গল্প -বৃষ্টি হয়ে নামো (ইলমা বেহরোজ) (সমাপ্ত গল্প) - অধ্যায় ৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-70094-post-6023478.html#pid6023478

🕰️ Posted on August 30, 2025 by ✍️ Bangla Golpo (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1241 words / 6 min read

Parent
  ৯. জিপে উঠে দিশারি বললো, ------"নেক্সট প্ল্যান কি?" বিভোর আয়েশি ভঙ্গিতে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে।তারপর দায়সারাভাবে বললো,  ------"তোরা প্ল্যান কর।" সায়ন কপট রাগ নিয়ে বললো, -----"শালা তোরে আনছি কেন?" বিভোর ভারি ইনোসেন্ট চোখে তাকায়।জিজ্ঞাসা করে, ------"কেনো এনেছিস?আর তুই এনেছিস কখন? নিজের টাকায় না আসলাম!" সায়ন ভোঁতা মুখে বললো, ------"আমার রিকুয়েষ্ট রাখতেই তো আইছস।" বিভোর চোখ বুজতে বুজতে উত্তর দেয়, ------"ওহ।" বিভোরের ঘাড়ত্যাড়ামি দেখে ধারা চাপা হাসে। দিশারি বিভোরকে ঝাঁকি দিতেই,বিভোর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো, ------"শরীরে হাত দিতে কতদিন না করছি।" দিশারি গলার জোর দ্বিগুণ করে বললো, ------"ওরে আমার শাহরুখ খান কই থাইকা আইছেরে।গায়ে হাত দিলে কি শরীর নষ্ট হইয়া যাইবো?সুন্দর হইছস বইলা অহংকারে মইরা যাইতাছোস?" বিভোর রাগে বললো, ------"আমারে চ্যাতাইস না দিশা।" দিশারি ঠোঁট বাঁকিয়ে বিদ্রুপ করে,  ------"মাইয়া মানুষ ছইলে তোর জ্বলানি উইঠা যা।তাইলে কি ধইরা নিমু তুই পুরুষ না তুই..... ------"দিশা বাকিটা উচ্চারণ করবিনা।আমি মোটেও তেমন না।আমার বউকে অবশ্যই ছুঁতে দিবো আর আমিও........ কথার মাঝে বিভোরের চোখ পড়ে ধারার চোখে। ধারাই তো তাঁর বউ।বাকি কথাটা আটকে যায়।ধারা,বিভোর দুজনেই চোখ সরিয়ে নেয়।দিশারি বলে, ------"ওলে বাবালে!তো বিয়েডা কোনদিন করবি শুনি?" বিভোর পাশ কাটাতে বললো, ------"মাথা ব্যাথা করছে।চুপ কর।" সায়ন তখন বিড়বিড় করে, ------"কাইয্যাকুন্নি !" দিশারি চোখ সরু করে বললো, -----"তুই কিছু বললি?" সায়ন সাফ নাকচ করে, ------"না না আমার কি সাধ্যি আছে তোরে কিছু বলার।" দিশারি সরু চোখে বিভোর সায়নকে পরখ করে কয়েকবার।তারপর গোমড়া মুখে বললো,  -----"কোনো প্ল্যানই করবিনা কেউ?" বিভোর চোখ বুজা অবস্থায় রেখেই বললো, ------"কই যেতে চাস?" ধারা আগে আগে বলে, -----"ঝর্ণা আছে?" বিভোর চোখ খুলে।দিশারি লাফিয়ে উঠে বলে, ------"ইয়েস!ঝর্ণায় গোসল করবো।" বিভোর বিরক্তি নিয়ে বলে, -----"এখন গোসল করলে শীতে মইরা কাঠ হইয়া যাবি।বারোটায় গেলে ঠিক আছে।" সায়ন আড়মোড়া ভেঙে বললো, ------"এখন আর জার্নি সম্ভব না।ঘুম হয় নাই।কতক্ষণ ঘুমাইতে হইবো।আর ঊর্মি তো হোটেলে রইছে।" -----"তাহলে হোটেলে ফিরছি?" বললো বিভোর। সায়ন ঘাড় কাত করে। কিছু সময়ের ব্যবধানে ওরা হোটেলের সামনে চলে আসে। দিশারি সায়ন রুমে চলে যায়।বিভোর হোটেলের পাশে এক রেস্টুরেন্টে বসে কফি খাওয়ার জন্য।ধারা সেটা খেয়াল করে। তাঁর ইচ্ছে হচ্ছিলো বিভোরের পাশে গিয়ে বসে কফি খেতে। কিন্তু কি মনে করে যেন আর গেল না।সব ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে নেই।গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে আসে। ___________________________________________ ঠিক এগারো টা ত্রিশ মিনিটে ওরা সবাই বের হয়।জিপ ভারা করে যাত্রা শুরু করে রক গার্ডেন এর উদ্দেশ্যে। কথায় কথায় ধারা প্রশ্ন করে, দার্জিলিংয়ের এত জনপ্রিয়তা কেনো?পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ মানুষ দার্জিলিংকে চিনে কীভাবে? দিশারি বললো, ------"কি বলিস পাগলের মতো কথাবার্তা।জনপ্রিয় কিভাবে হলো এটা আমরা কিভাবে জানবো।  বিভোর দিশারি ধমক দিয়ে বললো, ------"কি প্রশ্ন করছে এমন?এটার উত্তর অবশ্যই আছে।" দিশারি বললো, ------"তাহলে তুই বল?" বিভোর বললো, -----"সিওর না সম্ভবত দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয়তার কারন ছিলো তখনকার কলকাতার সিনেমা,যেখানে দার্জিলিংয়ের দৃশ্য দেখানো হতো প্রচুর।কলকাতার টালিগঞ্জের ছবির নায়ক নায়িকাদের প্রিয় লোকেশন ছিলো ’দার্জিলিং’। এছাড়াও বড়দের উপন্যাসে ও ছোটদের রহস্য গল্পেও দার্জিলিং এসেছে বার বার। সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদার প্রিয় জায়গা ছিলো এই পার্বত্য শহরটি।" দিশারি চোখ বড় বড় করে বললো, ------"বাব্বাহ!" বিভোর হাসে।ধারা ঢোক গিলে প্রশ্ন করে, -------"আপনার কি ভাবে ইচ্ছে হলো দার্জিলিং আসার? আর প্রথম কখন এসেছেন?" বিভোর জবাব দেয়, ------"যেহেতু আমি সত্যজিৎ রায়ের অন্ধ ভক্ত তাই দার্জিলিং যাবার ইচ্ছে ছোটবেলা হয়েছিল।অবশেষে গত পাঁচ বছর আগে দার্জিলিং আসি প্রথম।" ধারা বিভোরের উত্তরগুলো ভারি এনজয় করছে।প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসে। -----"আচ্ছা দার্জিলিং মোট কয়টি প্লেস আছে দেখার মতো?"  ------"আমার জানামতে,ছোট বড় মিলিয়ে উনত্রিশটি প্লেস আছে দার্জিলিংয়ে।" ------"নামগুলো জানেন?" ------"হুম।" ------"বলুন।" -----"বলতে হবে! আচ্ছা আপনি গুনুন আমি বলছি।" ধারা হেসে বললো, -----"ওকে।" ----- বাতাসিয়া লুপ,দালি মনাস্টেরী,রক গার্ডেন, গঙ্গামায়া পার্ক, জাপানিজ পিস টেম্পল, আভা আর্ট গ্যালারী, বাডওয়ান মহারাজার প্যালেস, তেনজিং নোর্গের বাসবভন, রেল ষ্টেশন, ডারহাম টাউন হল, ক্যাপিটাল ক্লর্ক টাওয়ার,ঘুম মনাস্টারী, লয়েড বোটানিকাল গার্ডেন,ন্যাচারাল হিষ্ট্রি মিউজিয়াম,চৌরাস্তা,টুরিষ্ট ইনফরমেশন অফিস, তেনজিং রক, অবজারভেটরী হিল/মহাকাল টেম্পল,ভূটিয়া বস্তি মনাস্টেরী, তিব্বতী রিফিউজি সেল্ফ হেল্প সেন্টার,শ্রাবেরী নাইটিংগেল পার্ক,রিনক মল,হিমালয়ান মাউনটেনীয়ারিং ইনস্টিটিউট, জোড়বাংলো,সেইন্ট জোসেফ’ কলেজ (নর্থ পয়েন্ট), টাইগার হিল, ঘুম রেল ষ্টেশন,টেম্পল,ফরেনার্স রেজিষ্ট্রেশন অফিস।" বিভোর একদমে সবগুলো নাম বলে।তারপর ধারার দিকে তাকায়।দেখে ধারা নয় শুধু দিশারি, উর্মি,সায়ন সবাই চোখ বড় বড় করে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।ধারা চোখ বড় বড় রেখেই বিড়বিড় করে, ------"ও মাবূদ!এত প্লেস কবে ঘুরবো আমরা?" বিভোর হালকা হেসে উত্তর দেয়, -----" আজ আমরা দূরের প্লেস ঘুরছি যে তাই সময় যাচ্ছে অনেক। আগামীকাল একসাথে অনেকগুলো প্লেস দেখা হয়ে যাবে। " ধারা বললো, -----"তাই বলুন!আচ্ছা এখন আমরা যেখানে যাচ্ছি নাম কি?" বিভোরের আগে ড্রাইভার উত্তর দিলো, ----"রক গার্ডেন।" রক গার্ডেন মূলত পাহাড়ের নিচে কত গুলো পাথরের উপর দিয়ে প্রবাহিত একটা ঝর্না যা দার্জিলিং এর ম্যাল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।রক গার্ডেনে যেতে হলে পাহাড়ের নিচে নামতে হয়।দার্জিলিং শহর থেকে অনেক নিচে এটি অবস্থিত।যাওয়ার রাস্তাও অসম্ভব রকমের সুন্দর।ধারা নিজের আনা ক্যামেরা দিয়ে চারপাশ ক্লিক করে ক্যামেরা বন্দি করে নিচ্ছে। জিপ ক্রমাগত একটা করে তীক্ষ্ণ বাঁক পেরিয়ে নিচে নামছে।পথে অনেক চা বাগান চোখে পড়ছে।মুগ্ধ হয়ে সবার নয়ন জোড়া তাই দেখছে। আকস্মিক দিশারি চিৎকার করে, ------"গাড়ি থামান।গাড়ি থামান।" দ্রুত পাশ কেটে জিপ থামে।সায়ন চোখ কটমট করে তাকায়।কিড়মিড় করে বলে, ------"কি হইছে তোর?" দিশারি জবাবে হাসে।দরজা খুলে নেমে পড়ে।তারপর উঁকি দিয়ে ঊর্মিকে বললো, ------"এতো সুন্দর জায়গা ফটোসেশন করবে না? তাড়াতাড়ি নামো!এত সুন্দর জায়গায় ছবি না তুললে জীবন বৃথা।" দিশারির কথা শুনে সায়নের রাগ উঠলেও বিভোরের যেন একটু হাসলো।ঊর্মি নামে।সায়ন বিরক্তি নিয়ে দুইজন রমণীর ফটোগ্রাফি করে বিশ মিনিটের মতোন। এক পাশে পাহাড়ি রাস্তা,আর এক পাশে চা বাগান। দূরে পাহাড়ের উপর মেঘমালা ঘনীভূত হতে শুরু করেছে তার সাথে হিমেল হাওয়া।আহা সে যেন এক অপার্থিব পরিবেশ। আবার যাত্রা শুরু হয়।চারপাশ দেখতে দেখতে রক গার্ডেন পৌঁছালো গাড়ি।গাড়ির ড্রাইভারের কাছে বিভোর দুই ঘন্টা সময় নিয়েছে।বিনিময়ে রুপি দিতে হচ্ছে তিনগুণ।রক গার্ডেনে প্রবেশের ফি জন প্রতি ১০ রুপি। ওরা টিকেট কেটে রক গার্ডেনে প্রবেশ করে।ধারা যা দেখছে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছে। রক গার্ডেন একটা ঝর্ণা।পাশে বাগান আছে। জায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো,ফুল গাছ দিয়ে। ঝর্ণাটা এত বেশি বড় না।কিন্তু অপূর্ব সুন্দর। ঝর্ণা থেকে ঝর্ণার চারপাশ বেশি সুন্দর।ঝর্ণার উপরের দিকে উঠার জন্য সিঁড়ি করে দেওয়া।আশেপাশে মানুষ খুবই কম।বেশিরভাগ মানুষ বিকালের দিকে আসে। ঝর্ণা দেখে দিশারি নিরাশ হয়।চারপার মুগ্ধকর হলেও সে ভেবেছিল ঝর্ণার পানি অনেক উপর থেকে পড়বে।আর নিচে দাঁড়িয়ে থেকে বাহুবালি মুভির নায়িকার মতো ভিজবে।কিন্তু তেমনটা হওয়ার কোন পথ নাই।এক পাথর থেকে অন্য পাথরে পানি পড়ছে।দাঁড়ালে শুধু পা ভিজবে। বিভোর ব্যাগপ্যাক,ক্যামেরা,জুতা সায়নের সামনে মাটিতে রেখে বললো, -----"আসছি আমি।" সায়ন বললো, -----"কই যাস?" বিভোর যেতে যেতে বললো, -----"আসছি তো দাঁড়া।" বিভোর ঝর্ণার পানিকে অনুসরণ করে পাথর বেয়ে নিচে নামতে থাকে।ধারা নিজের অজান্তে চিৎকার করে বলে, -----"সাবধানে..... তারপর কি মনে করে বিভোরের ব্যাগপ্যাক, জুতা,ক্যামেরা মাটি থেকে তুলে বুকে আগলে নেয়। বিভোর কয়েক মিনিট পর আসে।হেসে বলে, -----"দিশা গোসল করতে পারবি।নিচে একটা বড় গর্ত হয়েছে।ঝর্ণার পানি সেখানেই পড়ে।একদম স্বচ্ছ পানি।" দিশারি লাফিয়ে উঠে খুশিতে।ধারাও খুশিতে হাসে।তাঁর ও ইচ্ছে ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে ভেজার।সায়ন ঊর্মিকে বলে, -----"চলো ভিজি।" ঊর্মি নাকচ করে।সায়ন কোনোভাবে ঊর্মিকে রাজি করাতে পারেনি।সায়ন বুঝতে পারছে ঊর্মি ঘুরতে এসে খুশি নয়।কিন্তু কেনো? সবার যাবতীয় জিনিসপত্র ঊর্মির কাছে রাখা হয়।নামার পথে ধারা, দিশারির সমস্যা হচ্ছিলো।পাথর পিচ্ছিল খুব।বিভোর ধারার হাত ধরে,সায়ন দিশারির।ধীরে ধীরে নেমে আসে শেষ পাথরটায়।সামনেই অনেকটা জায়গা জুড়ে স্বচ্ছ ঝর্ণার পানি।উপর থেকে পড়ছে।চারপাশে শুধু ঝর্ণার পানির আওয়াজ।ধারা অবাক চাহনিতে হা হয়ে বিভোরের আগে গিয়ে দাঁড়ায়।চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে।কি সুন্দর!কথাটি বলার জন্য যখনি ধারা ঘুরে দাঁড়ায় বিভোরের দিকে।সায়ন বিভোরকে ধাক্কা দেয়।বিভোর টাল সামলাতে না পেরে ধারাকে জাপটে ধরে পানিতে পড়ে।ধারা ভয়ে চোখ খিঁচে এক হাতে বিভোরের শার্টের কলার খামচে ধরে অন্য হাতে পিঠের শার্ট।সায়ন-দিশারি কলকলিয়ে হেসে উঠে।দুজন পানির নিচ থেকে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।ততক্ষণে তাঁদের এক ডুব হয়ে গেছে। দুজন দুজনের শরীরের উষ্ণতা অনুভব করে।ঝর্ণার ঠান্ডা জলও শরীরের গভীর উষ্ণতা সরাতে পারেনি।ধারা বড় বড় চোখ মেলে বিভোরের দিকে তাকায়।তাঁর দৃষ্টি স্থির। বিভোরের ঠোঁট লাল।আগে খেয়াল করেনি ধারা।কপালের ছড়িয়ে থাকা চুল ভিজে নাক চোখ ঢেকে দিয়েছে বিভোরের।ধারা এক হাতের এক আঙ্গুল দিয়ে কপাল থেকে চুল সরিয়ে দেয়।তখন ধারার হাত কাঁপছিল বোধকরি।বিভোরের দৃষ্টি ধারার চোখে নিবদ্ধ।  সেই দৃষ্টিতে,  ছন্নছাড়া মনে,শুভ সেই ক্ষণে দুটি মনে প্রেমের প্রলয়, ঘটে নীরবে! দিশারি দুষ্টু মুখ ভঙ্গি করে সায়নকে পিছন থেকে জোরে ধাক্কা মারে।সায়ন বিভোর-ধারার পাশে পড়ে।আওয়াজ হয় জোরে।ধারা সচকিত হয়ে সরে যেতে চাইলে বিভোর যেনো আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। চলবে.........
Parent