- জবানবন্দি - অধ্যায় ১১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-50216-post-5114358.html#pid5114358

🕰️ Posted on January 27, 2023 by ✍️ nextpage (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2950 words / 13 min read

Parent
পর্ব- এগারো সে আমি বড্ড অসহায় সব থেকেও আজ আমার কিছুই নাই যখন আমার সব ছিল পূর্ণ দিতে পারেনি তার দাম সম্পূর্ণ করেছি অনেক বেশী অবহেলা তাই তো কাটে আমার সময় করে স্মৃতি নিয়ে খেলা। আজ আমি নিঃস্ব , রিক্ত ! অভিজ্ঞতা সে তো বড়ই তিক্ত তাই আজকাল আমি নিজের প্রতিই অনেক বেশী বিরক্ত জানি না দূর হবে কি না এই বেলা আশা নিরাশার দুলাচলে সারা হয় সব খেলা কারো কাছে কোন চাওয়া-পাওয়া নাই একা চলতে স্বস্তি বোধ করছি তাই কেননা সময়ের দোলাচলে আজ আমি বড্ড অসহায়। কথার সেদিন কি হয়েছিল সেটা জানতে পেরেছিলাম অনেক দিন পরে। তবে সেটা নিয়ে তখন কিছুই বলতে পারি নি হয়তো ওমন করে আমরা গড়েই উঠেনি। আমাদের চারপাশের সবকিছু তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল ভাবেই আবৃত হয়ে আছে এখানে অনেক বাঁধা ধরা অনেক লুকোচুরি জীবনটা একটা গন্ডির মধ্যে বাঁধা। আর মেয়েদের বেলায় সেই দেয়ালের উচ্চতা আরও অনেক উঁচু। ছোটবেলা থেকে ওমন করেই আমরা বড় হয়েছি যেখানে অনেক কিছু জানতে মানা অনেক কিছু বলতে মানা আর বেশি প্রশ্ন করা সেটা তো গুরুতর অন্যায়। আর সেটাও হয়তো আরও পরে জানতাম যদি না স্কুলের স্টোর রুম থেকে মেয়েদের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বইটা না পেতাম। সেখানেই সেই তথাকথিত চরম গুরুতর নিষিদ্ধ বিষয় টা সম্পর্কে জানতে পারলাম। যেটা নিয়ে এতো রাখঢাক এতো লুকোচুরি। এমন একটা পরিবেশে বড় হয়েছি যেখানে এটা নিয়ে যে কাউকে প্রশ্ন করতে পারি সেটা মনে মনে ভাবাও অপরাধ। আর সেটা নিয়ে কথার সাথে কথা বলবো তা কল্পনাতেও আনতে পারি না। তবে হ্যাঁ এই বিষয়ে পরবর্তীকালে অনেক কিছু জেনেছি আর তাতে কথার আর আমারে মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। একান্নবর্তী পরিবারে জন্ম বেড়ে উঠা  তাই ভাইবোনের সংখ্যাও অনেক আর আমার নিজেরই একটা ছোট বোন আছে৷ তাই মা হয়তো চাইতো আমি বিষয় গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকি, মনে কোন ভুল ধ্যান ধারণা পোষে না রাখি কিংবা কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে ভুল কিছু করে না ফেলি। তখন বুঝতাম না তবে এখন বুঝি সেই সময়ের শিক্ষা টা পরবর্তীতে আমার জীবনে কতটা মূল্যবান হয়ে ফিরে এসেছিল। বাসায় ফিরে এসে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল, বাসা বলতে গেলে একপ্রকারে ফাঁকাই। সবাই কাকার জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছে, মানুষ বিহীন ফাঁকা বাসাতেও যেন আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। কথাদের বাসা থেকে খেয়ে বিকেলের টিউশনি টা শেষ করে চলে এসেছি। ঘরে গিয়ে জামাকাপড় বদলে নিয়ে মোবাইলটা নিয়ে বসে পড়লাম। একা একা সময় কাটছিলো না তাই নোকিয়া মোবাইলের বিখ্যাত স্নেক গেইম টাই আমার একমাত্র ভরসা। কাকার নাম্বার থেকে দেখলাম কল এসেছিল হয়তো মা কল করেছিল আমার খবর নিতে কিন্তু তখন তো আমি কথা দের বাসায় ছিলাম। কাকা নতুন মোবাইল কিনেছে তাই এখনো নাম্বার টা এফএনএফ করা হয় নি। নিয়মিক কল এ প্রচুর টাকা কাটে তাই নাম্বার গুলো এফএনএফ করাটাই শেষ ভরসা। কাকার নাম্বারে ফোন করলাম প্রথমে কাকা ধরলেও সাথে সাথেই মায়ের কাছে দিয়ে দিলো। মা আমার খোঁজ নিলো কি করছি খেয়েছি কিনা, টিউশনি কে গিয়েছি কি না এসব আর কি। মায়ের সাথে কথা শেষ করে মোবাইলে মাত্র স্নেক গেমটা খেলা শুরু করবো তখনি আবার কল আসলো। দোলন কল করেছে ওর মায়ের ফোন থেকে, গেম খেলার মাঝে বিঘাত ঘটায় আমি একটু বিরক্তি বোধ করছিলাম। তবুও কি দরকারে ফোন করলো সেটা জানার জন্য রিসিভ তো করতেই হতো, হ্যালো... হুম বল, আমিই আছি। ওহহ, আন্টি কেমন আছে? হুম ভালই, তোর মা? এইতো ভালই। কি করছিস? এটা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন করে বিল তুলছিস? না না মানে একটা খবর নেবার ছিল তাই আর কি! হেহেহেহে এইতো বাছাধন এবার লাইনে এসো, একবার ঝেড়ে কাশি দাও... তুই এমন করে বলছিস কেন? আমি তো শুধু কথার খবর নেবার... বাকিটা আর ওকে বলতে দিলাম না, কারণ এমনিতেই চটে ছিলাম আর ওর মুখে কথার নামটা শুনতেই যেন পুরো শরীর জ্বালা করে উঠলো। ওর মুখে কেন জানি কথার নামটা আমার একেবারেই সহ্য হয় না, ওর খবর নেবার জন্য আমাকে ফোন করেছিস কেন? আমি কি সাংবাদিক নাকি যে ঘুরে ঘুরে মানুষের খবর নেব। না মানে, তুই তো ওদের বাসায় গিয়েছিলি.... আমি যে কথাদের বাসায় গিয়েছি ওটা ও জানলো কেমন করে, তোকে কে বলেছে আমি ওদের বাসায় গিয়েছি? আমার কি আর কোন কাজ নেই। তুই এমন করছিস কেন? বল না ও কেন আজ স্কুলে আসলো না? কিছু হয়েছে কি? শরীর ভালো তো! আমি জানি না, জানতে হলে তুই ওকেই ফোন করে নে.... কথাটা বলেই আমি কলটা কেটে দিলাম। কিন্তু মনে শান্তি পাচ্ছি না কেন জানি৷ আচ্ছা দোলন যদি সত্যি সত্যি কল করে তবে কি হবে। বন্ধু হিসেবে কল করে খবর নিতেই পারে তাতে আমার কি? সত্যিই কি আমার কিছুই আসে যায় না! তবে কেন আমি মেনে নিতে পারছি না যে কথা দোলনের সাথে ফোনে কথা বলবে। ধ্যাত এতো কিছু ভাবতেই মন চাইছে না, কোনটা হবে আর কোনটা হবে না৷ কি উচিত আর কোনটা অনুচিত সেটা ভাবার মত মানসিক অবস্থাই যেন আমার নেই কিসের গেম খেলা আর কিসের কি আগে আমাকে কথা কে বারণ করতে হবে ও যেন দোলনের সাথে ফোনে কথা না বলে। হতে পারে এটা ওর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ তবুও সেটা আমাকে করতেই হবে। নইলে যে মনে শান্তি পাচ্ছি না আর, আন্টির নাম্বারে কল করলাম। রিসিভ করার সাথে সাথেই বলে উঠলাম, আন্টি কথা কে একটু ফোন টা দাও তো, জরুরি দরকার আছে। আমি তোর আন্টিই বলছি ( খিল খিল করে হাসির শব্দ) গলার স্বরে বুঝতে পারলাম কথা কল রিসিভ করেছে। ওর হাসির শব্দটা আমার মন জুড়িয়ে দিয়েছে। তখন ওর বিমর্ষ যন্ত্রণা কাতর মুখটা দেখে খুব খারাপ লাগছিলো, কিন্তু ওর ভুবন ভুলানো হাসির শব্দে মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। তখনি আবার হঠাৎ মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, আচ্ছা ওর হাতেই মোবাইলটা কেন ছিল? তাহলে কি দোলন ফোন করে নিয়েছে আগেই? দেরি করে ফেললাম কি? কিরে দোলন ফোন করেছিল? কেন? ও ফোন করতে যাবে কেন? যাক দোলন তাহলে ফোন করেনি এখনো, তবে ও যে করবে সেটা আমি সিউর, না এমনি, করলেও ফোন ধরবি না। ওর সাথে কথা বলার দরকার নেই। মানে? দরকার নেই? হয়েছে টা কি? কিছুই না, আমি বলেছি তাই ধরবি না।( কিছুটা রাগী স্বরে ঝাঁঝালো কন্ঠে) আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, ধরবো না। ঠিক আছে! হুম ঠিক আছে। (কিছুটা শান্ত স্বরে) এখন শরীর কেমন? জ্বর কমেছে? জ্বর উঠলে তো কমবে, এতো চিন্তা করার কিছুই নেই। এটা এমন একটু আধটু হয় স্বাভাবিক ব্যাপার... খানিক বিস্মিত হয়ে, মানে কি? এটা আবার স্বাভাবিক হয় কি করে? কথার গলায় কিঞ্চিৎ লাজের আভাস, তুই এসব বুঝবি না... আচ্ছা এখন রাখি রে মা ডাকছে। ঠিক আছে। ফোনটা রেখে দিলাম, কিন্তু মনটা পড়ে আছে কথার বলা শেষ বাক্যে। এমন কি জিনিস যেটা আমি বুঝবো না। তখন দেখে এলাম শরীরটা এতো খারাপ, এখন আবার ও বলছে এটা নাকি স্বাভাবিক ব্যাপার। কি জানি হবে হয়তো, যাক গে আর মাথা ঘামিয়ে কাজ নেই। আমার যে দরকার ছিল সেটা হয়ে গেছে সেটাই শান্তি। স্কুল কোচিং এর পড়া গুলো কমপ্লিট করতে করতে রাত দশটা বেজে গিয়েছে। খিদেও লাগছে এখন বেশ সেই কখন খেয়ে এসেছি কথা দের বাসা থেকে। এদিকে মা দের এখনো আসার নাম নেই, বলেছিল সন্ধ্যার দিকেই চলে আসবে আর এখন সেটা পেড়িয়ে দশটা বাজতে চললো। ঘরে রান্না করা আছে তবে সেগুলো তো সব ঠান্ডা বিষ হয়ে আছে। আমি আবার ঠান্ডা খাবার একদম খেতে পারি না। বইপত্র গুছিয়ে বিস্কুটের কৌটা হাতে নিয়ে টিভির সামনে বসে পড়লাম। টিভিতে দেখার মত তেমন কিছুই নেই, একটাই মাত্র চ্যানেল সেটাও আবার সরকারী ঐ টুকটাক যা দেখায় সেটাই দেখি। অনুষ্ঠানের চেয়ে এড থাকে বেশি, এতো এড যে দেখতে দেখতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। আমাদের এলাকায় এখনো স্যাটেলাইট চ্যানেল এসে পৌঁছায় নি, তবে শুনছি খুব তাড়াতাড়ি ডিস লাইন চলে আসবে। তখন বাবাকে বলবো নতুন বড় দেখে একটা টিভি কিনতে। আপন মনে বিস্কুট খেতে খেতে রাতের সংবাদ দেখছি। হঠাৎ একটা গাড়ির আওয়াজ কানে লাগলো, মনে হলো সবাই চলে এসেছে। আমি দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলাম মায়ের কাছে। সেই কখন থেকে মা ডাকছে খেয়ে নেবার জন্য কিন্তু আমি চুপটি করে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। আমি আগেই মাকে না করে দিয়েছি যে রাতে ভাত খাবো না৷ কিন্তু মা তো নাছোড়বান্দা আমাকে না খেয়ে ঘুমোতে দিবে না। উঠ বাবা, এতো রাগ করতে নেই। রাতে না খেয়ে ঘুমালে শরীরের রক্ত কমে যায় জানিস। খানিকটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কমলে কমে যাক তাতে তোমার কি? আমার পাশে শুয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, এই দেখো পাগল ছেলে কি বলে দেখো, তোর রক্ত কমে গেলে তো আমারও কমে যাবে। সেটা কি তোর ভালো লাগবে? মা কে কিন্তু তখন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। রাগের সাথে কিঞ্চিৎ শঙ্কা উঁকি দিলো মনে, উহহ, আমার কমলে তোমার কমবে কেন? আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে, কেন আবার তুই আমার পেটে হয়েছিস তাই না! আমার আর তোর সব কিছু এক দেখিস না তোর খিদে পেলে আমারও খিদে পায়, তুই ব্যাথা পেলে আমারও কষ্ট হয়৷ মায়ের কথা গুলো আমার ছোট্ট মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সত্যিই তো আমি দেখেছি আমার কিছু হলে মা কষ্ট পায়। সেবার খুব জ্বর হয়েছিল কিছুতেই কমছে না, তখন দেখেছি মাকে কান্না করতে৷ আমি যখন খাই তখন মা খায় আমার আগে কোনদিন খেতে দেখি নি। তাহলে তো এখন আমার মতো মায়েরও খুব খিদে পেয়েছে। আমি মায়ের দিকে ঘুরে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝে মুখ লুকালাম, তাহলে আমাকে সাথে নিয়ে গেলে না কেন? বলেছিলে এখনি বিয়ে ঠিক হবে না সামনে বার আমাকে নিয়ে যাবে তবে আজই বিয়ে ঠিক করে কেন ফেললে। (গলায় অভিমানের পারদ চড়ে আছে) আরে বাবা বিয়েতে তো ঠিক যেতে পারবি, তোকে না নিয়ে তো আমি কোনভাবেই বিয়েতে যাবো না। আমার সোনা কে ছাড়া যাবো নাকি আর কখনো।(আমার কপাল ছোট্ট ছোট্ট চুমোতে ভরিয়ে দিলো) সত্যি তো? তিন সত্যি, এখন চল বাবা এখন খেয়ে নেই। আরও কিছুক্ষণ মায়ের বুকে মুখ গুজে শুয়ে থেকে খাবার খেতে চলে গিয়েছিলাম বাধ্য ছেলের মত, উপরি পাওনা হিসেবে মা নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছিল। ★★★★★ বেহায়া বাতাসকে উপেক্ষা করে কনকনে শীতের রাতে উচ্ছল বাইকটা যেন জ্ঞানহারা দিগ্বিদিক- ভাবালুতায় তেমনি আমিও ভাসমান। বুকে পিঠে শুদ্ধতার স্লোগান চেপে কথা ছিল সুসময়ের বাতাস টেনে ঝড় তুলবে ঠোঁটে ফিরে আসবার সিম্ফনি আমি সাত সমুদ্র পার হয়ে কলেজ রোডের দোরগোড়ায় গিয়ে তোমার নাম ধরে ভীষণ উত্তাল এক বোবা চিৎকারে কয়েক মুহূর্ত রাঙিয়ে ঝুলতে থাকলো মূর্তিমান পেন্ডুলাম হয়ে। রাস্তার শেষ মাথায় গাড়ী না যাবার ব্যারিকেড স্পষ্ট জানান দেয় এবার ও হবে না - মৈত্রেয়ী হঠাৎ ছটফটিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলাম, এসি ঘরেও দরদরিয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে সারা শরীর জুড়ে। অজানা আতঙ্ক আর হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা চেপে বসেছে আমার বুকের উপর৷ খুব কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে, কিছু একটা যেন টিপে ধরে আছে আমার শ্বাসনালী। না পারছি শ্বাস ছাড়তে না পারছি নিতে। কিছু একটা দলা পাকিয়ে আছে আমার গলার কাছে৷ হাত পা থরথর করে কাপছে কোনমতেই শান্ত করতে পারছি না নিজেকে। আর এতো সহজে কি সব কিছু শান্ত করা যায়! মনে যে অশান্তির ঝড় উঠেছে। এই বুঝি আবার সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যাবে আমার, এমনিকেই তো সবকিছু অগোছালো হয়ে আছে যেটুকু সাজিয়ে নেবার চেষ্টা করছিলাম সেটাও বুঝি এবার হারানো সময় হয়ে এসেছে। ভীষন খারাপ স্বপ্ন দেখলাম, এমনটা যে আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবতে পারবো না। মূহুর্তের মাঝে যেন আমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতে চাইছে এই নিষ্ঠুর পৃথিবী। যদি কেড়েই নেবার ছিল তবে কেন আবার দুজনকে দুজনার কাছে এনে দাঁড় করালে। যেই সত্যটা বহু বছর ধরে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি সেটাকে আবার আমার হৃদয়ের কাছে মেলে ধরলে। এবার আর নিজেকে ভেতর থেকে শক্ত করতে পারছি কই? ওর সামনে গেলেই আমি দুর্বল হয়ে পড়ি নিজেকে সামলাতে পারি না, আমার আমিটা যেন ভেতর থেকে ছিটকে বেড়িয়ে আসতে চায়। যেই আমিটাকে সবার কাছ থেকে আড়াল করে রাখি নিজেকে অন্য এক আমাতে পরিচয় করিয়ে দেই সবার সাথে। সেই আমিই যেন সত্যিকারে আমি হয়ে যাই ওর সামনে এসে, এখানে কোন লুকোচুরি নেই নেই কোন অজুহাত কিংবা ছলচাতুরী করার কূটকৌশল। ওর কাছে আমার আমি হয়ে ধরা দিতেই বুঝি বেশি সুখ খুঁজে পায় আমার এই হৃদয়। না নিজেকে আর পাল্টাতে চাই না, সত্যিকারের আমি কে নিয়েই বাকিটা সময় জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত উপভোগ করতে চাই। প্রতিটা সেকেন্ড কে স্মরনীয় করে রাখতে চাই ওর সাথে থেকে পাশে থেকে ওর ছায়া হয়ে। না না ছায়া তো অন্ধকারে সাথ ছেড়ে দেয় আমি ওকে আর ছাড়তে পারবো না, বরং আমি ওর নিঃশ্বাসে মিশে যাবো। ধীরে ধীরে আমার নিঃশ্বাসের গতি কমে আসছে, শরীর স্থির হতে শুরু করায় এসির ঠান্ডা বাতাস আসার দেহে হালকা কাঁপন ধরাচ্ছে। একবার ইচ্ছে করছিলো কথাকে ফোন করি তারপর ভাবলাম এতো রাতে ফোন করাটা ঠিক ভালো দেখাবে না। আর তার চেয়ে বেশি যেটা ভাবছি হঠাৎ রাতে ফোন করলে বেচারি টেনশনে বাকি রাত ঘুমাতে পারবে না। হোটেলের এই রুমটার সিঙ্গেল বেডে ও আমি একাই আছি, পাতলা কম্বল টা টেনে নিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছে না, তাই মোবাইল টা বের করে বাসে আর এখানে আসার পর কথা কাব্যের সাথে তুলা ছবি গুলো একএক করে দেখে যাচ্ছি। ওকে যখন আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম তখন টুক করে একটা ছবি তুলেছিলাম। সাথে সাথে কথা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাতেই আমি খানিক ভয়ও পেয়ে ছিলাম। তবে পরক্ষণেই ওর ঠোঁটের কোনায় মিষ্টির হাসির সৃষ্টি হতেই আমার মন আনন্দে নেচে উঠেছিল। ভেবেছিলাম ও হয়তো বকাবকি করবে এমন হঠাৎ করে ছবি তুলেছি বলে, কিন্তু না ওর ঐ হাসিটাতে খুশির উচ্ছাস খুঁজে পেয়েছিলাম আমি। তখন তো আর দেখা হয় নি এখন সেই ছবিটাই খুঁটে খুঁটে দেখছি, একবার দুবার নয় বারবার। ওর হাসি মুখটা থেকে কিছুতেই চোখ সরাতে পারছি না। কথার পুরো মুখ জুড়ে একটা প্রশান্তির অাভা দেখতে পাচ্ছি আমি। আমার বুকে মাথা রেখে এতো কিসের সুখ পায় ও, ওখানেই যেন পরম শান্তির খুঁজ পেয়েছে। ইশশ! আগে যদি জানতাম মানে বুঝতে পারতাম তবে তো সারাজীবনের জন্য এই বুক ওর জন্য বরাদ্দ করে রাখতাম। উপরি পাওনা হিসেবে কথার কালো ঘন চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিতাম। সেই ঘ্রানেই নিজেকে সাজিয়ে নিতাম ওর মনের মতো করে। বরাবরই আমি দেরি করে ফেলি, কিছু করতে কিছু বলতে হয়তো সবটা বুঝতেও। এবার তো সব কিছু ছাড়িয়ে বড্ড দেরি করে ফেলেছি, কথা কে বুঝতে ওর মনকে বুঝতে আর নিজে কি চাই সেটাও। আমাদের গাড়ি হোটেল অব্দি পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত কথা আমার সাথেই লেপ্টে ছিল। এর মাঝে কাব্যের ঘুম ভেঙে যেতেই ও নিজেকে আমার কুলের মাঝে খুঁজে যথেষ্ট অবাক। ছোট্ট চোখ গুলো যতটা বড় করা যায় ততোটাই মেলে ধরে একবার আমাকে দেখছে তো আরেকবার নিজের মায়ের দিকে। শেষমেশ আমার মুখটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি মায়ের সাথে ভাব হয়ে গেছে? তখন তো তোমার সাথে আড়ি করেছিল.. কে বলেছে আড়ি করেছে? কেন তখন যে তোমার কাছে যেতে চাইলাম, মা আমাকে কত্ত বকা দিলো। মা বলেছে তোমার কাছে যেতে চাইলে পিট্টি দিবে। কাব্যের কথা শুনে কথার প্রতি কিছুটা রাগ উঁকি দিলো মনে, পরক্ষণেই ভাবলাম সেই রাগ টা আমার নিজের উপর হওয়া উচিত। আমি কথা কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে তুই নাকি কাব্য কে বকা দিয়েছিস বলেছিস পিট্টিও দিবি, তোর এতো বড় সাহাস হয় কি করে। আর কোনদিন শুনলে কিন্তু তোকে আমি পিট্টি দেব। (কাব্যের দিকে ফিরে বললাম) দেখলে তো মা কে বকে দিয়েছি, আর কখনো আমার কাব্য সোনাকে ও বকা দিবে না। এবার খুশিতো... কথা সোজা হয়ে বসে কাব্যকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে গালে চুমো খায়, সোনা আমার আর তোমাকে বকা দিবো না। এখনো কি আমার সাথে রাগ করে থাকবে?(কাব্য মাথা নাড়িয়ে মায়ের সাথে সায় দেয়) এদিকে হঠাৎ আমার পেটের কাছে যন্ত্রণা হতেই বুঝতে পারি পাশে বসা মহারানী চিমটি কেটেছে। ওর দিকে যন্ত্রণাকাতর মুখটা নিয়ে তাকাতেই মিষ্টি হাসি ছুড়ে দেয় আমার পানে। ঐ মিষ্টি হাসির তুড়ে দেহের যন্ত্রণা ভেসে যায় মূহুর্তেই আর শূন্য জায়গা দখলে নেয় মন জুড়ে খেলতে থাকা এক রাশ প্রশান্তি। বিকেলের দিকে আমদের গাড়িটা স্পটে পৌঁছে যায়, আজ আর ঘুরাঘুরি হবে না। সারাদিনের জার্নিতে এমনিতেই সবাই ক্লান্ত হয়ে আছে। হোটেল লবিতে এসে যে যার রুমের চাবি বুঝে নিয়ে রুমের দিকে চলে যাচ্ছে। আমি একটা সিঙ্গেল রুম পেয়েছি আর বিপরীত পাশের রুমটা কথাদের। বুকের কাছে কিঞ্চিৎ ব্যাথা অনুভব হলো তবুও সেটা আড়াল করে মিথ্যে হাসি দিয়ে রুমে ঢুকে যাই। দরজা বন্ধ করেও খানিকটা সময় সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেন কি চাইছিলাম আমি কি আশা করেছিলো মন? এর চাইতে আর বেশি কিছু কি সম্ভব? মস্তিষ্ক মেনে নিলেও মন তো মানতে চায় না.... না ফ্রেশ হতে হবে তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে ব্যাগটাকে বিছানায় ছুড়ে দিয়ে বাথরুমের দিকে চলে যেতে থাকি। মন চাইছিলো শরীর টাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে খানিক বিশ্রাম নিতে। মনের ইচ্ছেকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে গেলাম বাথরুমে। ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে ব্যাগটা হাতে নিলাম জামা কাপড় বের করার জন্য। তখনি মোবাইলের নোটিফিকেশনের শব্দ এলো কানে, হাতে মোবাইলটা নিয়ে দেখি কথা মেসেজ করেছে.. ব্যাগের বা পাশে টি-শার্ট আর ট্রাউজার আছে সেগুলো পড়ে নিস। মেসেজ টা পড়তে পড়তেই হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোনে আমি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে না পারলেও একজন তো আছে যে এখনো গুছিয়ে রেখেছে আমায়। ভাগ্যিস ও ছিলো নইলে ঠিকি পুরো ব্যাগটা ঘেঁটেও কি পড়বো সেটা সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে সেই সাথে পেটের ভেতর খিদের ছুঁচো টা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে৷ মিনিট দশেকের মাঝেই দরজার কড়া নড়ার শব্দেই বুঝতে পারি খাবারের জন্য ডাকছে। বেড়োতেই দেখি কথা দাড়িয়ে আছে আর কাব্য পাশেই মায়ের হাত ধরে এদিক ওদিক হাত পা ছুড়ছে। মেরুন কালারের চুমকির কাজ করা সালোয়ার কামিজে কথাকে অপূর্ব লাগছে, খোলা চুলে ওর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কতক্ষণ ওমন হা করে কথার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেটা বলতে পারতাম না যদি না কাব্যর আলতো হাতের ধাক্কায় আমার মস্তিষ্ক কল্পনার জগত ছেড়ে বাস্তবে চলে না আসতো। দিপুদার কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো সে নাকি আগেই নিচে ডাইনিং এরিয়াতে চলে গেছে। আমি চট করে কাব্য কে কোলে তুলে নিয়ে কথা কে সাথে করে নিচে চলে গেলাম। কাব্য জেদ ধরেছে সে আজ আমার হাতে খাবে। তাতে আমার কোন সমস্যা না থাকলেও কথা চোখ মুখ বলছে ও খুব একটা খুশি না। রাগে কিড়মিড় করে বলে উঠলো, খুব আঙ্কেল আঙ্কেল করছিস দেখি আজকাল, আমার হাতে খেতেও চাসা না! ভালো আমি দেখি কদিন এই ভালোবাসা থাকে। আমার হাতে যখন খাবি না তখন রাতে আঙ্কেলের কাছেই ঘুমাবি তখন মা মা করিস না, মনে থাকে যেন। আমি কাব্য কে নিজের কোলে বসিয়ে কাতুকুতু দিতে দিতে বলে উঠলাম, লাগবেও না তোকে, কাব্য আজ আমার সাথেই ঘুমাবে তাই তো কাব্য! (কাব্য তো মহা খুশি সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দেয়। আসলে আমার কাছে থাকলে তো আনলিমিটেড দুষ্টামি করতে পারবে মায়ের কাছে সেটা পারে না) পাশ থেকে দিপু দাও খুশি মনে সম্মতি দিলো, কাব্য থাকতে চাইলে থাক না কিঞ্জলের সাথে (কথার দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ একটা হাসি দিলো) সাথে সাথেই কথা একটা অদ্ভুত রিয়্যাক্ট করে উঠলো, না না কাব্যর কারও কাছে থাকতে হবে না, ও আমার সাথেই ঘুমোবে রাতে (কাব্যর দিকে কটমটিয়ে তাকতেই কাব্য কিছুটা ভয় পেয়ে যায়, ও পারে তো তখনি আমার কোল থেকে মায়ের কাছে চলে যায়) আমি সেটা বুঝতে পারলাম, আচ্ছা আচ্ছা কাব্য ওর মার কাছেই থাকবে, এখন ওকে খেতে তো দে আমার কাছে (কাব্য অসহায়ের মত মায়ের দিকে তাকায় অনুমতির জন্য, কথা মুচকি হেসে ঘাড় নাড়িয়ে অনুমতি দিতেই কাব্যের দুষ্টুমি ডানা মেলতে থাকে। তখনো বুঝতে পারে নি আর এখনো বুঝতে পারছি না কথা সাধারাণ একটা ব্যাপারে হঠাৎ ওমন ভাবে রিয়্যাক্ট করলো কেন। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে একের পর এক আমাদের ছবি গুলো দেখে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা মেসেজ আসে কথার নাম্বার থেকে, এখনো জেগে আছিস! আমি তো পুরো হতবাক, ও জানলো কি করে?
Parent