একটি একান্নবর্তী পরিবারের গল্প /মেজ বউ/【সংসার-খন্ড ৫】/ only Friday - অধ্যায় ১২
দেবশ্রী:খন্ড ১০
নন্দিনী))))
সুধীর― আমি দাদার সঙ্গে যাই...
সুরেন্দ্র―কি বলিস মেজদা তুই সঙ্গে যাবি এর মানে কি? আজকে না তোর ফুলশয্যা...
অভিক সেন― তোকে যেতে হবে না,আমি যাবো সুবাসের সাথে দেশে যতদিন আছি বসে না থেকে একটু ঘোরাঘুরি করে আসি।
মালতী― এতদিন বিদেশে থেকে এখন দেশে ফিরে ছেলেদের একটু সময় দেবে তা না, সে যাবে ঘোরাঘুরি করতে..
অভিক―আরে আমি.. (স্বামী কথা না শুনেই রান্না ঘরের দিকে চলে গেল, তার পেছন পেছন অভিক কাকুও)
সুবাস― আর কেউকে যেতে হবে না,আমি একাই পারবো
সিড়িতে দাড়িয়ে সবার কথা শুনেছি আর ভাবছি নাটকে অংশগ্রহণ করবো কি না এমন সময় বাবা গলার আওয়াজ শুনে সিড়ির উপরের দিকে তাকালাম।এই বয়সেও বডি এখনো বেশ শক্তপোক্ত।শীত ভালোই পরেছে তুব এই সকাল বেলা কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে বাইরে যাবার জন্যে তৈরি।
মোহন সেন― (একটু রাগী গলায়)কাল সকাল এতো চেচামেচি হচ্ছে কেন?
কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো নিচের সবাই,শুধু নন্দিনী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই কে চুপ করে থাকতে দেখে মোহন সেন গলা নরম করলো।
মোহন সেন― বৌমা আজ সকালে চা পেলাম না কেন?
নন্দিনী― বাবা গতকাল রাতে আমাদের একটি কারখানায় আগুন লেগে গেছে,তাই সুবাস কে যেতে হবে ব্যপার টা সামাল দিতে।
মোহন সেন― আগুন লেগেছে! সুবাস ওপরে আমার ঘরে আয়।
নন্দিনী― লতা! কাকিমণি কে বল উপরে চা দিতে।
*******
অঞ্জলী)))
অঞ্জলী― শাড়ি পরলে পেট ও নাভি দেখা যায় আমি শাড়ি পরবো না বৌদি
নন্দিনী― কি বললি? আরেকবার বল দেখি(নন্দিনীর অগ্নিঝরা চোখ দেখে ঢোক গিললো অঞ্জলী)
অঞ্জলী― (মাথা নিছু করে)বলছিলাম কি কালো রঙের শাড়ি কেন?
নন্দিনী―আমি বলছি তাই!এখন বল নিজে পরবে না আমি জোর করে পড়াবো?
বৌদির কথা শুনে হতাশ মুখে তাকালাম বৌদির দিকে আর ভাবছি এমনটা কেন হলো!? সব দোষ ওই মেয়েটার!আর বৌদি এতো একরোখা কেনো? কিছুই শুনতে চায়না। যা বলবে তাই। কণ্ঠে অসহায় ভঙ্গি এনে বললাম-
অঞ্জলী― ব-বৌদি আমি শাড়ি সামলাতে পারিনা।
নন্দিনী― সামলানোর দরকার নেই সেফটিপিন দিয়ে আটকে দেবে আর তাছাড়া বাড়িতে বাইরে কেউ নেই কোন সমস্যা হবে না।
এটুকু বলেই বৌদি তার পেছনে একটা বালিশ দিয়ে খাটে আয়েসি ভাবে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় আবারও আমার ডায়েরী হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো। এদিকে আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আমি শাড়ি পরতে পারি না। বাড়িতে পুরুষমানুষের অভাব নেই তাই আতঙ্কিত বোধ করি। মনে হয় হঠাৎ খুলে গিয়ে সবার সামনে ভীষণ লজ্জায় পরবো। বা হয়তো চলতে ফিরতে খুব কষ্ট হবে।
দেবশ্রী― দিদি একটু শুনবে!
দরজাটা খোলাইছিল মেজবৌদি কখন এসে কে জানে।
সরলাত সৌন্দর্য" কথাটি মেজবৌদির বেলায় খাটে মেজবৌদি কে সাধারণ সাজেও বেশ দেখতে লাগছে।
নন্দিনী― কাকিমণি পাঠিয়ে দিয়েছে তো!আগেই বলেছিলাম না যেতে,রান্না করার সময় কাকিমণি অন্য কাউকে দেখতে পছন্দ করেন না।
মেজবৌদি কোন কথা না বলে দজরার সামনে দাঁড়িয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে ঢোকার অনুমতি নখ পেলে এভাবেই দাড়িয়ে থাকবে।
অঞ্জলী― মেজবৌদি শাড়িটা পড়িয়ে দিতে পারবে?.
******
সুরেন্দ্র/অনিকেত/অনিমেষ)))
অনিকেত-গতকাল রাতের কথামনে আছে?
সুরেন্দ্র― মনে না থেকে উপায় আছে!কিন্তু কিভাবে করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।এছাড়াও ভাবচ্ছি করা কি ঠিক হবে?
অনিমেষ―হুম,,কঠিন সিদ্ধান্ত; দেখ বৌদি যা বলেছে তা যদি কথামত হয় তো আমাদের ভাই আমরা লালে লাল, মেজ বৌদির মত এমন গরম মাল হাতে পেলে উফ্" ভাবতেই সারা শরীরটা কেমন শিরশির করে উঠছে?
অনিকেত― কিন্তু যদি প্ল্যান কাজ না করে এবং জ্যেঠু যেনে যায় তখন ?
নন্দিনী― দু পায়ের ফাঁকে যেটা বেশী শিরশির করছে সেটা কেটে গলায় ঝুলিয়ে দেবে।
সুরেন্দ্রর রুমে অনিকেত টেবিলে বসে কম্পিউটারের বিয়ে বাড়ির ছবি গুলো দেখতে দেখতে কথা বলছিলো আর বাকি দুজন বিছানায় শুয়ে মোবাইল হাতে।এমন সময় নন্দিনী ঢুকলো তাদের ঘরে তার হাতে একটা লাল মোলাটেব বাধানো ডায়েরী।
সুরেন্দ্র― ভয় দেখিছো কেন বড় বৌদি?
নন্দিনী―(এগিয়ে আসতে আসতে) ভয় দেখাছি না সুরেন্দ্র। তোমার বাবা কেমন মানুষ তা তোমরা সবাই জানো আর এটাও নিশ্চয়ই জানো দেবশ্রীকে বাবার একবার দেখেই কেন পছন্দ হয়েছে।
অনিকেত― হা"হা" তাহলে খেলা শুরু হবার আগেই শেষ(নন্দিনী অনিকেতের মাথায় ডায়েরি টা দিয়ে হালকা বারি মারে) আআউ""মখরছো কেন!
নন্দিনী― এই গাধাটাকে এখান থেকে বের করতো এর কথা শুনে গা জ্বালা করছে!
নন্দিনী কে রেগে যেতে দেখে বাকি দুজন খাটতে উঠে নন্দিনীর দুপাশে দাড়িয়ে নন্দিনীর ফুলিয়ে রাখা দুই গালে চুমু খেয়ে বললো
অনিমেষে― ওর কথা বাধ্য দাও না বৌদি তুমি বল কি বলতে এসেছিলে।
নন্দিনী-এখন নয় পরে কাকিমণি নিচে খেতে ডাকছে,নিচে চলো।
এটুকু বলে নন্দিনী দরজার সামনে যেতেই পেছন থেকে সুরেন্দ্র বললো―
সুরেন্দ্র―তোমাকে আজ ভীষণ হট লাগছে বৌদি একদম ''ব্ল্যাক রোজ' এর মতো।
নন্দিনী― (পেছন ফিরে হেসে বললো)তোমার বোনকে দেখতে আমার থেকেও বেশি হট লাগছে ...
*******
বিকেলে)))
উদয় সেন))
বিকেলের দিকে ঠান্ডা একটু কমেছে। তাই প্যান্ট ও পাঞ্জাবী ওপরে একটা সাদা রঙের শাল জরিয়ে সিগারেটের প্যাকেট হাতে ছাদের দিকে চলে গেলাম।
ছাদে উঠেগিয়ে দেখি অঞ্জলী একটা কালো শাড়ি ও হিল পরে ছাদে হাটছে বা হাটার চেষ্টা করছে। শাড়ি পরে অসাধারণ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে কে। তাঁকে এতটাই সুন্দর লাগছে যে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। তবে একটু অবাক ও লাগছে অঞ্জলী শাড়ি পড়রে পারে না আর কেঊ পরিয়ে দিলেও সামলাতে পারেনা।আছ হঠাৎ শাড়ি কেন?সাথে আবার হিল! অঞ্জলী কে কখনো হিল পরতে দেখিনি।বাড়িতে থাকলে সবসময় খালি পায়ে ঘোরাঘুরি করে। একবার ভালো করে মাথা থেকে পা প্রযন্ত দেখেনিয়ে নিশ্চিত হলাম এটা নন্দিনীর কান্ড।একটা পাতলা কালো রঙের পরে আছে তার সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ। শাড়ির ওপরদিয়ে নিচের সব দেখা যাচ্ছে।তার উপর ব্লাউজের গলাটা একটু বেশিই বড়,ক্লিভেজ অনেকটাই দেখা যাচ্ছে ।
উদয়― এই ঠান্ডা মধ্যে পতলা শাড়ি পরে ছাদে ঘুরছিস কেন!
বলতে বলতে এগিয়ে গিয়ে আমার গা থেকে শালটা খুলো অঞ্জলী কে পরিয়ে দিলাম।আর কাছে এসেই মেয়েটার চোখের চাউনি দেখেই বুঝলাম শাড়ি পরার ইচ্ছে তার নেই।নন্দিনী জোর করে পরিয়েছে।
উদয়― সুবাস ফোন করেছে?
অঞ্জলী― না
উদয়― ছেলেটাকে একা পাঠানো ঠিক হয়নি। দাদা মাঝেমধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নেয় যা আমাদের সবার মেনে নেয়াটা ঠিক না।
অঞ্জলী― দাদা একা যায় নি,বাবাও সাথে গেছে।
উদয়― তাই নাকি!বলিস কি তাহলে তো এই কদিন বাড়ির বাইরে থাকাই মঙ্গল আমার জন্যে।
একাকথা শুলে অঞ্জলী হাসতে লাগলো। যবে কথা কিন্তু মজার নয় মোটেও নন্দিনী সাঙ্ঘাতিক মেয়ে।
হাঙরি ফর পাওয়ার
উদয় ― এভাবে হাসিস নাতো। তোর বড় বৌদি কেমন তা তো জানিস "সি ইজ হাঙরি ফর পাওয়ার" দাদা বাড়িতে নেই মানে রাজত্ভ এখন নন্দিনীর হাতে।ভাবছি কোথায় লুকানো যায়!
আমার কথা শুনে অঞ্জলীর হাসি আরো প্রসারিত হলো।মেয়েটার হাসি মুখ দেখতে দেখতে ডান হাতে থাকা সিগারেটটা ঠোঁটের ফাঁকে রেখে বাঁ হাতে প্যান্টের পকেটে থেকে লাইটার বের করতে গিয়ে দেখি পকেটে লাইটার নেই।
উদয়― যাহ্,লাইটার টা কোথায় রাখলাম
অঞ্জলী ― তুমি এতো প্যানিক করছো কেন?
উদয়― কোথায় আমি প্যানিক করছি না তো
অঞ্জলী― কাকুমণি লাইটার টা তোমার ডান হাতে...
*******
নন্দিনীর ঘরে))
ঘরটার দুপাশে বড় কাচের জানালা, বেডরুমের উপরে সিলিং ডিজাইন বাতি লাগানো৷ একপাশে বড় কাচের ঘরের মতো স্বচ্ছ বাথরুম, উল্টোদিকের দেয়ালে বড় আয়না৷ মাঝখানে সুন্দর একটা গোল বিছানা রয়েছে৷ সুন্দর একটা ঝাড়বাতি বিছানার উপরে ঝুলছে৷ নন্দিনীর ঘরে আয়নার সামনে দেবশ্রীকে বসিয়ে পেছনে দারিয়ে দেবশ্রীর লম্বা চুলগুলোয় হেড-ব্রাশ চালাতে চালাতে কথা বলছে।
নন্দিনী―তা তুই সেক্স করেছিস কিনা বললি না তো। দুদুজোরা যা উর্বর বানিয়ে ছিস দেখে তো মনে হয় নিয়মিত হাতের হাতের কাজ চলতো।
দেবশ্রী― ছিঃ. দিদি তোমার মুখে কি আটকায় না,কি সব বলছো...
নন্দিনী― আমার সাথে কয়েক দিন থাক পরে দেখবি তোর মুখেও আটকাবে না।
দেবশ্রী― আমি কখনোই এসব কথা মুখে আনতে পারবো না(নন্দিনী দেবশ্রী চুল ধরে পেছন দিকে টান দেয়) উউঃ... কি করছো!
নন্দিনী― না বললে তো হবে না,পারতে হবে ।নয় তো আজীবন স্বামীর সোহাগ ভাগ্যে জুটবে না বুঝেছিস।
নন্দিনী ভেবেছিল একথায় দেবশ্রী লজ্জা পাবে কিন্তু সে দেখলো একথা শুনে দেবশ্রী চোখে অশ্র টলমল করছে।এক মূহুর্তেই দেবশ্রীর মুখে ভাব মূর্তি পরিবর্তনহয়ে গেছে।তার হাসিখুশি মুখটা এক নিমিষেই গম্ভীর হয়ে গেছে। নন্দিনী তা বুঝতে পেরে পেছন থেকে দেবশ্রীর গলা জরিয়ে ধরে, তার মাথাটা রাখলো দেবশ্রীর কাঁধের ওপড়ে।
নন্দিনী― এই রকম মুখ ভোতা করে বসে থাকলে হবে হু্! সংসার জীবনে সুখ-শান্তি পেতে হলে একটু দুঃখ কষ্ট সয়ইতে হয়। দুঃখ কষ্ট না আসলে একে সংসার বলে না।
দেবশ্রী চোখ নিচু করে কী যেন ভাবতে লাগলো।নন্দিনী তার ডান হাত দেবশ্রীর চিবুকের তলায় রেখে। দেবশ্রীর মাথাটা ঠেলে একটু ওপরে তুলে,আয়নার মুখোমুখি কর বলতে লাগলো।
নন্দিনী― সত্যি বলতে কি জানি! তোর দেহের আগুন আঁচ বাড়ি সব পুরুষের শড়ীলেই লেগেছে।কিন্তু সুধীর ওর মায়ের ব্যাপারে একটু বেশিই সেনসেটিভ।তবে সব পুরুষের মধ্যে একটা রক্ষণশীল মনোভাব কাজ করে।তুই জোদি বাড়ির বাকিদের সাথে একটু....
দেবশ্রী―ছি, ছি,এসব কি বলছো তুমি দিদি আ...
নন্দিনী―(ধমক মতো বললো)চোপ আমার কাথার মাঝে কথা বলবি না।
দেবশ্রী― কিন্তু দি....
নন্দিনী― বলেছি না চুপ থাকতে,আর একটা কথা বললে থাপ্পড় খাবি! আগে কথা শেষ করতে দে।
দেবশ্রী―........
নন্দিনী― শোন তোকে কিছুই করতে হবে না,যা করার আমি করবো তুই শুধু আমার কথা মেনে চল দেখবি সুধীর নিজে থেকেই তোকে মেনে নেবে। কি স্বামী কে কাছে পেতে এটুকু করতে পারবি না।
দেবশ্রী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো সে পারবে না
*********
রাত ১২টা ২০ মিনিট)))
আজ দেবশ্রীর সাথে তার বাসর রাত। ঐদিন চিঠিটা দেয়ার পর থেকেই টেনশন চলছে।ভেভেছিল চিঠিটা পড়ে দেবশ্রী পিছিয়ে যাবে।কিন্তু তা হলো না,সুধীর তাদের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট লাগানোর চেষ্টা করছে। এর আগে কখনোই সে সিগারেটে হাত দেয় নি। আজ টেনশনের কারনে সিগারেট খাবে বলে ভাবছে। সুধীর তার ফ্রেন্ডদের কাছে শুনেছে যে সিগারেট খেলে নাকি টেনশন কমে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখনো সে সিগারেটটা লাগাতেই পারে নি। টেনশনের সময় মানুষ কিছুই করতে পারে না। এমন সময় পেছন থেকে চেনা কন্ঠস্বর ভেসে এলো
নন্দিনী― তোমার হাতে ওটি কি সুধীর?
Continue....ভালো লাগলে মন্তব্য জানাবেন