গল্প -বৃষ্টি হয়ে নামো (ইলমা বেহরোজ) (সমাপ্ত গল্প) - অধ্যায় ৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-70094-post-6018347.html#pid6018347

🕰️ Posted on August 26, 2025 by ✍️ Bangla Golpo (Profile)

🏷️ Tags:
📖 985 words / 4 min read

Parent
৩. বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।জানালার পর্দা উড়ছে।দিশারি তাড়াতাড়ি করে জানালা বন্ধ করে।তখনি কলিং বেল বেজে উঠে।নিহা ফোন টিপছিলো।দিশারি তাড়া দেয়, -------"বসে আছিস কেনো?দেখ কে আসছে এই রাতের বেলা।" নিহা বিরক্তি নিয়ে উঠে।দরজা খুলে কাকভেজা একটা মেয়েকে দেখতে পায়।চিকন-চাকন দেখতে।জিন্স-শার্ট পরা।উচ্চতায় পাঁচ ফিট আট তো হবেই।বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। ------"কে তুমি?" মেয়েটি মৃদু হেসে বললো, ------"দিশারি নামের কেউ...... ------"কে রে?" দিশারি রুম থেকে বেরিয়ে দরজার সামনে আসে।মেয়েটিকে দেখে চিৎকার করে উঠলো সে, -------"ধারা তুইইই?" ধারা হেসে মাথা নাড়ায়।দিশারি ভেজা অবস্থায় থাকা ধারাকে জাপটে ধরে।ধারা চিৎকার দেয়, -------"ভিজে যাবি আপু।ছাড়!" দিশারি আরেকটু জোরসে চেপে ধরে। খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে বললো, -------"ভিজুক।কতদিন পর বোনটারে দেখছি।জড়িয়ে ধরবোনা?" ধারা দীর্ঘ হেসে দিশারি কে জড়িয়ে ধরলো।অভিমানি স্বরে বললো, -------"আমার খোঁজ নিতে ইচ্ছে হয়না তোর আপু?" দিশারি ধারাকে ছেড়ে বলে, -------"আগে ভেতরে আয়।ড্রেস চেঞ্জ কর।খা,তারপর কথা হবে।" ধারা ভেজা ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকে।সব কাপড় ভিজে গেছে।দিশারির কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। নিহা দিশারিকে গুঁতো দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, --------"কে রে?" দিশারি হেসে জবাব দেয়, -------"আমার বোন।মামাতো বোন।" দিশারি-নিহা দুজন একই কোম্পানিতে জব করে।সেই সূত্রেই পরিচয়।বিকেলে দিশারির মা-বাবা দেশের বাড়ি গেছেন।তাই নিহা এসেছে দিশারিকে সঙ্গ দিতে। ধারা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে আসে।দিশারি খাবার সাজাচ্ছে।ধারা নাক কুঁচকে বললো, ------"খাবো না আপু।" ------"খাবি না কি? মার দিবো।রাত নয়টা বাজে।" দিশারির ধমক। ------"তাই বলে ভাত?রুটি, বা ব্রেড দে।ভাত না।" ------"আচ্ছা বস দিচ্ছি।" দিশারি ব্রেড এগিয়ে দেয়।ধারা খেতে খেতে বললো, ------"ফুফি কই?দেখছিনা যে।" ------"মা-বাবা তো বাড়িত গেছে আজকে।" ধারা ছোট করে উত্তর দেয়, ------"ওহ।" তারপর আবার জিজ্ঞাসা করলো,  -------"এই আপুটা কে?" দিশারি নিহার সাথে ধারার পরিচয় করিয়ে দেয়। খাওয়া পর্ব শেষ করে দু'বোন গল্প করতে বসে।নিহা পাশের রুমে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফোনালাপ নিয়ে ব্যস্ত।দিশারি শুরু করে, -------"কই থেকে আসলি?" ------"হোটেল থেকে।" ------"আর কেউ আসে নি?" ধারা ভারী ইনোসেন্ট গলায় বললো, ------"না তো! একাই আসছি।" দিশারি আঁৎকে উঠলো,  ------"সেকী?একা?" ধারা মাথা নাড়ায়।দিশারি সরু চোখে তাকায়।ধারাকে পরখ করে নিয়ে বললো, -----"বাড়ি থেকে পালিয়েছিস?" ধারা এক চোখ বন্ধ করে জড়োসড়ো হয়ে বাচ্চামি ভঙ্গিতে হেসে বললো, ------"হু।কেমনে জানলি?" -------"আপনার এই কাহিনি মনে কয়,সারা দুনিয়াই জানে।পাত্র ঠিক হইলেই যে পালান।আমরারে তো ছোট খালা বলছে।" দরজার ওপাশ থেকে নিহা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো, -------"পাত্র ঠিক হলেই পলায় মানে?" দিশারি ধারার দিকে তাকিয়ে হাসে।তারপর নিহাকে বললো, -------"ও বাউন্ডুলে স্বভাবের।সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায়।ট্রাভেলিং করে।পুরো বাংলাদেশ ওর চেনা।পড়তে চায়না। তাই বড় মামা চার বছর ধরে চেষ্টা করছেন বিয়ে দিয়ে দিতে।কিন্তু পারছেন না...... দিশারিকে বাঁধা দিয়ে নিহা বললো, ------"কেনো?" দিশারি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বললো, ------"আহ! বলতে তো দিবি।" -------"সরি! বল।" ------"পাত্র ঠিক হওয়ার পরদিনই উনি বাড়ি থেকে পালায়।তাই আর বিয়ে হয়না।" নিহা ধারার দিকে তাকায়।হকচকানো চোখে ধারাকে বললো, ------"এতো সাহস?থাকো কই তখন?" দিশারি ফোড়ন কাটলো,  -------"হোটেল।রাইট?" ধারা হেসে মাথা নাড়ায়।নিহা প্রশ্ন করে, -------"টাকা?" ------"হুম তাইতো।টাকা কই পাস?" দিশারি উৎসুকভাবে তাকায়।  -------"ছোট ভাইয়া দেয়।" ধারার স্বাভাবিক কন্ঠ।  ------"মানে,ছোট ভাই তোরে পালাতে হেল্প করে?ইয়া মাবূদ!" দিশারি তালগোল পাকিয়ে মাথায় হাত রেখে বললো। নিহা বিড়বিড় করে,  --------"কি ডেঞ্জারাস ব্যাপার-স্যাপার!" দিশারি আরো পাশ ঘেঁষে বসে ধারার।মস্তিষ্কে অনেক প্রশ্ন গিজগিজ করছে। -------"যখন বাড়ি ফিরিস কিছু বলেনা?" -------"হু বড় দুই ভাইয়া, বাবাই, মা অনেক বকে।কিন্তু তারপর ছেড়ে দেয়।" -------"প্রথম যখন পালিয়েছিলি,ফেরত আসার পর কি রিয়েকশন ছিলো? " -------"আর কি?ভেবেছিলো বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছিলাম।তারপর ছ্যাঁকা খেয়ে বাড়ি ফিরছি।"  বলেই হো হো করে হেসে উঠলো ধারা।নিহার চোখ পিটপিট করছে।মেয়েটার কাছে জীবন কত সোজা?তিন ভাইয়ের আদরের এক বোন,বাবা-মায়ের এক মেয়ে।তাই বলেই হয়তো এতো আনন্দ তাঁর।যা ইচ্ছে হয় করে ফেলে।পরোয়া করেনা। আচমকা ধারা মুখের ভঙ্গি এমন করে যেনো, সে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে।ফিসফিসিয়ে বললো, -------"আপু জানিস একটা কথা?" দিশারি দ্বিগুণ উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে বললো, -------"কি?" ------"এক বছর আগে আমার একটা বিয়ে সত্যি হয়ে গেছিলো।" নিপা,দিশারি হা হয়ে যায়।একসাথে বলে উঠে, -------"তারপর?" ধারা গলা খাঁকারি দিয়ে টান টান হয়ে বসে পা ভাঁজ করে।তারপর বললো, ---------"বিয়ের তিন দিন আগে শুনি আমার বিয়ে।আবার ঘরোয়া ভাবে।কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।ছোট ভাই তখন ট্যুরে ছিলো।সাহায্য করার কেউ ছিলোনা।তিন-চার জন আমাকে পাহারা দিতো।কত চেষ্টা করি পালাবার কিন্তু পারিনি।তারপর বুদ্ধি করি...... ------"কি বুদ্ধি?" -------"একটা নাটক দেখছিলাম।বিয়ের রাতে বউ বরের গলায় ছুরি ধরে বলে,ছোঁবেন না।নয়তো মেরে দিবো।আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।বাইরে থাকে।দেশে আসলেই বিয়ে করবো আমরা।তো আমি বুদ্ধি করলাম,আমিও সেইম কাজ করবো। আমার এক ফ্রেন্ড ফ্রান্সে আছে।ওরে বলি সব খুলে। রাজি করাই ফোনে আমার সাথে বয়ফ্রেন্ডের মতো কথা বলতে।তারপর প্ল্যান মতো সব হয়।বরের ফোন দিয়ে ফ্রান্সের ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলি।এরপরদিন চিঠি লিখে পালাই।চিঠিতে লিখে দিয়েছি,বয়ফ্রেন্ডের জন্য পালাচ্ছি।" নিহা 'ও মাই গড,ও মাই গড ' বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।দিশারি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ধারার দিকে।ধারা হাসছে, যেনো সে খুব সওয়াবের কাজ করেছে।আর সেটাই বলেছে।দিশারি আবার প্রশ্ন করলো, --------"পালাবি যখন।বয়ফ্রেন্ডের নাটকের কি দরকার ছিলো?" ------"আরে আপু।বয়ফ্রেন্ডের কথা না কইলে রাতে যদি ছুঁইয়া ফেলতো।" ------"সেটা বুঝলাম।ফোনে কথা যে বললি?আবার চিঠিও লিখলি।এসব কেনো?" -----"ফোনে কথা বলার আগে ফোন রেকর্ড অন করছি।তারপর কথা বলছি।আর চিঠি লিখছি যাতে পুরো পরিবারের কাছে খারাপ হয়ে যাই।নইলে যদি আবার তুলে নিতে আসে।" ------"তাই বলে এতো বড় মিথ্যা?ফোন রেকর্ড কেন করলি?" ------"যদি কখনো শুনে ওই পোলায়,তাহলে বুঝবো সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল।" -----"এইটা আজাইরা ছিলো।বাকিগুলো ঠিক আছে।তারপর কি হলো? ডিভোর্স হইছে?" ধারা মুখ গুমোট করে বললো, ------"ওরা বাবাই ভাইয়ারে খুব অপমান করছে।আমারে নিয়ে নাকি বাজে কথা বলছে ওদের লোক।মারামারিও নাকি হইছিলো।এখন কেউ কারো মুখ দেখেতে পারেনা।একজনের এলাকায় অন্য জন ঢুকেই না।বড় ভাই, আর ওই পোলার বড় ভাই নাকি কোন বাজারেও মাইর লাগছে।" দিশারি বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো, ------"সব তো তোর জন্যই।" ধারা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, -----"সবাই এইটাই বলে শুধু।কি দরকার ছিলো জোর করে বিয়ে দেওয়ার?" আলমারি খুলে ফোন নেয় দিশারি। তারপর বিছানায় এসে বললো, ------"তুই তাহলে বিবাহিত। ডিভোর্স তো হয়নি।বরের চেহারা মনে আছে?" -----"উহু।তবে দেখলে চিনবো।" ------"বাহ!" ------"আমার কথা বাদ।তোর উপর অনেক রাগ আমার আপু।" দিশারি ধারার দু'গালে হাত রেখে বললো, -------"কেনো রাগ আমিতো জানি।তোর নাম্বার হারিয়ে ফেলছিলাম।আর,আব্বা না করছে তোদের বাড়ি আর না যেতে।তার উপর একটা প্রজেক্ট নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলামরে।" ধারা কপট রাগ নিয়ে বললো, -----"তোর আব্বুটা পঁচা।" -----"কি করবি বল? আম্মা-আব্বা পালিয়ে বিয়ে করছে।সেই দোষে এত বছরেও আম্মার মুখও দেখেনা আমার মামারা।তাইতো আব্বার এতো রাগ।" ধারা আর কিছু বললো না।কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।দিশারি পাশে শুয়ে নরম কন্ঠে বললো, ------"স্বামীর বাড়ি ফিরবিনা? বা আর বিয়ে?" -----"ওই বাড়ি ফিরা ইম্পসিবল। না ওরা মানবে, না আমার বাপ ভাই।আর বিয়েও করবোনা।বিয়ে করলে শ্বশুর শাশুড়ী স্বামী সংসার হবে।কাজ করতে হবে।ঘুরতে পারবোনা।আমার পুরো পৃথিবী ঘুরা বাকি।" -------"দার্জিলিং যাবি?ফ্রেন্ডদের সাথে কালদিন পর যাচ্ছি!' দিশারির কথা শুনে ধারা লাফিয়ে উঠে। চলবে........  
Parent