গল্প -বৃষ্টি হয়ে নামো (ইলমা বেহরোজ) (সমাপ্ত গল্প) - অধ্যায় ৫৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-70094-post-6034402.html#pid6034402

🕰️ Posted on September 13, 2025 by ✍️ Bangla Golpo (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1888 words / 9 min read

Parent
  ৫৩. বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যা মানে দারুণ কিছু অনুভূতি, স্নিগ্ধ কিছু সময়।কিন্তু ধারার কাছে সময়টা প্রলয়কারী ঝড়ের মতো মনে হচ্ছে।মনটা 'কু' গাইছে কখন থেকে।লিয়া রান্নাঘরে ঢোকার সময় ধারাকে হাঁটুতে ভর করে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো, --- "ধারা গোমড়া মুখ করে বসে আছো কেনো?" ধারা একবার লিয়ার দিকে তাকায়।এরপর চোখ সরিয়ে আবার আগের মতো হাঁটুতে থুতনি ভর করে বসে।লিয়া ধারার পাশে এসে বসে।তখন ধারা বলে, --- "সব ঠিকঠাক হবেতো ভাবি?" লিয়া কপাল ভাঁজ করে কিছু একটা চিন্তা করে।এরপর বলে, --- "এতো সহজে হওয়ার কথা নয়।তুমি বিভোরকে বলছিলে তো? " ধারা চোখ তুলে তাকায়।প্রশ্ন করে, --- "কোন ব্যাপারে?" লিয়া ধারার উপর ভারী বিরক্ত এমন মুখ করে বলে, --- "কোন ব্যাপারে আবার?তোমার বাপ ভাইয়েরা যে গেল ওদের বাড়ি।ওরে বলবা না?" --- "ওহ।সে তো বলছি।" লিয়া উঠে দাঁড়ায়।রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলে, --- "তাইলে আর চিন্তা কি।সে অবশ্যই তার পরিবারে কল করে তোমার কথা জানাবে।হয়তো তার পরিবার অমত করবে।কিন্তু সরাসরি না করতে পারবে না।হ্যাঁ ও না।বিভোর আসার পর সিদ্ধান্ত হবে।" লিয়া আবার ঘুরে তাকায়।ধারার পাশে দ্রুত এসে বসে।উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, --- "বিভোর তো ঢাকা তাইনা?ও আসার পর যদি বাবা আর তোমার দুই ভাই যেতো তাহলেই বোধহয় ভালো হতো।" ধারা তরঙ্গহীন গলায় বললো, --- "আমারো সেটাই মনে হচ্ছে।" লিয়া ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ভাবে কিছু।এরপর অন্যমনস্ক হয়ে বলে, --- "বিভোর ব্যাপারটা জানলেই হবে।সামাল দিতে পারবে।ছেলেটা বুদ্ধিমান।" ধারা ছোট করে বলে, --- "হু"। এরপর বিষাদগ্রস্ত গলায় বললো, --- " সকালেই ওরে কল দিয়েছি।ছয় বার রিং হওয়ার পর ধরলো।আমার কথা না শুনেই বললো,ইম্পোরটেন্ট কথা থাকলে মেসেজে বলতে। আমিও মেসেজে বললাম।রিপ্লে পেলামনা এখনো।দেখলো নাকি, দেখলোনা কে জানে।" লিয়া ধারার কথা শুনে নড়েচড়ে বসে।এরপর বিস্ফোরিত কন্ঠে বললো, --- "বিভোরের পরিবার তোমাদের নিউ সম্পর্কের কথা জানে তো।" ধারা নতজানু অবস্থাত মাথা নাড়িয়ে 'না'জানায়।লিয়া বলে উঠে, --- "সর্বনাশ!তোমার বাবা বের হওয়ার আগে আমারে বলতা এসব।এখন কি হবে!দূর বাল।" ধারা লিয়ার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়।আমতা - আমতা করে বলে,  --- "কি হবে?" --- "কি হবেনা?বিভোরের পরিবার এমনিতেই তোমাকে পছন্দ করেনা।তার উপর দু'বছর হয়ে গেলো পারিবারিক শত্রুতার।সেখানে ওরা জানেওনা তাদের ছেলে তোমাকে ভালবাসে।তোমার মনে হয় তোমার বাপ - ভাই মান সম্মান নিয়ে এখন ফিরতে পারবে?" লিয়ার কথা শুনে ধারার কান্না পায় খুব।ভয় হচ্ছে। বুক দুরু দুরু করছে।ধারা অন্যদিকে মুখ ফিরে ঠোঁট টিপে ছাদের দিকে দৃষ্টি রেখে ভারী করুণ গলায় বললো, --- " কই তুমি?" রাত আট টায় কলিং বেল বেজে উঠে।ধারা দৌড়ে এসে দরজা খুলে।আজিজুর, সামিত, সাফায়েতের কালো করে রাখা মুখ দেখে ধারার কলিজা কেঁপে উঠলো।কিছু বলার সাহস পায়না।লিয়া, মাইশাও থমকে যায়।প্রশ্ন করলোনা ভয়ে।তিব্বিয়া খাতুন প্রশ্ন করেন, --- "হলো কি?" শেখ আজিজুর তীব্র ঘৃণা নিয়ে তিব্বিয়ার দিকে তাকান।তিব্বিয়া দমে যান।আজিজুর ধারার উদ্দেশ্যে বলেন, --- "এমন দিন বেঁচে থাকতে আর জীবনে না আসুক।ভুলে যাও অসভ্য ফ্যামিলির ছেলেটাকে।নয়তো আমাদের।" কথা শেষ করে আজিজুর দু'তলায় উঠে যান।ধারা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।সাফায়েত বাসায় ঢুকেই নিজের রুমে চলে গিয়েছে।সামিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের রুমে যায়।চারপাশে নেমে আসে দমবন্ধকর নিস্তব্ধতা।লিয়া - মাইশা দুজন রুমে যায়।কি হলো জানতে।তিব্বিয়া খাতুন ধারার পাশে এসে  দাঁড়ান।ধারা মাথা নত করে কাঁদছে।তিব্বিয়া ধারার মাথায় হাত রাখতেই ধারা কেঁপে উঠলো।চোখের জল মুছে দ্রুতপায়ে রুমে আসে।এরপর দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।মিনিট পাঁচেক কাঁদার পর বিভোরের কথা মনে হয়।ফোন নিয়ে ঝটপট করে উঠে বসে।দেখে এক ঘন্টা পূর্বে বিভোর ২৫ টা কল দিয়েছে।ধারা দ্রুত বিভোরকে কল করে। চার বারের রিংয়ের সময় রিসিভড হয়।ধারা বলে, --- "হ্যালো।" বিভোর বলে, --- " হ্যালো।" বার কয়েক দুজন হ্যালো, হ্যালো করলো।ওপাশে গাড়ির আওয়াজ।বিভোর শুনতে পাচ্ছেনা ধারার কথা।ধারা কল কেটে কাঁপা হাতে দ্রুত মেসেজ টাইপিং করে।এরপর সেন্ড করে।মেসেজটি  '' তুমি সকালের মেসেজ দেখোনি?কই তুমি এখন? " সেকেন্ড কয়েকের মধ্যে রিপ্লে আসে। " সারাদিন ফোন হাতে ছিলনা।একটা বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম।দেখা হলে বলব।সন্ধ্যার দিকে দেখলাম মেসেজ।তখন আপুও কল করে বললো বাসায় প্রব্লেম হলো খুব।আর তোমার বাবা, ভাই খুব অপমানিত হয়েছেন।আমি থাকলে এসব কিছুই হতোনা।পাকনামি করে আমাকে না বলে আসতে দিলা কেনো?আচ্ছা এসব বাদ এখন।আমি আসছি।গাড়িতে আছি।সব ঠিক হয়ে যাবে।কান্নাকাটি করোনা।ভুল হয় ই।মানুষ জীবনে অনেক ভুল করে।তুমিই তেমন করে ফেলেছো।এজন্য আপসেট হয়ে থেকোনা।কান্নাকাটি ভুলেও না। " বিভোরের মেসেজ দেখে হাসি ফুটে ধারার ঠোঁটে।রিপ্লে করে,  " You are a magician "  বিভোর ফেরত মেসেজ পাঠায়। " পৌঁছে কল করব।গুড নাইট।" ধারা ফোন চার্জে দিয়ে বারান্দায় এসে বসে।বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি।বৃষ্টি দেখলেই বিভোরের কথা মনে হয়। মনটা শান্ত করে দিয়েছে মানুষটা।ধারা চোখ বুজে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলোর কথা ভাবে।শরীরের পশম কাঁটা কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।চোখ তুলে বাইরের আকাশের দিকে তাকায় সে।পাশাপাশি নেই কিন্তু এক আকাশের নিচে তো আছে দুজন।মনে মনে তাঁর আক্ষেপের সুর ঝড়ে পড়ে।এতো সুন্দর মুহূর্তে বিভোর কেনো নেই পাশে।কোনো এক বৃষ্টির রাত একসাথে কাটাবার কত ইচ্ছে দুজনের।ধারা রুম থেকে ফোন নিয়ে আবার বারান্দায় এসে বসে।গ্যালারি তে ঢুকে এক এক করে বিভোরের ছবি দেখতে থাকে।খালি গায়ের ছবিটায় চোখ আটকে যায়।জিন্স পরা।কপালে চুল ছড়িয়ে।বুকভর্তি পশম। ধারা যখনি বিভোরের নগ্ন বুকে ঘুমোয়,বুকের পশমে ধরে টান দেয়।তখন বিভোর উহ` করে উঠে।আর বলে, --- "এতো ফাজিল কেনো তুমি?" ধারা ফোনের স্ক্রিনে থাকা বিভোরের ছবি জুম করে বুকের পশম চোখের সামনে নিয়ে আসে।স্ক্রিনের উপর দিয়ে বিভোরের বুকের পশম ধরে টান দেওয়ার মতোন অভিনয় করে।এরপর বিভোর হয়ে নিজেই আর্তনাদ করে উঠে উহ` বলে।তারপর পরই গগণ কাঁপানো হাসিতে মেতে উঠে। সব খেয়াল করে লিয়া।ধারা চার্জার আনতে ড্রয়িংরুমে গিয়েছিল।এরপর আর দরজা লাগায়নি।লিয়া এসেছে খাওয়ার জন্য ডাকতে।এসেই দেখে ধারা বারান্দায় বসে একা একা হাসছে।লিয়া বলে, --- "খুব আদর করে তাইনা?" ধারা লিয়াকে খেয়াল করেনি।ফোনের দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়, --- "হু খুব।ওর খোঁপা খুলে দেওয়াটা.... ধারা কথা শেষ না করেই বড় বড় চোখ করে পিছনে তাকায়।লিয়া হাসছে।ধারা দ্রুত ফোন লুকিয়ে ফেলে।লজ্জায় গাল লাল হয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে, --- " ভা..ভাবি তুমি?" লিয়া রসিকতা করে বলে, --- "হুম আমি।খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলাম।ডিস্টার্ব করলাম নাকি?" ধারা লজ্জায় দু'হাতে মুখ ঢেকে হাঁটুতে মাথা ঠেকায়।এরপর বলে, --- "দূর,যাও ভাবি প্লীজ।" লিয়া ধারার কথা অগ্রাহ্য করে ধারার পাশে বসে বলে, --- "এ তো দেখছি গভীর জলের মাছ।বিভোর সাহেব তো আদর ভালবাসা দুটো দিয়েই ননদিনীকে পাগল করে রেখেছে হে?" ধারা এসব কথার সম্মুখীন কখনো হয়নি।তাঁর দ্বারা কোনো ছেলেকে ভালবাসা হবে সেটা সে নিজেই ভাবেনি।তাই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।উঠে দ্রুত পায়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।লিয়া হেসে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর ধারা দরজা খুলে উঁকি দেয়।দেখে লিয়া এখনো বসে।এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে।ধারা আবার দরজা বন্ধ করে দেয়।লিয়া জোরে হেসে উঠে।উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য।যাওয়ার আগে বলে যায়, --- "খেতে এসো কিন্তু।" _____________________________________________ ভোরে বিভোর কল করে জানিয়েছে সে পৌঁছেছে।কথা বলা শেষে ধারা আবার ঘুমিয়ে পড়ে।নয়টার দিকে তিব্বিয়া খাতুন ডেকে তুলেন।নয়টা ত্রিশে ডাইনিং রুমে আসে ধারা।বাকিরা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।ধারা আজিজুরের পাশের চেয়ারটায় বসে। --- "রাতে খেতে আসোনি কেনো?" আজিজুরের প্রশ্ন। ধারা বলে, --- "এমনি।" --- "কি সিদ্ধান্ত নিলে?" --- "কোন ব্যাপারে? " --- "আমাদের ছেড়ে যাবে? নাকি থাকবে?" ধারা মাথা নত করে কিছুক্ষণ বসে থাকে।এরপর বলে, --- "বলেছিই তো গতকাল সকালে।" সামিতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।বলে, --- "তোর কাছে তোর বাপ, ভাইয়ের সম্মানের দাম নাই?" ধারা শান্ত গলায় বলে, --- "আছে।" --- "তাহলে ভাবোস কেমনে ওই পরিবারে যাওয়ার কথা?" ধারা মাথা নত করে বসে আছে স্থির হয়ে।সামিত আবার বলে, --- "তোর জন্মের পর থেকে তোরে যারা ভালবাসতেছে তাদের ভালবাসার চেয়ে কয়দিনের কোন ছেলের ভালবাসার দাম হয়ে গেলো বেশি?" ধারা শান্ত গলায় উত্তর দেয়, --- "ভালবাসার দামাদামি হয়না।মান-পরিমাণ হয়না।" সামিত আগুন চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, --- "দেখো কি সাহস।অন্যদের ছোট বোনের বড় ভাইয়ের সামনে কথা বলতেও ভয় পায়।আর সেখানে তোমার মেয়ে তর্ক করে।" তিব্বিয়া খাতুন বলেন,  --- "তোরাই এমন করেছিস।কত না করেছি এতো প্রশ্রয় দিস না।তবুও দিয়েছিস।এখন তোরা সামলা।আর বিয়ের পর জামাই সব।তোরা ওর জামাইয়ের কাছ থেকে দূরে রাখতে চাইতাছোস কেন?" শেখ আজিজুর তিব্বিয়ার দিকে কড়া চোখে তাকান।কটমট করে বলেন, --- "আমরা তো দিতেই গিয়েছিলাম।দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে।" তিব্বিয়া চুপসে যান।এরপর গলার জোর বাড়িয়ে মেয়েকে বলেন, --- "বিভোর কি বলে নাই ওর বাসায়?" --- "না।" --- "কেন?" --- "আমি না করেছিলাম।এরপর বললো,ঢাকা থেকে এসে বলবে। তার আগেই এতসব হয়ে গেলো।" --- "তুই তোর বাপ ভাইদের বলতে পারলিনা এসব?" --- "ভুল হয়ে গেছে।" সাফায়েত বলে, --- "ভুলের মাশুল দে এখন।" ধারা নির্ভয়ে বলে, --- "মানুষ ভুল করেই।মানিয়ে নিতে হয়।" সামিত কটমট করে বললো,  --- "মন চাইতেছে ঘাড় ধরে অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেই।" ধারা অবাক দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকায়।বলে, --- "এটা সম্ভব না তুমিসহ বাড়ির সবাই জানে।আমাকে বেঁধে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা না আছে তোমাদের আর না আছে আমার মনের।" শেখ আজিজুর এক হাতে কপাল ঠোকেন। এরপর বলেন, --- "ধারা ক্লিয়ার করে বলো।আমাদের কি করতে হবে?বিয়ের জন্য তো গিয়েছিলাম।মানেনি।" --- "যদি বিভোর ওর পরিবার নিয়ে আসে?" শেখ আজিজুর থমকে যান।একবার ছেলেদের দিকে তাকান।এরপর বলেন, --- " ওই পরিবারের সাথে আত্মীয় করা আর সম্ভব না।" ধারা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।বলে, --- "বাবাই বিভোর খুব ভালো একজন মানুষ। আর আমাকেও খুব ভালবাসে।আমাকে যে ভালবাসে তাকে তোমরা ভালবাসবেনা?" সামিত দৃষ্টি অস্থির রেখে বলে, --- "আমরা তো দেখিনি ওর ভালবাসা কেমন।" --- "একবার দেখলে বুঝতে আমি কতটা ভালো থাকব।" --- "কিন্তু দেখিনি তো।এটা তার অভিনয় হতে পারে বা মোহ।কত ছেলে দেখছি।এমন কত কেইস হাতে আছে।" সামিতের ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি।  ধার ঠোঁট ভেঙে কাঁদা শুরু করে।মাঝে মাঝে নাক টানছে।সবাই খাওয়া রেখে ধারার দিকে তাকায়।সাফায়েত বলে, --- "ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদোস কেন।বলছি তো ইচ্ছে হলে চলে যা।" ধারা কান্না ভেজা কন্ঠে বললো,  --- "আমি পারবনা কিছু ছাড়তে।" --- "আজব!কান্না থামাবি?" ধারা কান্না বেগ বাড়িয়ে দেয়।লিয়া বলে, --- "ওরা ঠিক করে নাই মানতেছি।তাই বলে এমন ডিসিশন নেওয়া ঠিক না।দেখেন ধারা কেমনে কাঁদতেছে। এমনে কাঁদলে কি আপনাদের লাভ আছে বাবা?" আজিজুর লিয়াকে বলেন, --- "আমাদের কি করার আছে?" লিয়ার কাছে উত্তর নেই।খাওয়া শেষে আজিজুর বলেন, --- "ওই বাড়ির বাপ ব্যাঠায় যদি ক্ষমা চায়।তবে মেয়ে দিয়ে দেব।" সাফায়েত বাধা দিয়ে বলে, --- " না বাবাই এতো সোজা না।পরী শোন, তুই আজ তোর ফোন অফ করে আমাকে দিয়ে দিবি।পর পর ছয়দিন বিভোরের সাথে যোগাযোগ রাখবিনা।অন্য কোথাও থাকবি।" ধারা আৎকে উঠে বললো, --- " মানে?না.... --- "পুরোটা শোন, ছয় দিনে বিভোর তোর খুঁজে কি কি করে সেটাই দেখবো।যদি, মনে হয় ও তোর জন্য পারফেক্ট। তোর চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে তাহলে দিয়ে দেব।না,তার আগে বিভোরের পরিবারকে সরি বলতে হবে।দু'টো শর্ত ঠিকঠাক মতো হলে আমাদের আর সমস্যা নাই।" লিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে, --- "এ্যাঁ তুমিতো সিনেমার ভিলেনওয়ালা ভাইদের মতো কথা বলছো।" সাফায়েত বিরক্ত নিয়ে তাকায়।বলে, --- "আজব।আজীবন ধরে সিনেমা দেখতেছি কাজে লাগাবোনা?পরী তুই রাজি?" ধারা কিছু ভাবে।এরপর বলে, --- "বাবা আর বড় ভাইয়া তোমাদের সেইম শর্ত?" শেখ আজিজুর সাফায়েতের দিকে তাকান।সাফায়েত চোখের ইশারায় রাজি হতে বলে।এরপর আজিজুর বলেন, --- "হুম এটাই শর্ত।" ধারা চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।এরপর ফোন অফ করে সামিতের হাতে তুলে দেয়। সামিত ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায়। সাফায়েত বলে, --- "মিহিদের বাড়িতে থাকবি।কোনোরকম যোগাযোগ করা যাবেনা। প্রতারণা করবিনা।" ধারা অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়।ভাইগুলো কেমন পরের মতো করছে।শর্ত দিচ্ছে।ধারা বলে, --- "আমি প্রতারণা করিনা।" অপেক্ষায়, অপেক্ষায় তিন দিন কেটে যায়।শাফি ট্যুর থেকে ফিরেছে।ধারার চোখের নিচে কালি জমেছে কেঁদে, কেঁদে।বিভোর কেনো আসছেনা।এরপরদিনই তো খুঁজে আসার কথা ছিল।অথচ, এখনো অব্দি এলোনা।তিনটা দিন পার হলো কথা নেই।কি করছে, কেমন আছে কে জানে।ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখে ধারা বিভোরের কথা ভাবছিল।তখন শাফি আসে।ধারার পাশে বসে বলে, --- "বিভোর আসছে না কেন বলতো?" ধারার ঠোঁট কাঁপছে কান্নার দমকে।বলে, --- " ওর কিছু হইলো নাকি।একটু খোঁজ নিবা ভাইয়া।নয়তো ও এতদিন থাকতোনা আমার খুঁজ না পেয়ে।" শাফি নতজানু হয়ে বলে, --- "আজ দুপুরে শুকরিয়া মার্কেটে দেখলাম শার্ট কিনতে।কিছু হয় নাই তো।" ধারা আরো জোরে কেঁদে উঠে।বার বার বলছে, --- "ও আসছেনা কেনো।মাত্র ২-৩ ঘন্টার পথ।তিনদিন আমার খোঁজ না পেয়েও কেন আসলোনা।" শাফি কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা।সত্যিই তো!কেনো আসছেনা।সে নিজের চোখে হাসি-খুশি বিভোরকে দেখে এলো।কি সমস্যা তার?  সাফায়েত আসে কিছুক্ষণের মধ্যে ধারাকে দেখতে।ধারা তখন কাঁদছিল।সাফায়েত কে দেখে কান্না বন্ধ করে দেয়।সাফায়েত ধারার পাশে বসে।শাফির দিকে একবার তাকায়। ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।এরপর চোয়াল শক্ত করে বলে, --- "বাটপারের বাচ্চা বিয়ের কথা শুনে পালাইছে।তোরে ভালো বাসে নাই কোনদিন।আগেই বুঝছিলাম শালা মেয়েখোর। পটাইয়া বি.... সাফায়েত থেমে যায় ধারার অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে।ধারার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে এসব শুনে।কেনো এতো খারাপ কথা বলে ওর ভাইয়েরা।সাফায়েত আবার বলে, --- " রাজপুত্র দেখে তোর বিয়ে দেব।আর বিয়ে করতে না চাইলে করিস না।আমরা তিন ভাই আছিনা? " ধারা চোখ সরিয়ে নেয়।শাফির এক হাতের উপর মাথা রেখে চোখ বুজে।দু'ফোটা জল দু'চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে।  
Parent