গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত) - অধ্যায় ৫৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-46119-post-5002803.html#pid5002803

🕰️ Posted on October 26, 2022 by ✍️ Bumba_1 (Profile)

🏷️ Tags:
📖 3339 words / 15 min read

Parent
•• অন্তিম খণ্ডের সূচনা •• (১) জীবন তাকে কষ্ট দিতে চাইলে, সেই কষ্টে চূর্ণ-বিচূর্ণ না হয়ে গিয়ে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনকে দেখিয়ে দিতে হবে সে কতটা কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। সে হয়তো এখন জীবনের একটা ভয়ঙ্কর খারাপ সময় অতিক্রম করছে, কিন্তু একটা কথা বুঝতে হবে .. আজ তার জীব‌নের ভালো অথবা খারাপ সময় যাই হোক না কেন, এটাই জীবনের শেষ অধ্যায় নয়। এটা শুরুর গল্পও হ‌তে পা‌রে, আবার এই অধ্যায় থেকে শুরু হ‌তে পা‌রে জীব‌নের এক দুর্দান্ত সূচনা। আজ খারাপ সময় যাচ্ছে, এর মানে এই নয় যে তার জীবনে আর কখনো ভালো সময় আসবে না। আজ সে কাঁদছে, এর মানে এই নয় যে সে অনন্তকাল ধ‌রে কেব‌ল অশ্রুবর্ষণ করে চলবে! দুঃখ-কষ্ট মানুষের জীবনে শুধু বেদনা দেওয়ার জন্যই আসে না। বরং জীব‌নের দুঃখ-কষ্টগু‌লো মানুষকে জীব‌নের পরম সত্য অনুধাবন ও উপল‌ব্ধি‌তেও সাহায্য করে। মায়াবন্দরের সেই বিভীষিকাময় ঘটনা এবং পরবর্তীতে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব .. এই ধরনের অসহায় ও ভীষণ কষ্টকর মুহূর্তগু‌লো পার করা যে কতটা বেদনাদায়ক তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এই সময়টা নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে দিতে পারলে তবেই সে জয়ী হবে জীবনযুদ্ধে। কারণ, ভালো বা খারাপ যে কোনো ঘটনার স্মৃতি কখনোই স্থায়ীভাবে মনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে শুধু এইটুকুই ভাবতে হয় .. সুখময় জীবন হাতছা‌নি দি‌য়ে ডাক‌ছে তাকে, তাই সু‌দি‌নের প্রত্যাশায় স্বপ্ন দেখা আবশ্যক - শয়‌নে, স্বপ‌নে ও জাগর‌নে। ঘাত-প্রতিঘাত মনুষ্যজীবন সম্পর্কে জানাতে আসে। তাদের আসেপাশের মানুষগুলোর অন্তর্নিহিত চেহারাটা চিনিয়ে দিতে আসে। কে প্রকৃত আপনজন আর কে পর, কে শত্রু আর কে প্রকৃত বন্ধু .. সেই সম্পর্কে সম্যক ধারণা সৃষ্টি করে দেয়। তাই, খারাপ সম‌য়ে মনের দরজা খুলে চিনে রাখা আবশ্যক শত্রু ও বন্ধু‌কে .. যা দুর্দিনে বাস্তবতার সম্পর্কে জ্ঞানবৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। খারাপ সময়ে সব পরিচিতরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে না। শুধুমাত্র সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী অন্যের খুশির জন্য নিজের খুশিগুলো বাজি রাখতে পারবে। জীবনের সব থেকে খারাপ সময়ে, যখন দেয়ালে পিঠ থেকে যায়, তখন নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়াটা সব থেকে সহজ একটা কাজ। কিন্তু কয়েকটা দিন পর, খারাপ সময়টা কেটে যাওয়ার পর একটা ভালোদিনের প্রত্যাশা করাটা ততটা সহজ নয়। আজ প্রচুর পরিমান বেদনাদায়ক ও ভীষণরকম একটা ক‌ঠিন সময় পার করলেও ক'দিন পর দেখা যায় জীবনে একটা ঘুরে দাঁড়ানোর সময় আসে স্বাভাবিক ভা‌বেই। যেমন অন্য কারো চিন্তা ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর নয়, ঠিক তেমনই মনুষ্যজীবনের প্রতিটা বিষয়কে সে নিজেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানুষ শুধু একটা জিনিসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে .. সেটা হলো তার প্রত্যাশা। তাই নিজ প্রত্যাশা পূরণে অটল থেকে জীবনের জয়কে হা‌তের মু‌ঠোয় তু‌লে আনা আবশ্যক। মানুষের জীবনে প্রতিটা কষ্টের কারন হচ্ছে এই প্রত্যাশা। যখন মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয় না, ঠিক তখনই মানুষ কষ্ট পায়। তাই কারো উপর খুব বেশি প্রত্যাশা না রেখে, শুধু সাফল্যের একান্ত নি‌জের স্বপ্নে‌তে বি‌ভোর থাকলেই দৃষ্টিগোচর হবে জীবন-জ‌য়ের বরমাল্য। জীবনের সাথে যুদ্ধে পরাজয় বরণ না করে ধৈর্য্য ধরতে শিখলেই দেখা যাবে জীবনের গল্পটা বদলে গিয়েছে। আর এই বদ‌লে যাওয়া জীবনটাই তো হ‌বে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের আধার। নিজেকে নিজে ভালো রেখে, সুখে থেকে, জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে এভা‌বেই আমরা প্র‌ত্যে‌কেই হ‌য়ে উঠ‌তে পা‌রি আমা‌দের স্বপ্নপূরণের রূপকার। নিজের কঠিন থেকে কঠিনতর জীবন-সংগ্রাম থেকে উপরোক্ত এই উপলব্ধি গ্রহণ করে নিজের অন্তরাত্মায় খোদাই করে ফেলা অপূর্বর দৈনিক ক্রিয়াকর্মের পরম্পরা এবং জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি এখন সম্পূর্ণরূপে বদলে গিয়েছে। মানুষের জীবন সীমিত পরিসরের গণ্ডিতে বাঁধা। নানান স্বপ্ন, আশা প্রত্যাশার বিভিন্ন কল্পনা নিয়েই মানুষ বাঁচে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে জীবনের নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সময় তো কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। সেই বিভীষিকাময় ঘটনার পর প্রায় একমাস অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। প্রথম কয়েকদিন খবরের কাগজের শিরোনামে উঠে এসেছিল ওসমান আর তার সঙ্গী জ্যাকির হত্যাকাণ্ডের খুঁটিনাটি। সেখান থেকেই অপূর্বরা জানতে পারে পুলিশ ওই বাংলোর কেয়ারটেকারকে অ্যারেস্ট করেছে। খবরটা পড়েই অপূর্ব এবং তার মায়ের মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কারণ সেদিনকে দেবদূতের মতো কেয়ারটেকার রাখাল আবির্ভূত না হলে তাদের জীবনটা এতদিনে নরক হয়ে যেতো। পরে অবশ্য পুলিশ তাকে প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। রেজিস্টার খাতায় ওসমান আর জ্যাকি ছাড়া কারোর নাম লেখা ছিল না বলে পুলিশ কোনো কিনারা করতে পারেনি ওদের মৃত্যুর রহস্যের। যেহেতু ওসমান এবং জ্যাকি .. দুজনেরই নাম দাগি অপরাধী হিসেবে পুলিশের খাতায় ছিল, তাই শেষমেষ এটা হয়তো 'গ্যাংস্টারদের গোষ্ঠীকোন্দল' এইরূপ একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল পুলিশ বিভাগ। ওই খবর ধীরে ধীরে প্রথম পাতা থেকে দ্বিতীয় পাতায়, দ্বিতীয় পাতা থেকে তৃতীয় পাতায় স্থানান্তরিত হতে হতে ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এদিকে বর্ণালী দেবীরাও হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ওইরকম একটা উত্তেজক শরীর নিয়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় আগেরদিন দুপুর থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত প্রথমে দু'জন এবং পরে চারজন কামুক, লম্পট, দুর্বৃত্তের সাথে এক ঘরে থাকলে তার সঙ্গে কি কি হতে পারে সেই সম্পর্ক একটা সম্যক ধারণা যে তার কলেজপড়ুয়া ছেলের পক্ষে করা সম্ভব সেটা তার মাতৃদেবী ভালো করেই জানে। আবার অন্যদিকে পরোক্ষভাবে নিজের মা'কে সম্পূর্ণ অপরিচিত, চরিত্রহীন, নারীমাংস লোভী, মত্ত হায়নাগুলোর  ভোগ্যবস্তু হতে সাহায্য করা এবং নিজের মাতৃদেবীর লজ্জা, সম্ভ্রম আর সতীত্ব হরণের প্রতিটা দৃশ্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা এবং পরবর্তীতে হস্তমৈথুন করে নিজের উত্তেজনা প্রশমিত করা .. এই সবকিছুই যে ঘোরতর অন্যায়, সেটা অপূর্ব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে এখন। তাই মায়াবন্দরের বাংলোর ওই বদ্ধ ঘরে ঘটে যাওয়া সেই কলঙ্কিত এবং নিষিদ্ধ ক্রিয়াকলাপ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আর তিক্ততা বাড়াতে চায়নি বর্ণালী দেবী এবং অপূর্ব দুজনেই। বরং তারা পরস্পরকে সমবেদনা জানিয়ে কিছুটা হলেও নিজেদের ভাবমূর্তি প্রচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেছে পরস্পরের প্রতি। অথচ এত কিছুর মাঝেও অপূর্ব সেইদিন বিকেলে একটি অচেনা নম্বর থেকে তার মোবাইলে ফোন আসার কথাটা ব্যক্ত করতে পারেনি তার মাতৃদেবীর কাছে এবং বর্ণালী দেবীও ভোররাতের সেই বিভীষিকাময় নারকীয় ঘটনাটির সাক্ষী থেকেও একটি কথাও মুখ ফুটে বলতে পারেননি তার ছেলের সামনে। কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া পৌরসভা ভোটে পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন দলের গদি উল্টে যাওয়ায় মিউনিসিপ্যালিটির নতুন করে গঠিত হওয়া বোর্ডের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় .. 'রেলপাড়ের মিউনিসিপাল স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষকদের চাকরি এই মুহূর্তে যাচ্ছেনা, তবে তাদের পরীক্ষা গিয়ে পার্মানেন্ট হতে হবে এবং বারোজন শিক্ষক/শিক্ষিকার মধ্যে মাত্র তিনজনকে পার্মানেন্ট করা হবে।' ওসমানের বলা বাকি সবকিছু মিথ্যের মধ্যে সেদিনকে ফোনে বিধায়ক মশাইয়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটাও মিথ্যে ছিলো এবং সেটা যে অপূর্বর মা তথা তাদের পরিবারের জন্য কতটা মঙ্গলকর হয়েছে, সেটা বর্তমানে তারা বুঝতে পারছে। বিধায়ক মানিক সামন্তর কোনোরকম সাহায্য, বলা ভালো এই ব্যাপারে তার কোনো জানকারি ছাড়াই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্ণালী দেবী এখন রেলপাড়ের স্কুলের একজন স্থায়ী শিক্ষিকা। ★★★★ আবারো একটা শরৎকালের আবির্ভাব .. বসন্তকাল ঋতুরাজ হলেও গোগোলের জীবনে এবং মননে শরতের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে .. তার প্রধান কারণ যদি এই ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হয় তাহলে দ্বিতীয়টা অবশ্যই দেবী দুর্গার আগমন। আর দুর্গাপুজো মানে হরেকরকম হাসি মজার ঝুলি, আর চাওয়া-পাওয়ার হিসাবী আধুলি। বাঙালির শারদীয়া উৎসব মানেই তো ভেসে যাওয়া সুখের বিলাসে, সব ভুলে মন মেতে ওঠা দারুন অভিলাসে। পুজো মানে গল্প, আড্ডা, খাওয়া সুখের ঘুম, তারস্বরে মাইক আর শব্দ বাজির ধুম। গোগোলের কাছে পুজো মানেই রঙিন হওয়া এক পশলা সুখ, অনেক দূরে হারিয়ে ফেলা অজানা এক মুখ। পুজো মানে নতুন খুশি নতুন হাওয়ায় ভাসা, পুরানোকে সাথে করে নব্য মাঝে মেশা। পুজো মানে আলো মেখে সেল্ফি তোলার ঝোঁক, রামধনু রঙ মিলেমিশে সবাই আনন্দে এক হোক। পুজো মানে ঘোরাঘুরি আর একটু আধটু আড়ি, খুশির মাঝেই হঠাৎ ফোনে ফিরে আসা বাড়ি। অষ্টমির অঞ্জলি, প্রেম, ছোটদের বেলুন খেলা, ঢাকের তালে নাচে এ মন দেখে ভিড়ের মেলা। বৃষ্টি ভিজে ঠাকুর দেখা হাজার বারন জ্ঞানে, বুদ্ধি করে বুঝিয়ে দেওয়া বাঙালিয়ানার মানে। পুজো মানে ভোগের আবেশ আকাশ বাতাস জুড়ে, গ্রাম প্রকৃতি সেজে ওঠে দেখো আগমনীর সুরে। পুজো মানে বিজয়া পালন মিষ্টি মুখের সাথে, ধুনুচি নাচের রেশটা থামে বিসর্জনের রাতে। মাটির পুজো অনেক হলো, সত্যি পুজো নেই, ভন্ড সাজে আমরা সবাই মন্ডপেতে যাই। চাই নাকো আর ভ্রূনহত্যা, ডুবতে অন্ধকূপে, তবে মিথ্যা কেন আরাধনা মা-দূর্গা রূপে। তবে আজ বিসর্জনের রাত নয় .. আজ মহানবমী। রেলপাড়ের পাশের বারোয়ারি পূজোটা তো এক প্রকার তাদেরই .. ওই পুজোর প্রাণভোমরা হলো গোগোল। ষষ্ঠী থেকে নবমীর সকাল পর্যন্ত চুটিয়ে আনন্দ করেছিল সবাই মিলে। কিন্তু, তারপরে একটা খবর সবকিছু ওলটপালট করে দিলো। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হতে চললো .. উৎসবের মেজাজে সবাই মাতোয়ারা। রেলপাড়ের পিছন দিকটায় ঝিলের উল্টোদিকের উঁচু টিলাটার উপর বসে আছে গোগোল .. এই দিকটা বেশ শুনশান, সচরাচর কেউ আসে না। এইমাত্র সারাদেশ মাতৃবন্দনা করে উঠলো নবরাত্রিতে। এক শক্তিমতী নারীর বন্দনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দেশ। এদিকে করওয়া চৌথ পালনের রোম্যান্টিক আবেগে আবেশে থরোথরো যুগলেরা .. ক্যাটরিনা-ভিকির আদর্শে সেজে উঠছে দম্পতি। এখন খবরের কাগজে শুধু এই সমস্তই খবর। আর তা না হলে এমনকিছু ‌ মর্মান্তিক এবং বীভৎস সংবাদ .. যা সভ্য সমাজের কাছে একদমই কাম্য নয়। এই যেমন ধরা যাক - তন্ত্রসাধনার জন্য একটি বালিকাকে খুন করেছে এক তান্ত্রিক .. চাঁচল .. সময় বিকেলবেলা। কিংবা সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌননিগ্রহ করেছে এক পৌঢ় শিক্ষক .. মালদহ .. সকালবেলা স্কুলের বাথরুমের পেছনে। আবার হয়তো নবম শ্রেণীর ছাত্রীর ধর্ষিত মৃতদেহ ধানক্ষেতের ধারে .. মেয়েটি সন্ধ্যেবেলা টিউশন পড়তে গেছিলো। অথবা এক বিবাহিত যুবক ও তার অবিবাহিতা প্রেমিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার আমবাগানে .. মেয়েটির দেহে ক্ষতচিহ্ন। এই সমস্ত খবরের জন্য গোগোল আজকাল খবর কাগজ পড়ে না .. শুধু বিজ্ঞাপন দেখার জন্য ক্লাব থেকে নিয়ে আসে খবরের কাগজটা। তবে এই খবরও ভালো লাগার কথা নয় যে পিকাসো বাইরে বেরোনোর সময় তাঁর প্রথম বান্ধবী ফের্নান্দ ওলিভিয়েকে তাঁদের আটবছরের সহবাসকালে  তালা বন্ধ করে রেখে যেতেন। অসম্ভব ঈর্ষাপরায়ণ পিকাসো অবশ্য তালা বন্দী বান্ধবীর জন্য চা, বই গুছিয়ে রেখেই যেতেন। ওলিভিয়ে যে পিকাসোকে নিয়ে বই লিখেছেন সেটি পিকাসো আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্ত পারেননি। মিউজিয়ামের ডিরেক্টর সেসিল দেব্রে বলেছেন যে আজকের মি-টু'র চশমা দিয়ে চ্যাপলিন, ব্রেশট, পিকাসো .. এদের কাউকেই দেখা উচিৎ নয়। এসব আমরা দেখবোও না। দেখবো পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনে রূপসী নারীর টুকুটুকে বধূরূপ .. ধনতেরাস আসছে। দেখবো আরো পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনে বিদ্যা বালানের কল্যাণী রূপ অথবা হোমকামিংয়ের প্রতীকী রূপে হ্যান্ডলুম শাড়িতে নারী। গহনায় মোড়া নারীরা ঝলমল করছে পাতাময় .. মুগ্ধ, মোহিত, চটকাদৃত। কিন্তু আজ দৈনিক জাগরণের তিন নম্বর পাতায় খবরটা দেখে প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না সে। 'হাইওয়ের ধারে পেট্রোল পাম্পের পিছন দিকে যে বাঁশ বাগানটা আছে, সেখানে এক আঠাশ বর্ষীয় যুবতীর সম্পূর্ণ নগ্ন, ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেহটি দেখে স্থানীয় ব্যক্তিরা সনাক্ত করতে না পারলেও, পুলিশ তাদের পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে ডেড বডিটাকে আইডেন্টিফাই করেছে। মৃতদেহটি বছর আটেক আগে মিউনিসিপাল হাসপাতালের নার্স স্বপ্না দাস মার্ডার কেসের প্রাইম সাসপেক্ট তার মেয়ে মৌমিতা দাসের .. যে তার মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই নিখোঁজ ছিলো। বিশেষ উল্লেখযোগ্য .. যুবতীটি গর্ভবতী ছিল এবং দেহের অন্যান্য ক্ষত চিহ্নের মধ্যে যেটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল সেটা হলো, মহিলাটির স্তনবৃন্ত দুটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছিল।' খবরটা পড়েই কিরকম যেন একটা অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল গোগোল। সেই এক স্থান, সেই এক রকমের নৃশংস হত্যালীলা .. পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল তার। চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল , শক্ত হয়ে গিয়েছিল চোয়াল দুটো, অসহ্য যন্ত্রণায় কপালের রগ দুটো ফেটে যাচ্ছিল। হে ঈশ্বর, আর কতো .. আর কতো অন্যায় অবিচার হবে এই ধরিত্রীর বুকে? আর কতো নিরপরাধ, অসহায়, পরিস্থিতির শিকার হওয়া নারীর বিসর্জন হয়ে যাবে দশমীর আগেই! গোগোলের হঠাৎ মনে পড়লো‌ সেবারে দার্জিলিং ভ্রমণের কথা। দার্জিলিঙের রাস্তায় সোনাদা থেকে উঠে গিয়ে একটা ছোট্ট গ্রাম আছে .. চটকপুর। প্রথম যখন সেখানে সে গিয়েছিলো .. দুটো ছোট্ট কটেজ। পাহাড়ের ওপরে সতেরোটা পরিবারের বাস। নিচে পাইনবন .. জঙ্গল। পোখরি .. স্যালাম্যান্ডার। বিনোদ ভাই বলে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি বলতেন .. ভার্জিন ল্যান্ড। পরেরবার গিয়ে আর ভার্জিনল্যান্ড দেখতে পাওয়া যায়নি (শব্দটা যদিও গোগোলের এখন আঁশটে লাগে)। বহুকামনায়, বহুব্যবহারে, বহু উপদ্রবে চটকপুর ঘ্যাঁট হয়ে গিয়েছে। তবে এখন গোটা দুনিয়াটাই একটা  উপদ্রুত চটকপুর। যতদিন চটক আছে , চলছে .. চটকময় জীবন। .. ভেতরে ফোঁপরা। এই খুনি ধর্ষকগুলোও নিশ্চয়ই পুজোতে অঞ্জলি দিয়েছিল! কথাটা ভেবেই গা গুলিয়ে উঠলো গোগলের। খবরের কাগজের ওপরের পাতাতে লাস্যময়ী নারীর বেনারসী পরিহিত ছবি। ঠিক তার নিচেই একের পর এক ;.,ের খবর। অথচ অবাক কান্ড .. কোনো ফলো আপ নেই। সেই মুম্বাইয়ের ঘটনার কী হল? নির্ভয়ার পুনরাবৃত্তি? আনি মানি জানি না! স্ক্রিনে বা মঞ্চে বা বইয়ের পাতায় রসালো ব্যাপার থাকলেই হলো। আমাদের জানার দরকার নেই। আমরা মঞ্চে নারীকে দেবী বানাবো, বক্তিমে দেবো। রাত দশটা বাজলেই মেয়েটা ভাববে, বাড়ি ফিরবো কোন রাস্তা দিয়ে? গলিটা বড় ফাঁকা হয়ে যায় যে! এই তো স্বাভাবিক। আমাদের দুনিয়া চটকবাজির দুনিয়া। কে কতবড় তালেবর। কে কত বেশি প্রভাবশালী। মুখে মধুর হাসির পিছনে ছুরির ধার .. তিক্ত, কষায়। আমরা বরং করওয়া চৌথ দেখি, চাঁদ দেখি, সবুজ চুড়ি ও চুরির শব্দতে বুঁদ হয়ে থাকি। স্ক্রিনে যত পারা যায় বোল্ড বা মঞ্চে বা পৃষ্ঠায় বা মাইকে ..তারপর অশ্বডিম্ব। পুনরাগমনায় চ দেবী.. বলতে বড় ভয় হয়। এ কোন পৃথিবীতে কাকে ডাকবো আমরা? এখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ কাউকে ডাকে? আসবেন কেন তিনি? হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে আটটা বাজতে চললো। একজন কাউকে কথা দেওয়া আছে যে .. তার জীবনীশক্তি। উঠে পড়লো গোগোল। ★★★★ অষ্টমীর সকালে একসঙ্গে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছিল তারা। তারপর থেকে একবারটির জন্যও তার গোগোল দাদার টিকি'টি দেখেনি হিয়া। এবার পুজোয় কত প্ল্যান করেছিল তারা .. এবারের পূজোর মুহূর্তগুলো হবে তাদের দু'জনের .. একান্তে, নিভৃতে। সপ্তমী থেকে অকাল বর্ষনে সেই প্ল্যান ভেজতে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো .. তার উপর ক্লাব নিয়ে মাতামাতি তো আছেই। ফোনে আজ আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে দিয়েছে সে তার গোগোল দাদাকে - "থাকো তুমি তোমার ক্লাব আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে, আজকের সন্ধ্যেটা যদি আমাকে না দাও, তাহলে কোনোদিন আসবে না আমাদের বাড়িতে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না আমার সঙ্গে।'' কথাগুলো বোধহয় একটু কড়া ভাবেই বলে ফেলেছিল হিয়া। রেলপাড়ের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা .. সকলেই যাকে সমীহ করে চলে আজকাল, সে কিনা তার বকুনি শুনে আর কোনো দ্বিরুক্তি না করে এক বাক্যে আজ সন্ধ্যেবেলায় তাদের বাড়িতে এসে নবমীর পুরো সন্ধ্যাটা তার সঙ্গে কাটাবে বলে প্রমিস করেছিল। কথাগুলো মনে পড়তেই মনে মনেই খিলগিলিয়ে হেসে উঠলো হিয়া। কিন্তু কোথায়! সন্ধ্যে গড়িয়ে ঘড়িতে এখন রাত আটটা বাজতে চললো। এখনো যে ওর দেখা নেই। মনটা ভারাক্রান্ত হিয়ার। বৃষ্টি অনেকটা কমে গেলেও এখনো ঝিরিঝিরি করে পড়ছে। তবে এই বৃষ্টিতে বাঁধ মানবে না পুজোয় ঘোরাঘুরি আর প্যান্ডেল হপিং। লাল শাড়ি আর লাল ব্লাউজে অপরূপা লাগছে হিয়াকে। জানলা থেকে আগত ফুরফুরে বাতাসে তার লাল রঙের শাড়ির আঁচলটা কাঁধের কাছে মাঝে মাঝে উড়ছে .. যেন সেটা জীবন্ত। হিয়া অধীর নেত্রে চেয়ে থাকে পথের পানে সে আসবে বলে। সহস্র লাল গোলাপের সম্বর্ধনা দিয়ে তার যে আজ বরণ করার কথা ছিলো গোগোল দাদাকে .. হয়তো অলীক কল্পনায়, তবে ভাবনাটা তো খাঁটি। যে মনের মানুষের প্রতীক্ষায় কাটিয়েছে ঘুমহীন কত রজনী, আকাশ-কুসুম রঙিন স্বপ্ন দেখার নেশায় ছিলো বিভোর। বৈশাখীর কালো অম্বুদে এঁদোমগ্ন হলো দশ দিগন্ত, হৃদয়ের মাঝে ফুটলো নিঃসঙ্গ অসু'র বিকট চিত্র। তার ভাগ্যরেখায় ফুটেছে নিত্য বসন্তের কৃষ্ণচূড়া, আর দ্যুলোকে জমেছে বিষাক্ত জলদের ঘনঘটা। তবুও হিয়ার বিশ্বাস তার মনের মানুষ ফিরবে বৃষ্টিসিক্ত হয়ে শূন্য অঙ্গনে। সুখের বর্ষণে প্লাবিত হবে চিত্তের শুষ্ক জমি, অকাল বৃষ্টির প্রত্যাশায় বিবর্ণ হলুদ ফুলের পাঁপড়ি, কারণ সে যে বিষন্ন মনে তার মনের মানুষের নিষ্ঠুর প্রেমের প্রতীক্ষা করে চলেছে। কলিংবেলের আওয়াজে ঘোর কাটে হিয়ার। 'এই বুঝি উনি এলেন .. আজ এমন বকবো না ..' এই ভেবে তাড়াতাড়ি করে নিচে নামতে গিয়ে তার মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে সিঁড়ির মুখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে সে লক্ষ্য করলো কাবেরী দেবী দরজা খুলে দেওয়ার পর তার পিছন পিছন দু'জন অপরিচিত আগন্তুক প্রবেশ করলো তাদের বৈঠকখানা ঘরে। একজন বছর পঞ্চাশের সুটেড-বুটেড গৌরবর্ণ রাশভারী চেহারার পৌঢ় ভদ্রলোক আর একজন বছর বাইশ তেইশের সৌম্যকান্তি দির্ঘাঙ্গী যুবক। "কিরে চিনতে পারছিস? তোর অবশ্য না পারারই কথা, শেষ যখন দেখা হয়েছিলো, মানে তোর দাদুর মৃত্যুতে যখন উনি এসেছিলেন, তুই তখন অনেকটাই ছোটো। ইনি তোর বড়মামার বন্ধু শশাঙ্ক বাবু। সেই সময় হায়ার সেকেন্ডারিতে দুর্দান্ত রেজাল্ট করেছিলেন .. যাক সে কথা। এনারা আমাদের শিমুলপুরের বাড়ির তিনটে বাড়ি পরেই থাকতেন। এখন অবশ্য কলকাতায় নতুন ফ্ল্যাট কিনেছেন। উনি মানে শশাঙ্কবাবু একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এখানে, মানে গঙ্গানগরের ব্রাঞ্চে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। বর্তমানে উনি ওই ব্যাঙ্কের কলকাতার একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার। এবার মজার কথা কি জানিস .. উনার ছেলে, যে কিনা ছোটবেলায় গঙ্গানগরের সেরা স্কুল গুরুকুল বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনা করেছে .. মাঝখানে কয়েকদিন বাইরে চলে গেলেও সে এখন আবার এখানে ফিরে এসেছে। পরিচয় করিয়ে দিই .. এ হলো সন্দীপ .. শশাঙ্কবাবুর ছেলে। গঙ্গানগর পুলিশ স্টেশনে  সাব ইন্সপেক্টর পোস্টে কয়েকদিনের মধ্যেই জয়েন করছে .. খুব ব্রাইট ছেলে।" কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গিয়ে হিয়াকে ইশারা করে শশাঙ্কবাবুকে প্রণাম করতে ইঙ্গিত করলেন কাবেরী দেবী। হিয়া তৎক্ষণাৎ তার মায়ের আদেশ পালন করে শশাঙ্কবাবুকে প্রণাম করলো, তারপর হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকলো সোফার এক কোণে। "বাবা, তুমি তো একদম লেডি হয়ে গেছো! সেই এইটুকু দেখেছিলাম তোমাকে। আসলে আজ সকালের দিকে বুবুন মানে আমার ছেলে সন্দীপের জিনিসপত্র গুলো রাখতে এসেছিলাম ওর কোয়ার্টারে .. দিন দুয়েক পরেই তো জয়েনিং। থানার একদম পাশেই তো মিউনিসিপ্যালিটির হসপিটাল। সেখানে হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল তোমার মায়ের সঙ্গে। কত পুরনো দিনের পরিচয়, অথচ মাঝখানে এতদিন কোনো যোগাযোগ ছিলো না। তোমার মা খুব করে বললেন আসতে। আমার কয়েকটা কাজ ছিলো তাই বলেছিলাম - সেগুলো মিটিয়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সাথে গাড়ি আছে, আজ রাতেই কলকাতা ফিরে যাবো। হিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছুটা কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন শশাঙ্কবাবু। সেটা বুঝতে পেরে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে হিয়া বললো "হ্যাঁ আমার হয়তো সেই শিশুকালের কথা কিছু মনে নেই। তবে মা আপনাদের আসতে বলে একদম ঠিক করেছে। তবে আমাকে তো এখন একটু বেরোতে হবে, আজ তো দুর্গাপুজোর নবমী। আপনাদের ওখানে মানে কলকাতায় তো বিশাল বড় বড় সব পূজো হয়। আজ হঠাৎ তাহলে গঙ্গানগরে এলেন .. আবার আজকেই ফিরে যাবেন বলছেন। না মানে আমি বলতে চাইছিলাম পুজোটা মিটে গেলেও আসতে পারতেন।" হিয়ার কথার উত্তরে শশাঙ্কবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। উনাকে থামিয়ে দিয়ে তার মেয়ের উদ্দেশ্যে কাবেরি দেবী বলে উঠলেন "এ আবার কেমন কথা? বাড়িতে অতিথি এলে কি কেউ হুট করে তাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়? তাছাড়া তুই একা একা কোথায় যাবি? আর উনি বললেন না উনার ছেলে, মানে সন্দীপের দু'দিন পরেই জয়নিং, তাই আজকেই আসতে হয়েছে। আপনারা একটু বসুন আমি চা মিষ্টির ব্যবস্থা করছি।" তারপর হিয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন। অপরূপা হিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত মুখমণ্ডলের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো বছর তেইশের যুবকটি। তারপর হঠাৎ করেই পরিস্থিতি কিছুটা গুরুগম্ভীর হয়ে উঠেছে এটা বুঝতে পেরে বিষয়টাকে হাল্কা করে দেওয়ার জন্য এতক্ষণ চুপ করে বাবার পাশে বসে থাকা সন্দীপ বললো "হাই .. আমি সন্দীপ .. সন্দীপ সেনগুপ্ত .. মুঝসে দোস্তি কারোগি? হেহেহেহে , বন্ধু হবে আমার? দেখো আজ দুর্গাপুজোর নবমী .. তাই ঠাকুর দেখতে বেরোনোর জন্য তোমার মনটা আনচান করছে। অথচ আমরা এসেছি বলে তুমি আটকা পড়ে গেছো। তাই সামনে কিছু বলতে না পারলেও, ভেতর ভেতর ভীষণ রেগে গেছো আমাদের উপর। কি তাইতো? হাহাহাহা। আমি মাঝের বেশ কয়েকটা বছর এখানে না থাকলেও ছোটবেলা থেকে এখানে পড়াশোনা করেছি, বড় হয়ে উঠেছি। তাই রাস্তাঘাট মোটামুটি চেনা .. তাছাড়া আমার ব্রেনটাও ভীষণ শার্প .. একবার কিছু দেখলে সহজে ভুলি না। আমার কাছে কিন্তু একটা ভালো প্রপোজাল আছে। সেটা হলো .. তুমি চাইলে আমার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোতেই পারো। এই ধরো আধ ঘন্টার জন্য .. তারপর ফিরে এসে আমাদেরও তো কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। এতে তোমারও ঠাকুর দেখা হবে আর আন্টিও দুশ্চিন্তা করবেন না তো তোমাকে একা একা বেরোতে দিতে।" "খুব ভালো হবে বাবা .. আমার মেয়েটা সেজেগুজে এতক্ষণ ধরে বসে বসে বোর হচ্ছিলো, তুমি ওর সঙ্গে গেলে আমার কোনো আপত্তি নেই। বছরকার দিন .. ঘরে বসে থাকতে কারই বা ভালো লাগে বলো! আমাদের এই চত্বরে ঠাকুর বলতে তো ওই রেলপাড়ের বারোয়ারি পুজোটা। যা হিয়া মা .. তুই সন্দীপের সঙ্গে ঘুরে আয়।" তার মেয়েকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রান্নাঘর থেকে মিষ্টি আর চায়ের প্লেট আনতে আনতে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী। বোকা চাঁদটাও আজ অভিমান করে মেঘের আড়ালে অস্ফুট হাসে। সন্ধ্যা রাতের তারারা আকাশের উপর অভিমান করে মুখ করে রাখে গম্ভীর। মোমের আলো যেনো বাতাসের উপর অভিমানর করে 'এই নিভলাম' ভঙ্গিতে নিভু নিভু করে। কান্নাও আজ অভিমান করে চোখ দিয়ে পরে না ঝরে। তাহলে ওই একরত্তি মেয়ে হিয়ার কি দোষ? সে যে বড় অভিমানী। দুইদিন ধরে একনাগারে অপেক্ষা করেছে সে তার মনের মানুষের জন্য। আজ সন্ধ্যেবেলা আসার কথা ছিলো .. কিন্তু কথা দিয়েও কথা রাখলো না সে। এতটা মিথ্যেচার? এত উপেক্ষা সহ্য হয় না হিয়ার। "হ্যাঁ আমি তো রেডি হয়েই আছি .. মা'র যখন কোনো আপত্তি নেই তাহলে চলুন, যাবো আপনার সঙ্গে।" এইটুকু বলে নিজের করুণ মুখটাকে আড়াল করে জোর করে হাসার চেষ্টা করে সন্দীপের সঙ্গে বেরিয়ে গেলো হিয়া। মিনিট দশের পর হিয়াদের বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠলো। ঘড়িতে তখন ন'টা বাজতে দশ। দরজা খুলে ঘাম এবং এখন বন্ধ হয়ে গেলেও একটু আগে পর্যন্ত খুব ঝিরিঝিরি করে পড়তে থাকা বৃষ্টিতে সিক্ত গোগোলকে দেখে কাবেরী দেবী বলে উঠলেন "আয় ভেতরে আয় .. অবশ্য তুই এখন তোদের পাড়ার পুজো নিয়ে যা ব্যস্ত, তোকে বসতে বলিই বা কি করে! হ্যাঁ বল কিছু দরকার ছিলো?" সে যে কোনো দরকার থাকলে হিয়াদের বাড়ি আসতে পারে, না থাকলে পারেনা এই ধরনের প্রশ্ন বা ইঙ্গিত কোনোদিন তাকে আগে কেউ, বিশেষ করে কাবেরী দেবী করেননি। তাই প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে গেলেও তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে গোগোল বললো "না মানে, আসলে হিয়া আসতে বলেছিলো .. তাই .." "ও হো .. হিয়া তো এই কিছুক্ষণ আগে বেরোলো ঠাকুর দেখতে। তোদের ক্লাবের পুজোর ওই দিকটাই গেছে সম্ভবত। অবশ্য ও একা নেই, একজন আছে ওর সঙ্গে। আসলে আমার পূর্ব পরিচিত এক দাদার ছেলে .. খুবই ব্রাইট .. খুব ভালো ছেলে .. এইতো কিছুক্ষণ আগে ওরা বেড়াতে এলো আমাদের বাড়ি। হিয়াটাও বসে বসে বোর হচ্ছিলো। এইটুকু সময়ের মধ্যেই দু'জনের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে দেখলাম। তাই দু'জনে মিলে ঠাকুর দেখতে গেলো .. এই শোন তুই চলে যাচ্ছিস .. একটু বসবি না?" কাবেরী দেবীর  কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই এই পুজো উপলক্ষে, বলা ভালো বিশেষ একজন কাউকে পিছনে বসিয়ে ঘোরানোর উপলক্ষে  কিছুদিন আগে কেনা নিজের সেকেন্ড হ্যান্ড রয়্যাল এনফিল্ড বাইকটাতে স্টার্ট দিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো গোগোল। মেঘের পরে রোদ ওঠার সম্ভাবনা ছিল আজ .. কিন্তু তারপর! (ক্রমশ) ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন
Parent