোর সুবিধাই হবে। একবার ভেবে দেখ, ও এখানকার লোকাল ইনচার্জ। তোর ওকে হাতে রাখতেই হবে। আর ও যখন নিজে থেকে তোর হাতের মুঠোয় আসতে চাইছে, ওকে আসতে দে। বীরেনই তোর এক মুঠো খোলা আকাশ।" "এক মুঠো খোলা আকাশ! তার মানেটা কি?" "সেটা না হয় নিজেই বুঝে নিবি পরে। এখন তোকে আমার সম্পর্কে কিছু কথা বলার আছে" "বল ...." "অঙ্কিত আসবে আমাকে নিয়ে যেতে" "কিই??", নন্দিনী যেন আকাশ থেকে পড়লো। "বসিরহাট সদরেই অঙ্কিতের মামারবাড়ি। আমার জন্য সেইখানেই আজকে স্টে করেছে। ওখান থেকে এসে এখন আমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যেতে চায়। আমাকে ফোন করেছিল ও আসছে সেটা বলতেই।" "তুই কি পাগল হয়েছিস? ভুলে গেছিস এখানে আমরা ডিউটিতে এসছি, তাও আবার ইলেক্শনের।" "দেখ, আমাদের ডিউটিটা কিন্তু কাল থেকে। আজকের যাবতীয় লৌকিক কাজ সারা হয়েগেছে। এখন এখানে থেকে কিই বা করবো। তার চেয়ে একটু ঘুরেই আসিনা!" "সুস্মিতা তুই বুঝতে পারছিস তুই কি করছিস? আগুন নিয়ে খেলছিস তুই? যেদিন সুমন জানতে পারবে সেদিন যে কি হবে সেটা ভেবেই আমি বারবার শিউরে উঠি!" "ডোন্ট ওয়ারি ডার্লিং! ঠিকমতো বুদ্ধি খাটিয়ে পরকীয়া করলে স্বামীরা কখনোই জানতে পারেনা। হাসবেন্ড ডাসেন্ট নোও (Husband doesn't know)!" "husband doesn't know!" "ইয়েস বেবি! তাই জন্যই তো তোকে বলছি বীরেনকে পুরোপুরিভাবে ক্ষমা করে দিয়ে তুইও একটা চান্স নিয়ে দেখতে পারিস।" "আমার কোনো দরকার নেই এসব চান্স নেওয়ার। আমি অনিকেতের বউ হয়েই সুখে আছি।" "আমিও তো সুখে থাকতেই চেয়েছিলাম নন্দিনী। আজ যদি সুমন আমার দিকে নজর দিত আমি কি ওই অঙ্কিতকে পাত্তা দিতাম! সুমন সবদিক থেকে ওর থেকে অনেক বেটার। কিন্তু স্বামীদের সময়ই হয়না নিজের স্ত্রীদের দেওয়ার জন্য। তোকেই দেখ না, তোর অবস্থাও কিন্তু একইরকম। আমি যতদূর দেখেছি অনিকেতও তোর দিকে খুব একটা নজর দেয়না। সবসময়ে মায়ের কথায় ওঠে আর বসে। কিন্তু তুই একটা মিথ্যে অবয়ব তৈরী করে রেখেছিস। আমি তোর মতো কম্প্রোমাইস করে সুখে থাকতে চাইনা। তাছাড়া নন্দিনী, তুই তো জানিস অঙ্কিত কতোটা আমায় চায়, আই মিন সময় কাটাতে, একসাথে। ...." অনিকেতকে নিয়ে সুস্মিতা যে কথা গুলো বলছিল সেগুলো একেবারে ফেলে দেওয়া যায়না। তবু করারই বা কি আছে? সে সুস্মিতার মতো অত স্পর্ধা দেখাতে পারবে না, বা বলা ভালো দেখাতে চায়না। নন্দিনী কিছুতেই রাজি নয় এই বিষয়ে পারমিশন দিতে। বারবার নিজের বান্ধবীকে বোঝাতে লাগলো এই ইলেকশনটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। এটা কোনো ছেলেখেলার বিষয় নয়। কিন্তু সুস্মিতাও জেদ ধরে বসে রইলো। বলতে লাগলো সন্ধ্যে হওয়ার আগেই ঠিক সে ফিরে আসবে। এরকম হাজার রকমের কথা বলে অবশেষে সে নন্দিনীকে রাজি করিয়ে ফেললো অঙ্কিতের সাথে ঘুরতে যাওয়ার পারমিশন দিতে। আসলে অঙ্কিত আর সুস্মিতা প্ল্যান করেছিল বাড়ি থেকে দূরে এসে এই অছিলায় তারা শারীরিক ভাবে মিলিত হবে। কলকাতায় থাকতে সেই সুযোগ নেই। সুস্মিতা শশুরবাড়িতে থাকে, অঙ্কিত বেকার। যতটুকু সময় পায় তারা তাতে সবার অগোচরে রাস্তা ঘাটে পার্কে হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে পারে, শুধু গল্প করে সময় কাটাতে পারে। কিন্তু শারীরিক চাহিদা কারোরই মেটেনা। বাড়ি থেকে দূরে এসে এবার হয়তো সেই খড়া মিটবে। .....  সুস্মিতা জানে তার বান্ধবী তাকে যতটা ভরসাযোগ্য বলে মনে করে ততোটা আর কেউ করেনা। তার স্বামীও নয়। তাই জন্যই তো সে এই ভুল পথটা ভুল জেনেও বেছে নিয়েছে, পরকীয়ার পথ। নাহলে কোনো বিবাহিতা মেয়ে কি ইচ্ছে করে নিজের বিবাহিত জীবন বাজি রাখতে চায়? একজন পুরুষের জন্য পরকীয়া যৌনলালসার জন্য হয়, তবে স্ত্রী পরকীয়া করে মানসিক সুখ না পেলে। বলতে না বলতেই স্কু'লবাড়ির সামনে একটি বাইক ধোঁয়া উড়িয়ে এসে দাঁড়ালো। তা দেখে সুস্মিতা নন্দিনীকে নিয়ে মেইন গেটের সামনে এসে হাজির হল। হেলমেট খুলতেই বোঝা গেল সেটা অঙ্কিত, অঙ্কিত রায়, বেকার বাউন্ডুলে একটা ছেলে। এর চেয়ে তো বীরেন হাজার গুণ ভালো, অন্তত চাকরি করে সমাজে নিজের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু নন্দিনী হঠাৎ এই অঙ্কিতের সাথে বীরেনের তুলনা টানছিল কেন? সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো, কিন্তু কোনো উত্তর পেলনা। "হাই নন্দিনী, কেমন আছ?", অঙ্কিত হ্যান্ডশেক করার বাসনায় হাত বাড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো। নন্দিনী সৌজন্যের খাতিরে হাত মিলিয়ে শুধু বললো, "ভালো আছি।" সুস্মিতার থেকেও নন্দিনীকে বেশি মনে ধরে অঙ্কিতের। কিন্তু নন্দিনীর মতো মেয়েকে প্রেমের জালে ফেলা নেক্সট টু ইম্পসিবল একটা টাস্ক, সেটা অঙ্কিত বেশ ভালোমতোই জানে। অগ্যতা তার বান্ধবীই সহায় টাইম পাশের জন্য। দূর থেকে আর কেউ লক্ষ্য না করলেও বীরেন মাস্টার সব দেখছিল। তার প্রিয় নন্দিনী ম্যাডাম এক বাইক আরোহীর সাথে করমর্দন করছে। মনে মনে একটু ঈর্ষা হচ্ছিলো, কিন্তু কিছু করার নেই। আরোহী তো আর তার মতো ভয় দেখিয়ে কাছে আসতে চায়নি। অঙ্কিত জানে নন্দিনী তাকে পছন্দ করেনা, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো সুস্মিতার যাওয়াটা ক্যানসেল করে দিতে পারে সে। তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে সুস্মিতাকে বাইকে চাপিয়ে বিদায় নিলো অঙ্কিত। সুস্মিতা যাওয়ার পর নন্দিনী পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে দূর থেকে বীরেন সবটা নজরে রাখছে। তবে সে এত তাড়াতাড়ি বীরেনের সাথে সহজ হতে পারবে না। সুতরাং তাকে এড়িয়ে চলে যাওয়াই শ্রেয়। সামনেই রিংকু আসছিল। রিংকুকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো তার আর সুস্মিতা ম্যাডামের থাকার ব্যবস্থা কোথায় করা হয়েছে? রিংকু বললো স্কু'লেরই একটা ক্লাস রুম ফাঁকা করে ব্যবস্থা রাখা আছে তাদের জন্য। নন্দিনী তাকে নিয়ে যেতে বললো সেখানে। একটু বিশ্রাম নেবে সে। সেইমতো রিংকু নন্দিনীকে নিয়ে গেল বিশ্রামাগারে।
Parent